পন্ডিত শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন-প্রণীত চরিতমালা হইতে গৃহীত। অ্যাকওয়ার্থ সাহেব-প্রণীত Ballads of the Marathas নামক গ্রন্থ রঘুনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র নারায়ণ রাওয়ের হত্যা সম্বন্ধে প্রচলিত মারাঠি গাথার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে। পুণ্য নগরে রঘুনাথ রাও পেশোয়া - নৃপতি - বংশ রাজাসনে উঠি কহিলেন বীর , ‘ হরণ করিব ভার পৃথিবীর - মৈসুরপতি হৈদরালির দর্প করিব ধ্বংস ।' দেখিতে দেখিতে পুরিয়া উঠিল সেনানী আশি সহস্র । নানা দিকে দিকে নানা পথে পথে মারাঠার যত গিরিদরি হতে বীরগণ যেন শ্রাবণের স্রোতে ছুটিয়া আসে অজস্র । উড়িল গগনে বিজয়পতাকা , ধ্বনিল শতেক শঙ্খ । হুলুরব করে অঙ্গনা সবে , মারাঠা - নগরী কাঁপিল গরবে , রহিয়া রহিয়া প্রলয় - আরবে বাজে ভৈরব ডঙ্ক । ধুলার আড়ালে ধ্বজ - অরণ্যে লুকালো প্রভাতসূর্য । রক্ত অশ্বে রঘুনাথ চলে , আকাশ বধির জয়কোলাহলে — সহসা যেন কী মন্ত্রের বলে থেমে গেল রণতূর্য ! সহসা কাহার চরণে ভূপতি জানালো পরম দৈন্য ? সমরোন্মাদে ছুটিতে ছুটিতে সহসা নিমেষে কার ইঙ্গিতে সিংহদুয়ার থামিল চকিতে আশি সহস্র সৈন্য ? ব্রাহ্মণ আসি দাঁড়ালো সমুখে ন্যায়াধীশ রামশাস্ত্রী । দুই বাহু তাঁর তুলিয়া উধাও কহিলেন ডাকি , ‘ রঘুনাথ রাও , নগর ছাড়িয়া কোথা চলে যাও , না লয়ে পাপের শাস্তি ? ' নীরব হইল জয়কোলাহল , নীরব সমরবাদ্য । ‘ প্রভু , কেন আজি' কহে রঘুনাথ , ‘ অসময়ে পথ রুধিলে হঠাৎ ! চলেছি করিতে যবননিপাত , জোগাতে যমের খাদ্য ।' কহিলা শাস্ত্রী , ‘ বধিয়াছ তুমি আপন ভ্রাতার পুত্রে । বিচার তাহার না হয় যজ্ঞদিন ততকাল তুমি নহ তো স্বাধীন , বন্দী রয়েছ অমোঘ কঠিন ন্যায়ের বিধানসূত্রে ।' রুষিয়া উঠিলা রঘুনাথ রাও , কহিলা করিয়া হাস্য , ‘ নৃপতি কাহারো বাঁধন না মানে — চলেছি দীপ্ত মুক্ত কৃপাণে , শুনিতে আসি নি পথমাঝখানে ন্যায়বিধানের ভাষ্য ।' কহিলা শাস্ত্রী , ‘ রঘুনাথ রাও , যাও করো গিয়ে যুদ্ধ ! আমিও দণ্ড ছাড়িনু এবার , ফিরিয়া চলিনু গ্রামে আপনার , বিচারশালার খেলাঘরে আর না রহিব অবরুদ্ধ ।' বাজিল শঙ্খ , বাজিল ডঙ্ক , সেনানী ধাইল ক্ষিপ্র । ছাড়ি দিয়া গেলা গৌরবপদ , দূরে ফেলি দিলা সব সম্পদ , গ্রামের কুটিরে চলি গেলা ফিরে দীন দরিদ্র বিপ্র ।