বালকের প্রেতাত্মা
তখন ইংল্যান্ডে রাজা দ্বিতীয় জর্জের রাজত্বকাল। মি জর্জ হ্যারিস ছিলেন রাজদরবারের এক বিশিষ্ট কর্মচারী। তাঁর জমিদারি ছিল ডেভনশায়ারে কিন্তু রাজকার্যের সুবিধের জন্য বছরের বেশিরভাগ সময় তাঁকে লন্ডনেই থাকতে হত। তাঁর পরিবারের সবাই তাঁর সঙ্গেই থাকতেন তাই লন্ডন বাসের সময় ডেভনের বাড়ির দেখাশোনার ভার থাকত রিচার্ড মরিসের ওপর। সে অনেক বছর ধরে ওই পরিবারের খানসামা। তার অধীনে অবশ্য কয়েকজন কাজের লোকও ছিল।
সেটা ছিল ইং ১৭৩০ সাল। মি হ্যারিস একদিন ডাকে-আসা চিঠিপত্রের মধ্যে রিচার্ড মরিসের কাছ থেকে একটা সিলমোহর করা লেফাফা পেলেন। তাঁর কড়া নির্দেশ ছিল খুব জরুরি ব্যাপার না হলে মরিস যেন তাঁকে চিঠি না লেখে। তাই লেফাফাটা হাতে নিয়ে তিনি খানিকটা দুশ্চিন্তাগ্রস্তই হলেন। চিঠির সারমর্ম তাঁর আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করল। তিনি তখুনি রাজপরিবারের প্রধান তত্ত্বাবধায়কের কাছে ছুটে গেলেন। তাঁকে বললেন বিশেষ ব্যক্তিগত কাজে তাঁর দু-তিন সপ্তাহ ছুটির খুব দরকার। রাজসভা থেকে অনুপস্থিত থাকা রাজার অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। তাই তিনি তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে অনুরোধ করলেন।
প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ঘটনা শুনে রাজার সঙ্গে হ্যারিসের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিলেন। রাজাও সব শুনে ছুটি মঞ্জুর করলেন। পরদিন সকালে মি হ্যারিস তাঁর পল্লিভবনে রওনা হলেন। সেখানে পৌঁছে একটু বিশ্রাম করেই তিনি মরিস এবং বাড়ির সব কাজের লোককে ডেকে পাঠালেন।
‘মরিস, আমাকে সব খুলে বলো,’ ওরা আসতেই তিনি হুকুম করলেন।
মরিস বলল সপ্তাহ তিন আগে এক রাত্রে একটা শব্দে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল শব্দটা আসছিল ভাঁড়ার ঘর থেকে। ঠিক তার ওপরেই হল তার শোবার ঘর। শুতে যাবার আগে সে সমস্ত বাড়ি ঘুরে দেখেছিল, সব দরজা জানালা ঠিকমতো বন্ধ ছিল, তাই তার প্রথমে মনে হয়েছিল বোধ হয় মনের ভুল। কিন্তু শব্দটা ক্রমাগত হতে থাকায় সে ব্যাপারটা কী দেখবার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠে আসে।
যে গলি বারান্দা দিয়ে ভাঁড়ারঘরে যেতে হয় সেখানে পৌঁছে সে বুঝতে পারল তার সন্দেহ মিথ্যে নয়। বন্ধ দরজার তলা দিয়ে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছিল। ভেতর থেকে ভেসে আসছিল দু-জন লোকের চাপাস্বরে কথাবার্তা আর যেসব সিন্দুকে রুপোর বাসনপত্র তাকে সেগুলো খোলার শব্দ। সে প্রথমে ভেবেছিল নিশ্চয়ই অন্য দু-জন কাজের লোক এমস আর বার্নওয়েল ওই ঘরে ঢুকে কিছু করছে। কিন্তু অত রাত্রে তার অনুমতি ছাড়া ভাঁড়ারঘরে ঢোকা তাদের নিষেধ তাই মনে সন্দেহ হয়েছিল ওদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। এদিকে আর যারা কাজের লোক, তারা হল স্ত্রীলোক, বাড়িতে আর কোনো পুরুষমানুষ নেই যার সাহায্য নেওয়া চলে।
এই সময় বার্নওয়েল, অর্থাৎ কাজের লোকের দু-জনের একজন বাধা দিয়ে বলে উঠল, ‘মি মরিস যে বলল বাড়িতে আর কোনো পুরুষমানুষ ছিল না সেটা পুরোপুরি সত্যি নয় কারণ মি মরিসের উলটোদিকেই খুপচি ঘরে ছেলেটা ছিল।’
‘ছেলেটা?’ মি হ্যারিস জিজ্ঞেস করলেন।
‘আপনি এখান থেকে যাবার দিন দুয়েক পরে আমি চোদ্দো বছরের একটি ছেলেকে কাজে লাগিয়েছিলাম।’ মরিস স্বীকার করল, ‘ভাঁড়ারঘরে রুপোর বাসনগুলি পরিষ্কার করতে আমাকে সাহায্য করবে বলেই ওকে আমি রেখেছিলাম। ছেলেটা একদিন ওর বাবার সঙ্গে এই বাড়িতে এসেছিল। বাবাকে আমি সৎ লোক বলেই জানতাম। ছেলেকে নিয়ে এখানে সে কাজের খোঁজে এসেছিল। আপনি যেদিন লন্ডন চলে গেলেন সেদিনই আমাদের কাজের ছেলেটা মি সোমসের বাড়িতে কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিল তাই আমি নতুন ছেলেটাকে ওর কাজটা দিয়েছিলাম। ছেলেটার নাম রিচার্ড টারওয়েল।’
‘কোথায় সে?’ মি হ্যারিস জিজ্ঞেস করলেন। ‘সে এখানে হাজির নেই কেন?’
‘তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না হুজুর,’ মরিস জবাব দিল।
‘সেই রাত থেকেই,’ বার্নওয়েল একটু ঠেস দিয়ে বলল।
মরিস তারপর বলল ঘরের মধ্যে যারা ছিল তাদের চমকে দেবার জন্য সে আচমকা দরজার পাল্লা এক ধাক্কায় খুলে ফেলেছিল। কিন্তু ঘরের মধ্যে যাদের দেখবে ভেবেছিল তাদের না দেখে সে নিজেই চমকে উঠেছিল। যে দু-জন ঘরে ছিল তারা সম্পূর্ণ অপরিচিত আর তাদের সঙ্গে ছিল নতুন ছেলেটি।
মরিস কিছু করবার আগেই অপরিচিতদের একজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটা লোহার ডান্ডা দিয়ে মাথায় এত জোরে মেরেছিল যে, সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। জ্ঞান ফিরে সে দেখেছিল একটা চেয়ারের সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, মুখেও শক্ত বাঁধন ছিল। দুটো সিন্দুকের ঢাকনা খোলা এটা তার নজর এড়ায়নি, সিন্দুকের ভেতর থেকে দামি বাসনপত্র উধাও। সকাল বেলা রান্নাঘরে তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে রাঁধুনি এমসকে তার খোঁজে পাঠায়। এমস তার ঘরে গিয়ে তাকে দেখতে পায় না, সেইসঙ্গে লক্ষ করে উলটোদিকের ছোট্ট ঘরে নতুন ছেলেটিও নেই। তাকেও সকাল থেকে দেখা যায়নি। তারপর খোঁজ করে ভাঁড়ারঘরে তাকে বন্দি অবস্থায় দেখে এমসই চেঁচিয়ে ডেকেছিল সবাইকে।
মরিস মুক্ত হয়েই কনস্টেবলকে খবর দিতে বলেছিল। ছেলেটিও সেইসঙ্গে নিরুদ্দেশ। ওর বাবা বলেছে ছেলে চোর নয়। মরিস নিজের চোখে তাকে ওই লোক দু-জনের সঙ্গে দেখেছে।’
‘কিন্তু লোক দু-জন বাড়ির ভেতর ঢুকল কেমন করে?’ মি হ্যারিস জিজ্ঞেস করলেন।
‘খিড়কির দরজা খোলা ছিল,’ মরিস জবাব দিল, ‘ওই ছেলেটিই নিশ্চয়ই দরজা খুলে দিয়েছিল ওদের। আমারই অন্যায় হয়েছিল ওর সম্বন্ধে ভালো করে খোঁজখবর না করে ওকে কাজে লাগিয়েছিলাম।’
মি হ্যারিস খানসামাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন তার কোনো দোষ নেই। তিনি আরও দু-দিন ওখানে থেকে খোঁজখবর করলেন কিন্তু চোরদের কোনো সন্ধানই পাওয়া গেল না। তিনি লন্ডনে ফিরে গেলেন, রাজদরবারের কাজে মন দিলেন।
চারমাস পরে তিনি সপরিবার ফিরে এলেন তাঁর পল্লির বাসভবনে। এখন কিছুদিন বিশ্রাম। দীর্ঘ পথভ্রমণে তাঁরা সবাই ক্লান্ত ছিলেন। রাত্রে একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লেন। মাঝরাতে মি হ্যারিসের ঘুম ভেঙে গেল। ঘরে একটা ছোটো বাতিদানে আলো জ্বলছিল। সেই আলোতে তিনি দেখলেন একটি কিশোর তাঁর বিছানার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটিকে তিনি আগে কখনো দেখেননি তবু কেন যেন তাঁর মনে হল এই সেই রিচার্ড টারওয়েল, চুরির রাত থেকে যে নিখোঁজ । ছেলেটা নিশ্চয়ই পুলিশের হাতে ধরা না পড়ার জন্য এই বাড়িতেই লুকিয়ে আছে, এখানে কেউ তার খোঁজ করবে না। কিন্তু ছেলেটা যদি চোরদের কুকর্মের সঙ্গী হয়ে থাকে তবে এত রাতে তাঁর কাছে এসেছে কেন? তাঁর কাছ থেকেই তো ছেলেটার পালিয়ে থাকার কথা!’
বিছানায় উঠে বসে তিনি ধমকের সুরে বললেন, ‘এত রাত্রে আমার কাছে তোমার কী দরকার?’
ছেলেটি জবাব দিল না, শুধু হাত দিয়ে ইশারা করল। ‘তুমি কি বোবা নাকি?’ মি হ্যারিস গলা একটু চড়িয়ে বললেন, ‘বলো, এই অসময়ে কেন এসেছ? কী চাও?’
ছেলেটি এবারও কোনো জবাব দিল না, কিন্তু পেছন ফিরে দরজার দিকে আঙুল দেখাল।
মি হ্যারিস ভাবলেন ছেলেটি হয়তো কোনো কারণে ভীষণ ভয় পেয়েছে তাই গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না। তিনি এটাও বুঝতে পারলেন সে তাঁকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে। বেশ বিরক্ত হয়েই তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন, গায়ে একটা পোশাক চাপিয়ে তিনি ছেলেটিকে অনুসরণ করলেন। যদি কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে এই মনে করে তিনি তাঁর তরোয়াল সঙ্গে রাখলেন।
গলি বারান্দা দিয়ে ছেলেটিকে অনুসরণ করার সময় তিনি নিজের পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু আশ্চর্য, ছেলেটির পায়ের শব্দ তাঁর কানে আসছিল না। অথচ ছেলেটির পায়ে জুতো নেই এমন নয়। হঠাৎ তাঁর মাথায় একটা চিন্তা এল, ছেলেটি কি জীবিত না এটা তার প্রেতাত্মা!
তিনি যথেষ্ট সাহসী ছিলেন। ওই চিন্তা সত্ত্বেও ব্যাপারটা কী জানবার জন্য তিনি কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নেমে ছেলেটি খিড়কির দরজার দিকে এগিয়ে গেল। মি হ্যারিস দেখলেন দরজাটা খোলা অথচ খানসামাকে তিনি ওই দরজাটা রাত্রে বন্ধ করতে দেখেছিলেন। ওই দরজা দিয়ে তিনি ছেলেটার পেছন পেছন বাগানে এসে পড়লেন।
ছেলেটি প্রায় এক-শো গজ দূরে একটা মস্ত ওক গাছের সামনে দাঁড়াল। ওটার চারপাশে এত ঝোপঝাড় যে গুঁড়িটা চোখেই পড়ে না। ছেলেটি নিশব্দে মাটির দিকে তর্জনী দিয়ে কী যেন ইঙ্গিত করল।
আকাশে অসংখ্য তারা। ছেলেটিকে অনুসরণ করতে মি হ্যারিসের কোনো অসুবিধে হয়নি। তারপরই ছেলেটিকে তিনি আর দেখতে পেলেন না।
‘রিচার্ড টারওয়েল,’ তিনি চাপাগলায় বললেন, ‘তুমি কোথায়? আমার কথা তুমি শুনতে পাচ্ছ?’
কোনো জবাব এল না। ছেলেটি যদি জীবিত হত তবে তাঁর চোখের সামনে থেকে অমন ভোজবাজির মতো অদৃশ্য হতে পারত না। তিনি নিশ্চিন্ত হলেন যাকে তিনি দেখেছিলেন সে টারওয়েল নয়, তার প্রেত। ছেলেটার উদ্দেশ্য তাঁকে জানতেই হবে। কিন্তু অত রাত্রে তাঁর কিছু করার ছিল না। তিনি ফিরে এলেন, খিড়কির দরজা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। আর ঘুম এল না, ওই অদ্ভুত ঘটনা নিয়ে ভাবলেন সার রাত।
ভোরের আলো ফুটতেই তিনি পোশাক বদল করে তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এলেন। এমস আর বার্নওয়েল যে ঘরে ঘুমোত সে-ঘরের দরজায় তিনি টোকা মারলেন। ওরা দরজা খুলে স্বয়ং মনিবকে দেখে হতবাক। তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। তোমরা চুপি চুপি আমার সঙ্গে এসো, কেউ যেন টের না পায়।’
খিড়কির দরজার কাছে পৌঁছে তিনি ওদের দুটো কোদাল নিয়ে আসতে বললেন। ওক গাছটার কাছে সবাই জড়ো হতেই টারওয়েলের প্রেতাত্মা মাটির যে জায়গাটা নির্দেশ করেছিল, সেখানে মাটি কোপাবার হুকুম দিলেন তিনি।
লোক দুটি মনিবের হুকুমে অবাক হলেও, কোনো প্রশ্ন না করে মাটি কোপাতে শুরু করল। একটু পরেই বার্নওয়েল বলে উঠল, ‘এখানে কিছু আছে মনে হচ্ছে।’
‘হুম!’ মি হ্যারিস অনেকটা স্বগতোক্তি করে বললেন, ‘সাবধানে মাটি সরাও। আমার বিশ্বাস মাটির তলায় যা পাওয়া যাবে তা দেখে তোমরা চমকে উঠবে।’
‘একটা কাপড়ের মতো কী যেন দেখা যাচ্ছে,’ এবার এমস বলে উঠল। কোদাল রেখে দিয়ে ওরা দু-জন হাত দিয়ে মাটি সরাতে লাগল। নরম মাটি আলগা হয়ে উঠে আসতেই গর্তটা বড়ো হতে লাগল ক্রমশ।
‘এ কী!’ ওরা দু-জন প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, কাপড়টা ওরা চিনতে পেরেছে। এমস বলল, ‘এটা তো সেই ছেলেটার কোট।’
‘যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে,’ মি হ্যারিস বললেন, ‘ছেলেটার মৃতদেহ এখানেই পাওয়া যাবে।’
ওদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য তিনি রাত্রের ঘটনা খুলে বললেন। ‘এখন আমি বুঝতে পারছি,’ তিনি বললেন, ‘কী ভুলই না করেছি! এত বছর ধরে মরিসকে আমি বিশ্বাস করেছি, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে আমাকে কিছু বলত আমি নিশ্চয়ই অসন্তুষ্ট হতাম। সাক্ষাৎ শয়তান!’
‘কিন্তু ওকে আমরা ভাঁড়ারঘরে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখেছিলাম,’ এমস প্রতিবাদ না করে পারল না।
‘তা দেখেছিলে,’ মি হ্যারিস জবাব দিলেন, ‘আমি এখন বুঝতে পারছি আসলে কী ঘটেছিল। ওউ দু-জন মরিসের কুকর্মের সঙ্গী ছিল, তাদের সে চুপি চুপি বাড়িতে ঢুকিয়েছিল। তারা যখন ভাঁড়ারঘরে সিন্দুক খালি করছিল, ওই ছেলেটি ওখানে এসে পড়ে। নিজেদের বাঁচাবার জন্য ছেলেটাকে ওরা খুন করে। মনে আছে, মরিস যখন আমার কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিল, তখন একবারও বলেনি যে নীচে আসার সময় ছেলেটিকে ও বিছানায় দেখেনি। বিছানাটা চোখে না পড়ার মতো কিন্তু নয়। বরং ও বলেছিল ছেলেটিকে ভাঁড়ারঘরে দেখে অবাক হয়েছিল। তারপর মরিস যখন বলেছিল বাড়িতে তোমরা তিনজন ছাড়া আর কোনো বেটাছেলে নেই, তুমিই ওর ভুলটা শুধরে দিয়েছিলে। ভাঁড়ারঘরে তালা দেবার পর চাবিটা রাত্রে কোথায় ও রাখে?’
‘ওর মাথার সামনে একটা আলমারির দেরাজে,’ এমস জবাব দিল।
‘এই ঘটনাই ওর অপরাধ প্রমাণ করবে,’ মি হ্যারিস বললেন, ‘কারণ ভাঁড়ারঘরের তালা খুলতে হলে ওই দেরাজ থেকে চাবি নিতে হবে, আর মরিসের ঘুমের ব্যাঘাত না করে সেটা সম্ভব নয়— বিশেষ করে টারওয়েলের মতো এক অনভিজ্ঞ বালকের পক্ষে তো নয়ই।
‘শোনো, তোমরা কাউকে এ ব্যাপারে এখন কিছু বোলো না, মরিস যেন ঘুণাক্ষরেও কিছু টের না পায়। এমস, তুমি সকালের জলখাবার খেয়েই পল্লির পাহারাদারকে নিয়ে চলে আসবে, দেরি করবে না।’
কনস্টেবল আসার পর মরিসকে ডেকে পাঠানো হল, মি হ্যারিস তার অপরাধের কথা পুলিশের কাছে বললেন। মরিস প্রথমে এসব কথা অস্বীকার করল। কিন্তু ওক গাছটার কাছে নিয়ে যাবার পর সে ভেঙে পড়ল, অপরাধ স্বীকার করল। মি হ্যারিস যা অনুমান করেছিলেন তাই ঘটেছিল। মরিসের দু-জন সঙ্গী ছিল, খিড়কির দরজা খুলে তাদের সে বাড়ির ভেতর ঢোকার রাস্তা করে দিয়েছিল। ছেলেটা শব্দ শুনে ওখানে এসে পড়ায় তাদের একজন ওকে খুন করে, তারপর তিনজনেই ধরাধরি করে বাগানে নিয়ে ওই গাছটার তলায় ওকে কবর দিয়েছিল। তারপর নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে মরিসকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখার ফন্দিটা কাজে লাগায়। ছেলেটাও নিখোঁজ সুতরাং মরিসকে কেউ আর সন্দেহ করবে না।
বিচারে মরিসের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল এবং তার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। কিন্তু তার দুষ্কর্মের সঙ্গী দু-জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করার জন্যই টারওয়েলের প্রেতাত্মা ফিরে এসেছিল পৃথিবীতে— এটা বিশ্বাস করেছিলেন মি হ্যারিস।