উপন্যাস
বড়গল্প
ছোটগল্প
1 of 2

বড়মামার আশীর্বাদ

বড়মামার আশীর্বাদ

আমার বড়মামা, সে তো একটা সম্পর্ক। সকলের কাছে তাঁর পরিচয়, নামকরা এক ডাক্তার। মজার মানুষ। প্রেমিক মানুষ, দরদি মানুষ। অনেকে এমনও বলেন, ডাক্তার আমাদের ভগবান।

জগন্নাথবাবুর সঙ্গে ডাক্তারবাবুর খুব মজার সম্পর্ক। জগন্নাথবাবুকে দেখলে মনে হয়ে সত্যযুগের মানুষ। সহজ সরল। দেহটা বিরাট। মুখটা বালকের মতো। বড় বড় দুটো চোখ। চোখে সব সময় খেলা করে একটা হাসি হাসি ভাব। এত সরল যে সকলের সব কথা বিশ্বাস করেন। পূর্বপুরুষরা খুব বড়লোক ছিলেন। অবস্থা পড়ে যাওয়ার পর, বিষয় সম্পত্তি সব বিক্রি হতে লাগল। এই বিক্রি করতে করতে, জগন্নাথবাবু হয়ে গেলেন বাড়ি-জমির দালাল। একালে বলবে, ‘রিয়েল এস্টেটের বিজনেস’। জগন্নাথবাবুর বর্তমান অবস্থা এখন বেশ ভালোই। পরিবার, পরিজন বড়লোকি চালে চললেও, জগন্নাথবাবু খুব সামান্য ভাবেই থাকেন।

কথায় কথায় ডাক্তারকে বলেন, একসময় দুবেলা খাবার জুটত না। রাত্তিরবেলা প্রায়ই নো-মিল, আমার কি লপচপানি চলে! একালের ওদের সঙ্গে আমি পেরে উঠব না ডাক্তার! লোকে আগে ত্যজ্যপুত্তুর করত, এই জেনারেশান ত্যজ্যপিতা করে। আপনি সংসার করেননি, বেঁচে গেছেন। এ যে কি কাল পড়েছে! আমারও বাড়ি ঢুকতে ভয় করে।

চেম্বারে সকালের ‘রাশ’ কেটে গেল জগন্নাথবাবু একবার আসবেনই আসবেন। সেই সময় বড়মামা বিরাট এ গেলাস চা নিয়ে বসেন। দুজনেই চায়ের ভক্ত। কম্পাউন্ডার বিশ্বনাথদা সঙ্গে সঙ্গে আর একটা গেলাস এগিয়ে দেন।

বেলা একটা। ডাক্তারদের সময়জ্ঞান থাকে না। আমাদের জগন্নাথবাবুও সেই দলেই পড়েন। ঢাউস দু-গেলাস চা নিয়ে দুজনে বসেছেন, যেন, ‘ভোর হল দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে।’

বড়মামা জিগ্যেস করলেন, আজকে নাড়ির খবর কি?

সকালের দিকে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল।

সে ভালো। ঘড়ি কিছুক্ষণ অফ করে রাখলে ব্যাটারি অনেক দিন চলে।

নাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে তো মানুষ মারা যায়!

ধুর, ও তো ডাক্তারদের ধারণা। সঙ্গে সঙ্গে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেয়, লোকটাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

না পোড়ালে তো পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে।

নাও ছড়াতে পারে। সবাই কি আর সত্যি সত্যি মরে! আমাদের যে ধৈর্য নেই। খাট এসে গেল, ফুল এসে গেল। কাঁধে তুলে দৌড়ল, হরি বোল, হরি বোল। ঢুকিয়ে দিল চুল্লিতে। চিৎকার করছে, বেঁচে আছি, বেঁচে আছি। কে শুনছে। কোনও শব্দই তো বাইরে আসবে না।

আপনি মনে হয় ঠিক বলছেন। আমার এখনো মনে হয়, আমার বাবা মারা যান নি।

কী রকম?

চিতায় তো শোয়ানো হল। আমাকে বললে মুখাগ্নি করো। হাতে জ্বলন্ত কাঠ। ঠোঁটে ঠেকাতে যাচ্ছি, স্পষ্ট শুনলুম বাবার গলা—অ্যায়। আমি তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলুম। পরে বিরোধীপক্ষরা বলতে লাগল, অভিনয় করেছি। একথা আজই আপনাকে বললুম। কাউকে বলি নি।

বড়মামা বললেন, পুরোপুরি মরা অত সহজ নয়। মৃত্যু পায়ের দিক থেকে একটু একটু করে ওপর দিকে ওঠে। মাথাটা অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে। সাত তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে দিলে কী করা যাবে!

জগন্নাথবাবু মনে মনে কী একটা ভাবলেন, তারপর মোক্ষম একটা প্রশ্ন করলেন, তাহলে পাঁচফুট লম্বা একটা লোকের চেয়ে ছ’ফুট লম্বা একটা লোকের মরতে একটু বেশি সময় লাগবে কারণ, মৃত্যুর যাত্রা শুরু হয় পা থেকে শেষ হয় মাথায় উঠে।

বড়মামা বললেন, অবশ্যই। অঙ্কের হিসেব। আমার বাড়ির কি হল?

আরে, আমি তো সেই কথাটাই বলতে এসেছি। সুন্দর একটা বাড়ি পেয়ে গেছি। একেবারে গঙ্গার ধারে। বিলকুল ভাঙা। একেবারে হাওদা খানা। দোতলা ছিল। গঙ্গার দিকটা ধসে নেমে গেছে। ইচ্ছে করলে অমনি হড়কে জলে নেমে যেতে পারবেন। একটা ঘর কোনও রকমে আছে।

সাপ আছে?

নিশ্চয়ই আছে। থাকতে বাধ্য।

ভেরি গুড। কী দাম বলছে?

কেউ বেঁচে নেই, দাম কে বলবে?

তাহলে আবার কি? স্রেফ গুঁতিয়ে ঢুকে যেতে হবে।

এতদিন কেউ ঢোকে নি কেন?

ভূতের ভয়ে। বাড়িটায় খুন হয়েছে, গলায় দড়ি হয়েছে। রান্না করতে করতে আগুনে পুড়ে মরেছে। বিউটিফুল, বিউটিফুল সব কাণ্ড হয়ে গেছে।

থাক ওটা যেমন আছে থাক। আমার জন্যে অন্যরকমের একটা বাড়ি দেখুন। তার আগে নাড়িটা দেখি।

অনেকক্ষণ ধরে কবজির কাছে তিন আঙুলের কসরত চলল, যেন সেতার বাজাচ্ছেন। বেশ কিছুক্ষণ টিপে থাকার পর বললেন, ধরে রেখেছেন কেন, ছেড়ে দিন।

পাচ্ছেন না বুঝি? পাবেন না। আমি নিজেও দেখছি! মাঝে মাঝে থাকে না।

যোগসাধনা করেন বুঝি?

প্রাণায়াম আর কুম্ভক।

আই সি। থাক ভাবার কিছু নেই। এই যোগের বলে তৈলঙ্গস্বামী আড়াইশো বছর বেঁচেছিলেন।

একজন রুগি এলেন হাঁপাতে হাঁপাতে। বড়মামা সঙ্গে সঙ্গে জিগ্যেস করলেন, এ.টি.এস নেওয়া আছে?

ভদ্রলোকের নাম জানি না, তবে মুখ চেনা। ছোট একটা কারখানার মালিক।

ভদ্রলোক বললেন, অনেক আগে।

তাহলে নিতে হবে। ব্যান্ডেজ হয়েছে?

ভদ্রলোক অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন, আমি বলার আগে জানলেন কী করে?

এইটুকু ভগবানের দান, আর বাকিটা শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা। আপনার হাঁটা আর মুখ দেখে বুঝেছি, পায়ে লেগেছে।

আর বলবেন না, একেই বলে গ্রহ। আমারই সাইকেল আমার পায়ের ওপর দাম করে পড়ে গেল।

সুগার আছে?

নর্ম্যালের চেয়ে সামান্য হাই।

বড়মামা টেবিলের ওপর থেকে একটা টিউব ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, লাগাবেন।

ভদ্রলোক ইনজেকশান নিয়ে চলে যেতেই জগন্নাথবাবু বললেন, আপনাকে যত দেখি তত অবাক হই। আগের জন্মে ভগবান-টগবান ছিলেন?

ভদ্রলোককে চেনেন? নিতাই বোস, একসময় বিরাট ফুটবলার ছিলেন।

আবার চা এল। বেশ বড় রকমের একটা চুমুক মারলেন বড়মামা। জগন্নাথবাবু ধীর শান্ত মানুষ। তাঁর ছোট ছোট চুমুক।

বড়মামা বললেন, আপনি গঙ্গার তীরে আমার জন্যে ছোট্ট কুঠিয়া টাইপের একটা বাড়ি খুঁজুন। অনেক দিন পড়ে আছে। রোদে, জলে জানলা, দরজা শুকিয়ে গেছে। সাদাটে হয়ে গেছে। চারপাশে বড় বড় ঘাস আর আগাছা। তারই মধ্যে বেঁচে আছে বয়স্ক একটা গন্ধরাজ, টগর, পেয়ারা আর জবা। গঙ্গার দিকে খোলা-টানা একটা বারান্দা থাকবে। দু’ধাপ সিঁড়ি। নামলেই বড় বড় ঘাস। ভাঙাচোরা ইটপাতা পথ। গঙ্গার দিকে চলে গেছে। গড়িয়ে নেমে গেছে গঙ্গার জলে। বেলা বারোটার পর থেকে দালানটা পশ্চিমে রোদে ভেসে যাবে। একপাশে থাকবে ছোট্ট মতো একটা রাঁধবার জায়গা। সেটা থাকবে দক্ষিণ দিকে। উত্তর দিকে ছোট্ট একটা বাথরুম। টিনের দরজা। পশ্চিমে ছোট্ট একটা ঘুলঘুলি। দুপুরের চড়া রোদে ভেতরটা জ্বলে-পুড়ে খটখটে। একটাই বড়ঘর। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। সেই ঘরের মাঝখানে থাকবেন ঠাকুর, বড় একটা কাঠের সিংহাসনে। সেই ঘরেরই একপাশে কম্বল পেতে শোয়ার ব্যবস্থা।

বড়মামা একটু দম নিলেন। এক চুমুকে চায়ের গেলাস খালি।

যা, যা বলছি, মনে থাকছে তো?

জগন্নাথবাবু বললেন, ছবির মতো মনের পর্দায় আঁকা হয়ে যাচ্ছে।

তা হলে শুনুন, আরও আছে। পাশে একটা ছোট্ট শিবমন্দির অবশ্যই থাকবে। বেশ উঁচু দালান নিয়ে ঘেরা। তিন দিকে তিনটে দরজা। প্রাচীন মন্দির। চূড়ায় মহাবীরের পতাকা। তামা দিয়ে তৈরি। যখন যে-দিকে বাতাস বয়, সেই দিকে ঘুরে যায়। মন্দিরের পাশেই বুক পর্যন্ত উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটা কুঠিয়া। খুব পুরনো। বাইরের দেয়ালে শ্যাওলা ধরে গেছে। মাঝারি মাপের দুটো মাত্র ঘর। সেকালের পালিশ করা লাল মেঝে। বড় বড় ফাট ধরেছে। ভেতরের দেয়াল বিবর্ণ। পেছন দিকে একটা রক। অনেকটা জমি। সেখানে বিশাল এটা অশ্বত্থ গাছ। গঙ্গার বাতাসে সারা দিন গাছের পাতায় সিম সিম শব্দ। দুপুর একটায় একদল গাঙ শালিক কোথা থেকে উড়ে আসে। মহা কলরব। কত কথা, কত গান। তাদের মাঝে একটু ওপরের ডালে সুন্দরী বউ-কথা-কও। একা। শান্তশিষ্ট। মাঝে মাঝে ডাক ছাড়ে। যেন সুরের জিলিপি। পেছনের ওই জমিটা যেন একটা লন। তেমন ঘাস নেই; কিন্তু পরিষ্কার। ওই জমিটায় অশ্বত্থের ঝরা পাতা সারা দিন বাতাসের সঙ্গে খেলা করে। একর জোড়া কাঠবেড়ালির ছোটাছুটি। দাওয়ার এক পাশে সর্বক্ষণ থুপপি মেরে বসে থাকে মোটাসোটা লোমঅলা সাদা সুন্দরী একটা বেড়াল। কোনও লাভ নেই। বাড়তি কোনও চাহিদা নেই। পাশে কাঠবেড়ালি নির্ভয়ে এসে বসে থাকে। ঘাড়ে চেপে আদর করে। চড়াই পাখির ঝাঁক সামনে নাচ দেখায়। পুসি নির্বিকার।

এই পবিত্র কুঠিয়ায় থাকেন সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ। যাঁর নাম আশুতোষ। গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায়। পাতলা, ঋজু, তেজস্বী। ধারাল মুখ, উন্নত নাসা, বড় বড় চোখ। চোখে সব সময় চাপা একটা হাসি আলোর মতো জ্বলে আছে। জ্যেতির্ময় মুখমণ্ডল। চুলে জটা ধরেছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালে নাকে আসে চন্দনের গন্ধ। মন্দিরে রয়েছেন নকুলেশ্বর শিব। আশুতোষ পূজারি। তিনি সাধারণ পূজারি নন, সিদ্ধ সাধক। যৌবনেই ব্রাহ্মণী চলে গেছেন। একটা মাত্র মেয়েকে রেখে। নাম রেখেছিলেন গৌরী। সেই গৌরী আজ সন্ন্যাসিনী, সাধিকা। উত্তর ভারতে গৌরী মাঈর নামে মানুষের ঢল নামে। মাঝে মাঝে কখনো সখনো সাধিকা আসেন পিতার কাছে—জয় বাবা আশুতোষ। সঙ্গে কেউ থাকে না। একেবারে একা। হাতে ত্রিশূল। কাঁধে ঝুলি। গেরুয়া বসান। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়েন সাধিকা—জয় বাবা আশুতোষ।

মা এসেছিস, মা এসেছিস! —আশুতোষ বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে। হাতে পেতলের ঘটি, কাঁধে পাট করা সাদা গামছা। পায়ে খড়ম। বোধহয় গঙ্গায় যাচ্ছিলেন। তাড়াতাড়ি ঘটিটা একপাশে রেখে, মেয়েকে হাত ধরে সাদরে তুলে আনলেন দাওয়ায়। ঘর থেকে কম্বল এনে বিছিয়ে দিলেন। আমি একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। কী রূপ। যেন আগুনের আভা! চোখ দুটো কী! মা দুর্গার চোখের চেয়েও বড়। একবার পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। সারা শরীরে একটা বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল। ভেতরে যা কিছু আবর্জনা ছিল সব ধক করে জ্বলে গেল।

অবাক হয়ে দেখছি, পিতা আশুতোষ সাষ্টাঙ্গে সাধিকা কন্যাকে প্রণাম করছেন।

অবাক হওয়ার কিছু নেই। পিতার দেওয়া শরীর ও অহঙ্কার সন্ন্যাস নেওয়ার সময় হোমের আগুনে পুড়ে গেছে। এ অন্য শরীর, দেব শরীর। আমিও এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলুম। সাধিকা আমার মাথার পেছনে হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। বললেন, ডাক্তারি ছেড় না বাবা, মানুষের উপকার কর।

খুব অবাক হলুম, আমি যে ডাক্তার জানলেন কি করে। আরও অবাক হলুম, যখন বললেন, পূর্ব জন্মে তোমার নাম ছিল গঙ্গাধর। তুমি সাগর দ্বীপে কপিল মুনির আশ্রমে পূজারি ছিলে। তেতাল্লিশ বছর বয়সে তোমার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল, তোমার দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এত সব জানলেন কি করে? জানা যায় না কি? মানুষের পেছন দিকে কী ছিল, সামনে কী আছে। আমি প্রশ্ন করব না, আমি বিশ্বাস করব। একদিন যখন মরেই যেতে হবে, তখন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কী মূল্য আছে। বিশ্বাসের জগতে কত কী আছে, অবিশ্বাসের জগতে কিছুই নেই।

বালতি হাতে গঙ্গায় জল আনতে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ পিতা। আমি বালতিটা তাঁর হাত থেকে নিয়ে তর তর করে নেমে যাব গঙ্গায়। জোয়ারের গঙ্গা। ভরা জল, টল টল। ঝাঁ ঝাঁ রোদ। রোদ পড়ে জল যেন নীলাভ কাঁচ। অনেক ফুল ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যে পদ্মও আছে। শ্মশানের পোড়া কাঠও আছে। একটু আগে বড় কেউ চলে গেলেন। চিতার ফুল তাঁকেই অনুসরণ করে সাগরে চলেছে।

দাওয়ার একেবারে শেষ মাথায় পেরেকে ঝুলছে বাজারের ব্যাগ। সেইটা হাতে নিয়ে নেমে পড়ব রাস্তায়। অন্যদিন বৃদ্ধই নিজেই বাজারে যান বেলা বারোটার সময়। তখন সব উঠে যাওয়ার সময়। যা পড়ে থাকে বেপারিরা সস্তায় দিয়ে দেয়। এই রকম করেন কেন? মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ বলেন, ডাক্তার বাবা! আমাকে যে আয় বুঝে চলতে হয়।

বাজার গন গন করছে। মানুষের টাকার গরমের ঝাঁজ বেরোচ্ছে। সকলেরই এক প্রশ্ন, ডাক্তারবাবু আপনি বাজারে?

আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছি।

সে কি? তাহলে আমরা কার কাছে যাব? বুঝলেন জগন্নাথবাবু মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

এ কি গেল কোথায়?

চেয়ার খালি। জগন্নাথবাবু নেই।

কম্পাউন্ডারবাবু বললেন, পর পর দু গেলাস চা পড়েছে, আর বসে থাকতে পারেন! তীর বেগে দৌড়েছেন।

আমি দেখতে পেলুম না কেন?

আপনি ছিলেন না, মাঝে মাঝেই আপনি থাকেন না।

যাঃ। আমার বাজার করা হল না। আমার বৃদ্ধ পূজারি, সাধিকা অপেক্ষায় থাকবেন। আজ উপোস!

কম্পাউণ্ডারবাবু বললেন, জায়গাটা বলুন, আমি বাজার পৌঁছে দিয়ে আসছি।

আরে সে কি আমিই জানি। জানে জগন্নাথ। পালিয়ে গেল। এত বড় একটা লোক, ছেলেমানুষের মতো একটা পেট নিয়ে ঘুরছে।

বড়মামা জিগ্যেস করলেন, কী খেলে কনস্টিপেসান হয় বল তো?

মাংস।

অ্যায়, ঠিক বলেছ। দু কেজি মাংস কিনে দিয়ে এসো তো।

কম্পাউন্ডারবাবু বললেন, ওরা বৈষ্ণব। মাংস ছোঁবেন না।

তা হলে কি হবে? মাংসের নিরামিষ, মানে নিরামিষ মাংস কি আছে?

এঁচোড়। এঁচোড়কে বলে গাছ পাঁঠা।

একজোড়া কাঁঠাল কিনে দিয়ে এসো।

এই শীতে কাঁঠাল মিলবে না, আর কাঁঠালে তো পেট ছাড়বে।

তা হলে বললে কেন?

আমি এঁচোড় বলেছি।

এঁচোড়ের অল্টারনেটিভ?

কাঁচকলা।

ভেরি গুড। দু’ডজন কাঁচকলা দিয়ে এসো।

কাঁচকলায় অনেকের অ্যালার্জি থাকে।

থাকে থাকবে। দু’পাতা অ্যান্টি অ্যালার্জি ট্যাবলেট নিয়ে যাও।

তখন ঠিক বেলা একটা। আমাদের বিখ্যাত জ্যোতিষী নিতাইবাবু এলেন। হয়ে গেল। বেলা চারটের আগে উঠবেন না। বাড়িসুদ্ধ সকলের উপোস। আমি বড়মামার কানে কানে বললুম, মাসিমা বলছেন, দুটোর সময় খেতে বসতে হবে।

তুই বলে আয়, এবেলা আমার নো মিল।

বাঃ, আজকে কত ভালো ভালো রান্না হয়েছে। মাছের ডিমের বড়া। চিংড়ির মালাইকারি।

কেন হয়েছে?

আজ যে আপনার জন্মদিন।

সে কি রে?

নিতাইবাবু বললেন, সেই জন্যেই তো আমি এলুম। কুসি আমায় নিমন্ত্রণ করেছে।

তা হলে চলুন।

আমাকে দু’জন লোক দিন, মাকে নামাতে হবে।

আপনার মা এসেছেন! কৌ সৌভাগ্য!

শুধু আমার মা নয়, তিনি সকলের মা, জগন্মাতা।

একটু রহস্য রহস্য ঠেকল। আমরা হুড়মুড় করে বাইরে বেরিয়ে এলুম। কোথায় মা? একটা ভ্যান গাড়ি তার ওপর প্যাকিং বাক্স। ছোটখাটো নয়, বেশ বড়।

বড়মামা বললেন, মাকে প্যাকিং বাক্সে ভরে এনেছেন? বেঁচে আছেন তো?

বাঁচিয়ে তোলার দায়িত্ব আপনার। আপনার সাধনায় মা জাগ্রত হবেন।

বেজায় ভারী। আমরা ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গেলুম। মাসিমা, গান্ধারী সবাই ছুটে এল। প্যাকিং বাক্স খোলামাত্রই আমরা সকলেই, আহা, আহা করে উঠলুম। মা কালী। কী রূপ মায়ের।

আমাদের কম্পাউন্ডারবাবু ভীষণ ভক্ত মানুষ। তিনি কাঁদছেন।

বড়মামা হুঙ্কার দিয়ে বললেন, মা আমার।

নিতাইবাবু বললেন, অবশ্যই আপনার। জন্মদিনের উপহার।

মন্দির!

মন্দির আপনাকে করতে হবে।

বড়মামা ভীষণ উত্তেজিত। আমাকে বললেন, বিকাশকে ফোন কর। এখুনি আসতে বল। এখানে আহার। জন্মদিন-টন্মদিন বলবি না। একগাদা উপহার নিয়ে চলে আসবে।

আমাদের এই বিকাশদা বড় অদ্ভুত মানুষ। পাহাড়ের মতো চেহারা। বড়মামা নাম রেখেছেন বিকাশ মাউন্টেন। মাউন্টেন বলেই ডাকেন। সাজ পোশাক পাঠানদের মতো। বিশাল গোঁফ-দাড়ি। লটকা লটকা চুল। স্বপ্ন মাখা ঢুলু ঢুলু দুটো চোখ। হাহা করে যখন হাসেন ঘরের দরজা, জানলা কেঁপে ওঠে। চেহারা অনুযায়ী গলাটাও সেই রকম ভারি মেঘ-গর্জনের মতো। লম্বা ছ’ফুট দু ইঞ্চি। বড়মামা বলেন, আর বেড়ো না। এতটা বাড়াবাড়ি ভালো না। হার্ট বেচারা বিপদে পড়ে যাবে। তুমি কি ইউরিয়া খাও? হাইব্রিড মুলোর মতো চেহারা। হাতের আঙুলগুলো বরবটির মতো লম্বা। নাকটা খাঁড়ার মতো খাড়া। দাঁতগুলো ঝকঝকে মুক্তোর মতো। পাঞ্জাবির দু’পকেটে বোঝাই থাকে লজেন্স। নিজে খান না। শিশুদের বিতরণ করেন। ছোট্ট একটা গাড়ি আছে। ভোকসওয়াগেন। জার্মান কার। চকোলেট রঙের। ঝকঝকে নতুন। নিজেই চালান। অত বড় একটা মানুষ যখন স্টিয়ারিং ধরে গাড়িতে বসেন তখন মনে হয় গাড়ি নয় একটা মানুষ আসছে গড়গড় করে।

মানুষটা যেমন বড় মনটাও সেই রকম বড়। রাজপরিবারের ছেলে। পিতামহ হাতির পিঠে চেপে পাশে সায়েব বসিয়ে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে শিকারে যেতেন। সেকালে বলা হত শিকার খেলা। শিকার যত না হত তার চেয়েও বেশি হত আমোদ, ফুর্তি। নিরাপদ জায়গায় তাঁবু ফেলা হত। তাঁবুতে থাকতেন মেমসায়েবরা। আর তাঁদের পোষা বিলিতি কুকুর। বলা হত ল্যাপ-ডগ। আদুরে কুকুর। সরু, সরু গলা। সামান্য বিরক্তিতেই খাঁই খাঁই ডাক। তাঁবুর বাইরে সবুজ মাঠ। উঁচু উঁচু নীল পাহাড় দিয়ে ঘেরা। গা বেয়ে উঠে গেছে ভেড়ার পিঠের লোমের মতো কোঁকড়া কোঁকড়া জঙ্গল। পথ করে নেমে আসছে পাহাড়ি ঝর্ণা। পাথরের খাঁজে খাঁজে। পাথুরে ঠোঁটে দুধের মতো ফেনা। ময়ূরের কর্কশ চিৎকার। পাহাড়ে পাহাড়ে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। হরিণের ডাক। বাকডিয়ার। বড় বড় দুধরাজ পাখি। ঝোলা ঝোলা ল্যাজ। সাদা ধবধবে। গেরুয়া ঝুঁটি। ডাল থেকে ডালে উড়ে যাচ্ছে। রাগী রাগী টিয়া ঝাঁক নিয়ে ঘুরছে। শান্ত কালো ময়না গান গাইছে নিজের মনে। ঝর্ণা নীচে নেমে এসে ছোট্ট তরতরে নদী হয়েছে। কালো পাথরের দেয়াল ঘেঁষে বয়ে চলেছে। কোথাও কোথাও পাথরে আবদ্ধ হয়ে স্থির। যেন তরল কাঁচ। পাখিদের হামাম। বিকাশকাকু এলেই আমরা এইসব গল্প শুনতে পাই। সমানে গল্প চলতে চলতে রাত ভোর। তখন নড়ে-চড়ে, এ-পাশে ও-পাশে তাকিয়ে বুঝতে হয়, আছি কোথায়! বাড়িতে, না জঙ্গলে ঘেরা পাহড়ে। হামাম কাকে বলে? বিকাশকাকু তখন আমাদের আরব দেশে নিয়ে যেতেন। হামাম মানে স্নানাগার, বড়লোকদের বাদশা বেগমদের চানঘর। মার্বেল পাথরের মেঝে, বড় বড় মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি চৌবাচ্চা। সাদা পাথর, নীল পাথর, গোলাপি পাথর। ঘরের ভেতরটা বাষ্পে আবছা হয়ে আছে। চৌবাচ্চায়, চৌবাচ্চায় বিভিন্ন উষ্ণতার গরম জল। আতরের গন্ধ।

বিকাশকাকুর গল্প শুনতে শুনতে বড়মামার চোখ ক্রমশই বড় হতে থাকে। যেন একটা শিশু। সবাই বলে, বড়দা আর বড় হল না। কথাটা মিথ্যে নয়; তাই মাসিমা বলেন, আমি বোন নই, আমি ওর মা!

গল্প শুনতে শুনতে মাসিমা, গান্ধারী, হরিদা আমরা সবাই বিভোর হয়ে যাই।

সেই তাঁবুর বাইরে সবুজ ঘাসের ওপর সাদা সাদা ক্যাম্প চেয়ার পাতা। মেমসাহেবরা সাদা সাদা গাউন পরে রাজহাঁসের মতো বসে থাকেন ঝলমলে রোদে। মাথার ওপর ঝকঝকে নীল পাহাড়ি আকাশ মেমসায়েবরা বসে বসে উল বোনেন। তাঁদের ছেলেমেয়েরা খেলা করে। তাঁবুর পেছন দিকে বাবুর্চিরা ভালো-মন্দ রান্নায় ব্যস্ত। একপাশে একঝাঁক মুরগি গাদাগাদি হয়ে আছে। আর একদিকে সিক-কাবাব তৈরি হচ্ছে। পোড়া পোড়া গন্ধ। এক বালতি ঝর্ণার জলে একগাদা বিয়ারের বোতল শরীর ঠান্ডা করছে। সায়েবরা শিকার খেলে এসে কাবাবের টাকনা দিয়ে গেলাস গেলাস বিয়ার কোঁক কোঁত করে পান করবেন। তারপর বসবেন খানা-টেবিলে। এলাহি আয়োজন। সেরা মদ। সেরা খাদ্য। বাস্কেটে স্তূপাকার আপেল, কলা, কালো আঙুলের খোকা।

ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে আসবে। হাঁড়-কাঁপানো বাতাস আসবে পাহাড়ের দিক থেকে। ঝর্ণার শব্দ আরও স্পষ্ট হবে। প্রত্যেকটরা তাঁবুর বাইরে ঝোলান হবে লণ্ঠন। চারকোণে বসে যাবে বন্দুক হতে চারজন পাহারাদার। জঙ্গলে পশুরা রাতের উৎসবে জেগে উঠবে। কানে আসবে হায়নার হাসি, বাঘের গর্জন, উল্লুকের গিটকিরি। রকম রকম পেঁচার রকম রকম ডাক। যে তাঁবুটাকে বৈঠকখানা করা হয়েছে, সেখানে রাজদরবারের সঙ্গীতজ্ঞরা ম্যান্ডোলিন বাজাবেন। কোনও কোনও মাতাল সাহেব হেঁড়ে গলায় প্রেমের গান ধরবেন।

 My heart’s in the Highlands

 My heart is not here

রাতের খানায় আরও বিরাট আয়োজন। কাবাবের গন্ধ। হিরের মতো গেলাসে রক্ত রাঙা মদ। এরপর রাত আরও গভীর হবে। জঙ্গলের দিক থেকে ভেসে আসবে ঝিঁঝির ডাক। মাঝে মাঝে নূপুরের শব্দ। রথী-মহারথীরা তখন নিদ্রার কোলে। লণ্ঠনরা তাকিয়ে থাকবে ভোরের দিকে। নিবু নিবু চুল্লির বুক থেকে মাঝে মাঝে জোনাকির মতো ভেসে উঠবে চিটির পিটির আগুনের ফুলকি। একটাতে বসান আছে বিরাট একটা কেটলি। সূর্যোদয়ের চায়ের জল। বিরাট একটা কালো সাপ বেড়াতে বেরিয়েছে। তাঁবুর বাইরে আগুনের বলয়। জলের দিকে চলেছে শিকারের সন্ধানে।

বিকাশকাকু মায়ের মূর্তি দেখে মোহিত। সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সেরে যখন উঠলেন। চোখে জল। মাতৃভক্ত! বললেন, কষ্টি পাথর। এ তো আনকোরা নতুন নয়। এই মা অনেকদিন পুজো পেয়েছেন।

নিতাইবাবু বললেন, আপনার চোখ তো সাংঘাতিক। ঠিক ধরছেন। মা খুব অনাদরে ছিলেন। তাই আদরের জায়গায় নিয়ে এলুম। ডাক্তারের শনির দশা চলছে। শনির ইষ্টদেবী কালী।

বড়মামা বললেন, শনির দশায় তো মানুষের খারাপ হয়।

কে বলেছে? শনির তো গ্রহ হয় না। শুদ্ধ, সত্ত্ব, সন্ন্যাসী, হার্মিট অফ দি স্কাই। অনন্তের পথে সর্বত্যাগী এক সন্ন্যাসী। কৃচ্ছ্রসাধক। গ্রহরাজ। শনিবার জোরেই আপনি আজ এত জনপ্রিয় এক ডাক্তার। আপনার সব আছে, কিন্তু নিজে ভোগ করেন না কিছুই। নিজের ভাবেই থাকেন। আপনার ইষ্ট লাভ হবেই। শেষকালে সাধক।

বড়মামা বললেন, বিকাশ একটা প্ল্যান বানাও। সুন্দর একটা পারিবারিক মন্দির। কালই নেমে পড়।

মাসিমা বললেন, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। ভয়ে বলিনি। কে পুজো করবে? পুরোহিতের পুজো আমার ভালো লাগে না।

বড়মামা বললেন, আমি করব!

তোমার সময় কোথায়?

সময় বের করে নিতে হবে।

এখন মাকে আমরা কোথায় রাখব?

ঠাকুরঘরে সযত্নে। প্রতিষ্ঠার পর পুজো।

বিকাশকাকু বললেন, আমি তাহলে বেরিয়ে পড়ি। আমার টিম নিয়ে আসি।

দাঁড়াও, আজ আমার জন্মদিন। আমার বোন ভালো-মন্দ ভোজনের ব্যবস্থা করেছে।

আজ তোমার জন্মদিন! আগে বলোনি কেন? শুধু হাতে চলে এলুম। যাক, মন্দিরের মার্বেল-ফ্লোর আমার উপহার।

বিকাশকাকু মায়ের সামনে বসে পড়ে অদ্ভুত সুরে গান গাইতে লাগলেন, বোধহয় স্বরচিত।

মুণ্ডমালা উতারো মা

ম্যায় পুষ্পমালা লায়া হুঁ।।

শিউজিসে উতারো মা

মেরা শিরপর চরণ রাখো মা।।

ভক্তমানুষ। গানের আবেগে আমরা কেমন যেন হয়ে গেলুম। ভরাট গলা। গলায় সুরের অভাব নেই। সকলকে মেঝেতে বসিয়ে দিয়েছেন।

দরজার বাইরে একটা মুখ দেখা গেল। বড়মামা বললেন, আসুন, আসুন। দেখুন, মা এসেছেন।

জগন্নাথ ঘরে এলেন। প্রণাম করলেন। মুখটা ভার।

বড়মামা বললেন, কি হল? মুখ ভার কেন?

অন্যায় করে ফেলেছি, সাজাও পেয়েছি।

কি অন্যায়?

ওই যে, আপনার কথা শুনতে শুনতে উঠে পালালুম। এটা এক নম্বরের অসভ্যতা।

আর সাজা কি পেলেন?

বৃন্দাবনের দোকান পর্যন্ত গেছি, ইলেকট্রিকের তারে বসেছিল একটা অসভ্য, ইললিটারেট কাক। সোজা ব্রহ্মতালুতে। কমপ্লিট চুনকাম। পরিষ্কার করব কী, হাত দিতে ঘেন্না করছে। শেষে কলের তলায় মাথাটা ফেললুম। বেরোচ্ছে তো বেরোচ্ছেই। শেষে পরিবার গায়ে গঙ্গার জল ছিটিয়ে ঘরে তুললে। একে আমার সর্দির ধাত! হাঁচি হাঁচি পাচ্ছে। কী অলুক্ষণে ব্যাপার ঘটে গেল বলুন তো! একে শনিবার! কালীমন্দিরে পুজো দেবো, তো মন্দির বন্ধ। সন্ধেবেলা আরতি হয়, পুজো দেওয়া যাবে না।

বড়মামা বললেন, অত ভাববেন না তো! কাক মিনিটে মিনিটে ত্যাগ করে কোনও রকম পরিকল্পনা ছাড়াই। আপনার মাথাটা পাশ করছিল, পড়ে গেছে, কী আর করা যাবে!

একজন বললে টাক পড়ে যাবে।

সে এ্যামনেও পড়বে, অমনেও পড়বে। অত ভাববেন না।

আমি কী আর ভাবছি, সবাই মিলে আমাকে ভাবাচ্ছে। একটু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কেমন হয়?

কী কারণে খাবেন?

যদি কোনও রকম ইনফেকশান হয়?

নিতাইকাকু হাসতে হাসতে বললেন, ভয় নেই। আপনার কেউ কিছু করতে পারবে না। আপনার বৃহস্পতি খুব ভালো জায়গায় আছে। আচমকা প্রচুর টাকা পাবেন। চাঁদের জন্যে আপনার ঠান্ডা লাগার ধাতটা বরাবরের।

জগন্নাথবাবু খুব সমীহ করে বললেন, ইনি কে?

বড়মামা বললেন, সে কি! এই মহাপুরুষকে আপনি চেনেন না? ভারতের শ্রেষ্ঠ জ্যেতিষী। নিত্যানন্দ জ্যোতিষার্ণব। কৃপা করে আসেন। কৃপা করে কয়েক দিন থাকেন। আমাদের যা যা বলেন, সব মিলে যায়।

‘নিত্যানন্দ জ্যোতিষার্ণব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *