বঙ্গভাষা

শ্রীযুক্ত বাবু দীনেশচন্দ্র সেন -প্রণীত “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ এই শ্রেণীয় বাংলা পুস্তকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়াছে। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, পুস্তকখানি সাধারণের নিকট সমাদর লাভ করিয়া প্রথম সংস্করণের প্রান্তশেষে উত্তীর্ণ হইয়াছে। বিদ্যোৎসাহী উদারহৃদয় ত্রিপুরার স্বর্গীয় মহারাজা এই গ্রন্থ-মুদ্রাঙ্কনের ব্যয়ভার বহন করেন। রোগশয্যাশায়ী লেখক মহাশয় সংশোধিত ও পরিবর্ধিত আকারে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের জন্য উৎসুক হইয়াছেন। আশা করি অর্থসাহায্য-অভাবে তাঁহার এই ইচ্ছা নিষ্ফল হইবে না।

এই গ্রন্থের আরম্ভভাগে বঙ্গভাষা সম্বন্ধে যে আলোচনা প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে লেখকের চিন্তাশীলতার সবিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় এবং তাহার দ্বারা পদে পদে পাঠকেরও চিন্তাশক্তির উদ্রেক করিয়া থাকে। সেইসঙ্গে মনে এই খেদটুকুও জন্মে যে বাঙালার ভাষাতত্ত্ব সম্বন্ধে আলোচনা যথোচিত বিস্তৃত হয় নাই। বিষয়টির কেবল অবতারণা হইয়াছে তাহাকে আরো খানিকটা অগ্রসর দেখিলে মনের ক্ষোভ মিটিত।

কিন্তু বাঙালির ক্ষোভের কারণ, খেদের বিষয় বিস্তর আছে। অনেক জিনিস হওয়া উচিত ছিল যাহা হয় নাই, এবং সেজন্য আমরা প্রত্যেকেই কিছু-না-কিছু দায়ী। অথচ যে ব্যক্তি চেষ্টা করিয়া অনিবার্য কারণে সম্পূর্ণতা লাভ করিতে পারেন নাই সমালোচকের উচ্চ আসন হইতে বিশেষ করিয়া তাঁহারই কৈফিয়ত তলব করা শক্ত নহে। কিন্তু আমাদের সে অভিপ্রায় নাই। এবং এ কথাও আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য যে, সমালোচ্য গ্রন্থে বঙ্গভাষা সম্বন্ধে অধ্যায় কয়েকটি পাঠ করিয়া এই বিষয়ে আমাদের কৌতূহল বিশেষভাবে উদ্দীপ্ত এবং চেষ্টা নূতন পথে ধাবিত হইয়াছে। পাঠকের মনকে এইরূপে প্রবুদ্ধ করাই উৎকৃষ্ট গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ সার্থকতা।

সাময়িক রাজকীয় ব্যাপার ব্যতীত আর-কোনো বিষয়ে আমাদের শিক্ষিতসমাজে আলোচনা নাই। বাংলাভাষার উৎপত্তি প্রকৃতি এবং ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে দুটা কথা আন্দোলন করেন এমন দুইজন বাঙালি ভদ্রলোক আবিষ্কার করা দুঃসাধ্য। অতএব বাংলা ভাষাতত্ত্বের নিগূঢ় কথা যিনি সন্ধান করিতে প্রবৃত্ত তাঁহাকে সাহায্য বা সংশোধন করিবার উপায় দেশে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তাঁহাকে একাকী উপক্রমণিকা হইতে উপসংহার পর্যন্ত সমস্তই স্বচেষ্টায় সমাধা করিতে হইবে। তিনিই যন্ত্র তৈরি করিবেন, তার চড়াইবেন, সুর বাঁধিবেন, বাজাইবেন, এবং সর্বাপেক্ষা দুঃখের বিষয় এই যে শ্রোতার কার্যও তাঁহাকে একলাই সারিতে হইবে। এমন অবস্থায় এ কথা বলিতে প্রবৃত্তি হয় না যে তাঁহার সকল কাজ সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ হয় নাই।

কিন্তু অদৃষ্টক্রমে যেখানে আমাদের সকল আশার প্রতিষ্ঠা আমাদের মাতৃভাষাতত্ত্ব-নির্ণয়ের আশাও সেই বিদেশীয়ের কাছে। আমরা যাঁহাদের নিকটে স্বায়ত্তশাসন, কৌন্‌সিলের আসন, যথেচ্ছভাষণ দাবি করি, তাঁহাদেরই নিকটে অসংকোচে বেদের ভাষ্য, বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস, ভারতবর্ষের পুরাবৃত্ত এবং অবশেষে নিজ ভাষার রহস্য-ব্যাখ্যার জন্য হাত জোড় করিয়া উপস্থিত হইতে হইবে।

এক্ষণে বাংলা ভাষাতত্ত্ব যিনি আলোচনা করিতে চান বীম্‌স্‌ সাহেবের তুলনামূলক ব্যাকরণ এবং হ্যার্‌ন্‌লে সাহেবের গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ তাঁহার পথ অনেকটা প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহাদের গ্রন্থ হইতে দুটো-একটা ভুল-ত্রুটি বা স্খলন বাহির করা গৌড়ীভাষীদের পক্ষে অসম্ভব না হইতে পারে, কিন্তু যথোচিত শ্রদ্ধা ভক্তি ও নম্রতার সহিত তাঁহাদিগকে গুরু বলিয়া স্বীকার না করিয়া থাকা যায় না।

সংসারে জড়পদার্থের রহস্য যথেষ্ট জটিল এবং দুর্গম, কিন্তু সজীব পদার্থের রহস্য একান্ত দুরূহ। ভাষা একটা প্রকাণ্ড সজীব পদার্থ। জীবনধর্মের নিগূঢ় নিয়মে তাহার বিচিত্র শাখাপ্রশাখা কত দিকে কত প্রকার অভাবনীয় আকার ধারণ করিয়া ব্যাপ্ত হইতে থাকে তাহার অনুসরণ করিয়া উঠা অত্যন্ত কঠিন। বীম্‌স্‌ সাহেব, হ্যর্‌ন্‌লে সাহেব, হিন্দিব্যাকরণকার কেলগ সাহেব, মৈথিলীভাষাতত্ত্ববিৎ গ্রিয়র্‌স্‌ন্‌ সাহেব বিদেশী হইয়া ভারতবর্ষপ্রচলিত আর্যভাষার পথলুপ্ত অপরিচিত জটিল মহারণ্যতলে প্রবেশপূর্বক অশ্রান্ত পরিশ্রম এবং প্রতিভার বলে যে-সকল প্রচ্ছন্ন তথ্য উদ্ধার করিয়াছেন তাহা লাভ করিয়া এবং বিশেষত তাঁহাদের আশ্চর্য অধ্যবসায় ও সন্ধানপরতার দৃষ্টান্ত দেখিয়া আমাদের স্বদেশী-ভাষার-সহিত-সম্পর্কশূন্য স্বদেশহিতৈষী-আখ্যাধারীদের লজ্জা ও বিনতি অনুভব করা উচিত।

প্রাকৃত ভাষার সহিত বাংলার জন্মগত যোগ আছে, সে সম্বন্ধে দীনেশচন্দ্রবাবু ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল এবং ডাক্তার হ্যর্‌ন্‌লের সহিত একমত।

হ্যর্‌ন্‌লে সাহেব প্রমাণ করিয়াছেন, প্রাচীন ভারতবর্ষে কথিত প্রাকৃত ভাষা দুই প্রধান শাখায় বিভক্ত ছিল। শৌরসেনী ও মাগধী। মহারাষ্ট্রী লিখিত ভাষা ছিল মাত্র এবং প্রাকৃত ভাষা ভারতবর্ষীয় অনার্যদের মুখে বিকৃতি প্রাপ্ত হইয়া যে ভাষায় পরিণত হইয়াছিল তাহার নাম ছিল পৈশাচী।

প্রাচীন ব্যাকরণকারগণ যে-সকল ভাষাকে অপভ্রংশ ভাষা বলিতেন তাহাদের নাম এই– আভীরী (সিন্ধি, মাড়োয়ারি), আবন্তী (পূর্ব রাজপুতানি), গৌর্জরী (গুজরাটি), বাহ্লিকা (পঞ্জাবি), শৌরসেনী (পাশ্চাত্ত্য হিন্দি), মাগধী অথবা প্রাচ্যা (প্রাচ্য হিন্দি), ওড্রী (উড়িয়া), গৌড়ী (বাংলা), দাক্ষিণাত্যা অথবা বৈদর্ভিকা (মারাঠি) এবং সৈপ্পলী (নেপালি?)।

উক্ত অপভ্রংশ তালিকার মধ্যে শৌরসেনী ও মাগধী নাম আছে, কিন্তু মহারাষ্ট্রী নাম ব্যবহৃত হয় নাই। মহারাষ্ট্রী যে ভারতবর্ষীয় কোনো দেশবিদেশের কথিত ভাষা ছিল না তাহা হ্যর্‌ন্‌লে সাহেব প্রতিপন্ন করিয়াছেন। বিশেষত আধুনিক মহারাষ্ট্রদেশ-প্রচলিত ভাষার অপেক্ষা পাশ্চাত্ত্য হিন্দিভাষার সহিত তাহার ঘনিষ্ঠতর সাদৃশ্য আছে। প্রাকৃত নাটকে দেখা যায় শৌরসেনী গদ্যাংশে এবং মহারাষ্ট্রী পদ্যাংশে ব্যবহৃত হইয়া থাকে; ইহা হইতেও কতকটা প্রমাণ হয় মহারাষ্ট্রী সাহিত্যভাষা ছিল, কথায়-বার্তায় তাহার ব্যবহার ছিল না।

কিন্তু আমাদের মতে, ইহা হইতে প্রমাণ হয় না যে মহারাষ্ট্রী কোনো কালেই কথিত ভাষা ছিল না এবং তাহা সাহিত্যকারদের রচিত কৃত্রিম ভাষা। সর্বদা ব্যবহারের ঘর্ষণে চলিত কথায় ভাষার প্রাচীন রূপ ক্রমশ পরিবর্তিত হইতে থাকে, কিন্তু কাব্যে তাহা বহুকাল স্থায়িত্ব লাভ করে। বাহিরের বিচিত্র সংস্রবে পুরুষসমাজে যেমন ভাষা এবং প্রথার যতটা দ্রুত রূপান্তর ঘটে অন্তঃপুরের স্ত্রীসমাজে সেরূপ ঘটে না; কাব্যেও সেইরূপ। আমাদের বাংলা কাব্যের ভাষায় তাহার অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাইবে।

বাংলা কাব্যে “ছিল’ শব্দের স্থলে “আছিল’, প্রথম পুরুষ “করিল’ শব্দের স্থলে “করিলা’, “তোমাদিগকে’ স্থলে ‘তোমা সবে’ প্রভৃতি যে-সকল রূপান্তর প্রচলিত আছে তাহাই যে কথিত বাংলার প্রাচীন রূপ ইহা প্রমাণ করা শক্ত নহে। এই দৃষ্টান্ত হইতেই সহজে অনুমান করা যায় যে, প্রাকৃত সাহিত্যে মহারাষ্ট্রী-নামক পদ্য ভাষা শৌরসেনী-অপভ্রংশ অপেক্ষা প্রাচীন-আদর্শ-মূলক হওয়া অসম্ভব নহে।

পূর্বেই বলা হইয়াছে শৌরসেনী-অপভ্রংশ প্রাকৃত সাহিত্যের গদ্য ভাষা। সাহিত্য-প্রচলিত গদ্য ভাষার সহিত কথিত ভাষার সর্বাংশে ঐক্য থাকে না তাহাও বাংলাভাষা আলোচনা করিলে দেখা যায়। একটা ভাষা যখন বহুবিস্তৃত দেশে ব্যাপ্ত হইয়া পড়ে তখন তাহা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেই; কিন্তু লিখিবার ভাষা নিয়মে এবং স্থায়ী আকারে বদ্ধ হইয়া দেশান্তর ও কালান্তরের বিকৃতি অনেকটা প্রত্যাখ্যানপূর্বক নানাস্থানীয় পণ্ডিতসাধারণের ব্যবহারযোগ্য ও বোধগম্য হইয়া থাকে এবং তাহাই স্বভাবত ভদ্রসমাজের আদর্শ ভাষারূপে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম হইতে ভাগলপুর এবং আসামের সীমান্ত হইতে বঙ্গসাগরের তীর পর্যন্ত বাংলাভাষার বিচিত্ররূপ আছে সন্দেহ নাই, কিন্তু সাহিত্যভাষায় স্বতই একটি স্থির আদর্শ রক্ষিত হইয়া থাকে। সুন্দররূপে, সুশৃঙ্খলরূপে, সংহতরূপে ও গভীররূপে ও সূক্ষ্মরূপে ভাবপ্রকাশের অনুরোধে এ ভাষা যে কতক পরিমাণে কৃত্রিম হইয়া উঠে তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু এই সাহিত্যগত ভাষাকেই ভিন্ন ভিন্ন প্রাদেশিক অপভাষার মূল আদর্শ বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে।

প্রাচীন ভারতবর্ষে এইরূপ এক দিকে মাগধী ও অন্য দিকে শৌরসেনী-মহারাষ্ট্রী এই দুই মূল প্রাকৃত ছিল। অদ্য ভারতবর্ষে যত আর্য ভাষা আছে তাহা এই দুই প্রাকৃতের শাখাপ্রশাখা।

এই দুই প্রাকৃতের মধ্যে মাগধীই প্রাচীনতর। এমন-কি, হ্যর্‌ন্‌লে সাহেবের মতে এক সময়ে ভারতবর্ষে মাগধীই একমাত্র প্রাকৃত ভাষা ছিল। তাহা পশ্চিম হইতে ক্রমে পূর্বাভিমুখে পরিব্যাপ্ত হয়। শৌরসেনী আর-একটি দ্বিতীয় ভাষাপ্রবাহ ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়া পশ্চিমদেশ অধিকার করে। হ্যর্‌ন্‌লে সাহেব অনুমান করেন, ভারতবর্ষে পরে পরে দুইবার আর্য ঔপনিবেশিকগণ প্রবেশ করে। তাহাদের উভয়ের ভাষায় মূলগত ঐক্য থাকিলেও কতকটা প্রভেদ ছিল।

প্রাকৃত-ব্যাকরণকারগণ নিম্নলিখিত ভাষাগুলিকে মাগধী-প্রাকৃতের শাখারূপে বর্ণনা করিয়াছেন– মাগধী, অর্ধমাগধী, দাক্ষিণাত্যা, উৎকলী এবং শাবরী। বেহার এবং বাংলার ভাষাকে মাগধীরূপে গণ্য করা যায়। মাগধীর সহিত শৌরসেনী বা মহারাষ্ট্রী মিশ্রিত হইয়া অর্ধমাগধীরূপ ধারণ করিয়াছে; ইহা যে মগধের পশ্চিমের ভাষা অর্থাৎ ভোজপুরী তাহাতে সন্দেহ নাই। বিদর্ভ অর্থাৎ বেরার ও তাহার নিকটবর্তী প্রদেশের ভাষা দাক্ষিণাত্যা নামে অভিহিত। অতএব ইহাই বর্তমান মরাঠি-স্থানীয়। উৎকলী উড়িষ্যার ভাষা এবং এক দিকে দাক্ষিণাত্যা ও অন্য দিকে মাগধী ও উৎকলীর মাঝখানে শাবরী।

দেখা যাইতেছে, প্রাচ্যহিন্দি, মৈথিলী, উড়িয়া, মহারাষ্ট্রী এবং আসামি এইগুলিই বাংলার স্বজাতীয় ভাষা। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কাফিরিস্থানের কাফিরি ভাষা এবং আফগানিস্থানের পুশ্‌তু মাগধী-প্রাকৃতের লক্ষণাক্রান্ত এবং সে হিসাবে বাংলার কুটুম্বশ্রেণীয়। শৌরসেনী-প্রাকৃত মাঝে পড়িয়া মাগধী-প্রাকৃতের বিস্তারকে খণ্ডীকৃত করিয়া দিয়াছে।

এক্ষণে বাংলার ভাষাতত্ত্ব প্রকৃতরূপে নিরূপণ করিতে হইলে প্রাকৃত, পালি, প্রাচ্যহিন্দি, মৈথিলী, আসামি, উড়িয়া এবং মহারাষ্ট্রী ব্যাকরণ পর্যালোচনা ও তুলনা করিতে হয়।

কথাটা শুনিতে কঠিন, কিন্তু বাংলার ভাষাতত্ত্বনির্ণয় জীবনের একটা প্রধান আলোচ্যবিষয়রূপে গণ্য করিয়া লইলে এবং প্রত্যহ অন্তত দুই-এক ঘণ্টা নিয়মিত কাজ করিয়া গেলে এ কার্য একজনের পক্ষে অসাধ্য হয় না। বিশেষত উক্ত ভাষা কয়টির তুলনামূলক এবং স্বতন্ত্র ব্যাকরণ অনেকগুলিই পাওয়া যায়। এবং এইরূপ সম্পূর্ণ একাগ্রতা ও অধ্যবসায়ের গুটিকতক দৃষ্টান্ত না থাকিলে আমাদের বঙ্গসাহিত্য যথোচিত গৌরব লাভ করিতে পারিবে না।

বাংলার ভাষাতত্ত্ব -সন্ধানের একটি ব্যাঘাত– প্রাচীনপুঁথির দুষ্প্রাপ্যতা।

কবিকঙ্কণচণ্ডী, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন কাব্যগুলি জনসাধারণের সমাদৃত হওয়াতে কালে কালে অল্পে অল্পে পরিবর্তিত ও সংশোধিত হইয়া আসিয়াছে। প্রাচীন আদর্শ পুঁথি কোনো-এক পুস্তকালয়ে যথাসম্ভব সংগৃহীত থাকিলে অনুসন্ধিৎসুর পক্ষে সুবিধার বিষয় হয়। সাহিত্যপরিষদের অধিকারে এইরূপ একটি পুস্তকালয় স্থাপিত হইতে পারিবে ইহাই আমরা আশা করি।

এই-সকল গুরুতর বিঘ্নসত্ত্বে কোনো চিন্তাশীল সন্ধানতৎপর ব্যক্তি যদি বাংলা ভাষাতত্ত্ব -নির্ণয়ে নিযুক্ত হন তবে তাঁহার কার্য অসম্পূর্ণ হইলেও ভবিষ্যতের পথ খনন করিয়া রাখিবে। রোগের তাপ, জীবিকার চেষ্টা এবং কর্মান্তরের অনবকাশের মধ্যেও দীনেশচন্দ্রবাবু সেই দুঃসাধ্য কার্যে হস্তক্ষেপ করিয়া মহৎ অনুষ্ঠানের সূচনা করিয়াছেন। সেইজন্য তিনি আমাদের সম্মান এবং কৃতজ্ঞতার পাত্র হইয়াছেন।

দীনেশচন্দ্রবাবুর গ্রন্থ অবলম্বন করিয়া বাংলা ভাষাতত্ত্ব বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিবার ইচ্ছা রহিল।

বৈশাখ, ১৩০৫

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *