উপন্যাস
বড়গল্প
ছোটগল্প
1 of 2

বড়মামার সাপ-লুডো

বড়মামার সাপ-লুডো

বড়মামা বসে আছেন। আজ রবিবার। রবিবার ডাক্তাররা ডাক্তারি করেন না। ডাক্তারদের সঙ্গে সঙ্গে আজ সব অসুখেরও ছুটি। মেজোমামা ওপাশে জানলার ধারে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছেন। পাশে চায়ের কাপ, মাঝে মাঝে একটু একটু চুমুক দিচ্ছেন।

বড়মামার এই বসে থাকাটা, অকারণে বসে থাকা নয়। তিনি এর নাম দিয়েছেন, ‘সানডে সেশান।’ এটা না কি কালচারাল অ্যান্ড হিউম্যান অ্যাফেয়ারস মিনিস্ট্রির আন্ডারে একদিন চলে যাবে। এর উদ্দেশ্য হল, চরিত্রের উন্নতি করা, সাহস বাড়ান, পরোপকারী হওয়া এবং ভালোবাসা আনা। জীবজন্তু, গাছপালা, কীটপতঙ্গ, ঘটি, বাটি, চেয়ার সব নিছুকে ভয়ঙ্কর ভাবে ভালোবাসা।

এই সেসানে আপাতত আমি একা। আমি তৈরি হলে, বড়মামা আমাকে ‘অ্যামবাসাডার’ করবেন। একটা সাদা রঙের স্কুটার কিনে দেবেন। তার সামনে পতপত করে একটা সাদা পতাকা উড়বে। সেই পতাকার আঁকা থাকবে একটা শঙ্খ। আমি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বাণীপ্রচার করব।

 ভুলে যাও মামলা

 রুখে দাও হামলা

 এসো ভাই, এসো ভাই

 বলো ভাই, ভাই, ভাই।।

এই সেশানের এটা দ্বিতীয় দিন। প্রথমে সংকল্প পাঠ। বড়মামা বললেন, ‘বলো, প্রত্যেকটা লাইন তিনবার করে। আমার সঙ্গে সঙ্গে,

 আমি মানুষ, আমি মানুষ, আমি মানুষ।

 আমি গরু নই, আমি গরু নই, আমি গরু নই।।

মেজোমামার কান এদিকেই ছিল। তিনি প্রতিবাদ করলেন, ‘উঁহু উঁহু, হল না, হল না। তুমি ঘৃণা শেখাচ্ছ, গরুর প্রতি ঘৃণা। যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনি গাছপালা, জীবজন্তুও সৃষ্টি করেছেন। গরু মানুষের চেয়ে কম কিসে?’

বড়মামা মানলেন, ‘তা ঠিক। আমাদের তো সাড়ে ছটা গরু। তার মধ্যে দুটো জার্সি। জার্সির কম দাম?’

‘তবেই বোঝ! দুধ খাচ্ছ, ঘি খাচ্ছ, ছানা খাচ্ছ। বলতে নেই, মধ্যপ্রদেশটি দিন দিন আয়তনে বাড়ছে, যেন পেটে একটি বড় সাইজের কুমড়ো ফিট করেছ।’

‘যেমন তোমার গর্দানটি, যেন উলটানো ঘট। তার ওপর একটা ফুটবল।’

‘এই যে পারস্পরিক হানাহানি, এটা কি ভালো?’

‘তুমিই প্রথম শুরু করলে।’

‘আমি শুরু করলেও তুমি চালু রাখবে কেন। তুমি তো একজনকে জীবনের উচ্চ আদর্শ শেখাতে বসেছ! শিক্ষক! শিক্ষককে কত সংযত, সহিষ্ণু হতে হবে।’ একটুতে ক্ষেপে গেলে ওর চরিত্রতেও সেইটা চলে যাবে। কথায় কথায় তোমার মতো ধেই ধেই করে নাচতে শিখবে। তোমার জীবনটা তো জীবন নয়, ড্যান্স ড্রামা।’

বড়মামা অতি কষ্টে নিজেকে সংযত রেখে জানতে চাইলেন, কি রকম? কি রকম?’

মেজোমামা বললেন, ‘তুলনা জিনিসটা ভালো নয়। অন্য কিছু বলো।’

বড়মামা বললেন, ‘বেশ! এই বলুক, আমি শ্রেষ্ঠ, আমি শ্রেষ্ঠ…।’

মেজোমামা বললেন, ‘হল না। এ তো অহঙ্কার! অহঙ্কারী হওয়া কি ভালো?’

বড়মামা বললেন, ‘তা ঠিক। অহঙ্কার ভালো নয়। তাহলে কি করা যায়।’

মেজোমামা মৃদু হেসে বললেন, ‘নতুন কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই বড়দা। পুরনো ধরে থাকাই ভালো, অন্তত মানুষের ব্যাপারে! জানো তো সেই প্রবাদ, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। নতুন চালে ফ্যান বেশি, জ্যাবজ্যাবে। চাল হিসেবে দেখতে ভারি সুন্দর। ভাত হলেই একতাল চ্যাটচ্যাটে পিণ্ডি। খাদ্য হিসেবেও অপকারী।’

বড়মামা বললেন, ‘সবই তো বুঝলুম, এখন এই সমস্যার কি সমাধান!’

মেজোমামা বললেন, ‘কেন? সংকল্প এই হোক,

 সকালে উঠিয়া আমি,

 মনে মনে বলি,

 সারা দিন আমি যেন

 ভলো কাজ করি।

 আদেশ করেন যাহা

 মোর গুরুজনে,

 আমি যেন সেই কাজ,

 করি ভালো মনে।।

ল্যাঠা চুকে গেল। এতে মানুষও নেই। গরু, ভেড়া, ছাগলও নেই। আছে আমি, আমার গুরুজন, গুরুজনের আদেশ, আছে আমার মন, আর গুরুজনের আদেশ ভালো মনে, হাসি মুখে পালন। ফার্স্ট ক্লাস।’

বড়মামা খুশি হয়ে বললেন, ‘তোর কোনও তুলনা নেই। তুই আমাদের, তথা দেশের, তথা জাতির, তথা বিশ্বের, তথা…।’

মেজোমামা বললেন, ‘আর তথা নেই, শেষ।’

বড়মামা বললেন, ‘আছে আছে, আমি বিমলবাবুর বক্তৃতা রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে শুনেছি। একডজন তথার পর বলেছিলেন, গর্বের। তোর তো মাত্র তিনটে হল। তুই আমাদের গর্ব। সাধে তোকে মেজো বলে! মাজা, ঘষার পর এই জিনিস দাঁড়িয়েছে। ঝকঝকে স্বার্থপর!’

মেজোমামা হাসি হাসি মুখ নিমেষে ফিউজ।

বড়মামা পরিবর্তন লক্ষ্য করে বললেন, ‘কি হল!’

মেজোমামা বললেন, ‘কি বললে, স্বার্থপর?’

‘কেন? ভুল কি বলেছি? আমি অহঙ্কার করতে চাই না, কিন্তু আমি তোর চেয়ে অনেক বেশি স্বার্থপর। তার জন্যে অবশ্যই আমার প্রফেশান দায়ী। সারাটা দিনই তো আমাকে পরের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর হাঁচি, ওর কাশি।’

মেজোমামা হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন, ‘কি বাংলাই শিখেছ ডাক্তার!’ কিছু বলার নেই। ইংরেজ আমলে এক বাঙালি আইনজীবী জজ সাহেবকে তোয়াজ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ইওর ওনার লুকস ব্লাডি। বিলেত থেকে সায়েব সবে এসেছেন লাল টকটকে হয়ে। সায়েব তো পেপারওয়েট ছুঁড়ে মারতে যান আর কি! তখন সেই উকিল বুঝিয়ে দিলেন, ‘ব্লাড অন ফেস, ব্লাড অন বডি, হেলথ, হেলথ।’

‘তাহলে কি বলতে হবে।’

‘বলতে হবে পরার্থপর। যাক, ও ভাবে হবে না। দাঁড়াও, আমি যাচ্ছি।’

মেজোমামা ওপাশ থেকে এপাশে এসে বসলেন, আমাদের কাছে।

বড়মামা বললেন, ‘এই যে তুই এলি, বুকটা ভরে গেল। হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল।’

‘কি করব? পরীক্ষার খাতা ফেলে আসতে বাধ্য হলুম। শিক্ষক তো! ছেলেটাকে ভুল পথে মানুষ করার চেষ্টা হচ্ছে। উদাস হয়ে বসে থাকা যায়! কে কাকে মানুষ করবে? যে মানুষ করবে সে নিজে কি মানুষ হয়েছে?’

বড়মামা বললেন, ‘তার মানে আমি?’

‘শুধু তুমি কেন? আমিও কি মানুষ?’

বড়মামা অবাক হয়ে বললেন, ‘তা হলে আমরা কি?’

মেজোমামা বললেন, ‘আমরা মানুষের মতো দেখতে। কিন্তু আমরা মানুষ নই। আমাদের ভেতরে অনেক আবর্জনা আছে। সেই সব আবর্জনা ফেলতে হবে।’

বড়মামা বললেন, ‘সে তোমার পেট থাকলেই আবর্জনা থাকবে। কি করা যাবে?’

মেজোমামা গম্ভীর গলায় বললেন, ‘আমি সে-আবর্জনার কথা বলছি না। আমি আমাদের মনের আবর্জনার কথা বলছি।’

মেজোমামা আমাকে বললেন, ‘বিলে! ওই ওয়েস্টপেপার বাস্কেটটা নিয়ে আয়।’

ওয়েস্টপেপার বাস্কেট আবার কি হবে! যাই হোক আদেশ পালন করলুম। একটু আগেই শুনেছি, আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে।

মেজোমামা বললেন, ‘খালি করে নিয়ে আয়।’

‘বেশ! তাই হোক। যা ছিল সব ফেলে দিয়ে নিয়ে এলুম।

মেজোমামা বললেন, ‘রাখ এখানে। এটা হল প্রতীক। প্রতীকের ইংরিজী?’

‘সিম্বল!’

‘গুড। এটাকে ঘিরে গোল হয়ে বসব।’

ঠিক এই সময় মাসিমা ঘরে ঢুকলেন, ‘পাগল দুটো কি করছে! মেঝেতে কেন? মাঝখানে ওটা কি? বাস্কেট! আতা খাওয়া হচ্ছে?’

অনেক সময় আতা এলে দুজনে একটা ঝুড়ি নিয়ে বসেন, সেই ঝুড়িতে বিচি ফেলেন এক ঝুড়ির মতো বিচি হলে, আতা খাওয়া শেষ। অনেক সময় আতার বিচি ধুয়ে পরিষ্কার করে নানারকম আর্ট হয়। সে বেশ মজার।

মেজোমামা বললেন, ‘বসে পড়। আমরা মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি।’

মাসিমা আমার পাশে বসতে বসতে বললেন, ‘ব্যর্থ চেষ্টা। যা কোনও দিনই হবে না, তার চেষ্টা করে সময় নষ্ট কোরো না। মাঝখানে এই বাস্কেটটা কেন?’

মেজোমামা বললেন, ‘খুব ভালো সময়ে এসেছিস কুসি। একটু ধৈর্য ধরে বোস।’

মাসিমা বললেন, ‘বেশ বসলুম।’

মেজোমামা বললেন, ‘এইবার আমাদের বাছ।’

মাসিমা অবাক হয়ে বলবেন, ‘সে আবার কি?’

মেজোমামা বললেন, ‘যে ভাবে চাল বাছে। কালো চাল, ধান যেমন বেছে বেছে ফেলে দেয়, সেই ভাবে, আমাদের চালে যে বেচাল আছে, সেই বেচাল ধরে ধরে দে, আমরা ফেলে দি। খুব নিষ্ঠুর ভাবে বল। কোনও খাতিরের দরকার নেই।’

মাসিমা বললেন, ‘তোমরা ভীষণ অহঙ্কারী। মানুষকে মানুষ জ্ঞান করো না।’

মেজোমামা বললেন, ‘কি রে বড়দা?’

বড়মামা বললেন, ‘ঠিক ধরেছ। সর্বক্ষণ অহঙ্কারে মট মট করছি। লোক দেখলে প্রথমেই যেটা মনে হয়, হ্যাঃ, এ আবার কে। কে হরিদাস পাল। ফুঃ, ভুঃ।’

মেজোমামা বললেন, ‘আমারও ওই একই কেস। আমার বোধহয় বড়দার চেয়ে বেশি অহঙ্কার। নিজেকে মনে করি জগতের শ্রেষ্ঠ অধ্যাপক। অন্য কোনও লোকের মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না। রোজ সকালে দাড়ি কামাবার সময় বেশ একটা মজা হয়। নিজের মুখই আয়না, তবু বলি, কে তুই! তারপর নিজের ভালো বুঝতে পেরে হেসে ফেলি—ওটা তো আমি! আমারই মুখের ছবি! তখন বলি, হ্যাললো, প্রফেসার!’

বড়মামা বললেন, ‘আমার অহঙ্কারের অবস্থা শুনবি, আমার নাম ধরে কেউ ডাকলে রাগ ধরে যায়। ডাক্তারবাবু বললে ঠিক আছে। আর স্যার বললে তো কথাই নেই।’

মেজোমামা বললেন, ‘নাও, ফেলো। এই ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে অহঙ্কার ফেলে দাও।’

বড়মামা বললেন, ‘তোরটাও ফেল।’

মেজোমামা বললেন, ‘কখন ফেলে দিয়েছি। এরপর কুসি?’

মাসিমা বললেন, ‘এইবার রাগ। তোমাদের বিখ্যাত ক্রোধ।’

বড়মামা বললেন, ‘ঠিক বলেছিস। আমার এত রাগ, কথায় কথায় রেগে যাই। সব সময় দাঁত খিঁচোচ্ছি। সব সময়েই যেন টুথ ব্রাশ। সেদিন রেগে গিয়ে ফুলগাছের টবে এক লাথি। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখটা গাড়ির বনেটের মতো উলটে গেল।’

মাসিমা বললেন, ‘ও, টবটা তুমিই ভেঙেছ?’

মেজোমামা বললেন, ‘আমারও তো ওই এক কেস। আমার এত রাগ, দেহের উত্তাপ সব সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দু’ডিগ্রি বেশি। সব সময় নাইনটি নাইন।’

বড়মামা বললেন, ‘নে, ফেল। ফেলে দে। ক্রোধ ফেলে দে।’

মেজোমামা বললেন, ‘এ-এ-ই ফেললুম।’

বড়মামা বললেন, ‘হিংসা। তোর হিংসা আছে?’

মেজোমামা বললেন, ‘নেই আবার! আমার চেয়ে কারো ভালো হয়েছে দেখলে, আমার জ্বর হয়, খিদে কমে যায়। তার সঙ্গে কথা বন্ধ হয়ে যায়। সময় সময় আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে।’

বড়মামা বললেন, ‘আমার এত হিংসে, যে টাক পড়ে গেল। কারুর ভালো হয়েছে শুনলে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হয়।’

মেজোমামা বললেন, ‘ফেলো ফেলো, ফেলে দাও। ওটাকে অক্টোপাসের মতো দেখতে। দূর করে ফেলে দাও।’

বড়মামা বললেন, ‘মেজো, তোর লোভ আছে?’

মেজোমামা বললেন, ‘নেই আবার? কারো কাছে কোনও ভালো জিনিস দেখলেই আমার পেতে ইচ্ছে করে। এই সেদিন প্রফেসার বোসের কাছে একটা বিলিতি পার্কার দেখার পর থেকে আমার রাতের ঘুম চলে গেছে।’

বড়মামা বললেন, ‘একই ব্যাপার। সেদিন এক রোগীর আঙুলে একটা পাথর দেখলুম। বড়লোক। দেখেই বুঝেছি, হীরে। আমাদের সত্যেনকে জিগ্যেস করলুম, হীরের কি দাম! ও তো পাথরের কারবারী। বললে, রিয়েল হীরে লাখ, দেড়লাখ।’

মেজোমামা বললেন, ‘ফেলে দাও, ফেলে দাও। বড় বাজে জিনিস। আচ্ছা, তোমার টাকা-পয়সা খরচ করতে কেমন লাগে বড়দা?’

বড়মামা বললেন, ‘খুব খারাপ। পয়সা বের করতে হলেই মনে হয় মরে যাই। বাংলায় যাকে বলে, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার। কেউ যদি বিপদে পড়ে সাহায্য চায় আমি তখন পাথরের মতো হয়ে যাই।’

মেজোমামা বললেন, ‘আমার কেস আরও খারাপ। পাছে খরচ করতে হয়, এই ভয়ে সব টাকা ফিক্সড। বলতে গেলে আমার মতো গরিব খুব কম আছে।’

বড়মামা বললেন, ‘তার মানে, আমরা কৃপণ!’

মেজোমামা বললেন, ‘অবশ্যই। হাড় কেপ্পন।’

বড়মামা বললেন, ‘ফেল, ফেল, কৃপণতা ফেলে দে।’

নিঃশব্দে ঘরে ঢুকেছেন আমাদের মনোজ কাকু। এক সময় আর্মিতে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘কিচ্ছু ফেলো না। কিচ্ছু ফেলো না। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, যাকে রাখো সেই রাখে। ইংরেজিতে আছে, ওয়েস্ট নট ওয়ান্ট নট। এমন গোল হয়ে বসে তোমরা কী করছ?’

মাসিমা বললেন, ‘আমরা সাপলুডো খেলছি।’

‘অ, স্নেকস অ্যান্ড ল্যাডারস। কখনো সাপের লেজে। কখনো সাপের মুখে। এই ওপরে, তো এই নীচে। তাহলে আমিও বসে যাই।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *