বলশেভিক বিপ্লব এবং ইহুদি ষড়যন্ত্র
বলশেভিক বিপ্লবের ভয়াবহ ইতিহাস অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। গুম, হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ ও দুর্ভিক্ষে পুরো রাশিয়া ছেয়ে গিয়েছিল। এই বিপ্লব নিয়ে ইহুদিরা যখন কাপুরুষের মতো দুমুখো নীতি অনুসরণ করে, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। এই বিপ্লব যে তারাই ঘটিয়েছে, তা তাদের গণমাধ্যম বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। অথচ নিজেদের মাঝে-ই আবার গর্ব করে বলে—
‘আমরা বলশেভিক করেছি এবং আমরাই সোভিয়েতের জন্ম দিয়েছি।’
এই বিপ্লব যে ইহুদিদের দ্বারা সংগঠিত হয়নি, তা প্রমাণ করতে তাদের গণমাধ্যম হাস্যকরভাবে দুটো খড়কুটোকে সামনে আনে। তারা বলে—’যে মহান দুই নেতার হাত ধরে (লেনিন ও ক্রান্সস্কি) এই বিপ্লব শেষ পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে, তাদের কেউ-ই তো ইহুদি নয়।’ এটাও হাস্যকর যে তারা বাছাই করে মাত্র দুজন ব্যক্তির নাম প্রচার করে। কিন্তু পুরো আন্দোলনে যে ইহুদিদের অসংখ্য সদস্য জড়িত ছিল, তাদের নাম কখনো প্রকাশ করা হয় না।
বিপ্লবের সূত্রপাত মূলত কারেনস্কির হাত ধরে। তার বাবার নাম Adler। ধর্ম পরিচয়ে তার বাবা-মা উভয়-ই ছিলেন ইহুদি। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা রাশিয়ান এক নাগরিককে বিয়ে করেন, যার নাম ছিল Kerensky। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও খুব দ্রুতই তিনি রাজনীতির মাঠে জড়িয়ে পড়েন।
তবে এই বিপ্লব পরিকল্পনার মূল কারিগর ছিলেন লেনিন, যাকে ইহুদি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে জ্যান্টাইল বলে প্রচার করা হয়। আর ট্রটস্কিকে নিয়ে তো কোনো আলোচনাই করা হয় না। তার আসল নাম Braunstein। শুরুর দিকে তিনি মেইনশেভিকের গোঁড়া সমর্থক /হলেও শেষের দিকে বলশেভিকে যোগদান করেন। গণমাধ্যমে বলা হয়, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুব একটা ধার্মিক ছিলেন না, তাই তার নামের সাথে ইহুদি শব্দটি জড়ানো উচিত নয়।
তা-ই যদি হয়, তাহলে বিপ্লবের নামে রাশিয়ার গির্জাগুলোকে কেন কসাইখানা করা হলো? অনেকগুলোকে তো ঘোড়ার আস্তাবলে রূপান্তর করা হয়েছিল! কেন সেখানে প্রার্থনার পরিবর্তে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়েছে? কেন খ্রিষ্টান পাদরিদের দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ করানো হয়েছে? কেন তাদের রাবাইগণ খ্রিষ্টান ছাত্রদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষার নামে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে?
তিনি কতটা ধার্মিক, তা এখানে মুখ্য বিষয় নয়। কারণ, ছেলেবেলায় তিনি যে শিক্ষা পেয়েছেন, তা-ই তার কাজে প্রকাশ পেয়েছে। খুব ধার্মিক হলেই যে একজন ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক হবে, তা নয়। আবার ন্যূনতম ধর্ম জ্ঞান না রেখেও একজন ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক হতে পারে।
১৯১৭ সালের শুরু থেকে জার সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসের বিরুদ্ধে রাশিয়ানদের আন্দোলন ঘনীভূত হতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়, আহত ও নিহত সৈন্যদের দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি, চলমান খাদ্য সংকট, স্বল্প মজুরি, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য ইত্যাদি নানা কারণে এই আন্দোলনটির সূত্রপাত হয়।
রাজা নিকোলাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এই জনগোষ্ঠীটি আমাদের নিকট প্রলেতারিয়েট নামে পরিচিত। তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে শুরু করলে নিকোলাস সামরিক বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। কিছু অফিসার গুলি চালালেও অধিকাংশ অফিসার তা থেকে বিরত থাকে। ফলে অল্পসংখ্যক আন্দোলনকারীর প্রাণনাশের মধ্য দিয়ে পুরো আন্দোলন সফল হয়। এরপর রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে সামরিক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এর সমাপ্তি ঘটে রাজা নিকোলাস এবং তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
এরপর ক্ষমতায় আসে পেট্রোগার্ড সোভিয়েত ও দ্যা প্রোভিশনাল গভর্নমেন্ট। কিন্তু দ্রুতই দ্যা প্রোভিশনাল গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। কারণ, তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতোমধ্যে সেই যুদ্ধে রাশিয়ার লাখো সৈন্য মারা যায়; যাদের অধিকাংশ ছিল গরিব কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। তা ছাড়া যুদ্ধে যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সামরিক প্রশিক্ষণও তাদের ছিল না। এমনই এক মুহূর্তে ভ্লাদিমির লেনিন এবং তার অনুসারীগণ কমিউনিস্ট পার্টি অব রাশিয়া প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব সোভিয়েত ইউনিয়নে নামান্তরিত হয়। খাদ্য, শান্তি ও সামাজিক নিরাপত্তাকে পুঁজি করে দলটি আন্দোলন জোরদার করতে শুরু করে। অক্টোবর মাস থেকে পুনরায় রাশিয়াজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, যার শেষ হয় প্রোভিশনাল গভর্নমেন্টের পতনের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতায় এসে লেনিন জার্মানির সাথে শান্তিচুক্তি করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়ার বিদায় নিশ্চিত করে, কিন্তু ১৯১৮ সালে লেনিন পরিচালিত সোভিয়েত সরকারের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। এর মোকাবিলায় লেনিন-ট্রটস্কিরা প্রতিষ্ঠা করে রেড আর্মি।
নিকোলাসের সৈন্যবাহিনী কেন প্রলেতারিয়েটদের ওপর গুলি চালায়নি? কেন তারা এত সহজে বলশেভিকদের ক্ষমতা দখল করতে দিলো? সত্যি বলতে, রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী ততদিনে ইহুদিদের দখলে চলে গিয়েছিল। তারা চেয়েছিল এই আন্দোলনে প্রলেতারিয়েটরা সফল হোক। কারণ, এদের তো তারাই জন্ম দিয়েছে। শুধু সেনাবাহিনী নয়, রাশিয়ার সব উচ্চপদস্থ মন্ত্রণালয় তখন তাদের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হতো। নিচে একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দেওয়া হলো :
মন্ত্রণালয়ের নাম | আসন সংখ্যা | ইহুদি সদস্য সংখ্যা | ইহুদিদের শতকরা হার |
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় | ২২ | ১৭ | ৭৭.২০% |
সামরিক মন্ত্রণালয় | ৪৩ | ৩৩ | ৭৬.৭% |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৬ | ১৩ | ৮১.২% |
অর্থ মন্ত্রণালয় | ৩০ | ২৪ | ৮০.০% |
বিচার মন্ত্রণালয় | ২১ | ২০ | ৯৫.২% |
জন-যোগাযোগ মন্ত্রণালয় | ৫৩ | ৪২ | ৭৯.২% |
সমাজ-যোগাযোগ মন্ত্রণালয় | ৬ | ৬ | ১০০.০% |
শ্রম মন্ত্রণালয় | ৮ | ৭ | ৮৭.৫% |
বার্লিন, ভিয়েনা, কোপেনহেগেন ও বোচারেস্টে বলশেভিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন | ৮ | ৮ | ১০০.০% |
রাজ্য ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় | ২৩ | ২১ | ৯১.৩% |
সাংবাদিকতা মন্ত্রণালয় | ৪১ | ৪১ | ১০০.০% |
মনে আছে, সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে Baron Montefiore কি বলেছিলেন?
‘সব কাজই ব্যর্থ হবে, যদি না গণমাধ্যম আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
এবার ওপরে দেখুন। সাংবাদিকতা মন্ত্রণালয় পুরোটা তাদের নিয়ন্ত্রণে। শুধু তা-ই নয়, ছকটিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে—এমন কোনো মন্ত্রণালয় নেই, যেখানে ইহুদিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার আসনে নেই। ‘প্রলেতারিয়েটদের ক্ষমতা অর্জন’ বিষয়টি শুধু মুখেই রয়ে গেল। তারা শোষণ-বঞ্চনা থেকে বেরিয়ে আসার যে স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, তা অন্ধকারে চলে গেল। অবস্থা পূর্বের মতোই রয়ে গেল।
যে কিছু পদ জ্যান্টাইলদের হাতে ছিল, তাদের ইহুদি বলে ডাকতে কোনো সমস্যা নেই! কারণ, তারা লেনিনের গোলাম হয়েই পদগুলোতে বসেছিল। তারা সবাই ইডিশ ভাষা জানে।
তাদের সন্তানেরাও হিব্রু বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করত। ইডিশ মূলত জার্মান থেকে জন্ম নেওয়া নতুন এক ভাষা। তবে তাদের হাজার বছরের পুরোনো পরিকল্পনাগুলো হিব্রু ভাষায় রচিত। ইহুদিদের সব গোপন তথ্যের আদান-প্রদান এই ভাষাতেই হয়। তাই এই ভাষা জানা ইহুদিদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।
যখন জিজ্ঞাসা করা হয়—রাশিয়ার জ্যান্টাইল সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে? জবাবে তারা বলে—
‘আমরা তাদের যৌন শিক্ষা দেবো। যৌনতা সম্পর্কে সকল সংকোচ দূর করে এর প্রতি তাদের আগ্রহী করে তুলব।’
তাদের যৌন শিক্ষার ধরন কতটা নোংরা, তা এখানে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সোভিয়েত সরকার হাঙ্গেরি দখলের পর সেখানে তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো ইহুদিকে হত্যা করা হয়। রক্তাক্ত এ ঘটনাটি ইহুদিদের কাছে ‘White Terror’ নামে পরিচিত।
মূলত এই ঘটনা ছিল ইহুদি নেতা Bela Kun-এর বিরুদ্ধে হাঙ্গেরির সাধারণ জনগণের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। কারণ, সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার পর সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় যৌনতার নোংরা বিষয়গুলো প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তকে যৌনতা সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা জ্যান্টাইল সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা অভিভাবকগণ মেনে নিতে পারেনি।
রাশিয়া-হাঙ্গেরির মতো বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থাতেও অপ্রয়োজনীয় ও অনৈতিক অনেক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যদিও তা নিয়ে আজ আর কোনো প্রতিবাদ করা হয় না। মনে রাখতে হবে, খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ কখনো ইহুদির হাতে রক্ষা পেতে পারে না। আজকের তরুণসমাজের নৈতিকতার অবক্ষয়ের বড়ো কারণ ইহুদিদের ষড়যন্ত্রমূলক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাদের গণমাধ্যমে বলা হয়-
‘আমরা আজ পর্যন্ত যতসব নিপীড়ন সহ্য করেছি, তার প্রতিশোধ হিসেবে সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা করেছি।’
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাদের প্রটোকলে উল্লেখিত কয়েকটি ধারা নিচে উপস্থাপন করা হলো :
‘খোদা-ভীতি ও সৃষ্টিকর্তাকেন্দ্রিক ধর্মীয় বিশ্বাস মুছে দিতে আমরা জ্যান্টাইলদের হৃদয়ে গণিত ও যুক্তিবিদ্যার ধারণা ঢুকিয়ে দেবো। তাদের আকৃষ্ট করে তুলব বস্তুবাদী পৃথিবীর প্রতি।
নাস্তিক জাতিতে পরিণত হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট কোনো শাসনব্যবস্থায় তাদের আর বিশ্বাস থাকবে না। রাষ্ট্রীয় শাসন হয়ে যাবে জনগণের সম্পত্তি, যা থেকে আমরা ফায়দা লুটে নেব।’—৫ম প্রটোকল
‘বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার অধিপতি হওয়ার পর আমরা নিজেদের ধর্ম প্রচার শুরু করব। তার মূল বিষয় হবে—ঈশ্বর এক, আমরাই তাঁর একমাত্র মনোনীত সম্প্রদায় এবং পুরো বিশ্বের ভাগ্য আমাদের ভাগ্যের সাথে জড়িত। ফলে ইহুদি ধর্ম ব্যতীত পৃথিবীর সব ধর্ম ধ্বংস হবে এবং সবাই আমাদের ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করবে। এর মধ্যে যদি কোনো গোঁড়া নাস্তিকের জন্ম হয়, তবে সে আমাদের জন্য হুমকির কারণ হবে না।’ -১৪তম প্রটোকল
বলশেভিক নেতা ট্রটস্কি তো নিজেকে নাস্তিক বলেই দাবি করেছিল! রাশিয়ার জনগণ যখন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের কথা স্মরণ করছিল, তখন হিংস্র সৈনিকরা তাদের চেঁচিয়ে বলত—’খোদা বলতে কিছু নেই, আমরা তার মৃত্যু ঘটিয়েছি।’ ফিলাডেলফিয়ার একজন মুখপাত্র Miss Katherine Dokoochief এই বিপ্লব প্রসঙ্গে তার পত্রিকায় লিখেন—
‘বলশেভিক বিপ্লবে ইহুদিরা রাশিয়ার গির্জাগুলো যেভাবে ধ্বংস করেছে, সে তুলনায় ইহুদিদের সিনাগগগুলোর ন্যূনতম ক্ষতিও করেনি।’
জন্ম থেকেই মানুষ কারও না কারও ওপর নির্ভরশীল। তার শেষ আশ্রয় হলো ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা, যা অবচেতন মনে মানুষের চিন্তা-চেতনায় জায়গা করে নেয়। মানুষের ধর্মীয় চেতনা যখন লোপ পায়, তখন তার আশ্রয় বলতে আর কিছুই থাকে না। সে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। আর এ কারণেই বর্তমান পৃথিবী এমন এক বলয়ে রূপ নিয়েছে, যেখানে পারস্পরিক শান্তি ও ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। সব যেন ভোগ আর ধ্বংসের রাজত্ব। কারণ, তারা বিশ্বাস করে—অপরাধ বলতে পৃথিবিতে কোনো কিছু নেই। কে তার বিচার করবে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনা লক্ষ করলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা যে যার মতো করে শান্তিচুক্তির ধারা বানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তাদের চেহারা, মন ও কথা বলার ভঙ্গিমায় আত্মবিশ্বাসের কোনো ছাপ নেই। তারা যা বলছে, তার প্রতি অন্য কেউ ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত করছে না। তারা জানে না—আদৌ তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হবে কি না। এ প্রসঙ্গে আরও কিছু অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হলো—
‘যতদিন না জ্যান্টাইলরা আমাদের অর্থ ও ক্ষমতার মাঝে নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নেবে, ততদিন পর্যন্ত ক্ষুধা, দরিদ্রতা, পারস্পরিক শত্রুতা, মতবিরোধ, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদিতে তাদের আবদ্ধ করে রাখব।’ —১০ম প্রটোকল
‘একসময় তারা বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার মূল চাবি আমাদের হাতে তুলে দেবে। আর এ সুযোগে আমরা নিজেদের বিশ্ব অধিপতি করে তুলব।
আমরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেবো, যা তাদের এতটা দুর্বল করবে যে, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলবে।’ —৫ম প্রটোকল
এই বলশেভিক বিপ্লব ইজরাইল প্রতিষ্ঠার পথ অনেক সহজ করে দেয়। এই বিপ্লবের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হলেন Dr. George A. Simons। বিপ্লব চলাকালে যিনি পেট্রোগার্ড গির্জার পাদরি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তা ছাড়া ট্রটস্কিকে যখন বিচারের সম্মুখীন করা হয়, সেখানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন—
‘Trotsky-Bronstein-এর বিচার অনুষ্ঠানে অনেক বিক্ষোভকারীর সমাগম হয়। তাদের অধিকাংশই ছিল পূর্ব নিউইয়র্কের অধিবাসী। একটি বিষয় আমাকে অবাক করে, তা হলো—উপস্থিত সদস্যদের অধিকাংশই ছিল ইডিশভাষী, যাদের বলশেভিক বিপ্লবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল। বিচার অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ অংশ ইডিশ ভাষায় সম্পন্ন হয়।’
Senator Nelson জিজ্ঞেস করলেন—’সেখানে কি হিব্রুভাষী কেউ ছিল?’
Dr. Simons বললেন—’সেখানে হিব্রুভাষী এবং ধর্মত্যাগী অনেক ইহুদি ছিল। তাদের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সেখানে ইডিশভাষীদের সংখ্যাই বেশি ছিল।’
বলশেভিকরা যখন ক্ষমতায় আসে, তখন পেট্রোগার্ডসহ রাশিয়ার চারদিকে ইডিশ ভাষার প্রভাব বাড়তে শুরু করে; এমনকী রাশিয়ার গির্জাগুলোও এর হাত থেকে রেহাই পায়নি। ইডিশ ভাষার প্রভাব এতটাই বেড়ে যায়, বর্তমানে এটিকে রাশিয়ার জাতীয় ভাষা বললেও ভুল হবে না।
William Chapin Huntington আমেরিকার বাণিজ্যদূত হিসেবে রাশিয়ায় নিযুক্ত ছিলেন। তার প্রশাসনিক দূতাবাস ছিল পেট্রোগার্ডে। তিনি বলেন—
‘যেসব নেতা-কর্মীর হাত ধরে বলশেভিক বিপ্লব সফলতা পায়, তাদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিল ইহুদি। তারা রাশিয়ার কোনো জাতীয় উদ্দেশ্যে বিশ্বাসী নয়। বিশ্বজুড়ে নিজেদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল ইহুদিদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’
William W. Welch বিপ্লব চলাকালে National City Bank-এর কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি নিজের মতামত উল্লেখ করেন—
‘এই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ নেতা-কর্মী হলেন ইহুদি। তাদের মধ্যে কিছু ছিল যারা প্রকৃত রাশিয়ান। তাদের জন্ম ও বেড়ে উঠা সবই হয়েছে রাশিয়াতে।’
এই বিপ্লব যখন সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে, তখন আমেরিকান ইহুদিরা নিউইয়র্কের রাস্তায় আনন্দ মিছিল করতে করতে বেরিয়ে আসে। যেকোনো জনসমাবেশ, সাক্ষাৎকার, সংবাদ ও কলামে এই বিপ্লবের ব্যাপক প্রশংসা শুরু হয়, কিন্তু কিছুদিন পর তারাই আবার এই বিপ্লবকে নিন্দার সাথে প্রত্যাখ্যান করে। ইহুদিদের প্রতিষ্ঠানগুলো জোরেশোরে প্রচারণা চালায়, এই বিপ্লবের জন্যই নাকি রাশিয়ান ইহুদিদের কপালে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
অথচ পরবর্তী সময় ইহুদিদের সেসব সৈন্যদের আমেরিকার শহরগুলোতে স্বর্ণের সিগারেট বাক্স হাতে ঘুরতে দেখা যেত, যা একসময় সাধারণ রাশিয়ানদের সম্পদ ছিল। তাদের মহিলারা স্বর্ণের অলংকার পরে ঘুরে বেড়াত, যা হয়তো রাশিয়ান কোনো বাবা-মা তার মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছিল।
৩০ জুন, ১৯২০ আমেরিকার ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠান Jewish World-এর নবম পৃষ্ঠায় Mrs. Samuel Rush-এর স্বাক্ষরিত একটি কলাম প্রকাশ করা হয়, যার শিরোনাম ছিল, ‘Are We Really Ashamed of Trotsky?’ কলামটির উল্লেখ্যযোগ্য কিছু অংশ নিচে উপস্থাপন করা হলো :
‘ইদানীং আমি বেশ কিছু ইহুদি প্রতিষ্ঠানকে এই বলে বিলাপ করতে শুনছি যে, তাদের নাকি মৌলবাদী-সন্ত্রাসী বলে বিভিন্ন জায়গায় নিন্দা করা হচ্ছে। এটা সত্য, জন্মসূত্রে আমরা অনেকেই মৌলবাদী প্রকৃতির। এবার নিজ জাতির ওপর মানুষের নিন্দায় কান না দিয়ে বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখুন। ট্রটস্কিকে কেন আমরা এভাবে ভাবছি না যে, তিনি একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ! আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র এবং একজন দূরদর্শী নেতা হওয়ার কারণে তিনি অবশ্যই আমাদের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। এখন কি আমাদের তার জন্য লজ্জিত হতে হবে?’
আসলে বলশেভিক বিপ্লব হলো ইজরাইল প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপে ছিল ১৯১৪ সালের বিশ্বযুদ্ধ। তবে জেরুজালেমকে পূর্ণ উপায়ে দখল করা এবং সেটিকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা যে অত সহজ হবে না, তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। এর মানে হলো—তারা একের পর এক অসংখ্য রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের জন্ম দিয়ে যাবে। জ্যান্টাইলরা যদি এ ব্যাপারে সতর্ক হতে না পারে, তবে তাদের সন্তানদের রক্তের বন্যায় সাঁতরে বেড়াতে হবে।
খবরের কাগজে বলশেভিক বিপ্লব
বলশেভিক বিপ্লবের নামে রাশিয়াতে যা ঘটেছে, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বহুকাল কোনো ধারণা ছিল না। আশপাশের দেশগুলোতে তখন এ নিয়ে সঠিক কোনো সংবাদ প্রচার করা হতো না। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সবাই একটি বিষয় অনুমান করতে পেরেছিল, সেখানে বড়ো ধরনের কোনো গণ-অভ্যুত্থান ঘটতে যাচ্ছে। কায়েমি-স্বার্থপর-বুর্জোয়া[২৬] সম্রাট নিকোলাস জারের অধীনে সেখানকার ইহুদিরা কীরূপ মানবেতর জীবনযাপন করছে, সে গল্প ইউরোপ-আমেরিকার পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত প্রকাশ করা হতো। তা ছাড়া স্বৈরতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের নিষ্পেষিত জীবন চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হতো। এসব নিয়মিত প্রোপাগান্ডার ফলে একসময় বিশ্ববাসীর মনে জার সম্রাটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মাতে শুরু করে। তারা সবাই মনে মনে এই বিপ্লবকে সমর্থন জানায়। জনসাধারণের মনে বিশ্বাস চেপে বসে—এই বিপ্লবের মাধ্যমে জার সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে এবং নিপীড়িত মানুষ অধিকার ফিরে পাবে।
একবার এক আমেরিকান অধ্যাপক ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রাশিয়া গমন করেন। বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর তিনি ছিলেন একজন সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক। অন্যান্যদের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন, সেখানকার ইহুদি ও শ্রমজীবী মানুষেরা নিপীড়িত জীবনযাপন করছে।
তিন বছর পর অল্প কিছুদিনের বিরতিতে তিনি দেশে আসেন এবং পুনরায় সেখানে গমন করেন। তবে দ্বিতীয়বার দেশে এসে বুঝতে পারেন, রাশিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এ দেশের পত্রিকাগুলোতে যা ছাপানো হচ্ছে—তা সবই মিথ্যা। তাই সাধারণ মানুষকে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা উচিত। তিনি এ বিষয়ের ওপর একটি আর্টিকেল রচনা করেন এবং তা প্রথম শ্রেণির একটি ম্যাগাজিনে প্রেরণ করেন। তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে ম্যাগাজিনটির এক উচ্চপদস্থ সম্পাদক তাকে ডেকে পাঠান। তিনি তথ্যের সত্যতা দেখে প্রচণ্ড অবাক হন, কিন্তু তারপরও তিনি এই আর্টিকেল ম্যাগাজিনে ছাপানো থেকে বিরত থাকেন।
এরপর আরও কিছু পত্রিকা ও ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানে এই আর্টিকেলটি পাঠানো হলেও তা কেউ-ই ছাপাতে রাজি হয়নি। সম্ভবত এ কারণে লেখকের প্রকৃত নাম আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমেরিকার তৎকালীন গণমাধ্যম জগতে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন রটেছিল বলে ঘটনাটি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
Mr. William Hard-এর হাত ধরে নিউইয়র্কের Metropolitan ম্যাগাজিন সর্বপ্রথম বিষয়টির ওপর আর্টিকেল প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ‘The Great Jewish Conspiracy’ । এর কিছু চুম্বক অংশ হলো—
‘ইহুদি বিতর্ক আজ শুধু ইউরোপে সীমাবদ্ধ নয়; ওয়াশিংটন-নিউইয়র্কসহ পৃথিবীর আরও অনেক অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়েছে।’
‘সমাজের সূক্ষ্ম-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা কেবল তাদের নিয়ে আলোচনার করার সামর্থ্য রাখে।’
‘ষড়যন্ত্র যতই গোপনীয় হোক না কেন, তার গোপনীয়তা চিরকাল রক্ষা করা সম্ভব নয়।’
কিছু মানুষ থাকবেই, যারা নিজেদের মস্তিষ্ক খাটিয়ে সব রহস্যের সমাধান করে ছাড়বে।
Mr. Hard আরও উল্লেখ করেন—
‘যে দুজন ব্যক্তির হাতে পুরো রাশিয়া জিম্মি হয়ে পড়েছে, তাদের নাম লেনিন ও ট্রটস্কি। তারা বলশেভিক দলের প্রধান দুই হর্তাকর্তা। ১৯১৭ সালে পেট্রোগার্ড সোভিয়েতের[২৭] সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নির্বাচিত হয়ে তারা দেশের ক্ষমতায় আসে। বছর না যেতেই তারা আবার নতুন বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম দেয়।’
‘বলশেভিকের মতো মেইনশেভিক দলটিও একই গোষ্ঠীর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হতো, যেমন : Leiber, Dan ও Martov। এই দুটি রাজনৈতিক দলের মাঝে তৃতীয় আরেকটি দল ছিল ‘দ্যা কেডেটস’। তারা ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বুর্জোয়া দল। পরবর্তী সময়ে এর সদরদপ্তর প্যারিসে স্থানান্তর করা হয় এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন Maksim Vinaver। এভাবে রাশিয়ার রাজনৈতিক পটভূমি তিনটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়, যার প্রতিটি-ই ছিল ইহুদিদের তৈরি করা সংগঠন।’
আর্টিকেলটিতে তিনি এমন অনেক প্রভাশালী ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ করেন, যারা সে সময় বিশ্ব রাজনীতির কলকাঠি নাড়ছিল। যেমন : Otto Hermann Kahn। আন্তর্জাতিক জোট ও মৈত্রী সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে তাকে প্রায় সময়ই লন্ডন ও প্যারিসে ভ্রমণ করতে দেখা যেত। তিনি ছিলেন জার্মান ধনকুবের এবং ব্রিটিশ-আমেরিকা মৈত্রী সম্পর্কের অন্যতম প্রবক্তা। রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক আলোচনাগুলোতেও তার নিয়মিত উপস্থিতি ছিল। জন্মসূত্রে জার্মান হলেও আমেরিকায় ছিলেন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। এরপর আসে Bela Kun। হাঙ্গেরিতে কীভাবে সোভিয়েত মতবাদ ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে দায়িত্ব পুরোটাই তার কাঁধে ছিল।
এরপর তিনি উল্লেখ করেন Rose, Pastor, Stokes, এবং Morris Hillquit-এর নাম, সে সময় আন্তর্জাতিক মহলে যারা একটি রক্ষণশীল নেটওয়ার্কের জন্ম দিয়েছিল। তিনি Eugene V. Debs ও Bill Haywood নামে দুজন জ্যান্টাইল ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ করেন, যারা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে ইহুদিদের এজেন্ট হিসেবে বিশ্বজুড়ে কাজ করত।
১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর জার্মানি, ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা Armistice Day নামে পরিচিত। এর কিছুদিন পরেই The Liberal Middle নামে আরও এক নতুন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, যার মূলে ছিল Mr. Justice Brandeis, Judge Mack ও Felix Frankfurter-সহ আরও অনেকে। সে সময় Baron Gunzberg ছিল আমেরিকায় নিযুক্ত রশিয়ান রাষ্ট্রদূত Boris Bakhmetev-এর বিশ্বস্ত কর্মচারী। তিনি Mr. Bakhmetev-এর প্রতিনিধি হয়ে রাশিয়ার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করতেন। এক্ষেত্রে A. J. Sack সম্পাদকীয় নানা কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, যে নরঘাতক বলশেভিক নেতা-কর্মীদের হাতে লাখ লাখ নিরপরাধ রাশিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছে, আজ তাদেরই মহান নেতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বছরান্তে তাদের নামে উৎসব ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তাদের ছবি বুকে ও মাথায় করে মহাবিপ্লবের ডাকে ফেটে পড়ি। তারা যেন তরুণ সমাজের জীবনাদর্শ।
মানুষ যদি জানত, বলশেভিক বিপ্লবের নামে তারা রাশিয়াতে কী নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে, তবে তারা হয়তো ঘৃণায় ও অপমানে মাটিতে মিশে যেত। সবাই আশা করেছিল, সোভিয়েত সরকার ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের জীবনে আনন্দ ফিরে আসবে। শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি পাবে। অন্তত আর কাউকে অনাহারে মরতে হবে না।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল—লেনিন নিকোলাসের চেয়েও জালিম সরকার। পিঁপড়ার ওপর হাতির পা পড়লে যেমনটা হয়, তাদের অবস্থা তখন তেমনই হলো। চারদিকে আবারও বিদ্রোহ শুরু হলো। সাধারণ মানুষ লাঠিয়াল বাহিনীতে রূপ নিল। তাদের দমনে গঠন করা হলো রেড আর্মি। সাধারণ মানুষ যেকোনো সময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে, তা তারা ভালোভাবেই আঁচ করতে পেরেছিল। তাই তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্যত্র সরে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন না রেড আর্মি পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে, ততদিন তারা বাহিরের নিরাপদ রাষ্ট্রগুলোতে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে সময় কিশনেভ থেকে আমেরিকার নর্থ ডাকোটাতে পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে গণমাধ্যমে হইচই পড়ে গিয়েছিল, তবে তা অঙ্কুরেই থামিয়ে দেওয়া হয়। চিঠিটির খানিকটা তুলে ধরা হলো—
‘বন্ধু Gutsche,
বর্তমানে অনেক ইহুদি আশ্রয়ের লক্ষ্যে ইউক্রেন হয়ে ব্যাসারাবিয়াতে (Bessarabia) গমন করছে। তারা মূলত রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসছে। ছদ্মবেশে পালিয়ে এলেও তাদের পরনে রয়েছে দামি কাপড় ও মূল্যবান মণি-মুক্তা। বিপ্লব চলাকালে তারা ছিল বলশেভিক গুপ্তচর, যারা সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে নিজেদের পকেট ভর্তি করেছে। এমন নয় যে, পকেট ভর্তি করে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন কাগজের নোট নিয়ে এসেছে। তারা নিয়ে এসেছে সে সকল মূল্যবান সম্পদ, যা একসময় সেখানকার মহিলারা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত।
প্রতিশোধের আগুনে রাশিয়ানরাও উত্তপ্ত হয়ে আছে। রাশিয়ানদের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার জবাব দিতে তারাও উদ্গ্রীব। তাই ইহুদিরা বুঝতে পেরেছে, এই ভূমি তাদের জন্য আর নিরাপদ নয়। প্রতিশোধের আগুন থেকে নিজেদের চামড়া বাঁচাতে তারা অন্যত্র পলায়ন করছে।
তারা এতটাই লোভী, যাওয়ার সময় সোনা-দানা ও মণি-মুক্তা যতটা সম্ভব সাথে নিয়ে যাচ্ছে। তারা পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও লিথুনিয়া হয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার ফন্দি করছে। আর আমেরিকা তো তাদের জন্য দরজা খুলে বসেই আছে। একদিন হয়তো ইহুদিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তোমরা নিজেরাই লজ্জা পাবে। আয়নায় তখন নিজেদের চেহারা দেখতে পারবে না। তাদের ভিড়ে তোমরা নিজেদের পরিচয় পর্যন্ত হারিয়ে ফেলবে।
একবার কল্পনা করো তো—ইউরোপে যদি ইহুদিদের কোনো অস্তিত্ব না থাকত, তাহলে কি এত এত যুদ্ধ কখনো হতো? তারা প্রতিটি দেশের ওপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। কমিউনিজমের নামে হাজারও বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে, যার কোনো শেষ নেই। তারা বলে—”খাবি খাওয়া পুকুরে মাছ ধরা অনেক সহজ।”
তিন-চারদিন পরপর তল্লাশির নামে একদল রেড আর্মি মানুষের সম্পদ লুট করতে হাজির হয়। ক্ষুধা, নির্যাতন ও দরিদ্রতার ভয়ে মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের না আছে খাবার, না আছে কাজ, আর না আছে ঘুম। কিছুদিন পরপর রেড আর্মির প্লাটুনগুলোকে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে টহল দিতে দেখা যায়।
তারা তল্লাশির নাম করে ২০০ থেকে ৩০০ জনের দলকে রাস্তায় তুলে আনে। এদের মধ্যে থাকে সাধারণ জনগণ, সাবেক জার সৈন্য, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, জমিদারসহ আরও অনেকে। পুরো দলটিকে Tschreswytschaika (জেভিতচাইকা) ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউ যেন পালাতে না পারে, সে জন্য চারদিক ঘিরে রাখা হয়। এটা এমন এক দৃশ্য, যা দেখলে যে কারোর-ই আত্মা শুকিয়ে যায়। রাস্তায় সামনে পড়ে যাওয়া প্রতিটি ব্যক্তি পাগলের মতো এদিক-সেদিক ছুটতে শুরু করে। গৃহবন্দিরা দেয়ালের ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে এই দৃশ্য দেখে হৃৎপিণ্ডে হাত রেখে বলে, এ আমি কী দেখছি! একবার যাদের সেই ক্যাম্পে নেওয়া হয়, তারা আর কখনো ফিরে আসে না। ভাই, পিতা, সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ, যারা একসময় এই শহরগুলোতে আনন্দে ঘুরে বেড়াত, আজ তাদের মৃত্যুপুরীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—এমন দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে কী কল্পনা করা যায়!
Tschreswytschaika ক্যাম্পে যে কী করা হয়, তা আর বলার প্রয়োজন নেই। যুবক- যুবতিদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন শরীর ধর্ষণ করে ফেলে রাখা হয়। হাস্যকর এক আদালতে তাদের হাজির করা হয়, যেখানে বন্দিদের বিচারের নামে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়। সত্যি বলতে, এই ইহুদি বলশেভিকদের মনে মানবতা বলতে কিছুই নেই। তারা প্রয়োজনে খ্রিষ্টান বলশেভিকদের পর্যন্ত হত্যা করতে পারে।
শীত ও ক্ষুধায় সাধারণ মানুষের অবস্থা যে কতটা করুণ হয়ে উঠেছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কোনো প্রকার সৎকার, ভালো কাপড় বা কফিন ছাড়াই রাস্তায় পড়ে থাকা মৃত মানুষদের গণকবর দেওয়া হচ্ছে। পানি ও খাদ্য ছাড়া আত্মগোপন করা মানুষগুলো যে কীভাবে দিন পার করছে, সেই গল্প নাহয় অন্যদিন বলা যাবে।’ -F. Horch (২৪ আগস্ট, ১৯২০)
পলায়নরত ইহুদিদের ব্যাপারে American Paper একটি কলাম প্রকাশ করে, যার খানিকটা নিচে উপস্থাপন করা হলো—
‘প্রতিমাসে হাজারো রাশিয়ান ইহুদি এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করছে। তারা যেন নিরাপদে পালাতে পারে, সেজন্য বলশেভিক সেনাবাহিনী নিজ দায়িত্বে সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর পদ থেকে Baron Wrangel-কে সরিয়ে দেওয়ার পর রাশিয়ায় বলশেভিকবিরোধী আর কোনো বিপ্লব হয়নি। তবুও অনিশ্চিত দাঙ্গা-সংঘাতের ভয়ে আপাতত অন্যত্র সরে পড়াকে তারা শ্রেয় বলে মনে করছে। যতদিন না রেড আর্মি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে, ততদিন তারা বাহিরের দেশগুলোতে অবস্থান করবে। তারা যে দাঙ্গার আশঙ্কা করেছিল, তা ঘটেনি। রেড আর্মি চারদিকে খুব দ্রুত অভাবনীয় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মূলত সাধারণ মানুষ যেখানে নিরস্ত্র ছিল, সেখানে তারা ছিল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। তা ছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করায় তাদের প্রতি কেউ মুখ তুলে তাকায়নি। আসলে সেখানে কী ঘটেছে, বাহিরের দেশগুলোতে তার ছিটেফোঁটাও দীর্ঘকাল প্রচার করা হয়নি। কী আর বলব, লেনিন ও ট্রটস্কির মতো বর্বর চরিত্রগুলো আজও পৃথিবীর এক শ্রেণির আন্দোলনকারীদের কাছে জীবনাদর্শ!’
Lord Eustace Percy-এর একটি বিখ্যাত উক্তি নিচে উপস্থাপন করা হলো—
‘পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বলশেভিজম ও জায়োনিজমকে একই সাথে গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে; ঠিক যেভাবে সমাজতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক দলগুলো গড়ে উঠছে। তা ছাড়া গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মতো আরও যেসব মতবাদ তারা প্রতিষ্ঠা করেছে, তার উদ্দেশ্য সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নয়। জ্যান্টাইলদের সমাজব্যবস্থার প্রতি তাদের রয়েছে তীব্ৰ অনীহা। তাই ইহুদিরা কোনো সমাজব্যবস্থাকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে রাজি নয়। পরিবর্তন ও নিয়মিত পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য।’
রাশিয়ায় তাদের অজুহাত ছিল জার সাম্রাজ্য, জার্মানিতে কাইজার সাম্রাজ্য। ইংল্যান্ডে ছিল আইরিশ বিতর্ক, উত্তর আমেরিকায় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা; কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকায় কোনো অজুহাতের প্রয়োজন ছিল না। পৃথিবীর প্রতিটি সমাজব্যবস্থার ধরন যা-ই হোক না কেন, এর একটিও ইহুদিদের পছন্দ নয়। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, পৃথিবীর যেকোনো সমাজব্যবস্থায় নিজেদের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করা তাদের জন্মগত অধিকার।
Judge Harry Fisher শিকাগো উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে ৪৬ বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯০২ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত শিকাগো জায়োনিস্ট সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একবার তিনি ত্রাণকার্যে অংশ নিতে রাশিয়া যান। পরে সেখানকার বেশকিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নেন। নির্দেশ ছিল তিনি যেন রাজনীতিকে এর সাথে না জড়ান, তবে আমেরিকায় আসার পর রাশিয়া বা সোভিয়েত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কিছু প্রকাশ করতে তার আর বাধা ছিল না। Chicago Tribune-এ তার একটি কলাম ছাপানো হয়, যার অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরা হলো—
‘কিছুদিন আগে একটি খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়, রাশিয়ান মহিলারা নাকি সেখানকার রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে! মূলত সেখানকার বিবাহ ও তালাক পদ্ধতিতে সহজতর কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারা এখন চাইলে একদিনের জন্যও বিয়ে করতে পারে। অনেকে আছে—যারা চরম অভাবের দরুন প্রতিদিনের খাবারটুকুও জোগাড় করতে পারে না। তাদের জন্য এ পদ্ধতিতে বিয়ে করা খুবই কার্যকর। কিছু পূর্বশর্তের বিনিময়ে তারা একদিনের জন্য বিয়ে করতে পারবে। চাহিদা মিটে গেলে পরদিন তালাকও নিতে পারবে। এতে অনেকের ক্ষুধা মিটবে, আবার অনেকের অন্য উপায়ও হবে।’
মনে আছে, তাদের প্রটোকলের বিশেষ একটি ধারা—’আমরা জ্যান্টাইলদের পারিবারিক বন্ধন ধংস করে দেবো।’ পরিবার যেহেতু সমাজব্যবস্থার মূল একক, তাই তারা এখানেই আঘাত হেনেছে। তারা বিয়েকে চুক্তিভিত্তিক বিনোদন মাধ্যমে পরিণত করেছে, যেন পরবর্তী প্রজন্মকে নষ্ট করে দেওয়া যায়।
তারা জার্মানিতেও সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে, কিন্ত সফল হয়নি। ফরাসি বিপ্লবের সময়ও তারা একই কাজ করেছিল, কিন্তু সেখানকার অরাজকতা এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে, শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাদের এই পরিকল্পনা সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে রাশিয়াতে।
‘সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার মধ্যদিয়ে আমরা নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করব।’—৭ম প্রটোকল
১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে মস্কোর কোনো এক পত্রিকায় রাবাই Cohan-এর একটি কলাম ছাপানো হয়, যার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো—
‘কোনোরূপ অতিরঞ্জন না করে বলছি—মূলত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ইহুদিদের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছে। গরিব, নির্যাতিত, নিপীড়িত প্রলেতারিয়েটরা কি আদৌ বুর্জোয়াদের ক্ষমতা ধ্বংস করতে পেরেছে? বরং এই বিপ্লব আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের নতুন এক অরুণদয়ই এনে দিয়েছে। ট্রটস্কি যতদিন রেড আর্মির প্রধান কমরেড হয়ে থাকবেন, ততদিন আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা সত্য—রেড আর্মির সৈনিক পদগুলোতে আমাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সোভিয়েতের লাল পতাকায় যে তারকা চিহ্নটি দেখা যায়, তা মূলত জায়োনিস্টদেরই সংগীতে করা প্রতীক। কিন্তু বোকা রাশিয়ানরা এটাকে প্রলেতারিয়েট চেতনার প্রতীক বলে গ্রহণ করেছে। সত্যি বলতে—এটা আমাদের বিজয় প্রতীক, যার উত্থান হয়েছে বুর্জোয়া নামক পরজীবীদের ধ্বংস করে। তাদের রক্ত দিয়ে আমরা প্রতি ফোঁটা কান্নার প্রতিশোধ নিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও নিতে থাকব।’
এখানে যে তারকা চিহ্নের কথা বলা হয়েছে, তা সোভিয়েত আর্মির পতাকায় দেখা যায়। তবে ইহুদিদের জাতীয় প্রতীক হলো একটি ষড় কোণবিশিষ্ট তারা, যাকে বলা হয় ‘স্টার অব ডেভিড’। এর গঠন অনেকটা মেসনদের[২৮] প্রতীকের মতো। আর সোভিয়েত পতাকার তারাটি পাঁচ কোণবিশিষ্ট।
প্যালেস্টাইনের ওপর আজ যে ইজরাইল জন্ম নিয়েছে, তার জাতীয় প্রতীক হিসেবে ‘স্টার অব ডেভিড’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই প্রতিকের আরও একটি নাম আছে ‘মাগান স্টার’। অটোমানদের হারিয়ে প্যালেস্টাইন দখল করতে যে ইংরেজ সৈনিকেরা শহিদ হয়েছে, ইহুদিরা তাদের কবর থেকে ক্রুশ চিহ্ন সরিয়ে সেখানে ‘মাগান স্টার’ বসিয়ে দিয়েছে; যেমনটা রাশিয়াতেও করেছে। এখন সোভিয়েত তারকা চিহ্নের পাঁচটি কোণের অর্থ যদি হয় অর্থ-সম্পদ, গণমাধ্যম, আভিজাত্য, প্যালেস্টাইন ও প্রলেতারিয়ানিজম, তাহলে মাগান স্টারে অতিরিক্ত যে কোণটি রয়েছে, তার অর্থ হবে ইজরাইলের বাদশাহি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এজন্য প্রথমে ইহুদিদের রাজা ডেভিডের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে হবে।
(ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীতে রাজা ডেভিড জেরুজালেমকে শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তার সন্তান, পয়গম্বর সলোমন সেখানে একটি মহাপবিত্র মন্দির নির্মাণ করেন, যা প্রথম টেম্পল নামে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলন সেনাপতি নেবুচাদ নেজার জেরুজালেম আক্রমণ করে মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয় এবং বহু ইহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। পরে বন্দিশিবির থেকে মুক্তি পেয়ে জেরুজালেমে ফিরে এসে তারা পুনরায় সেই মন্দিরটি নির্মাণ করে, যা দ্বিতীয় টেম্পল নামে পরিচিত। কিন্তু ৭০তম খ্রিষ্টাব্দে রোমানরা জেরুজালেম দখল করে পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়, যা আজ অবধি নির্মাণ করা হয়নি।
তবে ইজরাইল যেহেতু পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই তাদের তৃতীয় টেম্পল নির্মাণের বিষয়টিও আলোচনার টেবিলে চলে এসেছে। এরপর মন্দিরের খুব কাছে একটি প্রসাদ নির্মাণ করতে হবে, যাতে থাকবে রাজা ডেভিডের রূপক সিংহাসন। তাদের বহু প্রতীক্ষিত মসিহ এসে সে সিংহাসনে আরোহণ করবেন। শুরু হবে বিশ্বজুড়ে ইজরাইলিদের বাদশাহি শাসন। তবে বাইবেল অবিশ্বাসীদের নিকট প্রথম ও দ্বিতীয় টেম্পলের বিষয়টি নিছকই কল্পিত গল্পের মাঝে সীমাবদ্ধ। কারণ, বাইবেল ব্যতীত অন্যান্য উৎসগুলোতে মন্দিরটির প্রমাণ খুবই অপ্রতুল।
মসিহ সম্পর্কে বলতে গেলে তালমুদ ও প্রাচীন মরমিবাদী পুস্তক Zohar-এ বলা হয়েছে—সৃষ্টি জগতের ৬ হাজার বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই মসিহের আগমন ঘটবে। কট্টরপন্থি ইহুদিরা বিশ্বাস করে—সৃষ্টিকর্তার বিশ্বজগৎ সৃষ্টির কাল থেকেই ইহুদিদের বর্ষপঞ্জির গণনা শুরু। সেই বর্ষপঞ্জির হিসেবে ২০১৯ হলো ৫৭৭৯তম বছর। ধার্মিক ইহুদিগণ দিনে অন্তত তিন বেলা সমবেত প্রার্থনায় অংশ নেয়।
ভোরের প্রার্থনা Maariv, দুপুরের প্রার্থনা Shacharit ও রাতের প্রার্থনা Mincha । প্রতিটি প্রার্থনায় ১৯টি আশীর্বাদের মধ্যে সকল ইহুদিকে জেরুজালেমে একত্রিতকরণ, মহাপবিত্র মন্দিরের পুনর্নির্মাণ এবং মসিহের দ্রুত আবির্ভাব ঘটানোর জন্য প্রার্থনা করা হয়। তবে যত যা-ই হোক, ইহুদিদের বিশ্ব কর্মসূচি বা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সকল কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। এজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।)
আমেরিকা; বলশেভিক বিপ্লবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ
নিউইয়র্ক একদিকে ইহুদিদের জন্য স্বর্গপুরী, অন্যদিকে যেকোনো বিপ্লবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেকোনো বিপ্লব বা যুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রথমে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, না হলে লাশ হয়ে ভাগাড়ে পচতে হবে এটাই রীতি।
যে বলশেভিক বিপ্লব পূর্ব ইউরোপ তথা বিশ্বের একটি বড়ো অংশের মানচিত্র পালটে দিয়েছে, তা নিছক দুই-একদিনের পরিকল্পনায় সম্ভব হয়নি। আগেই বলেছি, প্রথম ধাপে তাদের কিছু সদস্য খ্রিষ্টানের ছদ্মবেশে রাশিয়ার শ্রমজীবী মানুষদের সাথে মিশেছিল। এটা ঠিক, শ্রমিকদের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনো ভালো থাকে না। তারা দিন আনে দিন খায়। তাদের সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না। অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই এই জনগোষ্ঠীকে সামান্য অর্থের লোভ দেখিয়ে ধ্বংসাত্মক যেকোনো কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল, ধর্মঘট, মিটিং, মিছিল ও সমাবেশে এই কাজটিই করে থাকে।
ছদ্মবেশধারী বলশেভিক শ্রমিকরা আশেপাশে থাকা শ্রমিকদের মাথায় বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলন ঢুকিয়ে দেয়। তারা যেন সহজে অন্যদের কাবু করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের নিকট অর্থ বিনিয়োগ করা হয়।
ফলস্বরূপ রাশিয়ার প্রতিটি শিল্প কারখানায় বিভিন্ন অধিকার আদায়ের বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। ধীরে ধীরে তা নিষ্পেষিত মানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রথমে তা পুঁজিবাদ শিল্প-সমাজের বিরুদ্ধে শুরু হলেও পরে বুর্জুয়াদের বিরুদ্ধে রূপ নেয়। তারা রাজা নিকোলাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া শুরু করে। প্রথম ধাপটি সুন্দরভাবে শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপটি সামরিক বাহিনীর সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়। ততদিনে ইহুদিরা ছদ্মবেশে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে ছড়িয়ে পড়ে, যা পূর্বেই বলা হয়েছে।
কিন্তু শ্রমজীবী মানুষদের উসকে দেওয়ার কাজটি তারা কীভাবে করল? মূলত সে সময় ইহুদিরা এত বেশি শ্রমিক ইউনিয়নের জন্ম দিয়েছিল, এর সঠিক হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি ইউনিয়নেই ছিল একজন করে নেতা। আবার কয়েকটি ইউনিয়ন মিলে ছিল একটি মহাইউনিয়ন। তা ছাড়া, প্রতিটি শিল্পের (যেমন : টেক্সটাইল, কৃষি, পশুপালন, জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি) জন্যও ছিল আলাদা আলাদা ইউনিয়ন। সকল সদস্যের কাছ থেকে নিয়মিত মজুরির একটি অংশ চাঁদা হিসেবে কেটে রাখা হতো। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হতো কেন্দ্রীয়ভাবে। প্রশিক্ষণ ও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া এমন দক্ষতা অর্জন কখনোই সম্ভব নয়।
‘Hebrew labor movement-এর মধ্যদিয়ে আমেরিকায় কমিউনিস্ট বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়। এটি ‘Jewish labor movement’ নামেও পরিচিত। শুরু হয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। নিউইয়র্ক শহরের ফিফথ অ্যাভিনিউ ছিল মূল প্রশিক্ষণকেন্দ্র। নিউ ব্রডওয়ের ১৪ থেকে ৩৪ নম্বর সড়ক পর্যন্ত এই অঞ্চলটির বিস্তৃতি ছিল।
রাশিয়া-পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিরা এই পুরো শহরকে সুইটশপে পরিণত করে। এটি ছিল তৈরি পোশাক শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। শার্ট-প্যান্ট, জুতার কাপড়, মোজা, কোট- সুয়েটার—সবকিছু এখানে তৈরি করা হতো।
প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদে ছোটোখাটো পোশাক কারখানা গড়ে তোলা হয়। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে বিভিন্ন শিফটে কাজ করানো হতো। এই শহর ছাড়াও আমেরিকার আরও অনেক স্থানে পোশাক কারখান ছিল, তবে এই শহরকে তারা সবকিছুর কেন্দ্ররূপে গড়ে তুলেছিল। এরপর শুরু হয় মূল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
তাদের একদল তো এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে আছে। অপর একটি পক্ষ ছদ্মবেশে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে মিশে যায়। তারা ধীরে ধীরে শ্রমিকদের মাঝে মজুরি বৃদ্ধি, চিকিৎসা সুবিধা, চাকরি নিরাপত্তা, বাসস্থান, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধিকার আদায়ে উসকে দেওয়া শুরু করে। ছদ্মবেশধারী শ্রমিক নেতারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে—কীভাবে সাধারণ শ্রমিকদের মানসিকতায় আন্দোলনের ঘি ঢালা যায় এবং নিজেকে নেতারূপে গড়ে তোলা যায়।
ইহুদিদের ধনী ভাইয়েরা অতি গোপনে তাদের নিকট অর্থ পৌঁছে দিত, যা দিয়ে একটি প্রাথমিক ফান্ড তৈরি করা হতো। মূলত এই ভাইয়েরা ছিল বিভিন্ন গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক। ফান্ডের অর্থ থেকে অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা খরচ, মিটিং-মিছিল শেষে নৈশভোজের আয়োজন, উৎসবের দিনগুলোতে উপহারের আয়োজনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো। তারা এসব খরচ, অমায়িক ব্যবহার ও জ্বালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে সাধারণ শ্রমিকদের বিশ্বাস অর্জন করত। এভাবে তারা সফল হওয়া শুরু করে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠে অসংখ্য শ্রমিক ইউনিয়ন, যেখানে তারাই নেতা হতো। আর সাধারণ মানুষও হৃদয় থেকে তাদের বিশ্বাস করত।
সবকিছু গুছিয়ে উঠার পর তারা ইউনিয়ন ফান্ড তৈরির নামে প্রতি সদস্যদের ওপর চাঁদা নির্ধারণ করত। সে সময় একজন মহিলা পোশাক শ্রমিকের সাপ্তাহিক আয় যদি ৫৫ ডলার হতো, তবে ২৭.৫০ ডলার ইউনিয়নের ফান্ডে বাধ্যতামূলক জমা দিতে হতো। কিন্তু এই অর্থের পুরোটা তো আর তাদের পেছনে খরচ হতো না! ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে শ্রমিক ছদ্মবেশ ইহুদিরা কী পরিমাণ অর্থ কামিয়েছে, তা একবার চিন্তা করে দেখুন। এবার জানা যাক—ইহুদিদের যে সম্পদশালী ভাইয়েরা অর্থ সরবরাহ করত, তাদের কী হলো?
এর কিছুদিন পর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন, যা আমেরিকার বিভিন্ন পোশাক কারখানাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মালিকরাও কিছুদিন তামাশার নাটক করে কিছু বেতন বাড়িয়ে দিত। আদতে এই বেতন কি শ্রমিকদের কোনো উপকারে আসে? মোটেও না। কারণ, পোশাক মালিকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য বাড়িয়ে দেয়। বেতন তিন ডলার বাড়িয়েছে তো বিক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে পাঁচ ডলার। ফলে শ্রমিকনেতা এবং মালিকপক্ষ উভয়েরই লাভ হলো। ইহুদিদের প্রটোকলের একটি ধারা মনে আছে?
‘আমরা মজুরি বৃদ্ধির বিভিন্ন আন্দোলনে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করব। একই সঙ্গে বাজারে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেবো। ফলে বর্ধিত মজুরি কখনোই তাদের উপকারে আসবে না।
শুরু হয় শ্রমবাজার ও পুঁজিবাজারের দ্বন্দ্ব, যার কথা বইয়ের শুরুতেই বলা হয়েছে। সে সময় এই পুঁজিবাজার যাদের দখলে ছিল, তাদের কয়েকজনের নাম আবারও উল্লেখ করছি
: Schiffs, Speyers, Warburgs, Kahns, Lewisohns 4 Guggenheims কীভাবে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, তা তো বলাই হলো। কিছুদিন পরপর তারা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করছে, আর পোশাক মালিকরাও উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাঝ থেকে নিষ্পেষিত হচ্ছে জ্যান্টাইলরাই। ইহুদি মালিকরা যখন মূল্য বাড়াত, তখন সব গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান একযোগে অনুসরণ করত। এদের মধ্যে কোনো জ্যান্টাইল প্রতিষ্ঠান পড়ে গেলে তাকেও এই নিয়ম অনুসরণ করতে হতো। কিন্তু ১৯১৮-১৯ সালের দিকে Wanamaker’s প্রতিষ্ঠানটি বেঁকে বসে। তারা উলটো দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। এটি ছিল একজন খ্রিষ্টানের প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু একটি-দুটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে তো আর সমাজ বদলানো সম্ভব নয়। সে সময় শুধু নিউইয়র্কেই ছিল ২৭৬০টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন ধরনের স্যুট ও পোশাক তৈরি করত। ১২০০টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকারের কাপড় তৈরি করত। ২৮৮০টি প্রতিষ্ঠান পশমি পণ্য তৈরি করত। ৬০০টি প্রতিষ্ঠান মেয়েদের স্কার্ট তৈরি করত এবং ১৪০০টি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ করত। বলে রাখা ভালো, এই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ইহুদি বণিকদের অর্ডারে কাজ করত। যেসব ব্যবসায়িক জোটের মাধ্যমে তারা গার্মেন্ট শিল্পের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো—
• Associated Boy’s Clothing Manufacturers of Greater New York
• Associated Fur Manufacturers
• Associated Shirt Manufacturers
• Association of Embroidery and Lace Manufacturers
• Children’s Dress Manufacturer’s Association
• Cloak, Suit and Skirt Manufacturer’s Protective Association
• Cotton Garment Manufacturers’ of New York
• Dress and Waist Manufacturers’ Association
• East Side Retail Clothing Manufacturers Association
• Ladies’ Hat Manufacturers Protective Association
• Mineral Water Dealers Protective Association
• National Association of Separate Skirt Manufacturers
• National Society of Men’s Neckwear Manufacturers
• New York Association of House Dress & Kimono Manufacturers
• New York Tailors’ Verein
• Shirt Manufacturers’ Protective Association
তাদের একটি অভিভাবক সংগঠন রয়েছে, যার নাম International Fur Workers’ Union of the United States and Canada। তারা পোশাক শিল্পের প্রতিটি কাজকে আলাদা আলাদা অংশে বিভক্ত করেছে। যেমন : বোতামঘর তৈরি, প্যান্টের জিপার, বিভিন্ন মাপে কাপড় কাটা, জামার আস্তিন ও জামার কলার তৈরি করা ইত্যাদি। প্রতিটি কাজে জড়িত শ্রমিকদের নিয়ে তারা পৃথক ইউনিয়ন গড়ে তোলে। এদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো—
• Feather Boa Makers Union
• Fur Cap Makers Union
• Fur Cutters Union
• Fur Dressers Union
• Fur Dryers Union
• Fur Floor Walkers Union
• Fur Hatters Union
• Fur Head and Tail Makers Union
• Fur Lined Coat Finishers Union
• Fur Nailers Union
• Fur Operators Union
• Fur Pluckers Union.
শুধু তা-ই নয়; বিভিন্ন ক্রেতা সম্প্রদায়ের জন্যও তারা পৃথক সব ইউনিয়ন খুলে বসে। যেমন : শিশু পোশাক তৈরি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শ্রমিক ইউনিয়নগুলো হলো :
• Children’s Jacket Makers (Three unions )
• Children’s Jacket Pressers
• Children’s Sailor Jacket Makers Union
• Children’s Cloak and Reefer Workers Union
• Children’s Dressmakers Union.
নারীদের পোশাক তৈরি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শ্রমিক ইউনিয়নগুলো হলো—
• Amalgamated Ladies’ Garment Cutters Union
• Bonnaz, Singer and Hand Embroiderers Union
• Buttonhole Makers and Button Sewers Union
• Childrens’ Cloak and Reefer Workers Union
• Cloak and Suit Piece Tailors and Sample Makers Union
• Cloak Examiners, Squarers and Bushelers Union
• Cloak Operations Union
• Cloak, Skirt and Dress Pressers Union
• Ladies’ and Misses Cloak Operators Union
• Ladies’ Tailors Alternation & Special Older Union
• Skirt and Cloth Dressmakers Union
• Waterproof Garment Workers Union
• White Goods Workers Union
• Wrapper, Kimono, House Dress and Bath Robe Makers Union.
এই ইউনিয়নগুলোরও একটি অভিভাবক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার নাম International Ladies Garment Workers Union ।
এই বিশাল তালিকা দেখে বিস্মিত হচ্ছেন, তাই না? তবে এই প্রতিটি ইউনিয়ন শুধু ইহুদি নেতাদের দ্বারাই পরিচালিত হতো না; কিছু জায়গায় জ্যান্টাইল নেতাদেরও নিয়োগ দেওয়া হতো, যেন সাধারণ মানুষের বিশ্বাস পাকাপোক্ত করা যায়। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষ হলে আবারও এই নেতাদের ধীরে ধীরে রাশিয়া পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে তারা দুটি কৌশল ব্যবহার করত।
এক, নিজেদের নাম-পরিচয় পালটে খ্রিষ্টানের ছদ্মবেশ নিত।
দুই, রাশিয়ান মহিলাদের বিয়ে করে সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করত। এরপরের ঘটনা তো আমরা জানি। প্রলেতারিয়েটদের জন্য বলশেভিক আন্দোলন এবং জার সরকারের পতন।
প্রেসিডেন্ট Mr. Taft-কে নিয়ে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র
আমেরিকার ২৭তম এই প্রেসিডেন্ট ১৯০৯ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল ছিলেন। ইহুদিদের সাথে তার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ১৯১১ সালে।
প্রথমে বলে রাখি, Mr. Taft ছিলেন অমায়িক চরিত্রের মানুষ। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিষয়ে দ্বিমত করতেন না, যতক্ষণ না তা দেশ ও জাতির জন্য অমঙ্গলের কারণ হতো। ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতি-বিদ্বেষ, বর্ণবাদ কোনো কিছুকেই তিনি গ্রাহ্য করতেন না। নিজের বিবেকবোধ ও চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি কাজের সিদ্ধান্ত নিতেন 1 মানুষের কোনো কথা কখনো অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন না।
আগেও বলা হয়েছে, আমেরিকা জন্মের পর থেকেই ইহুদি লবিস্টরা হোয়াইট হাউজে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফলে প্রেসিডেন্ট সাহেবরা কখন কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, আগামী নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে এবং অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, তা তারা অনেক আগেই জেনে যেত।
যখন তাদের বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের প্রয়োজন হতো, তখনই আমেরিকার প্রেসিডেন্টেদের কঠিন সব পরিস্থিতিতে ফেলে দিত। যেমন : সন্ত্রাসী হামলা, অর্থনৈতিক চাপ, কূটনৈতিক আক্রমণ ইত্যাদি। তা ছাড়া বিভিন্ন স্ক্যান্ডাল ফাঁস করার ব্লাকমেইল তো আছেই। রাশিয়ার সাথে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বহু দিনের। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, ইহুদিদের জন্যই এই দুই দেশের সম্পর্ক বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সে সময় এই দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। উভয় দেশের মধ্যে বড়ো অঙ্কের আর্থিক বিনিয়োগ হতো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুঝতেই পারল না হঠাৎ কী কারণে ১৯০৭-০৮ সালের পর থেকে রাশিয়ান সরকার আমেরিকান অভিবাসী গ্রহণে এত গড়িমড়ি করতে শুরু করে। মূলত সেখানকার সরকার আঁচ করতে পেরেছিল— নতুন ছদ্মবেশে পুরোনো শত্রুরা আবারও এ দেশে প্রবেশ করা শুরু করেছে। জার সরকার জানিয়ে দেয়—’আমরা সাধারণ আমেরিকানদের নিয়ে বিচলিত নই। যারা নতুন ছদ্মবেশে পুনরায় এ দেশে প্রবেশ করছে, মূলত তারাই মাথাব্যথার কারণ।’
তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে আমেরিকান দূতাবাসে পত্র মারফত অনুরোধ করা হয়—
‘অবিলম্বে যেন এই ইহুদিদের পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ করা হয়। আমরা আপনাদের অতিথি হিসেবে গ্রহণ করছি, কিন্তু এই আতিথেয়তা যেন আমাদের ওপর বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর জন্য আপনাদের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী— এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ২ লক্ষ সদস্য অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু এর প্রকৃত সংখ্যা যে আরও অনেক বেশি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা যদি শ্রমিক হিসেবে সেখানে থাকতে চায়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে তাদের যেন নতুন পাসপোর্ট দিয়ে আমাদের দেশে পাঠানো না হয়।’
ইহুদিদের সাথে এমন উদ্ধত আচরণ কেন করা হলো, তার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা Mr. Taft-এর নিকট দাবি করে, আমেরিকা যেন রাশিয়ার সাথে সকল বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। উল্লেখ্য যে, ১৮৩২ সালে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এক দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য-চুক্তি করা হয়। চিন্তা করা যায়, ৮০ বছরের এমন একটি সম্পর্ক শুধু ইহুদিদের জন্যই ভেঙে ফেলতে হবে! তাও কিনা সংখ্যালঘু একটি জাতিকে সন্তুষ্ট করতে!
ইহুদিরা Mr. Taft-এর কাছে দুটি দাবি করে। এক, রাশিয়ার সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন; দুই, তাদের অভিবাসন নিয়ে কংগ্রেসে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে।
১৫ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯১১, তারা প্রেসিডেন্ট সাহেবের সাথে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। ইহুদিদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হন Jacob H. Schiff, Jacob Furth, Louis Marshall, Adolph Kraus Judge Henry M. Goldfogle । UIRT হাউজ লাইব্রেরি কক্ষে এর আয়োজন করা হয়, কিন্তু প্রেসিডেন্ট সাহেবের সিদ্ধান্ত শুনে তাদের চোখ কপালে ওঠে। কী ছিল তার সিদ্ধান্ত? এর অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো—
‘রাশিয়া ও আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক উভয় দেশের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। গত ৫০ বছরে আমাদের মধ্যে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। ইতোমধ্যে শিল্পায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আমাদের অনেকের ভবিষ্যৎ এই সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছে। এই সম্পর্ক ছিন্ন করলে অনেক মানুষ সম্পূর্ণরূপে দেউলিয়া হয়ে পড়বে। তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসবে। আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে, তাই এমনটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তাদের সাথে আমাদের অনেক ধরনের চুক্তি রয়েছে। যেমন : বন্দি বিনিময় চুক্তি, সাংস্কৃতিক চুক্তি, খেলাধুলা চুক্তি ইত্যাদি। আপনারা যদি চান, এ জাতীয় কিছু চুক্তি আমরা রদ করতে পারি, কিন্তু বাণিজ্যিক ও আর্থ-সমাজিক চুক্তিগুলো কোনোভাবেই বর্জন করা সম্ভব নয়।
রাশিয়ান ইহুদিদের এ দেশে আসতে কোনো বাধা নেই, তবে তাদের যত দ্রুত ইউরোপে পাঠিয়ে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। তবে চাইলে আগামী কয়েক বছর নাহয় রাশিয়ার সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করব না। মহোদয়গণ, এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আশা করি আপনারা একমত হবেন।’
উপস্থিত প্রতিনিধিরা সবাই অবাক! Simon Wolf বলেন—’প্রেসিডেন্ট সাহেব, এই সিদ্ধান্ত আপনি কোনো পত্রিকায় ছাপাবেন না।’
Jacob Schiff রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন—’না, তাকে ছাপাতে দিন। তিনি আমাদের সঙ্গে আজ যে ব্যবহার করলেন, তা পুরো পৃথিবী দেখুক।’
তাদের ভর্ৎসনা অগ্রাহ্য করে প্রেসিডেন্ট নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। বুঝিয়ে দিলেন—মিথ্যা বলে তার সাথে পার পাওয়া যাবে না। ইতিহাসের ওপর তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। তার সাথে উপস্থিত সবার চরম দ্বন্দ্ব লেগে যায়। এক পর্যায়ে সবাই তাকে তিরস্কার করা শুরু করে। Jacob Schiff লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় করমর্দন পর্যন্ত করেননি। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বলতে থাকলেন—’এর মানে কিন্তু যুদ্ধ, বুঝলেন? এর মানে কিন্তু যুদ্ধ!’
চিন্তা করুন, ১৫ তারিখের সম্মেলনটি সফল হলে উভয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কী হতো! কত মানুষ পথে বসত! ইহুদিরা তো সাধারণ মানুষে কথা ভাবে না। তাদের সব পরিকল্পনা শুধু নিজেদের ঘিরেই।
তার এই সিদ্ধান্তের পর প্রতিটি ইহুদি সংগঠনের মধ্যে বিরক্তির ছাপ ছড়িয়ে পড়ে ইহুদিরা চাইলে যে কী করতে পারে, তা দেখার মতো দৃশ্য। Jacob Schiff ব্যাংক থেকে প্রচুর অর্থ উত্তোলন করে এবং American Jewish Committee ও Bnai Brithসহ সকল সংগঠনের মাঝে তা বণ্টন করে দেন।
পরবর্তী দশ মাস ইহুদিদের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রেসিডেন্ট সাহেবকে ব্যঙ্গ করে একের পর এক কলাম ছাপতে থাকে। ইহুদিরা আঞ্চলিক কংগ্রেস অফিসগুলোকে নিয়মিত চাপ দেওয়া শুরু করে, যেন তারা Mr. Taft-এর ছায়াতল থেকে বেরিয়ে আসে। আর এ কারণেই হয়তো তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হননি।
১৯১২ সালে ঘটল আর একটি আজব ঘটনা। B’nai Brith সংগঠনটি প্রেসিডেন্ট সাহেবকে সম্মাননাস্বরূপ মেডেল প্রদান করে। তারা বলে—
‘প্রেসিডেন্ট সাহেব তাদের প্রতি যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে, তার প্রতিদানস্বরূপ তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হলো।’
হোয়াইট হাউজের বারান্দায় ইহুদিদের একদল সদস্যের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি ছবি তুলেন। ছবিটির দিকে তাকালে তাকে শুধু অসহায়-ই মনে হয়; মুখে কোনো উচ্ছ্বাস বা হাসির চিহ্ন ছিল না।
তার ব্যক্তিগত কিছু চিঠি পরবর্তী সময়ে ফাঁস হওয়ার পর এতটুকু আন্দাজ করা গেছে—তিনি বেশ আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। তাকে সারাক্ষণ গোপন নজরদারিতে রাখা হতো। তিনি আদৌ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন কি না এবং সেজন্য নিজেকে কতটুকু গুছিয়ে নিয়েছেন, তা খুব কাছ থেকে কেউ পর্যবেক্ষণ করত। শেষ পর্যন্ত তাদের এই দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক যখন ছিন্ন হয়, তখন রাশিয়ার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জার্মান ইহুদিরা দখল করে। তারা হাতে পায় গুপ্তধনের ভান্ডার। উভয় দেশের বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে। সমস্ত দোষ পড়ে সম্রাট নিকোলাসের ঘাড়ে। অন্যদিকে, পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে ধীরে ধীরে বলশেভিক আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
*
২৬. বুর্জোয়া- আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া হলো অর্থশালী শ্রেণিবিশেষ, যারা প্রলেতারিয়েত শ্রেণির মানুষদের শুষে খাচ্ছে।
২৭. পেট্রোগার্ড সোভিয়েত- বলশেভিক বিপ্লব শুরু হওয়ার পর নিকোলাস জারের পতন ঘটলে এই দলটি অল্প কিছুদিনের জন্য ক্ষমতায় আসে।
২৮. মেসনিক- পৃথিবীর অন্যতম একটি গোপন সংগঠন।