দ্বিতীয় খণ্ড (আমার গুরু, আমার স্বর্গত পিতাকে)
2 of 6

বরাহতন্ত্র

বরাহতন্ত্র

কী বললেন?

আজ্ঞে ‘এখন নয়, তিনের বেশি কখনও নয়’, হলদের ওপর লালে লেখা।

লেখা তো আপনারই বা কি আর আমারই বা কি! সরকারের পয়সা আছে, লিখছে। লিখেছে বলেই মানতে হবে? সে তো প্রথম ভাগেও লেখা ছিল— সদা সত্য কথা বলিবে, কদাচ কাহাকেও কুবাক্য বলিবে না। শুনেছেন সে কথা! বুড়ো হয়ে তো মরতে চললেন।

এ বাক্যটা যে না মেনে উপায় নেই! একটি শিশু প্রতিপালনের খরচ জানেন! একটি শিশুর আগমনের হ্যাপা জানেন!

হ্যাপাটা কী জিনিস! এ আবার কোথাকার ভাষা!

এ যুগের ভাষা, স্যার। ছেলের মুখ থেকে শিখেছি।

এই পি-এ, কাগজ লাও। ফিনানস তো খুব বাজেট দেখায়! দেখি, এই মধ্যবিত্ত মানুষটির মুখ থেকে মানুষের খরচের একটা বাস্তব হিসেব নাও। নিন, বলুন।

আজ্ঞে, কনসেপসান। মানে, যেদিন তিনি সেই দু:সংবাদটি দিলেন—ওহে, মনে হচ্ছে, থার্ড পার্সন ইজ কামিং, সেই দিনই জানালা দিয়ে মুখ বের করে হাঁক পাড়লুম—রিকশা। চালাও ডাক্তারখানা। আস্তে চালিও, ভাই। ভাড়া এক টাকা প্লাস এক টাকা।

লেখো। প্রথমদিন ভাড়া বাবদ দু-টাকা। উঁহু আলাদা কলাম করো, আলাদা হেড। এতকাল বাজেট দেখছ, কীভাবে একসপেনডিচার হেড অনুসারে সাজাতে হয়, জানো না? হ্যাঁ—দু টাকা। বলুন তারপর।

ডাক্তারের ফী চার টাকা। এটা স্রেফ ফালতু। গম্ভীর মুখে বললেন—আমি হলুম গে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবার ডাক্তার। জন্ম দেওয়ার ডাক্তার আলাদা, চলে যান সেখানে। রেশনকার্ডের মতো একটি কার্ড করিয়ে রাখুন সময় থাকতে-থাকতেই, তা না হলে শেষ মুহূর্তে বেগ যখন প্রবল হবে, বউ ঘাড়ে করে মহাদেবের মতো ঘুরে মরতে হবে। কেউ স্থান দেবে না। হাঁসের মতো পুকুরপাড়ে ডিম পারতে হবে। তখন…দাঁড়ান। লেখো চার টাকা—আলাদা হেডে লেখো। হেডিং দাও—ডাক্তার খরচ। হ্যাঁ, কনটিনিউ।

তারপর একটা ট্যাকসি করে গেলুম গাইনাকোলজিস্টের কাছে। ট্যাকসি যাওয়া-আসা সাত টাকা প্লাস সাত টাকা ইজকলটু চোদ্দো।

লেখো, চোদ্দো।

ডাকতারের ফী বত্রিশ টাকা।

লেখো, বত্রিশ।

ওষুধ হল গে, আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রাোটিন গুঁড়ো, সব মিলিয়ে প্রথম চোটেই আটচল্লিশ টাকা।

লেখো, ওষুধ—আটচল্লিশ।

এইবার হল গে পথ্য। হে হে বাবা, যে কলে মানুষ আসে—তার গ্যাঁড়াকল অনেক। নিজে যখন জন্মেছিলুম, তখন কি আর বুঝেছিলুম—কত ধানে কত চাল!

বলুন পথ্য—ডেলি হিসেব দিন।

সকালে মুরগির ডিম, মাখন রুটি, দুধ। দুপুরে সরু চালের ভাত, আপনার রেশনের চালের ভাত জন্মেও চলে না, শ্রাদ্ধেও চলে না। বেশ বড় এক দাগা মাছ। প্লেইনটি অফ ভেজিটেবিলস। ফের—এগেন দুধ।

ফের—এগেনটা কী।

ডবল বিশেষণ, স্যার। ফের আবার দুধ? বিকেলে ছানা, বেশ বড় একটি তাল, চিনি দিয়ে মাখো, মাখো।

একটি পালিশ-করা আপেল। রাতে বেশ খসখসে গরম-গরম ফুলকো আটার রুটি, পাতলা করো মাংসের স্ট্যু। বিশ্বাস করুন, মাঝে-মাঝে নিজেরই মা হতে ইচ্ছে করে! সত্যি বলছি!

একদম অসভ্যতা করবে না। একটি মিথ্যে কথাও বলবে না। সাপ্রেশান আর একজাজারেশন অফ ফ্যাক্টের দায়ে পড়বে। মাইন্ড ইট। কোনও মধ্যবিত্ত অত সব করে না। এসব বড়লোকের ব্যাপার। আমরা করতে পারি, ট্রেড ইউনিয়ন লিডাররা করতে পারে, ওয়াগন বেকাররা করতে পারে। সাধারণ মানুষ, যাদের নিয়ে এই ডেমোক্রেসি, তারা এসব করে না। একে বলে আদিখ্যেতা।

করে স্যার। প্রথম-প্রথম নববধুর জন্যে একটি আদিখ্যেতা সব স্বামীরই থাকে। নতুন নতুন সাইকেল চালানো, সিগারেট কি মদ খাওয়া, নতুন বাবা হওয়ার মধ্যে একটু বাড়াবাড়ি থাকেই। একটা নেশা। আট পাউন্ড মিনিমাম ওজন হওয়া চাই, ওই দুধের টিনের গায়ে আঁকা শিশুর মতো। বলা যায় না, কে এসে পড়ে। স্যার সুরেন বাঁড়ুজ্যে ‘এ নেশান ইন দি মেকিং’-এ লিখেছিলেন—কে বলতে পারে সময়ের চাকা ঘুরতে-ঘুরতে হয়তো হঠাৎ আবার দ্বিতীয় চৈতন্য দুম করে কোথাও জন্মে যাবেন। ওই প্রথমটার ব্যাপারেই একটু মেনেটেনে চলা। স্বপ্নটপ্ন দ্যাখা। তারপরই ওই ট্যাঁ শুনতে-শুনতে, গ্যাঁটের কড়ি গুণতে গুণতে স্ত্রী হয় বউ, বউ হয় গিন্নি, ছেলেমেয়েরা হয়ে যায় পেটের শত্তুর, তখন আর ওসব নেই—যো আয়েগা আউক, যো যায়েগা যাউক।

কী হয়?

যো যায়েগা যাউক। যো আয়েগা আউক। হ্যাঁ স্যার—যো যায়েগা যাউক… খরচের চুলচেরা হিসেব থাক, স্যার। মিথ্যে বলব না—বেশ খরচ। মানে চাকরির পয়সায় ছেলে হয় না, ঘুসটুস চাই, স্যার। কলকাতার রাস্তায় হল্লাগাড়ি না বের করলে বাপ হওয়ার খরচ ওঠে না। মেয়েদের কাছে প্রথম মা হওয়ার অভিজ্ঞতা বড় আনন্দের। ছেলেদের কাছে আতংকের। কত আতংকে যে ছেলেরা বাপ হয়! আর বাপ হয়ে যে কত আতংকে থাকে!

পি-এ। মার্ক ইট। এই হল মধ্যবিত্তের বৈশিষ্ট্য। সামলে থাকতেও পারে না, বেসামাল হয়েও সুখ পায় না। কই, ফুটপাথের মানুষরা তো অত ভয়ে মরে না। মানুষ আর শুয়োরে, আই মিন ভারতবর্ষের মানুষে ও শুয়োরে তফাত থাকবে কেন! আমাদের সরি তোমাদের পুরাণে বলছে, বরাহ হল অবতার। অবতারের কায়দায় বাঁচতে শেখো। আমি একটু ছোট্ট মতো বক্তৃতা দিয়ে দেখি—ভীষণ ভাব এসে গেছে :

এই ভারতবর্ষে সমস্ত প্রকার পরিকল্পনা, রাজনীতি, সমাজনীতির হাত থেকে আত্মরক্ষা করে বেচে থাকবে কারা? রাবিশ মধ্যবিত্তরা নয়, চেরিশড বড়লোক কী ব্যাবসাদাররা নয়। বার্ডস অফ প্যারাডাইসরা কেন লোপাট হয়ে যেতে বসেছে? সারা পৃথিবী জুড়ে শৌখিন প্রাণীরা কেন আজ ধীর অবলুপ্তির পথে? তার কারণ রুচি নিয়ে, আভিজাত্য নিয়ে মধ্যযুগে বাঁচা সম্ভব হলেও, আধুনিক যুগে বাঁচা যায় না। এ যুগে বাঁচার টেকনিক আলাদা। এ হল শোরের যুগ। জেনুইন শূয়োরের বাচ্চা না হলেই মরতে হবে। শূয়োরের-‘এখন নয়, তিনের বেশি কখনই নয়’-তে কান দেয়নি, তারা এক-একবারে সাতটা-আটটার কম নামায় না। পাঁকের মধ্যে পরমানন্দে থাকে। জঞ্জাল দেখলে কাগজে প্রবন্ধ লেখে না, করপোরেশনের সামনে গিয়ে হল্লা করে না। মধ্যবিত্ত ভাই সব, তোমরা যত তাড়াতাড়ি পারো শূকর হয়ে যাও। আমরা বিদ্যুৎ সাপ্লাই করতে পারিনি, আমরা ন্যায্য মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে পারিনি, কিন্তু আমরা পরিবেশ সাপ্লাই করতে পেরেছি। নর্দমার পাঁক কত চাই! ম্যানহোল থেকে তুলে তুলে আমরা রাস্তার পাশেপাশে ভড়ভড়ে করে রেখেছি। অফুরন্ত জঞ্জালের ঢিবি চারদিকে। খুঁটে খেতে চাও, খাও। শূকর হলে আমাদের পরিবেশ তৈরির এই প্রয়াস দেখে চটাপট, পটাপট হাততালি দিত। এই মধ্যবিত্ত, তৈল-চিক্কণ বাবুটি ভয়ে ভয়েই আধমরা। এই ভদ্রসন্তান জানেন না—শূকরের জন্ম নার্সিং হোমে হয় না, হয় নর্দমায়। শূকর-শাবক বেবিফুড খায় না। শূকর-জনক প্রি-ন্যাটাল কেয়ার, পোস্ট-ন্যাটাল কেয়ার কেতাব পড়ে না। পড়ে না বলেই তারা নিভীর্ক ফ্যামিলি ম্যান। নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি, চেষ্টায় মানুষ সব পারে। ঘুমিয়ে আছে শূকর-তনয় সব মানুষের অন্তরে। তাকে জাগাও, জাগিয়ে তোলো। আমরা এই বরাহতন্ত্রকে সর্বতোভাবে মদত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। কোটি-কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কুচ পরোয়া নেই—আরও হবে। অর্থের কৃপণতা আমরা করব না। সারা দেশটাকে আমরা শূকর-বাসের উপযোগী করে তুলবই। আমাদের দাবি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়। ওসব একটা বড় রকমের ধাপ্পা। আমাদের দাবি বরাহতন্ত্র। লেড়কা লোক এক দফে তালি বাজাও। উ:! অনেকদিন এরকম বক্তৃতা দিইনি। মেডন স্পিচ। যেমন ভাষা, তেমনি বাচনভঙ্গি, তেমনি বিষয়বস্তু! কি বলো, পি-এ সাহেব?

আমরা থ মেরে গেছি, স্যার। কী ওয়ান্ডারফুল অ্যাপ্রাোচ!

তারপর বাঁকেলাল, ভয়ে-ভয়ে তোমার এখন একি হল! হয়েই যখন গেল, তখন আর ভয়টা কীসের।

না স্যার, সবটা তো শুনলেন না। লেগে তো গেল—তারপর! তারপর? তারপর শুরু হল ভাবনা—ছেলে হবে না মেয়ে! যদি মেয়ে হয়!

মেয়ে হয় তো কি হয়! মেয়েও তো মানুষ রে, বাবা। মেয়েমানুষ।

না, মানুষ তো বটেই, তবে কিনা লোকসানের কারবার! খাইয়ে-দাইয়ে বড়টি করে, গলায় কম করে তিরিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা বেঁধে তুলে দিয়ে এসো পরের ঘরে। মেয়ের বাপ হল ট্রাস্টি। পরের সম্পত্তি আগলে বসে থাকো। শুধু তাই নয়—মেয়ে না হয় হল, এখন কার মতো দেখতে হবে! বাপের মতো না মায়ের মতো! মায়ের মুখ আর বাপের রং নিয়ে যদি আসে—চক্ষু চড়ক গাছ! আবার যদি পুরোটাই বাপের মতো হয়, তাহলে আরও পাঁচ হাজার টাকা বেশি ধরে দিতে হবে—ময়লা রঙের খেসারত।

নিজে যখন বিয়ে করেছিলেন, দেখে করেননি?

আমাদের সময় অত দেখাদেখি ছিল কী? দেখা হল সেই পিঁড়েতে বসে চাদরের তলায়। ড্যাবরা-ড্যাবরা, বোকা-বোকা, মাছের মতো চোখ। নাকটা দেখে মনে হল, আহা, পকেটে যদি একটা সাঁড়াশি থাকত। ঠোঁট দুটো দেখে মনে হল, পান-দোক্তা যা জমবে না! বুলি যা ছুটবে না! আহ—

তাহলে দোষটা কার? ম্যাচ মেকার্সদের, না আপনার নিষ্ক্রিয়তার?

দোষ কারও নয় গো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা।

যাকগে, দু:খু করে আর কী হবে! রংটা ফরসা তো!

তেমন ফরসা আর কই। খুব ফরসা হলে আমার কালোর সঙ্গে মিশে ছেলেমেয়েদের রং মোটামুটি একটা ব্লু-ব্ল্যাক মতো দাঁড়াত! যাক, সে যা হয় হবে বলে আর এক ভাবনা নিয়ে স্ত্রীর দিকে মুখ করে বসলুম।

কখন বসলেন? না রোজই বসেন!

আমি অতীতের কথা বলছি, স্যার। স্ত্রীর যখন ছ’মাস—শুয়ে আছেন খাটে ডিমওয়ালা ট্যাংরা মাছের মতো। মাথার কাছে টেবিলে ওষুধ-বিষুধ। আমার হাতে ‘ফেয়ারি চাইলডে’-র অ্যাডমিশান টেস্টের প্রশ্নোত্তর।

‘ফেয়ারি চাইলড’-টা কী?

বিখ্যাত স্কুল স্যার। ছেলেমেয়ে জন্মাবার আগেই যেখানে অ্যাডমিশনের জন্যে নাম লেখাতে হয়, তারপর তিন দিন ধরে পরীক্ষা। সেই জন্যে সময় নষ্ট না করে, ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক, গর্ভস্থ সন্তানকে শেখাতে থাকি—বলো বলো বাচ্চে, ভারতবর্ষের প্রেসিডেন্টের নাম, প্রাইম মিনিস্টারের নাম। দেশ স্বাধীন হয়েছিল কবে? প্রজাতন্ত্র কাকে বলে? ফার্স্ট ফাইভ ইয়ার প্ল্যান কোন সালে হয়েছিল?

এটা আপনাদের বাড়াবাড়ি, মশাই। রাম না জন্মাতেই রামায়ণ!

মোটেই বাড়াবাড়ি নয়। এটা মহাভারতের শিক্ষা। অভিমন্যু ব্যূহভেদের কৌশল গর্ভে বসেই শিখেছিল। মা ঘুমিয়ে না পড়লে বেরিয়ে আসার কৌশলটাও শিখে ফেলত। ছেলে তো, স্যার, দুম করে জন্মেই ট্যাঁ করে জানিয়ে দিলে—ট্রাবল ইজ বর্ন। একে ধরো, ওকে ধরো। এর পায়ে তেল, ওর পায়ে তেল। ছেলে ভরতি করার যে জ্বালা, স্যার। আপনার সন্তান না হলে বুঝবেন না।

কোনও ধারণা নেই আপনার! দেশের ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন হল মন্ত্রীরা। ছেলেবেলায় রূপকথার গল্পে পড়েননি—মন্ত্রীপুত্র, কোটালপুত্র ও সওদাগরপুত্র। আর কোনও পুত্রের উল্লেখ ছিল কি! ছিল না। সেই এক সিস্টেম চলে আসছে। চলছে, চলবে। চলবে, চলছে।

স্প্রিংটা কমজোর, স্যার। এখুনি চিৎপাত হয়ে পড়বেন।

ডাকো-ডাকো সওদাগরপুত্রদের ডেকে বলো মন্ত্রীর চেয়ার মেরামত করে দিয়ে যাও। কত সুখ আমাদের। স্কুল আমাদের ছেলেদের জন্যে, কলেজ আমাদের ছেলেদের জন্যে, হাসপাতালের ভালো কেবিন আমাদের জন্যে, রাস্তা আমাদের জন্যে। দেশ হামারা হিন্দু স্তাঁ—আ—আঁ। আমি কি তুমি হে, যে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভেবে মরব?

আমাদের বড় চিন্তা স্যার। যখন সব এটুকু-এটুকু ছিল, আধ গজে জামা হত। প্যান্ট হত। এখন সব এত বড়-বড় হয়ে গেছে। ফুল তিন মিটার লাগছে একটা ফ্রকে। এর পর যখন শাড়িতে প্রাোমোশন পাবে—উরে বাবারে! তিন প্যাকেট সিগারেট দেড় প্যাকেটে নেমেছে। বউ বলছে আর একটা এলেই আধ প্যাকেটে নামতে হবে। তিন কাপ চা’র এক কাপ কেটে দিয়েছে। দুধ এক সের থেকে এক পো করেছে। ডাইং ক্লিনিং বন্ধ করে দিয়েছে। রোববার রোববার কাপড় কাচিয়ে নিচ্ছে। কতদিন যে স্যার রাবড়ি দিয়ে ফুলকো ফুলকো নুচি খাইনি! বেশ জম্পেস করে সরু চালের ভাত আর মাংস।

আরে, এর যে দেখি বেশ পেটের জোর আছে হে! অম্বল নেই! অ্যামিবায়োসিস জিয়ার্ডিয়াসিস নেই? কোলাইটিস নেই?

আছে, আছে, সব আছে! রাতে নো মিল। সকালে জলের মতো ঝোল-ভাত। পকেটে সেই থামা দেওয়ার বাড়ি। রোজ একটি করে না খেলেই মনে হয় এই পাচ্ছে, এই পাচ্ছে। সে-ও এক মারাত্মক ভয়। সব ভয়ের সেরা ভয়।

অ, এইটাই তো আমরা চাই! এই নার্ভাস ডায়েরিয়া দিয়েই তো আমরা সবরকম অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে রাখতে চাই। তা না হলে এ দেশটা কবে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা হয়ে যেত। হইহই মিছিল করে এগিয়ে আসছে মধ্যবিত্তের দল—শিক্ষা চাই, সংস্কৃতি চাই, নীতি চাই দুনীর্তি চাই, মাথা তুলতে চাই, মাথা নীচু করতে চাই, তেল দিতে চাই, তেল নিতে চাই, লাথি খেতে চাই, লাথি মারতে চাই। সব এসে দাঁড়িয়েছে এই ক্ষমতার দুর্গের বাইরে। কি হচ্ছে, ভাই? বিপ্লব, বিপ্লব। আমরা সব বিপ্লব করেছি।

আমরা তখন এই বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুলিশ বাহিনীকে বলব—ওহে, কিস্যু করতে হবে না, শুধু তোমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কয়েকবার বুটের শব্দ কর। ওইরে আসছে! বাস বাকি কাজটা জিয়ার্ডিয়াসিস, লাম্বিয়াসিস করে দেবে। ওরে ভাই, বিপ্লব এখন থাক, আগে বড় বাইরেটা করে আসি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *