বাগবাজারের সোম পরিবার
বলভদ্র সোমের বংশধর এবং কৃপারাম সোমের পুত্র রামচরণ সোমের বোসপাড়া (বাগবাজার)-য় অবস্থিত বাসগৃহটি ছিল বিরাট; এর উত্তরে ছিল নেবুবাগান বা শ্যামবাজার স্ট্রিট, দক্ষিণে প্রসন্ন চ্যাটার্জির বাড়ি, পশ্চিমে বোসপাড়া লেন আর পূর্বে ছিল কৃষ্ণ নিয়োগীর জমি। সাধারণ্যে তিনি চরণ সোম নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাঁর ধর্মপ্রাণতা ও ব্রাহ্মণদের প্রতি ভক্তির জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর চার পুত্র : শিবচন্দ্র, কৃষ্ণচন্দ্র, ভগৰামচন্দ্ৰ ও জগৎচন্দ্র এবং এক কন্যা হরসুন্দরী দাসী। হরসুন্দরীর বিবাহ হয় কাঁটাপুকুর (বাগবাজার)-এর বিখ্যাত দেওয়ান হরি ঘোষের কনিষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে। ১৮২৯-এর ৪ ডিসেম্বর লর্ড বেনটিংক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন জারি করার পূর্বে এই হরসুন্দরীই ছিলেন কলকাতার শেষ সতী।
রামচরণ সোমের জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবচন্দ্র সোম ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগ্রায় নিযুক্ত দেওয়ান– তাঁরই তত্ত্বাবধানে ছিল সেখানকার কেল্লা ও তাজমহল। তাঁর কর্মোৎসাহ, ন্যায়নুবর্তিতা, এবং মার্জিত আচরণের জন্য তিনি ব্রিটিশ আধিকারিকদের উচ্চ প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হন। কলকাতাস্থ সিমলার কাঁসারীপাড়ার গুরুপ্রসাদ বসুর কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁর তিন পুত্র রামলাল, শ্যামলাল ও মাধবলাল। শ্যামলাল হিন্দু কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। রাজা দিগম্বর মিত্র, সি এস আই ছিলেন তাঁর সহপাঠী। শিক্ষা বিভাগে চাকরি করার পর এখন তিনি অবসরভোগী। বাবু ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাবু মহেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। শ্যামলাল হুগলী কলেজের দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। ইউরোপীয় অধ্যাপকগণও তাঁর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। ছাত্র, সহকর্মী ও স্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। দুর্ভাগ্যবশত অকালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি দুই পুত্র রেখে যান; তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠ সুরেন্দ্রনাথ এখনও জীবিত আছেন। শ্যামলালের কনিষ্ঠ ভাই মাধবলাল হেয়ার স্কুলে শিক্ষালাভের পর মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তাঁকে তখন গাড়োয়াল জেলার শ্রীনগর সরকারি ডিসপেন্সারীতে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উম্মাদরোগগ্রস্ত হয়ে তিনি অকালে প্রাণত্যাগ করেন। তিনি একটি শিশুপুত্র রেখে যান।
রামচরণ সোমের মধ্যম পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন অনারেবল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কটকস্থ দেওয়ান। তাঁরই তত্ত্বাবধানে ছিল সেখানকার কেল্লা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভাল মানুষ, সৎ লোক এজন্য অতি উচ্চস্থানীয় ইউরোপীয় আধিকারীকগণ তাঁর প্রতি বিশেষ সন্তুষ্ট ছিলেন। কাঁসারীপাড়া, সিমলার গুরুপ্রসাদ বসুর মধ্যমা কন্যার সঙ্গে এঁর বিবাহ হয়। তাঁর চার পুত্র, রামকৃষ্ণ, নবকিশোর, কালীকিশোর এবং দূর্গাকিশোর। কনিষ্ঠ দূর্গাকিশোর এখন জীবিত আছেন।…..
রামচরণ সোমের অবশিষ্ট দুই পুত্র, ভগবানচন্দ্র ও জগৎচন্দ্র সরকারের অধীনে কোন চাকরি করতেন না। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন।
এই বংশের উল্লেখযোগ্য এখন আর কেউ জীবিত নেই।