1 of 2

বাচ্চা ভূতের খপ্পরে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

বাচ্চা ভূতের খপ্পরে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

গল্পটা শুনেছিলুম বাজপেয়ীদার কাছে। পুরো নাম জগদানন্দ বাজপেয়ী। তবে পদবি থেকে যা মনে হয়, তা নন। কয়েক পুরুষ ধরেই এঁরা একেবারে আদ্যন্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত মানুষ। বাজপেয়ীদা নিজে তো অগ্নিযুগের বিখ্যাত বিপ্লবী ছিলেন, পরাধীনতার আমলে বহু বছর জেলে কাটান, সেই সময়ে ইংরেজদের হাতে শারীরিক নির্যাতনও কম ভোগ করেননি। তবে আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটে দেশ স্বাধীন হবার পরে। তখন তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখেন, আর আমি একজন উঠতি সাংবাদিক, ওই একই কাগজের রবিবাসরীয় বিভাগে কাজ করি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের রবিবাসরীয় বিভাগে তখন খুব আড্ডা জমত। বাজপেয়ীদাও সেই আড্ডায় এসে যোগ দিতেন। মুড়ি, তেলেভাজা আর চায়ের সঙ্গে চলত নানারকমের গল্পগুজব। বাজপেয়ীদাকে সেই আসরেই আমি প্রথম দেখি। মুর্শিদাবাদের মানুষ, যেমন টকটকে গায়ের রং, তেমন ছ—ফুট লম্বা চেহারা, বয়েস হয়েছে, কিন্তু পেটানো স্বাস্থ্য, শরীর এতটুকু টসকায়নি, তার উপরে আবার মুখে সবসময় এমন নির্মল একটুকরো হাসি খেলে বেড়াত যে, বয়সের ভার যেন তাঁকে ছুঁতেই পারত না।

মজলিশি মানুষ ছিলেন, আর গল্প বলতেন চমৎকার। বেশিরভাগই ভূতের গল্প। এমন সব ভূতের গল্প, যা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। আমি তো ভূত বিশ্বাস করি না, কিন্তু বাজপেয়ীদা এমনভাবে গল্পগুলো বলতেন যে, শুনে মনে হত, কী জানি বাবা, হবেও বা! তা এখানে যে গল্পটা তোমাদের শোনাব, সেটা তাঁরই কাছে শুনেছিলুম, তাই তাঁরই জবানিতে সেটা বলা যাক।

চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে, পেয়ালাটা টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে, একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বাজপেয়ীদা বললেন:

‘আপনারা যে ভূতপ্রেত মানেন না, সে আমি খুব ভালোই জানি। কিন্তু মুশকিল কী হয়েছে জানেন, আমার জীবনে অনেক সময় এমন সব ঘটনা ঘটেছে, যার কোনো ব্যাখ্যা আমি আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। যেমন ধরুন, আমাকে যখন জেলের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই সময়ে হঠাৎ একদিন আমাদের ঘরের বাইরের বারান্দায় একজন লোক এসে দাঁড়ায়। আমার খুব চেনা লোক, মুরশিদাবাদের মানুষ, একসময়ে আমাদের দলের হয়ে কাজকর্মও নেহাত কম করেনি। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে সে বলে, ‘তোর তো ছাড়া পাবার সময় হয়ে এল।’ বলে সে আর দাঁড়ায় না, বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দূরে চলে যায়। খানিক বাদে তাকে আর দেখতে পাইনি।

”সত্যি বলি, লোকটিকে দেখে আমার মুখে কোনো কথাই সরছিল না। আমি একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলুম। সে তো আমাদের মতো পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। তাহলে এই সন্ধ্যারাতে সে এখানে এল কী করে? এখন তো ভিজিটার আসার সময় নয়, জেল—ফাটক তো বন্ধ হয়ে গেছে। তা হলে? কিন্তু আমার অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল। পরদিনই জানতে পারি যে, আমার রিলিজ—অর্ডার এসে গেছে। অর্থাৎ লোকটি আমাকে মিথ্যে কথা বলেনি।

‘তবে কিনা আসল ধাক্কাটা খাই দেশের বাড়িতে ফিরে। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই দেশের বাড়িয়ে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি, মাত্র দু—দিন আগে জেলের বারান্দায় যাকে দেখেছি, শুধু দেখেছি নয়, আমাকে বারান্দা থেকেই জানিয়েছিল যে, আমার ছাড়া পাবার সময় হয়ে এল, সে নাকি হপ্তাখানেক আগে মারা গেছে।

‘এখন বলুন, এর কী ব্যাখ্যা দেবেন আপনারা। আরে মশাই, এর কি কোনো ব্যাখ্যা হয়? ব্যাখ্যা হয় না। আসল কথা আত্মা আছে। তেমন ভূতও আছে। জেলখানায় যাকে দেখেছিলুম, সে কি রক্তমাংসের মানুষ? মোটেই না। সে হল আত্মা। তবে হ্যাঁ, যেমন ভালো আত্মা আছে, তেমন মন্দ আত্মাও আছে বইকী। আমি যার দেখা পেয়েছিলুম সে হল ভালো লোকের ভালো আত্মা। তাই জেলখানায় ঢুকে মানুষের রূপ ধারণ করে আমাকে একটা ভালো খবর দিয়ে গেল। কী, আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না?’

বাজপেয়ীদার কথা শুনে বুঝলুম যে, আমরা যদি বলি, না, বিশ্বাস হচ্ছে না, তাহলে এক্ষুনি তিনি থামিয়ে দেবেন তাঁর গল্প। তাই হামলে পড়ে বললুম, ‘খুব বিশ্বাস হচ্ছে, খুব বিশ্বাস হচ্ছে। তবে কিনা ভালো আত্মার কথা তো শুনলুম, এবারে একটা খারাপ আত্মার গল্প শুনব। নাকি কখনো কোনো খারাপ আত্মার খপ্পরে আপনি পড়েননি?’

‘তাও পড়েছি বই কী,’ বাজপেয়ীদা বললেন, ‘অনেকবার পড়েছি। একবার তো হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে গঙ্গার ধারেই অতি বিচ্ছিরি এক আত্মার পাল্লায় পড়ে গিয়েছিলুম। সেবারে যে কী ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছিলুম, সে আর কহতব্য নয়। নেহাত ভাগ্যের জোর, তাই তার হাত থেকে ছাড়ান পেয়ে অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরতে পারি।’

‘কী হয়েছিল?’

আর এক প্রস্থ চা এসে গিয়েছিল ইতিমধ্যে। বাজপেয়ীদা চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বললেন, ‘বলছি।’

গল্পটা এবারেও তাঁরই জবানিতে শোনা যাক। চা শেষ করে, রুমালে মুখ মুছে, বাজপেয়ীদা বললেন:

‘আমাদের দেশের বাড়ি থেকে মাইল তিন—চারেক দূরে একটা হাট বসে। মস্ত হাট, নানা রকমের বিস্তর জিনিস আসে সেখানে। আনাজপত্র, মাছ ইত্যাদি তো আসেই, শৌখিন মনোহারী জিনিসও নেহাত কম আসে না। তা ছাড়া আসে দা, কুড়ুুল, খন্তা, কোদাল, মায় লাঙল পর্যন্ত। অর্থাৎ গ্রামের মানুষের প্রয়োজনীয় সবকিছুই সেখানে মেলে। আমার অবশ্য এতসব জিনিসের দরকার নেই, স্রেফ হপ্তাখানেক চলতে পারে এইরকম আনাজপাতি কিনব। আর হ্যাঁ, হাট যেখানে বসে, তার আধমাইলটাকের মধ্যেই আমার এক বন্ধুর বাড়ি, তার সঙ্গে এই ফাঁকে একবার দেখাও করব, তারপর সন্ধে লাগার আগেই রওনা হব বাড়ির দিকে। অন্ধকারে ভয় নেই, শুক্লপক্ষের নবমী, আকাশে জ্যোৎস্না আলো থাকবে, গ্রামের রাস্তা হলেও খানাখন্দে ভরা নয়, ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিয়ে চেনা রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরা মোটেই শক্ত হবে না।’

একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন বাজপেয়ীদা। তারপর বললেন, ‘রওনা হয়েছিলুম চারটে নাগাদ, স’পাঁচটার মধ্যে হাটে পৌঁছে যাই। পশ্চিমা যে ভৃত্যটি সঙ্গে ছিল, আনাজপাতি কিনে তার মাথার ধামায় তুলে দিলুম। সে বলল, যা দিয়ে সে বাগানের মাটি কোপায়, সেই কোদালের লোহার ফলায় মরচে ধরে গেছে, নতুন একটা ফলা কেনা দরকার। বন্ধুটির সঙ্গে দেখাও করে এলুম তার বাড়িতে গিয়ে। তার কাছে শ—তিনেক টাকা পাওনা ছিল, তাও মিটিয়ে দিল সে। তবে তার সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে বেরিয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। তাই সন্ধে লাগার আগে আর ফেরার পথ ধরা গেল না, পথে নেমে দেখি, সন্ধে পেরিয়ে গেছে। ভাবলুম, তা হোক, আকাশে দিব্যি চাঁদ উঠেছে, তখন আর ভাবনা কীসের। সঙ্গে অবশ্য কিছু টাকা রয়েছে, কিন্তু পথে তো আর চোর—ডাকাতের ভয় নেই, আর থাকলেই বা কী, আমি তো আর স্রেফ আমাদের ভৃত্যটিকে নিয়ে পথটা পাড়ি দেব না, হাট—ফেরতা আরও বিস্তর লোকজনকে নিশ্চয় সঙ্গে পেয়ে যাব। গ্রীষ্মকাল, দিব্যি ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে, হাটুরে লোকজনদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে নিশ্চিন্তে এই তিন—চার মাইল পথ চলে যাওয়া যাবে।

‘কিন্তু খানিকটা পথ এগিয়ে গিয়েই ঠাহর হল যে, পথ একেবারে নির্জন, আমাদের ওদিক থেকে যারা হাটে এসেছিল, কেনাকাটা শেষ করে তারা ফিরে গেছে। নেহাতই দু—চারজন লোক আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আসছিল বটে, কিন্তু তারা কাছাকাছি থাকে, খানিকটা গিয়েই তারা ডাইনে—বাঁয়ে মাঠের মধ্যে নেমে যে যার গ্রামের পথ ধরল। ব্যস, আমরা একদম একা। সামনে আর পিছনে একটাও লোক নেই। সঙ্গী বলতে স্রেফ পশ্চিমা ভৃত্যটি, ওকে নিয়েই এখন বাদবাকি পথ আমাকে পাড়ি দিতে হবে।’

বাজপেয়ীদা আবার একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, ‘সত্যি কথাই বলি, এতক্ষণ যে ভয়টাকে একদম আমল দিইনি, এইবারে সেটা হঠাৎ ফিরে এল। আর কিছু না, ডাকাতের ভয়। সঙ্গে তিনশো টাকা রয়েছে, এ যখনকার কথা বলছি, তিনশো টাকার দাম তো তখন নেহাত কম ছিল না। হঠাৎ যদি এই ফাঁকা পথে একদল লোক হঠাৎ রে—রে করে সামনে এসে দাঁড়ায় তো কী করব। শুনেছি এদিকে ডাকাতি বড়ো একটা হয় না, কিন্তু হতে কতক্ষণ! হাতে একটা লাঠিও তো নেই। আশেপাশে নেহাতই কিছু কাঁটাঝোপ আর বাবলা গাছ ছাড়া বড়ো রকমের কোনো গাছ পর্যন্ত নেই যে, তার ডাল ভেঙে মজবুত একটা লাঠির কাজ চালানো যাবে। তা হলে?

‘এইসব ভাবছি, এমন সময় একটা বাঁকের মুখে খুবই মিহি গলার একটা কান্নার শব্দ কানে এল। একবার মনে হল, ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায়, তখন অমন একটা শব্দ হয় বটে। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলুম যে, না, এটা বাতাসের শব্দ নয়। ভৃত্যটিকে বললুম, ‘শুনছিস?’ দাঁড়িয়ে গিয়ে, শব্দটা ভালো করে শুনে নিয়ে সে বলল, ‘কোই বাচ্চা রোতা হ্যায়।’ অর্থাৎ কোনো বাচ্চা ছেলে কাঁদছে। বাঁকটা ঘুরে আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলুম, ঠিক তা—ই। রাস্তার ধারে ধুলোর মধ্যে বসে একটা তিন—চার বছরের ছোট্ট ছেলে হাপুস নয়নে কাঁদছে। গায়ে জামা নেই, পরনে ইজের নেই, একেবারে উদোম বাচ্চা, শুধু গলায় একটা ধুকধুকি।

‘এদিকে, মানে মুরশিদাবাদ জেলার এই এলাকায়, বিহার থেকে আসা দেহাতি মিস্ত্রি—মজুর, কুলি—কামিন কিছু কম থাকেন না, বাচ্চাটার গলায় ধুকধুকি দেখে মনে হল, তাদেরই কারও ছেলে হবে, কিন্তু ছেলেটাকে এইভাবে পথের মধ্যে ফেলে রেখে তারা গেল কোথায়? এ তো বড়ো বেখেয়ালি বাপ—মা, সম্ভবত হাটে এসেছিল, তারপর সওদাপত্র করে সামনে এগিয়ে গেছে, এগিকে বাচ্চা ছেলেটা যে পিছনে পড়ে রইল, সেই খেয়ালই নেই! গলা উঁচিয়ে দু—চারবার হাঁক ছাড়লুম, কিন্তু সামনে থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। কিন্তু বাচ্চাটাকে পথের মধ্যে এইভাবে ফেলে রেখে আমরাই বা এখন বাড়ি ফিরি কী করে? ফেলে রেখে গেলে তো মাঝরাত্তিরে শেয়াল কিংবা হেড়োলই একে টুকরো—টুকরো করে ছিঁড়ে খাবে। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলুম যে, সঙ্গে করে একে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাব, রাত্তিরটা সেখানে থাকুক, তারপর কাল সকালবেলায় এর বাপ—মায়ের খোঁজে বেরোনো যাবে।

‘কিন্তু এই বাচ্চা ছেলেকে এতটা পথ হাঁটিয়েই বা নিয়ে যাই কী করে? পশ্চিমা ভৃত্যটিকে বললুম, ”এই, তুই তোর ধামাটা আমায় দে, তারপর এই বাচ্চাটাকে তোর কাঁধে তোল।” ‘

‘তো তাই হল। ধামাটা আমি আমার মাথায় তুলে নিলুম, আর বাচ্চাটাকে কাঁধে নিয়ে ভৃত্যটি আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে একবার পিছনে ফিরে তাকিয়েছিলুম। দেখলুম, ভৃত্যের ঘাড় থেকে তার গলার দু—দিকে পা ঝুলিয়ে বাচ্চাটা বেশ জুত করে বসেছে। এখন আর কাঁদছে না। মুখে যে হাসি ফুটেছে, চাঁদের আলোয় তাও চোখে পড়ল।

‘কিন্তু খানিকটা পথ গিয়েই খটকা লাগল একটা। ভৃত্যটি বারবার পিছিয়ে পড়ছে কেন? ওর তো ঠিক আমার পিছন পিছনই আসার কথা। তা হলে? একবার জিজ্ঞেসও করলুম, হ্যাঁরে ব্যাপার কী? যেভাবে হাঁটছিস, তাতে তো বাড়ি পৌঁছতে রাত কাবার হয়ে যাবে। তাতে সে বলল, বাচ্চাটা নাকি দারুণ ভারী। শুনে হেসে বললুম, ‘আমার ধামার মধ্যে পাঁচ সের আলু, দশ সেরি একটা কাঁঠাল, সের কয়েক বেগুন আর মস্ত একটা কুমড়ো রয়েছে। বাচ্চাটার ভার কি তার চেয়েও বেশি নাকি রে?’

‘এরপরে আর খানিকক্ষণ কোনো কথা হল না। কিন্তু তার পরে যা হল, সে এক তাজ্জব ব্যাপার। পিছন থেকে কাঁপা—কাঁপা গলায় ডাক শুনলুম, ‘বাবু!’ ভৃত্যটির গলা, মনে হল সে খুব ভয় পেয়েছে। পিছন না ফিরেই বললুম, ‘কেন রে, আবার কী হল?’

‘তাতে ওই কাঁপা—কাঁপা গলাতেই সে বলল, ‘বাবু, ইসকা টেংরি তো বাড়হত চলি!’

‘অর্থাৎ, এর পা ক্রমেই বেড়ে চলেছে!

‘এরপরে আর পিছন না ফিরে উপায় কী! কিন্তু পিছন ফিরে যা দেখলুম, তাতে আর আমার বাকস্ফূর্তি হল না, একেবারে ভিরমি খাওয়ার জোগাড়।’

বাজপেয়ীদা আবার খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন। আমরা এদিকে অস্থির হয়ে উঠেছি। বললুম, ‘কী হল বাজপেয়ীদা, চুপ করে গেলেন কেন, পিছন ফিরে কী দেখলেন?’

‘যা দেখলুম, তা আপনারা বিশ্বাস করবেন না ভাই।’

‘বিশ্বাস করি বা না—করি, সে আমরা বুঝব। আপনি কী দেখলেন, সেইটে বলুন দেখি।’

‘দেখলুম,’ বাজপেয়ীদা বললেন, ‘উঃ, সে কথা ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয়!’

‘যাচ্চলে, কী দেখলেন, সেইটে বলুন না।’

‘দেখলুম যে, ছেলেটা তো আমাদের বাড়ির চাকরের গলার দু—পাশ দিয়ে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসেছিল, সেই ঠ্যাং দুটো লম্বা হয়ে গিয়ে একেবারে মাটিতে এসে ঠেকেছে।’

‘তারপর?’

‘তারপরই চাকরের ঘাড় থেকে মস্ত একটা লাফ দিয়ে মাটিতে নেমে পাশের মাঠের ভিতর দিয়ে ছুট লাগিয়ে কোথায় যে সে মিলিয়ে গেল, কিচ্ছু বুঝলুম না।’

‘আর আপনারা?’

‘সঙ্গে সঙ্গে মাথার ধামা মাটিতে নামিয়ে আমিও ছুট লাগালুম। চাকরটিও দৌড় লাগাল আমার পিছনে পিছনে। দৌড়তে দৌড়তে একবারও আর পিছন ফিরে তাকাইনি। একেবারে বাড়িতে পৌঁছে তবে থামি।’

গল্প শেষ করে বাজপেয়ীদা বললেন, ‘আছে রে ভাই, ভালো—মন্দ সব রকমের আত্মাই আছে, তা আপনারা বিশ্বাস করুন আর না—ই করুন।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *