প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
ফিরে পড়া : সুধীরকুমার মিত্রের দশটি বই

বাংলার মন্দির-টেরাকোটা – ইন্দ্রজিৎ চৌধুরি

বাংলার মন্দির-টেরাকোটা – ইন্দ্রজিৎ চৌধুরি

উনিশ শতকে বাঙালির ইতিহাসচর্চায় প্রথম থেকেই আঞ্চলিক ইতিহাস অনুসন্ধান প্রাধান্য পেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম ভারতের গুহামন্দির, দক্ষিণের গোপুরশোভিত বিশাল মন্দির, ওড়িশা কী মধ্যভারতের নিপুণ ভাস্কর্যমন্ডিত পাথরের মন্দির যেভাবে আঠেরো শতক থেকেই ভারতীয় মার্গীয় স্থাপত্য-ভাস্কর্য শিল্পের ইতিহাসচর্চায় প্রথমে ইউরোপীয় এবং পরে ভারতীয়দের প্রাণিত করেছিল, বাংলার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। পাথর এখানে দুর্লভ, পাথরের মন্দিরও পশ্চিম-প্রান্তিক অঞ্চল ছাড়া বিশেষ দেখা যায় না। ইটের বড়ো আকারের মন্দিরের সংখ্যা নগণ্য। আর বাংলার গ্রামে-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে থাকা অজস্র ছোটো ছোটো ইটের মন্দির, তার গায়ে ছোটো আকারের ফলকে মধ্যযুগের বাঙালির নিতান্ত স্বল্পপরিসর গ্রামজীবনের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন যে আদৌ শিল্প-ইতিহাসের বিবেচ্য বিষয় হতে পারে, সে-কথা বুঝতে বুঝতেই কেটে গিয়েছে অনেক দিন। এসব মন্দিরের অধিকাংশই আঠেরো-উনিশ শতকে নির্মিত, অর্থাৎ সেগুলির সঙ্গে এদেশে শিল্প-ইতিহাসচর্চার সূচনাপর্বের কালগত ব্যবধান ছিল নিতান্তই কম। তাই, স্বাভাবিকভাবেই, উইলিয়াম উইলসন হান্টার বাংলার যে ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন (“It is a matter of regret that an ethnical frontier which must have seen and suffered so much that would be interesting to mankind to know, should be without any record of the past.” The Annals of Rural Bengal, 1868, Ch. 1), কিংবা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালিকে যে ইতিহাস লিখতে বলেছিলেন (‘‘বাঙ্গালার ইতিহাস চাই। নহিলে বাঙ্গালী কখন মানুষ হইবে না।’’ বঙ্গদর্শন, অগ্রহায়ণ ১২৮৭ বঙ্গাব্দ, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ), তাতে বাংলার স্থাপত্য-ভাস্কর্যের জন্য বিশেষ কোনো স্থান চিহ্নিত ছিল না।

বিশ শতকের গোড়াতেও জাতীয়তাবাদী আবহে বাঙালির ‘নিজস্ব ইতিহাস’ নির্মাণের প্রয়াসে রাজবংশানুচরিত বা জাতি-কুল-মান যতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, সত্যিকারের ‘নিজস্ব’ বলতে যা ছিল সেই স্থাপত্য বা ভাস্কর্যের ইতিবৃত্ত ততটা মর্যাদা পায়নি। শুধু গ্রন্থাগারে বসে প্রাচীন পুথি ঘেঁটে, আবিষ্কৃত মুদ্রা বা তাম্রশাসন বিচার করে এই ইতিবৃত্ত রচনা করা সম্ভব ছিল না, এর জন্য প্রথমেই দরকার ছিল ব্যাপক সরেজমিন অনুসন্ধান। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইংরেজি-শিক্ষিত, জেলায় সরকারি পদে নিযুক্ত বাঙালিরা কেউ কেউ এই ধরনের ক্ষেত্রানুসন্ধান উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে করেও ছিলেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি প্রত্নস্থল দেখে বিবরণী রচনা করা ছাড়া তাঁদের পক্ষে অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য থেকে কোনো তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব ছিল না। আবার বিশ শতকের শুরু থেকে যাঁরা পায়ে হেঁটে গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে খুবই যত্ন করে আঞ্চলিক ইতিহাস লিখেছেন, আলোচ্য এলাকায় পূর্ব প্রজন্মের কীর্তি হিসেবে বিভিন্ন মন্দির নির্মাণের বৃত্তান্ত যথাসাধ্য উদ্ধার করলেও সামগ্রিক বিচার তাঁদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। এমনকী সে বৃত্তান্তে নান্দনিকতার দিকটিও তেমন করে উঠে আসেনি। অন্ত্য-মধ্যযুগীয় মন্দির-স্থাপত্য কতটা বাঙালির নিজস্ব সৃষ্টি, বিশেষ করে তার পোড়ামাটির অলংকরণ ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে সত্যি সত্যিই কতটা মর্যাদা পেতে পারে, এ নিয়ে কথা বলার মতো তথ্যভিত্তি তৈরি হতে আরও অনেক সময় লেগেছে।

বিদেশি পর্যটক, শিল্পী, সার্ভেয়ার, জেলা-অফিসার, শখের প্রত্নানুসন্ধানী—যাঁরা আঠেরো-উনিশ শতকে ভারতীয় শিল্পের নানা দিককে ইউরোপে পরিচিত করিয়েছিলেন, তাঁদের দাক্ষিণ্য এ বাংলার মাটিতেও কম পড়েনি। কিন্তু, বাংলার মন্দির তেমনভাবে তাঁদের টানেনি। বাংলার কোনো মন্দির সম্পর্কে বিদেশি সমীক্ষকদের মধ্যে প্রথম সুচিন্তিত মন্তব্য বোধ হয় ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টনের, যিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নির্দেশে ১৮০৭ থেকে ১৮১৪-র মধ্যে বর্তমান বাংলা-বিহার-অসমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল খুব খুঁটিয়ে দেখেছিলেন। ১৮১৬-য় রিপোর্ট জমা দিলেও তাঁর বিবরণ অবশ্য ছাপা হয় অনেক পরে, মন্টগোমারি মার্টিনের The History, Antiquities, Topography, and Statistics of Eastern India গ্রন্থে (১৮৩৮), তা-ও নিতান্ত সংক্ষিপ্ত আকারে। দিনাজপুরের রিপোর্ট অবশ্য আগেই আলাদাভাবে ছাপা হয়েছিল (১৮৩৩)। সাধারণভাবে দিনাজপুরের মন্দির-ভাস্কর্য প্রসঙ্গে বুকানন লিখেছিলেন :

The temples here and in the south differ entirely in structure, … The style of ornament, however, is nearly the same in both parts of India. Some neat foliages possess considerable merit; the rest consists of numerous small mouldings, and monstrous distorted representations of the deities and their adventures, among which obscene figures are often a conspicuous part. (A Geographical, Statistical, and Historical Description of The District, or Zila, of Dinajpur, in the Province, or Soubah of Bengal, The Asiatic Society, Calcutta, 1833, p. 266)

বুকানন-এর এই বক্তব্য তৎকালীন ইউরোপে প্রচলিত ভারতীয় দেব-দেবীর মূর্তি সংক্রান্ত ধ্যানধারণারই প্রতিফলন। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন পার্থ মিত্র (Much Maligned Monsters, 1977)।

১৮৬১-তে গঠিত হল ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল আলেকজাণ্ডার কানিংহামের দুই সহকারী মনোনীত হলেন জে. ডি. এম. বেগলার ও এ. সি. এল. কার্লাইল। বেগলার ১৮৭২-৭৩-এ পাটনা থেকে শুরু করে বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ-বর্ধমান-হুগলি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রত্নস্থল ঘুরে দেখেন। রিপোর্টে তিনি বিষ্ণুপুরের মন্দির প্রসঙ্গে লিখেছেন :

Bishanpur is famed as an old place, and certainly contains very much temples and other old remains, but their age is not such as to merit detailed notice of them. They are almost all built in the Lower Bengal style, with curved roof lines, and the ornamentation consists generally of sculptured or moulded tile-work. Some of these are very fine, and stand out the weather very well; they consist chiefly of scenes from the lives of Rama or the Pandus, but principally of Krishna, to whom, or to whose mistress, most of the temples are dedicated; the sculpture, as may be readily guessed, is not very chaste.” (Report of a Tour Through the Bengal Provinces in 1872-73, Archaeological Survey Reports, Vol. 8, 1878, p. 203)

এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। বেগলার চালাশৈলীর মন্দিরকে Lower Bengal style বলে চিহ্নিত করেছেন, এবং টেরাকোটার বিষয়বস্তু সম্পর্কেও সঠিক ধারণা দিচ্ছেন। এক-শো বছর পরে ডেভিড ম্যাককাচ্চনের লেখাতেও আমরা এরই সমর্থন দেখব। কিন্তু প্রাচীনত্বের দিক থেকে এইসব মন্দির স্বাভাবিকভাবেই বেগলারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না, কারণ তাঁরা তখন অনুসন্ধান করছেন হাজার-দু-হাজার বছরের নিদর্শন।

বিষ্ণুপুরের মন্দির-ভাস্কর্যের সঙ্গে প্রাচীনতর ইটের মন্দিরের ভাস্কর্যের চরিত্রগত পার্থক্য বেগলারের দৃষ্টি এড়ায়নি। বাঁকুড়া জেলারই সোনাতপল (বেগলার লিখেছেন Sonatapan) মন্দিরের বর্ণনায় তিনি লিখেছেন :

The temple was covered with plaster, and richly and profusely ornamented. The plaster, from its ornamentation corresponding in all parts with the cut-brick ornamentation below, I consider to have formed part of the original design…

বহুলাড়ার মন্দির প্রসঙ্গেও বেগলার একই কথা লিখেছিলেন। কিন্তু খোদিত ইটের এই ভাস্কর্য এবং পরবর্তী টেরাকোটা ফলকের ভাস্কর্যের পরম্পরা প্রসঙ্গে তিনি কোনো আলোচনাই করেননি, গুরুত্বও দেননি।

উনিশ শতকের শেষ পর্বে প্রত্নতত্ত্বচর্চা অনেকটাই বিধিবদ্ধ পদ্ধতির মধ্যে চলে আসে। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে উইলিয়াম উইলসন হান্টারের কুড়ি খন্ডের A Statistical Account of Bengal (1875-1877)। তাতে কিন্তু বাংলার মন্দির প্রসঙ্গে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য নেই। যেমন, বিষ্ণুপুরের মন্দির প্রসঙ্গে হান্টার উদ্ধৃত করেন গ্যাস্ট্রেলের রেভিনিউ সার্ভে রিপোর্ট। মন্দির-স্থাপত্য সম্পর্কে মন্তব্য থাকলেও অলংকরণ বিষয়ে গ্যাস্ট্রেল নীরব ছিলেন। পি. ডব্লিউ. ডি. সংকলিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির পুরাকীর্তির তালিকায় দেখতে পাই বেগলারের বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি (List of Ancient Monuments in Bengal, 1896)।

জেমস ফার্গুসনের বিখ্যাত গ্রন্থে দিনাজপুরের (বর্তমান বাংলাদেশ) কান্তজি মন্দিরের টেরাকোটাকে তুলনা করা হয়েছে ওড়িশা কী মহীশূরের মন্দির-ভাস্কর্যের সঙ্গে :

No stone is used in the building, and the whole surface is covered with designs in terra-cotta, partly conventional, and these are frequently repeated, as they may be without offence to taste; but the bulk of them are figure-subjects, which do not ever seem to be repeated, and form a perfect repository of the manners, customs, and costumes of the people of Bengal at the beginning of the eighteenth century. In execution they display an immeasurable inferiority to the carvings on the old temples in Orissa or in Mysore, but for general effect of richness and prodigality of labour this temple may fairly be allowed to compete with some of the earlier examples.” (History of Indian and Eastern Architecture, Revised by James Burgess, 1910, Vol.1, Book 6, Ch. 4, p. 161).

লক্ষণীয়, ফার্গুসন টেরাকোটায় সমাজচিত্রের বিপুল সম্ভারের কথা উল্লেখ করেছেন। বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ—নকশা-ফলকগুলি পুনরাবৃত্ত হয়েছে, কিন্তু কাহিনি-ফলক নয়। তবে বিশ শতকের গোড়ায় দেখি কান্তজির টেরাকোটা প্রসঙ্গে সরকারি গেজেটিয়ার-এ প্রশংসারই সুর :

The whole outside of the temple is covered with beautiful brick reliefs, the work of Krishnagar artists, representing every phase of Indian life. (Eastern Bengal District Gazetteers, Dinajpur, F. W. Strong, 1912)

তবে কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের দিয়ে টেরাকোটা-ফলক নির্মাণের বিষয়টি প্রশ্ন জাগায়। সংস্কারের সময় হয়তো কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের কাজে লাগানো হয়েছিল।

অন্য দিকে, ইউরোপীয় চিন্তাভাবনার অনুসারী দেশীয় শিল্প-ঐতিহাসিকরা সাধারণভাবে ষোড়শ শতক বা তার পরের বাংলার মন্দিরকে স্থাপত্য-ভাস্কর্যগত গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না, তাঁদের কাছে এই পর্বটি সার্বিকভাবে অবক্ষয়ের কাল হিসেবেই চিহ্নিত ছিল। গুরুসদয় দত্ত ১৯৩০-এর দশকে মন্দির-টেরাকোটার বিস্ময়কর শিল্পকৃতির কথা একের-পর-এক লেখায় প্রচার করতে শুরু করার আগেও অবশ্য বাঙালি অনুসন্ধিৎসুরা কেউ কেউ এদিকে নজর দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখা। তিনি লিখেছেন :

Remarkably good bricks, moulded on the face with figure, groups and patterns, used to be made in parts of Bengal. A very good example of a building decorated in this way is the Kantanagar temple near Dinajpur. The mouldings are deep, clean, and quaint; in the figures a good deal of life is shewn; and some of the patterns are very beautiful. In Chandernagore a temple is decorated in this way, but the designs and moulding are inferior. (Art-Manufactures of India, 1888)

ভারতীয় কারুশিল্প বিষয়ে ত্রৈলোক্যনাথের গভীর অন্তর্দৃষ্টি এ ক্ষেত্রেও পরিস্ফুট।

বিশ শতকের গোড়া থেকে জেলা বা অঞ্চলের ইতিহাসের মধ্যে বিচ্ছিন্ন উল্লেখ ছাড়া শুধু কোনো বিশেষ মন্দির নিয়ে লেখাও নজরে পড়ে। যেমন, রাধেশচন্দ্র শেঠ (পাবনার জোড়বাংলা, রঙ্গপুর-সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা, ৪/২, ১৩১৬ বঙ্গাব্দ), অশ্বিনীকুমার সেন (দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, ভারতবর্ষ, ২/১/৩, ভাদ্র ১৩২১ বঙ্গাব্দ), গুরুদাস সরকার (The Baranagar Temples in Murshidabad, Rupam, 19-20, 1924)। মন্দির নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তাঁরা সেখানকার টেরাকোটা অলংকরণেরও বিবরণ দিয়েছেন। তাঁরা যে এর গুরুত্ব বুঝতে পারেননি তাও নয়। যেমন পাবনার জোড়বাংলা প্রসঙ্গে রাধেশচন্দ্রের লেখায় দেখি :

জোড়বাংলার সম্মুখবর্তী প্রাচীরের গাত্রে ও মস্তকে নানারূপ কারুকার্য্য খোদিত আছে। এই সকল খোদিত ইষ্টকময় কারুকার্য্য মধ্যে কতকগুলি নরনারী ও পশুর মূর্ত্তি। লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম তন্মধ্যে রামরাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণ বলরাম, ইত্যাদি দেবদেবীর মূর্ত্তি। নিম্নভাগে পার্শ্বস্থিত খোদিত মূর্ত্তিগুলির মধ্যে এক পার্শ্বে ঢোল দামামা ইত্যাদি বাদ্যকর ও পালকী বেহারা নর্ত্তক নর্ত্তকী আদি মূর্তিসহ একটি শোভাযাত্রা এবং অপর পার্শ্বে বন হইতে প্রত্যাগমনকারী সশস্ত্র এবং বংশদন্ড সহযোগে বাহক স্কন্ধে শিকারসহ শিকারীগণের মূর্ত্তি খোদিত রহিয়াছে। ইহা হইতে অনুমিত হয় যে জোড়-বাংলা নির্ম্মাণের সময় এতৎ প্রদেশে জনসাধারণের মধ্যে মৃগয়ার বিশেষ আদর ছিল এবং উপরিউক্ত শোভাযাত্রার প্রতিমূর্ত্তিগুলি হইতে তৎসময়ের সামাজিক অনুষ্ঠান ও ব্যবহার কিরূপ ছিল, তাহা নিরূপণের সহায়তা হইতে পারে।

বোঝা যায়, ওঁদের দেখার চোখ ছিল, ভাবনাটাও ছিল, তবে সেই লক্ষ্যে আলাদাভাবে বড়ো কাজ কেউই করে উঠতে পারেননি।

আগ্রহ আবার অন্য স্তরেও ছিল। গুরুসদয়ের লেখালেখি বা সংগ্রহের অনেক আগেই বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সংগ্রহশালায় টেরাকোটা ফলকের চমৎকার সংগ্রহ গড়ে উঠেছিল। মার্গীয় শিল্পের নিদর্শন স্বরূপ গান্ধার থেকে শুরু করে মথুরা-রাজগৃহ হয়ে পাল-সেন পর্বের প্রস্তর-ভাস্কর্যের খুবই মূল্যবান সংগ্রহের পাশাপাশি বাংলার নানা প্রান্ত থেকে উৎসাহী ক্ষেত্রানুসন্ধানীরা ভেঙে পড়া মন্দিরের টেরাকোটা ফলক সংগ্রহ করে পরিষদে পাঠাতে থাকেন। শুধু মন্দির নয়, মসজিদ স্থাপত্যে ব্যবহৃত টেরাকোটা ফলকও সংগৃহীত হয়। এই সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার প্রথম পর্বেই রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যে ক্যাটালগ তৈরি করেন (১৯১১), তাতেই দেখা যায় অনেকগুলি ফলক সংগৃহীত হয়েছে। এরপর মনোমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিস্তারিত ক্যাটালগে (১৯২২) আরও ফলকের হদিশ মেলে। মনোমোহন যত্ন করে এগুলির বিবরণ দিয়েছেন, রামায়ণ কাহিনি বা কৃষ্ণকথার ফলকগুলিকে সঠিকভাবেই চিহ্নিত করেছেন, যদিও আলাদাভাবে এগুলির গুরুত্বের কথা কিছু বলেননি। চেষ্টা করেননি শিল্প-ইতিহাসের ঐতিহ্যে এগুলির স্থান নির্ণয়েরও। খেয়াল রাখতে হবে, ভারতীয় জাদুঘরে পাহাড়পুরের টেরাকোটা বাদ দিলে মন্দির টেরাকোটার সংগ্রহ অনেক পরবর্তীকালের। আশুতোষ সংগ্রহশালাতেও মন্দির-টেরাকোটা সংগৃহীত হয়েছে আরও পরে। গুরুসদয় দত্ত ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করতে শুরু করলেও তা প্রকাশ্যে এসেছে বহুকাল পরে। স্বাভাবিক ভাবেই, জেলায় জেলায় আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চাকারীদের কাছে, সাহিত্য পরিষদের অনুরাগীদের কাছে জাতীয়তাবাদী প্রকল্পে বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য অনুসন্ধানের যে গুরুত্ব ছিল, তাতে মন্দির-টেরাকোটা ভালোই খাপ খেয়ে গিয়েছিল। বাঙালি ‘সত্তা’র নির্মাণে লক্ষ্মণসেনের তাম্রশাসন, দনুজমর্দনদেবের মুদ্রা, চর্যাপদ কী শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আবিষ্কারের সঙ্গে মন্দির-টেরাকোটার সংগ্রহ-সংরক্ষণেরও গুরুত্ব পেতে দেরি হয়নি। হয়তো গুরুসদয়ের মতো শিল্পরসিক ব্যাখ্যাতা তেমন কেউ সেখানে না-থাকায় পরিষৎ-সংগ্রহের এই দিকটি অবহেলিতই থেকে যায়। অনেক পরে, হিতেশরঞ্জন সান্যাল ও ডেভিড ম্যাককাচ্চন এই সংগ্রহের কিছু বিশিষ্ট ফলককে আলোচনায় আনেন।

গুরুসদয়ের পর, প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে বিচ্ছিন্ন কিছু আলোচনা ছাড়া বিষয়টি আবার পন্ডিতমহলে গুরুত্ব হারায়। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে পঞ্চানন রায় বাংলার মন্দির নিয়ে প্রবাসী পত্রিকায় অনেকগুলি নিবন্ধ লেখেন। সত্তরের দশকে লেখেন অমৃত পত্রিকায়। তাঁর বাংলার মন্দির বইটি অবশ্য ১৯৭৪-এ প্রকাশিত, আর মন্দির-টেরাকোটার প্রসঙ্গ তাতে খুবই কম। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকে বাংলার মন্দির-স্থাপত্য ও টেরাকোটা ভাস্কর্য প্রায় একই সঙ্গে বেশ কয়েক জন অনুসন্ধিৎসুর আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে ওঠে, আর এঁদের সম্মিলিত প্রয়াসে গড়ে ওঠে এক বিপুল তথ্যভান্ডার। অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯১৬-১৯৮৮), ডেভিড জন ম্যাককাচ্চন (১৯৩০-১৯৭২), তারাপদ সাঁতরা (১৯৩১-২০০৩), হিতেশরঞ্জন সান্যাল (১৯৪০-১৯৮৮)—এই চারজনই পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে দেখে মন্দির-স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিষয়ে বহু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, ডেভিড এমনকী ঘুরেছিলেন বাংলাদেশও (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)। জেলাকেন্দ্রিক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ এই সময়েই হয়েছিল, যেমন মুকুল দে-র বীরভূম টেরাকোটাজ (১৯৫৯)—সম্ভবত বাংলার মন্দির-টেরাকোটা বিষয়ে প্রথম এবং অত্যন্ত উঁচুমানের ছবির অ্যালবাম। একই বছরে প্রকাশিত ও. সি. গাঙ্গুলির লেখা, এ. গোস্বামী সম্পাদিত অমিয় তরফদারের ছবির অ্যালবাম ইন্ডিয়ান টেরাকোটা আর্ট-এও বাংলার মন্দির-টেরাকোটারই প্রাধান্য। পঞ্চাশের দশকেই বিষয়টিতে আগ্রহী হয়ে নানা জায়গা ঘুরে ছবি তুলেছিলেন মুকুল দে-র মতোই আর এক শিল্পী—প্রদোষ দাশগুপ্ত। তাঁর বই টেম্পল টেরাকোটা অব বেঙ্গল অবশ্য প্রকাশিত হয় অনেক পরে, ১৯৭১-এ। শিল্পীর চোখে দেখার তাৎপর্য অন্য, নির্মাণের কারিগরির উপর আলো ফেলা তাঁদের পক্ষেই স্বাভাবিক। প্রদোষবাবুর বইয়ে টেরাকোটা ফলকের প্রস্তুতিপর্ব যথেষ্টই গুরুত্ব পেয়েছে। শুধু তাই নয়, মুকুল দে লিখেছিলেন, মন্দিরের টেরাকোটাগুলি শিল্পীরা আগে মাটিতে খোদাই করে পুড়িয়ে নিতেন, তারপরে তা থেকে ছাঁচ তুলে অনেকগুলি করে ফলক তৈরি করা হত। এইসব ফলক থেকে নাকি চূড়ান্ত ফলকগুলি বেছে নেওয়া হত। প্রদোষবাবু কিন্তু স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আধশুকনো মাটির ফলকে খোদাই করে প্রার্থিত চিত্রটি রূপায়ণের পর কীভাবে সেগুলিকেই পুড়িয়ে মন্দিরগাত্রে সংস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হত। তারাপদ সাঁতরাও একই তথ্য দিয়েছেন। নির্দিষ্ট মন্দিরকেন্দ্রিক এ ধরনের কিছু কাজ পরেও হয়েছে, যেমন সরকারি উদ্যোগে টেরাকোটাজ অব আঁটপুর এবং টেরাকোটাজ অব হেতমপুর। তবে সেগুলির চরিত্র নিতান্ত ফোটো-অ্যালবামের।

অমিয়বাবুরা চারজনেই পঞ্চাশের দশকে কাজে নেমেছিলেন। অমিয়বাবু নিজে হয়তো দশকের গোড়ার দিকে, অন্যেরা শেষের দিকে। পরবর্তী দশকেই আমরা একের-পর-এক তাঁদের কাজের ফল প্রকাশিত হতে দেখি। এর মধ্যে অমিয়কুমারের বাঁকুড়ার মন্দির প্রকাশিত হয় সবার আগে, ১৯৬৪-৬৫তে। বস্তুত বাংলার মন্দিরচর্চার অন্যতম প্রধান দিকচিহ্ন এই বইটি পরবর্তী বহু গবেষণার পথ দেখিয়েছে। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত (পুরাতত্ত্ব) বিভাগ থেকে যে পুরাকীর্তি গ্রন্থমালা প্রকাশিত হয়, প্রথম পর্বে তাঁর দায়িত্বও ছিল অমিয়বাবুরই। গ্রন্থমালার প্রথম বই, বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি (১৯৭১) তাঁর লেখা। গ্রন্থমালার পরের বইগুলিতে লেখকরা মোটের উপর অমিয়কুমার-প্রদর্শিত পথই অনুসরণ করেছেন, এইভাবেই পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার মন্দির-স্থাপত্যের সঙ্গে মন্দির-টেরাকোটারও প্রাথমিক বিবরণ সংকলিত হয়। হিতেশরঞ্জন সান্যালের Temples of Bengal ধারাবাহিকভাবে Eastern Railway Magazine-এ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৩-৬৪তে, ১৫টি কিস্তিতে। ইংরেজি ভাষায় এই লেখার পাশাপাশি বাংলায় লেখা তাঁর ‘বাংলার মন্দির’ নিবন্ধমালাও সমকালীন পত্রিকায় (১৯৬৬-৬৭) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। কোনোটিই সেই সময় বই হিসেবে মুদ্রিত না-হওয়ায় হিতেশরঞ্জন পুরোগামীর মর্যাদা পাননি, অথচ স্থাপত্যশৈলী ও ভাস্কর্য নিয়ে তাঁর আলোচনা চল্লিশ বছর পরেও নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। (সম্প্রতি হিতেশরঞ্জনের অগ্রন্থিত আরও কয়েকটি লেখা-সহ বাংলার মন্দির কারিগর থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে, ইংরেজি লেখাগুলিও চার্বাক থেকে প্রকাশের পথে)। এ দিকে ১৯৬৫ থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ডেভিড ম্যাককাচ্চনের মন্দির বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। ডেভিড বিশেষ করে মন্দির-টেরাকোটার বৈচিত্রপূর্ণ সম্ভারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, একের-পর-এক লেখায় তুলে ধরেন টেরাকোটায় রূপায়িত নানা বিষয়। তাঁর বিখ্যাত বইটি অবশ্য অকাল-প্রয়াণের পর প্রকাশিত হয়, দ্য লেট মিডিভ্যাল টেম্পলস অব বেঙ্গল (১৯৭২)। এখানেই প্রথম স্থাপত্যশৈলীর বিচারে বাংলার মন্দিরের সূক্ষ্ম শ্রেণিবিভাগ করা হয়, এর তালিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ টেরাকোটা অলংকৃত মন্দিরগুলির হদিশও পাওয়া যায়। মন্দির-টেরাকোটা বিষয়ে তাঁর সম্ভবত শেষ বিশ্লেষণমূলক লেখাটিও (Style of Bengal Temple Terracottas : A Preliminary Analysis, South Asian Archaeology, 1973) অবশ্য প্রকাশিত হয় প্রয়াণের পরে। সেই লেখায় যেমন আছে তাঁর আগের লেখাগুলির সারাৎসার, তেমনই কিছু নতুন কথাও। কৃষ্ণলীলা বিষয়ক তাঁর একটি খুবই ভালো লেখা আছে, (The Krishnalila on the Temples of Bengal, Journal of the Indian Society of Oriental Art, NS 17, 1975-76) সেটি কখনো অনূদিত হলে আগ্রহীরা উপকৃত হবেন।

তারাপদ সাঁতরা মন্দির নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন সত্তরের দশকে, মন্দির-টেরাকোটার বিচিত্র বিষয়সম্ভার তাঁরও অন্যতম প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে। ডেভিড ছাড়া তিনিই কিন্তু এই বৈচিত্র্যের বহু দিক খুঁটিয়ে দেখে তথ্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। পুরাকীর্তি গ্রন্থমালা-য় হাওড়া ও মেদিনীপুর ছাড়া তাঁর পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় স্থাপত্য : মন্দির ও মসজিদ (১৯৯৬) বইটিতে মন্দির-টেরাকোটা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আছে, বিস্তারিত জানতে হলে অন্যদের মতো তাঁরও পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা লেখাগুলি খুঁজে বার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

শুধুমাত্র মন্দির-টেরাকোটা নিয়ে কয়েকটি বই পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত জুলেখা হক-এর গবেষণাগ্রন্থটি (Terracotta Decorations of Late Medieval Bengal/ Portrayal of a Society, Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka, 1980) মূলত থিসিসধর্মী, কিন্তু সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ই তিনি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। আছে প্রচুর ছবিও, যদিও তা সুমুদ্রিত নয়। বাংলাদেশের মন্দিরগুলি তাঁর বইয়ে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে নীহার ঘোষ-এর বইটি (Temple Art of late Medieval Bengal, Suchetana, 2006), তাতে বিষয়টিকে অনেক ব্যাপক প্রেক্ষিতে দেখার চেষ্টা আছে। সমস্যা একটাই, তাতে মূল বিষয়টি খানিকটা আড়ালে সরে যায়। নীহারবাবু মূল আলোচনার সঙ্গে এত বেশি অন্যান্য তথ্য দিয়েছেন বা অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়েছেন যা হয়তো খুব জরুরি ছিল না। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট বহু জ্ঞাতব্য তথ্যই তিনি সংকলন করেছেন। দিয়েছেন প্রচুর ছবিও। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে দিনাজপুরের বিখ্যাত কান্তজি মন্দিরের টেরাকোটা ভাস্কর্য নিয়ে অসামান্য একটি অ্যালবাম (Kantajee Temple/ An Outstanding Monument of late Medieval Bengal, M. M. Haque and Seema Haque, Unesco Dhaka, 2005), এবং Terracotta Temples of Bengal।

ডেভিডের মৃত্যুর পর তাঁর সংগৃহীত তথ্য এবং ছবির ঠাঁই হয়েছিল ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে। তা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর জর্জ মিশেল প্রকাশ করেন Brick Temples of Bengal From the Archives of David McCutchion (Princeton University Press, 1983)। বাংলার মন্দির-টেরাকোটার বিষয়বিন্যাস, মন্দিরগাত্রে বিভিন্ন বিষয়ের টেরাকোটার সংস্থাপনরীতি, অঞ্চল এবং কালভেদে টেরাকোটার শৈলী ও বিষয় পরিবর্তনের ইতিবৃত্ত, নির্মাণরীতি—ইত্যাদি বহু দিক থেকে সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। ডেভিডের ‘Late Mediaeval Temples’ নিবন্ধটির (Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1970) সম্পূর্ণ পুনর্মুদ্রণ ছাড়া এখানে রয়েছে তাঁর সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জর্জ মিশেলের কয়েকটি লেখা, জুলেখা হক ও তারাপদ সাঁতরার নিবন্ধ, এবং ডেভিডের তোলা কয়েক-শো ছবি।

পশ্চিমবঙ্গ প্রত্নতত্ত্ব অধিকার প্রকাশিত Pratna-Samiksha সঙ্কলনে প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শম্ভু মিত্রের তোলা মন্দির-টেরাকোটার ছবির একটি ইনডেক্স। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন কোন মন্দিরে কী কী বিষয়ের টেরাকোটা রয়েছে (অবশ্যই যেগুলি শম্ভুবাবুর দেখা) তার এই বিস্তারিত তালিকা অবশ্যই অনুসন্ধিৎসুদের কাজে লাগবে। শম্ভুবাবু অন্যান্য জেলার মন্দির-টেরাকোটারও বহু ছবি তুলেছেন। ছবিগুলি অংশত এখন সংরক্ষিত রয়েছে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজ-এ, বাকিগুলি তাঁর কাছেই রয়েছে।

গবেষণার এই পরিধি বিবেচনা করলে বোঝা যায়, মন্দির-টেরাকোটা নিয়ে কাজ প্রচুরই হয়েছে। কিন্তু বড়ো মাপের তথ্যায়ন বা বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা সবই প্রায় ইংরেজিতে, আর তার অধিকাংশই দুষ্প্রাপ্য বা দুর্মূল্য। সম্প্রতি আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার যে উৎসাহ বিভিন্ন জেলায় নজরে পড়ছে, তাতে বাংলায় এই গবেষণার ফসল সহজলভ্য করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় যাঁরা ইতিহাস-অনুসন্ধানে এগিয়ে আসছেন, তাঁদের পক্ষে উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে না, আর প্রস্তুতি ছাড়া, অথবা পরোক্ষ সূত্রের উপর নির্ভর করে কাজ করলে তা গুরুত্বহীন হয়ে থাকবে। এক-শো বছর আগে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের সে প্রয়োজন ছিল না, কারণ তার আগে এ নিয়ে গবেষণার ঝুলি ছিল শূন্য—অমিয়বাবুদের নিজেদের পথ নিজেদেরই খুঁজে নিতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে গবেষণা যতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে অজ্ঞ থেকে নতুন কাজে হাত দেওয়া পন্ডশ্রম মাত্র। তা ছাড়া, অনেক কাজ হলেও সব কথা বলা হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। নতুন ভাবনাচিন্তার সুযোগ অবশ্যই আছে, আর তার জন্যও দরকার আগে কী কাজ হয়েছে তা জেনে নেওয়া।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে প্রকাশিত হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ সংকলন (পশ্চিমবঙ্গের মন্দির-টেরাকোটা, ২০০৮)। ডেভিড ম্যাককাচ্চন সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা জাগানোর কাজকে গবেষণার থেকে কম গুরুত্ব দিতেন না, তাই খ্যাত-অখ্যাত লিটল ম্যাগাজিনকেও নতুন নতুন লেখা দিতে দ্বিধা করেননি। অর্থাৎ মূল ইংরেজি লেখা ছাপা হওয়ার আগেই তার বাংলা অনুবাদ ছাপা হয়ে যেত। তাঁর বেশ কয়েকটি লেখা এইভাবেই প্রথম ছাপা হয় বাংলায়। তেমন লেখা কয়েকটি এখানে সংকলন করা হয়েছে। প্রথম লেখাটি (পোড়ামাটি-মন্দির) সার্বিক ভূমিকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ ‘শিল্পরীতির ধারাবাহিকতা’ প্রবন্ধের প্রথম অংশে ছিল মন্দির-স্থাপত্যের প্রসঙ্গ, সেটি এখানে বাদ দেওয়া হয়েছে। হিতেশরঞ্জন সান্যালের লেখাটি (মন্দিরে স্থাপত্যালংকার) অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে সামগ্রিক পর্যালোচনা—বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ এখানে উঠে এসেছে। সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যাণ্ড ট্রেনিং প্রকাশিত হিতেশরঞ্জনের নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন-এ গ্রথিত তাঁর ‘পোড়ামাটির মূর্তিশিল্প’ নিবন্ধে শৈলীর প্রশ্নে বিস্তৃততর আলোচনা আছে। এ ছাড়া আর-এক ধরনের লেখার কেন্দ্রে আছে বিষয় ধরে ধরে আলোচনা—যার গোড়াপত্তন অমিয়বাবুর লেখায়—মন্দিরের দেওয়ালে সমাজের ছবিটা খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন তিনি। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রামায়ণ, দুর্গা, রাসলীলা-চৈতন্যলীলা, বাদ্যযন্ত্র, প্রতীকী নিদর্শন, এমনকী কুকুর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে গবেষকদের সন্ধানী দৃষ্টি। তবে মন্দিরগাত্রে মিথুন ফলক নিয়ে একটি বড়ো আলোচনা জরুরি ছিল—কারণ অমিয়বাবু লিখেছিলেন, এই ধরনের ফলক ওড়িশা-পরিমন্ডলের কাছেই বেশি, অথচ হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর বাদ দিলেও নদিয়া-বীরভূম-মুর্শিদাবাদে পর্যন্ত মিথুন ফলকের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে শ্রীলা বসুর বাংলা টেরাকোটা মন্দির/আখ্যান ও অলংকরণ (২০১৫)। অভ্র বসুর আলোকচিত্রের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে টেরাকোটা মন্দিরের নির্মাণশৈলী, মন্দিরে কৃষ্ণকথা, চৈতন্যকথা, রাসকথা, সমাজচিত্র ও পৌরাণিক প্রসঙ্গ।

বিভিন্ন সংগ্রহশালায় ছড়িয়ে থাকা মন্দির-টেরাকোটাগুলিকে একত্রে তালিকাবদ্ধ করার কোনো চেষ্টা এখনও হয়নি। ডেভিড বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কয়েকটি প্রাচীনতর ফলককে একটি হারিয়ে যাওয়া শৈলীর নিদর্শন বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন, হিতেশরঞ্জনও এই সংগ্রহের কিছু ফলকের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। পরিষদের টেরাকোটা সংগ্রহটির ফোটো-ডকুমেন্টেশন সম্প্রতি সম্পূর্ণ হয়েছে। ভারতীয় সংগ্রহশালার টেরাকোটা ফলকের সংগ্রহেরও একটি তালিকা মুদ্রিত হয়েছে Indian Museum Bulletin-এ। গুরুসদয় সংগ্রহশালা, আশুতোষ সংগ্রহশালা, রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালা, বিষ্ণুপুরের যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন বা হুগলি-রাজবলহাটের অমূল্য প্রত্নশালার মতো মূল্যবান সংগ্রহের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে ফেলতে পারলে টেরাকোটা-ভাস্কর্যের ইতিবৃত্তে হয়তো কিছু নতুন কথা যোগ করার সুযোগ থাকবে।

গত শতকের ষাট-সত্তরের দশকে মন্দির-টেরাকোটা বিষয়ে সামূহিক উদ্যোগে যে তথ্য-ছবি সংগৃহীত হয়েছিল, তার সামগ্রিক বিশ্লেষণ এখনও করা হয়নি। ডেভিড ম্যাককাচ্চনের ক্ষেত্রে অবশ্য জর্জ মিশেল অনেকখানি কাজ সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাপদ সাঁতরা ও হিতেশরঞ্জন সান্যালের সংগ্রহ ছড়িয়ে রয়েছে যথাক্রমে অমিয়বাবুর পরিবারে, সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যাণ্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়ায় ও সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে। তাঁদের দেখা মন্দিরগুলির অনেকগুলিই চিরকালের মতো হারিয়ে গেছে, অথবা তাদের টেরাকোটা ভাস্কর্য হয় অপসারিত নয় বিনষ্ট। এই অবস্থায় এই তথ্য ও ছবির ভান্ডার একত্র করে সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।

চোখের সামনে এই তথ্য-ছবি একত্র করতে পারলে অনেক পুরোনো কথাই হয়তো নতুন করে বিবেচনা করা যাবে। ডেভিড একটা ছক খুব সরলভাবে উপস্থাপিত করেছেন। খোদিত ইটের, পঙ্খ-পলেস্তারা আবৃত মন্দির নির্মাণের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল ত্রয়োদশ শতকের মুসলিম অভিযানে। ইসলামি স্থাপত্যে পুনর্জীবিত হল অতীত বাংলার টেরাকোটা-সজ্জা, অবশ্যই নবরূপে। ষোড়শ শতকের শেষে সুলতানি আমলের অবসানে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামি স্থাপত্যে অনলংকৃত বহিরঙ্গ সূচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীরা আশ্রয় নিলেন নবপর্যায়ের মন্দিরগাত্রে টেরাকোটা-সজ্জার সৃষ্টিকর্মে। এই ছক বুঝতে হলে রায়গঞ্জের কাছে বিন্দোলের ভৈরবী মন্দিরের মতো দু-একটি অন্তর্বর্তী পর্বের মন্দিরের অলংকরণ আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি, যে মন্দিরের স্থাপত্যের কথা অমিয়বাবু এবং ডেভিড আলোচনা করলেও তার অলংকরণ প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলেননি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাম্প্রতিক সংস্কারের পর ভৈরবী মন্দিরের মূল টেরাকোটা সজ্জা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনও টিকে থাকা সুলতানি আমলের স্থাপত্যে পঙ্খের ব্যবহার কিন্তু খুব কম নয়। সেখানে খোদিত ইটের উপর পঙ্খ-পলেস্তারা যেমন আছে, তেমনই আছে আলাদাভাবে পঙ্খ-অলংকরণ। পান্ডুয়ায় আদিনা মসজিদে কিবলা-প্রাচীরের ভিতরের দেওয়ালে সব ক-টি খিলানের উপর যে খোদিত ইটের আলাদা আলাদা অপূর্ব নকশা আছে, তার উপর যে একদা পঙ্খ-পলেস্তারা ছিল তা এখনও বোঝা যায়। আবার আদিনাতেই বাদশাহ-কা-তখত-এর ভিতরের দেওয়ালেও চমৎকার পঙ্খ-অলংকরণ আছে। উত্তর দেওয়ালের টিকে থাকা দু-একটি খিলানের উপরেও আছে পঙ্খ-অলংকরণ। একলাখি সমাধিভবনে গম্বুজের ভিতরের দেওয়ালে পঙ্খ-অলংকরণ এখনও স্পষ্ট। গৌড়ের একাধিক সুলতানি স্থাপত্যে খোদিত ইটের উপর পঙ্খ-পলেস্তারার চিহ্ন পাওয়া যায়। সুলতানি আমলের স্থাপত্যে যে পঙ্খের কাজ হারিয়ে যায়নি, টেরাকোটা ভাস্কর্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার পঙ্খ-ঐতিহ্য রীতিমতো সজীব ছিল, সে-কথা কোথাও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়নি। ফলে অলোচনায় আসেনি এই দুইয়ের মধ্যে আদানপ্রদানের বৃত্তান্তও।

আবার বাংলার মন্দির-টেরাকোটা ভাস্কর্যের নিজস্ব চরিত্রটা ঠিক কী? হিতেশরঞ্জন যেমন বলেছেন, পশ্চিম এশীয় বিন্যাস-রীতির সূত্র ধরে স্থানীয় শিল্পীরা ডিজাইন মিলিয়ে দিয়েছেন স্থাপত্যের লৌকিক রূপের সঙ্গে, তাই, না অন্য কিছু? ইসলামি স্থাপত্য অলংকরণে ভারতীয় মার্গীয় স্থাপত্যালংকার তাঁদের প্রভাবিত করেছিল, কিন্তু মার্গীয় শিল্পরীতির সঙ্গে তাঁদের কাজের মৌলিক পার্থক্যের দিকটিও তো স্পষ্ট। সীমায়িত কৌম সমাজের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষক, কারো দৃষ্টিই প্রসারিত হতে পারেনি, লিখেছেন হিতেশরঞ্জন, ‘‘এই কারণে আঙ্গিকের পরাকাষ্ঠা সত্ত্বেও মন্দিরের মূর্তিসজ্জায় লোকশিল্পের নিদর্শনই থেকে গেছে। … উন্নততর শিল্পকলার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ঘটেনি।’’ লোকশিল্প ও মার্গীয় শিল্পকে অনুন্নত-উন্নত শ্রেণিতে বিভাজিত করা আর বোধ হয় সম্ভব নয়। লোকশিল্প অনেক বেশি ব্যাপ্ত, তার ধারাবাহিকতা কালাতিক্রমী, তার চরিত্র আবহমান। বরং মার্গীয় শিল্প অনেকটাই স্থান ও কালে সীমাবদ্ধ। তা ছাড়া বাংলার সূত্রধর শিল্পীরা তো এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন, তাঁদের শৈলীগত বৈচিত্র্য আহৃত হয়েছে পরিব্রাজনের সূত্রেই।

শুধু তাই নয়, সমসাময়িক বিভিন্ন মাধ্যমের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিচয়ও তো খুঁজে বার করা প্রয়োজন। সূত্রধরদের সম্বন্ধে বলা হয়, তাঁরা কাষ্ঠ-পাষাণ-মৃত্তিকা-চিত্র, চারটি মাধ্যমে দক্ষ ছিলেন। বাংলার দারুভাস্কর্য নিয়ে তারাপদ সাঁতরা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন (বাংলার কাঠের কাজ, সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যাণ্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া), কিন্তু মন্দির-টেরাকোটার সঙ্গে কাঠের কাজের সম্পর্ক বিশ্লেষিত হয়নি। আঠেরো-উনিশ শতকের কাঠের রথের যেসব প্যানেল আমরা দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ বইয়ের ছবিতে কিংবা গুরুসদয় সংগ্রহশালায় দেখতে পাই, তার সঙ্গে অবশ্যই সমসময়ের মন্দির-টেরাকোটা ফলকের আদানপ্রদানের সম্পর্ক ছিল। পাল-সেন পর্বের পাথরের ভাস্কর্য বা স্থাপত্যাংশের সঙ্গে যেমন সেই পর্বের কাঠের কাজের নিদর্শন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। নবপর্যায়ের মন্দির নির্মাণের সমসময়ের পাথরের ভাস্কর্যের কথাই-বা আমরা কতটুকু জানি? সপ্তদশ শতক এবং তার পরবর্তী কালের মন্দিরে মন্দিরে যেসব পাথরের বিগ্রহ আছে, সেগুলি নিয়েও তো আলোচনা হয়নি। চিত্রকলা সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। আবার যেটির কথা বিশেষ উল্লেখ করা হয় না, সেই ধাতুভাস্কর্যের বিষয়টিও কিন্তু লক্ষণীয়। সতেরো থেকে উনিশ শতকে বাংলার ঘরে ঘরে দেব-দেবীর যে ধাতুমূর্তি পূজিত হয়েছে, তার নান্দনিক চরিত্র নিয়ে আলোচনা কোথায়? পাল-সেন অর্থাৎ মার্গীয় শিল্পরীতিতে নির্মিত মূর্তিকলার পাশাপাশি এইসব মূর্তি এখনও ‘ফোক ব্রোঞ্জ’ অভিধায় তাত্ত্বিক মহলে তুলনায় অবহেলিত। অথচ এর সঙ্গে মন্দির-টেরাকোটার বিভিন্ন নিদর্শনের শৈলীগত সাযুজ্য সহজেই চোখে পড়ে। শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এই পৃষ্ঠপোষকরা টেরাকোটা সজ্জার বিষয়বস্তু নির্বাচনে কতটা ভূমিকা নিতেন? একই সূত্রধরগোষ্ঠীর গড়া বিভিন্ন মন্দিরে, বা একই প্রতিষ্ঠাতা-পরিবারের নানা মন্দিরের টেরাকোটার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান সাপেক্ষ। বিভিন্ন কালপর্বে ও ভৌগোলিক অবস্থানে এই শিল্পের ক্রমপরিবর্তন, উনিশ শতক থেকে তার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া—এই সবকিছু নিয়েই অনেক নতুন চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে।

* বর্তমান প্রবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গের মন্দির-টেরাকোটা (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ২০০৮) গ্রন্থের ভূমিকা-র পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত রূপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *