বাঙালি নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই
পৃথিবীর এত জায়গায় বাঙালির উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল পৃথিবীর সর্বত্র বুঝি বাঙালি আছে। আইসল্যাণ্ডে বাঙালি আছে কি না জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার আইস ল্যাণ্ডের প্রকাশককে। বলেছিলেন, নেই। সে বহুকাল আগের কথা। এর মধ্যে হয়তো বসত শুরু করে দিয়েছে। ইওরোপ আমেরিকায় প্রচুর বাঙালি। যে করেই হোক পাঁচিল টপকেছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোকেরা লটারি জিতে, নয়তো নানারকম ফন্দি ফিকির করে হাজির হয় বিদেশে, তারপর অবৈধ ভাবে বছরের পর বছর থেকে যেতে যেতে একসময় বৈধের ছাড়পত্র জুটিয়ে ফেলে। ভারতের বাঙালিদের রাজনৈতিক আশ্রয় জোটে না, যেহেতু দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি তারা হয়না। মূলত পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যায় বিদেশে, বা কোনও কাজ নিয়ে, তারপর আর দেশে ফেরে না, পাকাপাকিভাবে বাস করতে থাকে বিদেশে। ভারতের বাঙালিরা নিজেদের বলে, ভারতীয়। আর বাংলাদেশের বাঙালিরা নিজেদের বলে, বাঙালি। দুই অঞ্চলের বাঙালিতে মেশামেশির চল নেই। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে যা হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাঙালি তুলনামূলকভাবে গরিব, শ্রমিক শ্রেণীর লোক। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বেশির ভাগই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ভালো চাকরি করা বা ব্যবসা করা লোক। টাকা পয়সা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির পকেটে ঢের বেশি। তবে দুই বাঙালিই একইরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ঘটা করে পুজো আঠা,ঈদ রোজা কায় কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। অবিজ্ঞান, অন্ধত্ব, অজ্ঞতা দ্বারা কারা বেশি আচ্ছন্ন, এসবের বিচার হলে দুদলেরই একশয় একশ নম্বর জোটে।
বাঙালি কবি সাহিত্যকরা হামেশাই বাঙালির পরব উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে বিদেশ যান। আমিও যাই খুব, তবে বিদেশি সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, মানবাধিকার গোষ্ঠী বা সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে। একবারই জীবনে বাঙালির আমন্ত্রণে, প্রথমে কিছুতেই রাজি না হয়ে, শেষে সম্মেলনের কর্তারা হাতে পায়ে ধরায় নিমরাজি হয়ে, গিয়েছিলাম। বঙ্গ সম্মেলনে। নিউইয়র্কের মেডিসন স্কোয়ারে অনুষ্ঠান হল। পনেরো হাজার বাঙালি হিন্দু বুড়ো বুড়ি, মধ্যবয়সী, কাচ্চা বাচ্চা। দেশের গান-বাজনা শুনতে এসেছে, দেশি নাচ দেখতে এসেছে, সেখানে পড়লাম কি-না কবিতা আমেরিকার বিদেশ নীতির সমালোচনা করে। এক দল চিৎকার করে উঠলো, তারা আমেরিকার সমালোচনা শুনতে চায় না, আমেরিকা তাদের খাওয়ায় পরায়, আমেরিকা ইরাকে আফগানিস্তানে যা করছে, উচিত কাজ করছে, মুসলমানদের মেরে শেষ করে দেওয়াই উচিত। ব্যস। আমাকে মঞ্চ থেকে নেমে পড়তে হল কবিতা শেষ না করেই। বাঙালি সভ্য শিক্ষিত দেশে বাস করছে, কিন্তু মন মানসিকতা উন্নত হচ্ছে কি না, ছোট একটা হুগলি, বা কলকাতা বা দুর্গাপুর বানিয়ে ওরা বেশ দিব্যি আছে। ভুতের মতো টাকা রোজগার করো, পছন্দের রাজনৈতিক দলকে টাকা পাঠাও, দেখে শুনে একটা অ্যাপ টমেন্ট কিনে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে এসো, বছরে একবার দেশ থেকে ঘুরে এসো, আর এদিকে ও বড় গাড়ি কিনেছে তো ওকে আরও বড় গাড়ি কিনে দেখিয়ে দাও। মুক্ত চিন্তার চর্চা? নৈব নৈব চ। আজকাল দেখি বাঙালি লেখক শিল্পীরা, চাঁদা তুলে বিদেশের বাঙালিরা ঘরোয়া যেসব অনুষ্ঠান করে, ওসবে গান গেয়ে বা কবিতা পড়ে চাঁদার কিছু ভাগ নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়ে এসে নিজেদের নামের আগে বেশ আন্তর্জাতিক শব্দটা লাগিয়ে ফেলেন, নয়তো নামের শেষে বিদেশ ফেরত।
ইওরোপ আমেরিকায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা সদাই মুখিয়ে থাকে সাহেবদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য। ওদিকে বাংলাদেশের বাঙালির জীবনে সাহেবদের আনাগোনা একেবারে নেই বললেই চলে। সাদা কারও সঙ্গে ওঠাবসা যদি থাকে, সে শ্রমিক শ্রেণীর সাদা। ট্যাক্সি চালাচ্ছে, পান বিড়ির দোকান শুরু করেছে, ভাত মাছের দোকান বা দেশ থেকে আসা মুড়ি, মশলা, তেল, শুঁটকি, পটল কুমড়ো, আর বরফ-মাছের দোকান। দিয়েছে, নয়তো রাস্তায় ফুল ফল বিক্রি করছে। এগুলোর বাইরে যে জীবন নেই তা নয়। অনেক বাংলাদেশের বাঙালি খেটে খুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও হয়েছে, বিরাট ধনীও হয়েছে। বাংলাদেশের বড়লোক বাঙালিরা তাদের ছেলেমেয়েদের আজকাল বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠায়। শ্রমিক শ্রেণীর বাঙালির কেউ কেউ আবার পত্রিকা ছাপাচ্ছে। এক নিউইয়র্কেই তো দশ বারোটা বাংলা দৈনিক। সবগুলোর মালিক আর সম্পাদক বাংলাদেশের বাঙালি। বেশির ভাগই অর্ধশিক্ষিত। সব পত্রিকার চুলের। ডগা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বাংলাদেশের পত্রিকার খবরগুলোর পুনর্মুদ্রণ। এসব বাং লা-পত্রিকা ব্যবসায় কলকাতার বাঙালি নেই। তারা বাঙালির চেয়েও বেশি ইণ্ডিয়ান। নিজের বাঙালি পরিচয় নিয়ে অনেকেরই বড় কুণ্ঠা। গৌতম দত্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বিদেশে গিয়েছে, কবিতা লেখার বিস্তর চেষ্টা করে। সে তার নিজের নাম পাল্টে গ্যারি ডাট রেখেছে। এ নাম নাকি বিদেশিদের পক্ষে উচ্চারণ করা সুবিধে। সাদা আমেরিকানদের সুবিধে হবে এমন কিছুর জন্য অনেকে নিজের সত্যিকার না মটাকেই বিসর্জন দিয়ে দেয়। আমার বোনের মেয়ের নাম রেখেছিলাম স্রোতস্বিনী ভালোবাসা। সে তার নামটাকে ঘৃণা করে, কারণ বিদেশিদের নাকি তার নাম উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়। এখন সে নিজের নাম রেখেছে আশা, ওদের সুবিধের জন্য। ওদের মধ্যে কেউ কি বাঙালির উচ্চারণের সুবিধের কথা ভেবে নিজের নাম পাল্টে ফেলেছে? না, এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুনিনি।
বাংলাদেশের যে হিন্দুরা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে চমৎকার বাস করছে, তারা অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে একআধখানা বাড়ি বানিয়ে রেখেছে। দেশে ঘুরতে গেলে বাংলাদেশ আর ভারত দুটোই ঘুরে আসে। সে না হয় এলো, কিন্তু বিদেশ বিভুয়ে বাঙালি না হলেও, অন্তত হিন্দু হওয়ার দৌলতে যেন পশ্চিমবঙ্গের দাদারা একটু খাতির টাতির করেন, তার চেষ্টা তারা নিরন্তর করে গেলেও খাতির ওই বাংলাদেশের গরিব মুসলমানদের থেকেই বেশি জোটে। দেশি লোকের খাতির। শ্রমিক শ্রেণীর হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে দেশে ভাই ভাই না হতে পারলেও বিদেশে কিন্তু অনেকটা ভাই ভাইই।
বেশির ভাগ বাঙালি বিদেশের যে জায়গায় বাস করে, তাকে কুয়ো বলা চলে। রীতিমত কুয়োর ব্যাংএর জীবন! তুলনায় বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ পুকুর। মুক্তচি ন্তার চর্চা কিছুটা হলেও কেউ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু নদী বা সমুদ্র? না, তার কোনও আভাস নেই। হাতে গোনা দুএকজন পাওয়া যাবে খুঁজলে, যাদের সমুদ্রে সাঁতার।
একসময় তিরিশ চল্লিশের দশকের উপন্যাস আর প্রবন্ধ পড়ে মনে হত, ভারতীয় উপমহাদেশে বাঙালিই সেরা বুদ্ধিজীবী। হয়তো ঠিকই। হয়তো তা-ই ছিল তখন। বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, পশ্চিমবঙ্গে সমাজতান্ত্রিক চেতনা, বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের আধুনিক মনন, মানুষের জন্য কাব্য, সঙ্গীত, সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথের অগাধ ভাণ্ডার, সব কিছু বাংলাকে কী ভীষণই না সমৃদ্ধ করেছিল। আজ অন্নদাশংকর, শিবনারায়ণ রায়, আর অম্লান দত্তের মৃত্যুর পর মনীষীর আকাল দেখি পশ্চিমবঙ্গে। যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেন, লেখকের বই নিষিদ্ধ করতে পরামর্শ দেন। তাঁদের বেশির ভাগ হয় সিপিএম বুদ্ধিজীবী, নয়তো তৃণমুলী বুদ্ধিজীবী, ওদিকে বাংলাদেশে প্রায় সব বুদ্ধিজীবীই আওয়ামি লীগ বুদ্ধিজীবী, নয়তো বিএনপি বুদ্ধিজীবী, নয়তো জামাতি ইসলামি বুদ্ধিজীবী… কেউই এখন আর নিরপেক্ষ মত প্রকাশ করতে পারেন না। সবাই এখন, যা বললে তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দলের লাভ হবে, তাই বলেন। দলের স্বার্থে বাক স্বাধীনতার বি রুদ্ধেও বলেন প্রচুর। আমার পাঁচটা বই বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কোনও বুদ্ধিজীবী আমার বই নিষিদ্ধর বিপক্ষে একটি কথাও উচ্চারণ করতে পারেননি, কারণ সব রাজনৈতিক দলই আমাকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের, যে কোনও কারণেই হোক, ধারণা হয়েছে, আমার দেশে ফেরার অধিকার, আমার লেখার অধিকার, আমার কথা বলার অধিকার লংঘন না করলে দল জনপ্রিয়তা হারাবে।
আরও ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। পঁচিশ জন বুদ্ধিজীবী তৎকালীন মু খ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেছে আমার দ্বিখণ্ডিত নিষিদ্ধ করতে হবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বুদ্ধিজীবীদের প্রস্তাব ফেলতে পারেননি, তিনি বই নিষিদ্ধ করেছেন। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেনি। সব দেশেই লেখকরা লেখকদের মত প্রকাশের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন। লেখকের বইনিষিদ্ধ করার জন্য আদালতেও যান না, রাজা মন্ত্রীর কাছেও দৌড়ান না। কিন্তু বাংলায়, পূর্ব আর পশ্চিম বাংলায় এই ঘটনা ঘটেছে। একটা সমাজ সচেতন, নারীবাদী, মানববাদী লেখককে কেউ সহ্যই করতে পারছে না। অথচ তার বই কিন্তু সেই পঁচিশ বছর ধরে মানুষ পড়েই যাচ্ছে। জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য দুই বাংলার সাহিত্য জগত তাকে নিষিদ্ধ করেছে, তার লেখা ছাপানোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চারিদিকে।
পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের চেয়ে অসহিষ্ণুতায় আরও এগিয়ে আছে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই দেখেছি। বাংলাদেশে চার লক্ষ লোকের জমায়েত হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে, প্রায় প্রতিদিনই দশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার লোকের মিছিল হত আমার ফাঁসির জন্য। হরতাল ডাকা হত। গাড়ি ঘোড়া অফিস আদালত বন্ধ করা হত শুধু আমাকে মেরে ফেলার দাবিতে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছে। অন্য লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, সে কারণে শাস্তি দেওয়াহয়েছে আমাকে। অত্যন্ত অন্যায় কাজ আমাকে দেশ থেকে তাড়ানো। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছে আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের মিছিল হয়েছে বলে? না, হায়দারাবাদে আমাকে কটা মৌলবাদী আক্রমণ করেছিল বলে, আর পার্ক সার্কাসের গলি থেকে কয়েকশ মানুষ বেরিয়ে বদমাইশি করেছিল বলে। প্রায় কিছু না ঘটতেই শাস্তি দেওয়া। হল আমাকে, মশা মারতে কামান দাগানোও হল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে জন্মের মতো আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। রাজনীতিকরা মুহুর্মুহু অন্যায় করেন, প্রায় সব দেশেই। কিন্তু সুস্থ সচেতন মুক্তচিন্তক বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেন অন্যায়ের। বাংলার বেলায় উল্টো। পুরোনো আমলের রাজকবিদের মতো আজকালকার সাহিত্যিকরা রাজার বদ মাইশিতে মাথা নেড়ে সায় দেন। বিবেক লোপ পেয়েছে বাঙালির। শুধু দুটো পয়সা, দুটো পুরস্কারএর লোভে নিজের সম্মান, মান, মর্যাদা, বোধবুদ্ধি বিক্রি করে দিতে দ্বিধা করেন না। রাজনীতিকদের চরিত্র নষ্ট হলে কোনও সমাজ নষ্ট হয় না, সমাজ নষ্ট হয় যখন শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র নষ্ট হয়।
বাঙালির চরিত্র বুঝতে আমার নিজের জীবনে যা ঘটেছে, সেটা জানলেই যথেষ্ট। আমার মতো বাঙালি, যে কিনা বিদেশের যশ খ্যাতি ফেলে দেশে ফেরার জন্য আকুল, যে কিনা পশ্চিমবঙ্গে বাস করতে শুরু করেছিল, আজ সে দু বাংলা থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে ইংরেজিতে ব্লগ লিখছে, ফ্রিথট ব্লগ। ফ্রিথট বা মুক্তচিন্তার অভাব বাংলায়, তাই বলে এর অভাব তো পৃথিবীর সর্বত্র নেই। বিদেশি লোকেরা বিস্তর প্রশংসা করছে, দিশি লোক মুখ ফিরিয়ে আছে। বাঙালির কাকঁড়া-চরিত্র আজও ভয়াবহ আকারেই বিরাজ করছে। সেদিন ভাষা দিবসে একটা কবিতা লিখলাম, শুনুন।
আজ ভাষা দিবস।
ঘরে আমি আর আমার বেড়াল,
আর কেউ নেই। কোথাও যাবার নেই সারাদিন।
না আমার, না বেড়ালের। আজ তোমরা গান গাও, আজ নাচো।
ভাষার উৎসব করো,
স্বরবর্ণে সাজাও শহর,
ব্যঞ্জনবর্ণে শরীর।
কবিতা পড়তে পড়তে চোখের
জল ফেলো। গান গাইতে গাইতে
শহিদ মিনারের দিকে হাঁটো। যত ফুল আছে দেশে,
মিনারের পাদদেশে দাও। ভাষাকে ধন্য করো।
আজ তোমাদের দিন।
তোমরা এক একজন সৈনিক ভাষার কসম খেয়
বড় বড় প্রস্তুতি নাও আগামীর, নিতে হয়, এই দিনে এমনই নিয়ম।
এ দিন আমার নয়।
ছিল কোনও একদিন আমার দিন।
আমার ভাষা থেকে আমাকে তাড়িয়েছ আজ দেড়যুগ হল,
ভাষার ত্রিসীমানা থেকে আমাকে বিদেয় করেছ দেড়যুগ হল।
অন্য ভাষাকে অনুচ্চারিত রেখে, অন্য দেশকে অস্বীকার করে,
তোমাদের বন্ধ দরজার সামনে অপেক্ষা করছি অনেক বছর,
দরজা কিন্তু কেউ খুলছো না।
আমি যে দাঁড়িয়ে আছি, দেখছ, কিন্তু কোথাও বলছো না দেখছো
যেন দেশটা তোমাদের একার,
যেন তোমাদের একার ভাষা, যে ভাষায় আমি কথা বলি।
যে ভাষায় লিখি, তা আমার নয়,
তোমাদের,
তোমাদের একার।
যে ভাষায় আমার শৈশব কৈশোর, যে ভাষায় যৌবন,
যে ভাষায় স্বপ্ন দেখি,
আমার নয়, কখনও ছিল না, তোমাদের সব।
ভাষাকে যেন আমি যত বাসি, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসো
বা বেসেছিলে কোনওদিন!
আজ ভাষা দিবস,
আমিও ভাষার উৎসব করবো আজ।
তোমাদের ওই ভাষায় একটি শব্দও আমি উচ্চারণ করবো না আজ,
একটি শব্দ কোথাও লিখবো না আজ,
আজ উৎসব করবো কোনও স্বপ্ন
না দেখে,
আজ শুধু বেড়ালের সঙ্গে কথা বলবো, বেড়ালের ভাষায়।