রবির কিরণ হতে আড়াল করিয়া রেখে
মনটি আমার আমি গোলাপে রাখিনু ঢেকে–
সে বিছানা সুকোমল, বিমল নীহার চেয়ে,
তারি মাঝে মনখানি রাখিলাম লুকাইয়ে।
একটি ফুল না নড়ে, একটি পাতা না পড়ে–
তবু কেন ঘুমায় না, চমকি চমকি চায়–
ঘুম কেন পাখা নেড়ে উড়িয়ে পালিয়ে যায়?
আর কিছু নয়, শুধু গোপনে একটি পাখি
কোথা হতে মাঝে মাঝে উঠিতেছে ডাকি ডাকি।
ঘুমা তুই, ওই দেখ বাতাস মুদেছে পাখা,
রবির কিরণ হতে পাতায় আছিস ঢাকা–
ঘুমা তুই, ওই দেখ তো চেয়ে দুরন্ত বায়
ঘুমেতে সাগর-‘পরে ঢুলে পড়ে পায় পায়।
দুখের কাঁটায় কি রে বিঁধিতেছে কলেবর?
বিষাদের বিষদাঁতে করিছে কি জরজর?
কেন তবে ঘুম তোর ছাড়িয়া গিয়াছে আঁখি?
কে জানে, গোপনে কোথা ডাকিছে একটি পাখি।
শ্যামল কানন এই মোহমন্ত্রজালে ঢাকা,
অমৃতমধুর ফল ভরিয়ে রয়েছে শাখা,
স্বপনের পাখিগুলি চঞ্চল ডানাটি তুলি
উড়িয়া চলিয়া যায় আঁধার প্রান্তর-‘পরে–
গাছের শিখর হতে ঘুমের সংগীত ঝরে।
নিভৃত কানন-‘পর শুনি না ব্যাধের স্বর,
তবে কেন এ হরিণী চমকায় থাকি থাকি।
কে জানে, গোপনে কোথা ডাকিছে একটি পাখি।
Swinburne
কার্তিক, ১২৮৮