বাউন্সি বল
কয়েক দিন হল ভোর বেলায় ডিং-ডং করে কেউ ডোর বেল বাজাচ্ছে। সেই আওয়াজে একেনবাবুর ঘুম ভাঙে কিনা জানি না, ভাঙলেও সাড়াশব্দ পাই না। প্রমথ আবার ঠিক ওই সময়ে বাথরুমে থাকে, সুতরাং বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা আমাকেই খুলতে হয়। খুলে অবশ্য কাউকে দেখতে পাই না! নিশ্চয় কোনো দুষ্টু ছেলের বদমায়েশি! নীচের তলার অ্যাপার্টমেন্টে কিছুদিন হল এক ইরানি দম্পতি এসেছে। তাদের বছর ছয়েকের একটা ছেলে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কীর্তিটা ওই ছোঁড়ার। কিন্তু প্রমাণ তো নেই। যদি ব্যাটাকে হাতেনাতে একদিন ধরতে পারি…
সকালে কফি খেতে খেতে বেল বাজানোর কথাটা তুলতেই প্রমথ বলল, “তুই ছেলে বলছিস কেন? মেয়েও তো হতে পারে!”
“এই বিল্ডিং-এ ওই বয়সি মেয়ে কোথায় শুনি?”
“কারোর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে হয়তো। আর কমবয়সিই-বা ধরছিস কেন?”
“কী ইডিয়টের মতো কথা বলছিস! কমবয়সি না হলে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের লোক এভাবে সকালে এসে কারও ডোর বেল বাজায়?”
“হয়তো সুস্থ মস্তিষ্কের নয়।”
বিরক্ত হয়ে আমি আর একটা কথাও বললাম না।
প্রমথ তখন অন্য লাইন ধরল, “ঘুম ভাঙলে তোর সমস্যাটা কী? এমনিতে তো অ্যালার্মের আওয়াজে উঠতিস, এখন না হয় ডোর বেল শুনে উঠছিস!”
সত্যিই প্রমথর সঙ্গে কোনো সিরিয়াস আলোচনা করা যায় না। ওর একমাত্র উদ্দেশ্য, আমাকে হেনস্থা করা। সেই স্কুল লাইফ থেকে করে আসছে! তাই একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম। “আপনার কী মনে হয়?”
একেনবাবু কসরত করে টোস্টে মাখন লাগাচ্ছিলেন।
“কীসের কী মনে হয় স্যার?”
বিরক্তি লাগল আমার। “এতক্ষণ কী আলোচনা চলছিল… শুনছিলেন না?”
“না না, স্যার, শুনছিলাম। আসলে ব্যাপারটা একটু কনফিউজিং ঠিকই।”
“কে ডোর বেল বাজাচ্ছে মনে হয়?”
“কতদিন ধরে এটা চলছে স্যার? আমি তো খেয়ালই করিনি।”
“তা করবেন কেন, আপনি তো দরজা বন্ধ করে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোন!”
“এটা ঠিকই বলেছেন স্যার, ভোরের দিকে ঘুমটা আমার একটু গাঢ় হয়। কিন্তু চিন্তা করছেন কেন স্যার… পরের বার সকালে বেল বাজালে দরজা খুলবেন না।”
“এটা কী বলছেন, কেউ যদি বিপদে পড়ে এসে বেল বাজায়? ব্যাড নেইবার হয়ে খিল তুলে বসে থাকব!”
“সেটাও ঠিক স্যার।”
.
পরের দিন আমি বেল বাজার অপেক্ষা করলাম না। একটু আগে উঠে প্ৰমথকে বললাম, “তুই ডোর বেল না বাজা পর্যন্ত বাথরুমে যাবি না।”
“মামার বাড়ির আবদার নাকি?”
“না, তুই যাবি না!”
প্রমথ যাবেই, আমিও যেতে দেব না। এইরকম টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই ডোর বেল বাজল। “চল দেখি, কে বাজাচ্ছে,” বলে ওকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেলাম।
দরজা খুলে কাউকে দেখব না ভেবেছিলাম। কিন্তু না, সামনে একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
“তুমি প্রতিদিন বেল বাজাও?” আমি একটু ধমকের সুরেই জিজ্ঞেস করলাম।
ছেলেটা বলল, “হ্যাঁ।”
এরকম সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি শুনব ভাবিনি। বিস্ময়টা চেপে রেখেই জিজ্ঞেস করলাম। “বেল বাজিয়ে পালিয়ে যাও কেন?”
প্রশ্নটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, “আমার সাদা রঙের বলটা দেখেছ?”
“না, দেখিনি। কিন্তু সকালে এসে এভাবে বেল বাজাও কেন? কোথায় থাকো?”
নো উত্তর। বোঁ করে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে অদৃশ্য হল।
“অতি ত্যাঁদড় ছেলে!” আমি স্বগতোক্তি করলাম।
“আমার তো বেশ লাগল। যা জানার জেনে, তোর ফালতু প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে দিব্যি চলে গেল।” আমি চটেছি দেখে প্রমথ আমোদ পেয়েছে।
.
ভেবেছিলাম এই বল আর বেলের ব্যাপারটা ঢুকে যাবে, কোথায় কী! বিকেল বেলা নীচের তলার অ্যাপার্টমেন্টের তারেক এসে হাজির।
“এই যে দাদা, কেমন আছেন?”
“ভালো, তোমার খবর কী?
“আপনাদের দোয়ায় ঠিকই আছি। আচ্ছা দাদা, রায়হান এসেছিল?”
তারেক বাংলাদেশের। হরদম দোয়া, নাস্তা, গোসল, খালা, মুরুব্বি — এসব শব্দ ব্যবহার করে। তবে সবসময় নয়। আগে গোলমাল লাগত, এখন বুঝতে পারি কী বলছে।
“রায়হান?”
“আমাদের পাশের অ্যাপার্টমেন্টের নতুন ভাড়াটেদের ছেলে।”
“হ্যাঁ, একটা বাচ্চা ছেলে এসেছিল বটে। কিন্তু সে রায়হান কিনা সেটা তো জানি না।”
“তাহলে রায়হান। আমিই ওকে দেখা করতে বলেছিলাম।”
“সাদা বলের খোঁজ করতে! তাও আবার সাতসকালে?” আমি একটু শ্লেষের সঙ্গেই প্রশ্নটা করলাম।
“বুঝতে পারছি দাদা চটেছেন। আসলে অত সকালে কেন এসেছিল জানি না। ক’দিন আগে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি বলটা হারিয়ে যাওয়ায় ভাবি ভীষণ রেগে ছেলেটাকে বকাবকি করছিলেন। নিজেও খুঁজছিলেন। আমিই তখন বললাম আশেপাশে খোঁজখবর করতে, যদি কেউ দেখে থাকেন।”
আমাদের মধ্যে যখন কথাবার্তা চলছে একেনবাবু ঘরে ঢুকলেন। আমাদের বৈকালিক কফি পানটা এই সময়েই হয়। আমাদের মানে- আমার, প্রমথর আর একেনবাবুর। প্রমথর আজকে আসতে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে। তারেককে বললাম আমাদের সঙ্গে কফি খেয়ে যেতে। কফির জল চড়াতে চড়াতে একেনবারকে বললাম, “সকাল বেলায় বেল বাজানোর রহস্য উদ্ধার হয়েছে… তার জন্য দায়ী আপনার এই বাংলাদেশি বন্ধু তারেকভাই।
“কী উদ্ধার হল স্যার?”
তারেকের কাছে যা শুনেছি একেনবাবুকে বললাম।
“কীরকম সাদা বল স্যার, টেনিস বল?”
“বাউন্সি বল।”
“বাউন্সি বল! সেটা আবার কী স্যার?”
“যে বলগুলো খুব লাফায়।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার, বাচ্চাদের তো ওরকম বল নিয়ে খেলতে দেখেছি। ওটাকে যে বাউন্সি বল বলা হয় জানতাম না।”
“হ্যাঁ, সুপার বলও বলা হয়। সাইজে ছোটো, কিন্তু একটু জোরে মাটিতে ছুড়লে তিন তলা পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। নীচের ল্যান্ডিং-এ যখন বলটা নিয়ে ও খেলছিল, লাফিয়ে উঠে আমাদের ল্যান্ডিং-এ বা আরও ওপরে কোথাও চলে গিয়েছিল। বেচারা অনেক খুঁজেও পায়নি।”
“তিন তলা পর্যন্ত উঠে যায়? অ্যামেজিং টেকনোলজি স্যার, ট্রলি অ্যামেজিং!” মাথা নাড়তে নাড়তে কথাগুলো বলে আমাকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি তো স্যার বিজ্ঞানী, কী করে বানানো হয় এরকম বল?”
“কী মুশকিল, ফিজিক্স পড়েছি বলে সব কিছু জানতে হবে নাকি? এক ধরনের বাউন্সি বল আছে যেগুলো সাইজে একটু বড়ো আর ফাঁপা, তার মধ্যে হিলিয়াম গ্যাস আর হাই-প্রেশারে বাতাস থাকে। সেগুলোকে বোধহয় স্কাই-বল বলে। কিন্তু তারেক যে বাউন্সি বলের কথা বলছে সেগুলো সলিড বল। মাটিতে ফেললে দুটোই খুব লাফায়। বাউন্সি বল আবার লাফিয়ে কোনদিকে যাবে দেবা না জানন্তি!”
“খুব দামি স্যার?”
“মনে হয় না… ছোটোদের খেলার জিনিস, কত আর দাম হবে।”
একেনবাবুর অনুসন্ধিৎসা মিটিয়ে তারেককে বললাম, “তুমি বরঞ্চ ছেলেটাকে একটা বল কিনে দাও, তাহলেই তো চুকে গেল ঝামেলা। আর আমাদের বাড়িতে এসে বেল বাজাতে বারণ কোরো।”
“আরে না দাদা, রায়হানের বাড়িতে ওরকম আরও বল আছে। ভাবি ওকে ‘ভ্যালু অফ মানি’ শেখাচ্ছিলেন। জিনিসপত্র হারিয়ে পয়সা অপচয় করার তো কোনো মানে হয় না।”
চমৎকার! এই ‘ভ্যালু অফ মানি’ শিক্ষার ফল হল প্রতিবেশীদের শান্তি নষ্ট। এই নিয়ে অবশ্য আর কথাবার্তা হল না। কফি খেতে খেতে বাংলাদেশের নানান গল্প করে তারেক বিদায় নিল।
তারেক চলে যাবার একটু বাদেই প্রমথ এল। এসেই বলল, “তোর সেই ছোকরা তো এখনও বল খুঁজে বেড়াচ্ছে।”
“তুই দেখলি?”
“হ্যাঁ।”
“ওর মা’র সঙ্গেও পরিচয় হল। দারুণ সুন্দরী। বললেন বিল্ডিং-এর কারোর সঙ্গেই পরিচয় হয়নি, তারেক ছাড়া। বিকেলে ‘চাই’-এর নেমন্তন্ন করলেন। বললেন, তারেক আজ আসছে, আমরাও যদি আসি।”
“চাই-টা কী বস্তু?”
“ইরানিয়ান চা। খেয়েছিস কখনো? দারচিনি, আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ- এইসব মিশিয়ে… বেশ একটা কিক আছে।”
“বলেন কী স্যার! চায়ের টেস্টই তো পালটে যাবে!”
“সেজন্যেই তো ওটা ইরানিয়ান চা। আমি তো বলে দিলাম, যাব। ধরে নিচ্ছি, তোরাও আসবি।”
আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। একেনবাবু বললেন, “চলুন না স্যার, একটা নতুন এক্সপিরিয়েন্স হবে।”
.
রায়হানের মা’র নাম নাজরিন শিরাজি। নাজরিন শব্দের অর্থ বুনো গোলাপ ফুল। প্রমথ ভুল বলেনি, নাজরিন সত্যিই সুন্দরী। ওঁর বরের নাম ফারহাদ। ভদ্রলোক সুপুরুষ আর হাসিখুশি। কানেটিকাটে ওঁর কার্পেটের ব্যাবসা, ম্যানহাটানে এসেছেন তার একটা ব্রাঞ্চ খুলতে। তারেকের কাছে আমাদের কথা শুনেছেন। বুঝলাম ফারহাদই আমাদের সবাইকে ডাকার কথা নাজরিনকে বলেছিলেন। আজকের চা খাওয়া নিতান্তই প্রাথমিক আলাপচারিতার জন্য, শনিবার একটা ফুল-কোর্স পার্সিয়ান ডিনারে আসার আমন্ত্রণ জানালেন। এইখানে বলি, চাই-এর এই ব্যাপারটায় শুধু চা নয়, তার সঙ্গে নানান ধরনের নোনতা-মিষ্টির আয়োজন ছিল। একটু একটু মুখে দিয়েও প্রায় রাতের খাওয়াই হয়ে গিয়েছিল। এইরকম পেট পুরে খাওয়ার পর আবার কয়েক দিন বাদেই ডিনার খেতে আসা… আমি অস্বস্তিবোধ করছিলাম। কিন্তু একেনবাবু আর প্রমথর দেখলাম তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমার তরফ থেকে সাড়া না পেয়ে ফারহাদ ভাবলেন, শনিবার নিশ্চয় আমার অন্য কোনো প্রোগ্রাম আছে। বললেন, “আপনি শনিবার ব্যস্ত থাকলে কবে সুবিধা হবে বলুন।”
তখন বাধ্য হয়েই বললাম, “না না, ঠিক আছে, আমিও আসব।”
এইসময় একটা ফোন আসায় ফারহাদ একটু ভেতরে গেলেন। নাজরিন কিচেনে গিয়েছেন একেনবাবুর জন্য কয়েকটা বাখলাভা পেস্ট্রি প্যাক করতে। খানিক আগেই ওগুলো খেতে খেতে একেনবাবু বার বার এমন করে ‘অ্যামেজিং’ আর ‘হেভেলি’ বলেছেন… এটা যে করবেন তাতে আশ্চর্য হইনি। এটা ঠিক কথা, আমাদের পাড়ার টার্কিশ দোকানের বাখলাভার থেকে নাজরিনের বানানো বাখলাভা অনেক বেশি সুস্বাদু। কিন্তু তার জন্য এত বার ‘অ্যামেজিং’ বা ‘হেভেলি’ বলা একটু বাড়াবাড়ি, কিন্তু একেনবাবুর মুখ বন্ধ করবে কে!
ঘরে হোস্টরা কেউ নেই, সেই ফাঁকে প্রমথ আমাকে বলল, “এত যে মেলা আত্মীয়তা ওঁরা করছেন, পার্সিয়ান কার্পেট কেনার মতো রেস্ত যে আমাদের পকেটে নেই- সেটা বোধহয় জানেন না!”
তবে আমার মনে হল কারণটা অন্য। ফারহাদ ব্যাবসা নিয়ে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন, স্ত্রী ও ছেলে বেশিরভাগ সময়েই একা থাকেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয় থাকাটা সিকিউরিটির দিক থেকে ভালো।
.
নাজরিন আর ফারহাদ দু-জনেই ইরানের সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছেন। নাজরিন সদা হাস্যময়ী, কথা বলেন কম। ফারহাদ হচ্ছেন গল্পে লোক। ইরানের নানান গল্প শুনলাম ওঁর কাছ থেকে। ফারহাদের বাবা ছিলেন ইরানের শাহ, রেজা পাহলবির খুব কাছের লোক। ইরান রেভলিউশনের সময়ে শাহ যখন পালিয়ে মিশরে চলে যান, তখন ফারহাদের বাবা শাহর জিনিসপত্র বাইরে পাচার করতে অনেক সাহায্য করেছিলেন। শাহ চলে যাবার পর বেশ কিছুদিন ওঁরা তেহরানে লুকিয়েছিলেন। তারপর কোনোমতে পালিয়ে যান দক্ষিণ আমেরিকায়। সেখান থেকে পানামা হয়ে অবশেষে মার্কিন মুলুকে। তেহরানের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে ফারহাদের বাবা প্রায় কপর্দকহীন অবস্থায় শুরু করেছিলেন পার্সিয়ান কার্পেটের ব্যাবসা। চেনাজানা সূত্র ধরে প্রথম দিকে কয়েকটা ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কার্পেট সাপ্লাই করতেন। পরে বাবা আর ছেলে মিলে নিজেদের একটা দোকান খোলেন কানেটিকাটের স্ট্যামফোর্ড শহরে। বাবার মৃত্যুর পর ফারহাদ সেটা বন্ধ করেছেন। এখন ম্যানহাটানে এসেছেন একটা দোকান খুলবেন বলে।
.
ঘরের আসবাবপত্র থেকেই বোঝা যায় ফারহাদরা খুবই বড়োলোক। ঘরের কার্পেট (অবশ্যই পার্সিয়ান), মেহগনি কাঠের সূক্ষ্ম কাজের চেয়ার আর সুদৃশ্য কফি টেবিল তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিশাল এটাজেয়ারেতে এনামেলের মিনাকারি করা সুন্দর সুন্দর গয়নার বাক্স, খতমকারি কৌটো, ছোটো নকশা আঁকা জলের পাত্র, প্লেট, কাপ আর বহু জিনিস যার নামও জানি না— বর্ণনাও করতে পারব না ঠিক করে। ‘মিনাকারি’ আর ‘খতমকারি’ লিখতে পারলাম কারণ কিছুদিন আগেই একটা পার্সিয়ান আর্ট এক্সিবিশনে গিয়ে ওই কাজগুলো দেখেছিলাম বলে।
মাঝখানের একটা তাকের ঠিক মধ্যিখানে অনেকগুলো ছোটো ছোটো সাদা বল সাজানো— সাইজে গুলির থেকে একটু বড়ো, এক ইঞ্চির মতো ব্যাস হবে। তাদের মধ্যে পাঁচটা বলের ওপরে একটা করে রোমান অক্ষর R. A, F, H আর D লেখা। সত্যি কথা বলতে কী, এইসব দামি দামি ডিসপ্লের মাঝখানে ওগুলোকে দেখে অবাকই হলাম। নিশ্চয় সাদামাটা বল নয়। মুখ দিয়ে ফস করে বেরিয়ে গেল, “বলগুলো…”
আমার চোখে বিস্ময় দেখে ফারহাদ বললেন, “জাম্পিং বল। রায়হান ওগুলো- নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। আগে ডজন ডজন কিনতাম, প্রতিদিন খেলতে গিয়ে কয়েকটা করে হারাত। পয়সা বাঁচাতে এখন নিজেই ওর জন্যে বলগুলো বানাই।
নিতান্তই রসিকতা, প্রতিদিন এক ডজন জাম্পিং বা সুপার বল কেনার আর্থিক ক্ষমতা ওঁর আছে।
“আপনি নিজে বানান স্যার? ভেরি ইন্টারেস্টিং!”
“ওটারই একটা বোধহয় হারিয়েছে। আমার কাছে এসেছিল খোঁজ করতে।” আমি বললাম।
“হ্যাঁ, বেচারা ভীষণ মনখারাপ করেছে। এই বিল্ডিং-এই কোথাও নিশ্চয় আছে… চোখে পড়লে দেখবেন তো। বেচারা খুব মনখারাপ করে আছে।” এবার মুখ খুললেন নাজরিন। মায়ের মন তো!
আমরা সবাই ব্লগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে নাজরিন বোধহয় বুঝলেন। “আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন, এতগুলো বল থেকে তো একটা দিয়েই দেওয়া যায়, কিন্তু না, আমরা ওকে শেখাবার চেষ্টা করছি দায়িত্বশীল হতে। কিছু হারালেই আরেকটা পাওয়া যায় না।”
“তা তো বটেই ম্যাডাম।”
“ইনি একজন মস্ত বড়ো গোয়েন্দা,” একেনবাবুকে দেখিয়ে তারেক বলল। “দেখবেন, ঠিক খুঁজে বার করবেন।”
“কী যে বলেন স্যার!” বলে একেনবাবু চেয়ার থেকে উঠে এটাজেয়ারের
কাছে গেলেন বলগুলো দেখতে। দেখার পর বললেন, “খেয়াল রাখব, ম্যাডাম… যদি চোখে পড়ে।
“রায়হান কোথায়?” তারেক জিজ্ঞেস করল।
“ওর দাদুর বাড়িতে গেছে।”
.
ইরানের ইতিহাস ভালো জানতাম না। নাদির শাহর নাম স্কুলে ইতিহাসের বইয়ে পড়েছিলাম। দিল্লিকে তছনছ করে মুঘলদের ময়ূর সিংহাসন আর সেইসঙ্গে আকবরি হিরে, কোহিনুর ইত্যাদি লুঠ করে ইরানে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা তো ১৭৩৯ সালের ব্যাপার! কেন জানি না, ওই তারিখটা মনে ছিল। তারপর তিনি খুনও হয়েছিলেন যদ্দুর মনে পড়ছে, কবে মনে নেই। তারপর দুশো আড়াইশো বছর ইরানে কী ঘটেছে, অল্পই জানি। এখন আর না জেনে উপায় নেই। একেনবাবুর মাথায় চেপেছে ইরান সম্পর্কে জানতে হবে। আমার বুক-শেলফে ইরানের ইতিহাসের ওপর একটা বই ছিল। আমার স্বভাব সস্তায় বই বিক্রি হচ্ছে দেখলেই কিনে ফেলি, কিন্তু সময় করে আর পড়া হয় না। বইটা একেনবাবুর চোখে পড়ায় সেটি হস্তগত করেছেন। এখন ইরানের ইতিহাস শুধু জানতে হবে না, জানতে হবে একেনবাবুর বকবকানি শুনে!
পরের দিন সক্কাল বেলা প্রমথ কফি বানিয়েছে, আমি সবার জন্য পাঁউরুটি টোস্ট করছি। একেনবাবু আমার পেছনে এসে বললেন, “বুঝলেন স্যার, রেজা পাহলবি গদিচ্যুত হন ১৯৭৯ সালে। ওঁর প্রচুর ধনরত্ন ছিল। লাকিলি তার বেশিরভাগই রক্ষা পেয়েছে, সাজানো আছে তেহরানের মিউজিয়ামে। আপনি তেহরান গেছেন স্যার?”
“না।”
“ধনরত্নগুলো নাকি দেখার মতো। আচ্ছা স্যার, ওগুলোর বেশিরভাগই তো একসময়ে আমাদের ছিল, মানে মুঘল পিরিয়ডে… ওই নাদির শাহর ব্যাপারটা আর কী।”
এবার প্রমথ আমাকে বাঁচাল, “কী উলটোপালটা বকছেন মশাই! ইরানের সভ্যতা কি আজকের! ওদের নিজেদের সম্পদের কোনো অভাব ছিল?”
একেনবাবু তখন প্রমথকে নিয়ে পড়লেন। “কী মুশকিল স্যার, ময়ূর সিংহাসন আমাদের ছিল না? কোহিনুর মণি?”
“আপনি মশাই, ইতিহাস ভালো করে পড়ুন। কোহিনুর মণি এখন ব্রিটিশদের কাছে আর ময়ূর সিংহাসন গালিয়ে ফেলা হয়েছে বহুদিন আগে। সেই গলানো সোনা এখন কোন দেশে আছে কে জানে!”
প্রমথর কাছে থাবা খেয়ে একেনবাবু একটু চুপ করলেন। তারপর একটা পারম্পর্যহীন প্রশ্ন।
“স্যার, বাউন্সি বল আর জাম্পিং বল কি এক?”
প্রমথ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এর সঙ্গে ইরানের ইতিহাসের সম্পর্ক কী?”
“না না স্যার, এটা অন্য প্রসঙ্গ।”
“সে তো বুঝতেই পারছি। উত্তর হল একই। এদের কতগুলোকে আবার ক্রেজি বলও বলা হয়… যেগুলো কোনদিকে লাফাবে বলা শক্ত।”
“এগুলো বানানো তো স্যার কঠিন কাজ, তাই না?”
“মোটেই নয়, আমিই তো ছেলেবেলাতেই বানিয়েছি।”
‘ছেলেবেলায় বানিয়েছি’… যত্তসব! প্রমথ মাঝে মাঝেই বড়ো বড়ো কথা বলে।
“তুই আবার কবে বানালি? আমি তো দেখিনি!”
“তুই কি আমার গার্জেন যে সব কিছু তোকে দেখিয়ে করতে হবে?” তারপর একেনবাবুকে উদ্দেশ করে বলল, “বাপি বানাতে পারবে কিনা জানি না, কিন্তু শিখিয়ে দিলে আপনি পারবেন।”
‘কী যে বলেন স্যার!”
.
ব্যাপারটা সত্যিই খুব কঠিন নয়। একেনবাবুর অনুরোধে প্রমথ তার পরের দিনই কী করে বাউন্সি বল বানানো যায় তার ডেমনস্ট্রেশন দিল। খুবই সহজ। ল্যাব থেকে আইসো-প্রোপাইল অ্যালকোহল আর সোডিয়াম সিলিকেট, যাকে লিকুইড গ্লাস বলা হয়, নিয়ে এল। তারপর এক চামচ অ্যালকোহল আর চার চামচ লিকুইড গ্লাস মিশিয়ে একটা কাঠি দিয়ে নাড়তে নাড়তেই জলীয় মিক্সচারটা বেশ শক্ত হয়ে গেল। হাতে গ্লাভস পরে সেটা হাতে তুলে ময়দা ঠাসা করে বেশ গোল্লা করে ফেলল। তারপর বলল, “এই দেখুন, আপনার বাউন্সি বল।” বলে ওটা মেঝেতে ফেলতেই দেখি বেশ লাফিয়ে উঠেছে।
একেনবাবু তো মুগ্ধ।
“আরও নানাভাবে করা যায়, একটা সহজ উপায় দেখালাম।”
মানতেই হবে প্রমথ এগুলো বেশ জানে। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন ইন্টারনেটে এইসব কায়দাকানুন দেখতে পাওয়া যেত না। ও কোত্থেকে জেনেছিল কে জানে!
“গ্লাভস না পরে এগুলো আবার করতে যাবেন না।” একেনবাবুকে সতর্ক করল প্রমথ।
“না, না, স্যার। আমি আপনার এইসব কেমিক্যালে হাতই দেব না। কিন্তু অ্যামেজিং স্যার, টুলি অ্যামেজিং।” সোফায় বসে বেশ কিছুক্ষণ পা নাড়লেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা স্যার। এটাজেয়ারেতে পাঁচটা বলের ওপর রোমান অক্ষরে লেখা ছিল R, A, F, H আর D, খেয়াল করেছিলেন?”
“দেখেছি, কিন্তু কোন অক্ষরগুলো ছিল খেয়াল করিনি।”
“আমি করেছি,” প্রমথ বলল। “আমার মনে হয় একটা A মিসিং।”
“আপনি আমার ভাত মারবেন স্যার।”
এবার আমি ধরতে পারলাম। নিশ্চয় FARHAD ছিল। একটা হারিয়ে গেছে।
.
এর দু-দিন বাদে সকাল বেলায় ব্রেকফাস্টে বসে একেনবাবু হাসি হাসি মুখে দুটো সাদা বল টেবিলে রাখলেন। একটা একটু টোল খাওয়া, অন্যটা বেশ গোল গোলই আছে।
“আরে, এ তো মনে হচ্ছে রায়হানের বল! কোত্থেকে পেলেন এ দুটো?” জিজ্ঞেস করলাম।
“একটা পেলাম লিফটের কোনায়, অন্য দুটো এক তলার ল্যান্ডিং-এ।”
“অন্য দুটো? তাহলে তো তিনটে বল থাকার কথা!”
“হ্যাঁ স্যার, এখানে দুটো আর একটা আমার ঘরে আছে।”
“যান, এবার বলগুলো ফেরত দিয়ে আসুন, নাজরিন খুশি হবেন, “ প্রমথ বলল। “একটার বদলে তিনটে বল ফেরত পাচ্ছেন। এই না হলে ডিটেকটিভ!”
“ফারহাদ ঠিকই বলেছিলেন,” আমি বললাম। “ছেলেটা বল হারাতে ওস্তাদ।”
“স্যার, এইরকম বল নিয়ে ল্যান্ডিং-এ খেললে হারিয়ে যেতে বাধ্য। আমি নিজেই কতটা লাফায় দেখতে গিয়ে একটা বল প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। গরু-খোঁজা খুঁজতে হয়েছিল! তবে একটা কথা স্যার…”
“কী?”
“ভাবছি দুটো বল ফেরত দেব। তিনটে নয়।”
“কেন, আরেকটা নিয়ে নিজে খেলবেন?”
“তা নয় স্যার, খুঁজছিলেন তো মোটে একটা বল। তার বদলে দুটো পেলে খুশিই হবেন।”
“অন্যের দ্রব্য না বলে নেওয়া হল চুরি করা- জানেন না?” প্রমথ ধমকাল।
“তা বললে শুনব কেন স্যার। আরেকটা কথাও তো আছে- ‘ফাইন্ডারস কিপারস’… যে খুঁজে পেয়েছে জিনিসটা তার।”
“বেশ,” প্রমথ সতর্ক করল, “আমি কিন্তু নাজরিনকে বলে দেব, আপনি একটা পকেটস্থ করেছেন।”
“আরে না স্যার, আমি কি সত্যিই চুরি করব নাকি! তিন নম্বরটাও দেব।”
.
প্রমথ ল্যাবে চলে যাবার পর আমি আর একেনবাবু একসঙ্গে কলেজ যাব বলে বেরোলাম। পথে দোতলায় নেমে নাজরিনদের অ্যাপার্টমেন্টে বেল বাজাতেই নাজরিন দরজা খুললেন।
“ম্যাডাম, এই যে রায়হানের দুটো বল খুঁজে পেয়েছি।”
“একটাই তো হারিয়েছিল, দুটো!” নাজরিন বিস্মিত হয়ে বল দুটো হাতে নিলেন। বল দুটো একটু উলটেপালটে ‘থ্যাংক ইউ’ বললেন।
“ইউ আর ওয়েলকাম, ম্যাডাম।”
.
অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কলেজে যাবার সারাটা পথ একেনবাবু দেখছি কথা বলছেন না।
প্রশ্ন করলে শুধু হ্যাঁ-হুঁ করছেন। মনটা অন্য দিকে।
“কী ভাবছেন?”
“কিছু না স্যার।”
একেনবাবু যদি কিছু না বলতে চান, কিছুই বলবেন না। আমিও আর প্রশ্ন করলাম না।
.
সকালে একটাই ক্লাস ছিল। সেটা শেষ করে আমার অফিসে বসে আছি। এমন সময় হাসি হাসি মুখে একেনবাবু এসে হাজির।
“কী ব্যাপার?”
একটা খাম হাতে ধরিয়ে বললেন, “দেখুন স্যার।”
ভেতরে ছোট্ট একটা কাচের টুকরো।
“এটা কী?”
“মনে তো হচ্ছে স্যার হিরে।”
“হিরে! কোত্থেকে পেলেন?”
এর ভেতর থেকে। বলে পকেট থেকে আধখানা করা সাদা বল দেখালেন। “প্রমথবাবুর ল্যাব থেকে কাটিয়ে এনেছি।
বলের দুটো টুকরো হাতে নিয়ে দেখি একটার পেছনে লেখা A।
“রায়হানের বল?”
“হ্যাঁ স্যার।”
“আর এই হিরেটা?”
“মনে হয় ইরানের শাহদের রাজকোষ থেকে চুরি যাওয়া জিনিস।”
“কী বলছেন যা-তা!”
“সেটা নাও হতে পারে স্যার, তবে আমার বিশ্বাস এরকম আরও পাঁচটা হিরে নাজরিন ম্যাডামদের বাড়িতে আছে।”
.
পরের ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলি। যেটা আমরা কেউই জানতাম না, কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কের ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্ট থেকে বেশ কিছু দামি হিরে চুরি হয়েছিল। ব্যাপারটা নিয়ে হইচই হয়নি, পুলিশই ব্যাপারটা গোপন রেখেছিল অনুসন্ধানের সুবিধার জন্য। কিন্তু এই বলের মধ্যে সেই হিরে পাওয়া যাবে, একেনবাবু সেটা জানলেন কী করে?
একেনবাবু বললেন, “কী মুশকিল স্যার, আপনার বই থেকেই তো!”
“আমার বই থেকে?”
“ওই যে ইরানের ইতিহাস পড়লাম। দেখলাম অনেক মণিমাণিক্য ইন্ডিয়া থেকে নাদির শাহ নিয়ে গিয়েছিল। আর রেভোলিউশনের সময়েও কিছু চুরি গিয়েছিল। তার কিছু নিশ্চয় ফারহাদের বাবা সরিয়েছিলেন রেজা পহলবি যখন মিশরে পালান।”
“কিন্তু এগুলো তো সেইসব হিরে নয়!”
“তা নয় স্যার, কিন্তু খটকা লেগেছিল, যখন দেখলাম কতগুলো বল-এ অক্ষর লেখা। এটাজেয়ারেতে অক্ষর-লেখা বল ছিল পাঁচটা, কিন্তু প্রমথবাবু ঠিকই ধরতে পারলেন সংখ্যায় হবে ছটা। বোঝাই যায়, ওগুলোকে কোনো কারণে অন্যগুলোর থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু যখন দেখলাম একটা বল হারিয়েছে দেখে নাজরিন ম্যাডাম ভীষণ উদ্বিগ্ন, তখন সন্দেহ হল নিশ্চয় সেই অক্ষরওয়ালা বলটা হারিয়েছে বলেই। সেটাকে খুঁজে পেলাম, সেইসঙ্গে আরও দুটো। ইচ্ছে করেই অক্ষরওয়ালা বলটা ফেরত না দিয়ে অন্য দুটো দিলাম। আপনি তো নিজেই দেখলেন, সেই বল দুটো ফেরত পেয়ে নাজরিন ম্যাডাম খুব উৎফুল্ল হলেন বলে মনে হল না… দায়সারা ‘থ্যাংক ইউ’ বললেন। কেন স্যার, সেটাই ভাবছিলাম। এদিকে প্রমথবাবু দেখিয়েছেন বলগুলো বাড়িতে বানানো কিছুমাত্র কঠিন ব্যাপার নয়। সেক্ষেত্রে ছোটো সাইজের দামি জিনিস, যেমন হিরে- নিশ্চয় ওগুলোর ভেতরে লুকিয়ে রাখা যায়। তাই এসেই প্রমথবাবুর ল্যাবে গিয়ে সাবধানে বলটা দু-টুকরো করি। প্রথমে ভেবেছিলাম ইরানের চুরি যাওয়া হিরে… ফারহাদ সাহেবের ইরানিয়ান কানেকশন-এর জন্য। রাজকোষ থেকে কিছু চুরি হলে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের পক্ষে সেটা জানা সম্ভব নয়… আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক তো আদায় কাঁচকলায়। তবু ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে ফোন করি, ঠিক কী করা উচিত জানার জন্য। তখনই ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্টে চুরির খবরটা শুনি।”
“আপনার কি ধারণা ফারহাদ আর নাজরিন এই চুরির সঙ্গে জড়িত?”
“অবশ্যই স্যার। একটা ইরানিয়ান গ্যাং ইস্ট-কোস্টে আস্তানা গেড়েছে। একাধিক জায়গায় ওরা বার্গলারি করেছে।”
“দুটো প্রশ্ন। আমাদের খেতে ডেকে ইরানের শাহদের সঙ্গে ওঁর পরিবারের কানেকশনের গল্পটা ফাঁদলেন কেন? আর বল খুঁজে দেবার কথাই-বা বললেন কেন?”
“আমার ধারণা, হারানো বলটা খোঁজার জন্য অনেকের সাহায্য কাজে লাগানো। বিশেষ করে নাজরিম ম্যাডামের মতো সুন্দরী আর রয়্যাল ফ্যামিলির কানেকশন দেখলে আমরা সবাই একটু বেশি উৎসাহে বলটা খুঁজব। পাছে আমরা ভাবি, আরও তো অনেক বল আছে, সেখান থেকে একটা দিলে তো হয়, তাই ম্যাডাম শিশুশিক্ষার ব্যাপারটা জুড়ে দিলেন। এরপর স্যার, আমরা কি আর না খুঁজে পারব!”
“এবার কী হবে?”
পুলিশ ওয়ারেন্ট নিয়ে চলে গেছে ওঁদের অ্যাপার্টমেন্ট সার্চ করতে। আমরা পৌঁছোতে পৌঁছোতেই সেই কাজটা বোধহয় শেষ হয়ে যাবে।