বালি ও ফেনা [স্যান্ড এন্ড ফোম]
চিরকাল এই তীরভূমির ওপর দিয়ে আমি হেঁটে বেড়াচ্ছি
বালি এবং ফেনার মধ্যে।
প্রবল স্রোতোধারা মুছে ফেলবে আমার পদচিহ্ন
এবং বাতাস উড়িয়ে নেবে গুচ্ছ গুচ্ছ ফেনা
কিন্তু সমুদ্র এবং সমুদ্রতীর থাকবে চিরকাল।
*
একবার আমি আমার হাত পরিপূর্ণ করেছিলাম ধোঁয়াশা দিয়ে।
তারপর আমি আমার হাতের মুঠো খুলে দেখি এটা ছিল
একটা অমেরুদণ্ডী প্রাণী।
এবং আমি আবার আমার হাত বন্ধ করেছিলাম এবং খুলেছিলাম এবং দেখেছিলাম
সেখানে ছিল একটা পাখি এবং আমি আবার আমার হাত বন্ধ করেছিলাম এবং খুলেছিলাম
এবং হাতের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিল একজন বেদনার্ত মানুষ
যার মুখ উপরের দিকে ঘোরানো।
এবং আবার আমি আমার হাত বন্ধ করলাম এবং যখন
আমি তা খুললাম সেখানে কিছুই ছিল না, ধেঁয়াশা ছাড়া।
কিন্তু আমি একটা অসম্ভব মিষ্টি সংগীত শুনেছিলাম।
*
এটা ছিল গতকাল যখন আমি নিজেকে ভেবেছিলাম একটা খণ্ডাংশ, জীবনের সীমানায় যা ছন্দ ছাড়াই শিহরিত হয়।
এখন আমি জানি, আমি হচ্ছি সেই সীমানা এবং সারা জীবন একটা ছন্দোময় খণ্ডাংশ চলাচল করছে আমার ভেতরে।
*
তারা তাদের জাগরণের ভেতরে আমাকে বলে
তুমি এবং এই পৃথিবী একত্রে বসবাস কর কিন্তু বালির একটি
শক্তকণা বসবাস করে একটি অসীম সমুদ্রের অনন্ত
তীরভূমির ওপর।
এবং আমি আমার স্বপ্নের ভেতরে তাদেরকে বলি: ‘আমি এবং সমস্ত পৃথিবী হচ্ছে একটা
অসীম সমুদ্র, কিন্তু বালির শক্ত কণাগুলি বসবাস করে আমার তীরভূমির ওপর।
*
শুধুমাত্র একবার আমি স্বপ্ন তৈরি করেছিলাম। এটা ছিল তখনই, যখন একজন মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তুমি কে?’
*
ঈশ্বরের প্রথম চিন্তা ছিল, একজন দেবদূত।
আর ঈশ্বরের প্রথম শব্দ ছিল, একজন মানুষ।
*
আমরা আকুল আকাঙ্ক্ষার প্রাণীরা অস্থিরভাবে চলাচল করেছিলাম,
হাজার হাজার বছর আগে সমুদ্র ও অরণ্যের বাতাস আমাদেরকে
দান করেছিল শব্দগুলি।
বর্তমানে কীভাবে আমরা শুধুমাত্র গতকালের ধ্বনিগুচ্ছ দিয়ে ব্যাখ্যা
করতে পারি আমাদের দিনগুলির প্রাচীনতা?
*
স্ফিংস একবারই মাত্র কথা বলেছিল এবং সে বলেছিল,
‘বালির একটি কণা হচ্ছে একটি মরুভূমি এবং একটি মরুভূমি হচ্ছে
একটা বালির কণা এবং এখন চলো দেখি, সবকিছুই আবার
নীরবতায় পরিণত হবে।’
আমি স্ফিংস— এর কথা শুনেছিলাম কিন্তু তা বুঝতে পারি নাই।
*
একবার আমি একজন নারীর মুখমণ্ডল দেখেছিলাম এবং আমি
লক্ষ্য করেছিলাম তার সব সন্তানকে, যারা এখনও জন্মায়নি।
এবং একজন নারী আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল এবং সে
চিনেছিল আমার সমস্ত পিতামহকে যারা তার জন্মের
আগেই মারা গিয়েছিল।
*
এখন আমি আমাকে পরিপূর্ণ করে তুলব। কিন্তু আমি তা
কীভাবে করব যতক্ষণ আমি একটা গ্রহে পরিণত না হচ্ছি, যেখানে
বুদ্ধিমান প্রাণীরা বসবাস করছে।
এটা কি প্রত্যেক মানুষের লক্ষ্য নয়?
*
মুক্তা হচ্ছে একটা মন্দির, বালির শক্তকণার চারপাশে
যাকে নির্মাণ করে বেদনা।
কী সেই আকুল আকাঙ্ক্ষা যা আমাদের দেহকে নির্মাণ করে
এবং কোন সেই শস্যকণা?
*
যখন ঈশ্বর আমাকে একটা নুড়ির মতো বিস্ময়কর জলাভূমিতে
ফেলে দিলেন তখন আমি এর উপরিভাগের স্বাভাবিক
অবস্থাকে বিঘ্নিত করলাম গণনাহীন বৃত্ত তৈরি করে।
কিন্তু যখন আমি এর গভীরতায় পৌছলাম তখন আমি একেবারে স্থির হয়ে গেলাম।
*
আমাকে নীরবতা দান করো আমি রাত্রিকে নিস্তরঙ্গ
করে তুলব।
*
আমার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছিল যখন আমার আত্মা ও শরীর
পরস্পরকে ভালোবেসেছিল এবং বিবাহ করেছিল।
*
একসময় আমি এক লোককে চিনতাম যার শ্রবণেন্দ্রিয় চূড়ান্তভাবে তীক্ষ্ণ ছিল
কিন্তু সে ছিল বোবা। সে তার জিভ হারিয়েছিল যুদ্ধে।
আমি জানি কোন্ যুদ্ধে সে লড়াই করেছিল এই বিশাল
নীরবতা নেমে আমার আগে। আমি আনন্দিত যে সে
মারা গেছে।
এই পৃথিবীটা আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট বড় নয়।
*
দীর্ঘকাল আমি মিশরের ধুলোর তলায় শুয়েছিলাম নিঃশব্দে
এবং ঋতুগুলি সম্পর্কে ছিলাম অসচেতন।
তারপর সূর্য আমাকে জন্ম দিল এবং আমি বেড়ে উঠলাম
এবং হাঁটলাম নীল নদীর তীর ধরে, গান গাইলাম দিনের
সঙ্গে এবং স্বপ্ন দেখলাম রাত্রির সঙ্গে।
এবং এখন সূর্য তার সহস্র পদযুগ নিয়ে আমার ওপরে
হাঁটছে যেন আমি আবার মিশরের ধুলোর তলায়
শুয়ে পড়তে পারি।
কিন্তু লক্ষ্য করো একটি বিস্ময় এবং একটি ধাঁধা।
এই সূর্য আমাকে একত্রিত করেছে এবং কখনও আমাকে ইতস্তত
ছড়িয়ে দেবে না।
এখনও পর্যন্ত আমি খাড়া হয়ে আছি এবং আমি নিশ্চিত
আমার পা নীল নদীর তীর ধরে হাঁটতে সক্ষম।
*
স্মরণ হচ্ছে একটি সমাবেশের প্রতিকৃতি।
*
বিস্মরণ প্রবণতা হচ্ছে স্বাধীনতার একটা প্রতিকৃতি।
*
আমরা সময়কে পরিমাপ করি সূর্যের গণনাহীন চলাচল
অনুসারে এবং তারা সময়কে পরিমাপ করে তাদের পকেটে রাখা
একটা ছোট্ট যন্ত্র দিয়ে।
এখন আমাকে বলো, কীভাবে আমরা একই জায়গায় এবং একই সময়ে সবসময় মিলিত
হব?
*
তার কাছে সূর্য ও মাটির মাঝখানে শূন্যতা কোনো শূন্যতা নয়,
যে ছায়াপথের জানালা দিয়ে তার দিকে তাকায়।
*
মানবতা হচ্ছে একটা আলোর নদী, যা ভূতপূর্ব অনন্তকাল থেকে
অনন্তকালের দিকে দৌড়াচ্ছে।
*
পবিত্র নগরীর দিকে যাত্রাপথের ওপর এক তীর্থযাত্রীর সঙ্গে
আমার সাক্ষাৎ ঘটেছিল এবং আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘বস্তুতপক্ষে
এটাই কি পবিত্র নগরীর পথ?’
সে উত্তরে বলল, ‘আমাকে অনুসরণ করুন এবং একদিন ও একরাত্রির ভেতরে আপনি
পবিত্র নগরীতে পৌঁছে যাবেন।’
আমি তাকে অনুসরণ করলাম এবং বহুদিন ও বহুরাত ধরে আমরা হাঁটলাম কিন্তু পবিত্ৰ
নগরীতে পৌঁছাতে পারলাম না।
এবং আমার বিস্ময়ের বিষয় হল সে আমার ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিল কারণ সে আমাকে
বিপথগামী করেছিল।
*
হে ঈশ্বর, আমাকে সিংহের শিকারে পরিণত করুন, তার আগে পরিণত করুন
খরগোশকে আমার শিকারে।
*
কেউই রাত্রির যাত্রাপথ দিয়ে নিরাপদ ভোরবেলায় পৌঁছাতে পারে না।
*
আমার গৃহ আমাকে বলে, ‘আমাকে পরিত্যাগ করে যেও না,
কারণ এখানে বসবাস করে তোমার অতীত।’
এবং পথ আমাকে বলে, ‘এসো এবং আমাকে অনুসরণ করো।
কারণ আমি তোমার ভবিষ্যৎ।’
এবং আমি আমার গৃহ ও পথ দুজনকেই বলি, ‘আমার যেমন কোনো অতীত নেই তেমনি ভবিষ্যৎও নেই। যদি আমি এখানে থাকি তাহলে আমার থেকে যাওয়াই চালু থাকবে এবং যদি আমি যদি চলে যাই তাহলে আমার চলে যাওয়াই এখানে অবস্থান করবে। শুধুমাত্র ভালোবাসা এবং মৃত্যুই সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে।’
*
পৃথিবীর ওপরে যারা ঘুমায় তাদের স্বপ্নের চেয়ে, পালঙ্কের ওপরে যারা ঘুমায় তাদের স্বপ্ন যখন অধিক সুন্দর হয় না, তখন কীভাবে আমি জীবনের ন্যায়পরায়ণতার ওপর থেকে বিশ্বাস হারাতে পারি।’
*
নিশ্চিত আনন্দের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে বেদনার একটি অংশ এবং এটা বিস্ময়কর।
*
সাতবার আমি আমার আত্মাকে অবজ্ঞা করেছি :
প্রথমবার যখন আমি তার হয়ে ওঠা দেখেছিলাম নম্র ও ধৈর্যশীলভাবে, যা সে অর্জন করে থাকতে পারে উচ্চতার কাছ থেকে।
দ্বিতীয়বার তাকে দেখেছিলাম খোঁড়াদের সামনে সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। তৃতীয়বার যখন তাকে দেখি তখন তাকে সহজ ও কঠিনের ভেতর থেকে একটা বেছে নিতে বলা হয়েছিল এবং সে বেছে নিয়েছিল সহজকে।
চতুর্থবার সে ভুল করেছিল এবং নিজেকে স্বস্তি দিয়েছিল অন্যদের কৃত ভুলের সাহায্যে। পঞ্চমবার যখন দেখি তখন সে দুর্বলতার কারণে সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত ছিল এবং
সামর্থ্যের ওপর আরোপ করেছিল ধৈর্য।
ষষ্ঠবার যখন তাকে দেখি তখন সে একটা কুৎসিত মুখকে ঘৃণা করেছিল এবং সে জানত না এটা ছিল তার নিজেরই একটা মুখোশ।
এবং সপ্তমবার যখন তাকে দেখি সে গাইছিল প্রশংসাসংগীত এবং মনে করছিল এটা একটা সদ্গুণ।
*
চূড়ান্ত সত্য সম্পর্কে আমি অজ্ঞ। কিন্তু আমার অজ্ঞতার সামনে আমি বিনয়ী এবং সেই বিনয়ের ভেতর শায়িত থাকে আমার সম্মান ও পুরস্কার।
*
মানুষের কল্পনা ও মানুষের অর্জনের ভেতরে রয়েছে শূন্যতা যা তার আকুল আকাঙ্ক্ষার দ্বারা অতিক্রম করা যায়।
*
পরবর্তী ঘরের দরজার পেছনে রয়েছে স্বর্গ, কিন্তু সেই চাবি আমি হারিয়ে ফেলেছি। সম্ভবত আমিই একে বিপথগামী করেছি।
*
তুমি অন্ধ এবং আমি বধির ও বাকশক্তিহীন, সুতরাং চলো আমরা পরস্পরের হাত স্পর্শ করি এবং পরস্পরকে উপলব্ধি করি।
*
মানুষ কি অর্জন করেছে তার জন্য সে গুরুত্বপূর্ণ নয়, সে গুরুত্বপূর্ণ হল কি তার অর্জনের আকাঙ্ক্ষা, তার জন্য।
*
আমাদের কেউ কেউ কালি পছন্দ করে কেউ কেউ কাগজ।
যদি এটা আমাদের কারও কারও কৃষ্ণময়তার কারণে না হয়ে
থাকে তাহলে আমাদের কেউ কেউ বধির হবে,
এবং যদি এটা আমাদের কারও কারও শুভ্রতার কারণে না হয়
তাহলে আমাদের কেউ কেউ অন্ধ হবে।
*
আমাকে একটি শ্রবণেন্দ্রিয় দাও, আমি তোমাকে একটি কণ্ঠস্বর দান করব।
*
আমাদের মন হচ্ছে একটা স্পঞ্জ এবং হৃদয় হচ্ছে স্রোতোধারা। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই আমাদের অধিকাংশই দৌড়ানোর চেয়ে শোষণ করতে পছন্দ করে।
*
তোমার যখন আশীর্বাদ পেতে ইচ্ছা হয় তখন তুমি তার নাম নাও বলতে পারো এবং তুমি দুঃখ দিয়ে থাকো কোনো কারণ না-জেনে, বস্তুতপক্ষে তখন অন্যান্য বাড়ন্ত জিনিসের সঙ্গে তুমি বেড়ে উঠছ এবং বেড়ে উঠছ তোমার বিশাল আত্মার কাছাকাছি।
*
যখন দূরদৃষ্টির সঙ্গে কেউ মদ্যপান করে তখন সে মনে করে তার মূর্ছিত অভিব্যক্তিই হচ্ছে এই মদ।
*
তুমি মদ্যপান কর সুতরাং তুমি নেশাগ্রস্ত হতে পারো এবং আমি মদ্যপান করি, কারণ এটা আমাকে সংযমী করে তুলতে পারে অন্য মদ থেকে।
*
যখন আমার কাপ শূণ্য তখন আমি নিজেকে সমর্পণ করতে পারি শূণ্যতার কাছে, কিন্তু যখন এটা আধাপূর্ণ তখন এর অপূর্ণতায় আমি রাগান্বিত হই।
*
অন্য লোকের বাস্তবতা সেটাই নয়, যা সে প্রকাশ করে; তার বাস্তবতা হল যা সে তোমার কাছে প্রকাশ করতে পারে না। সুতরাং যদি তুমি তাকে উপলব্ধি করতে চাও, তাহলে সে
কী বলছে তার প্রতি মনোযোগ দিও না, বরং মনোযোগী হও তার প্রতি, যা সে বলে না।
*
আমি যার অর্ধেকটা বলি তা অর্থহীন, কিন্তু আমি তা বলি কারণ বাকি অর্ধেক তোমার কাছে পৌঁছে যেতে পারে।
*
রসিকতার জ্ঞান হচ্ছে একটি আনুপাতিক জ্ঞান।
*
আমার নিঃসঙ্গতার জন্ম হয় তখন, যখন আমার বাচালতার দোষে মানুষ আমার প্রশংসা করেছে এবং দোষী করেছে আমার নীরব সদ্গুণের জন্য।
*
জীবন যখন তার হৃদয়ের কথা বলার জন্য একজন গায়ক খুঁজে পায় না তখন সে উপস্থিত করে একজন দার্শনিককে তার মনের কথা বলতে।
*
কখনও কখনও উচ্চারণের জন্য সত্যই সবসময় পরিচিতি পাবে।
*
আমাদের ভেতরে বাস্তবতা হল নীরবতা আর অর্জিত যা-কিছু সবই বাচালতা।
*
আমার জীবনের কণ্ঠস্বর তোমার জীবনের কর্ণকুহরে নাও পৌঁছাতে পারে, সুতরাং চলো কথা বলি, তাহলে আমরা নিঃসঙ্গ অনুভব নাও করতে পারি।
*
যখন দুইজন নারী কথা বলে তখন তারা কিছুই বলে না
কিন্তু যখন একজন নারী কথা বলে তখন জীবনের সবকিছুই সে প্রকাশ করে।
*
ষাঁড়ের চেয়ে ব্যাঙ অধিক জোরে চিৎকার করতে পারে কিন্তু তারা মাঠে লাঙল টানতে পারে না, পারে না আঙুর-পেষণকারী যন্ত্রের চাকা ঘোরাতে এবং তাদের চামড়া দিয়ে তুমি জুতো তৈরি করতে পারো না।
*
শুধুমাত্র বাকশক্তিহীনেরাই বাচালদেরকে হিংসা করে।
*
শীতকাল যদি বলে, ‘বসন্তকাল আমার হৃদয়ে’ তাহলে কে শীতকালকে বিশ্বাস করবে?
*
প্রত্যেকটি বীজেরই রয়েছে আকুল আকাঙ্ক্ষা।
*
প্রকৃতঅর্থেই তোমার উচিত চোখদুটো খোলা এবং দেখা, তুমি লক্ষ্য করবে সমস্ত প্রতিমূর্তিতেই তোমার প্রতিমূর্তি।
এবং তোমার উচিত কানদুটোও খোলা রাখা এবং শ্রবণ করা, তুমি শুনতে পাবে সমস্ত কণ্ঠস্বরের ভেতরে তোমার নিজের কণ্ঠ।
*
আমরা দুজনে এই সত্য আবিষ্কার করছি : একটা উচ্চারণ করতে এবং একটা উপলব্ধি
করতে।
*
যদিও কথার ঢেউ চিরকাল আমাদের ওপরে আছে, কিন্তু আমাদের গভীরতা চিরকালই নীরব।
*
বহু মতবাদই জানালার শার্সির কাঁচের মতো। আমরা এর ভেতর দিয়ে সত্যকে দেখতে পাই কিন্তু তা সত্য থেকে আমাদেরকে বিভক্ত করে ফেলে।
*
এখন এসো আমরা লুকোচুরি খেলি। তোমার কি উচিত আমার হৃদয়ের ভেতরে লুকানো, তাহলে তোমাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার খোলসের পেছনে লুকাও তাহলে তোমাকে খুঁজে বের করা যে-কারও জন্যই অর্থহীন হবে।
*
একজন নারী তার মুখের হাসি দিয়েই অবগুণ্ঠন তৈরি করতে পারে।
*
বেদনার্ত হৃদয় কী মহৎ, যে উৎফুল্ল হৃদয়ের সাথে গাইবে আনন্দের গান।
*
যে একজন নারীকে উপলব্ধি করবে অথবা যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে যাচাই করবে একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিকে অথবা সমাধান করবে নৈঃশব্দের রহস্য, সে-ই জেগে উঠবে একটা চমৎকার স্বপ্নের ভেতর থেকে নাস্তার টেবিলে বসতে।
*
আমি হাঁটব তাদের সঙ্গে, যারা হাঁটে।
আমি নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকব না মিছিলের চলে যাওয়া দেখতে।
*
তুমি সোনার চেয়েও অধিক ঋণী হয়ে আছ তার কাছে, যে তোমার সেবা করে। তাকে
তোমার হৃদয় দাও অথবা তাকে সেবা দান করো।
*
না, আমরা ব্যর্থতার ভেতরে বসবাস করব না। তারা কি আমাদের হাড়ের স্তম্ভ তৈরি করেনি?
*
আমাদেরকে নির্দিষ্ট হতে দিও না এবং দিও না বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হতে। কবির মনোজগৎ এবং বিছার লেজের খ্যাতি বেড়ে ওঠে একই মাটি থেকে।
*
প্রতিটি ড্রাগন জন্ম দেয় একজন সেন্ট জর্জ, যে ড্রাগনটাকে হত্যা করে।
*
গাছগুলি হল কবিতাগুচ্ছ, মাটি যাকে আকাশের ওপরে লেখে। আমরা তাদেরকে মাটিতে নামিয়ে আনি এবং কবিতাগুলিকে কাগজের ওপর যেন আমরা আমাদের শূন্যতাগুলিকে সারিবদ্ধ করতে পারি।
*
তোমার লেখার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া উচিত (এবং শুধুমাত্র সিদ্ধ পুরুষরাই জানেন কেন তোমার তা হওয়া উচিত), তাহলে অবশ্যই প্রয়োজন জ্ঞান, শিল্পকলা এবং জাদু-শব্দের সংগীত সম্পর্কিত জ্ঞান, শিল্পহীনতার শিল্প এবং তোমার পাঠককে ভালোবাসার জাদুমন্ত্র।
*
তারা তাদের কলম চুবিয়ে নেয় আমাদের হৃদয়ে এবং ভাবে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
*
একটা গাছের কি উচিত তার আত্মজীবনী লেখা? প্রতিযোগিতার ইতিহাসে এটা আলাদা কোনোকিছুই হবে না।
*
যদি আমাকে বলা হয় একটা কবিতা লেখার ক্ষমতা ও একটা কবিতা না-লেখার পরমানন্দের ভেতর কোনটা আমি পছন্দ করব- আমি পছন্দ করব পরমানন্দ। এটা উন্নততর কবিতা।
কিন্তু তুমি এবং আমার সব প্রতিবেশী একমত হয়েছেন যে আমার পছন্দ সবসময়ই খারাপ।
*
কবিতা নয় একটি ব্যাখ্যাকৃত মতামত। এটা একটা সংগীত, যা বৃদ্ধি পায় একজন আহতের রক্তক্ষরণ থেকে অথবা মুখের একটু হাসি থেকে।
*
কথারা সময়হীন। তোমার উচিত তাদেরকে উচ্চারণ করা অথবা তাদের সময়হীনতা সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে তাদের সম্পর্কে লেখা।
*
একজন কবি হচ্ছে একজন সিংহাসনচ্যুত রাজা, বসে আছে তার রাজপ্রাসাদের ছাইয়ের ভেতরে, চেষ্টা করছে ছাইয়ের ভেতর থেকেই একটা প্রতিমূর্তি তৈরি করতে।
*
কবিতা হচ্ছে অভিধানের যতিচিহ্নসহ আনন্দ, বেদনা এবং বিস্ময়ের ভাগাভাগি।
*
ব্যর্থতার ভেতরে একজন কবি তার হৃদয়ের সংগীতের জননীকে অনুসন্ধান করবে।
*
একবার আমি একজন কবিকে বলেছিলাম, ‘আপনি মারা না-যাওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার বিশিষ্টতা সম্পর্কে কিছু জানব না।’
এবং তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন। মৃত্যু হচ্ছে সবসময়ই প্রকাশকারী। এবং বস্তুতপক্ষে যদি আপনি আমার বিশিষ্টতা জানতে চান তাহলে তা আমার জিভের চেয়েও অধিক রয়েছে আমার হৃদয়ে এবং অধিক রয়েছে আমার হাতের চেয়ে আমার আকাঙ্ক্ষায়।
*
মরুভূমির হৃদয়ের কাছে যদি তুমি একাকী গাও সৌন্দর্যসংগীত তবে অবশ্যই তুমি শ্রোতার সাক্ষাৎ পাবে।
*
কবিতা হচ্ছে বিচক্ষণতা যা হৃদয়কে মোহিত করে। বিচক্ষণতা হচ্ছে কবিতা যা মনের ভেতরে গান গায়। যদি আমরা মানুষের হৃদয়কে মোহিত করতে পারি এবং একই সঙ্গে তার মনের ভেতরে গান গাই তাহলে সত্যের ভেতরে সে বেঁচে থাকবে ঈশ্বরের ছায়ায়।
*
প্রেরণা সবসময়ই গান গাইবে, কিন্তু প্রেরণা কখনও কোনোকিছু ব্যাখ্যা করবে না।
*
আমরা প্রায়ই আমাদের শিশুদেরকে ঘুমপাড়ানি গান শোনাই, যে গান শুনে আমরাও ঘুমাতে পারি।
*
আমাদের সব কথাই হচ্ছে খাবারের ছোট টুকরো। কিন্তু তা আমাদের মনের ভোজ- উৎসবে নিজের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়।
*
কবিতার কাছে চিন্তা হচ্ছে সবসময়ই হোঁচট খাবার পাথর।
*
সে-ই হচ্ছে বিশাল গায়ক যে আমাদের নীরবতাগুলিকে গাইতে থাকে।
*
কীভাবে তুমি গান গাইবে যদি তোমার মুখ খাবারে পরিপূর্ণ থাকে। কীভাবে আশীর্বাদের সময় তুমি তোমার হাত ওপরে তুলবে যদি তা হয়ে থাকে সোনায় পরিপূর্ণ!
*
তারা বলে, নাইটিংগেল তার বক্ষ বিদ্ধ করে কাঁটা দিয়ে, যখন সে গান গায়। সুতরাং সবাই আমরা তা করি। কিন্তু কীভাবে আমরা গান গাইব?
*
ধীরগতিতে আসা বসন্তের শুরুতে রবিন পাখির গান হচ্ছে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড।
*
অধিকাংশ পাখাযুক্ত উদ্দীপনা শারীরিক অপরিহার্যতা থেকে কখনই মুক্তি পায় না।
*
একজন পাগল লোক তোমার অথবা আমার চেয়ে কম সুরস্রষ্টা নয়, শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে সুরের বাইরে সে সামান্য কিছু গেয়ে থাকে।
*
গানটি নিঃশব্দে শুয়ে থাকে একজন মায়ের হৃদয়ে এবং তা গীত হয় তার শিশুর ওষ্ঠের
ওপর।
*
কোনো আকাঙ্ক্ষাই অপূর্ণ থাকে না।
*
আমি আমার অন্য সত্তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হইনি কখনও। এ বিষয়ের সত্যগুলি আমাদের মাঝখানে অবস্থান করে বলে মনে হয়।
*
তোমার অন্য সত্তা সবসময়ই তোমার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু তোমার অন্য সত্তা বেড়ে উঠেছেই দুঃখের ওপর, সুতরাং সবই ঠিক আছে।
*
শরীর ও আত্মার কোনো সংগ্রাম নেই। এটা তাদের মনের ভেতরে নিরাপদ যাদের আত্মা ঘুমন্ত এবং যাদের শরীর সুরের বাইরে অবস্থান করে।
*
তুমি যখন জীবনের হৃদয়ে পৌঁছাবে তখন খুঁজে পাবে সমস্ত জিনিসের ‘সৌন্দর্য’, এমনকি
সেই চোখের ভেতরেও, সৌন্দর্য দেখার ক্ষেত্রে যে অন্ধ।
*
আমরা বেঁচে থাকি শুধুমাত্র সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে এবং প্রত্যেকেই হচ্ছে একটা প্রতীক্ষার প্রতিমূর্তি।
*
বীজ বপন করো এবং মাটি তোমার জন্য প্রাকৃতিক রীতিতে উৎপাদন করবে ফুল। তুমি তোমার স্বপ্ন দ্যাখো আকাশের দিকে তাকিয়ে এবং এই স্বপ্ন তোমার পছন্দের মানুষকে তোমার কাছে এনে দেবে।
*
অশুভ আত্মার মৃত্যু হয়েছে সেইদিন, যেদিন জন্ম হয়েছে তোমার। এখন অবশ্যই তুমি নরকের ভেতরে দিয়ে যাবে না দেবদূতের সঙ্গে দেখা করতে।
*
অনেক নারীই পুরুষের হৃদয়কে ধার করে এবং সামান্য কিছু নারীই তা অধিকারে রাখতে পারে।
*
তুমি যদি তোমার অধিকারে থাকো তাহলে অবশ্যই দাবি করার কিছু নেই।
*
যখন একজন পুরুষের হাত একজন নারীর হাত স্পর্শ করে তখন প্রকৃত অর্থে তারা দুজনেই স্পর্শ করে অনন্তের হৃদয়।
*
প্রেমিক এবং প্রেমিকার মাঝখানে ভালোবাসা হল অবগুণ্ঠন।
*
প্রতিটি পুরুষই দুজন নারীকে ভালোবাসে। একজন হল তার কল্পনার সৃষ্টি এবং অন্যজনের এখনও জন্ম হয়নি।
*
পুরুষ হল সেইজন, যে নারীর ছোটখাটো ত্রুটিগুলিকেও ক্ষমা করে না, একইভাবে কখনও উপভোগ করে না নারীর সদ্গুণগুলি।
*
ভালোবাসা প্রতিদিন ভালোবাসা নবায়ন করে না, যা পরিণত হয়েছে অভ্যাসে এবং এর উল্টোদিকেই রয়েছে দাসত্ব।
*
প্রেমিক-প্রেমিকারা আলিঙ্গন করে সেইসব যা পরস্পরের চেয়ে বরং তাদের মাঝখানে
আছে।
*
ভালোবাসা হচ্ছে আলোর একটি শব্দ, লেখা হয়েছে আলোর হাতে, আলো-নির্মিত
কাগজের ওপর।
*
বন্ধুত্ব সবসময়ই একটা মধুর দায়িত্ব, কখনই তা একটা সুযোগ নয়।
*
যদি তুমি সব অবস্থায় তোমার বন্ধুকে উপলব্ধি না করো তাহলে কখনও তুমি তাকে উপলব্ধি করবে না।
*
তোমার সবচেয়ে উজ্জ্বল পোশাকটি বয়ন করেছে অন্যব্যক্তি,
তোমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার হচ্ছে সেইটা যা তুমি খেয়েছিলে অন্যের টেবিলে, তোমার সবচেয়ে আরামদায়ক বিছানাটা রয়েছে অন্য ব্যক্তির বাড়িতে। এখন আমাকে বলো কীভাবে তুমি তোমাকে আলাদা করবে অন্য ব্যক্তি থেকে?
*
তোমার মন এবং আমার হৃদয় কখনও একমত হবে না যতক্ষণ তোমার মন সংখ্যার ভেতরে এবং আমার হৃদয় ধোঁয়াশার ভেতরে বসবাস করা থেকে বিরত না হয়।
*
আমরা কখনই একে অন্যকে উপলব্ধি করতে পারব না যতক্ষণ আমাদের ভাষাকে আমরা সাতশব্দে কমিয়ে আনতে না পারি।
*
কীভাবে আমার হৃদয় সিলমোহরযুক্ত হবে না, যদি তা ভেঙে না যায়?
*
শুধুমাত্র বিশাল দুঃখ এবং বিশাল আনন্দই তোমার সত্যকে প্রকাশ করতে পারে। তুমি যদি প্রকাশিত হতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে নগ্ন হয়ে সূর্যালোকে নাচতে হবে অথবা বহন করতে হবে তোমার ক্রুশচিহ্ন।
*
প্রকৃতির কি উচিত পরিতৃপ্তি সম্পর্কে আমরা কী বলি তাতে কর্ণপাত করা— কোনো নদী সমুদ্র-সন্ধান করবে না এবং কোনো শীত পরিবর্তিত হবে না বসন্তে। তার কি উচিত কর্ণপাত করা মিতব্যয়িতা সম্পর্কে আমরা যা বলি। আমাদের কতজন এই বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করবে?
*
তুমি দ্যাখো কিন্তু তোমার ছায়ারা দেখতে পায় না যখন তোমার পেছনদিকটা সূর্যের দিকে
ঘোরাও।
*
দিনের সূর্যের সামনে তুমি মুক্ত এবং রাত্রির নক্ষত্রের সামনেও তুমি মুক্ত, এবং তুমি তখনও মুক্ত যখন কোনো সূর্য, চন্দ্র বা নক্ষত্র নেই। এমনকি তুমি তখনও মুক্ত যখন তুমি তোমার চোখ বন্ধ করে ফ্যালো।
কিন্তু যাকে তুমি ভালোবাসো, তুমি তার একজন দাস, কারণ তুমি তাকে ভালোবাসো। এবং তার একজন দাস তোমাকে ভালোবাসে, কারণ সে ভালোবাসে তোমাকে।
*
মন্দিরের দরজার সামনে আমরা সবাই ভিক্ষুক এবং আমাদের প্রত্যেকেই রাজার উদারতার অংশ গ্রহণ করেছে যখন সে মন্দিরে প্রবেশ করে এবং দরজা দিয়ে বেরিয়ে
যায়।
কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই একে অন্যের প্রতি ঈর্ষাকাতর, যা রাজার মর্যাদা নষ্ট করার অন্য একটি পদ্ধতি।
*
তুমি তোমার ক্ষুধার চেয়ে বেশি আহার অথবা পান করতে পারো না। রুটির অর্ধেকের মালিক অন্যজন এবং সেখানে আরও একটুকরো ছোট রুটি থাকা উচিত সেই অতিথির জন্য যে সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
*
এটা যদি অতিথির জন্য না হয় তাহলে সমস্ত বাড়িই কবরে পরিণত হবে।
*
এক উদার নেকড়ে এক সাধারণ ভেড়াকে বলল, ‘তুমি কি একবার পরিদর্শন করে আমাদের বাড়িটাকে সম্মানিত করে তুলবে না?’ উত্তরে ভেড়া বলল, ‘আমরা আপনার বাড়ি পরিদর্শন করে সম্মানিত বোধ করব যদি এই বাড়িটা আপনার পাকস্থলী না হয়ে থাকে।’
*
আমি প্রবেশপথের ওপর আমার অতিথিকে থামালাম এবং বললাম, ‘প্রবেশ করার সময় পা মোছার কোনো প্রয়োজন নেই, যেমন বাইরে যাওয়ার সময় প্রয়োজন হয় না।’
*
বস্তুতপক্ষে তুমি জনহিতকর কাজ করে থাকো বিশেষ করে যখন তুমি দান করো এবং যখন দান করো তোমার মুখখানা তখন ঘুরিয়ে রেখো যেন গ্রহীতার লজ্জা তোমাকে না দেখতে হয়।
*
একজন সর্বোচ্চ ধনী ও একজন সর্বোচ্চ গরিবের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ক্ষুধার দিনগুলি এবং তৃষ্ণার সময়গুলি।
*
গতকালকে আমাদের ঋণ প্রদানের জন্য আমরা প্রায়ই ধার করি আমাদের আগামীকাল
থেকে।
*
আমাকে পরিদর্শন করে দেবদূত এবং অশুভ আত্মা কিন্তু আমি তাদের থেকে মুক্ত। যখন দেবদূত আসে তখন আমি একটা পুরোনো প্রার্থনাকে উপস্থাপন করি এবং সে বিরক্ত
হয়,
*
আর যখন আসে একটা অশুভ আত্মা তখন আমি পুরোনো পাপের কথা স্বীকার করি এবং সে আমাকে অতিক্রম করে যায়।
*
মোটের ওপর কারাগারটা খারাপ নয়, কিন্তু আমি পছন্দ করি না আমার সেল ও পরবর্তী বন্দির সেলের মাঝখানের দেয়াল,
যদিও আমি নিশ্চিত করছি যে, আমি কারারক্ষীর নিন্দা করতে চাই না, চাই না নিন্দা করতে কারাগার নির্মাতার।
*
যারা তোমাকে মাছ চাইলে সাপ প্রদান করে তাদের সাপ ছাড়া দেবার মতো কিছু নেই। এটা হল তাদের মহত্ত্ব।
*
প্রতারণা কখনও কখনও সাফল্য অর্জন করে কিন্তু সবসময় করে আত্মহত্যা।
*
তুমি প্রকৃত অর্থেই একজন ক্ষমাকারী যখন তুমি খুনিদেরকে ক্ষমা করো যারা কখনও রক্তপাত ঘটায়নি, ক্ষমা করো সেই চোরদের যারা কখনও চুরি করেনি এবং সেইসব মিথ্যাবাদীদের যারা উচ্চারণ করেনি কোনো মিথ্যাভাষণ।
*
এটা হল সে-ই যে তার আঙুল স্থাপন করতে পারে তার ওপর, যা বিভক্ত করে মন্দ থেকে ভালোকে, সে-ই পারে স্পর্শ করতে ঈশ্বরের বসনপ্রান্ত।
*
যদি তোমার হৃদয় হয় আগ্নেয়গিরি তাহলে কীভাবে তুমি আশা করো তোমার হাতে ফুল ফুটবে?
*
আত্মসন্তোষ থেকে বিস্ময়। সময় আছে যখন আমি ভুল করব এবং প্রতারিত হব এবং আমি হেসে উঠতে পারি সেইসব মানুষের সৌজন্যে, যারা ভাবে আমি ভুল করছি এবং প্রতারিত হচ্ছি তা আমি জানি না।
*
আমি তাকে কী বলব যে পশ্চাতধাবনকারী এবং পেছনে ধাওয়া করার ভূমিকায় যে অভিনয় করছে?
*
যে তার কর্দমাক্ত হাত তোমার পোশাকে মুছছে তোমার পোশাকটা নেয়ার জন্য, তার আবার তা প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে তোমার প্রয়োজন হবে না।
*
এটা হচ্ছে করুণা, সে কারণেই মুদ্রা বিনিময়কারী ভালো মালি হতে পারে না।
*
দয়া করে তোমার অর্জিত সদ্গুণ দ্বারা তোমার সহজাত দোষ ঢাকতে চেষ্টা কোরোনা। আমারও দোষ আছে, তারা আমার নিজের মতো।
*
কীভাবে আমি আমার ওপরে সেইসব অপরাধকে চাপিয়ে দিই যা আমার দ্বারা সংঘটিত হয়নি, সুতরাং আমার উপস্থিতিতে অন্য ব্যক্তিরা আয়েশ পেতে পারে।
*
জীবনের মুখোশ হচ্ছে গভীরতর রহস্যের মুখোশ।
*
শুধুমাত্র নিজের সম্পর্কিত জ্ঞান অনুসারে তুমি অন্যের বিচার করতে পারো।
আমাকে বলো কে আমাদের ভেতরে অপরাধী এবং কে অপরাধী নয়?
*
সেই হচ্ছে ন্যায়পরায়ণ যে তোমার অপকর্মের আধা-অপরাধ অনুভব করে।
*
একমাত্র নির্বোধ এবং প্রতিভাবানরাই মানুষের তৈরি আইন ভাঙতে পারে এবং তারাই ঈশ্বরের হৃদয়ের সবচেয়ে কাছাকাছি।
*
হে ঈশ্বর, আমার কোনো শত্রু নেই, কিন্তু যদি আমার একজন শত্রু থাকে তাহলে তার শক্তি আমার সমপর্যায়ের হতে দাও। তাহলে সেই সত্য একাকী বিজয়ী হতে পারে।
*
তুমি তোমার শত্রুর সঙ্গে পুরোপুরি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যখন তোমরা দুজনেই মারা
যাবে।
*
সম্ভবত একজন মানুষ আত্মরক্ষার ভেতরেই আত্মহত্যা করতে পারে।
দীর্ঘকাল আগে এক লোক ছিল যাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ সে ছিল অধিক স্নেহশীল এবং অধিক ভালোবাসার যোগ্য। এবং এটা বর্ণনা দেওয়া খুবই বিস্ময়ের যে, গতকাল তিনবার তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।
*
প্রথমবার সে একজন পুলিশকে বলছিল একজন পতিতাকে কারাগারে না নিতে, দ্বিতীয়বার একজন গৃহহীনের সঙ্গে সে মদ্যপান করছিল এবং তৃতীয়বার সে ঘুসাঘুসি করছিল চার্চের ভেতরে একজন প্রোমোটারের সঙ্গে।
*
যদি তারা প্রত্যেকেই বলে ভালো এবং মন্দ সম্পর্কে যা ছিল সত্য, তাহলে আমার জীবনও সত্য, কিন্তু তা এক দীর্ঘ অপরাধ।
*
দয়া হচ্ছে অর্ধ-সুবিচার।
*
সেই হল একমাত্র ব্যক্তি যে আমার প্রতি অন্যায় করেছে এবং আমিই হলাম একমাত্র ব্যক্তি যার ভাইয়ের প্রতি আমি অন্যায় করেছিলাম।
*
যখন তুমি দেখতে পাও কারাগারের দিকে নেতৃত্ব দিতে থাকা একজন মানুষ তোমার হৃদয়ের ভেতরে কথা বলছে, ‘সম্ভবত সে পালাচ্ছে একটা সংকীর্ণ জেলখানা
থেকে।’
এবং যখন দ্যাখো একজন মাতাল তোমার হৃদয়ের ভেতরে বলছে, ‘সম্ভবত স্থির এবং অধিক সুন্দর কিছু একটা থেকে সে পালিয়ে যাওয়ার পথ অনুসন্ধান করছে।’
*
প্রায় সময়ই আত্মরক্ষার ভেতরে আমি নিজেকে ঘৃণা করেছি, কিন্তু যদি শক্তিশালী হতাম তাহলে এরকম অস্ত্র হিসেবে আমি ব্যবহৃত হতাম না।
*
সেই ব্যক্তি কীরকম নির্বোধ, যার চোখে ঘৃণা
এবং ওষ্ঠে হাসি কিন্তু সে জোড়াতালি দেয় সবকিছু।
*
শুধুমাত্র তারাই আমাকে হিংসা এবং ঘৃণা করতে পারে
যারা আমার নিচে অবস্থান করে।
আমি কখনও ঘৃণা বা হিংসার শিকার হইনি কিন্তু আমি
কারও ওপরেও অবস্থান করিনি।
শুধুমাত্র যারা আমার ওপরে অবস্থান করে তারাই পারে
আমার প্রশংসা অথবা মর্যাদাহানি করতে।
আমি কখনই প্রশংসিত বা ঘৃণিত হইনি,
তবে আমি কারও নিচেও অবস্থান করিনি।
*
তুমি আমাকে বলছ, ‘আমি তোমাকে বুঝতে পারি না’ যা আমার বিশেষ মূল্যের চেয়েও অধিক প্রশংসার এবং একটি অপমানের, তুমি যার যোগ্য নও।
*
আমি কী পরিমাণ স্বার্থপর যখন জীবন আমাকে দান করে সোনা এবং আমি তোমাকে দিই রূপা, যদিও নিজেকে আমার উদার মনে হয়।
*
যখন তুমি জীবনের হৃদয়ে পৌঁছাবে তখন দেখতে পাবে তুমি গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তির চেয়ে উচ্চতর পর্যায়ে নেই এবং নেই নবীর চেয়েও নিম্নতর পর্যায়ে।
*
ধীরগতিসম্পন্ন যে, তার জন্য তোমার দয়া প্রদর্শন করা উচিত এবং এটা বিস্ময়কর, কিন্তু মনের দিক থেকে যে ধীরগতিসম্পন্ন তার জন্য নয়,
তেমনি দয়া প্রদর্শন করো যে দেখতে পায় না তার জন্য, কিন্তু যার হৃদয় অন্ধ তার জন্য
নয়।
*
শত্রুর মাথার ওপর ক্রাচ না-ভাঙাটা হবে একজন খোঁড়ার জন্য অধিকতর জ্ঞানের কাজ।
*
কী পরিমাণ অন্ধ সে, যে তার পকেট থেকে তোমাকে দান করে, যা সে গ্রহণ করতে পারে আবার তোমার হৃদয় থেকে।
*
জীবন হচ্ছে একটা মিছিল। ধীরগতিসম্পন্ন পা একে দ্যাখে অধিক দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং সে দ্রুতগতিতে হাঁটে।
এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন পা একে দ্যাখে অধিক ধীরগতিসম্পন্ন এবং তারপরও সে অধিক দ্রুতগতিতে হাঁটে।
*
যদি সেখানে পাপের মতো কিছু একটা থাকে তাহলে আমাদের কেউ কেউ মনে করে এটা হচ্ছে পেছনের দিকে যাওয়া, অনুসরণ করা আমাদের পিতৃপুরুষের পদচিহ্ন এবং আমাদের কেউ কেউ মনে করে শিশুদের মতামতকে বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে সামনের দিকে যাওয়া।
*
সত্য ঈশ্বর হলেন তিনিই, যিনি ওই সবকিছুসহ একজন,
যা খারাপ মনে করা হয়।
*
আমরা সবাই বন্দি কিন্তু আমাদের কারও কারও সেলে
জানালা আছে এবং কিছু কিছু সেল জানালাহীন।
*
বিস্ময়কর হল যে আমরা যতটুকু বলিষ্ঠতা প্রদর্শন করি সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, তার চেয়ে অধিক বলিষ্ঠতা প্রদর্শন করি ভুলগুলি প্রতিরোধ করতে।
*
আমাদের প্রত্যেকেরই কি উচিত পাপগুলি স্বীকার করা একে অন্যের কাছে? তাহলে আমরা প্রত্যেকেই হেসে উঠব একে অন্যের সামনে আমাদের অভিনবত্ব হারানোর জন্য। আমাদের প্রত্যেকেরই কি উচিত আমাদের সদগুণগুলি প্রকাশ করা? একই কারণে কি আমরা হেসেও উঠব?
*
একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি মানুষের তৈরি আইনের ওপরে অবস্থান করে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের
তৈরি নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে তার দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত না হয়, তারপর, সে কারও ওপরেও নয়, কারও নিচেও নয়।
*
তোমার ও আমার মাঝে সরকার হচ্ছে একটা চুক্তি।
তুমি এবং আমি প্রায়ই ভুল করে থাকি।
*
প্রয়োজনের অন্য নাম হচ্ছে অপরাধ অথবা একটা অসুখের রূপ।
এটা কী বৃহত্তর কোনো ত্রুটি, অন্য ব্যক্তিদের ত্রুটি সম্পর্কে
সচেতন হওয়ার চেয়ে?
যদি অন্য ব্যক্তি তোমার দিকে তাকিয়ে হাসে তুমি তাকে করুণা কতে পারো, কিন্তু তুমি যদি তার দিকে তাকিয়ে হাসো তাহলে তুমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা নাও করতে
পারো।
যদি অন্য ব্যক্তি তোমাকে আহত করে, তাহলে তুমি ক্ষতের কথা ভুলেও যেতে পারো, কিন্তু তুমি যদি তাকে আহত করো তাহলে তুমি তা সবসময় স্মরণ করবে।
সত্যের ভেতরে অন্য ব্যক্তি হচ্ছে তোমার সবচেয়ে সংবেদনশীল সত্তা, যাকে দেওয়া
হয়েছে অন্য শরীর।
*
কী পরিমাণ অমনোযোগী তুমি মানুষকে যখন পাবে তোমার পাখার সঙ্গে উড়তে এবং
তুমি কখনও তাদেরকে একটা পালক দিতে পারো না।
*
একবার এক লোক আমার ঘরের মেঝেতে বসেছিল,
খেয়েছিল আমার রুটি এবং পান করেছিল আমার মদ
এবং আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গিয়েছিল।
তারপর সে আবার এল রুটি এবং মদের জন্য এবং আমি
ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
এবং দেবদূতেরা আমার উদ্দেশে হেসেছিল।
*
ঘৃণা হচ্ছে একটা মৃত বিষয়। তোমাদের ভেতর কে সমাধিতে পরিণত হবে।
*
যে খুন হয়েছে এটা হচ্ছে তার সম্মান, কারণ সে খুনি নয়।
*
মানবতার বিচার হয় এর হৃদয়ের নীরবতায়, কিন্তু কখনও তা বাচালের হৃদয়ে নয়।
*
তারা আমাকে পাগল মনে করে, কারণ আমি সোনার জন্য আমার দিনগুলিকে বিক্রি করব না;
এবং আমি তাদেরকে পাগল মনে করি কারণ তারা ভাবে আমার দিনগুলির মূল্য আছে।
*
তারা আমাদের সামনে তাদের সোনা ও রুপার প্রাচুর্যকে তুলে ধরে, আরও তুলে ধরে হাতির দাঁত ও আবলুস কাঠ
এবং আমরা তাদের সামনে মেলে ধরি আমাদের হৃদয় এবং উদ্যম, এবং তারা নিজেদেরকে মনে করে নিমন্ত্রণকারী এবং আমাদেরকে অতিথি।
*
স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই যারা শ্রেষ্ঠ, তাদের চেয়ে স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা দিয়ে তাদেরকে পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে পুরুষদের ভেতরে আমি হব ক্ষুদ্রতর।
*
মানুষের ভেতরে সবচেয়ে করুণাময় হল সেই ব্যক্তি
যে তার স্বপ্নকে ঘুরিয়ে নেয় সোনা ও রুপার দিকে।
*
আমরা প্রত্যেকেই আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষার শীর্ষে উঠছি। অন্য সঙ্গীর কি উচিত হবে তোমার বস্তা, মানিব্যাগ, মোম এবং ভারী যা কিছু আছে তা চুরি করা? তোমার উচিত
লোকটিকে করুণা করা।
শিখরে আহরণ করা তার চামড়ার জন্য কঠিনতর হবে
এবং বোকা তার যাত্রাপথকে দীর্ঘতর করবে।
তোমার কৃশতার ভেতরে তোমার কি উচিত পর্যক্ষেণ করা তার মাংস থেকে উত্থিত উর্ধ্বমুখী ধোঁয়া? তাকে পদক্ষেপ ফেলতে সাহায্য করো এটা তোমার দ্রুততায় সংযুক্ত হবে।
*
তুমি কোনো মানুষের বিচার করতে পারো না তার সম্পর্কিত জ্ঞানের ওপরে উঠে এবং দ্যাখো কী পরিমাণ ক্ষুদ্র তোমার জ্ঞান।
*
দখল করা হয়েছে এরকম কারও কাছে কোনো দখলকারীর ধর্মপ্রচার আমি শুনব না।
*
সে-ই হল প্রকৃতঅর্থে একজন মুক্ত মানুষ, যে ধৈর্যের সঙ্গে দাসত্ব বন্ধনের বোঝা বহন
করে।
*
হাজার বছর আগে আমার প্রতিবেশী আমাকে বলেছিল : ‘আমি জীবনকে ঘৃণা করি, কারণ এটা কিছুই নয়, শুধুমাত্র একটি যন্ত্রণাময় বিষয়।’
এবং গতকাল আমি একটা সমাধিক্ষেত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং দেখতে পেলাম জীবন নৃত্য করছে কবরের ওপর।
*
দ্বন্দ্বের প্রকৃতি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, কিন্তু বিশৃঙ্খলার আকুল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে শৃঙ্খলা।
নির্জনতা হচ্ছে একটি নৈঃশব্দের ঝড়, যা আমাদের
সমস্ত মৃত শাখাগুলিকে ভেঙে ফেলে, যদিও তা আমাদের জীবন্ত শিকড়কে জীবন্ত মাটির
জীবন্ত হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে পাঠায়।
*
একবার আমি একটা ছোট্ট নদীকে সমুদ্র-সম্পর্কে বলেছিলাম এবং সমুদ্র আমাকে ভেবেছিল একজন কাল্পনিক অতিরঞ্জনকারী, এবং একবার সমুদ্রকে একটা ছোট্ট নদী সম্পর্কে বলেছিলাম, এবং সমুদ্র আমাকে ভেবেছিল আমি একজন কুৎসা-রটনাকারী।
*
অন্তর্দৃষ্টি কী পরিমাণ সংকীর্ণ যে পিঁপড়ার ব্যাস্ততার উচ্চপ্রশংসা ফড়িংয়ের সংগীতের ওপরে অবস্থান করে।
*
এখানে সর্বোচ্চ সদগুণ হতে পারে অন্য পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম গুণাবলি।
*
গভীর এবং উঁচু, গভীরতায় পৌঁছায় অথবা সোজাসুজিভাবে উচ্চতায় এবং একমাত্র প্রশস্ততাই বৃত্তের ভেতরে চলাফেরা করতে পারে।
*
ওজন ও পরিমাপ সম্পর্কে যদি আমাদের কোনো ধারণা না থাকে
তাহলে আমরা আতঙ্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকব, যেমন আমরা সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম।
*
কল্পনাহীন বিজ্ঞানী হচ্ছে অনুজ্জ্বল ছুরি হাতে একজন কসাই, কিন্তু তুমি কী হবে, যদিও প্রত্যেকেই আমরা সবজীভুক নই।
*
তুমি যখন গান গাও, ক্ষুধার্ত তখন তার পাকস্থলীসহ তোমার সংগীত শ্রবণ করে।
*
মৃত্যু বৃদ্ধদের নিকটতর নয়, নবজাতকের চেয়ে।
*
বস্তুতপক্ষে তোমাকে অবশ্যই অকপট হতে হবে,
অকপট হতে হবে চমৎকারভাবে, অন্যথায়
নীরব থাকো, কারণ আমাদের প্রতিবেশীদের ভেতরে
একজন মারা যাচ্ছে।
*
মানুষের ভেতরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে দেবদূতদের ভেতরে বিবাহ-উৎসব।
*
ভুলে যাওয়া বাস্তবতা মারা যেতে পারে এবং স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করতে পারে সাত হাজার বাস্তবতা এবং ঘটনাসমূহ নিঃশেষিত হতে পারে অন্তেষ্টিক্রিয়ায় এবং সমাধি নির্মাণের সময়।
*
সত্যের ভেতরে আমরা কথা বলেছি নিজেদের সম্পর্কে, কিন্তু মাঝে মাঝেই আমরা যথেষ্ট উচ্চৈঃস্বরে কথা বলি,
ফলে অন্যেরাও আমাদের কথা শুনতে পারে।
*
সেটাই হল সবচেয়ে সোজা যা কখনও দেখা যায় না যতক্ষণ কেউ একজন তা সাধারণভাবে ব্যাখ্যা না করে।
*
যদি আমার ভেতরে কোনো ছায়াপথ না থাকে তাহলে কীভাবে আমি তা দেখব অথবা জানব?
*
চিকিৎসকদের ভেতরে যদি আমি চিকিৎসক না হই তাহলে তারা বিশ্বাস করবে না যে আমি একজন জ্যোতির্বিদ।
*
সম্ভবত সমুদ্রের সংজ্ঞা হল মুক্তার খোলস। সম্ভবত সময়ের সংজ্ঞা হল কয়লার ভেতরে হীরা।
*
খ্যাতি হচ্ছে প্রবল অনুরাগের ছায়া যা সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে থাকে।
*
শিকড় হচ্ছে একটা ফুল যা খ্যাতিকে অবজ্ঞা করে।
*
সৌন্দর্যের ওপরে না আছে ধর্ম, না আছে বিজ্ঞান।
*
আমি জানি প্রতিটি মহৎ মানুষই ছিল মানসিক দিক থেকে কিছুটা ক্ষুদ্র এবং এটা হল সেই ক্ষুদ্রতা যা নিষ্ক্রিয়তা, পাগলামি এবং আত্মহত্যাকে প্রতিরোধ করে।
*
সে-ই প্রকৃত মহৎ মানুষ, যে কারও ওপর প্রভুত্ব করবে না এবং কারও প্রভুত্ব মেনেও নেবে না।
*
আমি বিশ্বাস করব না যে লোকটি মাঝারি মানের সাধারণ মানুষ, কারণ সে অপরাধী এবং নবীদের হত্যা করেছিল।
*
অহংকারের অসুস্থতাসহ ধৈর্য হচ্ছে প্রণয়পীড়িত এক অনুভূতি।
*
ক্ষুদ্রাকৃতির অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা ফিরে আসবে, কিন্তু এটা বিস্ময়কর কিছু নয় যে হাতিরাও প্রাকৃতিক রীতিতে উৎপন্ন হবে।
*
চুক্তিহীনতা দুটি মনের ভেতরে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী বিচ্ছিন্নতা হতে পারে।
*
আমি হলাম অগ্নিশিখা এবং আমি হলাম শুকনো ঝোপঝাড়
এবং আমার এক অংশ ক্রমাগত অন্য অংশকে গ্রাস করে।
*
আমরা সবাই পবিত্র পাহাড়ের শিখর অনুসন্ধান করছি,
কিন্তু আমাদের পথ কি সংক্ষিপ্ত হবে না, যদি আমরা অতীতকে একটা রেখাচিত্র বিবেচনা করি, যার কোনো নির্দেশক নেই?
*
বিচক্ষণতা বিরত থাকবে প্রাজ্ঞ হওয়া থেকে যখন তা খুবই গর্বিত হবে কাঁদতে,
খুবই গম্ভীর হবে হাসতে গিয়ে এবং
অন্য মানুষের সন্ধান করতে গিয়ে হবে খুবই আত্মপরিপুর্ণ।
*
আমি নীরবতা শিক্ষা করেছি বাচালদের কাছ থেকে,
ধৈর্য শিখেছি অসহিষ্ণুদের কাছ থেকে এবং দয়াপরবশতা শিখেছি যারা দয়ালু নয় তাদের কাছ থেকে, তারপরও বিস্ময়ের বিষয় হল এসব শিক্ষকদের প্রতি আমি অকৃতজ্ঞ।
*
একজন অন্ধ ভক্ত হচ্ছে এমন একজন বক্তা যে পাথরের মতো বধির।
*
পরশ্রীকাতরতার নৈঃশব্দ ভয়াবহ শব্দে পরিপূর্ণ।
*
তুমি যদি শুধুমাত্র সেইসব দেখতে পারো যা আলোয় প্রকাশিত হয় এবং শুনতে পারো সেইসব যা শুধুই ঘোষণা করে শব্দ, তাহলে সত্যের ভেতরে তুমি দেখতেও পারো না, শুনতেও পারো না।
*
একটি ঘটনা হচ্ছে একটি লিঙ্গভেদহীন সত্য।
*
একই সময়ে তুমি হাসতে ও নির্দয় হতে পারো না।
*
আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছাকাছি হল একজন রাজ্যহীন রাজা এবং ভিক্ষা চাইতে জানে না এরকম একজন দরিদ্র মানুষ।
*
ব্যর্থতার লজ্জা নির্লজ্জের সফলতার চেয়ে মহত্তর।
*
মাটির যে কোনো স্থান খনন করো এবং তুমি দেখতে পাবে ধনভাণ্ডার তবে তোমাকে অবশ্যই খনন করতে হবে একজন কৃষকের আস্থা নিয়ে।
*
শিকারকৃত একটা শেয়াল, যাকে বিশজন ঘোড়সওয়ার
এবং বিশটি শিকারি কুকুরের দল অনুসরণ করছে, সে বলল, ‘অবশ্যই তারা আমাকে হত্যা করবে। কিন্তু কী নিচ এবং নির্বোধ তারা। নিশ্চিতভাবে এটা মোটেও মূল্যবিশিষ্ট হবে না, কারণ বিশটা শেয়াল সওয়ার হয়েছে বিশটা গাধার ওপর এবং সঙ্গী হয়েছে বিশটি নেকড়ের, একজন মানুষকে ধাওয়া করতে এবং হত্যা করতে।’
*
আমাদের ভেতরে এটা হচ্ছে মন যা মানুষের তৈরি আইনের কাছে প্রাকৃতিক রীতিতে উৎপন্ন হয় কিন্তু আমাদের ভেতরে কখনও তা উদ্দীপনা জাগায় না।
*
আমি একজন পর্যটক এবং একজন নৌসারথি এবং প্রতিদিন আমি
আবিষ্কার করি আমার আত্মার ভেতরের নতুন নতুন অঞ্চল।
*
একজন নারী প্রতিবাদ করে বলল, ‘অবশ্যই নীতিগতভাবে সমর্থন করা যায় এটা এরকম একটি যুদ্ধ। আমার পুত্র এই যুদ্ধে মারা গেছে।’
*
আমি জীবনকে বলেছিলাম, ‘আমি শুনব যে, মৃত্যু কথা বলে।’ জীবন তার কণ্ঠ একটু উঁচুতে তুলে বলল, ‘এখন তুমি তাকে শ্রবণ করো।
*
যখন তুমি জীবনের যাবতীয় রহস্যের সমাধান করবে,
তখন তোমার মৃত্যু দীর্ঘায়িত হবে কারণ এটা হচ্ছে জীবনের অন্য এক রহস্য।
*
জন্ম এবং মৃত্যু হচ্ছে সাহসিকতার দুটি মহত্তম অভিব্যক্তি।
*
বন্ধু আমার, তুমি এবং আমি জীবনের কাছে আগন্তুক হিসেবে রয়ে যাব এবং একজন অন্যের প্রতি এবং প্রত্যেকেই তার নিজের প্রতি সেইদিন পর্যন্ত, যখন তুমি কথা বলবে এবং আমি শ্রবণ করব তোমার কণ্ঠস্বরকে নিজের কণ্ঠস্বর মনে করে,
যখন আমি তোমার মুখোমুখি দাঁড়াব এবং
মনে করব আমি একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
*
তারা আমাকে বলে, ‘ তোমার নিজেকে জানা উচিত, তাহলেই তুমি সব মানুষকে জানবে।’
এবং আমি বলি, ‘শুধুমাত্র যখন আমি সব মানুষকে সন্ধান করব তখনই আমি নিজেকে জানব।’
*
মানুষ মূলত দুইজন। একজন অন্ধকারে জাগ্রত, অন্যজন আলোর ভেতরে ঘুমন্ত।
*
একজন আশ্রমবাসী হচ্ছে সেইজন, যে এই খণ্ড খণ্ড পৃথিবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করেছে, যেন সে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ছাড়াই এই পৃথিবীকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে।
*
একজন পণ্ডিত ও একজন কবির মাঝখানে শুয়ে আছে একটা সবুজ মাঠ। পণ্ডিতের কি উচিত জ্ঞানী হওয়ার জন্য এই মাটি অতিক্রম করা অথবা কবির উচিত এই মাঠ অতিক্রম করা, যে নবীতে পরিণত হবে।
*
আমি গতকাল দেখেছিলাম দার্শনিকেরা বাজার এলাকায় ব্যাগে করে বহন করছে তাদের
মস্তিষ্ক এবং উচ্চস্বরে চিৎকার করছে, ‘বিচক্ষণতা। বিচক্ষণতা বিক্রি হবে
দুর্ভাগা দার্শনিকেরা! অবশ্যই তাদের মস্তিষ্ক বিক্রি করা প্রয়োজন
তাদের হৃদয়ের খাবার জোগাতে।
*
একজন দার্শনিক একজন ঝাড়ুদারকে বলল, ‘তোমার জন্য আমার দয়া হয়। তোমার কাজ যেমন শক্ত তেমনি নোংরা’। ঝাড়ুদার বলল, ‘ধন্যবাদ জনাব। কিন্তু আমাকে বলুন আপনার কাজ কী?’ উত্তরে দার্শনিক বললেন ‘আমি মানুষের মন নিয়ে
গবেষণা করি- তার কর্ম এবং তার আকাঙ্ক্ষা।’ তারপর ঝাড়ুদার তার কাজে লেগে গেল এবং হাসতে হাসতে বলল, ‘আপনার জন্যও আমার দয়া হয়।’
*
যে সত্য শোনে এবং যে সত্য উচ্চারণ করে, কেউ কারও চেয়ে ছোট নয়।
*
প্রয়োজনীয়তা ও বিলাসিতার মাঝখানে কোনো মানুষ সীমারেখা টানতে পারে না। শুধুমাত্র দেবদূতেরাই তা পারে এবং দেবদূতেরাই জ্ঞানী এবং অতৃপ্ত বাসনা দ্বারা তড়িত।
সম্ভবত দেবদূতেরাই শূন্যতার ভেতরে আমাদের উন্নততর চিন্তা।
*
সেই হল সত্য রাজকুমার, যে দরবেশের হৃদয়ে তার সিংহাসন খুঁজে পায়।
*
তুমি যা পারো সহৃদয়তা তার চেয়েও অধিক প্রদান করে এবং অহংকার তোমার প্রয়োজনের চেয়ে গ্রহণ করছে কম।
*
সত্যের ভেতরে তুমি কোনো মানুষের কাছে ঋণী নয়। তুমি সবকিছুর জন্য ঋণী সব মানুষের কাছে।
*
অতীতে যা কিছু আমাদের সঙ্গে বসবাস করত, বর্তমানেও
তা আমাদের সঙ্গে বসবাস করে। নিশ্চিতভাবেই আমাদের কেউ অভদ্র নিমন্ত্রণকারীতে পরিণত হবে না।
*
যার আকাঙ্ক্ষা বেশি সে-ই দীর্ঘজীবী হয়।
*
তারা আমাকে বলল, ‘হাতের ওপর একটি পাখি ঝোপের দশটি পাখির মূল্যের সমান।’ কিন্তু আমি বলি, ‘ঝোপের ভেতরে একটি পাখি ও একটি পালক, হাতের ওপরে থাকা দশটি পাখির চেয়েও বেশি মূল্যবান।’
তোমার অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সেই পালক হচ্ছে
পাখাযুক্ত পাসহ জীবন–না, এটা হচ্ছে নিজেই জীবন।
*
এখানে শুধুমাত্র দুটি উপাদান—সৌন্দর্য এবং সত্য,
সৌন্দর্য থকে প্রেমাস্পদের হৃদয়ে এবং সত্য থাকে
ভূমিকর্ষণকারীর বাহুতে।
*
বিশাল সৌন্দর্য অধিকার করে রেখেছে আমাকে কিন্তু একটি সৌন্দর্য এখনও পর্যন্ত বৃহত্তর, যা আমাকে তার থেকেও মুক্ত করেছে।
*
সৌন্দর্য তার হৃদয়ে উজ্জ্বলতর হয়ে দীপ্তিমান যার রয়েছে এর জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু তার চেয়ে এটা আরও বেশি দীপ্তিমান তার চোখে, যে এটা দেখে।
*
আমি প্রশংসা করি সেই ব্যক্তির যে আমার কাছে তার মনোবাসনা উন্মোচন করে, আমি সম্মান করি তাকে যে প্রকাশ করে তার স্বপ্নকে, কিন্তু আমি কেন লাজুক,
এমনকি তার সামনে এই ছোটখাটো লজ্জা কে আমাকে পরিবেশন করে?
*
দেবদূতেরা জানে খুবই বাস্তববাদী মানুষেরা তাদের রুটি খেয়ে থাকে স্বপ্নদর্শীদের ভ্রূর ঘাম দিয়ে।
*
বোধশক্তি প্রায়ই হচ্ছে একটা মুখোশ। যদি তুমি কাঁদতে পারো তাহলে সেই অশ্রু অনুসন্ধান করবে একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিকে, যে বিরক্ত অথবা ভোজবাজির চতুরতায় আচ্ছন্ন।
*
আমার কাছে উপলব্ধির অর্জন হচ্ছে উপলব্ধি এবং তা হচ্ছে অনুজ্জ্বল এবং অনুজ্জ্বলতা। আমি ভাবি তারা উভয়েই সঠিক।
*
গোপনীয়তাসহ শুধুমাত্র সেইসব ছিল তাদের হৃদয়ে আমাদের হৃদয়ে তা হতে পারত ঐশ্বরিক গোপনীয়তা।
*
যে তোমার আনন্দ ভাগাভাগি করবে কিন্তু বেদনাকে নয়, সে-ই হারিয়ে ফেলবে স্বর্গের সাত দরজার যে-কোনো
একটির চাবি।
*
হ্যাঁ, এটাই হল নির্বাণলাভ, এটাই নেতৃত্ব দেবে তোমার ভেড়াগুলিকে সবুজ চারণভূমির দিকে, ঘুম পাড়াবে তোমার শিশুদেরকে এবং প্রেরণা জোগাবে তোমার কবিতার শেষ লাইনটি লিখতে।
*
আনন্দ ও বেদনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের বহু আগেই আমরা তা পছন্দ করি।
*
বেদনা হচ্ছে দুটি বাগানের ভেতরে একটি দেয়াল।
*
তোমার আনন্দ ও বেদনা যখন বড় হয়ে দেখা দেয় তখন পৃথিবী ছোট হয়ে আসে।
*
আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে অর্ধেক জীবন এবং নিস্পৃহতা হচ্ছে অর্ধেক মৃত্যু।
*
আজকের দুঃখবোধের ভেতরে চূড়ান্ত অপ্রীতিকর বিষয়ই হচ্ছে আমাদের গতকালের আনন্দের স্মৃতি।
*
তারা আমাকে বলে, ‘বর্তমান পৃথিবীর আনন্দ এবং পরবর্তী পৃথিবীর শান্তির ভেতর থেকে আপনাকে অবশ্যই একটি পছন্দ করতে হবে।’
আমি তাদেরকে বললাম, ‘আমি এই পৃথিবীর উল্লাস এবং পরবর্তী পৃথিবীর শান্তি দুটোই পছন্দ করেছি। কারণ আমি আমার হৃদয়ে উপলব্ধি করছি যে, সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন কবি একটাই কবিতা লিখেছিলেন এবং তার ছন্দ যথাযথ এবং তা অন্ত্যমিলযুক্ত একটি উৎকৃষ্ট কবিতা।’
*
হৃদয়ের ভেতরে বিশ্বাস হচ্ছে একটি মরূদ্যান, চিন্তার কাফেলার সাহায্যে সেখানে কখনও কেউ পৌঁছাবে না।
*
যখন তুমি তোমার উচ্চতায় পৌঁছাও, তখন শুধুই তোমার আকাঙ্ক্ষা হবে আকাঙ্ক্ষার জন্য, ক্ষুধা হবে ক্ষুধার জন্য এবং তোমার তৃষ্ণা হবে বৃহত্তর তৃষ্ণার জন্য।
*
যদি বাতাসের কাছে তুমি তোমার গোপনীয়তা প্রকাশ করো, তাহলে বাতাসকে তোমার দোষী করা উচিত নয়
বৃক্ষের কাছে তা প্রকাশ করার জন্য।
*
বসন্তের পুষ্প হচ্ছে শীতের স্বপ্ন এবং তা দেবদূতদের নাস্তার টেবিলের সঙ্গে সম্পর্কিত।
*
একটা ভোঁদড় একটা গোলাপ ফুলকে বলল, ‘দ্যাখো আমি কী দ্রুত দৌড়াই। তুমি হাঁটতেও পারো না,
এমনকি হামাগুড়ি দিয়েও চলতে পারো না।’
গোলাপ ফুল ভোঁদড়কে বলল, ‘ হে সবচেয়ে দ্রুত ও মহৎ দৌড়বিদ, দয়া করে আরও জোরে দৌড়াও।’
*
খরগোশের চেয়েও রাস্তা সম্পর্কে অধিক বলতে পারে কাছিম।
*
বিস্ময়কর হল যে, মেরুদণ্ডহীন প্রাণীদের রয়েছে সবচেয়ে শক্ত খোলস।
*
সবচেয়ে বাচাল যারা, তারাই সবচেয়ে কম বুদ্ধিমান এবং একজন বক্তা ও একজন নিলামদারের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম।
*
কৃতজ্ঞ হও যে, অতীতের কলঙ্ক ভুলে তুমি পিতার খ্যাতি ও চাচার সম্পদ নিয়ে বসবাস করবে না। কিন্তু সবকিছুর পরও কৃতজ্ঞ হও যে, অতীত কলঙ্ক ভুলে কেউই তোমার খ্যাতি বা সম্পদ নিয়ে বসবাস করবে না।
*
একজন বাজিকর যখন তার বল ধরতে ব্যর্থ হয়
তখন কি সে এই ব্যর্থতার জন্য আমার কাছে আবেদন করে?
*
পরশ্রীকাতর যারা তারা আমার সম্পর্কে কিছু না-জেনেই প্রশংসা করে।
*
দীর্ঘকাল ধরে তোমার মায়ের ঘুমের ভেতরে তুমি ছিলে একটা স্বপ্ন এবং তারপর তিনি জেগে ওঠেন তোমাকে
জন্ম দেওয়ার জন্য।
*
তোমার মায়ের আকুল আকাঙ্ক্ষার ভেতরে রয়েছে মানবপ্রজাতির জীবাণু।
*
আমার পিতামাতার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি সন্তানের
এবং তারা আমাকে জন্মদান করে। এবং আমি চেয়েছিলাম একজন পিতা এবং মাতা এবং আমি জন্ম দিলাম রাত্রি এবং সমুদ্রকে।
*
আমাদের কিছু কিছু সন্তান হচ্ছে আমাদের বক্তব্যের সত্যতাকে তুলে ধরা এবং কিছু কিছু সন্তান হচ্ছে আমাদের অনুতাপ।
*
যখন রাত্রি আসে এবং তুমিও অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাও, শুয়ে পড়ো এবং একটি ইচ্ছাসহ পরিণত হও অন্ধকারে। যখন ভোরবেলা আসে এবং তখনও পর্যন্ত তুমি অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো এবং একটি ইচ্ছাসহ দিনকে বলো, ‘আমি এখনও অন্ধকার।’
দিন ও রাত্রির সাথে এই ভূমিকা পালন করা হল নির্বোধের কাজ।
উভয়েই তারা তোমার সঙ্গে হেসে উঠবে।
*
ধোঁয়াশায় অবগুণ্ঠিত পাহাড় কোনো পাহাড় নয়, যেমন বৃষ্টিতে ভেজা ওকবৃক্ষ কখনও ক্রন্দনরত উইলো হয় না।
*
লক্ষ্য করো আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও তা সত্য-বিবর্জিত নয়, গভীরতা এবং উচ্চতা একজন আরেকজনের অধিকতর কাছাকাছি দুজনের মধ্যপর্যায়ের চেয়ে।
যখন আমি একটা স্বচ্ছ আয়নার সামনে তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম, তুমি স্থিরদৃস্টিতে তাকিয়েছিলে আমার দিকে এবং দেখেছিলে নিজের প্রতিমূর্তি। তখন তুমি বলেছিলে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ কিন্তু প্রকৃত সত্য হল আমার চেহারায় তুমি তোমাকেই ভালোবেসেছিলে।
*
যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদের ভালোবাসতে আনন্দ পাও, তখন তা একটি সদগুণে পরিণত হওয়া থেকে বিরত থাকে।
*
ভালোবাসো সেইসব যা সবসময় লাফায় না, যা সবসময় মৃত্যুবরণ করে।
*
একই সময়ে তুমি যৌবন ও যৌবন সম্পর্কিত জ্ঞানলাভ করতে পারো না,
কারণ, যৌবন সবকিছু জানার জন্য ব্যস্ত জীবনযাপন করে এবং জ্ঞানও খুবই ব্যস্ত বেঁচে থাকার উপায় অনুসন্ধান করতে।
*
তুমি তোমার জানালায় বসে পথচারীদের দেখছ এবং এসময় তুমি দেখতে পার একজন নান
তোমার ডান হাতের দিকে হেঁটে আসবে এবং একজন পতিতা হেঁটে আসছে তোমার বাম হাতের দিকে। এবং তুমি তোমার নিষ্পাপ সত্তাকে বলতে পারো, ‘একজন কী পরিমাণ সৎ এবং অন্যজন কী পরিমাণ নীচ।’ কিন্তু তোমার উচিত চোখ বন্ধ করে শোনা
যখন ইথারে একটি কণ্ঠস্বর তোমাকে ফিসফিস করে
বলবে, ‘একজন আমাকে অনুসন্ধান করে প্রার্থনার ভেতরে এবং অন্যজন বেদনার ভেতরে এবং প্রত্যেকের আত্মার ভেতরে আমার আত্মার জন্য
রয়েছে একটা কুঞ্জবন।
*
প্রতি একশো বছরে একবার নাজারেত-এর যিশুর সঙ্গে খৃস্টানদের যিশুর দেখা হয় লেবাননের পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত একটা বাগানে। এবং তারা দীর্ঘসময় ধরে কথা বলেন এবং প্রতিবারই নাজারেত-এর যিশু চলে যাবার সময় খৃস্টানদের যিশুকে বলেন, ‘বন্ধু আমার, আমি শঙ্কিত, আমরা কোনোদিনই একমত হব না, হব না।’
*
অতি প্রাচুর্যের অধিকারী যে ঈশ্বর তাকেও খাবার জোগাতে পারেন।
*
মহৎ মানুষের রয়েছে দু’টি হৃদয়, একটি রক্ত ঝরায়, অন্যটি ধৈর্য ধারণ করে।
*
কারও কি মিথ্যা বলা উচিত, যা তোমাকে আহত করে না এবং কাউকেই আহত করে না। কেন হৃদয় থেকে বলো না তার এই ঘটনাবলির গৃহটি খুবই ছোট তার কল্পনাবিলাসের জন্য এবং বৃহত্তর শূন্যতার জন্য তাকে এটা পরিত্যাগ করতেই হবে।
*
প্রতিটি বন্ধ-দরজার পেছনে রয়েছে সাতটি সিল দ্বারা সিলমোহরকৃত রহস্য।
*
অপেক্ষা হচ্ছে সময়ের খুর।
*
সমস্যা যদি তোমার বাড়ির পূবদিকের দেয়ালের একটা নতুন জানালা হয়, তাহলে তোমার কী করা উচিত?
*
তুমি তাকে ভুলে যেতে পারো যার সঙ্গে তুমি হেসেছিলে, কিন্তু যার সঙ্গে তুমি কেঁদেছিলে তাকে কোনোদিন ভুলবে না।
*
অবশ্যই বিস্ময়করভাবে ঐশ্বরিক কিছু আছে লবণের ভেতরে। এটা আমাদের সমুদ্রের ভেতরে এবং অশ্রুজলের ভেতরে।
*
আমাদের ঈশ্বর তার ভদ্রোচিত তৃষ্ণার ভেতরে আমাদের প্রত্যেককে পান করবেন, সেইসঙ্গে পান করবেন শিশির এবং অশ্রুজল।
*
তুমি হলে তোমার দৈত্যাকৃতির আত্মার একটি টুকরো। একটি মুখ সন্ধান করে রুটি এবং একটি অন্ধহাত তৃষ্ণার্ত মুখের জন্য কাপ ধরে আছে।
*
ধীরগতিসম্পন্ন সমুদ্রের স্রোতে আমি কোনো
দোষ খুঁজে পাব না।
এটা একটা চমৎকার জাহাজ এবং আমাদের ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিচালনায় সক্ষম। এটা শুধুই তোমার পাকস্থলী যা বিশৃঙ্খল হয়ে আছে।
*
আমাদের আকাঙ্ক্ষা কিসের জন্য, যা আমরা অর্জন করতে পারি না এবং তা অধিকতর সাহসী
যা আমরা ইতিমধ্যেই অর্জন করেছি।
*
তোমার একটা মেঘের ওপরে বসা উচিত তাহলে তুমি দুই দেশের সীমান্তরেখা দেখতে পাবে না একইভাবে তুমি দেখতে পাবে না একটা খামারবাড়ি থেকে অন্য খামারবাড়ির সীমারেখা। তোমার জন্য দয়া হয়, কারণ তুমি মেঘের ওপর বসতে পারো না।
*
সাত শতাব্দী আগে সাতটি ঘুঘুপাখি গভীর উপত্যকায় বেড়ে উঠেছিল এবং উড়ে গিয়েছিল তুষারশুভ্র পাহাড়ের শিখরে। সাতজন লোকের একজন এদের উড়াল দেখে বলেছিল, ‘সপ্তম ঘুঘুর পাখায় আমি একটা কালো দাগ দেখেছি।’
ঐ উপত্যকার লোকেরা এখন সাতটি কালো ঘুঘুর গল্প বলে
যারা তুষারশুভ্র পাহাড়ের
শিখরে উড়ে গিয়েছিল।
*
শরতে আমি আমার দুঃখগুলো জড়ো করেছিলাম এবং সমাহিত করেছিলাম আমার বাগানে। যখন এপ্রিল ফিরে গেল এবং বসন্ত এল পৃথিবীর বিয়ে দিতে, দুঃখগুলো তখন আমার বাগানে ফুল ফোটাল তবে অন্যান্য ফুলের মতো নয়। এবং আমার প্রতিবেশীরা দেখতে এল এবং তারা আমাকে বলল, ‘যখন আবার শরৎ আসবে, মানে বীজ
বোনার সময় আপনি কি আমাদেরকে এসব ফুলের বীজ দেবেন না, যা আমরা আমাদের বাগানে বপন করতে পারি?’
*
বস্তুতপক্ষে এটা একটা দুরবস্থা, যদি আমি বিস্তৃত করি আমার শূন্য হাত এবং তা থেকে কেউ কিছু না নেয়? কিন্তু একটা নৈরাশ্য যদি আমার পরিপূর্ণ হাত প্রসারিত করে এবং তারপরও তা থেকে কেউ কিছু না নেয়?
*
আমার আকাঙ্ক্ষা হল অনন্তকালের, কারণ সেখানে আমার দেখা হবে সেই কবিতার সঙ্গে যা লেখা হয়নি এবং সেই চিত্রকর্মের সঙ্গে যা আঁকা হয়নি।
*
শিল্পকলা হল প্রকৃতি থেকে অসীমের দিকে যাওয়ার একটি সিঁড়ি।
*
যে কোন প্রতিমূর্তিতে খোঁদাই-করা ধোঁয়াশা হল একটা শিল্পকর্ম।
*
সিংহাসনে বসবে যে জন তার জন্য রাজমুকুট তৈরি করে যে হাত, তা অলস হাতের চেয়ে উন্নততর।
*
আমাদের গোপনতম অশ্রুবিন্দু কখনই আমাদের চোখের সন্ধান করে না।
*
প্রতিটি মানুষ হচ্ছে প্রত্যেক রাজা ও প্রত্যেক দাসের বংশধর, যারা চিরদিন বাঁচে।
*
যিশুর প্রপিতামহ জানতেন কি তার ভেতরে লুকানো ছিল।
নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য তিনি কি
নিজের পক্ষে দাঁড়াবেন না?
*
সন্তানের জন্য জুডাসের মায়ের ভালোবাসা কি যিশুর মাতা মেরির চেয়ে কম ছিল?
*
আমাদের ভাই যিশুর জন্য তিনটি অলৌকিক
ঘটনা রয়েছে যা এখনও গ্রন্থভুক্ত হয়নি :
প্রথমত,সে ছিল তোমার ও আমার মতোই একজন মানুষ,
দ্বিতীয়ত, তার ছিল রসিকতা করার জ্ঞান এবং
তৃতীয়ত, সে জানত, সে ছিল দখলকারী, যদিও তাকে দখল করা হয়েছিল।
*
একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা। তুমি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে
মারা যাও আমার হৃদয়ের ওপর এবং নখ দিয়ে বিদ্ধ করো
তোমার হাত, বিদ্ধ করো আমার হৃদয়ের দেয়াল।
এবং আগামীকাল যখন একজন আগন্তুক
এই পথ অতিক্রম করবে
সে জানবে না দুজন এখানে রক্ত ঝরিয়েছে,
সে মনে করবে এটা একজন মানুষের রক্ত।
*
আশীর্বাদকৃত পাহাড়ের কথা তোমরা শুনে থাকতে পারো।
এটা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পাহাড়।
ঐ পাহাড়ের শিখরে পৌঁছাতে হলে তোমাদের একটাই
আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে এবং তা হল ঐ পাহাড়ে
অবতরণ করা এবং তাদের একজন হওয়া,
যারা গভীরতম উপত্যকায় বসবাস করে।
এ কারণেই একে বলা হয় আশীর্বাদকৃত পাহাড়।
*
প্রত্যেকটি চিন্তাকে বন্দি করেছি আমার
অভিব্যক্তির ভেতরে, অবশ্যই আমি আমার কৃতকর্ম দ্বারা মুক্ত হব।
*