বাংলাভাষা পরিচয় – ১৫

১৫

বাংলায় নির্দেশকশব্দরূপে প্রধানত ব্যবহৃত হয় : টি টা খানি খানা। ইংরেজিতে এর প্রতিরূপ the। ইংরেজিতে the বসে শব্দের পূর্বে, বাংলায় নির্দেশক শব্দ বসে শব্দের পরে, বস্তুবাচক বা জীববাচক শব্দের অনুষঙ্গে। যা বস্তু বা জীব-বাচক নয় স্থানবিশেষে তার সঙ্গেও যোগ হয়, যেমন : বেশি লজ্জাটা ভালো নয়, ওর হাসিটা বড়ো মিষ্টি। এখানে লজ্জা ও হাসিকে বস্তুর মতোই কল্পনা করে নেওয়া হয়েছে।

এক দুই তিন শব্দ সংখ্যাবাচক। ওদের সঙ্গে প্রায় নিত্যযোগ টি ও টা’র। ইংরেজিতে এ দস্তুর নেই। বাংলায় সংখ্যাবাচক শব্দ যখন সমাসে বাঁধা পড়ে তখন তাদের টি টা পড়ে খ’সে, যেমন : দশসের আটহাত পাঁচমিশলি। তা ছাড়া “জন’ শব্দের সংযোগে টি টা চলে না। “একটি জন’ বলি নে, “একটি মানুষ’ বলেই থাকি।

আরও কয়েকটি নির্দেশক শব্দ আছে, যেমন : টু টুক্‌ টুকু গোছা গাছি। তেল জল ধুলো কাদা প্রভৃতি অনির্দিষ্ট-আকার-বাচক শব্দে সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার চলে না। “একটা তেল’ “একটি ধুলো’ বলি নে, কিন্তু “একটু তেল’ “একটু ধুলো’ বলেই থাকি। “অনেকটা জল’ “অনেকটা ময়দা’ বলে থাকি কিন্তু “অনেকটি’ মাটি বা দুধ বলা চলে না। কেননা টা শব্দে ব্যাপকতা বোঝায়, টি শব্দে বোঝায় খণ্ডতা।

টু টুক্‌ টুকু : স্বল্পতাসূচক। সজীব পদার্থে এর ব্যবহার নেই। ছোটো গাধার বাচ্ছাকেও কেউ “গাধাটুকু’ বলবে না, পরিহাস ক’রে “মানুষটুকু’ বলা চলে।

সরু লম্বা জিনিসের সঙ্গে “গাছি’ “গাছা’র ব্যবহার : দড়িগাছা বেতগাছা হারগাছা। দুই-একটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে, যেমন “চুড়িগাছি’। লম্বায়-ছোটো জিনিসে চলে না; “গোঁফগাছি’ কিছুতেই নয়। টুকু চলে ছোটো জিনিসে, কিন্তু গড়নওয়ালা জিনিসে নয়। “চুনটুকু’ হয়, “পদ্মটুকু’ হয় না; “আংটিটুকু’ হয় না, “পশমটুকু’ হয়। সন্নাসীঠাকুরের “রাগটুকু’ প্রভৃতি অবস্তুবাচক শব্দেও চলে। “একটুক’ হয়, কিন্তু “দুটুকু’ তিনটুকু’ হয় না। “ঐটুক্‌’ শব্দের সঙ্গে “খানি’ জোড়া যায়, “খানা’ যায় না; “একটুখানি’, কিন্তু “একটুখানা ‘ নয়। জীববাচক শব্দে খাটে না; “একটুক জীব’ নেই কোথাও।

আরও কয়েকটি নির্দেশক পদ আছে যা শব্দের পূর্বে বসে। তারা সর্বনাম জাতের, যেমন : সেই এই ঐ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *