বনের খবর – ১০

১০

(১৯০৭-১৯০৮৷ পূর্ব-বঙ্গ ও আসাম) আমাদের গোটা আপিসটাই ব্রহ্মদেশ থেকে চলে এসেছে৷ পূর্ব-বঙ্গ ও আসামের শ্রীহট্ট, কাছাড়, ত্রিপুরা ইত্যাদি জরিপ করতে হবে৷ আমার উপর আবার দূরবিনের কাজের ভার পড়েছে, স্বাধীন ত্রিপুরারাজ্য ও লুশাই পাহাড়ে কাজ করতে হবে৷

যেমন পথের কষ্ট বর্মায় ছিল, এখানেও তেমনি কষ্ট বা তার চেয়েও বেশি৷ সে সব কষ্ট সহ্য করেই সব জায়গায় কাজ করে এসেছি, হার মানতে হয়েছিল খালি ত্রিপুরার রাজার দেশে এক জায়গায়৷ বেজায় জঙ্গল, রাস্তা নামে আছে মাত্র, কাজের বেলা খুঁজে পাওয়া দায়৷ প্রায়ই নালায়-নালায় পথ, সারাদিন জলে-জলেই চলতে হয়, মাঝে-মাঝে ছোট-ছোট গ্রাম আছে, তাকে ফুকী ইত্যাদিদের বাস৷ আমাকে লংতরাই যেতে হবে৷ সে বড় বিদঘুটে পাহাড়, তার দুপাশ দেয়ালের মতো, শুধু সাদা, কালো আর লাল পাথর, আর ঘোর বন৷ অনেক জায়গায় আবার শুধুই পাথর, গাছপালার নামগন্ধ নেই৷

এই পাহাড়ের উপর আমাকে যেতে হবে, সঙ্গে হাতি আছে কিন্তু হাতি সেখানে চড়তে পারবে না৷ আমাদের সঙ্গে হাজারিবাগের খালাসি আছে, শুধু তাদের দিয়েও কুলোবে না৷ কাজেই দেখলাম যে আরও পনেরো-কুড়িজন লোক না হলে সে পাহাড়ে যাওয়া অসম্ভব৷ এখন মুশকিলের কথা এই যে যদিও আশেপাশে দশ-বারো মাইলের মধ্যে গ্রাম আছে, সেখানকার কেউই লংতরাই যেতে রাজি নয়৷ বাপরে, সে যে তাদের দেবতা! সেখানে গেলে কি আর তারা কেউ বাঁচবে? যে যাবে সেই মরবে৷ তারা লংতরাইকে পুজো করে, তার গায়ে পা ঠেকালে কি আর রক্ষে আছে!

গ্রামের চৌধুরিকে ডেকে কত বোঝালাম, কিন্তু তারও মনটা লংতরাইয়ের পাথরের মতোই শক্ত, কিছুতে যেতে সম্মত হল না৷ সে বললে, ‘তোমাদের এক সাহেব আমাদের নিষেধ কাকুতি-মিনতি না শুনে লংতরাই গিয়েছিল৷ মহারাজার হুকুম, কী করি, না গিয়ে উপায় ছিল না৷ আমরা শুয়োর, মুর্গি, হাঁস দিয়ে লংতরাইকে তুষ্ট করে পাহাড়ে চড়লাম৷ সাহেব তার কিছুই করল না৷ তার সাজাটাও তাকে পেতে হল৷ সেই যে লংতরাই তাকে জ্বর দিয়ে দিলেন, আর সে ভালো হল না, কদিন পরেই মরে গেল৷ আর আমরা যাব না সেখানে, সেবার অনেক খরচ করিয়ে আমাদের লংতরাই ছেড়ে দিয়েছিলেন, এবার ছাড়বেন না৷’

শেষ পর্যন্ত আমাকে বাধ্য হয়ে লংতরাই না গিয়েই ফিরতে হল, এমন একটি লোক পেলাম না যে আমাদের শুধু পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়৷

.

ত্রিপুরা রাজ্যে শিকার জুটত বেশ৷ পাখি, হরিণ, শুয়োর, আরও বড়ো-বড়ো জানোয়ার মায় গণ্ডার, হাতি৷ শিকারের অবসর আমাদের নেই, তবে কাজের শেষে পেটের দায়ে যা কিছু রাস্তায় মিলে যায়৷

শিকারি পর্বতে কাজ করতে গিয়েছিলাম৷ কেন যে শিকারি নাম হয়েছে তা আর কেউ বলতে পারল না৷ এক জায়গায় অনেকগুলো বুনো ফলের গাছ, গ্রামের লোকেরা বলল সকাল সন্ধ্যায় ওখানে জানোয়ার আসে— হরিণ, শুয়োর— ফল খাবার লোভে৷ আগে থেকে গিয়ে চুপ করে বসে থাকলে একটা কিছু শিকার মিলবেই৷ গাছের উপর তারা মাচা তৈরি করে রেখেছে৷ আমি বললাম, ‘মাচা ওঠা হবে না, জুতো নিয়ে উঠতে পারব না, পড়ে গেলে হাত-পা ভাঙবে৷’

‘হরিণের খোঁজে বাঘও আসে৷’

‘তা আসুক৷’

বিকেল চারটের সময় গিয়ে একটা ঝোপের মধ্যে একটা বড়ো গাছে পিঠ দিয়ে বসলাম— আমি আর একজন খালাসি, গ্রামের লোকটি জায়গা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল৷

একটু বাদেই জানোয়ারের সাড়া পাওয়া যেতে লাগল, ছোটো হরিণের, যাকে বলে ‘বার্কিং ডিয়ার’— তার ডাক শুনতে পেলাম, বেশ কাছেই ডাকছিল৷ একটু পরেই জানোয়ারের পায়ের সুর-সুর শব্দও একটু একটু কানে আসতে লাগল৷ থেকে-থেকে শুকনো পাতার উপর পায়ের শব্দ হচ্ছিল৷ তখনও বেশ আলো রয়েছে, আমি তো বন্দুক বাগিয়ে তৈরি, এই বের হল আর কি! পর মুহূর্তেই আমি একেবারে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম, ঝোপ থেকে বেরোল আমারই এক খালাসি, শোধন৷

‘হতভাগা, তাঁবুতে মানা করে এলাম এদিকে যেন কেউ না আসে, আর তুই এখানে মরতে এলি কেন?’

‘লাকড়ি ঢুঁড়তে-ঢুঁড়তে চালা আয়া হুজুর, খেয়ালসে উতর গায়া যো কি হুজুর হিঁয়া পর শিকারকে লিয়ে বৈঠে হ্যাঁয়৷’

বলা বাহুল্য সেদিন আর আমাকে দিয়ে শিকার করা হল না, ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁবুতে ফিরে এলাম৷ শোধন জাতে নাপিত কিন্তু বুদ্ধি মোটেই নাপিতের মতো নয়৷ আর-একবারও ওই শোধনের বুদ্ধির দৌড়ে হাতের শিকার ফসকে গিয়েছিল, সে কথা পরে বলছি৷

.

মহারাজার দেশে দূরবিনের কাজ শেষ করে আমরা লুশাই পাহাড়ে চলেছি৷ সাড়ে-ছশো-সাতশো বর্গ মাইলের মধ্যে আর গ্রাম নেই, কোনো রাস্তাও নেই৷ সেই লুশাই পাহাড়ের সীমানায় আমাদের জন্য লুশাই পাহাড়ের প্রধান শহর আইজল থেকে লোক রসদ ইত্যাদি আসবার কথা, ততদূর অবধি পৌঁছে দেবার জন্য মহারাজার লোক আমাদের সঙ্গে চলেছে৷ পথে একটি পাহাড়ে আমরা কাজ করব৷ এতে চার-পাঁচদিন লাগবে, আমরা আটদিনের খোরাক সঙ্গে নিয়েছি৷ লঙ্গাই নদীতে সীমানা, সেখানে পৌঁছবার আগে একটা উঁচু পাহাড় পার হতে হয়, তারই চুড়োতে আমাদের কাজ৷

পথ নেই, বুনো হাতির রাস্তা আছে৷ মাঝে-মাঝে কাঠুরেদের আড্ডা আর রাস্তা পাওয়া যায়, তারা কখনো-কখনো এই জঙ্গলে কাঠ কাটতে আসে৷ আমি যে পাহাড়টাতে কাজ করব সেটা মহারাজার লোকদের দেখিয়ে দিলাম৷ তারা অনেকক্ষণ ধরে পরামর্শ করে চলতে লাগল৷

ভীষণ বন, আর পাহাড়ের পর পাহাড়, খালি পাহাড়ের পর পাহাড়৷ সরু-সরু নালা আর তার দুপাশে পাহাড়, একবার চড়ো, একবার নামো, আবার চড়ো, আবার নামো— সকাল থেকে সন্ধ্যা এই রকম করতে হয়৷ মাঝে-মাঝে ভাঙা কুঁড়েঘর পাওয়া যায়, সেগুলো কাঠুরেদের আড্ডা৷ তার অনেকগুলোই বুনো হাতিতে ভেঙে ফেলেছে৷ বন এমনি ভয়ানক যে সূর্যের মুখ আর দেখা যায় না, কোনদিকে যে যাচ্ছি তাও সব সময় বুঝতে পারা যায় না৷ সেইজন্য মাঝে-মাঝে বড়ো-বড়ো গাছে— দেড়শো-দুশো ফুট উঁচু গাছও আছে— চড়ে দেখে নিতে হয় পাহাড়টা কোন দিকে৷

তিনদিনে সেই পাহাড়ে পৌঁছে আমরা তার উপর কাজে লেগে গেলাম৷ লোকজনদের বলে দিলাম, ‘যেখানে জল পাবে সেইখানে পাহাড়ের উপর তাঁবু লাগাও, নালার ধারে তাঁবু লাগিয়ো না যেন৷’

সন্ধ্যার সময় ক্যাম্পে পৌঁছে দেখি ঠিক জানোয়ারের রাস্তার মাঝখানে তাঁবু খাটিয়েছে৷ রাত্রে যে-কোনো জানোয়ারই আসুক-না-কেন, সে ওই পথে এসে একেবারে তাঁবুতে হাজির হবে৷

তখুনি তাড়াহুড়ো করে, তাঁবুর সামনে আর পিছনে, পথের উপর প্রকাণ্ড দুই ধুনি জ্বালানো হল৷ তারপর বাঁশ কেটে রাস্তা বন্ধ করে দিলাম, সে পথে জানোয়ার আসবার আর কোনো সুবিধাই রইল না৷

রাত্রে একটা প্রকাণ্ড বাঘ এসে অনেক চেষ্টা করেও সে পথে নামতে না-পেরে সে কি তার রাগ আর গর্জন! আমি তাড়াতাড়ি বন্দুক নিয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে পড়লাম, কিন্তু বাঘটাকে দেখতে পেলাম না৷ তার গর্জনে এদিকে কানে তখনও তালা লাগছিল, আর মাটি সত্যি-সত্যিই কাঁপছিল৷ শেষটা আন্দাজে তিন-চারবার বন্দুকের আওয়াজ করবামাত্র বাঘটা সরে পড়ল৷

এদিকে খালাসি বেচারা বাঘের ডাক শুনেই দল সুদ্ধ ছুটে গিয়ে তাঁবুতে ঢুকেছে৷ দু-তিন হাত উঁচু বাঁশের মাচা বেঁধে, তার উপর তারা তাঁবু খাটিয়েছিল৷ এতগুলো লোক একসঙ্গে দৌড়ে তাঁবুতে ঢুকবামাত্র বাঁশের মাচা-টাচা ভেঙে হুড়মুড় করে সকলে চিতপাত! তারপর সব হেসে গড়াগড়ি!

এর পর আরও একদিন আমরা সেই জায়গায় ছিলাম, কিন্তু বাঘমশাই আর আসেননি৷

আগেই বলেছি যে আটদিনের খাবার সঙ্গে নিয়ে আমরা লঙ্গাই নদীর দিকে চলেছি৷ সেখানে লুশাই পাহাড় থেকে আমাদের জন্য লোক আসবে, রসদও সঙ্গে আনবে৷ সেই লোকজন এসেছে কিনা দেখবার জন্য আমি লঙ্গাই নদীতে কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলাম৷

পরদিন অন্য লোকজন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম৷ গিয়ে দেখি লুশাই পাহাড়ের লোকদের কোনো খবর নেই৷ দেখেই তো আমার চক্ষুস্থির! আমার চাল ফুরিয়ে গেছে, সঙ্গে কুড়ি-বাইশজন লোক, এরা খাবে কী?

খালাসিদের যার কাছে যেটুক চাল ছিল তাড়াতাড়ি সব জড়ো করে এনে আমার নিজের তাঁবুতে রেখে দিলাম৷ তিন-চারজন লোককে টাকা দিয়ে তক্ষুনি মহারাজার রাজ্যে চাল আনতে পাঠালাম৷ দু-জন খালাসিকে পাঠালাম নদীর ধারে-ধারে নীচের দিকে নেমে গিয়ে লুশাই পাহাড়ের লোকদের খবর দিতে৷ বাকি সকলে সেইখানেই থাকলাম৷

রোজ সকালে মাথা পিছু তিন বা সাড়ে-তিন ছটাক চাল মেপে দিই, তারা সেই রেঁধে ফেন সুদ্ধ খায়৷ বেচারা খালাসিদের বড়ো কষ্ট! রোজ এক সের চাল খাওয়া যাদের অভ্যাস, সাড়ে-তিন ছটাকে তাদের কী হবে?

বন্দুক নিয়ে বনে-বনে ঘুরি কিন্তু শিকার আর মেলে না৷ খালাসিরা এসে মিনতি করে বলতে লাগল, ‘যে চাল আছে আমাদের দিন, আমরা একবার পেট ভরে খাই, তারপর কপালে যা আছে তাই হবে৷’ আমি অনেক বুঝিয়ে তাদের তাঁবুতে ফিরিয়ে দিলাম৷

পরদিন ভোরে উঠে লোকজন সঙ্গে নিয়ে আবার শিকারের খোঁজে বেরোলাম৷ কিন্তু কী আশ্চর্য! যখন কাজে বেরোই কত জানোয়ার দেখতে পাই, আর সেদিন কিছুই চোখে পড়ছে না, একটা পাখিও না৷ অনেকক্ষণ ঘুরে-ঘুরে যখন নিরাশ হয়ে তাঁবুর দিকে ফিরে চলছি, তখন খুব বড়ো-বড়ো দুটো হরিণ— সম্বর— দেখতে পেলাম৷ হরিণ দুটো জানোয়ারের রাস্তা ধরে পাহাড় থেকে নামছিল৷

আমরা উপর থেকে দেখতে পেয়ে, ঘুরে এসে, পথের পাশে এক জায়গায় বুনো হলুদের গাছ ছিল, তার মধ্যে গুড়ি মেরে বসে রইলাম৷ তখনও হরিণ দুটো নীচে নামেনি, আমি তো বন্দুক ঘাড়ে তৈরি! আর খালাসিরা সেই জঙ্গলে সব মড়ার মতো শুয়ে পড়ল৷

হরিণ দুটো আস্তে-আস্তে নামছে আর মাঝে-মাঝে দুটো-একটা লতাপাতায় মুখ দিচ্ছে, দেখে ভাবছি আরেকটু নেমে এলেই গুলি চালাব কাছেও হবে আর কোনো গাছের আড়ালও হবে না৷ মাত্র হাত পনেরো-কুড়ি দূরে আছে, হঠাৎ পিছন থেকে শোধন চেঁচিয়ে উঠল, ‘মারো, হুজুর, মারো!’

আর হরিণ তো একেবারে উধাও!

‘হতভাগা, এ কী করলি!’

‘মেরা খেয়াল হুয়া ক্যা হুজুর হারিণ দেখা নেহি৷’

ব্যস! সকলে তাকে চেপে ধরল, এই মারে তো এই মারে! বেচারাদের কপালে সেদিনও শিকার মিলল না৷

এমনি করে তিনদিন গেল, চতুর্থ দিনে আমাদের সেই তিনজন খালাসি মহারাজার রাজ্য থেকে চাল নিয়ে এল৷ খালাসিদের বেজায় ফুর্তি৷ এমনি পেট ভরে খেল যে আর সেদিন কাজ করবার সাধ্য রইল না! আবার সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় অন্য দু-জন লোক আমাদের চাল-ডাল সুদ্ধ সেই লুশাইদের নিয়ে ফিরে এল৷

খাওয়ার কষ্টের কথায় মনে পড়ল, বোধা টিন্ডেল আর দশজন লোককে পাঠিয়েছিলাম দুটো পাহাড়ের জঙ্গল কাটতে৷ একে তো ঘোর বন, তার উপর আবার বেজায় কুয়াশা, বেলা সাড়ে-দশটা এগারোটার আগে সে কুয়াশা ছোটে না৷ বেচারিরা রাস্তা ভুল করে ফেলল৷ প্রথম পাহাড়ের কাজ শেষ করে আটদিনের দিন গিয়ে দ্বিতীয় পাহাড়ে পৌঁছল৷ মাত্র তিনদিনের খোরাক বাকি আছে৷ কাজ আরম্ভ হল৷ বোধা হুঁশিয়ার লোক, সমস্ত চাল তার নিজের হেফাজতে রাখল আর প্রত্যেক খালাসিকে মেপে রসদ দিতে আরম্ভ করল৷ রসদ আছে মাত্র তিনদিনের, কাজ পাঁচ-সাতদিনের কমে হবে না৷ আধ সের হিসাবে চাল আর তাতে দু-মুঠো ডাল দিয়ে, পাতলা সাবুর মতো খিচুড়ি রেঁধে খেতে লাগল৷

চারদিন পর দু-জন লোক সঙ্গে নিয়ে বোধা পাহাড় থেকে নেমে ধলেশ্বরী নদীর কিনারায় এসে বসে রইল, আশা যদি কোনো লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়৷ ধলেশ্বরীতে মাঝে-মাঝে নৌকো যাতায়াত করে৷ দু-দিন কিছু খায়নি৷ দ্বিতীয় দিন বিকেলে আমার লোকদের সঙ্গে দেখা হল, তারা কুড়ি-বাইশ মাইল দূর থেকে চাল নিয়ে ফিরছিল৷ এরা এক বস্তা চাল নিয়ে পরদিন আবার পাহাড়ে চড়ল৷ গিয়ে দেখে বাকি আটজন লোক একেবারে চলৎশক্তি রহিত, দু-দিন তাদের সেই পাতলা খিচুড়িও জোটেনি৷ দু-দিন বসে তাদের খাইয়ে চাঙ্গা করে তুলে, তবে কাজ শেষ করে ফিরে এল৷

জিগগেস করায় বোধা উত্তর দিল, ‘হাঁ, হুজুর, তকলিফ বহুত হুয়া, লেকেন সরকার কো কাম করনাই হ্যায়৷ তিন বরস সরকার কো নিমক খায়া, অব বেইমানি ক্যায়সে করুঁ?’

বোধাকে যে উপযুক্ত রকম পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল সে কথা বলা বাহুল্য৷

.

লুশাই পাহাড়ের যে জায়গায় আমার কাজ ছিল সে বড়ো ভয়ংকর জায়গা৷ সাড়ে-ছশো সাতশো বর্গ মাইল জায়গা, তার মধ্যে একটা গ্রাম নেই, পথ নেই৷ সঙ্গে প্রায় ষাটজন লোক, জিনিসপত্র৷ খোরাক ইত্যাদিও ঢের৷ সে সব বইবার জন্য দুটো হাতিও আছে৷

দশ-বারোজন লুশাই বন কেটে পথ করে আগে-আগে চলে, তবে আর সবাই এগোতে পারে৷ অত করেও, অত মেহনতের পরও একদিনে চার-পাঁচ মাইলের বেশি অগ্রসর হওয়া যায় না৷ সন্ধ্যার অন্ধকারে যখন তাঁবু পড়ে, তখন কারো হাত-পা যেন চলতে চায় না৷ তার উপর আবার পাহারা দিতে হয়৷

সে ঘোর বনে মানুষের নামগন্ধ নেই, শুধু জানোয়ারের কিলিবিলি!

সন্ধ্যার পর পা ফেলতে গেলে মনে হয় এই বুঝি বাঘই মাড়ালাম৷

বেলা নটা-দশটার আগে আর সূর্য দেখা যায় না৷ এক-এক জায়গায় এমনি ঘন বন যে আকাশ দেখবার জো নেই, ঠিক মনে হয় যেন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে৷ আমি সকলের আগে-আগে চলি, সঙ্গে একজন বুড়ো লুশাই থাকে, সে বড়ো শিকারি৷ তার পিছনে দু-জন খালাসি, তাদের মধ্যে শ্যামলালের হাতে আমার দূরবিন, বন্দুক আর টোটার থলে, অন্যজনের হাতে আমার খাবার আর জল৷ তিনজনের হাতেই এক-একখানি দা৷

আমরা চারজনে গাছে দাগ কেটে অন্য সকলের আধ মাইল বা কিছু বেশি আগে-আগে যাই, আর সেই দাগ দেখে লুশাই কুলিরা বন কেটে পথ তৈরি করে, হাতি আর বাকি লোকদের নিয়ে আসে৷ রোজই এমনি করে চলতে হয়৷ একদিন পনরো-কড়ি ফুট চওড়া একটা বুনো হাতিদের রাস্তা পাওয়া গেল, লোকজনদের খুব মজা, বন কাটতে হচ্ছে না৷

চলতে-চলতে এক জায়গায় দেখলাম পথের উপর প্রকাণ্ড গাছ পড়ে রয়েছে৷ দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম আমাদের হাতি দুটো এ-গাছ ডিঙোবে কী করে? ভাবতে-ভাবতে গাছটার উপর চড়তে আরম্ভ করলাম, আর অমনি আমার পায়ের নীচেই যেন একটা কী হুড়মুড় করে উঠল৷ জিগগেস করলাম, ‘কেয়া হ্যায় রে?’ শ্যামলাল বললে, ‘হুল্লুমান হোগা হুজুর৷’

বলতে-না-বলতে সেটা গাছপালা ভেঙে কামানের গোলার মতো বেরিয়ে এল— গণ্ডার! এক নজর আমাদের দিকে দেখেই ‘ঘোঁৎ’ বলে দৌড় দিল৷ আমি পিছনের দিকে হাত বাড়িয়ে রয়েছি শ্যামলাল বন্দুক দেবে, কিন্তু কোথায় শ্যামলাল! সে ততক্ষণে প্রাণ বাঁচাবার সোজা পথ খুঁজছে৷ গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে, শ্যামলালের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে, টোটা ভরে, গণ্ডার মারতে ছুটলাম, কিন্তু ততক্ষণে গণ্ডার কোথায় যে গা ঢাকা দিয়েছে, আর তাকে খুঁজে পেলাম না৷

পরদিন খুব ভোরে উঠে চলতে আরম্ভ করেছি৷ আজকের পথ নালায়-নালায়, সঙ্গে সেই বুড়ো লুশাই আর শ্যামলাল৷ ভোরবেলা নানারকম শিকার পাওয়া যায়, সেইজন্য বন্দুক ভরে নিয়েই চলেছি৷ শিকার সামনে পড়ছে কিন্তু মারতে পারছি না, একে ঘোর বন, তায় কুয়াশা৷ শিকার দেখতে-না-দেখতে জঙ্গলে মিলিয়ে যায়৷ হাতি, গণ্ডার, বাঘ, হরিণ, সকলেরই তাজা পাঞ্জা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷ পাখিরও অভাব নেই, গোটা দুই ফেজেন্ট মেরেছি৷ হাতির পথ ধরে, নালাটাকে কখনো এপার কখনো ওপার করতে করতে পাকোয়া নদীর দিকে চলেছি, আজ রাত্রে সেখানে ক্যাম্প করব৷

একটা শুকনো নালা সামনে পড়েছে, আমরা তার মধ্যে নামলাম, লুশাইবুড়ো আমার আগে আর শ্যামলাল পিছনে৷ শ্যামলাল তখনও নালার ভিতর নামেনি, আমরা নালা পার হয়ে উপরে উঠতে যাব, এমন সময় আমাদের সামনেই ভারী একটা জল-কাদা তোলপাড়ের শব্দ হল৷ নিশ্চয় বুঝতে পারলাম হাতি, গণ্ডার বা বুনো মোষ হবে, কাদায় লুকিয়ে আয়েস করছিল, আমাদের সাড়া পেয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে৷ আমরাও তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে, দুই লাফে নালার যে পার থেকে নেমেছিলাম সেখানে উঠে ফিরে চেয়ে দেখলাম ব্যাপারখানা কী৷ ব্যাপার গুরুতর, বিশাল-দেহ এক গণ্ডার, যমদূতের দাদামশায়ের মতো, দাঁড়িয়ে ফোঁস-ফোঁস করছে৷ লাল দুটো চোখ মিটমিট করছে, কান দুটো পিছন দিকে হেলানো৷ আমার পকেটে তিনটি মাত্র গুলিওয়ালা টোটা, মাঝে ফুট পনরো চওড়া নালা, ওপারে গণ্ডার, শ্যামলাল পালিয়েছে৷

image15.jpg

লুশাইটি ক্রমাগত বলছে, ‘মারো সাহেব!’ তার মুখে দাখানা, পা তুলে দিয়েছে গাছের গোড়ায়, বেগতিক দেখলেই বাঁদরের মতো চড়ে যাবে৷ আমি কী করব? সেই ছেলেবেলায় গাছে চড়তাম এখন সে বিদ্যা একেবারেই ভুলে গেছি, তার উপর পায়ে বুট! কাজেই ধীরে-ধীরে বন্দুকে গুলি ভরে প্রস্তুত হয়ে রইলাম৷ গণ্ডার যদি নালা পার হয়ে এপারে আসতে চায় তবেই গুলি চালাব, নইলে চালাব না৷

লুশাই খালি বলছে ‘মারো, মারো’, কিন্তু তিনটি মাত্র গুলি সম্বল নিয়ে, গণ্ডার মারতে গিয়ে শেষে কি প্রাণটা হারাব?

যাই হোক, আমাকেও গুলি চালাতে হল না, লুশাই বুড়োকেও গাছে চড়তে হল না, গণ্ডারটা মিনিটখানেক পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে, একটা হুঙ্কার দিয়ে, দৌড়ে পাহাড়ে উঠে গেল৷ তার সামনে যত বাঁশ পড়ল, সমস্ত প্যাঁকাটির মতো পটপট করে ভেঙে গেল৷

তখন আমরাও আস্তে-আস্তে চলতে লাগলাম৷ আধ মাইলও যাইনি, আবার সামনে ভীষণ হুড়োমুড়ি! তারপর মড়মড় করে বাঁশ ভাঙার শব্দ৷ তারপর, উঃ, কী ভীষণ গর্জন! সারা বন থরথর করে কেঁপে উঠল৷ এবার একটু বেকায়দা, লুশাই বুড়োর আশেপাশে গাছ নেই, কীসে চড়বে? শ্যামলাল হতভাগা ইতিমধ্যে এসে জুটেছে, টোটার থলে থেকে আট-দশটা গুলিভরা টোটা নিয়ে ইতিপূর্বেই পকেটে পুরেছি৷

পথ ছেড়ে দিয়ে একটা ঝোপের মধ্যে বন্দুক হাতে দাঁড়ালাম৷ দাঁতওয়ালা হাতি, হয় পাগল (মস্ত) তা না হয় অন্য কোনো জানোয়ার দেখেছে৷ লুশাই বলল, ‘বোধহয় সেই গণ্ডারটা ওর সামনে পড়েছে৷’

হাতিটা কিন্তু আমাদের দিকে এল না, তিন-চারটে ডাক দিয়ে, ধীরে-ধীরে বাঁশ ভাঙতে-ভাঙতে পাহাড়ে উঠল৷ আমরাও চলতে লাগলাম৷

.

আমরা পাকোয়া নদীর কিনারায় পৌঁছলাম৷ নদীটা সত্তর-আশি হাত চওড়া হবে, তাতে এক কোমর জল৷ নদীর ধারে হাতির পায়ের তাজা দাগ৷ একটার পিছনে একটা, তার পিছনে একটা, এমনি করে এক পাল হাতি গেছে৷ পায়ের দাগ দেখে আমি বললাম, ‘পাঁচ-সাতটা হাতি হবে৷’

লুশাই বুড়ো ভালো করে দেখে বলল, ‘চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটার কম নয়৷ ঠিক দাগে-দাগে পা ফেলে গেছে বলে বোঝা যাচ্ছে না৷’

সারাদিন জলে-জলে চলে আমার কাপড়-চোপড় সব ভিজে গিয়েছিল৷ আমি পাহাড়ে হেলান দিয়ে বসে জুতো-মোজা খুলতে আরম্ভ করলাম৷ লুশাইকে বললাম, ‘ওপারে গিয়ে তাঁবুর জায়গা দেখ৷’

লুশাই ওপারে চলে গেল, শ্যামলালও বন্দুক তার সঙ্গে নিয়ে চলে গেল৷ আমি বসে-বসে ‘হুঁ-উ-উ’ করে চিৎকার করে, পিছনের লোকদের ডাকতে বললাম, খাবারওয়ালা খালাসি তাদের সঙ্গে, আমার বেজায় খিদে পেয়েছে৷

বার দুই ‘হুঁ-উ-উ’ করে চেঁচিয়েছি, অমনি আমার উপরের একটা পাহাড় থেকে একটা হাতি ‘হুঁ-উ-উ’ বলে ডেকে উঠল, আর আমার ওখান থেকে পঞ্চাশ-ষাট হাত দূরে আরও অনেক হাতি গুড়গুড় শব্দ করে তার জবাব দিতে লাগল৷ আমি আবার চেঁচালাম, হাতিগুলোও আবার ঠিক তেমনি করল৷ আবার চেঁচালাম, আবার তাই হল৷ একটা হাতি পাহাড়ের উপর ‘হুঁ-উ-উ’ করে, আর বাকিগুলো নালার কিনারা থেকে গুড়গুড় শব্দ করে আর নাকে ফোঁসফোঁস আওয়াজ করে৷

এমন সময় আমার মাথার উপর থেকে মড়মড় করে বাঁশ ভাঙবার আওয়াজ হতে লাগল আর নদীর ওপার থেকে শ্যামলাল আর লুশাইবুড়ো ব্যস্ত হয়ে আমাকে ডাকতে লাগল, ‘চলে এসো, চলে এসো৷’ তিন-চারটে হাতি আমার চিৎকার শুনে দেখতে আসছে এ কী রকম জানোয়ারের ডাক, আমার মাথা থেকে বোধহয় ১০০-১২৫ গজ উঁচু পর্যন্ত নেমে এসেছে৷

আমি তাড়াতাড়ি নদীর ওপারে গিয়ে, শ্যামলালের হাত থেকে বন্দুক নিয়ে নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ শ্যামলাল আর লুশাইবুড়ো খুব হল্লা জুড়ে দিল, তাই শুনে হাতিগুলো আবার পাহাড়ের উপর উঠে গেল৷ তারপর অনেকক্ষণ নদীর ধারে দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতি আর দেখতে পেলাম না, তবে ক্রমাগতই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম আর নদীর জল ঘোলাটে হয়ে উঠছিল৷

চারটে-সাড়ে-চারটের সময় অন্য লোকজন এসে পৌঁছল৷ নদীর ওপারে বন কেটে তাঁবু খাটানো হল, খুব বড়ো-বড়ো ধুনি আর পাহারার বন্দোবস্ত করা হল৷ আগেই বলেছি আমাদের সঙ্গে দুটো হাতি ছিল, মাহুতরা রোজ তাদের চরে খাবার জন্য বনে ছেড়ে দেয়, সেদিন কিন্তু তাঁবুর কাছে বেঁধে রাখল৷ ছেড়ে দিলে বুনো হাতিতে এ-দুটোকে ভুলিয়ে নিয়ে যাবে, নয়তো মেরে ফেলবে৷ লুশাইরা শুকনো বাঁশের মশাল তৈরি করে, লম্বা লম্বা কাঁচা বাঁশের আগায় বেঁধে রাখল৷ রাত্রে হাতি এলে ওই মশাল জ্বেলে, তার লম্বা বাঁশের বাঁট ধরে ঘুরিয়ে হাতি তাড়াবে৷ এমনি করে লুশাইরা তাদের খেত থেকে হাতি তাড়ায়৷

সে রাত্রে আর হাতির জ্বালায় ঘুম হয়নি৷ অন্ধকার হতেই হাতিগুলো আমাদের কাছে এল, আর বোধহয় ধুনির আলোতে আমাদের হাতি দুটোকে দেখতে পেয়ে তাদের ভারি খটকা লাগল, ও-দুটো আবার ওখানে কী করছে! পাঁচ-সাতটা হাতি মিলে এপারে আসবার জন্য এক-একবার নদীতে নামে, তারা নদীর মাঝামাঝি আসতে-না-আসতেই আমাদের হাতি দুটো ছটফট আর চিৎকার করতে আরম্ভ করে৷ অমনি আমাদের লোকরাও প্রাণপণে মশাল ঘুরিয়ে বিকট চিৎকার করতে-করতে ছুটে আসে আর হাতিগুলো দৌড়ে আবার ও-পারের বনে ঢোকে৷ সারাটা রাত এইভাবে কাটল৷ ভোরবেলা কতকগুলো হাতি পুবের পাহাড়ে আর কতকগুলো পশ্চিমের পাহাড়ে উঠে গেল৷

সকালে উঠে, চা খেয়ে, জিনিসপত্র বেঁধে আমরাও আবার পথ ধরলাম৷ সেই পুবের পাহাড়ে আমাদেরও যেতে হবে৷ রোজ যেমন যাই, আজও তেমনি চলেছি, আমার পিছনে যথাক্রমে শ্যামলাল, খাবারওয়ালা আর আমার চাকর গঙ্গারাম৷

কিছুদূর গিয়েই একটা ঝিল পেলাম, তাতে জল নেই কিন্তু খুব কাদা৷ আমরা বলাবলি করতে লাগলাম কোন দিক দিয়ে, কেমন করে ঝিল পার হব, এমন সময় সেই ঝিলের মাঝখানের শরবনের আড়াল থেকে উঠে একটা হাতি বাঁশবন ভেঙে সে যা হুড়মুড় করে ছুট দিল! পাহাড়-পর্বত যেন সব একেবারে ভেঙে পড়ল৷

যাই হোক, এতে আমাদের এই উপকার হল যে কোন দিক দিয়ে যে ঝিল পার হতে হবে তা আর আমাদের বুঝতে বাকি রইল না৷ সেই হাতির পায়ের দাগ ধরে আমরাও ঝিল পার হয়ে গেলাম৷ তখন লুশাই বুড়ো জিগগেস করল, ‘কোনদিকে যাব?’

আমি বললাম, ‘যেদিকে হাতি গেছে সেই দিকে৷’

হাতির পায়ের দাগ দেখে আর বাঁশ ভাঙা দেখে আমরাও সেইদিকে চলতে লাগলাম৷ খানিক দূর পাহাড় চড়ে বন্দুকটা আবার শ্যামলালের হাতে দিলাম৷

লুশাইবুড়ো আগে গিয়ে পাহাড়ের উপর পৌঁছল, পৌঁছেই ডেকে বলল, ‘মস্ত দেয়াল (হাতির রাস্তা), কোনদিকে যাব?’

আমি বললাম, ‘পুবদিকে যাও উপরের দিকে৷’

সে উপরের দিকে পঞ্চাশ-ষাট হাত উঠেছে, আমিও ততক্ষণে এসে দেয়ালে পৌঁচেছি, শ্যামলাল আমার চার-পাঁচ হাত পিছনে, গঙ্গারাম আর অন্য খালাসিটি আরেকটু পিছনে৷

দেয়াল ধরে উপরের দিকে হয়তো সবে আট-দশ হাত গিয়েছি, এমন সময় সামনে ভয়ংকর একটা গোলমাল, বাঁশ ভাঙার হুড়মুড়, জানোয়ারের গর্জন আর লুশাইবুড়োর চিৎকার৷ আমি হাঁকলাম, ‘কেয়া হুয়া রে?’

শ্যামলাল পিছন থেকে উত্তর দিল, ‘গেণ্ডা হোগা হুজুর৷’

সামনের দিকে চেয়ে দেখি লুশাইবুড়ো ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে নামছে আর তার পিছনে প্রকাণ্ড এক হাতি শুঁড় তুলে কামানের গোলার মতো আসছে৷

তাই দেখে আমি ‘বন্দুক লাও’ বলে পিছনে হাত বাড়িয়েছি, কিন্তু বন্দুক আর আসে না, চেয়ে দেখি শ্যামলাল লম্বা দেবার ফিকির করছে! দুই লাফে তাকে ধরে, দুই থাপ্পড় দিয়ে বললাম, ‘ভাগতা কাঁহা?’ তারপর বন্দুকটা কেড়ে নিয়ে উপরের দিকে ছুটলাম৷ বন্দুক হাতে মনে পড়ল তার এক নলে ছিটা আর-একটা নলে মাত্র গুলি ভরা৷ ছুটছি আর টোটা বদলাবার চেষ্টা করছি৷ সহজে কি বদলানো যায়? তাড়াতাড়িতে এক সেকেন্ডের কাজ পাঁচ মিনিটেও হতে চায় না৷

যাই হোক, কোনো রকমে ছিটা বদলে গুলি ভরলাম৷ তখনও দৌড়চ্ছি, তায় আবার উপরের দিকে, মাটির দিকে চোখ রেখে পাছে পড়ে যাই৷ গুলি ভরে, সামনের দিকে চাইলাম৷ সর্বনাশ! লুশাই বুড়ো দাঁড়িয়ে রয়েছে, হাতের দাখানা ফেলে দিয়েছে, রাস্তার মাঝখানে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ হাতিটা তার কাছ থেকে হাত ন-দশ মাত্র দূরে, এই ধরল বলে!

সেখানে রাস্তায় দুটো মোড় ছিল, আমার চোখের সামনেই হাতির কপালটা৷ আর কথা নেই, বন্দুক তুলে কপালে গুড়ুম করে ছেড়ে দিলাম৷ হাতি কিন্তু তাতে থামল না, এক পা আরও চলে এসেছে৷ এবার তার পাঁজর আমার সামনে৷ বন্দুক আমার তোলাই ছিল, গুড়ুম করে সেই পাঁজরে অন্য নলটি ছেড়ে দিলাম৷ এবার ওষুধ ধরল৷ আওয়াজও করা আর হাতির যা চিৎকার! পাহাড়বন থরথর করে কাঁপতে লাগল৷ আর সঙ্গে-সঙ্গে হাতিটাও ঘুরে কয়েক পা ছুটে গিয়েই কুড়ুঙ্গের ভিতর হুড়মুড় করে পড়ল— আবার যা চিৎকার!

আমি দুই গুলি মেরেই, পথ ছেড়ে দিয়ে আরও দুটো গুলি ভরে নিয়েছি, আর হাতিটার পিছনে আরও একটা চালিয়েছি, কিন্তু সে গুলিটা বাঁশে আটকে গেল, হাতির গায়ে লাগল না৷

বিপদ তো কেটে গেল, এখন চারদিকে চেয়ে দেখতে লাগলাম৷ লুশাই বেচারা তখনও সেইখানেই কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে৷ আমার কাছ থেকে মোটে ছ-ধাপ দূরে, আর হাতিটাকে যেখানে গুলি মেরেছিলাম, সে জায়গাটা লুশাইবুড়োর কাছ থেকে মোটে তিন ধাপ হবে৷ আমার তো মনে হচ্ছিল হাতির শুঁড়টা যেন ঠিক তার মাথার উপর ছিল৷ পিছনে চেয়ে দেখি কুড়ি-পঁচিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে গঙ্গারাম, শ্যামলাল আর অন্য খালাসিটা ঠকঠক করে কাঁপছে আর খালি বলছে, ‘বাবা রে বাবা, ওরে বাবা!’ তারা এগোয়ও না, পালায়ও না৷ গঙ্গারামের বেজায় দুর্দশা, ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে খালি বলে, ‘বাবা রে বাবা, এত্তা বড়া কপাল!’ হাতির কপালটাই শুধু তার চোখে পড়েছিল৷

আমি লুশাই বুড়োর কাছে গেলাম, বেচারা প্রাণের আশা ছেড়ে দিয়েছিল৷ আমি কাছে যাবামাত্র আমার পা জড়িয়ে ধরল, মুখে কথা নেই৷

তখন পর্যন্ত হাতির চিৎকারে বন-জঙ্গল কাঁপছে, আর যেদিক দিয়ে সে গিয়েছিল সেদিকে খালি রক্ত আর রক্ত!

আমরা হাতির কাছ থেকে লুশাই বুড়োকে বাঁচাতে ব্যস্ত আছি, আর ততক্ষণে আমাদের অন্য লোকজন সকলে এসে হাজির হয়েছে৷ বন্দুকের আওয়াজ শুনে তারা খুব ফুর্তি করতে-করতে আসছে— আজ খুব হরিণের মাংস খাওয়া যাবে৷ এসেই সামনে পেয়েছে শ্যামলাল, গঙ্গারাম আর খালাসিকে, তাদের মুখে খুব ভালো করেই শুনেছে ব্যাপারখানা কী! তখন আর কারো মুখে হাসি নেই৷

একজন লুশাই দোভাষী ছিল, সে কজন লুশাই কুলিকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে গেল হাতির কী হল৷ খালাসিরাও দু-চারজন তাদের সঙ্গে গেল৷

একটু দূর গিয়েই তারা চ্যাঁচামেচি লাগিয়েছে৷ দোভাষী আর দু-জন লুশাই ছুটে এসে বলল, ‘চলো, হাতিটা যেন কুড়ুঙ্গের ভিতর পড়ে আছে, আজ হাতির মাংস খাওয়া যাক৷’

আমি কিছুতেই রাজি হলাম না, বললাম, ‘বিপদ কেটে গেছে৷ লোকটার প্রাণ বেঁচেছে এই ঢের, আর হাতির মাংস খেয়ে কাজ নেই৷’

তখন তারা আমার বন্দুকটা চাইল, তাও দিলাম না দেখে শুধু দা, কুড়ুল নিয়ে চলে গেল৷ তারা কুড়ুঙ্গের ভিতর কিছু দূর নেমে গেল, তারপর আবার চ্যাঁচামেচি, তারপরই আবার তারা ছুটে এসে হাজির৷

‘শিগগির এসো, শিগগির এসো— হাতির বাচচা!’

ছোট্ট একটা হাতির বাচচা, যে পথ দিয়ে হাতিটা কুড়ুঙ্গের মধ্যে নেমেছে, সেই পথ দিয়ে নামছে৷ ওই হাতিটারই বাচচা, হাতিটা কুনকি ছিল৷ বাচচাটার এক পায়ে চোট লেগেছে, বেচারি খোঁড়াচ্ছে৷ দোভাষী দৌড়ে গিয়ে তার শুঁড় ধরেছিল আর ব্যস্ত হয়ে অন্য সকলকেও এসে ধরবার জন্য ডাকছিল, কিন্তু কেউ আর ভরসা করে এগোলো না৷ বাচচা হলে কী হবে, হাজার হোক, হাতিরই তো বাচচা! সে ঢিপঢাপ করে দোভাষীকে ঢুঁ মারতে আরম্ভ করল আর ছোটো-ছোটো পা দিয়ে লাথি! দোভাষী তাই থতোমতো খেয়ে ছুটে এসেছে আমাদের খবর দেবার জন্য৷

ওই বাচচার খাতিরেই তার মা লুশাইবুড়োকে মারবার জন্য তাড়া করেছিল৷ সন্তানের মায়া! বাচচাটা চলতে পারেনি বলে সে তাকে নিয়ে পালের সঙ্গে যেতে পারেনি, পিছনে পড়েছিল৷ তারপর বুড়ো গিয়ে হঠাৎ তার সামনে পড়াতে বোধহয় বেচারির মনে হয়েছিল— ওই যাঃ, বুঝি আমার বাচচাকে ধরে নিতে এসেছে!

.

লুশাই পাহাড়ে বাঘ মারবার এক মজার ফন্দি দেখেছিলাম৷ বনের ভিতর বাঘ ভাল্লুক চলবার পথ আছে, কোনপথ দিয়ে বাঘরা বেশি যাতায়াত করে লুশাইরা আগে সেই খোঁজ নেয়৷ তারপর সেইপথের ধারে, যেখানে পাহাড়ের গা খুব ঢালু, সেখানে কোদাল দিয়ে খুঁড়ে আরও বেশি খাড়া আর গভীর গর্ত করে রাখে৷

তারপর লম্বা-লম্বা বাঁশের খোঁটা পুতে, ওই গর্তের উপর, রাস্তার বরাবর সমান করে বড়ো মাচা বাঁধে৷ তার উপর মাটি ফেলে, ঘাস, লতাপাতা বসিয়ে ঠিক পাহাড়ের গায়ে অন্য জমির সঙ্গে বেমালুম মিলিয়ে দেয়৷ মাচার নীচে অবশ্য ফাঁক থাকে, আর তার নীচে মাটিতে এই বড়ো-বড়ো ভীষণ ধারালো বল্লম পোঁতা থাকে৷ সমস্তটাকে ডালপালা দিয়ে ঢেকে এমন সুন্দর করে রাখে যে হঠাৎ দেখে বোঝবার জো নেই যে এর ভিতর আবার এত কারসাজি আছে৷ তারপর মাচার উপর বেশ মোটাসোটা শুয়োরছানা বা কুকুর এমন ভাবে বেঁধে রাখা হয় যে মাচার উপর না-চড়ে তাকে ধরবার উপায় নেই৷

বাঘমশায় হেলতে-দুলতে পথ দিয়ে আসেন, আর দেখতে পান সামনেই ফলার প্রস্তুত! ব্যস, অমনি হালুম বলে দে লাফ, আর হুড়মুড় করে মাচা ভেঙে একেবারে বল্লমের উপর পড়া! ফলার রইল মাথায় আর বল্লম বিঁধল পেটে, আর চ্যাঁচানির চোটে আকাশ গেল ফেটে! তারপর যতই হাত-পা ছোঁড়ে, আরও বল্লম গায়ে বিঁধতে থাকে, ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে সব শেষ!

.

একে তো বিশ্রী রাস্তা, দেয়ালের মতো খাড়া পাহাড়, তাতে আবার বৃষ্টি পড়েছে, গোদের উপর যেন বিষ ফোঁড়া! আমি কাজে চলে গেছি, লোকদের বুঝিয়ে বলেছি একটা নদীতে পৌঁছে তাঁবু লাগাবে৷ তিনটের সময় কাজ শেষ করে ফিরছি৷ ভীষণ জঙ্গল, মানুষের সমাগম নেই, খালি দলে-দলে হাতি ফেরে৷ সেইজন্য একটু লম্বালম্বা পা ফেলে চলছি, পাছে রাত হয়ে যায়৷

লোকদের যেখানে ক্যাম্প করতে বলেছিলাম, তার দু-আড়াই মাইল আগেই তাঁবু পেলাম৷ আমাদের একটা হাতি পিছলে পড়ে চোট খেয়েছে, তাকে নিয়ে আর তারা বেশি দূর এগোতে পারেনি৷ কাজেই আর কী করা যায়৷ সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এখন ইচ্ছা না হলেও সেখানেই থাকতে হবে৷ তাঁবুটা একটা ছোটো নদীর ধারে রাস্তা থেকে কুড়ি-পঁচিশ হাত দূর৷ নদীর উপর একটা বাঁশের সাঁকো আছে৷

খাওয়া-দাওয়া সেরে সকলে শুয়েছি৷ এপ্রিল মাস, বেজায় গরম বলে তাঁবুর দরজা আর বন্ধ করিনি৷ দু-জন খালাসি— ডম্মর আর শোধন— নদীর ধারে বালির উপরে রান্না করে, খেয়ে, সেখানেই শুয়ে আছে৷

image16.jpg

প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমারও একটু-একটু তন্দ্রা আসছে, এমন সময় শুনলাম গঙ্গারাম দোভাষীকে বলছে, ‘দোভাষী ভাই, ওটা কী, ওই যে পোলের উপর দিয়ে আসছে?’

আমি কান খাড়া করে শুনতে লাগলাম, বাঁশের পোলের উপর দিয়ে একটা বেশ বড়ো আর ভারি জানোয়ার আসছে, পোলটা তার ভারে ক্যাঁচম্যাচ করছে৷ পাশেই বন্দুক আর টোটা ছিল, হাতে নিয়ে চুপি-চুপি তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলাম৷ পোলটার মাঝামাঝি এক জায়গায় গাছের ফাঁক দিয়ে একটু চাঁদের আলো পড়েছিল৷ সেই জায়গাটুকুতে জানোয়ারটা আসবামাত্র দেখলাম— প্রকাণ্ড বাঘ! তখুনি আবার সেটা অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেল৷ তখন আমি বন্দুকে ছিটা ভরে গুড়ুম-গুড়ুম দুটো আওয়াজ করলাম, আর বাঘটা দুই লাফে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল৷ গুলি মারবার সাহস হল না, কারণ অন্ধকারে ঠিক জায়গায় না লাগবারই কথা, অনর্থক তাকে জখম করে বিপদ ডেকে আনা কেন?

বন্দুকের আওয়াজে সকলেরই ঘুম ভেঙে গেছে৷ শোধন তো উঠেই একদৌড়ে তাঁবুর মধ্যে৷ ডম্মর কিন্তু কিছুতেই এল না৷ হাতির মাহুত ডেকে বলল, ‘ভাগ, ডমরা, ভাগ, শের আয়া!’ ডম্মরের ভ্রূক্ষেপ নেই৷ তখন দু-তিনজন ছুটে গিয়ে তাকে ঠেলতে লাগল৷ সে জেগেই ছিল, ঠেলা খেয়ে চটে লাল!

‘কিঁউ দিক করতা? শের আয়া তো কেয়া হুয়া? খায়গা তো হামকো খায়গা, তুম লোগকা কেয়া হ্যায়? হাম নেহি যায়েঙ্গে৷’

সত্যি-সত্যি সমস্ত রাত সে ওই বালির উপর কাটাল, পোলটা তার কাছ থেকে মাত্র পনেরো-ষোলো হাত দূরে ছিল৷

ডম্মরের সত্যিই খুব সাহস ছিল৷ একদিন তো চলেছি, সঙ্গে লুশাই বুড়ো আর শ্যামলাল৷ সন্ধ্যা হয়ে আসছে, তখনও হাতি আর অন্য লোকজনদের দেখা নেই৷ মেজাজটাও তাই একটু বিগড়ে ছিল৷ একটা মস্ত সম্বর হরিণকে গুলি করেছিলাম, সেটাও দু-তিনবার ডিগবাজি খেয়ে উঠে পালিয়ে গেল, চারদিকে খালি রক্ত আর রক্ত! বেজায় ঘন বেতবন, তার মধ্যে দৌড়ানো যায় না, হরিণটা প্রাণের দায়ে বেতবন অগ্রাহ্য করে তার কাঁটা সব ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল৷ পাকোয়া নদীতে জলের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম সে সাঁতরে পার হচ্ছে৷ আমরা যখন জলের কিনারায় পৌঁছলাম, অন্য পারে হরিণের পিছনটা শুধু এক মুহূর্তের জন্য দেখতে পেলাম৷ তাও আবার বন্দুক তুলতে-না-তুলতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল৷

প্রায় তিনটে বাজে, ওইখানেই বসে রইলাম৷ লুশাইবুড়ো ক্রমাগত বলছিল নদী পার হতে পারলে হরিণটাকে পাওয়া যেত৷ কিন্তু নদী পার হবার উপায় নেই, অনেক জল৷ নিরাশ হয়ে ফিরে এসে, যেখানে প্রথমে হরিণটাকে দেখেছিলাম সেখানে বসে পড়লাম, হাতি-টাতি এলে এখানেই তাঁবু ফেলব৷

চার-পাঁচজন কুলি এসে পৌঁছল৷

‘হাতি আর অন্য লোকরা কত দূরে?’

‘বহুৎ দূর!’

আমাদের তো চক্ষুস্থির! এ যে সন্ধ্যা হয়ে এল৷ তখন হাতির গলার ঘণ্টা শুনতে পেলাম৷ অন্ধকার হল, তিন-চারজন খালাসি আমার বিছানা নিয়ে এসে হাজির হল৷

‘আর হাতি?’

‘হুজুর, চোখে দেখা যায় না, হাতি আর বেতের মধ্যে চলতে পারছে না৷’

ডাকলাম, হাতির মাহুত বললে, ‘হুজুর, চলনে নেহি শকতা৷’

নিরুপায় হয়ে যে যেখানে ছিল সেইখানেই শুয়ে রইল, কারো খাওয়া-দাওয়া নেই, আগুন জ্বেলে সব রাত কাটাল৷ অথচ খোরাক কাছেই মজুত আছে, কিন্তু আসবে কী করে?

ভোর না হতেই হাতি আর বাকি লোকজন এসে উপস্থিত হল৷ দেখা গেল সবাই এসেছে, খালি ডম্মর নেই৷ টিন্ডেলকে তাড়া করলাম, ‘হতভাগা, তোর লোক গেল কোথায়?’

সে বললে, ‘হুজুর, আমার খেয়াল ছিল বুঝি বা আগে-আগে আপনার সঙ্গে চলে এসেছে৷’

বড়োই ভাবনা হল৷ তৎক্ষণাৎ দু-জন খালাসি, দু-জন লুশাই কুলি আর টিন্ডেলকে ফিরিয়ে পাঠালাম৷ বললাম যেন আগের দিনের আড্ডা পর্যন্ত দেখে আসে, আমরা তো মাত্র তিন-চার মাইল পথ এসেছি৷

লোকজন, হাতি, কারো খাওয়া হয়নি, সবাই ক্লান্ত৷ আামরা মাইল দুই চলে তাঁবু ফেলবার জোগাড় করতে লাগলাম৷ বন পরিষ্কার করে, তাঁবু ধরে টানাটানি করছে, এমন সময় টিন্ডেল আর তার সঙ্গের লোকরা ডম্মরকে নিয়ে এসে হাজির হল৷

‘আরে হতভাগা! কোথায় ছিলি?’

সে বললে সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, মাথাও ব্যথা করছিল, তাই পথের ধারে বসে একটু দম নিচ্ছিল, কিন্তু ঘুম এসে গেল৷ যখন ঘুম ভাঙল তখন একেবারে সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ কী আর করা, পথ থেকে সরে গিয়ে একটা ঝোপের মধ্যে শুয়েছিল, সকালে উঠে নিজেই চলে আসছিল, পথে টিন্ডেলের সঙ্গে দেখা৷

সকলে জিগগেস করল, ‘হতভাগা, ভয় করল না?’

‘আরে ভাই, শো গয়া বিলকুল, ক্যায়সে ডর লাগেগা?’

যাক, ওই জঙ্গলে ভীষণ সব জানোয়ার, ভগবান ওকে রক্ষা করেছেন৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *