বাবু ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
খানাকুল কৃষ্ণনগরের শ্রদ্ধেয় পন্ডিত বিশ্বনাথ তর্কভূষণ কলকাতার মাণিকতলায় বাস করতেন। বাবু ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সি আই ই এঁরই পুত্র। ১৭৮৭ বাংলা শকাব্দে ভূদেবচন্দ্রের জন্ম হয়। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁকে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করা হয়। ইংরেজি শেখেন তিনি হিন্দু কলেজে : ছাত্রজীবন ছিল তাঁর অত্যন্ত উজ্জ্বল; এখানে তিনি বহু পদক পুরস্কার ও বৃত্তিলাভ করেন।
কলেজের পাঠ শেষে তিনি দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য ‘শিয়াকোলা’, চন্দননগর শ্রীপুর প্রভৃতি স্থানে বেসরকারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন; কিন্তু অর্থাভাবের জন্য কিছু দিনের মধ্যেই এই জনহিব্রত ত্যাগ করে তাঁকে কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজির দ্বিতীয় শিক্ষকরূপে মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে চাকরি নিতে হয়। দশ মাস এইপদে থাকার পর তিনি হাওড়া সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। তাঁর অদম্য উৎসাহ ও ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের ফলে এই বিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ‘জুনিয়র স্কলারশিপ এগ্জামিনেশনে’ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়; ফলে তাঁর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে সরকার তাঁকে ১৮৫৬-র ৬ জুন তারিখে হুগলী নর্ম্যাল স্কুলের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করেন; তাঁর মাসিক বেতন হয় তিন শত টাকা। এই সময় কলকাতা ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি হুগলী চলে যান। ১৮৬২ তে মাসিক চার শত টাকা বেতনে তাঁকে মিঃ মেড্লেকটের অধীনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অব স্কুলস পদে নিযুক্ত করা হয়; পরের বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর পদে উন্নীত করা হয়। ১৮৬৭ তে তাঁর বেতন বৃদ্ধি করে মাসিক পাঁচ শত টাকা করা হয়। ১৮৬৯ সাল তাঁকে নর্থ সেন্ট্রাল প্রভিন্সের ডিভিশন্যাল ইনসপেক্টর পদে নিযুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, এই পদে ইতিপূর্বে কোন ভারতীয়কে নিযুক্ত করা হয়নি। সে সময় স্কুল পাঠ্য-পুস্তকের অভাব থাকায় ভূদেবচন্দ্র শিক্ষাবিধায়ক, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (১ম ও ২য় ভাগ) ও পুরাবৃত্তসার রচনা করেন (এছাড়া, তিনি অনুবাদ করেন ইংল্যান্ড ও রোমের ইতিহাস এবং ইউক্লিডের (জ্যামিতির) তৃতীয় পুস্তক। এই সকল পুস্তকের কয়েকখানি এখন বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক। ভূদেববাবুর আর একখানি গ্রন্থের নাম “ঐতিহাসিক উপন্যাস’। বর্তমানে তিনি এডুকেশনাল গেজেটের সম্পাদক। তিনিই প্রথম ভারতীয় যাঁকে শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষাগত উচ্চস্থানীয় যোগ্যতা ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অদম্য উৎসাহের জন্য তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মহামান্যা মহারাণী কর্তৃক ভারত-সম্রাজ্ঞী পদবী ধারণের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে ১৮৭৮ এর ১ জানুয়ারী ‘কমপ্যানিয়ন অব দি অর্ডার দি ইন্ডিয়ান এমপায়ার’ পদবীতে ভূষিত করা হয়েছে।