বিপ্লবী ক্ষমতা
আমরা দেখেছি যে দুটো ভিন্ন পন্থায় ভেঙে পড়তে পারে প্রথাগত পদ্ধতি। প্রথমত, এক ধরনের সন্দেহবাদের জন্ম দিতে পরে ধর্মমত ও মানসিক অভ্যাসের উপর প্রতিষ্ঠিত পুরনো যুগ। সে ক্ষেত্রে শুধু নগ্ন ক্ষমতার দ্বারা সামাজিক বন্ধন রক্ষা করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, মানুষের উপর ক্রমাগতভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে নতুন মানসিক অভ্যাস সংবলিত নতুন ধর্মমত। পরিশেষে শক্তিশালী হয়ে বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করে পুরনো অচল সরকারের স্থলে সামঞ্জস্যপূর্ণ সরকার নতুন। এ ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবী ক্ষমতা ভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য ধারণ করে প্রথাগত ক্ষমতা ও ভগ্ন ক্ষমতা থেকে। এটা সত্য যে, প্রতিষ্ঠিত নতুন পদ্ধতি শিগগিরই প্রথাগত হয়ে পড়ে বিপ্লব সফল হলে। আবার এটাও সত্য যে, সংগ্রাম কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী হলে তা নগ্ন ক্ষমতার সংগ্রামে পর্যবসিত হয়। তা সত্ত্বেও নতুন ধর্মমতে বিশ্বাসীরা মনোগত দিক দিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী দুঃসাহসিকদের চেয়ে অনেক ভিন্ন এবং তাদের কার্যকলাপ অধিক স্থায়ী হওয়ার উপযোগী এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
চারটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিপ্লবী ক্ষমতা ব্যাখ্যা করব :
(১) প্রাথমিক খ্রিস্টবাদ, (২) সংস্কার, (৩) ফরাসি বিপ্লব, (৪) সমাজবাদ ও রুশ বিপ্লব।
১. প্রাথমিক খ্রিস্টবাদ
খ্রিস্টবাদের প্রভাব পড়ছে ক্ষমতা ও সামাজিক সংগঠনের উপর। এ জন্য আমি আলোচনা করতে চাই খ্রিস্টবাদ সম্পর্কে।
পুরোপুরিভাবে অরাজনৈতিক ছিল খ্রিস্টবাদের প্রাথমিক দিনগুলো। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা হচ্ছে আমাদের যুগে প্রাচীন প্রথার উত্তম প্রতিনিধি। এরা বিশ্বাস করেন যে, এ পৃথিবীর পরিসমাপ্তি অত্যাসন্ন। ধর্মনিরপেক্ষ কোনোরূপ অংশগ্রহণে তাদের আগ্রহ নেই। যা হোক ছোট সম্প্রদায়েই শুধু এমন মনোভাব সম্ভব। রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায় খ্রিস্টানদের সংখ্যা ও চার্চের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে। এ ধরনের প্রত্যাশা জোরদার করেছে ডায়ক্লোসিয়ানদের নির্যাতন। খ্রিস্টবাদে দীক্ষার মনোভাব কমবেশি অস্পষ্ট। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, এগুলো ছিল রাজনৈতিক। এর অর্থ দাঁড়ায়, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ছিল চার্চ। চার্চের শিক্ষা ও রোমের প্রথাগত মতবাদের ভেতর পার্থক্য এত বেশি ছিল যে খ্রিস্টের সময়ে অনুষ্ঠিত বিপ্লব ইতিহাসে পরিগণিত হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে।
ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টীয় মতবাদ হচ্ছে, মানুষকে নয়, আমাদের উচিত ঈশ্বরকে মেনে চলা। এর আগে অনুরূপ শিক্ষা ইহুদিবাদ ছাড়া অন্য কিছুতে ছিল না। এটা সত্য যে, ধর্মীয় কর্তব্য বিদ্যমান ছিল, কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সঙ্গে ইহুদি ও খ্রিস্টান ছাড়া অন্য কোথাও এর সংঘর্ষ ঘটেনি। সম্রাটের কার্যকলাপে নীরব থাকত পৌত্তলিকরা; এমনকি তখনও, যখন তারা মনে করত যে সত্যের লেশমাত্র নেই সম্রাটের স্বর্গীয় দাবির মধ্যে। অপরদিকে খ্রিস্টানদের কাছে অধিবিদ্যাগত সত্য চরম মুহূর্তের। তারা বিশ্বাস করে, তারা যদি ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করে তবে নরকযন্ত্রণা ভোগের ঝুঁকি নিতে হবে। কম খারাপ হিসেবে এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয় শহীদের মৃত্যু যন্ত্রণা।
খ্রিস্টানরা মানুষের চেয়ে ঈশ্বরকে মেনে চলার নীতির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। খোদার আদেশ-নিষেধ মানুষের বিবেকের কাছে পৌঁছানো হয় সরাসরি নতুবা চার্চের মাধ্যমে। আজ পর্যন্ত ৮ম হেনরি বা হেগেল ছাড়া কেউ-ই বলেননি যে রাষ্ট্রের মাধ্যমে তা পৌঁছাতে পারে। রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেয় এভাবে খ্রিস্টীয় শিক্ষা। তত্ত্বগতভাবে প্রথমোক্তটির সাথে অরাজকতা এবং শেষোক্তটির সাথে চার্চ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব জড়িত। কিন্তু কোনো স্পষ্ট নীতি নেই এগুলোর সীমারেখা নির্ধারণের ব্যাপারে। কোনটি সিজারের এবং কোনটি ঈশ্বরের? একজন খ্রিস্টানের পক্ষে বলা স্বাভাবিক যে, সবই ঈশ্বরের। এভাবে রাষ্ট্রের কাছে চার্চের দাবি অসহনীয় হয়ে দেখা দেয়। তত্ত্বগতভাবে কখনও মীমাংসা করা হয়নি রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যকার সংঘর্ষের। আজ পর্যন্ত তা চলে এসেছে শিক্ষার মতো বিষয়ে।
এটা মনে করা যেতে পারে যে রাষ্ট্র ও চার্চের ভেতর সংগতি বিধান করতে পারে কনস্টেইন্টাইনের ধর্মান্তর। প্রাথমিক খ্রিস্টান সম্রাটরা আর্যজাত ছিলেন। আর্য ও ভেন্ডালদের অনুপ্রবেশের ফলে পশ্চিমের গোড়া সম্রাটদের স্থায়িত্বকাল সংক্ষিপ্ত ছিল। ক্যাথলিক বিশ্বাসের প্রতি প্রাচ্য সম্রাটদের অধীনতা প্রশ্নাতীত হলে মিসরীয় মনোফিজাইট এবং পশ্চিম এশিয়ায় অধিকাংশই পরামর্শদাতার রূপ নিল। পবিত্র সপ্তাহে মিলানে অবস্থানের ফলে সম্রাট বুঝতে পারেন যে রোম সম্রাট তার নিজ ডমিনিয়নগুলোতে তার ধর্মের গণআচারের দাবি করবেন। তিনি আর্কবিশপের কাছে পরিমিত ও যুক্তিযুক্ত সুবিধাদি প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন যে, তিনি মিলান শহরে বা শহরতলিতে যেন একটি চার্চের ব্যবহার পরিত্যাগ করেন। এসব দেশের ভিন্ন মতাবলম্বীরা স্বাগত জানায় বাইজেনটাইন সরকারের চেয়ে কম অত্যাচারী হিসেবে নবীর অনুসারীদের। খ্রিস্টান রাষ্ট্রের সাপেক্ষে এসব প্রতিযোগিতায় সর্বত্রই চার্চ বিজয়ী হয়। একমাত্র নতুন ধর্ম ইসলামই চার্চের উপর প্রভুত্ব করতে দেয় রাষ্ট্রশক্তিকে।
মিলানের আর্কবিশপ সেন্ট এম্রোজ ও সম্রাজ্ঞী জাস্টিনার ভেতর ৩৮৫ সনে সংঘঠিত দ্বন্দ্বের মাধ্যমে চতুর্থ শতাব্দীর শেষভাগে অরিয়ন সাম্রাজ্য ও চার্চের মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তার ছেলে ভেলেনটিয়ান অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং তিনি তার পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পবিত্র সপ্তাহে মিলানে অবস্থানকালে তাকে বোঝানো হয়েছিল যে, ডমিনিয়নগুলোতে একজন রোমান সম্রাট তার ধর্মের গণপালনের দাবি করতে পারেন। তিনি আর্কবিশপের কাছে অত্যন্ত সুবিবেচনাপূর্ণ প্রস্তাব করেন যে, তিনি যেন মিলান শহর ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে একক চার্চের ব্যবহার বর্জন করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল এম্রোজের আচরণ। হতে পারে যে জাগতিক প্রাসাদগুলো সিজারের মালিকানাধীন; কিন্তু চার্চগুলো ঈশ্বরের ঘর এবং বিশপের এলাকাধীন প্রচারকের একমাত্র তিনিই আইনানুগ উত্তরাধিকারী। খ্রিস্ট শুধু প্রকৃত বিশ্বাসীদেরই প্রাপ্য ধর্মের জাগতিক ও ঐশ্বরিক সুবিধাদি। মানসিক দিক দিয়ে এম্রোজ সন্তুষ্ট ছিলেন কিন্তু তার ধর্মীয় মতাদর্শগুলো ছিল সত্য বিশুদ্ধতার মাপকাঠি। শয়তানের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনায় অস্বীকৃতি জানালেন আর্কবিশপ এবং সাবলীলতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করলেন যে, শহীদের মৃত্যু অধার্মিকতার কাছে বশ্যতা স্বীকার করার চেয়ে শ্রেয়।
শিগগিরই দেখা গেল শহীদ হতে ভয় করার তার কোনো কারণই ছিল না। তাকে যখন পরিষদের সামনে ডাকা হলো তখন তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেন একদল ক্রোধান্বিত সমর্থকদের। সমর্থকরা ভয় দেখাচ্ছিল যে তারা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করবে এবং সম্রাজ্ঞী ও তার ছেলেকে মেরে ফেলতে পারে। গথিক ব্যবসায়ীরা অরিয়নদের মাধ্যমে এ রকম একজন পবিত্ৰাত্মার বিরুদ্ধে কিছু করতে ইতস্তত বোধ করল এবং বিপ্লব এড়ানোর জন্য সম্রাজ্ঞী তা চেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। এম্রোজের বিজয় উপেক্ষা করতে পারলেন না ভেলেনটিয়ানের মাতা। যুবরাজ আবেগজনিত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যে, তার নিজস্ব চাকররা একজন বিবেকহীন যাজকের হাতে প্রস্তুত ছিল তাকে ছেড়ে দিতেও।
সম্রাজ্ঞী পরবর্তী বছরে জয় করার চেষ্টা করলেন দরবেশকে। তিনি নির্বাসনের ঘোষণা দিলেন তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি গির্জায় বিশপের আসনে অবস্থান নিলেন, যেখানে তাকে দিনরাত সমর্থন করতেন বিশ্বাসী ও দানশীল ব্যক্তিরা। তাদেরকে জাগ্রত রাখার জন্য তিনি নিয়মিত উচ্চস্বরে প্রার্থনা সংগীত চালনা করেন মিলানের চার্চে। অলৌকিক ঘটনা দ্বারা অনুসারীদের উৎসাহ আরও বৃদ্ধি করা হলো এবং পরিশেষে ইতালির ক্ষুদ্র সার্বভৌমত্ব টিকে থাকতে পারল না স্বর্গের প্রিয়পাত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়।
এ ধরনের প্রতিযোগিতার ফলে চার্চ সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করে। দানশীলতা ও সংগঠন দুই-ই আংশিকভাবে এই বিজয়ের কারণ। কিন্তু প্রধান কারণ এই ছিল যে, এর বিরোধী কোনো ধর্মমত বা জনমত ছিল না। যখন রোম জয়লাভ করল তখন একজন রোমান ভাবত যে এটা তার রাষ্ট্রের গৌরব। কিন্তু এ ধরনের মনোভাব চতুর্থ শতাব্দীতে কিছুদিনের জন্য মুছে গিয়েছিল। ধর্মের সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় উৎসাহ-উদ্দীপনা আধুনিককালে পুনরুজ্জীবিত হয় জাতীয়তাবোধের অভ্যুদয়ের ফলে।
প্রতিটি সফল বিপ্লবই কর্তৃত্বকে নাড়া দেয় এবং সামাজিক বন্ধন দুরূহ করে তোলে। এটা শুধু রাষ্ট্রকেই দুর্বল করে দেয় না, পরবর্তী বিপ্লবের রূপও প্রদান করে। অধিকন্তু ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ প্রাথমিক দিনগুলোতে খ্রিস্টীয় শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহের বিপজ্জনক উৎস হিসেবে রয়ে গেল। ব্যক্তিগত বিবেক যখন দেখল যে সে চার্চের রায় গ্রহণ করতে পারে না তখন সে বশ্যতা অস্বীকার করার পক্ষে যুক্তি পেল। চার্চের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে ভিন্নমত, কিন্তু প্রাথমিক খ্রিস্টবাদের নিরিখে তা নীতিবিরুদ্ধ ছিল না।
প্রত্যেক কর্তৃত্বের জন্য এ ধরনের অসুবিধা সহজাত এবং এর উৎসস্থল বিপ্লব। এ কথা বলতেই হবে যে প্রাথমিক খ্রিস্টবাদ যুক্তিসঙ্গত ছিল এবং তার্কিকভাবে বলা যাবে না যে, পরবর্তী সব বিপ্লবই বিভিন্ন দোষে দুষ্ট হতে পারে। নৈরাজ্যিক আগুন জ্বলছিল খ্রিস্টবাদে, যদিও তা মধ্যযুগে গভীরভাবে পুঁতে রাখা হয়েছিল, তথাপি তা ভয়ানক অগ্নিকান্ডের রূপ ধারণ করে সংস্কার আন্দোলনের সময়।
২. সংস্কার
দুটো বিষয়ে ক্ষমতার দিক দিয়ে সংস্কার আমাদের ধারণা দেয়। এর ধর্মীয় নৈরাজ্য চার্চকে দুর্বল করে এবং রাষ্ট্রকে সবল করে তোলে। সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ আন্তর্জাতিক সংগঠনের আংশিক ধ্বংসের জন্যে। এ বৃহৎ সংগঠন বারবার প্রমাণ করেছে যে তা যে কোনো নিরপেক্ষ সরকারের চেয়ে ক্ষমতাশালী। লুথার চার্চ এবং চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ যুবরাজদের উপর। হিটলারের যুগ পর্যন্ত লুথারীয় চার্চ কোনো অক্যাথলিক সরকারের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেনি। কৃষক বিদ্রোহ রাজার কাছে অধীনতা প্রচারের পক্ষে লুথারকে আরেকটি কারণ যুগিয়েছিল। স্বাধীন ক্ষমতা হিসেবে চার্চ লুথারীয় দেশগুলোতে তার বাস্তব অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে এবং পরিণত হয় ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কাছে বশ্যতা স্বীকারের জন্য প্রচারণার অংশবিশেষ।
৮ম হেনরি বিষয়কে ইংল্যান্ডে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, তেজোবীর্য এবং নির্মমতার সঙ্গে হাতে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে ইংল্যান্ডের চার্চ-প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মকে জাতীয় ও নিরপেক্ষ রূপ দিতে আরম্ভ করেন। এ রকম আশা তার ছিল না যে, ইংল্যান্ডের ধর্ম বিশ্বজনীন খ্রিস্টীয় জগতের অংশবিশেষ হবে। তিনি আশা করেছিলেন যে ঈশ্বরের গৌরবের চেয়ে তার গৌরবের বেশি সহায়ক হবে ইংলিশ ধর্ম। তিনি তার পছন্দমত পরিবর্তন করিয়ে ছিলেন সংসদ দ্বারা। তার কোনো অসুবিধা ছিল না যারা পরিবর্তনের বিরোধী ছিল তাদের ফাঁসিদানে। রাজস্ব আনা হলো সন্ন্যাসীদের মঠ ভেঙে। তা তাকে সাহায্য যোগায় ঈশ্বরের কৃপা লাভের জন্য তীর্থযাত্রার মতো ক্যাথলিক বিদ্রোহ দমনে। প্রাচীন সামন্ত আভিজাত্যকে দুর্বল করে দেয় বারুদ এবং গোলাপ যুদ্ধ। যখনই উদ্যত হতেন তখনই তিনি তাদের মাথা কর্তন করে দিতেন। প্রাচীন গির্জার ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল ওয়েলসের পতন হলো। হেনরির অধীন যন্ত্রবিশেষ পরিণত হলেন ক্রমওয়েল এবং ক্রেনমার। হেনরি বিনয়ী ছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে রাষ্ট্রক্ষমতা কিরূপ হতে পারে চার্চের পূর্ণ গ্রাসের মাধ্যমে।
স্থায়ী হতে পারেনি ৮ম হেনরির কাজ। এলিজাবেথের অধীন প্রটেস্ট্যান্টবাদের সংমিশ্রণে এক ধরনের জাতীয়তাবোধ হঠাৎ প্রয়োজনীয় আকর্ষণীয় হয়ে উঠল। স্পেনের পরাজয় দাবি করল আত্মসংবরণ ক্যাথলিক এবং দখল করে নিল স্পেনীয় ভান্ডারজাত জাহাজ। তারপর থেকে শুধু বাম দিকে থেকেই ছিল এংলিকান চার্চের জন্য বিপদ। কিন্তু প্রতিহত করা হলো বামদিক থেকে উদ্ভূত আক্রমণ। পরবর্তীকালে জুড়ে নিল এর স্থান।
ভিকার ও বে হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্ট দেশগুলোতে রাষ্ট্র কর্তৃক চার্চের পরাজয়ের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যে পর্যন্ত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অসম্ভব মনে হতো, পোপ ও সাধারণ পরিষদের একমাত্র স্থলবর্তী ছিল ইরিস্টেনিয়ারিজম।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাদের ধর্মবোধ অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল তাদের কাছে সন্তোষজনক হতে পারেনি ইরিস্টেনিয়ারিজম। এক রকম অসম্ভব ছিল পাপমোচনমূলক প্রশ্নে সংসদীয় কর্তৃত্বের কাছে বশ্যতা স্বীকারের জন্য বলা। স্বাধীনচেতা জনগণ সমভাবে চার্চ ও রাষ্ট্রের ধর্মীয় কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করল এবং দাবি করল ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অনুসিদ্ধান্ত সহকারে ব্যক্তিগত বিচারের অধিকার। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সংযোজিত হলো সরাসরি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সঙ্গে। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের ধর্মীয় মতামতের অধিকার থাকলেও তার অন্যান্য অধিকার কি থাকবে না? সাধারণ নাগরিকদের আচরণে কি সরকারের কোনো আইনসঙ্গত সীমাবদ্ধতা ছিল না? ক্রমওয়েলের পরাজিত অনুসারীরা এ জন্য মানবাধিকার সংবলিত মতবাদ আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পারে বহন করে নিয়ে যায় এবং জেফারসন এর বাস্তব রূপ দেন আমেরিকার সংবিধানে। আবার তা ইউরোপে ফেরত আসে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে।
৩. ফরাসি বিপ্লব
পশ্চিমা জগৎ সংস্কার আন্দোলন থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে আন্দোলনের ভেতর দিয়ে চলতে থাকে, যা মানবাধিকার বিপ্লব নামে আখ্যায়িত হয়। ১৮৪৮ সালে এই আন্দোলন পূর্ব রাইনে রূপ নেয় জাতীয়তাবাদের। এই মিলন বা যোগ অস্তিত্ব লাভ করে ফ্রান্সে ১৯৭২ সাল থেকে ও ইল্যান্ডে প্রথম থেকেই এবং আমেরিকাতে ১৭৭৬ সাল থেকে। এই আন্দোলনে গুরুত্ব পায় মানবাধিকারের চেয়ে জাতীয়তাবাদই বেশি। কিন্তু মানবাধিকারই প্রথম দিকে অধিকতর গুরুত্ববহ ছিল।
মানবাধিকারের প্রতি ঘৃণা-বর্ষণ আমাদের যুগে স্থল উক্তি হিসেবে স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা সত্য যে দার্শনিক তত্ত্ব অনুসারে এ মতবাদ অরক্ষিত। কিন্তু ঐতিহাসিক ও প্রায়োগিক দিক থেকে প্রয়োজনীয় এবং আমরা অনেক স্বাধীনতাই এর বদৌলতে ভোগ করছি। একজন বেনথামাইটের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় অধিকারের তত্ত্বগত ধারণা। বাস্তব উদ্দেশ্যে এই মতবাদের নিম্নরূপ বর্ণনা দেয়া যায়। কোনো সমাজের নিয়ম-কানুন যদি এ ধরনের নির্দিষ্ট হয়ে যায় যে এর ভেতর প্রত্যেক ব্যক্তিই তার পছন্দমতো কাজ করবে এবং তার উপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব থাকবে না তবেই সে সমাজে সাধারণ সুখ বৃদ্ধি পাবে। ন্যায়বিচারও একটি বিষয় ছিল যা মানবাধিকারবাদীদের আগ্রহ যোগায়। তারা মনে করে যে আইনের সঠিক প্রয়োগ ছাড়া কোনো মানুষকেই তার জীবন ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ ধরনের মতবাদ সত্য বা মিথ্যা হতে পারে। কিন্তু তা অসম্ভব নয় পুরাতাত্ত্বিকভাবে।
এ মতবাদ অবশ্যই উৎস ও ভাবপ্রবণতার দিক থেকে সরকারবিরোধী। এ মত স্বৈরাচারী সরকারের একজন প্রজা পোষণ করে যে, আপন ধর্মমত পোষণে স্বাধীনতা থাকবে, সে তার ব্যবসা চালিয়ে যাবে হস্তক্ষেপ ছাড়া, সে বিয়ে করবে তার পছন্দ অনুযায়ী। সুতরাং মানবতাবাদীরা বলেছে যে, যেখানে বিরোধী সিদ্ধান্ত দরকার সেখানে তা হবে অধিকাংশের অথবা তাদের প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত-স্বেচ্ছাচারী বা শুধু প্রথাগত কর্তৃত্ব যেমন রাজা বা গির্জার পাদ্রির সিদ্ধান্ত হবে না। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা সম্বন্ধে জন্ম দেয় অদ্ভুত মানসিকতার যা ক্রমাগতভাবে পশ্চিমা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এক প্রকার সন্দেহ পোষণ করে তা ক্ষমতার টিকে থাকা অবস্থায় ও সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।
প্রটেস্ট্যান্টবাদের সঙ্গে এক অবশ্যম্ভাবী যৌক্তিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের। ফলে এই মতবাদ ঘোষণা করা হয় ধর্মীয় বলয়ে জোরেশোরে। কিন্তু ঘোষণাকারীরা ক্ষমতালাভের পর তা বর্জন করে। প্রটেস্ট্যান্টবাদের বদৌলতে এবং পৌত্তলিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার জন্য প্রাথমিক খ্রিস্টবাদের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে সম্পর্কের ফলে খ্রিস্টবাদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। খ্রিস্টীয় নীতিকথা অনুসারে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনই কর্তৃপক্ষের দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে পাপকাজে বাধ্য করা যুক্তিযুক্ত করতে পারে না। চার্চ বলেছেন যে, বিবাহ যে কোনো একপক্ষের উপর আরোপিত বাধ্যবাধকতা বাতিল করে। এই মতবাদটি নির্যাতনের বেলায়ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক উপকার সাধনের পরিবর্তে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদেরকে অনুশোচনা ও পরিত্যাগে বাধ্য করা। প্রত্যেক মানুষের পরিসমাপ্তি তার নিজের মধ্যেই-কান্টের এ ধরনের নীতি খ্রিস্টীয় শিক্ষা থেকে গৃহীত হয়েছে। ক্যাথলিক চার্চের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতা প্রাথমিক খ্রিস্টবাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে অস্পষ্ট করে তোলো। কিন্তু এর চরম অবস্থায় তাকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রটেস্ট্যান্টবাদ এবং সরকার সম্বন্ধীয় তত্ত্বে এর প্রয়োগ করে।
যখন বিপ্লবী এবং প্রথাগত ক্ষমতার ভেতর ফরাসির বিপ্লবের অনুরূপ অবস্থায় প্রভুত্ব অর্জনের লক্ষ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় তখন বিজিতদের উপর বিজয়ীদের ক্ষমতাই নগ্ন ক্ষমতা। বিপ্লবী সৈন্য ও নেপোলিয়ানের সৈন্যরা নতুন ধর্মমতের প্রচারণা শক্তির সমন্বয়ে নগ্ন ক্ষমতা প্রদর্শন করে। নতুন ধর্মমতের প্রচারণা শক্তির সমন্বয়ে নগ্ন ক্ষমতা প্রদর্শন করে। ইউরোপে এই ক্ষমতা ব্যাপকতার দিক দিয়ে অভূতপূর্ব ছিল। আজও ইউরোপবাসীর উপর এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। জেকোবিনরা সর্বত্রই প্রথাগত ক্ষমতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু নেপোলিয়ানের সৈন্যরাই এই প্রশ্ন কার্যকরি করে। নেপোলিয়ানের সৈন্যরা প্রাচীন কদর্য বার্তাগুলোর সংরক্ষণের জন্য যুদ্ধ করে এবং পরিশেষে বিজয়ী হলে প্রতিষ্ঠা করে একটি প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতি। তাদের নিষ্প্রভ প্রতিবাদের ফলে তার অত্যাচার এবং বল প্রয়োগ বিস্মৃতির অতলগর্ভে তলিয়ে যায়। মহান শান্তি সুদূরপরাহত, তাই যুদ্ধের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় এবং বেয়নেটে বিদ্ধ করে স্বাধীনতার অগ্রগদূতকে। মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বছরগুলোতে এক প্রকার বাইরোনিক ধর্মবিশ্বাসজাত সহিংসতা জন্ম নেয় এবং ক্রমাগতভাবে মানুষের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে। এর সবই নেপোলিয়ানের নগ্ন ক্ষমতায় খুঁজে পাওয়া যায়। রবসপিয়ার ও নেপোলিয়নের কাছে স্ট্যালিন তার সফলতার জন্যে যতটুকু ঋণী, হিটলার ও মুসোলিনি তার চেয়ে কম ঋণী নন।
নেপোলিয়নের দৃষ্টান্ত থেকে বলা যেতে পারে যে বিপ্লবী ক্ষমতা নগ্ন ক্ষমতায় পর্যবসিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশ বিজয়, ধর্মীয় নির্যাতন অথবা শ্রেণি সংগ্রামে অত্যুৎসাহীদের ভেতর সংঘাত নগ্ন ক্ষমতা থেকে ভিন্ন এ কারণে যে এই সংঘাতের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধার নয় বরং তা ধর্মমতের স্বার্থে পরিচালিত। ক্ষমতা হচ্ছে এর উপর। এর উদ্দেশ্য বিস্মৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ফলে। তাই সংগ্রাম কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্ধ অনুরাগ ক্রমাগতভাবে শুধু বিজয়লাভের প্রচেষ্টায় পরিচালিত হতে পারে। সুতরাং প্রথম দৃষ্টে অনুভূত পার্থক্যের চেয়ে বিপ্লবী ক্ষমতা ও নগ্ন ক্ষমতার পার্থক্য প্রায়ই কম হয়ে থাকে। লাতিন আমেরিকায় প্রথমত স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উদারপন্থি ও গণতন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে অস্থিতিশীল সামরিক একনায়ক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। বিপ্লবী বিশ্বাস ব্যাপক ও জোরালো হলে এবং বিজয় খুব বেশি বিলম্বিত না হলে সহযোগিতামূলক অভ্যাসের ফলে কি বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটবে এবং নতুন শাসকের কি খাঁটি সামরিক শক্তির পরিবর্তে সম্মতির উপর নির্ভরতা লাভের সামর্থ্য যোগাবে? মনোকর্তৃত্ব ছাড়া অত্যাচারী হতে বাধ্য যে কোনো সরকার।
৪. রুশ বিপ্লব
এখনও বিশ্ব ইতিহাসে রুশ বিপ্লবের গুরুত্ব সম্পর্কে বিচার করার সময় আসেনি। আমরা এখন আলোচনা করতে পারি এর কয়েকটি দিক নিয়ে। প্রাথমিক খ্রিস্টবাদের মতো এটিও আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় নিরপেক্ষ। খ্রিস্টবাদের মতো না হলেও তা প্রধানত ইসলামের মতো রাজনৈতিক। এ পর্যন্ত এ মতবাদের যে অংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে উদারনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার আহ্বান। ১৯১৭ সালের নভেম্বরে পর্যন্ত শুধু প্রতিক্রিয়াশীলাই উদারনীতিকদের প্রতিহত করে। অন্য প্রতিবাদীদের মতো মার্কসীয়রা ওকালতি করত গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মুক্ত সাংবাদিকতা এবং উদারনৈতিক রাজনীতির অবশিষ্টাংশের। রুশ সরকার ক্ষমতালাভের পর এক মহান দিনগুলোতে খ্রিস্টীয় শিক্ষার দিকে ফিরে গেল। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ইতিবাচক শিক্ষা ও সব প্রতিদ্বন্দ্বী মতবাদ দমনের মাধ্যমে সত্যের বিকাশ ঘটানো। অবশ্য এর অন্তর্ভুক্ত ছিল লাল সৈন্যের উপর নির্ভরশীল অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা। এই ব্যবস্থায় প্রভূত বৃদ্ধি পায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মিশ্রণের ফলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।
কমিউনিস্ট মতবাদের আন্তর্জাতিক অংশ অচল প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু অসাধারণ সফলতা লাভ করে উদারনৈতিকতা বর্জনের দিক। রাইন থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত সর্বত্র এ মতবাদের প্রধান সব অংশই অগ্রাহ্য হয়েছে। প্রথমে ইতালি ও পরে জার্মানি বলশেভিকদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকৌশল রপ্ত করে, এমনকি যেসব দেশ গণতান্ত্রিক থেকে গেল সেখানেও উদারনৈতিক বিশ্বাস এর অনুকুল পরিবেশ হারায়। উদারনীতিকরা মনে করেন যখন কোনো রাষ্ট্রীয় ভবন ধ্বংস করা হয় তখন পুলিশ ও আদালতের দায়িত্ব প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা। কিন্তু নিরর মতো আধুনিকতাবাদীরা বলেছেন, সাজানো প্রমাণাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দকৃত দলের উপর দোষ চাপানো উচিত। বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়ে সেইন্ট এম্রোজের মতো তিনি মনে করেন যে, স্বাধীনতা তার নিজের দলেরই থাকা উচিত, অন্য কোনো দলের নয়।
সব রকম ক্ষমতাই এসব মতবাদ অনুযায়ী প্রথমে বিপ্লবী ক্ষমতার রূপ নেবে ও পরে পর্যবসিত হবে অপরিহার্য ধারণা মোতাবেক নগ্ন ক্ষমতায়। বিপদ অত্যাসন্ন। আমি পরবর্তী পর্যায়ের আগে একে এড়ানোর উপায় সম্পর্কে আর কিছুই বলব না।
এগুলো খুঁজতে হবে উদারনৈতিকতা বিলুপ্তির কৌশলগত প্রচারণার জন্য বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা ও উদারনৈতিক মতবাদের ফসল জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। সরকার প্রভূত ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা একত্রে কুক্ষিগত করে। রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সময়ের সমস্যাগুলো নতুন এবং তার সমাধানে লক ও মন্টেন্ধু আমাদেরকে সার্মথ্য যোগাতে পারেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগের একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করা প্রয়োজন অষ্টাদশ শতাব্দীর সমাজে শান্ত ও অগ্রগতি বজায় রাখতে। কিন্তু এই ক্ষেত্রের নতুন সংজ্ঞা প্রদান করা এবং একে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।