বাতাসবাড়ি জ্যোৎস্নাবাড়ি – ৮

আট

দুদিন তিনি মেদিনীপুর শহরে রয়ে গেলেন। অনুপমকে টলাতে পারেনি দুজনের কেউই। শোভন বিনা টিকিটে এসেছে পার্টির প্রোগ্রামের সঙ্গে। পার্টির কথা তো অমান্য করতে পারে না। তা না হলে দিনকয় বাদেই আসত। অনুপমকে বলেছিল সুমি, শোভন যদি কদিন আগে আসে অসুবিধে হবে তাঁর? অনুপম জবাব দেননি। ফিরবেন ঠিক করেও ফিরলেন না তিনি। দিনে পার্টির প্রোগ্রাম। রাতে আবার ট্রেন বোঝাই হয়ে সব ফিরবে। শোভন ফিরে যাক। পরীক্ষার আগে আসুক। কোচিং কোচবিহারেই নিক। তিনি বললেন নেক্সট উইকে ফিরবেন। অনুপম চেক আউট করলেন না। হোটেলের ঘরের লাগোয়া ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে শহর নিরীক্ষণ করতে লাগলেন। মানুষজন দেখতে লাগলেন। একটা পুরনো শিমুল গাছ দেখতে লাগলেন। পাখিদের কিচিরমিচির, ওড়াউড়ি দেখতে লাগলেন। রিয়াজুদ্দিনের রিকশ এলে বেরোনর জন্য তৈরি হতে লাগলেন। 

রিয়াজুদ্দিনের রিকশয় অনুপম নিয়ম করে সকালে আর বিকেলে ঘুরতে লাগলেন শহরে। রিয়াজুদ্দিন মাঝে-মধ্যেই হুইসল বাজাতে লাগল। তার হুইসলে অনেক জানালার পাল্লা খুলে গেল কখনও পুরো, কখনও অল্প একটু। চোখ দেখা গেল। মুখের একটুখানি। কে এল কাকে খুঁজতে? আমাকে না অন্য কাউকে? আমাকে খুঁজতে কে এসেছে? সে কে? তাহলে কি….? কতদিন পরে ভ্রমর…, আহা কতজন কতজনের কথা ভাবে মনে মনে। ভোলেনি কতজন কতজনের কথা। দুদিন কোনও ফোন এল না। এল না মানে শোভন হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। কেয়ারটেকার জানে, না বলে আশ্রয় দিয়ে এর আগে ক’জনের চাকরি গেছে। তিনি কলকাতায় ফিরতে লাগলেন। 

সন্ধে হয়ে গেল ফিরতে। হাউজিংয়ে ঢোকার মুখে দেখা কেয়ারটেকারের সঙ্গে। সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লোক। দুধকুমার মিদ্যে বেশ লম্বা, স্বাস্থ্যবান। কনস্ট্রাকশনের সময় থেকেই এই হাউজিংয়ে আছে। তখন আরও কয়েকজনের সঙ্গে সেও এসেছিল ঠিকেদারের মজুর হয়ে। রাজমিস্ত্রির কাজ করত। রাতে থাকত অনেকের সঙ্গে। সেই সময় কীভাবে কীভাবে যেন মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যায়। তাদের একজন আবার বারুইপুরের লোক। সায়েন্টিস্ট। ইংল্যান্ডে থাকেন। তাঁর ফ্ল্যাটেই ভাড়া থাকেন অনুপম। বিজ্ঞানীই তাকে বহাল করে গেছে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুধকুমার একটু গোঁয়ার। সমুদ্র উপকূলের মানুষ অমনি হয়। তার বাড়ি সাগরদ্বীপে। কত প্রলোভন পেয়েছে বন্ধ ফ্ল্যাট এক-দুই রাতের জন্য ভাড়া দেওয়ার। মোটা টাকা। আর দুই কেয়ারটেকার আছে অন্য দুই ব্লকে। তাদের একজন এই কাজ করত। জানাজানি হওয়ায় তার চাকরি গেছে। এক তালা বন্ধ ফ্ল্যাট। একরাতের জন্য হাজার দুই হতেই পারে। কয়েক ঘণ্টার জন্যও বেশ দামে ভাড়া হতে পারে। সঙ্গিনী নিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর এত ভালো জায়গা পাবে কোথায়? সন্ধ্যায় তিনি ফ্ল্যাটে ঢুকতে দুধকুমার বলল, স্যার আমাকে তো বলে যাননি, আমি কেন থাকতে দেব? 

চলে গেছে? সোফায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন অনুপম।

মনে হয়, স্যার আপনি ওই ভবতোষ লোকটাকে বেশি আশকারা দেবেন না, এমন দেখাতে লাগল যেন আপনার নিজের কেউ, ফালতু লোক। 

অনুপম মন্তব্য করলেন না। দুধকুমার বলল, ভবতোষ আর ভাগ্নের সঙ্গে তার লেগে গিয়েছিল প্রায়। শুধু স্যারের ভাগ্নে বলে ছেড়ে দিয়েছে সে। 

তিনি বললেন, খুব ভালো করেছে সে, বুদ্ধিমানের মতো বলেছে বিলেত থেকে পারমিশন আনতে হবে অন্য কোনও ফ্ল্যাটে থাকতে, সকলেই প্রায় বিলেতে থাকে। 

দুধকুমার আরও কিছু কথা বলে তাঁর রাতের রুটি, তরকারি, আর মিষ্টি আনতে টাকা নিয়ে চলে গেল। তিনি জানালা খুলে দিলেন। ব্যালকনিতে বসে ফোন করলেন রান্নার লোক এবং কাজের পরিচারিকা রুকসানা মাসিকে। নিজের ফ্ল্যাট, নিজের জায়গায় ফিরে অনেক নিশ্চিন্ত। শোভন ফিরে গেছে ঠিক। কুন্তলা নেই। টুটুল নেই। বুবুল তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তিনি জীবনের অবধারিত নিয়মমতো একা হয়েছেন। এখন একা থাকতেই নিশ্চিন্ত লাগে। 

তিনি ফ্রেশ হয়ে পোশাক বদল করে ঘরে ঢুকে কম্পিউটার অন করলেন। ইউটিউবে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান। গান বয়ে যেতে লাগল ঘরের ভিতর। ইজিচেয়ারে আধ-শোয়া হয়ে তিনি গানের ভিতরে ডুব দিলেন। সুমির গানের গলা ছিল। সন্ধ্যা, লতা, প্রতিমা থেকে অচেনা কণ্ঠের গান গাইত। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা সিনেমার গান। কী গান কী ছবি? বাঁশুরী। মনে পড়ে। ভোলেননি কেন? তাহলে কি সুমিকে ভুলতে পারেননি তিনি? সুমিকে তিনি ভালোবেসেছিলেন? মনে হয় না। তবে নেশা ধরিয়েছিল। সেই নেশা কেটে গেল সুমি বর্ধমানে বাবা মা’র কাছে চলে যেতে। শোভনকে ফিরিয়ে দিলেন, সুমির প্রতি দুর্বলতা থাকলে তা হতো? সুমি আর ফোন করেনি। ছেলের কাছে শুনেও না। গুনগুন করে উঠলেন অনুপম, ও বাঁশি বাঁশিরে, যখন তখন নাম ধরিয়া ডাইক্যনা আর… দিন দুপুরে করুণ সুরে…আর বাইজ্য না বাঁশি, আর বাইজ্য না… গাইতে গাইতে সুমির চোখে জল। সাবিনা ইয়াসমিন নামে সাতক্ষীরের এক মেয়ে গেয়েছিল এই গান। সুমি বলত করবীর মতো হিরোইন হবে সে। তার নায়ক হবে রজ্জাক লাহোর চলে যেতই যদি মা তার সইয়ের কাছে ইন্ডিয়ায় না পাঠিয়ে দিত। বেল বাজল। দুধকুমার ফেরত এসেছে রাতের খাবার নিয়ে। তিনি উঠলেন। দরজা খুলে ভূত দেখলেন যেন। এ কে? দেখলেন অচেনা এক যুবক। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশ। পিঠে রুকস্যাক। হাতে একটি ক্যারি ব্যাগ। সে বলল, মামা ধরো। তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়েই ঢিপ করে প্রণাম করল, জানি তুমি আমার জন্য আগে চলে আসবেই, মা তাই বলল, মা বলল তুমি কাজ ফেলেই চলে আসবে। 

তুমি কে? অবাক অনুপম জিজ্ঞেস করলেন আন্দাজ করেও। 

আমি শোভন, আমার নামও বাবলু, মামা তুমিও আমার মা’র বাবলুদা। 

তুমি ফিরে যাওনি? 

না মামা, আমি কলেজ স্ট্রিটে একটা মেসে ছিলাম, দুদিন তো, আজ ঘুরতে এসেছিলাম এদিকে, তখন ওই বেটাকে দেখতে পাই, ভবতোষ আঙ্কেলই জেরা করে জানল তুমি ফিরে এসেছ, ব্যাটা বহুত হারামি, তুমি আমার মামা না ওর মামা! বলতে বলতে সে ঢুকে পড়েছে ভিতরে, বলল, দুজনের মতো ফুড এনেছি, মামা তুমি কেমন আছ, হাউ আর ইউ মামা, আই অ্যাম ওয়েল। 

বিস্ময় আর কাটে না। সুমিরই ছেলে বটে। সুমির মতো চোখ। বড় বড়। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম। রুকস্যাক রেখে সে ফ্ল্যাট দেখছে ঘুরে ঘুরে। বেডরুম। তিনটির একটি অনুপমের নিজের। অন্য একটি ঘর রয়েছে টুটুলের জন্য। টুটুলের বিয়ের খাট, আলমারি, ওয়ার্ডরোব সব সেই ঘরে। অন্য ঘরটি বুবুলের থাকার জন্য সাজানো আছে। বুবুল আসে কই, তেমন থাকে কই? তার ঘরে ডাবল বেড খাট আর দুটি চেয়ার একটি টেবিল। ছোট একটা আলমারি। ঘর দুটি বাইরে থেকে দরজা টানা থাকে। সপ্তাহে একবার রুকসানা মাসি ঝাটপাট দিয়ে সাফসুফ করে দেয়। শোভন ফিরে এল পরিদর্শন করে, বলল, মামা আমি দাদার ঘরে থাকি, একটা কম্পিউটার আছে ওঘরে। ওটা টুটুলের, পাসওয়ার্ড ছাড়া খুলবে না। অনুপম বললেন। 

আমি দাদার কাছ থেকে জেনে নেব, তোমার চিন্তা নেই। 

তুমি এই লিভিঙে থাকতে পারো, ওদের ঘর ওদের থাক, আছ তো কয়েকদিন মাত্ৰ। 

দাদা আমাকে তার ঘরেই থাকতে বলেছে মামা। 

অনুপম বিরক্ত হলেন, বললেন, ওর কম্পিউটারে আমিই হাত দিইনি, আলাদা ল্যাপটপ কিনে নিয়েছি। 

মামা তুমি কি আনলিমিটেড নেট ইউজ করো? মুখোমুখি সোফায় গ্যাঁট হয়ে বসে শোভন জিজ্ঞেস করে। 

কেন? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

তুমি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করো মামা? জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করে শোভন। 

কী হবে? বিরক্ত হন অনুপম। এত কথায় তিনি অভ্যস্ত নন। ওয়াই-ফাই থাকলে আমার এর নেটের খরচ লাগবে না বাড়িতে, আমাদের কোচবিহারের বাড়িতে রেখেছি, ল্যাপটপ, মোবাইল সব এক ইন্টারনেটেই হয়, আমি বুঝিয়ে দেব। বলে পা নাচাতে থাকে শোভন। তারপর বলে, মামা ফ্ল্যাটটা খুব ভালো। নাইস, কিনে নাও। 

অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মাত্র ক’দিন থাকবে, এত কিছুর দরকার কী? 

কথা গায়ে না মেখে শোভন জিজ্ঞেস করল, আমি ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা করে দেব, একটা মোডেম কিনতে হবে। 

একা মানুষ, এত দরকার কী? অনুপম বললেন শান্ত স্বরে। শোভন বলল, মামা তুমি একা থাকো কেন, ভয় করে না?

কীসের ভয়? 

তোমার তো বয়স হয়েছে মামা। 

বয়স হয়েছে তো কী? অনুপম বিরক্ত হলেন না, বরং শোভন কী বলতে চায় তা আন্দাজ করতে চাইলেন। তিনি শুনতে চাইছিলেন। শোভন বলল, বয়স্কদের একা থাকা উচিত না। 

কেন উচিত না? 

দেখো মামা, আমাদের কোচবিহারে একজন ছিল তোমার মতো, রাতে একা একা ঢেঁসে গেল, মুখে জলই দেওয়ার কেউ ছিল না। 

অনুপম হা হা করে হাসলেন, বললেন, জল কী হবে, আর মানুষ তো একা একাই মরে যায়। 

শোভন দমে না, বলে, তোমার রাতে যদি কিছু হয়ে যায়, মানে… 

কী হবে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

শোভন বুঝতে পারছিল না কী বলবে। আবার কী বলবে জেনেও বলবে কী বলবে না তা ঠিক করে উঠতে পারছিল না। সাহসে কুলোচ্ছিল না। সে বলতে চায় রাত-বিরেতে স্ট্রোক হলে কে অনুপমকে নার্সিংহোম কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যাবে? ডাক্তার ডাকবে কে? সে জানে এইসব কথায় প্রবীণরা ভয় পান। যত বয়স হয়, মানুষের মৃত্যুভয় হয় তত বেশি। তার বাবা তো শুধু চেকআপ করাত, শরীরের ভিতরের কলকব্জা, হার্ট, রক্ত, রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড, সুগার, তারপরেও টিকল না। সে জিজ্ঞেস করল, রেগুলার চেকআপ করাও তো মামা? 

কী দরকার তোমার? বিরক্ত হচ্ছিলেন অনুপম। তাঁর অনুমান ভুল হয়ে যাওয়ায় তিনি হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। এবং বিরক্তও। কিন্তু শোভন দমে না, বলে, মা বলল খোঁজ নিতে, তাই বলছি, মা বলেছে তোমার সব চেকআপ করিয়ে দিতে, অবিশ্যি চেকআপ করার পরও যে কিছু হবে না তার গ্যারান্টি নেই। 

তুমি তোমার চাকরির কথা ভাবো, আর কিছু ভাবতে হবে না, ভালো করে এগজাম দাও যাতে চাকরিটা হয়। 

শোভন অবাক হচ্ছিল এত বয়সের এক মানুষের ঢেঁটিয়া জবাবে। সেও কম নয়, বলল, চাকরি যাতে হয় সেই জন্যই এসেছি, কিন্তু তোমার কথা তো ভাবতে হবে, বলছি, একা লোকের খুব অসুবিধে, তোমার একা থাকা ঠিক না মামা, মা শুনে খুব টেনশন করছে, বলছে বাবলুদা সেই রকম গোঁয়ার, বাবলুদার ব্যাড লাক, এই বয়সে একা কেউ থাকে? 

অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার এগজাম কবে? 

সামনেই, কিছু ছেলে-মেয়ে হাইকোর্ট গিয়েছে অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে, হাইকোর্ট এগজাম বন্ধ করে দিয়ে বলেছে সরকারকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে, কোর্ট সব ব্যাপারে নাক গলায় কেন বলো দেখি, কোর্ট থাকলে কোনও কাজই হবে না, পার্টি তো মরে যায়নি! 

তাহলে স্থগিত হয়ে গেছে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। বলতে পারো মামা, কিন্তু তারা যে অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছিল তা ফেক না অরিজিনাল তা প্রমাণ করতে হবে তো। 

প্রমাণ করার তুমি কে, তোমার এগজাম নেই, তাহলে কী করতে এলে? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন, এসব সরকার দেখবে। আমার কাজ এগজামের তারিখ যাতে তাড়াতাড়ি ঘোষণা হয় তা দেখা। শোভন বলল খুব স্পষ্ট গলায়, যুব সম্মিলনীর প্রস্তাব তাই। 

তুমি কী সব বলছ আমি বুঝতে পারছি না, কোর্টকে তুমি বলবে? 

শোভন হাসে, বলে, আমার কাছে প্রমাণ আছে তারা অ্যাপ্লিকেশন জমা দেয়নি। 

বুঝলাম, অনুপম বললেন, তাহলে তুমি এগজামের জন্য আসোনি? 

শোভন খুব বুদ্ধিমান ছেলে। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে যেতে তার জুড়ি নেই। বলল, আমি দাদাকে বলেছি যদি আমেরিকায় একটা ব্যবস্থা করা যায়, ঢুকে পড়তে পারলে কেউ আমাকে বের করে দিতে পারবে না, আমেরিকা বলে কথা, হলিউড, লাসভেগাস, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাপ যত দেখি অবাক হয়ে যাই, ফেসবুকে আমার অনেক বিলেতের বন্ধু আছে। 

তাতে কী হল? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন। 

আমিও আমেরিকায় চলে যাব। হাস্যমুখে বলল শোভন।

হয় নাকি, এখন খুব কড়াকড়ি, গিয়ে কী কাজ করবে? 

শোভন বলল, যা হয় করব, ওদেশে সব কিছু করা যায়, দরকারে রেস্টুরেন্টে কাপ প্লেট ধোব, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে হতো, মামা, মা তুমার কত কথা বলে, তুমি খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিলে, একশোয় একশো, মা ছোটবেলায় আমাকে শোনাতো বাবলুমামার মতো হ। 

অনুপম বললেন, কোর্টকাছারি হয়ে গেছে, এখন এগজাম নেই, তুমি এসে ভুল করেছ। 

না এলে হবে না, যারা কেস করেছে তাদের চাপ দিতে এসেছি যাতে কেস তুলে দেয়। বলে শোভন নিজের মোবাইল খুঁটতে লাগল। তার ভিতরেই তার একটা ফোন এল। ফোন পেয়েই সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়, হ্যাঁ, নান্টুদা, আমি কলকাতায় রয়ে গেছি, আমার বড়মামার বাড়ি, এখেনে থেকেই সব করব, বলছি তুমি কি আসছ? 

….আসছ না, আমি কাল সকালেই বেরব, তুমি একটু বলে দাও, আমি বিনয়স্যারের সঙ্গে দেখা করব।, ধর্নার পিছনে আছোলা বাঁশ ঢুকিয়ে দেব, শোভন রায়কে চেনে না। 

…বলে দিয়েছ, সত্যি, কী করে জানলে আমি ফিরিনি কোচবিহার, তুমি তো মালদায়। 

…আচ্ছা, তাহলে আমি স্যারের সঙ্গে দেখা করছি, আচ্ছা নান্টুদা, আমি ওদের ধর্না ভেঙে দিয়েই যাব, চমকালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বলছে শোভন, তোমার আশীবাদ আছে আমার ওপর, আমি পারব নান্টুদা, তুমি কবে ফিরবে জেলায়? 

কথা চলতে লাগল। অনুপম অসহ্য বোধ করতে লাগলেন। চোখ বুজলেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *