পাঁচ-ছয় বছর আগে আমি অতি দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ একা একা থাকি দখিন হাওয়ার এক ফ্ল্যাটে৷ নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন৷ মাঝে মধ্যে নুহাশ আসে৷ হোটেল থেকে খাবার এনে দুজন মিলে খাই৷ সে কিছুক্ষণ থাকে৷ দুজন নানা বিষয়ে গল্প করি৷ একদিন সে হলুদ পাঞ্জাবি পরে উপস্থিত৷ আমি বললাম, বাবা পাঞ্জাবিটা সুন্দর তো!
সে খুশি খুশি গলায় বলল, মেজপা (শীলা) নিজের হাতে বানিয়েছে৷
আমি বললাম, ভালো বানিয়েছে৷
নুহাশ বলল, বাবা এটা হিমু পাঞ্জাবি৷ আমি হিমু হয়েছি৷
আমি হিমুর পিঠে হাত রাখলাম৷ তাকিয়ে থাকলাম জানালার দিকে৷ কারণ চোখে পানি এসে যাচ্ছে৷ আমি চাচ্ছি না বালক হিমু পিতার চোখের পানি দেখুক৷
দিন পনেরো আগের কথা৷ লেখালেখি করছি৷ হঠাৎ ধুপ করে আমার কোলে কী যেন পড়ল৷ তাকিয়ে দেখি, সর্বকনিষ্ঠ পুত্র নিষাদ হুমায়ূন৷ বয়স দুই মাস৷ তার মা তাকে সাজিয়ে এনে আমার কোলে ছেড়ে দিয়েছে৷ শাওন বলল, ছেলেকে দেখে কিছু কি বোঝা যাচ্ছে?
আমি বললাম, না৷
ভালো করে তাকিয়ে দেখ৷
আমি ভালো করে দেখলাম, কপালে কাজলের ফোঁটা ছাড়া আলাদা কিছু পেলাম না৷
শাওন বলল, সে যে হিমু হয়েছে, এটা বুঝতে পারছ না? হলুদ পাঞ্জাবি, খালি পা৷
আমি বললাম, আরে তাই তো!
দুই মাসের শিশু হিমু মহানন্দে হাত-পা ছুড়ছে৷ তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে, রাস্তায় ছেড়ে দিলেই সে হাঁটতে শুরু করবে৷ একবারও পেছন ফিরে তাকাবে না৷ হিমুরা কখনো পেছনে তাকায় না৷ হিমু আইনে পেছনে ফিরে তাকানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ তারা তাকিয়ে থাকবে ভবিষ্যতের দিকে৷