তিন
স্যার আসতে পারি, অনেকদিন আসব আসব করি আসা হয় না, আলাপ ছিল না তো, ইস্ কত সুন্দর ফ্ল্যাট, আপনি একা… তারপর থেকে লোকটা বকেই যাচ্ছে নিজে নিজে। স্যার, আমার নিজস্ব কোনও ঘর নেই, এক ঘরে দুজন থাকি, আমি আর আমার বোন। বোন খুব মুখরা। সে একটা প্রাইমারি ইস্কুলে দপ্তরি। হাজার দশ-বারো মাইনে পায়। আর মিড-ডে মিলের চাল, আলু, ডিম নিয়ে আসে নিজের জন্য। দুপুরে ইস্কুলে খায়। চুরি করে আনা চাল, আলু, ডিম সংসারে দেয়। টাকা ছোঁয়ায় না বিশেষ। বোনের নাম নীলা। আপনি তাকে দেখেছেন। মর্নিংওয়াকে থাকে চিনিদের সঙ্গে। হা হা হাসির দলেও থাকে। বোনের রুখে যাওয়া স্বভাবের জন্যই শ্বশুরবাড়িতে ওকে নেয় না। ও বলে ওর গায়ে কেরোসিন ঢেলে মারতে চেয়েছিল দেওর আর শ্বশুর। স্বামী তো সেলসম্যান বাইরে ছিল তখন। বোন পালিয়ে এসেছিল। কারণ হল, টাকা। দেওর নতুন ব্যবসা করবে, তাই শ্বশুর বলেছিল বাপের বাড়ি থেকে লাখখানেক টাকা নিয়ে আসতে। স্বামী ছিল বাপ-মায়ের বাধ্য ছেলে। সে কিছু বলতে পারত না। বাবা আর ভাই যে ওই কাণ্ড করতে যাচ্ছে তা সে জানতে পেরে মেদিনীপুর গিয়ে বসেছিল পিসির বাড়ি। সেলসের কাজ না। ভয় পেয়েছিল। অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বোন চলে আসার পর সে এসেছিল দু’বার।…। আসলে বাবা মা-র বিরুদ্ধে যেতে চায় না সে। তাহলে বাড়ি আর জমি থেকে বঞ্চিত হবে। হ্যাঁ স্যার, নিউটাউনের গায়ে রাজারহাট- বিষ্ণুপুরে ওর শ্বশুরবাড়ি। ধান জমিই এখন দুলাখ টাকা কাঠা হয়ে গেছে নিউটাউন হওয়ার পর। পনেরো বছর আগেও পনেরো হাজার টাকায় এক বিঘে পাওয়া যেত। শ্বশুরের তিন বিঘে জমি আছে, মানে ষাট কাঠা। তার দাম কত হবে বলুন। তবুও লোভ দেখুন। আসলে ফোকটে ধনী হয়েছে তো। আরও চায়। আরও।
ভবতোষ কুণ্ডু এসেছে বেলা দশটা নাগাদ। তার কাহিনী যেন অনন্ত। সে একটা ঘর চায়। স্যারের তিনটে বড় ঘর, ডাইনিং কাম লিভিং, তিনটে টয়লেট, একটা পেলেই তার চলে যাবে। সে দরকারে ভাড়া দেবে। পেনশন পায়। জমি অধিগ্রহণ বিভাগের গাণনিক ছিল। মানে জমির ক্ষতিপূরণ হিসেব করাই তার কাজ ছিল। কিন্তু সে করত না। করবে কী করে, সে হিসেব বুঝতই না। বরং অন্য কাজ করত। অফিসারের ফাই-ফরমাস খাটত। দরকারে এর তাঁর বাড়ির বাজারও করে দিয়ে আসত। ট্রেনের টিকিট, প্লেনের টিকিট, টেলিফোন আর ইলেক্ট্রিক বিল জমা করা–সব সে করত। এমনকী অফিসার কোনও দিদিমণির সঙ্গে ফুর্তি করতে গেলে সে বাংলো বুক করে দিত। সে যদি এই ফ্ল্যাটের একটি ঘরে আশ্রয় পায় স্যারের আর ভাবতে হবে না। সব কাজ সে করে দেবে। কাজ করতে তার ভালোই লাগে। এখনও এই বয়সে ভবতোষ পাড়ার দশ বাড়ির টেলিফোন বিল, ইলেক্ট্রিক বিল জমা করে।
বিরক্ত অনুপম বললেন, আপনি এখন আসুন।
আজ্ঞে স্যার, আমার কথায় কি রাগ করলেন? ভবতোষ হাত কচলায়।
না, কিন্তু আমার সব শোনা হয়ে গেছে, ইউ ক্যান গো নাউ।
ইয়েস স্যার, আসলে কী আমার বোনকে নিয়েই যত অশান্তি, বোন খুব টেটিয়া, বলছে বাড়ির অর্ধেক অংশ তার প্রাপ্য, সে মামলা করে বুঝে নেবে। ভবতোষ তার সহানুভূতি চাইল।
আমি তার জন্য কী করতে পারি? অনুপম গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন কথাটা।
কিছু না স্যার, আসলে আমরা ভাই বোন, আমাদের এক ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার বউ লিলি, বাকি ঘর তিনটে দুই ছেলে আর তার মা, আমার বউ আমাকে তার ঘরে ঢুকতে দেয় না, ঠাকুর- দেবতা সাজিয়ে, নিজের মতো আছে। আর একটা কথা স্যার, বোন বাড়ি থাকলে আমি ঘরে প্রায় ঢুকতেই পারি না, তার মেয়েবন্ধুরা এসে গল্প করতে বসে বিকেল থেকে, আর ছুটির দিনে সকালে যদি বাড়ি থাকে, দরজা বন্ধ, এখন এসো না, তুমি অন্য ঘরে গিয়ে বসো, দেরি হবে।
অনুপম বুঝতে পারছিলেন পারিবারিক চিত্রটি। বললেন, আপনার ফ্যামিলি ম্যাটার, আমি শুনে কী করব, আর পরিবারের ব্যাপার বাইরে না বলাই ভালো, সব কিছু ভালো হয় না।
ইয়েস স্যার, আই নো ইট, কিন্তু আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন তো, সকালে যখন ও ইস্কুলে যায়, তখন ঘরটা ফাঁকা থাকে, আমি একটু আরামে থাকি ওই ক’ঘণ্টা–, বারোটায় বাড়ি এলেই সব সুখ জলে যায়, এত গরমের ভিতর পার্কের গাছতলায় গিয়ে বসে থাকি।
লোকটা যেন এঁটুলির মতো এঁটে থাকতে চাইছে। অনুপম বললেন, গাছের ছায়া খুব আরামের, যদি তা ফ্রি পাওয়া যায়, আপনি এখন যান, আমার কাজ আছে, পরে শুনব।
কী কাজ স্যার, আমি করে দেব? ভবতোষ ঝুঁকে পড়ল তার দিকে, চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ছায়া ফ্রিই তো হয় স্যার, তা যদি ছায়া হয়, ভগবান সবই তো ফ্রি দিয়েছেন, জুটিয়ে নিতে হয়।
ঠিক আছে, আপনি এখন যান। একটু রুক্ষ গলায় বললেন অনুপম।
আচ্ছা স্যার, কাল পরশু আবার আসব, আসলে আজ তো ছুটির দিন, নীলা বেরয়নি ইস্কুলে, চিনি বলে মেয়েটা এসেছে, ওরা এখন গীতা আলোচনা করছে, চিনি মানে চঞ্চলা তো এই নিয়েই থাকে, চেনেন তো তাকে, মর্নিংওয়াক করে, মা বাবা নেই, বাবার পেনশন পায়, তা দিয়ে ঠাকুরের সেবা করে।
অনুপম বুঝতে পারছেন চিনির থেকেই কথাটা ভবতোষের কাছে গেছে। চিনি তাকে প্রায়ই বলে, একা থাকেন কী করে কাকু, ভয় করে না?
তুমিও তো একা থাকো, তোমার ভয় করে না? অনুপম পাল্টা জিজ্ঞেস করেছিলেন।
চিনি হেসে বলেছিল, আমি তো একা থাকি না কাকু। তাহলে আর কে থাকে তোমার সঙ্গে? অনুপম জিজ্ঞেস করেছিলেন।
আমি তো ঠাকুর নিয়ে থাকি কাকু, তিনি তো সব সময় আমার সঙ্গে থাকেন, আমি একা কই, ঠাকুরের সঙ্গে আমার কথা হয় কাকু। বলে চিনি আবার হেসেছিল, কাকু আপনি আমার কাছে আসুন ঠাকুরের কথা শোনাব আপনাকে, মহাপুরুষের কথা শুনলে আপনি শান্তি পাবেন।
অবাক হয়েছিলেন অনুপম, সামান্য বিরক্তিও এসেছিল মনে। তাঁকে নিয়ে এরা আলোচনা করে তাঁর অসাক্ষাতে। কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করেননি। তিনি নিজের সম্ভ্রান্ত ভাব কখনও নষ্ট হতে দেন না, শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি যে শান্তিতে নেই এই কথা বলল কে?
একা থাকেন কাকু, কাকিমা নেই, দাদা বিদেশে, বোন তার সংসারে, কেউ ভালো থাকতে পারে, মনে শান্তি থাকে? চিনি হেসে হেসে বলেছিল, ঠাকুর একা মানুষের সহায় হন, আপনি আমার ফ্ল্যাটে আসুন, দেখবেন ঠাকুর কত জাগ্রত, আপনাকে পথ দেখাবেন।
তিনি বলেছিলেন, তোমার ধারণা ভুল, আমার কোনও অসুবিধে হয় না।
আপনার পাশে ঠাকুর দাঁড়াতে পারেন, আপনি একদিন আসুন কাকু। চিনি, চঞ্চলা তাকে ডেকেছিল। তিনি যাননি। যার যা বিশ্বাস, তা তার কাছেই থাকুক। চিনি অহেতুক তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে মাথা গলাতে চাইছে। কিন্তু চিনি মেয়েটি ভালো। সরল। নিজের বিশ্বাস নিয়ে আছে। ওর ঠাকুরের বাণী নিয়ে থাকে। খুব সরল দার্শনিকতা। সরল জীবনবোধ। শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃত চিনি পড়েনি। তার ঠাকুরের বাণী অমন ইঙ্গিতময় নয়। কিন্তু তিনি তাঁর ভক্তদের জন্য কিছু কথা বলে গেছেন এই জীবন আর জগৎ সম্পর্কে। চিনি গীতার অনেক শ্লোক মুখস্থ বলতে পারে। তার ঠাকুরের বাণী আর গীতার বাণী অনেকটা এক রকম। মনে হয় চিনিই ভবতোষকে তাঁর খবর দিয়েছে। অথবা ভবতোষ তাঁর খবর নিয়েছেন চিনি কিংবা সসীম রায়ের কাছ থেকে। ফোন বাজল। অচেনা নম্বর। ভবতোষ নাকি? নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই বাড়ি থেকে বেরিয়েই ফোন করেছে। কিন্তু তার নম্বর তো অন্য। গত রাতে তিনি সেভ করে নিয়েছেন। তিনি ফোন কেটে দিলেন। একটু বাদে আবার বাজল ফোন, তিনি ধরবেন না ধরবেন না করে ধরলেন, হ্যালো?
বাবলুদা, আমি সুমিত্রা, সুমি! কথাটা যেন পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছর দূর থেকে ভেসে এল। বুকে এসে আছড়ে পড়ল।
বাবলুদা! তাঁর বাল্যকালের নাম। এই নামে যাঁরা ডাকতেন, তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। মন প্রশান্ত হয়ে গেল। কে আবার এই নাম নিয়ে ফিরে এল। সুমি কে? তিনি আনমনা হলেন। চোখের সামনে দাঁড়ের মাঠ ভেসে উঠল অবারিত প্রান্তর নিয়ে। কে যেন সেই মাঠ থেকেই ডাক দিল, বাবলুদা…।
ওপার থেকে মহিলা কণ্ঠ তাঁকে বলল, ভুলে গেলে বাবলুদা, ছেলের বিয়ে দিলে, মেয়ের বিয়ে দিলে, আমাদের বললে না, তুমি না রাখতে পারো, আমি তোমার সব খবর রাখি।
সুমি? সুমিত্রা! মনে পড়ল, মায়ের সই তৃপ্তিমাসির মেয়ে। পূর্ববঙ্গে এক গ্রামে বাড়ি, তৃপ্তিমাসির তিন মেয়ে, সুমি, রুমি, ঝুমি। কতদিন আগের কথা এসব। ওপার থেকে এক্সচেঞ্জ করে বর্ধমানে এসেছিল। তার আগে এই বড় মেয়েকে পার করে দিয়েছিল তাদের বাড়ি। শুনেছিল সুমির বিয়ে হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। মাথাভাঙা না কোথায়। সুমির সঙ্গে কিশোরবেলায় তাঁর মধুর সম্পর্ক হয়েছিল। সুমি প্রায় একবছর দাঁড়ের মাঠে তাদের বাড়ি এসে ছিল। তখন ওরা বর্ধমানে বিনিময় করে আসেনি সাতক্ষীরে থেকে। কত হবে তখন সুমির? পনেরো। সে সতেরো। বিকেলে লুকোচুরি খেলতে খেলতে সন্ধে হয়ে গেল। পূর্ণিমা কিংবা চতুর্দশী ছিল। সুমি তাঁকে জাপটে ধরেছিল আমগাছটির আড়ালে। মনে আছে ওর? আমাকে ভালোবাসো বাবলুদা! তিনি তো ভোলেননি। চোখের সামনে জ্যোৎস্না রাতে আমগাছটির ছায়ার আড়ালে দেখতে পেলেন অনুপম সদ্য যুবতী মেয়েটিকে। ফুলফুল ছাপের ফ্রক। বেশ বড় তা। সুমির বাড় ছিল বেশি। কেশবতী ছিল। চুল ছেড়ে দিলে হাঁটুর নীচ অবধি নেমে আসত। তার চুল দেখতে কতবার যে তাকে খোঁপা ভাঙতে হয়েছে অনুপমের সামনে। মাথাভাঙা কতদূর! জানতেন না তিনি সুমির খবর। এক অফিস কলিগ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, গিরিডাঙায় আপনার এক বোন থাকে?
না তো, আমার বোন ভোপালে থাকে!
আপনার বোন, সুমি, সুমিত্ৰা চন্দ।
সুমি বর্ধমানে কারও সঙ্গে জড়িয়েছিল। কী হয়েছিল সবটা ভালো জানেন না অনুপম। কিন্তু দরকার পড়েছিল উত্তরবঙ্গে বিয়ে দেওয়ার। অনুপম সুমির বিয়েতে যাননি। যেতে পারেননি।
সেই সুমি ফোন করেছে। খবর দিচ্ছে, তার মা, তৃপ্তিমাসির মৃত্যু হয়েছে বছর পাঁচ আগে। তিনি মনেও করতে পারেন না তৃপ্তিমাসিকে। তখন অনুপম কুন্তলার জন্য নার্সিংহোম আর বাড়ি করে বেড়াচ্ছেন। কুন্তলার মৃত্যুসংবাদ সুমি পেয়েছে। পাওয়ার কথা তো নয়। আত্মীয়স্বজন তো নয়। আর নিজেই অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন অনুপম। কুন্তলার মৃত্যুর পর একা থাকতেই পছন্দ করেন। কিন্তু সুমি তাঁর ফোন নাম্বার পেল কোথা থেকে?
হ্যাঁ গো বাবলুদা, তুমি নাকি একাই থাকো? সুমি জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, উপায় কী? অনুপম বললেন।
তুমি আমেরিকা চলে যাও, এখানে পড়ে আছ কেন? সুমিত্রা বলল, আমি তোমার সব খবর রাখি।
অনুপম বললেন, তুই কি এই উপদেশ দিতে ফোন করলি?
না, একা থাকো কি না, তাই বললাম।
আমার নম্বর কে দিল? অনুপম জিজ্ঞেস করলেন।
সে পেয়েছি, এখন নম্বর পাওয়া অসুবিধে?
অনুপম বললেন, কী করে পেলি বল না।
হাসল সুমি, বলল, তোমার ছেলে সূর্য আর আমার ছেলে শোভন বন্ধু গো।
বন্ধু! কী করে, তোর ছেলে তো দেখেইনি সূর্যকে। অনুপম বিস্মিত হলেন।
সুমি বলল, ফেসবুক গো, তুমি ফেসবুক জানো না, তোমার ফেসবুক থাকলে কবে আমাদের দেখা হয়ে যেত।
তাঁর একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু তা খোলেন কম। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ইউটিউবের জন্য বেশি। ফোনে হোয়াট’স অ্যাপ আছে, তা তেমন ব্যবহার হয় না। তিনি বুঝতে পারেন যোগাযোগের জায়গাটি এখন তেপান্তরের মাঠের মতো হয়ে গেছে। দিশাহীন, যে কোনও দিকে চলে যাওয়া যায়। দেশ- বিদেশ, সব একাকার। সুমিত্রার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই অনেক বছর। তার ছেলে শোভনের সঙ্গে টুটুলের বন্ধুতা হয়েছে ফেসবুকে। টুটুলই সব খবর দিয়েছে। মা নেই। বাবা একা থাকেন। বাবা বছরে ছ’মাস তো ইউএস-এ আসতেই পারেন, কিন্তু একবারও আসেননি। বোন চেয়েছিল, বাবা তার কাছে থাকেন, কিন্তু বাবা থাকবেন না। এই বয়সে একটা লোক একা থাকে, খুবই চিন্তার। কেন বাবলুদা, তুমি যাওনি কেন?
অনুপম বললেন, তোর কথা বল।
আমি তো বলছি, বলার জন্যই ফোন করেছি, তোমার কত বয়স হল বাবলুদা?
সেভেনটি টাচ করেছি।
কী সুন্দর চেহারা রেখেছ তুমি, কুন্তলা বউদির চেহারাটা অসুখে নষ্ট হয়ে গিছিল।
পৃথিবীটা ক’বছরেই বদলে গেল। ভুবনগ্রামে কেউ আর অচেনা থাকছে না। সুমিত্রাকে তার ছেলে শোভন ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, মা এঁদের চেনো? যেভাবে হোক সুমিত্রা চিনেছে তাদের। সুমিত্রা তাঁর পৌত্রকেও চিনেছে। ছেলে ছেলের বউকেও। তারা কোন শহরে থাকে তাও জানে। তারা নায়াগ্রা
জলপ্রপাত দেখতে গিয়েছিল, সেই ছবিও দেখেছে সুমিত্রা। সুমিত্রা তার নিজের কথা বলছে এবার। তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে মালদায়, জামাই পিডব্লিউডি- তে চাকরি করে, নিজেদের বাড়ি, বাবা-মায়ের এক ছেলে, আর এক মেয়ে মাথাভাঙাতেই প্রাইমারি মাস্টার, ছেলে ছোট, বি এসসি পাশ করেছে, চাকরির চেষ্টা করছে। বাবলুদা, তোমার কি আর আমার কথা মনে আছে?