বাংলা মাদ্রাসা ও মক্তবের মৌলভী সাহেবদের প্রতি
বাংলা মাদ্রাসা ও মক্তবের মৌলভী সাহেবানের খেদমতে আরজ :
আস্সালামো আলায়কুম! কওমের খাদেম এই বান্দার নাম হয়ত আপনারা শুনিয়া থাকিবেন। আমি আমার কবিতায়, ইসলামি গানে, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে, প্রবন্ধে, বক্তৃতায় আশৈশব ইসলামের সেবা করিয়া আসিতেছি। আমারি বহু চেষ্টায় আজ ইসলামি গান রেকর্ড হইয়া ঘুমন্ত আত্ম-ভোলা মুসলিম জাতিকে জাগাইয়া তুলিয়াছে। আরবি-ফরাসি শব্দের প্রচলন বাংলা সাহিত্যে আজ বহুল ব্যবহৃত হইতেছে — তাহাও এই বান্দারই চেষ্টায়। আমি কওমের নিকঠ হাত পাতিয়া কখনও কিছু চাহি নাই — ইহার বদলাতে। কোনো কিছু প্রতিদানের আশা না করিয়াই আমি লোক-চক্ষুর অন্তরালে থাকিয়া আমার যথাসাধ্য কওমের ও ইসলাম ধর্মের খেদমত করিয়া আসিতেছি।
আজ অপনার দরওয়াজায় এই খেদমতগার এক সামান্য আর্জি লইয়া হাজির হইয়াছে। আমার ভরসা আছে, আপনাদের দারাজ দিল্ ও দস্ত্ আমাকে রিক্ত হস্তে ফিরাইবে না। আমি এতদিন পরিণত-বয়স্ক ও পরিণত-বুদ্ধি লোকের জন্যই কবিতা, গজল ইত্যাদি লিখিয়াছি। শিশুদের জন্য, বালক-বালিকাদিগের জন্য কিছু লিখি নাই। আমার মনের হয়, ইহার জন্যই আমিও আশানুরূপ ফল পাই নাই।
জ্ঞানের প্রথম উন্মেষকালে যদি তাহারা এসলাম ধর্মের, মুসলিম জাতির শ্রেষ্টত্ব সম্বন্ধে প্রথম সবক পায়, তাহা হইলেই আমাদের ভবিষ্যৎ জাতি-গঠনের ইমারতের ভিত্তি পাকা হয়। সেই জন্য আমি ‘মক্তব সাহিত্য’ নাম দিয়া একখানা পুস্তিকা লিখিয়াছি। — খোদার ফজলে আপনাদের দোওয়াতে উক্ত ‘মক্তব সাহিত্য’ টেকস্ট বুক কমিটি কর্তৃক ও আপনাদের পরিচিত মাদ্রাসা ও মক্তব্যের জন্য মনিনীত হইয়াছে। আপনারা যদি আমায় মদদ্ দেন এবং আমার এই ক্ষুদ্র কেতাবখানি আপনাদের মক্তব-মাদ্রাসার জন্য মনোনীত করিয়া এই খাদেমকে সাহায্য করেন, তাহা হইলে ইন্শাহআল্লাহ্ ভবিষ্যতে মক্তব-মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বাংলা পুস্তক রচনায় মন দিব ও এইরূপে কওমের সেবা করিতে থাকিব। আশা করি, আমার এই আরজি আপনারা মঞ্জুর করিয়া আপনাদের কওমের একনিষ্ঠ খেদ্মতগারকে সরফরাজ করিবেন। আরজ ইতি।
খাদেম
নজরুল ইসলাম
আশ্বিন, ১৩৪৩
কলিকাতা