বিপ্লব

ডমরুতে নটরাজ বাজালেন তান্ডবে যে তাল
          ছিন্ন করে দিল তার ছন্দ তব ঝংকৃত কিঙ্কিণী
                   হে নর্তিনী,
          বেণীর বন্ধনমুক্ত উৎক্ষিপ্ত তোমার কেশজাল
                   ঝঞ্ঝার বাতাসে
               উচ্ছৃঙ্খল উদ্দাম উচ্ছ্বাসে;
বিদীর্ণ বিদ্যুৎঘাতে তোমার বিহ্বল বিভাবরী
                   হে সুন্দরী।
     সীমন্তের সিঁথি তব, প্রবালে খচিত কণ্ঠহার–
অন্ধকারে মগ্ন হল চৌদিকে বিক্ষিপ্ত অলংকার।
                   আভরণশূন্য রূপ
               বোবা হয়ে আছে করি চুপ।
                   ভীষণ রিক্ততা তার
উৎসুক চক্ষুর ‘পরে হানিছে আঘাত অবজ্ঞার।
     নিষ্ঠুর নৃত্যের ছন্দে মুগ্ধ হস্তে-গাঁথা পুষ্পমালা
          বিস্রস্ত দলিত দলে বিকীর্ণ করিছে রঙ্গশালা।
               মোহমদে ফেনায়িত কানায় কানায়
                   যে পাত্রখানায়
               মুক্ত হত রসের প্লাবন
মত্ততার শেষ পালা আজি সে করিল উদ্‌যাপন।
          যে অভিসারের পথে চেলাঞ্চলখানি
                   নিতে টানি
          কম্পিত প্রদীপশিখা-‘পরে
     তার চিহ্ন পদপাতে লুপ্ত করি দিলে চিরতরে;
          প্রান্তে তার ব্যর্থ বাঁশিরবে
     প্রতীক্ষিত প্রত্যাশার বেদনা যে উপেক্ষিত হবে।
এ নহে তো ঔদাসীন্য, নহে ক্লান্তি, নহে বিস্মরণ,
     ক্রুদ্ধ এ বিতৃষ্ণা তব মাধুর্যের প্রচন্ড মরণ,
                   তোমার কটাক্ষ
          দেয় তারই হিংস্র সাক্ষ্য
                        ঝলকে ঝলকে
                             পলকে পলকে,
                        বঙ্কিম নির্মম
                   মর্মভেদী তরবারি-সম।
             তবে তাই হোক,
     ফুৎকারে নিবায়ে দাও অতীতের অন্তিম আলোক।
চাহিব না ক্ষমা তব, করিব না দুর্বল বিনতি,
     পরুষ মরুর পথে হোক মোর অন্তহীন গতি,
          অবজ্ঞা করিয়া পিপাসারে,
     দলিয়া চরণতলে ক্রূর বালুকারে।
          মাঝে মাঝে কটুস্বাদ দুখে
তীব্র রস দিতে ঢালি রজনীর অনিদ্র কৌতুকে
               যবে তুমি ছিলে রহঃসখী।
প্রেমেরি সে দানখানি, সে যেন কেতকী
          রক্তরেখা এঁকে গায়ে
রক্তস্রোতে মধুগন্ধ দিয়েছে মিশায়ে।
     আজ তব নিঃশব্দ নীরস হাস্যবাণ
          আমার ব্যথার কেন্দ্র করিছে সন্ধান।
               সেই লক্ষ্য তব
          কিছুতেই মেনে নাহি লব,
     বক্ষ মোর এড়ায়ে সে যাবে শূন্যতলে,
          যেখানে উল্কার আলো জ্বলে
               ক্ষণিক বর্ষণে
                   অশুভ দর্শনে।
     বেহে ওঠে ডঙ্কা, শঙ্কা শিহরায় নিশীথগগনে–
হে নির্দয়া, কী সংকেত বিচ্ছুরিল স্খলিত কঙ্কণে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *