মুখুয্যেমশাই, আমি সঙ্গে যাবো।
বিপ্রদাস সবিস্ময়ে কহিল, কোথায়? বলরামপুরে?
বন্দনা বলিল, নিয়ে যান ত রাজী আছি। কিন্তু এখন সে যাওয়ার কথা বলচি নে, বলচি দক্ষিণেশ্বরে যাবার, সাধুজীকে দেখবার ভারী ইচ্ছে হচ্ছে,—আর যদি আপত্তি না করেন ত মা-কালীকেও দর্শন করে আসবো।
কিন্তু তুমি ত এ-সব বিশ্বাস করো না।
না, করিনে, কিন্তু তাই বলে দেখবার ইচ্ছে হবে না কেন? সংসারে সবাই কি সব বিশ্বাস করে, তা বলে কি তারা চোখ বুজে থাকে?
বিপ্রদাস হাসিয়া কহিল, তবে চলো। কিন্তু এঁরা ফিরে এলে তাঁদের দেখবে কে? তুমি আমি দুজনেই চলে গেলে ত ঠিক হবে না।
বন্দনা বলিল, ঠিক হবে মুখুয্যেমশাই, কোন চিন্তা নেই, অন্নদাকে বলে সমস্ত বন্দোবস্ত করে আমি এখুনি আসচি। এই বলিয়া সে চলিয়া গেল।
মিনিট-কয়েক পরে উভয়ে গাড়িতে বসিয়া বন্দনা বলিল, আমি শুনেচি আপনি ভারী পণ্ডিত। এদেশ-ওদেশ দু’দেশের সমস্ত বিদ্যেই আপনার আয়ত্ত। অত বড় লাইব্রেরির প্রত্যেক বইটি আপনার মুখস্ত।
এ সংবাদ দিলে কে? দিদি?
না, আপনার ছোটভাই দ্বিজবাবু।
এটা ওর একটা বাতিক। না বলে বোধ হয় স্বস্তি পায় না। বন্দনা এ লইয়া তর্ক করিল না। কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া প্রশ্ন করিল, মুখুয্যেমশাই, সাধু-সন্ন্যাসী আপনি বিশ্বাস করেন? বিপ্রদাস সহাস্যে কহিল, বিশ্বাস না করবার হেতুটা কি? ওরা যে সংসারে রয়েছে এতো সর্বদাই চোখে পড়ে।
বন্দনা বলিল, সে আমারও পড়ে। আমি মানুষগুলোর কথা বলিনি! জিজ্ঞাসা করচি ওরা যা বলে তা কি আপনি বিশ্বাস করেন?
ওরা কি বলে?
কি বলে তার আমি কি জানি? আমি কি তাদের জিজ্ঞাসা করেচি নাকি?
বন্দনা মনে মনে বুঝিল প্রশ্নটা বোকার মতো হইয়া গেছে। একটু মৌন থাকিয়া কহিল, সেই কথাই ত জানতে চাইচি, আপনিই বলুন না ওরা কি বলে। বলুন না কিসের জন্যে ওদের দেখতে যাচ্ছেন।