৫
বাল্মীকি।
জীবনের কিছু হল না হায়–
হল না গো হল না হায় হায়।
গহনে গহনে কত আর ভ্রমিব,নিরাশার এ আঁধারে।
শূন্য হৃদয় আর বহিতে যে পারি না,
পারি না গো পারি না আর।
কী লয়ে এখন ধরিব জীবন,দিবস-রজনী চলিয়া যায়–
দিবস-রজনী চলিয়া যায়–
কত কী করিব বলি উঠে বাসনা,
কী করিব জানি না গো।
সহচর ছিল যারা,ত্যেজিয়া গেল তারা;ধনুর্বাণ ত্যেজেছি,
কোনো আর নাহি কাজ–
কী করি কী করি বলি, হাহা করি ভ্রমি গো–
কী করিব জানি না যে!
ব্যাধগণের প্রবেশ
প্রথম ব্যাধ।
দেখ্ দেখ্, দুটো পাখি বসেছে গাছে।
দ্বিতীয় ব্যাধ।
আয় দেখি চুপি চুপি আয় রে কাছে।
প্রথম ব্যাধ।
আরে ঝট্ করে এই বারে ছেড়ে দে রে বাণ।
দ্বিতীয় ব্যাধ।
রোস রোস আগে আমি করি রে সন্ধান।
বাল্মীকি।
থাম্ থাম্,কী করিবি বধি পাখিটির প্রাণ।
দুটিতে রয়েছে সুখে,মনের উল্লাসে গাহিতেছে গান।
প্রথম ব্যাধ।
রাখো মিছে ও-সব কথা,
কাছে মোদের এস নাকো হেথা,
চাই নে ও-সব শাস্তর কথা, সময় বহে যায় যে।
বাল্মীকি।
শোনো শোনো মিছে রোষ ক’রো না।
ব্যাধ।
থামো থামো ঠাকুর, এই ছাড়ি বাণ।
একটি ক্রৌঞ্চকে বধ
বাল্মীকি।
মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ,
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।
কী বলিনু আমি! এ কী সুললিত বাণী রে!
কিছু না জানি কেমনে যে আমি প্রকাশিনু দেবভাষা,
এমন কথা কেমনে শিখিনু রে!
পুলকে পুরিল মনপ্রাণ,মধু বরষিল শ্রবণে,
এ কী! হৃদয়ে এ কী এ দেখি!–
ঘোর অন্ধকার মাঝে,এ কী জ্যোতি ভায়,
অবাক্!– করুণা এ কার!
সরস্বতীর আবির্ভাব
বাল্মীকি।
এ কী এ, এ কী এ, স্থির চপলা!
কিরণে কিরণে হল সব দিক উজলা!
কী প্রতিমা দেখি এ,
জোছনা মাখিয়ে,
কে রেখেছে আঁকিয়ে,
আ মরি কমল-পুতলা!
[ ব্যাধগণের প্রস্থান
বনদেবীগণের প্রবেশ
বনদেবী।
নমি নমি ভারতী, তব কমল চরণে
পুণ্য হল বনভূমি, ধন্য হল প্রাণ।
বাল্মীকি।
পূর্ণ হল বাসনা,দেবী কমলাসনা,
ধন্য হল দস্যুপতি, গলিল পাষাণ।
বনদেবী।
কঠিন ধরাভূমি এ, কমলালয়া তুমি যে,
হৃদয়-কমলে চরণ-কমল করো দান।
বাল্মীকি।
তব কমল-পরিমলে রাখো হৃদি ভরিয়ে,
চিরদিবস করিব তব চরণ-সুধা পান।
[ দেবীগণের অন্তর্ধান
কালী-প্রতিমার প্রতি বাল্মীকি
শ্যামা, এবার ছেড়ে চলেছি মা।
পাষাণের মেয়ে পাষাণী, না বুঝে মা বলেছি মা।
এত দিন কী ছল করে তুই, পাষাণ করে রেখেছিলি,
(আজ) আপন মায়ের দেখা পেয়ে, নয়ন-জলে গলেছি মা।
কালো দেখে ভুলি নে আর, আলো দেখে ভুলেছে মন,
আমায় তুমি ছলেছিলে,(এবার) আমি তোমায় ছলেছি মা।
মায়ার মায়া কাটিয়ে এবার মায়ের কোলে চলেছি মা।