৯
রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে শ্রীমতী বলে—মঞ্জরীর ছেলেটা কী সুন্দর দেখতে হয়েছে, তাই না? ঠিক ওর বাবার মতো
—হ্যাঁ, দেবশিশু যেন। সব শিশুই তো দেবশিশু। ওদের সারল্য ওদের দেবতা করে দেয়। বড় হয়ে গেলে মানুষের চোখে ওই চাহনি থাকে না।
–কে বলল থাকে না?
থতমত খেয়ে অমরু বলে—থাকে, তবে কম মনে হয়। তবু শিশুদের তুলনায় আসে না।
–আসে, একেবারে তাদের মতোই।
–কি করে হবে? শিশুরা সামনে অগ্নিশিখা দেখলে আনন্দে ধরতে চাইবে, বড়রা তা করবে না। শিশুরা পৃথিবীর বিপদ-আপদের কথা জানে না, সব কিছুই তার আপন। বড়রা তা ভাবতে পারে না। ভাবতে পারে না বলে মন বেদনার্ত হয়ে থাকলেও উপায় নেই। এই যে সব সময় মনের মধ্যে কিছুর একটা ব্যথা, একটা অপূর্ণতার ক্রন্দন গুমরে মরে বলে শিশুর মতো অমন হাসতে পারে না। সবাই দেখি হাসে, তুমিও হাস। আমি জানি ওসব অভিনয়। পৃথিবীতে চলতে গেলে মানুষকে আনন্দ দিতে হলে অমন অভিনয় না করে উপায় নেই। তুমিই বল।
শ্রীমতী স্তব্ধ হয়ে থাকে। কি নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল ভুলে যায়। ভাবে, এসব বলছেন কি তার স্বামী? মন সব সময় কাঁদে তাঁর? কি জন্য? সে তো সব সময় তাঁর মনে ভরিয়ে রাখতে চাইছে সব কিছু দিয়ে?
—আমাকে পেয়ে তুমি তাহলে সুখী হওনি?
অমরু ব্যস্ত হয়ে স্ত্রীকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে—এ তুমি কি বলছ? পৃথিবীতে আমার চেয়ে ভাগ্যবান কে? তোমার মুখে এই কথা এল কেন? আমি কি অন্যায় কিছু বলেছি।
–তুমি যে বললে, তোমার মন সব সময় কাঁদে।
—বলেছি বটে। কিন্তু সেই কান্না তো অন্য কান্না। আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারিনি। পরে বলব। দেখো, ঠিক বুঝবে তুমি। আমার ওপর তখন আর রাগ থাকবে না।
–তোমার ওপর রাগ ছিল কখন? কোনোদিন হয়েছে?
–তা অবশ্য হয়নি।
শ্রীমতী ভাবে মঞ্জরীর মতো তার পুত্র হলেও দেবপুত্রের মতো দেখতে হবে হয়তো, কিন্তু তার মনটা কি পিতার মতো হবে? তা কি সম্ভব? পুত্র তো সেও চায়। কিন্তু ভয় হয়। সে যদি সাধারণ হয়ে যায়? তবু অপুত্রক হয়ে থাকলে লোকে সুলক্ষণা বলবে না। এইস কথা ভাবতে ভাবতে কোনো একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
দুদিন পরে রাজপুরী থেকে সংবাদ আসে সেদিনই পূর্বাহ্নে স্বামী দেবদত্ত ব্রহ্মচারী সেখানে শ্রীমতীকে ডেকে পাঠিয়েছেন। অমরু এবং শ্রীমতী দুজনাই বিস্মিত হয়। এভাবে তিনি কখনো ডাকেন না। স্বামীজীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ মন্দিরেই হয়ে থাকে, যেখানে গুরুদেব ক্রিয়াশক্তিও উপস্থিত থাকেন। আজ রাজপুরীতেই ডেকেছেন। কোনো রানী কিংবা অন্য কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাকা হয় না। অন্য চিকিৎসক রয়েছেন, তাঁরাই দেখেন। তাই তাকে যখন ডেকেছেন, নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে।
সেদিন সভা বসবে না। রাজপ্রাসাদে সভাসদেরা কেউ নেই। অমরু স্ত্রীকে নিয়ে প্রবেশ করতেই একজন প্রহরী এসে বলে—স্বামীজী এইমাত্র এসেছেন। তিনি মহারাজের বিশ্রাম কক্ষে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। আপনাদের সেখানে যেতে বলেছেন।
প্রহরী চলে যেতেই অমরু দাঁড়িয়ে পরে। বলে-আমার যাওয়ার দরকার কি? শ্রীমতী তার হাত চেপে ধরে টানে। বলে—এসো। তুমি সব নিয়মের বাইরে। মহারাজা উভয়কে দেখেই উৎফুল্ল হন।
স্বামী দেবদত্ত শ্রীমতীকে বলেন—আমি চিকিৎসক নই। তবু আমার মনে হল, তোমার একবার মহারাজকে পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।
শ্রীমতী সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে, স্বামীজী নিশ্চয় মহারাজের শারীরিক কোনো বৈলক্ষণ্য দেখেছেন। সে মহারাজের কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে তাঁকে পরীক্ষা করে!
মহারাজ মৃদু হেসে বলেন—আর কতদিন?
শ্রীমতী বলে—একথা বলছেন কেন মহারাজ? কী হয়েছে আপনার?
–সে কথা তো আপনিই বলবেন।
—আপনার অসুবিধার কথা আগে বলুন।
–আমার এমনিতে কোনো অসুবিধা নেই। স্বামীজী ডেকেছেন আপনাকে। কথা বলতে বলতে শ্রীমতী মহারাজকে পরীক্ষা করে চলে। শেষে বলে–আপনার সামান্য কোনো অসুবিধা বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিক কোনো কিছু অনুভূতির কথা বলুন।
স্বামীজী বলে ওঠেন—হ্যাঁ, সেই কথাই বলুন মহারাজ।
মহারাজ উভয়ের দিকে বিস্মিত দৃষ্টি ফেলে স্বামীজীকে বলেন—আপনাকে কি আমি কিছু বলেছি?
—হ্যাঁ। সেইজন্যই তো একে ডেকে এনেছি।
—কি বলেছিলাম স্বামীজী?
–বাঁ হাত কয়েক মুহূর্তের জন্য অবশ হয়ে গিয়েছিল।
—হ্যাঁ, আমার হয়ে গেল। পরক্ষণেই কুস্তীগীরকে চিৎ করে দিয়েছিলাম। তবু আমার মনে হল সে ইচ্ছে করে হেরে গেল। আমি ক্রোধান্বিত হয়েছিলাম। সে স্বীকার করেনি।
শ্রীমতী বলে—শুধু একদিন? শুধু সেইদিনই? আর কোনোদিন নয়?
—আর একদিনও হয়েছিল।
—কতদিন পর পর?
–আমার খেয়াল নেই।
শ্রীমতী মহারাজের নাড়ি দেখে অনেকক্ষণ ধরে। দুই চোখ দেখে। দুই হাত ওপরে তোলে, নীচে নামায় কয়েকবার। তারপর উঠে দাঁড়ায়।
–কি দেখলেন?
শ্রীমতী স্বামীজীর দিকে তাকায়।
স্বামীজী বলেন—মহারাজের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তুমি যা দেখবে ওঁকে জানাতে হবে।
মহারাজ আকুতি মেশানো দৃষ্টিতে বলেন—আমার পৌত্রের বয়স মার আট বৎসর, সেটাই চিন্তার। তবে আপনি কিছু বলার আগে দানায়িকের উপস্থিতি প্রয়োজন। তিনি বোধহয় এতক্ষণে এসে গিয়েছেন।
একটু পরেই দানায়িক এসে প্রবেশ করেন। স্বাস্থ্যবান হলেও বৃদ্ধ তিনি।
কবি-পত্নীর রূপের কথা শুনলেও প্রথম দেখলেন। দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। বলেন—চির এয়োতী হোন আপনি।
স্বামী দেবদত্ত ব্রহ্মচারী শ্রীমতীর দিকে চেয়ে বলেন—এবারে বলতে পার, কি দেখলে।
—স্বামীজী আমি প্রথমেই বলব, মহারাজ প্রত্যেকদিন খালি পেটে যে তিল তেল পান করেন সেটি বন্ধ করতে হবে।
মহারাজ বলে ওঠেন—সে কি! এ যে আমার চিরকালের অভ্যাস।
—এতদিন মহারাজ আপনার বয়স কম ছিল, সহ্য হত। এখন বিপদ ডেকে আনছে।
স্বামী দেবদত্ত প্রশ্ন করেন—কোন ধরনের বিপদ?
—কয়েক বৎসরের মধ্যে উনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
মহারাজের চোখে মুখে দুশ্চিন্তা ফুটে ওঠে। তিনি বলেন-আমার পৌত্রের যে ততদিনে কৈশোরও অতিক্রম করবে না।
—সেই জন্যই বলছি খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে আপনাকে অনেক সংযত থাকতে হবে।
–আমি যে দুর্বল হয়ে পড়ব।
–না, এতটুকুও দুর্বল হবেন না। কারণ আপনি আপনার দৈনন্দিন শরীর চর্চা এতটুকুও কম করবেন না।
দেবদত্ত ব্রহ্মচারী হাত তুলে বলেন—ব্যস, আর কোনো কথা নয়। মহারাজ, এইভাবেই আপনাকে চলতে হবে। কারণ আপনার শরীর শুধু আপনার জন্য নয়, সমস্ত সাম্রাজ্যের মানুষের মঙ্গল অমঙ্গল তার ওপর নির্ভর করছে।
মহারাজ আর কিছু বলতে পারেন না। শুধু অমরুকে বলেন—কবি, আপনি বাড়িতে তেল খান?
—হ্যাঁ মহারাজ। তবে শুধু শুধু তেল খাই না। কখনো তো খাইনি। কেমন লাগে জানি না।
অমরুর সরলতা এত বেশি প্রকট হয়ে ওঠে, যে দেবদত্ত ব্রহ্মচারীও হেসে ফেলেন।
.
মন্দিরে প্রবেশের মুখে শ্রীমতী নৃত্যগীতের ধ্বনি শুনতে পায়। সাধারণত এইসময় অবসরের সময়। আজ সে একা এসেছে গুরুদেব ক্রিয়াশক্তিকে দেখতে এবং নিভৃতে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। অমরু সঙ্গে আসেনি। সে গিয়েছে রাজপুরীতে। মহারাজা বলেন, অমরু শুধু সভাকবি নয়, সে তাঁর পরামর্শদাতাও বটে। যে সব জটিল সমস্যার উত্তর তিনি খুঁজে পান না, কবি সহজভাবে তার সমাধান করে দেয়। তাই তার ডাক পড়ে মাঝে মাঝে স্বতন্ত্রভাবে। এই পরামর্শ দিতে অমরুকে বিশেষ কোনো চিন্তা করতে হয় না।
শ্রীমতী ইতস্তত করে নৃত্যগীতের কক্ষে প্রবেশ করত। সেই সময় ভবানীদি তাকে দেখে ফেলে তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বলে—গুরুদেব শুনতে চাইলেন এই সময়।
-কেমন আছেন?
—আরও অশক্ত হয়ে পড়েছেন। যা কোনোদিন বলেন না তাই বলে দিয়েছেন কালকে। বলেছেন, তিনি আর বেশিদিন নেই। তাঁর খুব দুঃখ তোমাদের দু’জনার মতো আর কাউকে সংসার জীবনে নিয়ে যেতে পারলেন না।
–আমি একটু দেখা করতে পারব?
পারবে না কেন? সন্ন্যাসী হয়েও তোমার ওপর তার আলাদা স্নেহ রয়েছে, আমরা বুঝতে পারি।
শ্রীমতী গিয়ে দেখে গুরুদেব প্রায় শয্যাশায়ী। সে তাঁকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই তিনি বলেন—ভালোই হয়েছে। এদের সঙ্গে না নাতো।
শ্রীমতী একমুহূর্ত দেরি না করে ওদের সঙ্গে নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। তবে অনেকদিনের অনভ্যাসে সে কিছুক্ষণ পরে সামান্য ক্লান্ত হয়। সেই ক্লান্তি চেপে রেখে নেচে যায়। গুরুদেব থামতে বলেন।
অবলা তাকে ফিসফিস করে বলে—তুই হাঁপিয়ে গেলেও অনেকক্ষণ পেরেছিস। গুরুদেব বলেন-এখন তোমরা যারা দেবদাসী রয়েছ, তারা দেবদাসীই থাকবে। কারণ আমি আর কিছু করতে পারলাম না। তবে এটুকু বলতে পারি তোমাদের ওপর কোনোরকম অত্যাচার হবে না। তোমাদের সম্মান নির্ভর করবে তোমাদেরই ওপর।
ওরা চলে গেলে গুরুদেব ক্রিয়াশক্তি বলেন—তোমার সংসার কি রকম চলছে শ্ৰীমতী?
শ্রীমতী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
গুরুদেব একটু অপেক্ষা করে বলেন—হুঁ। ওটা পশুপতিনাথের ওপর ছেড়ে দাও। তিনি যা করছেন, ভালোর জন্যই করছেন।
-সবাই হয়তো ‘করুণার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আমার দিকে।
—অমরু কি বলে?
—ওঁর অত খেয়াল নেই। তবে মঞ্জরীর ছেলেকে দেখলে তার সঙ্গে খেলতে শুরু করে।
—ঈশ্বর যেটুকু দেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাক। তোমার মনের দুঃখ বুঝতে পারি। সব সময় ভাববে, যা পেয়েছ তাই যথেষ্ট।
—হ্যাঁ গুরুদেব, যত পাওয়া যায় আকাঙ্ক্ষা তত বাড়ে। আমি সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করব। অবলাদের কথা ভাবি, আমি কতখানি পেয়েছি অথচ ওরা ভাবে হয়তো ওরা কিছু পায়নি। আবার ওরা অন্য কিছুও ভাবতেও পারে। এই সুন্দর পরিবেশে আপনার আর স্বামীজীর উপদেশ পাচ্ছে। দয়াবতীর মতো পুণবতীর সান্নিধ্য পাচ্ছে।
—ঠিকই বলেছ।
—গুরুদেব আপনার নিজের কথা বলুন।
গুরুদেব হেসে বলেন—বুঝতে পেরেছ তাহলে?
—হ্যাঁ, মাধবী কেমন শিখছে?
—যতটা ভেবেছিলাম ততটা নয়। তোমার মতো কাউকে দেখলাম না। সেজন্যই হয়তো ঈশ্বর তোমাকে সন্তান দেননি। তবে পরে কি হবে এখনো স্পষ্ট জানি না।
-গুরুদেব, আপনি না থাকলে কি করব?
—সব ঠিক হয়ে যাবে শ্রীমতী। তোমার মতো বুদ্ধিমতীকে কি আর বোঝাব?
—আর কিছুদিন কি থেকে যেতে পারেন না? এযে খুবই তাড়াতাড়ি দেখছি।
-চেষ্টা কি করিনি? সারা দেহে নাড়ির স্পন্দন শুনতে পাই। তুমি দেখো।
গুরুদেব হাত বাড়িয়ে দেন। শ্রীমতী একটু দেখেই ছেড়ে দিয়ে তাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে ফেলে।
—ওঠো। তুমি আয়ুর্বেদজ্ঞ। আমি তো বৃদ্ধ। কত সদ্য বিবাহিতার স্বামীকে এমন দেখবে, কত মায়ের যুবক সন্তানকে এমন দেখবে, তবু অবিচল থাকতে হবে তোমাকে। এক বিন্দু অশ্রুপাত হলে চলবে না।
–এদের কি হবে?
–কেন, দেবদত্ত রয়েছে।
শ্রীমতী আবার কেঁদে ফেলে।
—কেঁদো না শ্রীমতী। বরং ওদের প্রকৃত সত্য জানিয়ে দাও। এতদিন আমাকে দেখেছে, ভেঙে পড়তে পারে।
শ্রীমতী ওঁকে প্রণাম করে ওদের কাছে যায়। ভবানীদিকেও ডাকে। সবাইকে বলে—তোমরা আজ রাতে গুরুদেবের কক্ষের বাইরে থাকবে। দয়াবতী, গুরুদেব তোমার স্তব শুনতে ভালোবাসেন। তুমি সারারাত নিম্নস্বরে স্তব করতে পারবে?
–কেন পারব না?
ভবানীদি উৎকণ্ঠিত স্বরে বলে—কিন্তু কেন? কি হয়েছে শ্রীমতী?
—উনি কালকে আর থাকবেন না।
সবাই একসঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
—আমি যাচ্ছি। আমি আবার আসব। স্বামীজীকে সংবাদটা দিতে হবে। তোমাদের কান্না যেন কিছুতেই গুরুদেব শুনতে না পান।
ভবানীদি বলে—একি নাড়ি দেখে তোমার নিদান?
-গুরুদেব নিজেই বলেছেন। তারপর হাত বাড়িয়ে আমাকেও দেখে নিতে বলেন।
দয়াবতী সহসা ছুটে চলে যায় তাঁর কক্ষের দিকে। সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু পরেই দয়াবতী এসে শ্রীমতীকে বলে—তোমায় ডাকছেন। শ্রীমতী দৌড়ে যায়। গুরুদেব তাকে মৃদু কণ্ঠে বলেন—আমি তোমার ক্রোড়ে একটি শিশু দেখলাম এইমাত্র।
–আমি সেকথা ভাবছি না, আপনি আর কয়েক দিন ভালো থাকুন। আপনি তো বুঝছেন ঠাকুর।
ক্রিয়াশক্তির মুখে অতিক্লান্ত এক ফোঁটা স্নেহের হাসি—পাগলি।
শ্রীমতীর সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে। সে চিৎকার করে কাঁদবে না। সে শব্দ করবে না। তার নড়তে ইচ্ছা করছে না ওখান থেকে। তবু একবার অন্তত যেতেই হবে।
গুরুদেবের প্রয়াণের পরে প্রায় ছয়মাস অতিবাহিত হয়েছে। শ্রীমতীর মন্দিরে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অমরু ইতিমধ্যে একটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছে।
একদিন মঞ্জরী একা এসে উপস্থিত তার কাছে। শ্রীমতী বলে—পৃথ্বীশকে আনলে না?
মঞ্জরী গম্ভীর স্বরে বলে—না। তুই আমার সঙ্গে মন্দিরে চল্।
—হঠাৎ?
—দয়াবতীর সঙ্গীত, স্তব সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে একা থাকতে ভয় পাচ্ছে।
সব সময় একসঙ্গে থাকতে চায়।
–কেন? বিগ্রহই তো তার প্রাণ।
—কিছু বলছে না। তুই একটু চল্। তুই বুঝতে পারবি। সেই সময় অমরু এসে সব শুনে বলে—আমি সঙ্গে যাব? মঞ্জরী বলে–আপনার বন্ধুকে আনিনি। আমাদের ব্যাপার। —তাহলে শ্রীমতী একাই যাক।
মঞ্জরীর শকট ছিল। মন্দিরে পৌঁছতে বেশিক্ষণ লাগল না।
ওদের আসতে দেখে দেবদাসীরা সবাই সামনে চলে আসে। দয়াবতীও ওদের সঙ্গে চলে আসে। ওদের দুজনকে দেখে সে যেন কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়।
শ্রীমতী জিজ্ঞাসা করে—কি হয়েছে দয়াবতী?
দয়াবতী চুপ করে থাকে।
সেই সময় স্বামী দেবদত্ত ব্রহ্মচারী বাইরে এসে সবাইকে দেখে বিস্মিত হন। তিনি বলেন—কি হয়েছে? তোমরা সবাই এখানে। শ্রীমতীও এসেছ? কারও ব্যাধি হয়েছে?
—দয়াবতীর সঙ্গীত বন্ধ হয়ে গিয়েছে শুনলাম।
—হ্যাঁ। তুমি এসে ভালোই হয়েছে। তুমি দেখ, যদি বুঝতে পার।
সেই সময় একজন সাধু এসে উপস্থিত হন। তিনি সোজা বিগ্রহের সামনে গিয়ে প্রণাম জানান, তারপর গুরুদেব ক্রিয়াশক্তির কক্ষটি দেখেন। তাঁর আসন যেখানে ছিল সেখানে প্রণাম করেন। শেষে বিগ্রহের পশ্চাতে যেখানে তিনি তাঁর পুঁথি রাখতেন সেখানে গিয়ে পুঁথিগুলো নাড়াচাড়া করে মস্তক ঠেকিয়ে বাইরে আসেন।
স্বামী দেবদত্তও তাঁকে বলেন—এই স্থানটি আপনার পরিচিত মনে হচ্ছে।
সাধু হেসে বলেন—হ্যাঁ, আমি পনেরো বৎসর এখানে ছিলাম। গুরুদেব আমাকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেন। গুরুদেব দীক্ষান্তে নাম দিয়েছিলেন আনন্দস্বামী।
অমরু, শ্রীমতী, দয়াবতী, অবলা, মঞ্জরী সবাই সাধুর স্নিগ্ধ হাসি দেখে শ্রদ্ধাবনত হয়। গুরুদেবের যোগ্য শিষ্য। বড় আপন বলে মনে হয়।
স্বামী দেবদত্ত বলেন—শুনে খুবই আনন্দ হল। শুনেছিলাম হিমালয়ে ছিলেন। তবু দীক্ষাস্থানের কথা মনে পড়েছে। খুবই স্বাভাবিক।
–না, ঠিক তা নয়। আমি আমার কথা ভাবিনি কখনো। একদিন মহাযোগী পরমহংস দেব আমার সামনে আবির্ভূত হয়ে বললেন, এখানে চলে এসে এই মন্দিরের ভার নিতে। তাই বাধ্য হয়ে এসেছি। তাঁর আদেশ সব সময় শিরোধার্য।
স্বামী দেবদত্ত ক্রুদ্ধস্বরে বলেন—আমি তো জানি না। আমি তবে কোথায় যাব? ক্রিয়াশক্তি নিজে আমাকে রেখে গিয়েছেন। তাছাড়া রাজপুরীর ভার কে নেবে? আনন্দস্বামী বলেন—রাজপুরী? না না আমি পারব না। পরমহংস আমাকে শুধু মন্দিরের ভার নিতে বলেছেন।
স্বামী দেবদত্ত হেসে বলেন—তবে? নিশ্চয় কোনো ভুল হয়েছে।
–না, ভুল হয়নি।
দেবদাসীরা চাইছে নতুন সাধু মন্দিরের ভার নিলে খুব ভালো হয়। কিন্তু স্বামীজীকে মন্দির পরিত্যাগের আদেশ কে দেবেন?
সেই সময় সহসা মহাযোগী পরমহংস মন্দিরে প্রবেশ করেন। মুহূর্তেই শ্ৰীমতী চিনতে পারে মায়ের সেই সন্ন্যাসীকে। সে ছুটে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করার আগেই তিনি বলেন–ক্রিয়াশক্তি শেষ যে দৃশ্য দেখে তোমাকে বলেছিল, তা সত্য। তুমি শীঘ্রই সন্তানবতী হবে।
মঞ্জরী তো এগিয়ে এসে শ্রীমতীকে স্পর্শ করে। তাকে জড়িয়ে ধরার সাহস পায় না মহাযোগীর সামনে।
মহযোগী তীব্র দৃষ্টিতে দেবদত্তের দিকে চেয়ে বলেন—তুমি মহাপাপ করেছ। এখুনি মলয়াবন্ত পাহাড়ের আশ্রমে ফিরে গিয়ে ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন কর অন্তত পনেরো বৎসর। নইলে সংসারী হও। আমি রাজপুরীতে তারকেশ্বর মন্দিরের পুরোহিতকে পাঠাচ্ছি।
মহাযোগী মন্দির ত্যাগ করে দু চার পা গিয়ে অদৃশ্য হন।
সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে দেবদত্ত মাথা নিচু করে মন্দির ত্যাগ করে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছেন।
আনন্দময়ী বলেন—দয়াবতী কে?
দয়াবতী এগিয়ে আসে।
সাধু বলেন-তুমি বিগ্রহের সামনে গিয়ে তোমার স্তব শুরু কর। আমি কিছুক্ষণ পরে যাচ্ছি।
দয়াবতী তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়। অবলাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দীর্ঘদিন পরে দয়াবতীর চলনে কোনো জড়তা নেই।
শ্রীমতীকে তিনি বলেন—তুমি তো দেখলাম ওঁকে চেনো।
—আজ্ঞে হ্যাঁ প্রভু। উনি আমার মায়ের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। মায়ের ওপর ওঁর কৃপা ছিল।
সাধু মিষ্টি হেসে বলেন—তোমার ওপরও রয়েছে দেখলাম।
-আমার ভাগ্য। আমাদের সবার ভাগ্য গুরুদেবের জায়গায় আপনাকে পেলাম। এও বোধহয় সেই মহাপুরুষের দান।
দয়াবতীর সঙ্গীত ভেসে আসছিল। সাধু অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলেন। বললেন—স্বর্গীয়।
একসময় শ্রীমতীরা মন্দির ছাড়ে। ফেরার পথে মঞ্জরী বলে—অপেক্ষার দিন শুরু হল শ্রীমতী।
শ্রীমতী লজ্জিত হয়।
.
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানীর তুলনা মেলা ভার। অনেক পর্যটকের বিবরণীতেই লিখিত প্রমাণ রয়েছে। এখানকার জনজীবন সুখে-দুঃখে হাসি-কান্নায় অতিবাহিত হয়। হিন্দুদের মধ্যে নানান শ্রেণী ভেদ, কিন্তু নেই কোনো অশান্তি। মহারাজা মুসলমানও এনে রেখেছেন, তারা নিপুণ গোলন্দাজ হয়ে ওঠে বলে। তাদের জন্য মসজিদ রয়েছে। রাজা এবং অধিবাসীরা ধর্মবিষয়ে খুবই সহনশীল। বিদেশিরা বিস্মিত এতবড় সংস্কৃতিসম্পন্ন দেশ তারা দেখেনি বলে। তারা বাণিজ্য করতে এলেও রাজাকে শ্রদ্ধা না করে পারত না। অস্ত্রের ঝনঝনানির চেয়ে সঙ্গীতের মুর্ছনা স্বভাবতই এদের প্রিয়। অতুলনীয় ঐশ্বর্য এবং অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার এদের এমন করেছে। মরুভূমির খাদ্যাভাবে ক্লিষ্ট হয়ে নিজেদের জীবিত রাখার তাগিদে অনন্যোপায় হয়ে এদের অন্য দেশের দিকে ধাবিত হতে হয়নি। তাই চোখের সামনে যা দেখেছে তা-ই টেনে হেঁচড়ে নিজেদের দখলে আনতে চায় নি। এটা কোনো অলসতা বা কাপুরুষতার পরিচয় নয়। দেশের জলবায়ু মানুষের স্বভাব চরিত্রের ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলে, তবে সম্পূর্ণরূপে নয়। দিগ্বিজয়ী বীর হতে হলে কোন ধরনের জলবায়ুর প্রয়োজন বোঝা কঠিন। চেঙ্গিস খাঁয়ের দেশ ছিল খুবই শীতল এবং দেশে খাদ্যাভাব নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু আলেকজাণ্ডারের জন্ম যে দেশে সেই দেশ ছিল শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। বিজয়নগরও ছিল সমৃদ্ধ। এর এক এক ঋতুতে এক এক রূপ। কখনো ঘন বর্ষা, কখনো বসন্ত। শীতের আমেজও পাওয়া যায়। আবার মাঝে মাঝে এই সাম্রাজ্যের কোথাও কোথাও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। শ্যামল ক্ষেত বাদামি রঙ ধরে শুকিয়ে যায়। মাটি ফেটে চৌচির। চারদিকে হাহাকার ওঠে একটু অন্নের জন্য, দেহ হয় কংকালসার এবং অবশেষে মৃত্যু। এরপর আবার বর্ষণ নামে, মাটি সরস হয়ে ওঠে সবুজের দেখা মেলে, আবার ফুলে ফলে ভরে ওঠে চারদিক। তখন শুধুই প্রাচুর্য। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধিবাসীগণ এই প্রাচুর্য দেখেই অভ্যস্থ। অনটন ব্যতিক্রম মাত্র।
.
শ্রীমতী মর্মে মর্মে বুঝতে পারে আয়ুর্বেদজ্ঞ হলেও প্রসব বেদনা থেকে নিষ্কৃতি নেই। মনুষ্যকুলে নারী হয়ে জন্মালে এর জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে। অথচ পশু-মাতারা কত নিশ্চিন্তে জন্ম দেয়। গর্ভে যে তার সন্তান রয়েছে সেই বোধও থাকে না। তাই জন্মের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পশুমাতার মাতৃস্নেহ থাকে না। জন্মানোর পরেও তারা সন্তান সম্বন্ধে যে সচেতনতা দেখায়, জিহ্বা দিয়ে তার পিচ্ছিল গাত্র লেহন ইত্যাদির মধ্যে গভীর মাতৃস্নেহ কতটা কাজ করে জানা যায় না। তার অন্যান্য আচার আচরণের মতো এসবও সম্ভবত সহজাত। কিন্তু মনুষ্যকুলে নারীর গর্ভে অঙ্কুরের উন্মেষ হতেই অন্তরে তার মাতৃস্নেহ জাগ্রত হয়। সেই স্নেহের উত্তাপে গর্ভের ভ্রূণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মায়ের মনে কত স্বপ্নের উদয় হয়। সেই স্বপ্ন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে দশ মাস মনকে রঙিন করে রাখে। যেটি শেষের দিকে অধৈর্য হয়ে গর্ভে নড়াচড়া শুরু করে। প্রসব কালের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও মা আকুলভাবে প্রতীক্ষা করে সেই কচি মুখটি দর্শনের জন্য।
শ্রীমতীর প্রত্যাশা শিশুর মুখে সেই নিষ্কলুষ স্বপ্নময় চাহনি দেখবে যা তার স্বামীর চাহনিতে রয়েছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সে শুনতে পায় মঞ্জরী যেন দূর থেকে তাকে ডাকছে—চোখ মেলে দেখ শ্রীমতী দেবশিশুর জন্ম দিয়েছিস।
শ্রীমতী বুঝতে পারে সে অচেতন হয়ে পড়েছিল। অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তাকে। এবারে নিজের সন্তানের মুখদর্শন করবে। মঞ্জরী আবার ডাকে—জন্মেই মাকে দেখবে বলে কাঁদছে, আর তুই চোখই খুলছিস না।
এবারে শ্রীমতী একটু ভয় পায়, যদি সে আশাহত হয়। পরমুহূর্তে ভাবে, ছিঃ নিজের গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীতে অভ্যর্থনা করতে দ্বিধাগ্রস্থ হলে সন্তানের অমঙ্গল হতে পারে। সে চোখ মেলে। রাজপুরী থেকে পাঠানো দাই মায়ের মুখের সামনে শিশুকে মেলে ধরে। সত্যই ঠিক যেন দেবশিশু। কিন্তু চোখের সেই দৃষ্টি?
মঞ্জরীকে সে জিজ্ঞাসা করে—এর চোখ কেমন হয়েছে মঞ্জরী?
—খুব সুন্দর হয়েছে।
—চাহনি?
—এখনো ঠিকভাবে তাকাতেই পারে না। দৃষ্টি স্থির হোক। তুই বড় নির্দয় ৷ একবার বুকে টেনে নিতেও ইচ্ছে করছে না?
-করছে, খুবই করছে। তবু একটু মিলিয়ে নিতে চাইছি।
—একটা জিনিস আমি বলে দিতে পারি।
আগ্রহ ভরে শ্রীমতী জিজ্ঞাসা করে—কি?
—এ খুব শক্তিশালী হবে।
শ্রীমতী বারবার শিশুর চোখের দিকে চায়। আঙুল দিয়ে বারবার তার মুখ নিজের মুখের সামনে ফিরিয়ে ধরে। তারপর বুঝতে পারে।
মঞ্জরী বলে—কি হল? মুখের হাসি মিলিয়ে গেল কেন?
-না। এর বাবা কোথায়?
মঞ্জরী হেসে ওঠে–বাঃ সুন্দর নাম দিয়েছিস তো? “এর বাবা”। তিনি তো বাইরে বসে রয়েছেন, সঙ্গে তাঁর বন্ধু।
–এখন ডাকা যায় না?
—তুই বললেই ডাকা যায় ৷
-তাহলে ডেকে নিয়ে আয়।
—ওঁর বন্ধুকে?
—তিনিও আসুন।
—তুই একটা অদ্ভুত মেয়ে। এই সময় স্বামীকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে ডাকে কেউ।
একটু পরেই অমরু আর অতীশ আসে। অতীশ তো শিশুকে দেখে লাফিয়ে ওঠে। অমরুর মুখেও হাসি। আনন্দের হাসি।
শ্রীমতী তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসা করে—এ বড় হয়ে কি হবে?
অতীশ এক মুহূর্ত দেরি না করে বলে ওঠে—-বীর যোদ্ধা।
অমরু বলে—আমি বুঝতে পারছি না।
শ্রীমতী প্রশ্ন করে—কবি হবে?
—কবি হতে হলে কেমন হতে হয়, আমি জানি না।
—পরে ভেবে বলো।
অমরু ঘাড় কাত্ করে।
শ্রীমতী জানে, সেই দৃষ্টি পায়নি তার সন্তান। তবে খুবই সুন্দর হয়েছে। দৃষ্টিও স্নিগ্ধ। বীর হতে পারে, জ্ঞানী হতে পারে, দয়াবান হতে পারে, সব হতে পারে। গুরুদেব ক্রিয়াশক্তি আর পরমহংসের আশীর্বাদে এ মানুষের মতো মানুষ তো হবেই। তার চেয়ে বড় আশীর্বাদ আর কি হতে পরে?
সে সবার সামনে শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে, তার মুখে হাসি ফোটে। মঞ্জরী বলে—বাবাঃ, এতক্ষণে মাতৃস্নেহ জেগে উঠল। তোর সব কিছুই বিদঘুটে।
অতীশ বলে—কিন্তু এর নাম কি হবে? আমাদেরটি তো পৃথ্বীশ।
শ্রীমতী ধীরে ধীরে বলে-এর নাম মানব। আমি কিছু চাই না। শুধু চাই মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠে যেন। এ যেন অনুভূতিসম্পন্ন হয়। সবার দুঃখ-কষ্ট যেন হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারে। আর অবশ্যই যেন জ্ঞানবান হয়।
সবাই শ্রীমতীর মধ্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে দেখল পরিপূর্ণ এক মাতৃরূপ।
***