বিপদের দোল

বিপদের দোল

আজ খুশির দিন। আমার কাছে ডবল খুশির দিন। অথচ আমি পড়েছি বিপদে। আকাশ ভেঙে পড়ার মতো আমার মাথায় দোল ভেঙে পড়েছে। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে, দোলের ওপর আরও রাগ হচ্ছে। বিপদে আজ পড়িনি, কাল রাতেই পড়েছি।

ভূমিকম্প, বৃষ্টিপাত মাপবার যন্ত্র আছে। মানুষের বিপদ মাপবার যন্ত্র নেই। শুনেছি, জাপানের শিবাউরা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে এই বিষয়ে গবেষণা চলছে। হয়তো যে কোনোদিন যন্ত্র আবিষ্কার হয়ে যাবে। পকেট ঘড়ির মতো মানুষ সেই যন্ত্র পকেটে নিয়ে ঘুরবে। বিপদে পড়লে পকেট থেকে বের করে দেখবে বিপদ কতটা। প্রেমিকা কি খুব চটে আছে? দেখা হলে গাল ফুলিয়ে থাকবে। সেই রাগ কমাতে ঝাড়া এক ঘণ্টা লাগবে? বাড়ি ফিরলে বউ কি ঝাঁটা হাতে তেড়ে আসবে? ঝাঁটা ফুল না কাঠি? ফুল ঝাড়ু হলে লাগবে কম, কাঠি ঝাঁটা হলে বেজায় লাগবে। অফিসের বস কতটা ফুঁসছে? ঘরে ঢুকলেই মুখের ওপর ফাইল ছুড়ে দেবে? মেয়েদের বেলাতেও একই ঘটনা। তারা বেশিরভাগ সময় বিপদযন্ত্র রাখবে ভ্যানিটি ব্যাগে। তাদের যন্ত্রে বিপদের সঙ্গে মান—অভিমানের কাঁটাও থাকবে। ঘড়ির ছোট কাঁটার মতো। মেয়েরা মান-অভিমানকেও বিপদ বলে মনে করে। নিজেদের বিপদ নয়, ছেলেদের বিপদ।

যাই হোক, জাপানের গবেষণাগারে মানুষের বিপদ—বিষয়ক গবেষণার অগ্রগতি অতি খারাপ। তারা প্রচুর খাটাখাটনি করে একটার পর একটা সফটওয়্যার তৈরি করছে। কিন্তু সেই সফটওয়্যার কাজ করছে না। কনফিগারেশন ল্যাঙ্গুয়েজে জট পাকিয়ে যাচ্ছে। ‘বিপদ’ বিষয়টাই নাকি সে ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। তাকে নানা ধরনের ডেটা দেওয়া হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, গরিবের ঘরে চাল নেই। এটা কত বড় বিপদ জানাও। সফটওয়্যার উত্তর দিয়েছে, এটা আদৌ বিপদ কিনা তাই নিয়েই সংশয় রয়েছে। ঘরে চাল না থাকা গরিবের জন্য বিপদের হতে পারে, চালের মজুতদারের জন্য অতি আনন্দদায়ক একটা ঘটনা। এই ধরনের ডেটা পেয়ে জাপানি সফটওয়্যার নাকি প্রথমে ‘গোঁ গোঁ’ ধরনের আওয়াজ করছে। তারপর হাঁচির মতো ‘ফ্যাঁচ’ আওয়াজ করে ‘হ্যাং’ করে যাচ্ছে। বিপদের একশেষ।

যাই হোক, যন্ত্র না থাকলেও এই মুহূর্তে নিজের বিপদের মাত্রা নিজেই আন্দাজ করছি। বিপদ নিয়ে আমি এখন পথে। সঙ্গে শুধু বিপদ রয়েছে এমন নয়, পকেটে কিছু টাকাও রয়েছে। বেশি টাকা নয়, দেড় হাজার টাকা। টাকা আমার নয়, টাকা মন্টুর বড়মামার। সেই টাকা আমার বুকে খচখচ করে বিঁধছে। ইচ্ছে করছে, পকেট থেকে টাকাগুলো বের করে কুটিকুটি করে ছিড়ে ফেলি। তাতে কি বিপদ কমবে? এখন সকাল আটটা। আটটা না, আটটা বেজে কুড়ি মিনিট। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া আমার জন্য কিছু নয়। অফিসে মর্নিং ডিউটি থাকলে আরও ভোরে যেতে হয়। আমি কাজ করি একটা প্রাইভেট রেডিও চ্যানেলে। রেডিও জকির কাজ নয়, টেকনিশিয়ানের কাজ। পিছনের ঘরে বসে সাউন্ডের দিকটা দেখি। খুবই ঝামেলার ডিউটি। একটু এদিক-ওদিক হলে কেলেঙ্কারি। আজকাল রেডিও চ্যানেলগুলোতে ধুমধাড়াক্কা একে-তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য টেলিফোনে ধরা হয়। যে কোনো কিছু একটা হলেই হল। রোদ উঠেছে কবিকে ধর, কুয়াশা ফুটেছে নায়ককে পাকড়াও, মেঘ করেছে গায়িকা চাই, আম পেকেছে নেতাকে ধর। কিছু না হলেও ‘ধর’। তারপর গলা কাঁপিয়ে বলো,’সুপ্রভাত। কেমনে পশিল প্রাণের পর রেডিও অনুষ্ঠান থেকে আপনাকে স্বাগত। আজ একটা সাধারণ দিন। না মেঘ, না রৌদ্র। এই সাধারণ প্রাতে আপনার কেমন লাগছে সেকথা যদি আমাদের শ্রোতাদের সঙ্গে শেয়ার করেন বড় আহ্লাদিত হই।’

একদিন কেলেঙ্কারি হল। সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি। আমাদের আরজে সুমু হল অতি নেকু। সে নামকরা লোকদের ফটাফট টেলিফোনে ধরতে লাগল।

‘বৃষ্টি কেমন এনজয় করছেন? বলুন না…প্লিজ একটু…উঁ উঁ…সবার সঙ্গে শেয়ার করুন প্লিইইইজ…..।’

সুমুর আধো গলা শুনে কেউ বলল, ‘আহা!’ কেউ বলল ‘উঁহু!’ কেউ বলল ‘ওহো!’

এর মাঝে মাঝে চালানো হচ্ছে বৃষ্টির গান। আমি একবার ইন্টারভিউয়ের সাউন্ডে মন দিচ্ছি, একবার গান সামলাচ্ছি। হঠাৎই বিশিষ্ট এক বাক্যবাগীশের ইন্টারভিউয়ের মাঝে ভুল করে ছাগলের ডাক বাজিয়ে ফেললাম। এই ডাক আগের দিনের এক নাটকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ছাগলের ডাক শুধু বাজিয়ে ফেললাম না, সেটা থামাতেও পারলাম না। ঘটনা শোনাল এরকম ·

‘এই মেঘমন্দ্র দিবসে ব্যা ব্যা যে ধারাপাত সঘন গহন ব্যা ব্যা আলোকপ্রাতে ব্যা ব্যা ব্যা তা কি কেবলই চিত্রার্পিতের তরে ব্যা ব্যা আকুল বিহ্বলে ব্যা ব্যা হয়ে ঝরে ঝরে পড়ে প্রসন্ন ব্যা ব্যা চিত্তে…।’

রেডিওতে সরাসরি এই ব্যা ব্যা’ ধ্বনি প্রচার হতে লাগল। আমি এই সুইচ টিপি, এই নব পেঁচাই, সেই নব ঘোরাই, কিছুতেই ছাগল চুপ করে না। শেষপর্যন্ত অনেক কষ্টে ‘ঝর ঝর বরিষে’ বাজিয়ে সামলানো হল। রবি ঠাকুরকে দিয়ে ছাগল তাড়ানো হলও বলা যেতে পারে। আমার চাকরি যায় যায়। আমার নামে কমপ্লেন হল। ছাগল কমপ্লেন। তদন্তও হল। আমি তো জানি চাকরি গন। কিন্তু তদন্তে দেখা গেল, দোষ আমার নয়, মেশিনের গোলমাল। সে ছাগলের ডাক ডিলিট করতে পারছে না। তার মেমারি নিয়ে বসে আছে। আর মাঝেমধ্যে ‘ব্যা ব্যা’ করছে।

যাক, এই হল আমার চাকরি। তাই সকালে বেরোনো কোনো সমস্যাই নয়। তা ছাড়া আজ হল দোলের সকাল। খুবই চমৎকার সকাল। এই খোদ ভবানীপুরেও বসন্তের বাতাসে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। মন ফুরফুরে। এই দিনে সকলেই কেমন যেন হাফ প্যান্ট আর ফ্রকের ছোটবেলাতে ফিরে যায়। অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করেছি। সহজে দিতে চাইছিল না। অনেক ঝামেলা করলাম। বললাম, ‘ছুটি না পেলে সুইসাইড পর্যন্ত করতে হতে পারে।’ আসলে দুটো নেমন্তন্ন রয়েছে। সকালে সিঞ্চনীর বাড়িতে দোল খেলা, দুপুরে কর্ণিকার বাড়িতে আবার দোল খেলা। সকালে আবির, দুপুরে জলরং। এই অবস্থায় ছুটি না পেলে সুইসাইড করা ছাড়া আর পথ খোলা থাকত?

সিঞ্চনী এবং কর্ণিকা দুজনেই আমার বান্ধবী। কিন্তু এখনও প্রেমিকা হয়নি। তবে যে কোনও মুহূর্তে যে কারও সঙ্গে প্রেম সেটল হয়ে যাবে। কার সঙ্গে হবে এখনই জানা যাচ্ছে না। আজ দোলের দিনে সেটলমেন্টের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রেমের ঘটনায় দোল চিরকালই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই বিষয়ে নিশ্চয় কোনো সমীক্ষা আছে। দোল ও প্রেমে পতন। যাই হোক, দোল আবার আজও কি তার ভূমিকা পালন করবে? আমি টেনশনে রয়েছি। আমার বয়স এখন সাড়ে আঠাশ। প্রেম নিশ্চিত করবার ব্যাপারে খুবই অনিশ্চিত একটা বয়স। দুজন ‘হতে পারে প্রেমিকা’র সঙ্গে রং খেলা যে কত রোমহর্ষক, সে শুধু আমিই জানি। ওরা দুজনেই আমাকে নেমন্তন্ন করেছে। সিঞ্চনী মেসেজ পাঠিয়েছে।

‘ভটকাই, দোলের দিন সকালে এসে যদি আমার সঙ্গে আবির না খেলেছিস তোর কপালে বিশেষ দুঃখ আছে। আর এলে আছে বিশেষ সুখ। সেই সুখ শুধু রঙের কপালেই লেখা থাকে।’

এরপর না গিয়ে উপায় আছে?

কর্ণিকা ফেসবুকের ইনবক্সে লিখেছে ‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারুলুঁ/ নয়ন না তিরুপতি ভেল। ভটকাইদা, এই লাইনের মানে জানি না, হাতের কাছে পেলাম, ঝেড়ে দিলাম। দোলের দিন তোমার সঙ্গে নিউটাউনের বাড়ির ছাদে ওয়াটার কালার খেলব। তারপর দুজনের তিরুপতি ভেল হবে।’

মেসেজ শেষে একটা চোখ টেপা ইমোজি। এখানে না গেলে পাপ হবে না? চোখ টেপা ইমোজির অপমান হবে।

সব অ্যারেঞ্জমেন্ট পাকা। ডবল অ্যারেঞ্জমেন্ট। প্রথমে সিঞ্চনী তারপর কর্ণিকা। আমি দু সেট পোশাক নিয়েছি। আবির খেলার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবি, জলরঙের জন্য জিন্‌স-টি শার্ট। পাঞ্জাবি গাঢ় নীল রঙের। লাল আবির পড়লে ফেটে যাবে। কালো টি শার্টের গায়ে লেখা ‘ভ্রূ পল্লবে ডাক না দিলেও দেখা হবে নন্দনের বনে’। সব কাল রাতে ব্যাগে ঢুকিয়েছি। আর সেই কাল রাতেই দশটার সময় মন্টু এসে হাজির। সঙ্গে বিপদ আর তিনটে পাঁচশো টাকার নোট।

‘ভটা, আমাকে বাঁচা।’

আমি বললাম, ‘কী হয়েছে মন্টু!’

মন্টু বলল, ‘কী হয়েছে বলছি, কিন্তু তার আগে বল তুই আমাকে বাঁচাবি।’

আমি বললাম, ‘আরে বাবা, কী হয়েছে বলবি তো।’

মন্টু আমার হাত ধরে বলল, ‘যাই হোক, কাজটা তোকে করতেই হবে।’

মন্টু আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমি যে আজ চাকরি করে দুবেলা খাচ্ছি তার পিছনে মন্টুর বিশেষ অবদান রয়েছে। কাজ পাওয়ার ব্যাপারে ও আমাকে খুবই সাহায্য করেছিল। রেডিও অফিসে ওর চেনাজানা ছিল। ওই খবর দিয়েছিল, পোস্ট খালি। তাই মন্টু কিছু বললে ‘না’ বলতে পারি না। কালও পারলাম না। মাথায় দোল ভেঙে পড়ল। সিঞ্চনী, কর্ণিকা উবে গেল

ঘটনাটা হল,

মন্টুর বড়মামার বাড়িতে দোল-উৎসব। কসবার বাড়িতে সকাল থেকে পুজো-আচ্চা, আবির খেলা, মিষ্টি খাওয়া। মন্টুর ওপর দায়িত্ব পাঁচশো টাকার আবির, হাজার টাকার রসগোল্লা কিনে সেই বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। প্যান্ডেলের বাইরে সকাল থেকে প্রেজেন্ট প্লিজ থাকতে হবে। বড়মামা সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সেখানে দাঁড়াবেন। পাশে কাঠের রেকাবিতে আবির। সবাই এসে তাঁর পায়ে আবির দেবে। পালটা হিসেবে তিনিও কারও মাথায়, কারও গালে আবির দেবেন। বড়মামি থাকবেন পাশে। ভক্তিগদগদ মুখে, কিন্তু কঠিন চোখে। মহিলাদের আশীর্বাদ দেওয়ার সময় বড়মামার হাত যেন পথভ্রষ্ট হয়ে না পড়ে। হাত মাথা থেকে নামতে চাইলেই কবজি থেকে ঘ্যাচাং হবে। এই সময়ে মন্টু দেয় ‘রসগোল্লা ডিউটি’। তার হাতে থাকে হাঁড়ি। যে আসবে তার মুখে রসগোল্লা গুঁজে দিতে হয়। মান্যিগণ্যি থেকে চোর—চিটিংবাজ কেউ বাদ যাবে না। সারাদিনের ডিউটি।

কিন্তু মন্টু আজ যেতে পারছে না। কাল রাতেই তাকে দেশের বাড়ি চলে যেতে হয়েছে। ওর বাবা পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙেছেন। সুতরাং তার ‘রসগোল্লা ডিউটি’ দিতে হবে আমাকে। সবার হাসি মুখে রসগোল্লা তুলে দিতে হবে। বড়মামা যাকে দুটো বলবেন, তাকে দুটো দিতে হবে। চোর স্বভাব যাদের বেশি, বড়মামা তাদের রসগোল্লা খাওয়ান বেশি। শুধু তাই না, আবির এবং রসগোল্লা নিয়েও বড়মামার বাড়ি যেতে হবে। বড়মামা দোকানে অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। দেড় হাজার টাকা দিয়েও গেছেন।

একে বিপদের কোন নামে ডাকব? রসগোল্লা? নাকি বড়মামা?

যাচ্ছি ট্যাক্সিতে। পাশে সিটের ওপর হাঁড়ি আর আবিরের ব্যাগ। সিঞ্চনী এবং কর্ণিকাকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছি। দুই সুন্দরী আমাকে জানিয়েছে, জীবনে যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা না করি। করলে বিপদ আছে। মেয়েরা চরিত্রে সবসময়েই একে অপরের থেকে আলাদা হয়, শুধু রাগের বেলায় এক। আচ্ছা রাগ মাপবার কোনও যন্ত্র আছে? আমার কি রাগ হচ্ছে? না, আমি শোকে পাথর। দুই ‘হতে পারত প্রেমিকা’ বিহনে গোটা একটা পাহাড় হয়ে যাইনি, তাই যথেষ্ট।

হঠাৎই ট্যাক্সি থমকে দাঁড়াল। ট্রাফিক সিগন্যাল। বেজার মুখে বাঁ পাশের জানলা দিয়ে তাকালাম। বিরাট পলাশ গাছ। আকাশ একেবারে ছেয়ে আছে। ফুলে ফুলে লাল! যেন সাতসকালে খানিকটা আবির মেখে নিয়েছে। আহা! কী অপূর্ব, কী যে অপূর্ব! সব রাগ নিমেষে জল; নানা, নিমেষে দোলের রং হয়ে গেল। আমি আরও ভালো করে দেখবার জন্য জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালাম। আর তখনই দেখলাম, লম্বা পাঁচিল। পাঁচিলের একপাশে মস্ত লোহার গেট। গেটের গায়ে ভাঙা সাইনবোর্ড। ফ্যাকাসে রঙে লেখা রংবেরঙ, একটি অনাথ আশ্রম’। বিবর্ণ অনাথ আশ্রমের গায়ে পলাশ গাছ যেন ইচ্ছে করেই এত রং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি মুখ তুললাম। দোতলা বাড়ির গ্রিলে ঢাকা বারান্দা। যেন খাঁচা। সেখানে সারি সারি বালক আর কিশোরের মুখ। ছেঁড়া জামা, শুকনো মুখ। ওরা কি জানে আজ দোল? আজ একটা খুশির দিন? আমার মাথার ভিতর কেমন যেন করে উঠল। কী করল জানি না। ট্যাক্সি স্টার্ট দিতে বললাম, ‘অ্যাই রোককে। ভাড়া কিতনা হুয়া?’

লোহার দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মুসকো দারোয়ানকে গম্ভীর মুখে ভুল হিন্দিতে বললাম, ‘মন্টুর বড়মামা রং আর রসগোল্লা ভেজা হ্যায়।’

মুসকো দারোয়ান অবাক হয়ে বলল, ‘মন্টুর বড়মামা কৌন হ্যায়! আমি ধমক দেওয়ার ঢঙে বললাম, ‘দোল কা রাজামশাই হ্যায়। বহুত রাগি ভি হ্যায়। বেশি বকবক মত্ কর। আজ খুশির দিন হ্যায়। এই আবিরের ব্যাগ আর রসগোল্লার হাঁড়ি আগে বাচ্চাদের দিয়ে এসো হ্যায়। আভি যাও।’

মন্টুকে মেসেজ পাঠিয়েছি।

‘ভাই মন্টু। একটা বিপদে পড়েছি। যন্ত্র ছাড়াই বলতে পারি, এই বিপদের মাত্রা সবথেকে ভয়ঙ্কর। কারণ এটা হল, ভালবাসার বিপদ। সব বিপদ থেকে হয়তো বাঁচা যায়, ভালবাসার বিপদ থেকে বাঁচা যায় না। আমাকে ক্ষমা করিস ভাই। শুভ দোল।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *