বিদ্রোহী

বিদ্রোহী

ইংরেজ কবি পারসি বিশ শেলির মধ্য-শব্দটি আমরা উচ্চারণ করতুম বিশী, কারণ অন্তে রয়েছে e অক্ষরটি এবং তাই আমরা বাল্যবয়সে শ্ৰীযুক্ত প্রমথনাথ বিশির সঙ্গে ইংরেজ কবি শেলির সাদৃশ্য দেখতে পেতুম। তিনি মোলায়েম প্রেমের কবিতা লিখতেন, কিন্তু ওদিকে তিনি আবার ছিলেন মাহমুদ বাদশার মতো প্রতিমা-বিনাশধর্মী– এ সংসারে যত প্রকারের false idols, false ideals, অন্ধবিশ্বাস, ভক্তিভরে কুমড়ো গড়াগড়ি, যা কিছু বুদ্ধিবৃত্তির ওপর নির্ভর করে না তার বিরুদ্ধে ছিল বিশীদার জিহাদ। তাই তিনি কবিতাগুলোকে পরাতেন প্রাচীন আসামের ছদ্মবেশ। নজরুল ইসলাম তখন সবে ধূমকেতুর মতো আত্মপ্রকাশ করেছেন। বিদ্রোহী কাজীকবি পরশুরাম হলে (ক্ষত্রিয়, ফিরিঙ্গি বিনাশার্থে তাঁর অবতরণ) প্রমথনাথ তাঁরই অনবচ্ছিন্ন পূর্ববর্তী বামনাবতার। তাই তিনি অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সেই হয়ে যান বারনারডশর প্রতি আসক্ত। এখানে আরও একটি সাদৃশ্য পাঠক পাবেন। বারনারডশ ছিলেন প্রতিমাবিনাশী। তার আদর্শ চরিত্র, সেই ব্ল্যাক গার্ল ওলড টেস্টামেনটের দেবতাগুলোকে তার ডাণ্ডা দিয়ে ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছে আর খুঁজে বেড়াচ্ছে শাশ্বত ভগবানকে।

প্রমথনাথ তাঁর ডাণ্ডা– নবকেরি নিয়ে আক্রমণ করতেন– প্রধানত বাঙালির জড়ত্বকে। শান্তিনিকেতন আশ্রমও রেহাই পেত না।

এটা এল কোথা থেকে!

আমার মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের চতুর্দিকে যেসব অন্ধ-স্তাবকসম্প্রদায় রবীন্দ্রনাথকে প্রায় কর্তাভজাদের গুরুর আসনে বসাতে চাইতেন তার বিরুদ্ধে ছিল কিশোর প্রমথ-র ঘোরতর উম্মা। এদেরও ছাড়িয়ে যেতেন বাইরের থেকে প্রধানত কলকাতা থেকে আসতেন যেসব স্তাবক সম্প্রদায়। এঁদের কেউ কেউ বিলিতি ডিগ্রিধারী, জামাকাপড় চোস্তদুরুস্ত– কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো।

এদেরই মুখ দিয়ে ডি এল রায় বলিয়েছিলেন, কবিগুরুর উদ্দেশে :

মর্ত্যভূমে অবতীর্ণ কুইলের কলমফ হস্তে
কে তুমি হে মহাপ্রভু নমস্তে নমস্তে!

 কিন্তু এর পরপরই রায় করলেন ভুল; রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে বললেন ঝুট কথা :

আমি একটা উচ্চ কবি, এমনিধারা উচ্চ,
 শেলি ভিক্টোর য়ুগো মাইকেল আমার কাছে তুচ্ছ!

এরকম ধারণা রবীন্দ্রনাথ তো পোষণই করতেন না– বলা দূরে থাক। তিনি ছিলেন শেলির ভক্ত। বস্তুত তিনি বার বার আমাদের পড়িয়েছেন শেলির কবিতা। আমার বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথই বিশীদাকে শেলির প্রতি অনুরক্ত হবার পথ দেখিয়ে দেন।

বস্তুত রবীন্দ্রনাথ এই অন্ধ-স্তাবকদের নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এবং তার ধৈর্যচ্যুতি যখন ঘটল তখন দুর্ভাগ্যক্রমে একাধিক সত্য গুণগ্রাহীকেও তাঁর কাছ থেকে অযথা কটুবাক্য শুনতে হল। ইরানি কবি তাই বলেছেন :

দাবানল যবে দগ্ধদাহনে বনস্পতিরে ধরে
শুষ্কপত্রে, আর্দ্রপত্রে তফাৎ কিছু না করে।

পাঠকের স্মরণে আসতে পারে রবীন্দ্রনাথের অপ্রিয় সত্যভাষণ– যখন তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে কলকাতা থেকে বহুলোক শান্তিনিকেতনে এসে তাঁকে অভিনন্দন জানান। আমার যতদূর জানা, বালক প্রমথনাথ সে সভায় উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু এহ বাহ্য। অন্ধ-স্তাবকদের চিনতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি। কারণ এদের কেউ কেউ বিশেষত বিলেতফের্তারা, শ-র ভাষায় উয়েল শেল্ড অ্যান্ড উয়েল সোপড়, আসতেন আমাদের মতো ডর্মিটারিবাসী নিরীহদের ওপর ফপরদালালি করতে। তখন অনেক ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে যেত, শব্দসমন্বয় দ্বারা যে আলিম্পন সৃষ্ট হয়ে লিরিক উচ্ছ্বসিত হয় সে রসে তাঁরা বঞ্চিত, রবীন্দ্রসঙ্গীতে সুর এবং কথা কীরকম অদ্ভুত অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্টের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে অভূতপূর্ব সমন্বয়জনিত রসসৃষ্টি করেছে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ জড়ভরত। এদের কেউ কেউ ছিলেন আবার পয়লা-নম্বরি ব্লাফমাস্টার। তিনি যে অন্ধস্তাবক নন সেইটে বোঝাবার জন্য একজন আমাকে বলেন, পুব হাওয়াতে দেয় দোলা, মরি মরি– এই মরি মরি টা কেমন যেন বস্তাপচা বলে মনে হয় না। আমি বিস্ময়ে নির্বাক। অতি মহৎ কবিই যে হ্যাঁকনিড ক্লিশের নতুন ব্যবহার করে নবীন রস সৃষ্টি করেন, এ তত্ত্বটা এই ফিরিঙ্গি-মার্কা এ্যাডুয়েট জানে না? আমার তো মনে হত, এস্থলে মরি মরি ভিন্ন অন্য কিছুই মানাত না।

কিন্তু বিশীদা ছিলেন কালাপাহাড়। আশ্রমের সে সময়কার ভাষায় এদের হুট করে দিতে তাকে অতিমাত্রায় বেগ পেতে হত না। তাঁকে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে হত আশ্রমের ভিতরকার অন্ধ-স্তাবকদের নিয়ে। বিশেষ করে বিচার-সভায় অর্থাৎ আশ্রম পরিচালনার ব্যাপার নিয়ে।

শান্তিনিকেতনের বয়স তখন কত? একুশ-বাইশের মতো। এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনও ট্র্যাডিশন, ঐতিহ্য, আচার নির্মিত হতে পারে না। বিশেষত শুরু রবীন্দ্রনাথই করে যাচ্ছেন নানা প্রকারের এক্সপেরিমেন্ট। একবার ভেবে দেখলেই হয়, আশ্রম প্রবর্তনের সময় ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণে একই পঙক্তিতে ভোজন করত না, কিছুদিন পরে একজন কায়স্থ শিক্ষক আসছেন শুনে কর্তৃপক্ষ সন্ত্রস্ত, ব্রাহ্মণ শিষ্য এই ব্রাহ্মণ শুরুর পদধূলি প্রতি প্রাতে নেবে কি না! তারই পনেরো বছর পর আমি যখন পৌঁছলুম তখন সেসব সমস্যা অন্তর্ধান করেছে। ইতোমধ্যে মৌলানা শওকত আলী সাধারণ ভোজনালয়ে ব্রাহ্মণ অব্রাহ্মণ ব্রাত্য সক্কলের সঙ্গে এই পঙক্তিতে ভোজন করে গেছেন।

তবু হিন্দু মন সর্বক্ষণ খুঁত খুঁত করে আচারের সন্ধানে। সে চায়, সর্ব সমস্যার সামনে সে যেন নজির দেখাতে পারে, এটা পূর্বে এরকম পদ্ধতিতে হয়েছে, অতএব এবারেও সেইরকম হওয়া উচিত– এটা এরকম হয়নি, অতএব এবারে হবে না; তাতে করে নবাগত ছাত্রের অসুবিধা হোক আর না-ই হোক। মুসলমান যে এ বাবদে দুর্দান্ত প্রগতিশীল তা নয়, সে-ও ইনোভেশনকে ডরায় এবং তাকে বলে বিদাৎ, কিন্তু ইসলাম মাত্র ১৩০০ বছর পুরনো বলে অতখানি লোকাচার দেশাচারের দোহাই দেয় না।

প্রমথনাথ বিশী ছিলেন এই ট্র্যাডিশন নামক প্রতিষ্ঠানটির দুশমন। বিচার সভা তথা অন্যান্য স্থলে তিনি প্রিসিডেনসের দোহাই শুনতে চাইতেন না। তাঁর বক্তব্য এবং সেটা সবসময়ই উত্তেজিত কণ্ঠে পঞ্চমে, তদুপরি তার কণ্ঠস্বরটি ঠিক আব্দুল করীম খানের মতো নয়– শুনে আমার মনে হত, তাঁর নীতি; নতুন সমস্যা যখন এসেছে তখন তার নতুন সমাধান খুঁজতে হবে এবং যুক্তিবুদ্ধি প্রয়োগ করে পূর্বে হয়নি, তাই এখন হবে না, এটা কোনও কাজের কথা নয়। অবশ্য তিনি যে সবসময় রেশনালিটি এবাভ অল সচেতনভাবে ভলতেরের মতো নীতিরূপে গ্রহণ করতেন তা না-ও হতে পারে।… এমনকি শুরু রবীন্দ্রনাথের মতের বিরোধিতাও তিনি করেছেন। এই নিয়ে বোধহয় গুরু-শিষ্যে মনোমালিন্যও হয়েছে। তবে নিশ্চয়ই চিরস্থায়ী তো নয়ই, দীর্ঘস্থায়ীও নয়।

প্রমথনাথ জাত সাহিত্যিক। শান্তিনিকেতনে যখন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলেজ স্থাপিত হল– সাধারণ জন একেই বিশ্বভারতী বলে, যেন গোড়ার স্কুলটি বিশ্বভারতীর সোপান নয়– তখন রবীন্দ্রনাথ আমন্ত্রণ জানালেন বিশ্বাচার্যদের। তারা এসে পূর্ণোদ্যমে আরম্ভ করলেন, প্রধানত প্রাচ্যবিদ্যাচর্চা (এবং সর্বপ্রধানত ইন্ডলজি)– চীনা, তিব্বতি ভাষাও বাদ গেল না, এবং লাতিন, ফরাসি, জর্মন ইত্যাদি ইউরোপীয় ভাষাচর্চা। সবাই সেই দয়ে মজলেন। বাঘা বাঘা পণ্ডিত যেমন বিধু শাস্ত্রী, ক্ষিতি শাস্ত্রী, সাহিত্যিক অমিয় চক্র, এস্তেক ক্ষিতিমোহনের সহধর্মিণী ঠানদি– কেউ ফরাসি, কেউ জর্মন, কেউ চীনা, কেউ-বা তিব্বতি শিখছেন মাথায় গামছা বেঁধে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নোটবই হাতে নিয়ে লেভি-র ক্লাসে শিখছেন একাক্ষরপারমিতার ঠিকুজি আর অহিবুধনিয় সংহিতার কুলজি।

শুধু শ্রীপ্রমথ নিশ্চল নির্বিকার। তিনি বেঙ্গলি লিতেরাতোর পার একসেলাস (litterateur par excellence) বঙ্গসাহিত্যের একনিষ্ঠ সাধক। তার কোন প্রয়োজন, রজত কাঞ্চন? এমনকি সংস্কৃত ব্যাকরণ ঘটতেও তিনি নারাজ। হরিবাবু স্কুলে যেটুকু শিখিয়ে দিয়েছেন তারই প্রসাদাৎ তিনি কালিদাস শূদ্রক পড়ে নেবেনখন। শুনেছি, লক্ষৌয়ের খানদানি ঘরের ছেলেকে উর্দু ভিন্ন অন্য কোনও ভাষা বলতে দেওয়া হয় না– পাছে বিজাতীয় ভাষা বলতে গিয়ে উর্দুর তরে বিধিনির্মিত তার মুখের ডৌল অন্য ধ্বনির খাতিরে এডজাসটেড হয়ে বিকৃত হয়ে যায়!

বিশ্বভারতীর উত্তর-বিভাগকে (কলেজকে) এহেন নিরঙ্কুশ বয়কট করার পিছনে বিশীদার হৃৎ-করে সেই বিদ্রোহ ভাব ছিল কি না হলফ করে বলতে পারব না।

কিন্তু বিএ এমএ তো পাস করতে হয়; নইলে গ্রাসাচ্ছাদন হবে কী প্রকারে?

অতিশয় অনিচ্ছায় তিনি কলকাতার কলেজে ঢুকলেন। তাঁর কলেজ-জীবন সম্বন্ধে আমি বিন্দুবিসর্গ পর্যন্ত জানিনে। এই মর্মান্তিক অধ্যায় তিনি বোধহয় তার জীবন-পুঁথি থেকে ছিঁড়ে ফেলেছেন। তবে আমি নিঃসন্দেহ, প্রসি-প্রতিষ্ঠান-প্রসাদাৎ তিনি তাঁর কলেজ-জীবনের ন-সিকে কাটিয়েছেন চায়ের দোকানে, মেসের রকে এবং ইহলোক পরলোকের সর্ববিশ্ববিদ্যালয়কে বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ্য অভিসম্পাত অনবরত দিতে দিতে। এবং আমি তার চেয়েও নিঃসন্দেহ, এমএস পাস করার পর তিনি বঙ্গভাষাসাহিত্য ও তজ্জড়িত তত্ত্ব ও তথ্য ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যালয়র্জিত সাতিশয় বিতৃষ্ণা ও চরম জুগুপ্সাসহ অর্জিত জ্ঞানগম্যি শেষনাগের মতো, প্রাগুক্ত অহিবুধনিয় সংহিতায় অহির বাৎসরিক কবর্জনন্যায় অক্লেশে পরম পরিতোষ সহকারে ত্যাগ করেছেন চিরকালের তরে। লোকে যখন শুধোয়, কালচার কী– উত্তরে গুণীজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়লব্ধ জ্ঞানগম্যি বিস্মৃত হওয়ার পর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে সেই কালচার। কিন্তু, প্রমথনাথের কালচার অত্যন্ত কনসানট্রেটেড নির্যাসেরও নির্যাস। মাত্র একবার, তা-ও অযত্নে ডেসটিল করা গৌড়ি (rum) বা মধ্বী (mead, meth) খেয়েই মানুষ হয় গড়াগড়ি দেয় নয় ল্যাম্পপোস্ট ধরে চুমো খায়– যেন লঙ লসট ব্রাদার। রাজা জহানগির খেতেন ডবল ডেসটি এরেক। প্রমথনাথের ব্রুয়ারিতে পাক বড় কড়া–শতগুণে কড়া।

কিন্তু সেই বিদ্রোহীর কী হয়?

শ-র কৃষ্ণাও একদিন হৃদয়ঙ্গম করল, এলোপাতাড়ি লাঠির বাড়ি ধুপুস-ধাপুস মারাতে কোনও তত্ত্ব নেই। নিছক বর্বরস্য শক্তিক্ষয়। প্রমথ তাই প্রমথেশের মতো ধ্যানতাণ্ডবে সম্মেলন করেছেন।

কিন্তু বিদ্রোহী থাকবেই।

কেন?

প্রমথের প্রিয় কবি শেলি। তাঁর প্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ নায়ক প্রমিথিয়স অনবাউন্ড। তিনি দেবাদিদেব দ্যোঃ পিতর, জুপিটারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বর্গলোক হতে অগ্নি নিয়ে এসে মানবসন্তানকে উপহার দেন– যার জন্য তাবৎ সভ্যতাসংস্কৃতির সৃষ্টি। প্রমথগণ ধূর্জটির অনুচর বা ইয়েস-মেন বটেন কিন্তু প্রমথগণ অগ্নিবাহ রূপেও পরিচিত– এঁরা মরীচির পুত্র ও সপ্ত পিতৃগণের প্রমথ। তা প্রমথ অগ্নির পুত্র। অপরঞ্চ গ্রিক পুরাণে আছে প্রমিথিয়ুস নলের (reed–এবং স্যাকরারা এখনও নল ব্যবহার করে, তথা অগ্ন্যস্ত্র অর্থে নালাস্ত্র, নালিকও ব্যবহৃত হয়) মাধ্যমে পৃথিবীতে অগ্নি আনয়ন করেন। এবং আমাদের কাহিনীতে আছে, নলরাজ ইন্ধন প্রজ্বালনে সুচতুর ছিলেন।(১) এবং এই নলের বিরুদ্ধে দেবতারা যেরকম লেগেছিলেন (প্রমিথিয়ুসের বিরুদ্ধে জুপিটার) অন্য কারও বিরুদ্ধে না; আমার পুরাণাদির জ্ঞান অতিশয় সীমাবদ্ধ, তাই শপথ দিতে পারছি না, অন্য কোনও মানবীর স্বয়ংবরে স্বয়ং দেবতারা সপত্নরূপে অবতরণ করেছিলেন কি না–দময়ন্তীর বেলা যেরকম করেছিলেন। এবং নলের অন্য নাম প্রমন্থ।(২)

প্রাচীন গ্রিকেরা প্রমিথিউস শব্দের অর্থ করতেন : পূর্বে (প্র)+ মতি, চিন্তাকারী (methe), কিন্তু অধ্যাপককুল প্রমিথিয়ুস নিয়েছেন সংস্কৃত প্রমন্থ= অরণি বা সমিধ অর্থে; যে দণ্ড মন্থন, ঘর্ষণ করে অগ্নি জ্বালানো হয়। দ্বিতীয়টিই শুদ্ধ। কারণ– metheus থেকে মথ, মন্থ। নইলে th=থ-এর অর্থ হয় না।

প্রমিথিয়ুস, নল– প্রমথ কখনও বিদ্রোহ করেন, কখনও বশ্যতা স্বীকার করেন। আমাদের প্রমথ শেষ পর্যন্ত কী করেন তার জন্য অত্যধিক অসহিষ্ণু না হয়ে বলি–

শতং জীব, সহস্ৰহং জীব।

———-

১. তিনি (নল) এক মুষ্টি তৃণ গ্রহণপূর্বক সূর্যদেবকে ধ্যান করিবামাত্র ওই তৃণে সহসা হুতাশন প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। দময়ন্তী সকাশে সৈরিন্ধ্রী কেশিনীর প্রতিবেদন। বনপর্ব।

২. এ তত্ত্বটি আমার গুরু আমাকে বলেন, কিন্তু আমি এটি কোথাও পাইনি। কেউ জানাতে পারলে বাধিত হব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *