বাংলাদেশ ২

বাংলাদেশ ২

আজ বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের শাস্তির দাবীতে লং মার্চ ডাকছে এক পাল মুখ আর এক পাল খুনী।

ঠিক এরাই অথবা এদের বাপ দাদারা ২০ বছর আগে একই রকম লং মার্চ ডেকেছিল আমার শাস্তির দাবিতে, সারা দেশ থেকে লোক এসেছিল মানিকমিয়া এভি ন্যতে, তিন লক্ষ লোকের সভা। কী চাই? তসলিমার ফাঁসি চাই। তসলিমা নাস্তিক। ওর ফাঁসি না হলে ইসলাম বাঁচবে না। দেশ জুড়ে কী ভীষণ তাণ্ডব চালিয়েছিল এরা। আর এদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসা চরম এক মূর্খ মহিলা। মুখদের কলে দেশ পড়লে এ-ই হয়, যা হয়েছে আজ দেশ।

বেশির ভাগ শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী বিদ্বজ্জন তখন কী করেছেন? দূর থেকে দেখেছেন আমার ওপর আক্রমণ হচ্ছে। হয় মুখ বুজে থেকেছেন নয়তো বলেছেন, এসব তসলিমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

সারাদেশের ধর্মান্ধরা আমাকে জবাই করতে আসছে আমার লেখা পছন্দ হয় না বলে। আর এ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার? গুণীজনদের বক্তব্য, দেশে কোনও মৌলবাদী নেই। আমি নাকি ইচ্ছে করেই ঝামেলা পাকিয়েছি। আমার ঝামেলা আমাকেই সামলাতে হবে, সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না।

এই ধর্মান্ধদের দুধ কলাখাইয়ে বড় করেছে দেশের ধুরন্ধর রাজনীতিকরা। কাউকে কাউকে তো সংসদ সদস্য, এমনকী মন্ত্রীও বানিয়েছিল। আমি ইসলাম ধ্বংস করে ফেলেছি অথবা ফেলবো, ঠিক এরকম একটা অবস্থায় নাকি ছিল ইসলাম। এক গরিব দেশের এক নিরীহ গোবেচারা মেয়ে, ডাক্তারি করে, আর মাঝে মাঝে লেখালেখি করে, সে নাকি ১৪০০ বছর ধরে টিকে থাকা কোটি কোটি লোকের অন্ধত্বকে কলমের একটা খোঁচা মেরে দূর করে দিয়েছে! এই ক্ষমতাটা যদি সত্যিই আমার থাকতো, আমার চেয়ে সুখী কেউ হতো না।

আমার বিরুদ্ধে বিরাট বিরাট মিছিল, লং মার্চ, সভা, হরতাল নির্বিঘ্নে হয়েছে। না বাধা দিয়েছে সরকার, না আপত্তি করেছে বুদ্ধিজীবীরা। সেদিন যদি একশটা লোকও আমার পক্ষে মুখ খুলতে, আমার পাশে দাঁড়াতো, আমাকে নির্বাসনদণ্ড দিতে পারতো না সরকার।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছি। এখন নাস্তিক ব্লগারদের ধরে ধরে জবাই করছে। ধর্মের খুনীরা। বুদ্ধিজীবীরা কি ওদের নাস্তিকতা অস্বীকার করে বলবেন তওবা তওবা ওরা নাস্তিক নয়, নাকি সেই আগের মতো বলবেন, এসব নাস্তিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, ওদের ঝামেলা ওরাই সামলাক! ইতিহাস থেকে যদি শিক্ষা নিতে হয়, এখনই সময়। বুদ্ধিজীবীদের স্বার্থপরতা, ঈর্ষার শিকার আমি হয়েছি। মুক্তচিন্তক এই তরুণ ব্লগারদের যেন না হতে হয়। আজ দেশের মানুষের মুখ বুজে থাকা অথবা ধর্মব্যবসায়ীদের লম্ফঝম্ফের দোষ নাস্তিকদের দেওয়া মানে দেশের একশ বছর পেছনে ঠেলে দেওয়া। আমাকে তাড়িয়ে যেমন দেশকে একশ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়নি? না হলে আশির দশকে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ধর্মের এবং মুহম্মদের অবাধ সমালোচনা করে যে লেখাগুলো আমি লিখেছি, তাতে এক নদী জল মিশিয়ে তরল করলেও আজ সেসব লেখা ছাপানোর কল্পনা অবধি কেউ করতে পারে না কেন? ধর্মের সমালোচনা না করে তুমি সভ্য হতে চাও? এই বিজ্ঞানের যুগে ধর্মের মতো আজগুবি রূপকথাকে সত্য বলে মেনে, স্বঘোষিত সব ঠগবাজ পয়গম্বরকে পথ প্রদর্শক বলে মেনে তুমি কচু সভ্য হবে। তোমার সভ্য হওয়া চুলোয় যাক, ইসলা মের আসল চেহারা চোখ খুলে যারা দেখতে পেয়েছে, যারা বেরিয়ে এসেছে, সেই আলোকিত তরুণ তরুণীদের গায়ে যদি আঁচড় লাগে আজ, এর দায় ওই চোখ বন্ধ করে রাখা অন্ধদের চেয়েও বেশি সব বুঝেও না বোঝার ভান করা বুদ্ধিজীবীদের, অদূরদর্শী রাজনীতিকদের আর ক্ষমতার আসনে বসা এক পাল মুই যেন কী হনুরে দের।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *