বিদায় দে মা ঘুরে আসি – ৩

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালও সেক্টর টু-তে আছে। প্রথম পর্যায়ে শ্রীমন্তপুরে এক-বেডের হাসপাতালটির পত্তন করে যে আর্মির ডাক্তার, সেই ক্যাপ্টেন আখতার আহমদ এবং তার বউ খুকু রুমীর পূর্ব-পরিচিত। হাসপাতাল এখন বিশ্রামগঞ্জ বলে একটা জায়গায়— বেশ বড় হয়েছে। সেখানে ডা. আখতার ছাড়াও আরো ডাক্তার এসে জড়ো হয়েছেন— ডা. জাফরুল্লাহ, ডা. মোবিন, ডা. নাজিম। বেগম সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে— লুলু, টুলু, আখতারের বউ খুকু এবং আরো অনেক মেয়ে ঐ হাসপাতালে নার্সের কাজ করে। এসব শুনে মা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। রুমীর কপাল ভালো বলতে হবে। অচেনা জায়গায় গিয়ে ওর কয়েকজন প্রিয় পরিচিত মানুষ পেয়েছে।

রুমী যখন মেলাঘরে খাওয়ার কথা বলে, তখন মায়ের চোখে পানি ভরে আসে। খাওয়ার কষ্টটাই সবচেয়ে বেশি। তাও সবদিন ভাত-তরকারি জোটে না। কতদিন গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে, ক্ষেত থেকে তরমুজ, আনারস এসব তুলে খেয়ে থেকেছে ছেলেরা।

রুমী ঢাকায় এসেছে বটে কিন্তু মা তাকে বেশিক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না। সে মাঝে মাঝে দু একরাত বাসায় শোয়। আবার তিন-চার রাত নেই। মা বুঝতে পারেন, যে-কাজ নিয়ে তারা এসেছে, সেই কাজেই রুমী ব্যস্ত। মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করেছেন, রুমী বলেনি। শুধু বলেছে, বেশি জানতে চেয়ো না, বলা নিষেধ। আবার মাঝে মাঝে নিজেই একটু আধটু আভাস দিয়েছ— কত বিপজ্জনক তাদের কাজ-কারবার। যেমন, যে-রাতে তারা কয়েকজন নৌকায় করে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ারস্টেশনের আশপাশটা রেকি করতে যায়, সে রাতে মিলিটারির হাতে প্রায় ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। মিলিটারিভর্তি নৌকার মুখোমুখি হয়েও বদির সাহস ও ক্ষিপ্রতার জন্য তারা বেঁচে যায়। বদি চোখের পলক ফেলার আগেই তার হাতে-ধরা স্টেনগানের ব্রাশফায়ার করে ওদের ওপর। পুরো ম্যাগাজিন একেবারে খালি করে দেয়। মিলিটারিও গুলি চালিয়েছিল কিন্তু বদির ব্রাশের মুখে একদম সুবিধে করতে পারেনি। মিলিটারিদের কয়েকটা মরে, বাকিরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওদের নৌকা উলটে যায়। অন্ধকার রাত ছিল বলেই রুমীরা নিরাপদে পালিয়ে আসতে পেরেছিল। শুনে মায়ের গা শিরশির করে। আরেকটু হলেই সবাই গুলি খেয়ে মরতে পারত, জখম হয়ে নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারত। কোনোদিন কেউ জানতেও পারত না, ছেলেগুলোর কী হল।

রুমীকে সে কথা বলতে সে হাসে, ‘আমাদের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ কী বলেন জানো? তিনি বলেন, কোনো স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না, চায় রক্তস্নাত শহীদ। অতএব মা-মণি, আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাব, এই কথা ভেবে মনকে তৈরি করেই এসেছি। তুমিও শক্ত হও।’’

কী নিষ্ঠুর রুমী! এমন করে বলতে পারল? মা শক্ত হবেন কী, তাঁর দুই চোখ পানিতে ভরে ওঠে, বুকের ভেতরে তীব্র যন্ত্রণা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ারস্টেশন ওড়াবার দায়িত্ব নিয়ে রুমীদের দলটা ঢাকা এসেছে। কিন্তু এসে দেখে যে, পাওয়ারস্টেশন একেবারে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আগের চেয়ে অনেক বেশি মিলিটারি পাহারা। উলান, গুলবাগ, ধানমণ্ডি পাওয়ার সাব-স্টেশনের অ্যাকশানের পর থেকে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ দারুণ সতর্ক হয়ে গেছে। ইন্টারকন, ফার্মগেট অ্যাকশানের পর সামরিক জান্তা একেবারে খ্যাপা কুকুরের মতো হয়ে রয়েছে। বস্তুত সারা শহরেই এখন নিরাপত্তার ভয়ানকরকম কড়াকড়ি। মাঝে মাঝে রুমী বাসায় তিন-চারজন সহযোদ্ধা-বন্ধু নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। কখন আসে, তার তো ঠিক-ঠিকানা নেই, তাই মা সবসময় বেশিবেশি খাবার রান্না ক’রে ফ্রিজে রেখে দেন— যাতে যখনই ওরা আসে, তাড়াতাড়ি গরম করে টেবিলে দিতে পারেন। ওরা খেতে এলে মায়ের খুব ভালো লাগে। মেলাঘরে খাওয়ার কত কষ্ট, যে ক’টা দিন পারেন, একটু ভালো-মন্দ খাইয়ে দিতে চান। কিন্তু ওদের কি কিছুর ঠিক-ঠিকানা আছে? এইতো ২৫ আগস্টের সন্ধ্যায় রুমী মাকে বলল, ২৮ নম্বর রোডে একটু নামিয়ে দিতে। আধঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবে। মা খুশিমনে ভাবলেন, তার মানে বাসাতেই খাবে। রুমীকে ২৮ নম্বর রোডের এক বাড়িতে— যেখানে ওদের একটা গোপন আস্তানা আছে, সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসে নানারকম খাবারের ব্যবস্থা করছেন; আধঘণ্টাও কাটেনি, রুমীর দুই বন্ধু নিয়ে ফিরে এল। ওদের চোখমুখ উত্তেজনায় লাল। কী ব্যাপার? না ওরা ছয়জন গেরিলা ১৮ নম্বর রোডে এইমাত্র একটা ‘অ্যাকশান’ ক’রে এল। সাত-আটটা খানসেনা মরেছে।

মায়ের তো মুখ হা। বাবারও। জামীরও। ওরা ফেরার সময় প্রায় ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে। চার নম্বর রোডে একটা মিলিটারি-জিপ ওদের পিছু নিয়েছিল, রুমী দেখতে পেয়ে স্টেনের বাঁট দিয়ে গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে ব্রাশফায়ার করে। জিপের ড্রাইভার প্রথম চোটেই মরে, ফলে জিপটা উলটে যেতে ওরা রেহাই পায়। অন্য যে-দুটো গাড়ি ওদের অনুসরণ করে, তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ওরা পালিয়ে আসতে পেরেছে।

তো, এইরকম সব দুর্দান্ত ‘অ্যাকশান’ করে এই বিচ্ছুগুলো। বিষম সাহসী এরা সবাই, নিখুঁত এদের রিফ্লেক্স, অপূর্ব এদের টিওয়ার্ক।

.

এ-ছাড়াও, ঢাকায় বিচ্ছুরা ক্রমাগত ছোটখাটো তৎপরতা চালিয়েই যাচ্ছে। এর কোনো ধারাবাহিকতা বা পূর্ব-নির্ধারিত প্ল্যান থাকে না। যে-যার সুবিধেমতো চলতে ফিরতে করে যাচ্ছে। নানারকম জিনিস দিয়ে এগুলো করা হয়। সবচেয়ে উপযোগী যেটা, সেটার নাম অ্যান্টি-পার্সোনাল মাইন। খুব ছোট্ট সাইজের বিস্ফোরক, প্যান্টের পকেটে বা গাড়ির ভেতরে সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়। এগুলো বিচ্ছুরা সুযোগ-সুবিধেমতো গাড়ির চাকার নিচে বসিয়ে দেয়। যে-রাস্তা দিয়ে মিলিটারি-ট্রাকের বহর যাবে, আগে থেকে জানতে পারলে, সেই রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে আসে। জিপ বা ট্রাকের চাকা মাইনের ওপর পড়লেই বিকট আওয়াজে চাকা ফাটে। বেশির ভাগ সময় গাড়ি উলটে যায়। এতে ক্ষতি হয়তো খুব বেশি একটা হয় না, কিন্তু খানসেনাদের মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। তাছাড়া রাতের বেলা হঠাৎ হঠাৎ গ্রেনেড ফাটানো তো আছেই। খানসেনারা সে-শব্দে ভয়ানক ভয় পায়। ভাবে কত বিচ্ছু না-জানি ঢাকা শহর সয়লাব করে ফেলেছে। খালেদ মোশাররফ এগুলোকেই সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার অর্থাৎ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকলা বলেন। এর দ্বারা খানসেনাদের দিনের আরাম, রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর সেটা করাই হল বিচ্ছুদের আসল উদ্দেশ্য।

.

২৯ আগস্টের রাত বারোটা। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিল, কখন যে মিলিটারি-পুলিশ বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলেছে, কেউ টের পায় নি। গেটে ওদের ধমাধম বাড়ি মারার শব্দে সবাই জেগে দেখে মহা-সর্বনাশ। কোনো দিক দিয়েও এতটুকু ফাঁক নেই যে, রুমী লুকিয়ে পালাতে পারে। খানসেনারা শুধু মা আর রুমীর বুড়ো অন্ধ দাদাকে রেখে বাড়ির অন্য সব পুরুষকে ধরে নিয়ে গেল।

মা-র মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ভোর না-হওয়া পর্যন্ত তিনি পুরো বাড়ির সবক’টা বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে একা-একা পায়চারি করে কাটালেন। সকাল হলে খবর পেয়ে আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব অনেকেই এলেন। শরীফের দুই সহকর্মী— মঞ্জুর আর মিকির সঙ্গে মা এখানে-ওখানে অনেক ছোটাছুটি করলেন, সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের যে অফিস আছে এম.পি.এ. হোস্টেল বিল্ডিং-এ, সেখানে গেলেন, কিন্তু কোনো ফল হল না।

দুদিন পর ৩১ আগস্ট।দুপুর আড়াইটের সময় হঠাৎ শরীফ, জামী, মাসুম এসে হাজির। মা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন। ওদের দিকে একনজর তাকিয়েই আর্তস্বরে বললেন, ‘রুমীকে ছাড়ে নি?’

রুমীকে তারা ছাড়েনি। সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের নির্ভুল খবর জানা ছিল কারা ঢাকায় অ্যাকশানগুলো করে। তারা অনেকদিন ধরে ওঁৎ পেতে ছিল, ২৯ তারিখ দুপুরবেলা বেইমান বাঙালি রাজাকারের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রথমে দুই জায়গা থেকে দুইজন গেরিলাকে ধরে। তারপর তাদের নির্যাতন করে তাদের সঙ্গী অন্য গেরিলাদের খবর বের করে। রাত বারোটায় একই সময়ে মিলিটারি-পুলিশের অনেকগুলো দল হানা দেয় রুমীর বাড়ি, চুন্নুর বাড়ি, আলমের বাড়ি, আজাদের বাড়ি, আলতাফ মাহমুদের বাড়ি, স্বপনের বাড়ি, অ্যাসফীর বাড়ি, শাহাদতের বাড়ি। সব বাড়ি থেকেই, পুরুষমানুষ যে কয়জন পেয়েছে, সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে। কপাল ভালো—শাহাদত, ফতে, আলম, উলফাত তাদের বাড়িতে ছিল না, কেবল তারাই বেঁচে গেছে। স্বপনকে তার মা পালাতে সাহায্য করেন, সে বেঁচে গেছে, কিন্তু তার বাবা আর মামাকে ধরে নিয়ে গেছে। খানসেনারা দুই-তিনদিন সবাইকে অমানুষিক নির্যাতন করে কেবল আসল বিচ্ছুগুলোকে রেখে বাদবাকি আত্মীয়স্বজনকে ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে বটে, কিন্তু কী তাদের অবস্থা! মারের চোটে বেশির ভাগেরই পিঠের শিরদাঁড়ায় ব্যথা, কারো হাত-পায়ের আঙুল ভেঙেছে, কারো কানের পর্দা ফেটেছে, কারো পিঠে বেতের লাল লাল দাগ। কেউ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আর যাদেরকে ছাড়েনি— সেই রুমী, বদি, জুয়েল, আজাদ, আলতাফ মাহমুদ, হাফিজ, বাশার তাদের কোনো খোঁজই বের করা গেল না। মা, বাবা কত জায়গায় দৌড়োদৌড়ি করেন, পীর-ফকিরের কাছে যান। বাবার বন্ধুরা তাঁদের নিজের নিজের চেনা পাক-আর্মি অফিসারদের, ধ’রে খবর জানার চেষ্টা করেন, কিন্তু কেউ কোনো খবর বলতে পারে না। মা’র জীবনটা উলটোপালটা হয়ে যায়। বাসায় কাজের লোক নেই, রান্না-খাওয়া বন্ধ হতে পারে না, তাই তিনি যন্ত্রচালিতের মতো রান্নাবান্না করেন। বাড়িতে স্রোতের মতো আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আসেন, মা তাঁদের আপ্যায়ন করেন। পীরসাহেবদের আস্তানাতেও ধরনা দেন প্রতিদিন। সেখানে দেখা হয় আরো বহু ছেলেহারা মা, স্বামীহারা বউদের সঙ্গে।

এসবেরই ফাঁকে ফাঁকে মা সর্বক্ষণ ভাবেন রুমীর কথা।

রুমী এইতো সেদিন জন্মাল। ১৮৫১ সালের ২৯ মার্চ। ছোট্ট বাচ্চাটি, কত অসহায়, মায়ের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। সেই ছেলে ক্রমে বড় হয়ে এক ব্যক্তিত্বময়, স্বাধীনচেতা তরুণ যুবকে পরিণত হল! তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, চিন্তাভাবনা গড়ে উঠল। অসাধারণ মেধাবী ছেলে রুমী। স্কুলের বই ছাড়াও, কত যে বাইরের বই পড়ত সে— তার মধ্যে বিশেষ করে রুশ বিপ্লবের কাহিনী, চীন বিপ্লবের কাহিনী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, এই উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পৰ্কীয় যে-কোনো বই তার প্রিয় ছল। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোস তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিল। বিদেশের ইয়াসির আরাফাত আর চে গুয়েভারা তার মনের মানুষ ছিল। একবার তো রুমী খেপেছিল প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন আর্মিতে যোগ দেবে বলে। ক্ষুদিরামের ফাঁসির গানটার সুরে সে প্রায় প্রায়ই শিস দিত— একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি। এইতো, ২৯ আগস্টের রাতে, শোবার সময় রুমী বলল, ‘আম্মা, মাথাটা কেন জানি দপ্‌দপ্ করছে। ভালো করে বিলি দিয়ে দাও তো।’ মা.রুমীর মাথার কাছে বসে তার চুলে বিলি কাটতে লাগলেন, সাইড-টেবিলে রেডিওটা খোলা ছিল, একের পর এক বাংলা গান হচ্ছিল— খুব সম্ভব কলকাতা স্টেশন। হঠাৎ কানে এল ক্ষুদিরামের ফাঁসির সেই বিখ্যাত গানের কয়েকটা কলি :

একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি
ওমা, হাসি-হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে জগৎবাসী–

রুমী বলল, ‘কী আশ্চর্য আম্মা। আজকেই দুপুরে এই গানটা শুনেছি। রেডিওতেই— কোন্ স্টেশন থেকে জানি না। আবার এখনও— একই দিনে দুবার গানটা শুনলাম। না- জানি কপালে কী আছে!

এসব কথা ভাবলে মা মাঝে মাঝে কেমন যেন হয়ে যান। কাঁদতে কাঁদতে ফিটের মতো হয়। তারপর আবার মনে জোর এনে উঠে দাঁড়ান, সংসারের যাবতীয় কাজকর্মের দিকে মনোযোগ দেন।

২৯ আগস্ট রাতে এতগুলো গেরিলা একসঙ্গে ধরা পড়ার পর কিছুদিন ঢাকা শহর যেন মূর্ছিতের মতো পড়ে ছিল। কিন্তু সে মাত্র কয়েকদিনের জন্য। শবেবরাতের রাত্রে মা আবার শুনতে পেলেন সেই আকাঙ্ক্ষিত শব্দ— বু-ম্‌ম্‌ম্‌ম্!

মেলাঘর থেকে নতুন গেরিলা-দল এসে ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের এক গ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে। কয়েকদিন পর মেলাঘর থেকে অন্য আরেকটা দল এসে গোপীবাগের পেছনদিকের একটা গ্রামে ঘাঁটি গাড়ল। তার মানে, ঢাকা শহরের দুই বিপরীত প্রান্তের দুটি গ্রামে অনেক বিচ্ছু এসে গেছে। মেলাঘর থেকে ক্যাপ্টেন হায়দার অনেক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এদেরকে পাঠিয়েছেন। এরা বিভিন্ন কৌশলে অল্পঅল্প করে অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় ঢুকবে আর ঢাকা শহর তছনছ করবে।

এসব তথ্য মা অনেক পরে জেনেছেন। কিন্তু তথ্য জানার আগেই মা এবং সেইসঙ্গে ঢাকার সবাই বিচ্ছুদের উপস্থিতি টের পেতে শুরু করেছেন প্রতিদিনের ছোটবড় নানারকম অ্যাকশানে।

১৪ অক্টোবর ঢাকা শহরে মহা হৈচৈ পড়ে গেল। আগের রাত্রে দুজন মুক্তিযোদ্ধা বনানীতে মোনেম খানের বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে মেরেছে। ২০ অক্টোবর বুধবার দুপুর একটায় বিচ্ছুরা স্টেটব্যাঙ্কের ছয়তলায় একটা বাথরুমে বোমা ফাটিয়ে দুজন পাকিস্তানি কম্যান্ডো মেরেছে। তার আগের দিন মঙ্গলবার সকালের দিকে মতিঝিলে প্রুডেন্সিয়াল, ইপিআইডিসি আর হাবীব ব্যাঙ্কের তিনটে বিল্ডিঙের সামনের রাস্তায় বিচ্ছুরা বোমা ফাটিয়েছে, ওখানে রাস্তায় ছয়টা গাড়ি নষ্ট হয়েছে, তিনটে বিল্ডিঙের সামনের দিকে সব জানালার কাচ ভেঙেছে! তারও দুদিন আগে ১৮ তারিখে মোহাম্মদপুরে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে বোমা ফেটেছে।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *