আষাঢ় মাসের বিশ তারিখ এল। আজ শিবনাথ বাচস্পতির বিয়ে। সর্বেশ্বর ঘটক আর নন্দন অধিকারী মেয়ে নিয়ে এসেছে গতকাল রাত্রেই। গতকাল রাত্রেই দেনা-পাওনা মিটেছে। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও পাঁচশো টাকা দিয়েছে শিবনাথ সর্বেশ্বরকে। আরও পাঁচ টাকা দিয়েছে ফিরে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া বাবদ। এ বিয়ে কোনও জাঁকজমকের বিয়ে নয়। বংশজের ক্রীতকন্যা বিয়ে চলে বটে কিন্তু তার কোনও ধুমধাম নেই। কুলীনেরা অংশগ্রহণ করবে না। কেবল আত্মীয়স্বজনকে একদিন নতুন বউয়ের হাতে খাওয়াতে হবে।
তবু আজ সম্প্রদান। শিবনাথ নারায়ণকে না ডাকতে গিয়ে পারল না। কিন্তু গিয়ে দেখল, কিছু বই বগলদাবা করে নারায়ণ গঙ্গার ঘাটে চলেছে। নৌকা অপেক্ষা করছে, সে কলকাতা যাবে। চুঁচুড়ায় গিয়ে জাহাজ পেলে তো কথাই নেই।
কলকাতা। তবে চতুষ্পঠীর অধ্যাপনা? এসে করবে নারায়ণ। চিরদিনের জন্য যাচ্ছে না। অল্পদিনের মধ্যেই ফিরে আসবে। কিন্তু কই এক বার শিবনাথকে বলতেও নেই। শিবনাথ জিজ্ঞেস করল, কী জন্য যাচ্ছ?
নারায়ণ বলল, বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করতে?
কেন?
নারায়ণ বলল, তাঁকে সব কথা বলব। তোমার মতে যা পাপ, সে পাপকাহিনী বলব, বিধান চাইব।
শিবনাথ এক মুহূর্ত নির্বাক থেকে বলল, আচ্ছা যাও।
ফিরে এল শিবনাথ। বিয়ে হল, প্রতিজ্ঞা ঘটকাশ্ৰেষু পরিবর্তশ্চতুর্বিধ। পাণিগ্রহণ এখানে, চতুর্বিধির প্রতিজ্ঞা ঘটকাগ্ৰেযু ছাড়া উপায় নেই। এখানে ঘটকের কথা মাত্রই বিয়ে। ঘটক পুরোহিত ও সম্প্রদান কর্তা। ওই পাঁচশো টাকার মধ্যেই এই খরচটাও যুক্ত।
বিয়ে হল। আজ বাসর জাগার পালা। বাসর রাত্রি। এই রাত্রেই সর্বেশ্বর আর নন্দন বিদায় নিল। বাবা! দুজনের বুকের ধড়ফড়ানি আর সহ্য হয় না। কেবলি ধুকু ধুকু, কখন ধরা পড়ে যায়। কখন কে চেঁচিয়ে ওঠে, এ যে হালিশহরের ধীবর কন্যা। কিন্তু আহা! কী মন্ত্র পড়িয়েছে শৈল মেয়েটাকে। টু শব্দটিও করলে না। দিব্যি জড়সড় হয়ে সাতপাক ঘুরল। এখন বেঁচে আছে কি মরে গেছে, কে জানে। উঃ, টাকাগুলি কী ভারী। সব খাঁটি রুপোর টাকা। এত টাকা আর কখনও পাওয়া যায়নি। বাচস্পতির ঘরে টাকার আন্ডিল! ধীবর মেয়ের যা চাঁদপানা মুখ দেখানো হয়েছে, চাপ দিলে বাচস্পতি আরও না কোন শতখানেক ঢালত। থাক! ধর্ম বলে একটা কথা আছে তো! এর পরে ভাগীদার আছে শৈল। যা ডাকসাইটে মাগি। চল্লিশে কুলোলে হয়। পাঁচ-দশ বেশি চাইলে দিতে হবে মুখ চাপা দেওয়ার জন্য। শৈলীর বাড়ি ঢোকবার আগেই তিনশো টাকা লুকিয়ে ফেলল সর্বেশ্বর। কাপড়ের তলায়, দেহের নানান স্থানে কোথায় যে লুকাল, ছলনাময়ী শৈলী দূরের কথা, ঘটক নিজে খুঁজে পেলেই হয়।
উঠোনে এসে খ্যাঁকারি দিতেই শৈলী দরজা খুলে দিল। আজ শৈলীর ভুল হয়নি। প্রতীক্ষা করেই ছিল। শুধু প্রতীক্ষা নয়, তীক্ষ্ণ অস্ত্রে শান দিয়েছে শৈলী আজ সর্বাঙ্গে। তার শরীরের গাঙের ভাটায় জোয়ারের উজান লেগেছে যেন। নীলকুটি থেকে পাওয়া বিবি জামা পরেছে গায়ে, সরোবরের জলের মত স্বচ্ছ পাতলা ঢাকাই শাড়ি জড়িয়েছে নিপুণ ভাঁজে, আতর মেখেছে।
হালিশহরের ঘটকদের আর চোখের পলক পড়ে না। আতরের গন্ধ চারিয়ে গেল রক্তে। সর্বেশ্বর একেবারে শৈলীর থুতনিতে হাত দিয়ে বলল, মাইরি! বের কনের চেয়েও লাগসই দেখাচ্ছে। তোমাকে।
একে টাকার আনন্দ, তায় রঙ্গিণী স্বৈরিণী। পালাবার ভয় থাকলেও দুজনের প্রাণই টগবগ করে উঠল। নন্দন অমনি শৈলীর কোমরে হাত দিয়ে বলল, সত্যি আবার বে করতে ইচ্ছে করছে।
শৈলী দুজনের হাত-ই সরিয়ে দিল ঝটকা দিয়ে, আঃ! মরণ, মুখে আগুন তোমাদের।
ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল শৈলী। কত টাকা পেয়েছে, দুজনে, সে কথা জানে না সে। কিন্তু যতটা পারে, ততটা আদায় করবে মসটে মসটে। তাই তার সর্বাঙ্গে বিশেষ আয়োজন। শৈলী ভালকে চেনে, মন্দকে চেনে তার চেয়ে বেশি।
তাই বুঝি শৈলীর শরীর ভাল নয়। মনও খারাপ। বিছানায় গা ঢেলে দিল সে। নন্দন আর সর্বেশ্বর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল শৈলীর উপর। কী হয়েছে, কী হয়েছে শৈলমণি!
মন ভাল নয়।
কেন গো,–কেন?
সর্বেশ্বর আর নন্দন চোখাচোখি করল। তাদের মন বড় উশখুশ করছে।
কীসের ফাঁদ না জানি আবার ফাঁদতে চায় কুলটা কুটনী। তারা দুজনেও কারবারি মানুষ। শৈলী মুখ ঝাঁপটা দিলে সাহস পায়। সোহাগ দেখাতে চাইলেই ভয় হয়।
শৈলী বলল, বড় ভয় ধরছে মনে। কখন সব জানাজানি হয়ে যাবে। টান পাড়াপাড়ি হবে আমাকে। নিয়ে।
সর্বেশ্বর বলল, কী যে বলো!
গায়ের থেকে দুজনেরই হাত সরিয়ে দিয়ে শৈলী বলল, কী যে বলো নয়। ভাবছি কিছুদিন বাইরে গা ঢাকা দেব।
ঠোঁট ফুলিয়ে, সর্বাঙ্গে মোচড় দিয়ে সরে যাবার অছিলায় শৈলী ঘন হয়ে এল। ভালুকের মতো জ্বর আসে মানুষের গায়ে। সর্বেশ্বর আর নন্দনের রক্তের মধ্যে ভালুক লাফায়। বুভুক্ষু আ-দেখলের মতো কী করবে ভেবে পায় না।
সর্বেশ্বরের হাতে টাকা। সেই সুযোগটা নিল আগে। চল্লিশ টাকা গুনে শৈলীর হাতে দিয়ে, তাকে বুকের কাছে টেনে আনতে গেল।
শৈলী বলল, দাঁড়াও, কত টাকা দিলে?
–তুমি যা বলেছিলে তাই। চল্লিশ দিয়েছি।
টাকাগুলি বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বলল, মরণ! ব্যবসাই শিখেছ। এত দায় নিয়েছি, সে কি গোনাগাঁথা কড়ির জন্যে। টাকা নিয়ে যাও।
বলে কেমন করে আবার যেন সর্বাঙ্গে একটি পাক দিয়ে, কাত হয়ে পড়ল শৈলী। আতরের গন্ধ ছড়িয়ে, তৃষ্ণার্তের চোখের সামনে, ঢাকাই শাড়ির স্বচ্ছবাসে যেন মিষ্টি জল টলোমলো করে উঠল। পাপের মারটা এমনিই–ধূর্তের বুদ্ধিও লোপ পায়। নন্দন বলে উঠল, আর দশটা টাকা দাও ঘটকভায়া!
তা দেবে সর্বেশ্বর। শৈলীর সঙ্গ! সে যে সহজে জোটে না। তা বলে অধিকারীকে অগ্রাধিকার দেবে না। নন্দনের হাত নিয়ে শৈলী যেন খেলা করছে। দশটি টাকা গুনে দিল সর্বেশ্বর।
শৈলী বলল, যাও, ভাল লাগে না বাপু, তোমাদের এত কিপটেমি। এমনিতে শৈলী শৈলী করে তোমাদের মুখে নাল গড়ায়। টাকার বেলায়, আঙুলের ফাঁকে জল গলে না। আমি কি পিঁপড়ে না বোলতা, যেন চিমটি চিমটি গুড় দিচ্ছ।
বলে, আর কেমন করে যেন ঢাকাই শাড়ি আলুথালু হয়। একখানি হাত গিয়ে পড়ে সর্বেশ্বরের কোলে। যেন কী পেল সর্বেশ্বর। কুট বুদ্ধির পাথর গরম রক্তে গলে গলে যেতে লাগল। আরও পাঁচটি টাকা দিল।
তারপরেও কয়েক পাঁচ গেল। ভবিষ্যতের আশা রাখতে হয়। ঝগড়া করবে কেন শৈলী। যেদিন করবে, সেদিন এ দুই বামুনের কোনও সর্বনাশই বাকি রাখবে না। এখনও ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সব আদায় করে নিতে পারে শৈলী। একেবারে উলঙ্গ করে দুজনকে হালিশহরে ফেরত পাঠানো যায়।
নিতে নিতে আশি টাকা পেল শৈলী। বাইরে বেরিয়ে পথে যেতে যেতে আফশোশে আর বাঁচে না দুটিতে। বলল, হারামজাদি কী সর্বনাশী!
শুধু শৈলী বসে রইল একলা ঘরে, এলো চুলে, শিথিল বাসে। প্রদীপের চেয়ে টাকার জেল্লা বেশি। দলিত শয্যায় টাকাগুলি হাতিয়ে দেখল শৈলী। স্বৈরিণী সে, কত খেলা করে, টাকাগুলি পেয়েছে। তবু বুক তো ভরে না। টাকা যেন আগুন, সর্বাঙ্গে শুধু তারই হলকা। এ আগুন কোনওদিন নিভবে না। আর এক আগুনে একদিন শৈলীর সর্বাঙ্গ ছাই হবে। কিন্তু পাপ তো শেষ হবে না। এই সমাজ আরও কত শৈলীর জন্ম দেবে, আগুন জ্বলবে তাদের বুকে। আরও কত ভানুমতী বিক্রি হবে, কত টাকা, কত আগুন জ্বলবে।
সহসা মনে পড়ে ভানুর কথা। সাপিনী, কিন্তু বাচ্চা! সেই প্রকাণ্ড মূর্তি পণ্ডিতের ঘরে এখনও কি বেঁচে আছে গঙ্গা! ফুঁ দিয়ে প্রদীপ নিভিয়ে, বেড়ার ফুটো দিয়ে শৈলী বাইরের অন্ধকারে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে বলল ভানুকে, বিষ ধর, বিষ ধর প্রাণে।
.
বাসর রাত্রি। কিন্তু কাল রাত্রির মতো থমথমে। আষাঢ় আকাশে মেঘ জমেছে পুঞ্জ পুঞ্জ। ঘাসের বুকে চুপটি করে পড়ে থাকা মেয়ে জোনাকিদের, শূন্যে উড়ন্ত পুরুষ জোনাকিরা মিলন বাসনায় দেহে আবোর ইশারা দিচ্ছে। ঘাস থেকে আলোর ইঙ্গিত যুদি দেয় কোনও মেয়ে, তখুনি নেমে আসছে সাঁ সাঁ করে। সত্যি, শিবনাথের এ পৈতৃক বাড়িটিও কেমন ভুতুড়ে। সামনের উঠান থেকে, তিন হাত নীচে ঘর। দরজা দিয়ে সিঁড়িতে নেমে যেতে হয়। যেন অন্ধকার গুহা। এর নীচে নাকি এক সময় পুকুর ছিল। শিবনাথের ঠাকুরদা জানতেন না। পলাশী যুদ্ধের শেষে তখন হেস্টিংস-এর এক জমিদার শাকরেদের শাকরেদি করছিলেন ঠাকুরদা। দু হাতে টাকা কুড়িয়েছেন। মাথার ঠিক ছিল না। যেমন জমি পেয়েছিলেন, তেমনি বাড়ি করেছিলেন। কেউ কেউ বলে, কবরখানা ছিল এখানে।
এই বিয়ের বাসর রাত্রিতে বাড়িটা যেন আরও বসে গেছে। সামনেই সুদীর্ঘ চওড়া দালান। টিমটিমে প্রদীপ ধরে বর কনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন শিবনাথের দিদি। বাল্যে বিধবা হয়েছেন। দারুণ ফরসা, আর অসম্ভব মোটা। আলুথালু বেশ। কোনও চাঞ্চল্য নেই, কোনও বিকারও যেন নেই। যন্ত্রের মতো বাতি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কখন ভাই আর নতুন ভাজ ঘরে যাবে। ঘরে তুলে দিয়ে শুতে যাবেন। কেমন ভাজ, কেমন তার কথা, সে বিষয়েও যেন তেমন কৌতূহল নেই। হয়েছে, বেশ করেছে, সেই পর্যন্ত। আগামী কাল থেকে চতুষ্পঠীর হাঁড়ি ঠেলতে আর দুটো হাত পাবেন। কাজের হাত হলেই ভাল। না হলেও যায় আসে না। জীবন! সে-ই বা কী, আর মরণ! তাই বা কেমন! একটা নিরাবেগ অস্তিত্বহীন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন যেন।
ছাত্রদের ফলার শেষ হয়েছে। তাদের সাড়াশব্দ আর মিলছে না। উঠানে ঘোরা কুকুরটা বারবার এসে দালানে উঁকি দিচ্ছে। কীসের একটা শব্দ হচ্ছে ফরফর করে। পুরনো বাড়ি। বোধ হয় কোনও চওড়া ফাটলে পাখি বাসা বেঁধেছে। থানকুনি পাতার মতো বন গজিয়েছে দালানের খিলানে।
শিবনাথ নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল। চন্দন ও ধূপের গন্ধভরা বাসর ঘর। বংশজের ক্রীতকন্যা বিবাহ। এখানে সে উৎসব নেই। বাসর জাগবার জন্য মেয়েরা আসে না দল বেঁধে। প্রদীপ রেখে চলে গেলেন দিদি। বলে গেলেন, দরকার হলে ডেকো, পাশের ঘরেই আছি।
কাকে বললেন, তিনিই জানেন। দরজা খোলা রইল।
সেদিকে এক বার দেখে শিবনাথ নতুন বউয়ের ঘোমটা খুলে দিল। ভানুমতী। ঠিক বলেছিল সর্বেশ্বর। রূপবহ্নি৷ রূপ দেখতে দেখতে তার স্বপ্নভরা চোখে জল নেমে এল। পিতৃমাতৃহীন বাচস্পতি আজ কাঁদছে। আনন্দ ও বেদনার কান্না। তার জীবন ও যৌবনের মুক্তির কান্না। সে হাঁটু গেড়ে বসে, জলভরা চোখে, নিঃশব্দ হাসিতে তার ক্রীত পত্নীর রূপ দেখতে লাগল। কী অপরূপ।
জীবনের সবই ছেড়ে এসেছে ভানু। মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল শৈলর কথা। শিখাধারী এই বিরাট পুরুষকে দেখে প্রথমে তার ভয় হল। ভয়ংকর ভয়। জীবন্ত মৃত্যুর মতো। তারপর মরিয়া হয়ে উঠল। দপ করে জ্বলে উঠল তার চোখ। সেই জাত শলুইয়ের মতো। ধনুকের ছিলার মতো বেঁকে উঠল ঠোঁট। সমস্ত মুখ আগুনের মতো লাল হয়ে উঠল। কথা বলার জন্য কেঁপে উঠল দুটি ঠোঁট। নিষ্কৃতির জন্য বন্দিনী কালসাপিনী শেষ চেষ্টার জন্য তুলল ফণা। কিন্তু কানে বাজছে শৈলর কথা। সময় হয়নি, সময় হয়নি এখনও! এখনও আসল কাজ বাকি। শৈলর কথা, আর সামনে এই ব্রাহ্মণ। হাঁটু গেড়ে বসেছে তার সামনে কাঁদছে, হাসছে, দু চোখ ভরে দেখছে তাকে। সব মিলিয়ে গোল পাকিয়ে গেল মাথার মধ্যে। কম্পিত ঠোঁট জোর করে কামড়ে ধরল। রক্ত ফেটে বেরুল। তবু, যদি কথা বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে। কিন্তু সবই গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সহ্য হচ্ছে না। এই ছোট বুকে আর সহ্য হচ্ছে না। সামান্য মস্তিষ্ক এত কলরবের ভার বইতে পারছে না। বুকে দুলে উঠল। রক্ত ফুটল ঠোঁটে। দু চোখ অন্ধ হয়ে গেল উদগত অশ্রুধারায়। টলে উঠল সর্বাঙ্গ। বাবা…আমার বাবাগো। সে ডাকেও কোনও শব্দ নেই। সে ডাক ছোট্ট বুকের মধ্যে নিঃশব্দে বিশাল হাতির মতো ছটফট করতে লাগল। বাবা! বাবাগো!..
সমস্ত বাড়িটা দুলছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর বসে যাওয়া বাড়িটা। প্রদীপ শিখাটা কাঁপছে থরথর করে।
শিবনাথ দুহাত বাড়িয়ে বলল, কেঁদো না, কেঁদো না। তুমি সব ছেড়ে এসেছ। আমি শিবনাথ, আমার কেউ নেই। বন্ধুও নেই। একবার দেখো, কেঁদো না। এসো, আজ বাসর জাগি।
সে কথা ভানুর কানে গেল না। শিবনাথ দেখল ভানু পড়ে যাবে। সে তার হাত ধরল, বসাল, তারপর ধরে শোয়াল। বলল, আচ্ছা আমাকে পরে দেখো।
ভানু অচৈতন্য হয়ে পড়ল।