বাপের চা
তোর বাপের চা-টা নিয়ে যা।
রোজ সকালে রান্নঘরের দিক থেকে এই কথাটি ছোট পাখির ডানার ঝাপটার মতো উড়ে আসে। রমেন নিজের ঘরে কুটকুটে কম্বলের আসনে বসে শোনে। দিনের প্রথম কাকের ডাকের মতো বউয়ের হাঁকডাক।
স্ত্রী নীপা মোটামুটির শিক্ষিতা, তবু কেন যে বাপ বলে। ‘বাপ শব্দটার মধ্যে এমন একটা তাচ্ছিল্য আছে, শুনলেই গা রিরি করে। বহুবার বলেছে, সোজা করে বলেছে, বাঁকিয়ে বলেছে, কোনও কাজ হয়নি। নীপার দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা সরকারের মতো, বিদ্যুৎ অথবা দুগ্ধ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মতো, কী পুলিশ বিভাগের মতো, চলছে চলবে। রমেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। আর কী হবে ভ্যাজার ভ্যাজার করে। জীবন তো প্রায় মেরে এনেছে আর ক’টা বছর। পঞ্চাশ পেরিয়েছে। ষাটে চাকরি থেকে বসে যাবে। বাষট্টিতে অথর্ব। তেষট্টিতে ফৌত। মিটে গেল ঝামেলা। সম্প্রতি দীক্ষা নিয়েছে। ফার্স্ট থিং ইন দি মরনিং, হাত মুখ ধুয়ে চোখ বুজিয়ে ১০৮ বার। জপ করতে করতে কিছু কানে না আসাই উচিত। তবু এসে যায়। এই তো সবে হাতেখড়ি হয়েছে। জপ সিদ্ধ হতে সময় লাগবে। তাই কানে আসে—তোর বাপের চা-টা নিয়ে যা। শোনে, আর চমকে ওঠে। ভাবে, আহা! সংসারে এই তার খাতির। মাসে প্রায় তিন হাজারের মতো ঢালে। ঢেলে ঢেলে দেউলে হয়ে যাওয়ার দাখিল। নিজের একজোড়া জুতো কিনতে হলে, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গাদি খেলার অবস্থা। ঢুকব কি ঢুকব না। দু’পা যায় তো তিন পা পিছিয়ে আসে। নেশা করে কেনাকাটা করতে পারলেই ভালো হয়। যা হওয়ার, ঘোরে হয় যাক। একটা মারিজুয়ানার ট্যাবলেট খেয়ে দোকানে ঢোকো। জামা কেনো, জুতো কেনো, ছাতা কেনো, যা সব দাম হয়েছে, ভাবলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। অথচ ওপক্ষের মুখ থেকে খসা মাত্র শাড়ি, স্লিপার, শ্যাম্পু, সেন্ট, সিনেমা-থিয়েটারের টিকিট, মায় সপ্তাহে একটি করে লটারির টিকিট এসে যাচ্ছে। এত তেল ঢেলেও সংসারে স্নেহের বড় অভাব।
নীপাকে রমেন একদিন বুঝিয়ে বলেছিল, দ্যাখো, আমি হলুম তোমার সেই রাজহংস, যে ডেলি একটা করে সোনার ডিম পাড়ে। আমাকে একটু স্নেহ-যত্ন করলে, তোমাদের লাভ ছাড়া লোকসান হবে না গো।
নীপা উত্তর দিয়েছিল, তুমি আমার একটি অশ্ব। সারা জীবন অশ্বডিম্বই পেড়ে গেলে।
তাই নাকি?
আজ্ঞে হ্যাঁ। তাই। মাথা গোঁজার একটি আস্তানা আজও হলো না। আজও উত্তর ভারত, হিমালয় ঘোরা হল না। হিরের একটা আংটির শখ ছিল, হল না। যাকে বিয়ে করব ভেবেছিলুম, তার বউয়ের ভাগ্য শুনবে? আমেরিকায় গিয়ে বসে আছে। বছরে একবার প্লেনে চেপে দেশে আসে। সেই ছেলে এখন বিশ হাজার টাকা মাইনে পায়।
আমেরিকা, বিশ হাজার। রমেন হাঁ হয়ে বসেছিল কিছুক্ষণ।
হাঁ-টা বুজিয়ে ফেল। বলে নীপা উঠে গিয়েছিল বিছানা থেকে।
আর একদিন রমেন বলেছিল, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝলে না, নীপা। নীপা সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, দাঁত আজকাল বাঁধানো যায়, সে দাঁতে কড়মড় করে মাংসের হাড়ও চিবোনো যায়।
রমেন অবাক হয়ে ভেবেছিল, সে মরলে, এই মহিলা শ্রাদ্ধের বদলে কী করবে? মনে হয় সত্যনারায়ণের সিন্নি দেবে!
রমেন জপ করে আর ভাবে। ভাবতে ভাবতে অতীতের ঘটনায় চলে যায়। সেই সময় নীপার যে কথায় যে উত্তর দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু মাথায় আসেনি, এখন সেই সব মানানসই চোখাচোখা উত্তরগুলো খুঁজে বের করে। যতক্ষণ জপ ধ্যান, ততক্ষণই নীপার সঙ্গে মনে মনে ধুম ঝগড়া। শেষে বিরক্ত হয়ে আসন পাট করে উঠে পড়ে। ইষ্টদেবী আর গুরুদেবের ছবির সামনে গলবস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। ভেউভেউ করে কেঁদে বলে, প্রভু কিছুই হল না, কিছুই হল না আমার। কামিনি-কাঞ্চনে একেবারে লেবড়ে আছি।
গুরু বলেছিলেন, রমেন্দ্রনাথ, এইবার ধীরে ধীরে মনটাকে সংসার থেকে তুলে নাও। ঢুকে পড়েছ বেশ করেছ, বেরোবার কৌশলটাও এবার শিখতে হবে। সংসার বের করে দেওয়ার আগে নিজে বেরিয়ে এসো সসম্মানে। সব সময় ভাববে, ওরা আমার কে! গালাগাল দিয়েই ভাববে, ও শালারা আমার কেউ নয়। মনে মনে গাইবে।
ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয়
মিছে ভ্রম ভূমণ্ডলে।
দু-চার দিনের জন্য ভবে
কর্তা বলে সবাই মানে
সেই কর্তারে দেবে ফেলে
কালকালের কর্তা এসে।
যার জন্যে মরো ভেবে
সে কি তোমার সঙ্গে যাবে।
সেই প্রেয়সী দেবে ছড়া
অমঙ্গল হবে বলে।
রমেন কিছুক্ষণ, হায় প্রভু, করে চারপাশে তাকিয়ে দেখে, বাপের চা কেউ নিয়ে আসেনি। রান্নাঘরের সামনে, কেলে মিটসেফের ওপর স্টেনলেস স্টিলের গেলাসে খোলা পড়ে আছে।
প্রত্যাশাই মানুষের দু:খের কারণ। নীপা চা বয়ে আনবে না জানা কথা, কিন্তু মেয়ে রুমার আনতে কী হয়। প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যায়। রান্নাঘরের দিকে যেতে আজকাল আর ইচ্ছে করে না। ওদের মুখ দেখলেই মেজাজ খিঁচড়ে যায়। অকৃতজ্ঞ স্বার্থপরের দল। নীপা মুখে জর্দাপান পরে জদ্দন বাঈয়ের মতো চাকা-পানা মুখ নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত। যেন ভীমরুলের চাক। খোঁচালেই ঝাঁকঝাঁক কথার ভীমরুল উড়ে আসবে। আর রুমা মনে হয় বিশ্বসুন্দরী হওয়ার সাধনা করছে। সারামুখে দুধের সর মেখে আয়নার সামনে এলোচুলে দাঁড়িয়ে। রমেনের কাছে সিক্রেট খবর আছে, রুমার দামড়া-দামড়া অনেক ছেলে-বন্ধু জুটেছে। তাই সব সময় কেমন একটা উড়ুউড়ু রোমান্টিক ভাব। আর ছেলে! তিনি তো পরহিতব্রতে ব্যস্ত। নাইবার, খাবার, লেখাপড়া করার অবসর নেই। তেনার আবার এক প্রেমিকা জুটে গেছে। শহরের সেই এলাকার রাস্তা জরিপের পূণ্য কর্তব্যে তিনি ব্রতী। গোঁফ আর চুলের চেকনাই নিয়ে ভীষণ বিব্রত। বোম্বের মডেলের সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে কেবলই হোঁচট খাচ্ছে। প্রেম-সেবা করতে গিয়ে পিতামাতার সেবার তিলার্ধ সময় নেই।
স্টিলের গেলাসটা তুলে নিতে নিতে রমেন মেয়েকে চিবিয়ে চিবিয়ে বললে, এইটা আর এগিয়ে দিয়ে আসতে পারলি না, মা?
মেয়ে সুর করে বললে, তুমি তো আহ্নিক করছ, বাবা?
এখনও করছি?
আহা, করছিলে তো!
অন্য সময় নীপার সঙ্গে রুমার ঝটাপটি লেগেই থাকে। নীপা হয়তো বললে, কী রে পটের বিবি হয়ে বসে আছিস। আটাটা মেখে দিয়ে একটু উপকার করতে কী হয়!
নীপার মুখের ওপর রুমার উত্তর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল, যাও তো, তোমার কেবল বসে বসে হুকুম! আমি পারছি না, পারব না। নিজে মেখে নাও।
পারবি না?
না, না, না।
আচ্ছা, নিজের দরকারের সময় তুই আসিস আমার কাছে। তখন একেবারে অন্য সুর।
সংসারের কাজ নিয়ে, শাড়ি পরা নিয়ে, বিছানা করা নিয়ে, কলেজ থেকে সোজা বাড়ি না-ফেরা নিয়ে দুজনের অনবরতই চুলোচুলি হচ্ছে। কিন্তু বাঙালি দল পাকাতে ওস্তাদ। যেই রমেন কিছু বলবে অমনি নীপা রুমার দলে।
নীপা বললে, তোমার ভণ্ডামি কোনদিন কতক্ষণ চলবে, ও জানবে কী করে। তখন তো আবার কেউ ঘরে ঢুকলে পরেও খ্যাঁকখ্যাঁক করবে।
রমেন বলল, ভণ্ডামি! ধ্যান, জপ ভণ্ডামি!
কার ধ্যান, কীসের ধ্যান, সে তো আমি জানি।
এরপর আর কথা বাড়ানো চলে না। বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যেমন পেট আলগা হয়, সেইরকম মুখও আলগা হয়। নীপার মুখের এখন আর কোনও রাখঢাক নেই। মেয়ের সামনে নরক গুলজার না-হওয়াই ভালো।
রমেনের একটা দুর্বলতা নীপা জানে। আর শেষমেশ সেইটা চেপে ধরেই নীপা জিতে যায়। মানুষের সব দুর্বলতাই গোটাকতক ‘ম’-এর মধ্যে ঢুকে আছে। হয় এই ‘ম’ না হয় ওই ‘ম’।
এক পাড়ায় এ-বাড়ি ও-বাড়ি একটা মেলামেশা গড়ে ওঠেই। কারুর সঙ্গে খুব হলায়-গলায় কারুর সঙ্গে দেঁতো হাসি; আর প্রশ্নোত্তর, কি কেমন আছেন, ভালো আছি।
সাতাশ নম্বর বাড়ির হাসিদির সঙ্গে প্রথম হলায়-গলায় হয়েছিল নীপার। আসা-যাওয়া। তরকারি চালাচালি। একসঙ্গে সিনেমা দেখা। শাড়ি পালটাপালটি। রমেনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, কী কেমন আছেন-এর। একটু হাসি। প্রতিহাসি। রমেন মাঝেমধ্যেই বউ ভালো মুডে থাকলে, দু-একটা মন্তব্য করত, আহা, এই বয়সেও হাসিদির চুল দেখেছে? হাসিদির রং দেখেছ? হাসিদির ঠমক দেখেছ? শাড়ি পরার ধরন দেখেছ?
মুড ভালো থাকলে নীপা বলত, যাও না, কাজল-টাজল পরিয়ে সাজিয়ে-গুজিয়ে দি। রাতটা কাটিয়ে এসো। ভদ্রমহিলার স্বামী সপ্তাহে একবার বাড়ি আসেন। একটি মাত্র ছেলে হস্টেলে পড়ে।
আর-এক মুডে থাকলে তেড়ে উঠত, বউকে সেবা করতে জানলে ওইরকম ঠমক-ঠামকই থাকে। বউ আর বিলিতি কুকুর একজাতের জিনিস। তোয়াজে রাখতে হয়। বুঝলে? তোয়াজে!
যার বরাতে যা ঘটে। রমেন একদিন গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে। পথে হাসির সঙ্গে দেখা। বউবাজারের মোড়ে, বাসস্টপে হাঁ করে দাঁড়িয়ে। রমেনের ভেতরটা ছলকে উঠল। থার্মোমিটারের পারার মতো ঝট-ঝট করে বয়েস নেমে গেল। গাড়ি দাঁড় করিয়ে বললে, উঠে আসুন—উঠে আসুন।
একগাল হেসে, গালে টোল ফেলে, শরীর দুলিয়ে, একপাশে বুকের আঁচল খসিয়ে, গাড়ি কাঁপিয়ে, হাসি রমেনের পাশে ধপাস করে বসল। ঘুরে দরজা বন্ধ করার সময় রমেনের গায়ের ওপর প্রায় শুয়ে পড়ল। ল্যাত করে খোঁপার ধাক্কা লেগে গেল নাকে।
সারাটা পথ হাসির হাসি আর নানা গল্পে রমেন একেবারে মশগুল। হাসির আবার থেকে থেকে মাইরি বলার অভ্যাস। তেমন মজার কথা হলে, ‘যান’ বলে দুহাত দিয়ে ঠেলাও মারে। মাত্র আধ ঘন্টার পথ, তার মধ্যেই নিবিড় আলাপ। কাঁধে কাঁধ লেগে গেল। হাতে হাত ঠেকল। মনের কথা, প্রাণের কথা। সিনেমা, থিয়েটারের শখের কথা। ভালো লাগার কথা। সব কথাই হল। একবারও নীপার প্রসঙ্গ হল না। দুজনের কারুরই মনে রইল না, আলাপের সূত্রপাত নীপাকে দিয়েই। রমেনের কেবলই মনে হতে লাগল, তার বিয়ে-টিয়ে হয়নি।
হাসি বেশ চালাক মেয়ে। মাতাল কিন্তু তালে ভুল হয় না। বাড়ির বেশ কিছুটা দূরে মোড়ার মাথায় বললে, আমাকে এইখানেই নামিয়ে দিন।
রমেন হাঁহাঁ করে উঠল, কেন, কেন?
হাসি মুচকি হেসে বললে, কারণ আছে, মশাই। আমাদের দুজনকেই সংসার করে খেতে হবে।
সেই কেস গড়াতে গড়াতে প্রায় ফ্র্যাকচার-কেস হওয়ার দাখিল। দুপুরে হাসি একদিন রমেনের অফিসে গিয়ে হাজির। অফিস থেকে কেটে সিনেমায়। সিনেমার পর রেস্তোরাঁ। পরে একদিন গঙ্গার ধার। তারপর একদিন ট্যাক্সি-ভ্রমণ। রমেন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলে আর খরচ করে।
আর রাতে শুয়ে শুয়ে নানা উদ্ভট পরিকল্পনা। হাসিকে নিয়ে দূর কোনও দেশে পালিয়ে গেলে কেমন হয়। ইলোপমেন্ট! এই একঘেয়ে জীবন আর ভালো লাগে না। কোনোও রোমান্স নেই। অ্যাডভেঞ্চার নেই। বউ যেন টেরিলিনের প্যান্ট। ছেঁড়ে না, ফাটে না, ফুটো হয় না। মাঝে মাঝে সেলাই খুলে যায়। শেষের দিকে রংটা একটু চটে যায়। না ফেলে দিলে সারা জীবনই শরীরে লেপ্টে থাকবে।
সারা বিশ্বে স্ত্রীদের গুপ্তচর ছড়ানো থাকে। রমেন একদিন ধরা পড়ে গেল। পাড়াতুতো ঠাকুরপো এসে খবর দিয়ে গেল নীপাকে। দাদাকে দেখেছে, কলকাতার ভুতঘাটে বসে, হেসে হেসে ঝালমুড়ি খাচ্ছে। কোলের কাছে হাসি বউদি।
রাতে রমেনের খুব ঝাঁড়ফুঁক হল। নীপা তাড়াতাড়ি খাইয়ে স্বামীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে দোরে খিল দিলে। রমেন ভাবলে, আহা, অনেকদিন পরে আজ বুঝি প্রেম ওতলাল। এমন চাঁদনি রাত! পিউ কাঁহা পাখি ফুকরোচ্ছে আকাশে।
আলো নিবল। তারপর ঝাড় কাকে বলে! বুড়ো দামড়া! প্রেম হচ্ছে, প্রেম! তুমি আমার পাঁঠা। ধড়ে কাটলে ধড়ে, ন্যাজে কাটলে ন্যাজে। ইয়ারকি পেয়েছ? নীপা ভয় দেখালে—আত্মহত্যা করে পুলিশকে স্রেফ দুটি লাইন লিখে যাব। তখন বুঝবে, কত ধানে কত চাল। এই বউ মারার যুগে সোজা চালান হয়ে যাবে হাজতে। চোদ্দো বছর ঘোরাও ঘানি!
পরের দিন হাসিকেও ঝেড়ে এলো নীপা।
হয়ে গেল পরকীয়া। প্রেমের সমাধি-তীরে রমেন বসে রইল মনমরা হয়ে। স্ত্রী হল মোচা, পরস্ত্রী হল রেজালা। মনের দু:খে রমেন শেষে দীক্ষা নিয়ে নিল। সংসার থেকে রমেনের মন উঠে গেছে। সে এখন হারিয়ে যেতে চায়। হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়ে দেখতে চায়, নীপা অ্যান্ড হার পার্টি কোন সুরে সানাই বাজায়! রোজ টিভিতে দেখে কত ছেলেমেয়ে, বুড়োবুড়ি কেমন নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে। কোথায় যায়, কীভাবে যায়? টেকনিকটা কী? কাকে জিগ্যেস করে? লালবাজারের মিসিং পার্সন্স স্কোয়াডে লোক নিরুদ্দিষ্টের সন্ধানে যায়, সে কী একবার গিয়ে জিগ্যেস করবে, হ্যাঁ মশাই, বলতে পারেন, কী ভাবে হারিয়ে যেতে হয়?
সন্ধেবেলা অফিস থেকে বেরিয়ে রোজই ভাবে, আজ চলার মুখটা ঘুরিয়ে দেবে। পারে না কিছুতেই। ভয় হয়, এই অচেনা পৃথিবী, কোথায় যাবে। কে দেখবে! তবু নীপা তাকে চেনে। সে নীপাকে চেনে। মাঝে মাঝে মনে হয়, নীপাকে সে ভালোই বাসে। লঙ্কা না পড়লে তরকারির রং খোলে না, স্বাদ আসে না। রোজ সকালে বিশ বছরের পরিচিত গলায়, ওরে তোর বাপের চা-টা নিয়ে যায়—না শুনলে মনেই হয় না বেঁচে আছে, আর একটা দিন শুরু হয়েছে।