বকুল বিছানো পথে
এযাত্রায় আমার আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের, অর্থাৎ বন্ধুদের কাচ্চা-বাচ্চাদের ঘর-সংসার যথাসাধ্য দেখে আসা। বস্টনে সুনীলের (গঙ্গোপাধ্যায়) ছেলেবৌ পুপলু আর বুইয়া, কবিতাদির (সিংহ) মেয়ে পরমেশ্বরী তার স্বামীপুত্রকন্যাসহ, দীপক-মিনির (বন্দ্যোপাধ্যায়) ছেলেবৌ ঝিমা-তুলি, আর নাতি সাশা। রাহুল-স্বপ্নার ছেলে দুটি বাবু-অবু (এত বড়ও হয়েছে, অসামান্য গুণীও হয়েছে)—ওদের দেখে তৃপ্ত হয়ে এসেছি। নিউইয়র্কে ইরার (বিষ্ণু দে-র মেয়ে) ছেলেবৌ বাম্বি-অর্পিতার ঘরকন্না, নিউ জার্সিতে মিমি-জ্যোতির (বুদ্ধদেব-প্রতিভা বসুর মেয়ে-জামাই) ছেলেবৌ নাতির সোনার সংসার, সরেজমিনে তদন্ত করে মুগ্ধ হয়ে এসেছি। জ্যোতি মিমির আবার বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল ২৭ মে, সে দিন আমি ওদের বাড়িতে। অর্ধশতাব্দী আগের ওই দিনটাতে ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর সেই ঝলমলে মিলনোৎসবে, আমার মা-বাবার সঙ্গে আমি উপস্থিত ছিলুম। ওদের জীবনের একটি বৃত্ত পূর্ণ হল—অন্তত এক জন প্রত্যক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে। প্রেসিডেন্সিতে ওদের প্রণয়েরও সাক্ষী ছিলুম আমরা। বার্কলিতে তারাপদর (রায়) ছেলে তাতাই তার বৌ আর যমজ কন্যা নিয়ে থাকে, তাদেরও দেখা হল। তাতাই বলেছিল একটিকে ভোঁদড়ছানার মতো, আর একটিকে বেড়ালছানার মতো দেখতে। গিয়ে দেখি দুটি দেবশিশু জগৎ আলো করে ওদের কোলে খেলছে। তা ছাড়া আমার কিছু গার্জেন আছে। ভাইঝি গিনুমা, গৌতম, আর তনয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে, আর আমার পুত্রসম অরুণ-পূরবীর (কাঞ্জিলাল) ছেলেবৌমা রূপু-রিনি থাকে সান হোসেতে। শুধু দুই ভাগ্নি শম্পা আর পুপুর সংসারও দেখার ইচ্ছে ছিল, আলাবামার টামকালুসায় আর সান ডিয়েগোতে, কিন্তু সাধ্যে কুলোল না।
রূপু-রিনিই বার্কলিতে নিয়ে গেল, তাতাই আর রাকার কাছে। রাকা ভারতীদির (রায়) মেয়ে—বার্কলিতে অধ্যাপনা করছে। বড্ড চমৎকার মেয়ে রাকা। বার্কলির ভিতরে সে আমাদের গাইড হল। আমি ঢুকেই চেঁচিয়েছি, ওই তো ইউনিয়ন বিল্ডিং! আমাদের আড্ডার জায়গা—আর, ওই তো স্প্রাউল হল—যেখান থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। রাকা স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে তাকায়।—’তুমি ছিলে সে দিন? ওদের মধ্যে?’
–’ছিলুম তো। আমি তখন এখানে ছাত্র।’
—’তোমার সব মনে আছে?’-রাকা মুগ্ধ!
—’থাকবে না? কী ভীষণ কাণ্ড করল পুলিশে! ৮০৬ জনকে ধরেছিল!’
—’তবে দেখবে এসো তোমরা কী করেছ’—হাত ধরে আমাকে স্প্রাউল হলের সিঁড়ির সামনের উঠোনে দাঁড় করিয়ে দিল রাকা। তার পর রূপু, রিনি, শ্রাবস্তীকে বলল—’দ্যাখো তোমাদের মা-মাসিদের কীর্তি দ্যাখো!’
পায়ের নীচের মাটির দিকে তাকিয়ে দেখি, গোল কুয়োর মতো একটি বৃত্ত আঁকা হয়েছে। ইস্পাত দিয়ে বাঁধানো। তাতে লেখা আছে : ‘এই বৃত্তটিতে পৃথিবীর যে কোনও মানুষ এসে দাঁড়িয়ে, যে কোনও বিষয়ে কথা কইতে পারে। এই স্থানটিতে স্বাধীন ভাবে মানুষের মনের কথা বলার পূর্ণ অধিকার আছে।’ এই মুক্ত মৃত্তিকায় পা রাখার পরে আমার চোখ দুটো তো অশ্রু ছলছল না হয়েই পারে না! কিন্তু রূপু-রিনি-শ্রাবস্তীরও দেখি চোখে জল। রাকার তো লেখাটা পড়তে পড়তে গলা-ই বুজে গেছে।—আজ এই বিন্দুটার অন্য এক উজ্জ্বলতর অর্থ হল আমার কাছে—নবনীতাদি, তোমার উপস্থিতিতে!’ ঐতিহাসিকের উপযুক্ত মুগ্ধতায় রাকা বলে।
সেখান থেকে আমার বিভাগ। গ্রন্থাগার ইত্যাদি দেখে আমার ইচ্ছে করল, যাই তো প্রিন্স স্ট্রিটের বাড়িটা খুঁজে বের করি। যে বাড়িতে আমরা থাকতুম। ক’দিন আগে অমর্ত্য বলছিলেন যে এমা ও অমর্ত্য দু’জনে গিয়েছিলেন প্রিন্স স্ট্রিটটা খুঁজতে। কিন্তু ওকল্যান্ড অবধি চলে গিয়েও ওঁরা রাস্তাটা দেখতে পাননি। কী হল, গেল কোথায় পথটা?
রূপুর মহা উৎসাহ’চলো না যাই, আমরা খুঁজে দেখি তো রাস্তাটা পাই কি না?’ রিনির ব্যাগ থেকে মুহূর্তেই ম্যাপ বেরুল। এই তো প্রিন্স স্ট্রিট তাতে চিহ্নিত রয়েছে। যদিও তখন অন্ধকার নেমে গেছে তবু আমরা অবশেষে খুঁজে পেলুম প্রিন্স স্ট্রিট, এবং তার কোণে আমাদের সেই বাড়িটাও। আর, আরে, এই তো! অমর্ত্যকে আজই বলতে হবে ফোন করে! প্রিন্স স্ট্রিট হারিয়ে যায়নি, আছে! আমরাই হারিয়ে গিয়েছি সেখান থেকে।
ঠিক এ রকম আর একটা পুরনো রাস্তা আর পুরনো বাড়ি খুঁজে বের করেছি এ বারে, এখানে আসার আগে, কেমব্রিজে। ১২ নম্বর প্রেন্টিস স্ট্রিটের যে-চিলেকোঠাতে অমর্ত্য এবং আমার প্রথম সংসার পাতা। আমি হার্ভার্ডের ছাত্র, অমর্ত্য এম আই-তে পড়াচ্ছেন। ওই বাড়িতে থাকতেই আমাদের প্রথম গাড়ি কেনা দেড়শো ডলার দামে, অপূর্ব এক নীল রঙের শেভ্রলে কিনে, তার গায়ে হেলান দিয়ে ছবি তুলে বাড়িতে পাঠিয়েছিলুম। যেন বাঘের পিঠে বাঘশিকারির বুটপরা পা। ওই বাড়িরই গল্প, ‘সেদিন দুজনে’–সেই চাবি-খো-গয়ার কাহিনি। ফায়ার এসকেপ বেয়ে আমার তিন তলার ওপরে উঠে জানলা দিয়ে ঘরে ঢোকার রোমহর্ষক গল্প—অমর্ত্যর সাহায্যে ট্র্যাশ ক্যানের ওপরে চড়ে, অতি কষ্টে ফায়ার এসকেপের নাগাল পেয়েছিলুম। এই সেই জনস্থানমধ্যবর্তী চিলেকোঠাসমেত গৃহ। সেই বাড়ি খুঁজে পেতে একটুও অসুবিধে হল না। বাড়ির সম্মুখে দাঁড়িয়ে ফোটোও হল। তার পর সেই ছবি মনিটরে দেখে কান্না পেয়ে গেল। এ কে? এই মোটা, ধেড়ে গিন্নিটাই সে দিন এই বাড়ির ফায়ার এসকেপ দিয়ে তিন তলার উপরে উঠেছিল? সে তো ছিল একটা রোগা পাতলা মেয়ে। এই যাত্রায় আমাদের ড্রাইভার ছিল তুলি। তুলি আর শ্রাবস্তী সান্ত্বনা দিল, তুমি চেষ্টা করলেই এখনও ফায়ার এসকেপ বেয়ে চড়তে পারবে। মোটা তো কী? ইটস আ ম্যাটার অব স্পিরিট! বস্টনে সেই বাড়িটা দেখে খুব আনন্দ হয়েছিল। সামনে ম্যাস এভিনিউতে একটা চিনে আর একটা গ্রিক, দুটি শস্তা রেস্তোরাঁ ছিল, রাঁধতে যত দিন না শিখেছি, তত দিন তারাই খাইয়েছে। সেগুলো খুঁজে পেলুম না। কিন্তু ওষুধের দোকানটি—লিনিয়ার ফার্মেসি, আর ‘গাল্ফ’-এর পেট্রোল পাম্প, সেই দুটো রয়েছে। ওগুলো দেখে মনে হল, আবার পুরনো বন্ধুদের প্রিয় মুখ দুটি দেখতে পেলুম। তখন গাল্ফ বিজ্ঞাপন দিত, ‘পুট আ টাইগার ইন ইয়োর ট্যাংক’-এর সঙ্গে ছবি থাকত আমাদের রয়াল বেঙ্গল টাইগারের। বাঘটাকে দেখলেই মনে হত আমার দেশের লোক।
নিউইয়র্কে এক দিন পার্কে বেড়াতে গেছি বাম্বির সঙ্গে। শ্রাবস্তীকে দেখাচ্ছি—এই যে স্ট্রবেরি ফিল্ডস ফর এভার-এর স্ট্রবেরি ফিল্ড। এই যে সেই বাড়ি, যেখানে শেষ কালে ইয়োকো ওনো আর জন লেনন থাকতেন। আর এই, যেখানে জন লেননকে তার উন্মাদ ভক্ত খুন করেছিল। তার পর পার্কের ভিতরে বাস্ট্যান্ডে গিয়ে ওকে দেখাচ্ছি, ১৯৮৬-তে এইখনে আমরা ছ’জন ভারতীয় কবি এসে মাতৃভাষাতে ও অনুবাদে কবিতাপাঠ করেছিলুম। সুনীল, নবনীতা, অরুণ কোলাটকার, কেদারনাথ সিংহ ইত্যাদি। আমাদের সেই কবি-সভার সঞ্চালক ছিলেন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ। কোলে ছোট্ট একটি হারমোনিয়াম নিয়ে তিনি গান গেয়ে আমাদের তাঁর শান্তির কবিতা শুনিয়েছিলেন। সে বারে অ্যালেন নিজের হাতে নিরামিষ রান্না করে আমাদের কয়েক জনকে মধ্যাহ্নভোজ খাইয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে।
১৯৮৬-র পর ২০০৬, কুড়ি বছর পর আমি আর এক বার গিনসবার্গের জন্য অন্য এক প্রিয় জায়গায় ফিরে গেলুম। সান ফ্রান্সিসকোতে সেই বিখ্যাত সিটি লাইটস বুক স্টোরে। এইখানেই শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক বীট জেনারেশনের কবিতা বিপ্লব। বাইরের দোকান তো নয়, এটি ছিল নবীন কবিদের আখড়া, ছিল নতুন শিক্ষা ভাবনার আঁতুড়ঘর। লরেন্স ফার্লিংগেট্টি আর গ্রেগরি করসো, গ্যারি স্নাইডার আর রবার্ট ব্লাই, বর কাউফম্যান আর জ্যাক কেরুয়াক। কে ছিলেন না এই দোকানের নিত্য অতিথি? এখানেই গড়ে উঠেছিল ফার্লিংগেট্টির ‘সিটি লাইটস (আন্ডারগ্রাউন্ড) পাবলিকেশনস’। যেখান থেকে প্রকাশিত হল অ্যালেন গিনবার্গ-এর টালমাটাল করে দেওয়া কবিতার বই ‘হাউল অ্যান্ড আদার পোয়েমস’।
নিউ ইয়র্কের ছোকরা অ্যালেন সান ফ্রান্সিসকোতেই স্বজন খুঁজে পেলেন। পুবে নিউ ইয়র্ক আর পশ্চিমে সান ফ্রান্সিসকো, এই দুটিই কেন্দ্রবিন্দু–আমেরিকার সাহিত্য শিল্পের নাড়ি যেখানে বাঁধা। সিটি লাইটস বুক স্টোর এক ঐতিহাসিক তীর্থভূমি, আমাদের অনেকের কাছেই। এই দোকানের বেসমেন্টে ছিল কবি-শিল্পী-গাইয়েদের আড্ডা। এখানে কবিতা পাঠ, গান গাওয়া, ছবি আঁকা, যার যেমন খুশি কাজ চলত। এক কোণে আপন মনে বসে বই পড়লে কেউ বিরক্ত করত না। এই ঐতিহ্য একদা সিটি লাইটস বুক স্টোরেই শুরু হয়েছিল, এখন আমেরিকার সব বড় বইয়ের দোকানেই যা ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রাবস্থায় এখানে আমি প্রথম যখন এসেছি, তখনও বিট প্রজন্ম বিষয়ে এত কিছু জানি না। সদ্য গড়ে উঠছেন তাঁরাও। আমরা যখন বার্কলিতে প্রথম বার, সেই বছরেই (১৯৬৪-৬৫) গ্যারি স্নাইডার অতিথি অধ্যাপক হয়ে এসেছিলেন ইংরেজি বিভাগে—অথচ ক্লাসিকস বিভাগে আমি সেই খবরটি জানতুম না। অনেক পরে জেনেছি।
কিন্তু ‘সিটি লাইটস’ দোকানের নাম শুনেছিলুম। ‘হাউল’ বইটিও এই সময়েই কিনেছি, ছোট্ট, পকেট সাইজের বই, সাদাকালো রঙের মলাট। ওই সঙ্গে ওই সিরিজের আরও কয়েকটি বই কিনেছিলুম। জ্যাক কেরুয়াকের ‘অন দ্য রোড’ বই এবং আরও কিছু। ‘হাউল’ কবিতাটি মার্কিনি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি নতুন মোড়। এই বইয়ের জন্য ফার্লিংগেট্টিকে ও সিটি লাইটসকে প্রকাশক হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, অশ্লীলতার দায়ে। কিন্তু এক সৎ বিচারকের সুবিচারে তিনি ছাড়া পান। যে বইয়ের বিন্দুমাত্রও সামাজিক তাৎপর্য আছে, সেই বই কখনও অশ্লীল হতে পারে না, এই ঐতিহাসিক রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী কালে অনেক বই (লেডি চ্যাটারলি’জ লাভার, নেকেড লাঞ্চ, ট্রপিক অব কেপ্রিকর্ন ইত্যাদি) নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছে। শিগেকোকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি ছাড়া পান।
আমি যখন প্রথম ওই দোকানে যাই, এবং তার পরেও যত বার গেছি, ওই ঝুঁটিবাঁধা, কৃষ্ণ শ্মশ্রুগুম্ফ শোভিত, ফর্সা গাঁট্টাগোট্টা, লম্বাচওড়া জাপানি (সামুরাই) যুবককে ক্যাশ কাউন্টারে দেখেছি। শিগ-এর বিষয়ে আমি তখন কিছুই জানতুম না। কিন্তু তার সঙ্গে ভাব হয়েছিল। কলকাতাতে অ্যালেনদের আসার ফলে যে হাংরি জেনারেশনের তরুণ কবিদের উৎপত্তি হয়েছিল ষাটের দশকের শেষার্ধে, তাঁদের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে সিটি লাইটস বুকস একটি আধুনিক বাংলা কবিতার ক্রোড়পত্র বের করেছিল। সেই প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে একটি চিঠি আমি লিখে রেখে এসেছিলাম অ্যালেনের নামে, ওই শিগেকোর হাতে। অ্যালেন তখন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসন্ধানে পূর্ব এশিয়ার কোথাও, চিনে বা জাপানে ছিলেন। বছর খানেক বাদে অ্যালেনের কাছ থেকে সেই চিঠির উত্তর কলকাতার ঠিকানায় পেয়েছিলুম আমি। বোধহয় মত্ত অবস্থায় লেখা। শুধুই অশ্লীল গালিগালাজে ভর্তি। সেই চিঠি বাবাকে দেখাতেই ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলে দিলেন। ক্রুদ্ধ হয়ে বাবা বুঝতেও পারলেন না, কত মূল্যবান একটা নথি নষ্ট করে ফেললেন। অনেক পরে, আমার মেয়ের বিয়েতে অ্যালেন কিন্তু খুব সুন্দর একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে নিজের হাতে নানা রকম ছবি এঁকে এবং আশীর্বাদ জানিয়ে। তত দিনে মানুষটির অনেক বদল হয়েছে।
সিটি লাইটসে ফিরে গিয়ে আমার সবচেয়ে কষ্ট হল পায়ের দুরবস্থার কারণে আর আমার সিঁড়ি বেয়ে বেসমেন্টে নামবার উপায় নেই। অথচ সেটাই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখনও সেখানে গানবাজনার যত বই, সিডি ইত্যাদি থাকে। বেসমেন্টে নামার সময়ে সিঁড়ির দেওয়ালে পোস্টবাক্স থাকত, যাঁরা নিয়মিত যেতেন, তাঁদের চিঠি আসত সেখানে। আমার হিংসে হত। আমাদের কফি হাউসে কেন এ রকম চিঠির বাক্স নেই। তখন ওখানে একটা বড় নোটিস বোর্ডও ছিল। কে জানে হয়তো এখনও আছে! তাতে বইয়ের প্রকাশনা থেকে শুরু করে গাড়িতে রাইড চাওয়া, ঘর ভাড়া চাওয়া, যোগশিক্ষা বা প্রণয় ভিক্ষা—সব কিছুরই নোটিস দেওয়া যেত, ফ্রি। কবিতা পাঠ, নাটক মঞ্চস্থ করা, ছবি প্রদর্শনী, এ সব খবর তো থাকতই। কলেজের নোটিস বোর্ডের মতো।
এ বার গিয়েই ক্যাশ কাউন্টারে শিগ্-এর খোঁজ করি সবার আগে। ওর অভাবটা খুব চোখে লাগল। মস্ত বড় হয়ে গিয়েছে সিটি লাইটস বুকস—তবু চিনতে অসুবিধা হয় না। সেই একই মোড়ে তেকোনা মাথায় এটি জ্বলজ্বল করছে।
‘হাউল’ কবিতাটি লিখে গিনসবার্গ ২৫টি মিমিওগ্রাড কপি করে কবি বন্ধুদের বিলি করেছিলেন। ‘মনুষ্য রক্তের বিনিময়ে দশ ডলার খরচ করে ছাপানো।’ সেই কবিতাটি জ্যাক কেরুয়াকের প্রতি উৎসর্গিত। সেই কবিতা শুনে, লরেন্স ফার্লিংগেট্টি অ্যালেনকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। অবিকল যে ভাষাতে ‘লিস অব গ্রাস’ পাঠ করে হুইটম্যানকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এমার্সন, সেই ভাষা—’এক মহান জীবনের শুরুতে তোমাকে আমি অভিনন্দন জানাই।’ এবং কবিতাটি নিজেই প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন বই হিসেবে। সে সময়েও এই দোকানের ম্যানেজার ছিলেন শিগ্, পঞ্চাশ বছর আগে।
আজ যে মেয়েটি কাউন্টারে ছিল, সে কিন্তু নাম শুনে চিনল না। না চিনলেও, সে গিয়ে ভেতর থেকে বয়স্ক এক জনকে ধরে আনল। তিনি চিনলেন। একটি বই এনে তার পাতা খুলে, এক দঙ্গল বীট কবির ছবি দেখালেন। তাঁদের মধ্যেই ওই তো দাঁড়িয়ে শিগেকো। ওঁর নাম এত দিনে জানতে পারলুম। শিগেয়োশি মুরাও। বইটিতে অনেকেরই ছবি দেখলুম। করসো, ফার্লিংগেট্টি, গিন্সবার্গ, ক্রিলি, কেরুয়াক, ব্লাই, স্নাইডার, অরলভস্কি-মার্কিন সাহিত্যের একটা যুগের ইতিহাস। ওদের সঙ্গে ছবিতে বব ডিলানকেও দেখলুম বার বার। এবং এক গুচ্ছ শিল্পী নারী, যাঁরা সমান যশস্বিনী হননি, যদিও সমানে সমানেই যাপন করেছিলেন শিল্পসর্বস্ব ঝোড়ো জীবন। আশ্রয় দিয়েছিলেন, সাহচর্য দিয়েছিলেন, অন্ন জুগিয়েছিলেন।
দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে সিঁড়ির তলায় লুকোয়। (সে পালাল, এবং এক বারও বেরোল না)। এবং আছে ভীষণ মিষ্টি, ভাল্লুকের মতো লোমশ, মোটাসোটা এক বিল্লি, যে এসে পায়ে গা ঘষে ঘষে আমাদের সাদর সম্ভাষণ জানাল। মোরগ বাবাজিই ও বাড়িতে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেন, দেখা গেল। পালক ফুলিয়ে কোঁকর কোঁ করে আমাদের তেড়ে তেড়ে আসতে লাগল, যেন খাঁচা ভেঙে এসে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। জুডি সস্নেহে তাকিয়ে সগৌরবে বলল, ‘ও বাইরের লোক একেবারে পছন্দ করে না, চলো, আমরা ও দিকে যাই।’
জুডির ছোট্ট সাদা কটেজটি, একগাদা সবুজের মধ্যে চুপচাপ বসে আছে। লম্বা একটা ঘর, এক দিকে রান্না, এক দিকে ঘুম, আর বাকিটা জুড়ে বই, ছবি, জামা, জুতো, বাচ্চাদের খেলনা (জুডির নাতি-নাতনিরা আসাযাওয়া করে), রেডিয়ো, রেকর্ড প্লেয়ার, ছাতা, পাখা কী নেই? হ্যাঁ, টিভি নেই। কিন্তু, গুচ্ছের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনের রাজনৈতিক পোস্টার পড়েছিল, গোটানো, খোলা, নানা ভঙ্গিতে। ওখানে ওগুলো বনবাদাড়ের শান্তির মধ্যে খুব বেমানান।
জুডিকে হারানো প্রাপ্তি বলা ঠিক। ফিরতি পথে ওর ফার্মের অর্গানিক খাদ্য সমৃদ্ধ মুরগিদের স্বাস্থ্যকর বাদামি রঙের ডিম, ওর বাগানের মধু, ওর বানানো আঙুরের রস, ওর তৈরি বাগানের ফলের জ্যাম, আর ঘরে তৈরি ব্রাউন ব্রেড নিয়ে ফিরে এলুম। শ্রাবস্তী অবশ্য বগলে জুডির সবগুলো কবিতার বই নিয়ে আসতে ভোলেনি।
ওখানে গিয়ে আশ্চর্য আরও একটা আবিষ্কারও হল। জুডির বন্ধু পল ফোরম্যানের সম্পাদনাতে ‘হাইপেরিয়ন’ নামে সান ফ্রান্সিসকো থেকে যে সাহিত্যপত্র বেরত, তাতে ১৯৭১-এ এবং ১৯৭৬-এ ইংরাজিতে প্রকাশিত হয়েছিল আমার লেখা দুই গুচ্ছ কবিতা। একটি গুচ্ছ আবার বাংলাদেশের কবিতার অনুবাদ। আমাকে নাকি ওরা পত্রিকাগুলি পাঠিয়েছিল, কিন্তু আমি আগে দেখিনি। বই দুটির অতিরিক্ত কপি নেই। কাছাকাছি জেরক্সের দোকানও নেই। জুডি অবশ্য বলেছে জেরক্স করে পাঠাবে কোনও দিন। সে এক অন্য নবনীতা, যে বিদেশে থাকাকালীন ইংরিজি ভাষাতে কবিতা লিখত। তার সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল জুডির কল্যাণে। শত বর্ষ পরে। বৃত্ত নয়?
অনেক বছর পরে জেমস বল্ডউইনের সঙ্গেও আমার আর এক বার সাক্ষাৎ হয়েছিল, আমেরিকার পূর্ব কোণে, ম্যাসাচুসেট্স-এর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার মেয়ে অন্তরা তখন স্মিথ কলেজে পড়ে। আমি ওই অঞ্চলে গিয়েছিলুম তখন হার্ভার্ডে আর কর্নেলে বক্তৃতা দিতে, স্মিথ কলেজেও রিডিং আছে। মেয়ের কাছেও ঘুরে আসছি। অন্তরা বলল, ওরা সপ্তাহে একটা ক্লাস করতে যায় আমহার্স্ট কলেজে, সে দিন জেমস বল্ডউইন পড়ান। শুনেই তো আমি নেচে উঠেছি, ‘আমিও যাব, আমাকেও নিয়ে চল!’
‘সে কী! তুমি তো নিজেই লেকচার দিতে এসেছ!’
‘তাতে কী? শুনতে নেই? সান ফ্রান্সিসকোর পরে ওঁকে দেখিনি।’
মেয়ে গাঁইগুই করেও শেষকালে নিয়ে চলল। আমেরিকাতে এ সব সম্ভব, ধেড়ে ধেড়ে ছাত্রছাত্রী আসে ক্লাস করতে। সে দিন ক্লাসে আমাদের কিঞ্চিৎ তর্কাতর্কিও হল, আর্থ গডেস ও টেরিব্ল মাদারের কনসেপ্ট নিয়ে। দেখা গেল শক্তি, অর্থাৎ দুর্গা বা কালী বিষয়ে তখনও তাঁর সত্যি বলতে কী, ঠিকঠাক ধারণা ছিল না। দেবী যে টেরিব্ল মাদারও হতে পারেন, নির্লজ্জা নৃমুণ্ডমালিনী, কিংবা ছিন্নমস্তা, তবুও তিনি ডিমনেস নন, গডেসই, পূজনীয়া, দেবীমাতৃকা, এ তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছিল।
ক্লাসের শেষে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেওয়া হল ভারতীয় লেখিকা হিসেবে। বল্ডউইন যারপরনাই ভদ্র মেজাজে ছিলেন। কিন্তু হায়, আমার সঙ্গে এ বারেও ওঁর কোনও বই ছিল না। কফি খেতে খেতে আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিলাম অনেকগুলো বছর আগের কথা, সেই যে এক দিন একটি ভারতীয় মেয়ে এডওয়ার্ড বেলামির বইতে ওঁর স্বাক্ষর চেয়েছিল, সান ফ্রান্সিসকোর ফাইভ স্টার হোটেলের অডিটোরিয়ামে। মনে পড়ে?
এর পরে তিনি যদি হেসে আহ্লাদে আমাকে জাপটে ধরে বলতেন, ও হো, তুমিই সেই সুন্দরী, যাকে আমি এত দিন ধরে খুঁজছি? তা হলে গল্পটা জমে যেত। সাধারণত, স্মৃতিচারণে এমনই হয়ে থাকে। কিন্তু, কপালটা তো আমার? তাই আমাকে যারপরনাই দুঃখ দিতে তিনি কিছুই মনে করতে পারলেন না। (হায়, পুরুষ হতাম যদি, তা হলে কি আপনি আমায় মনে রাখতেন না?)
সানফ্রান্সিসকো বললেই আমার আর এক জনকে মনে পড়ে। টিলি ওলসন। তাঁর সঙ্গে ভাব হয়েছিল নিউ হ্যাম্পশায়ারে ‘ম্যাকডাওয়েল আর্টিস্টস কলোনিতে, যখন দু’জনেই ফেলো ‘ছিলুম। আমি তখন সবে পঞ্চাশের ঘরে, আর আশি পূর্ণ করে ওঁর মহাগর্ব! চার মাইল হেঁটে আসেন বরফের মধ্যে। আর অসামান্য কথা বলেন। এমন বয়সের এত তরুণী মেয়ে আমি দেশে বিদেশে কোথাও দেখিনি।
সে বছর খুব ঠান্ডা পড়েছিল, সেটা ছিল ডিসেম্বর মাস। টিলি একটুও ঘাবড়াতেন না অত শীতেও, আমাদের সঙ্গে সমানে সমানে হইচই করতেন। আমি ইচ্ছে করেই ওঁর এ বারে খোঁজ করিনি। কী জানি, আছেন কি না! কী জানি জরা তাঁকে জীর্ণ করেছে কি না? কোনওটাই জানতে চাই না। টিলির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলুম আমরা।
ইউনেস্কোর হিউম্যান রাইটসএর দাবির একটা ছোট্ট পকেট-বই উপহার দিয়েছিলেন আমাকে টিলি। আর, তাঁর বই, ‘সাইলেন্সেস’। ‘টেল মি আ রিল’ তাঁর বিখ্যাত মুক্তির ইতিহাসের বই। ‘আই স্ট্যান্ড হিয়ার আয়রনিং’ গল্পসংগ্রহ। অসামান্য প্রাণশক্তিতে ছোট্টখাট্টো শুভ্রকেশী টিলিকে একটা ফুটন্ত টগর গাছের মতো দেখাত। কিশোরীর কৌতূহল ছিল তাঁর জীবনের প্রতি, যদিও ঘোরতর বামপন্থী কর্মীর জীবন কাটিয়েছেন—সংঘর্ষময়, বিপ্লবে বিশ্বাসী।
আমাদের জন্য বিশাল এক সারপ্রাইজ উপহার অপেক্ষা করছিল। রিনি-রূপু ৬ জন ব্রুস স্প্রিংস্টিনের কনসার্টে আমাদের জন্যেও টিকিট কেটে রেখেছে। সেই যে বার সারা পৃথিবীর সংগীতজ্ঞদের নিয়ে ব্রুস স্যাটেলাইটে একটি পিস-কনসার্ট করলেন সেই থেকে আমি তাঁর ভক্ত। কনসার্ট হবে কংকর্ডে, সান হোসে থেকে বেশ কিছুটা দূরে।
রিনি—-রূপু খোঁজ নিয়ে জেনেছে পার্কিং লট থেকে অডিটোরিয়াম পর্যন্ত অনেকটা হাঁটা, খানিকটা চড়াই পথে ওঠা, এবং সব শেষে গ্যালারিতে সিঁড়ি ভাঙা। কোনওটাই আমার দ্বারা হওয়ার না। অতএব তারা হুইল-চেয়ারের ব্যবস্থা করে ফেলল চোখের পলকে। এবং হুইল-চেয়ার আরোহীদের সিঁড়ি ভাঙতে হয় না, নীচে, সামনেই তাদের আসন নির্দিষ্ট। বেচারি রূপু রিনি নিজেরা টঙে চড়ল। আমি বসলুম, নীচে, সামনে। শামিয়ানার তলায়। টিকিটের দাম একই। চেয়ার ঠেলার কল্যাণে শ্রাবস্তীরও ঠাঁই সেখানে।
আমার পাশে সবাই হুইল-চেয়ারে। কত উৎসাহ এ দেশে। কত সুবিধা, প্রতিবন্ধীদের। গান শুরু হতেই উঠে দাঁড়িয়ে তালি বাজাতে আর তালে তালে নাচতে শুরু করল শ্রোতারা। আমার এ পাশের হুইল-চেয়ারে বসা মহিলাটিও এঁকেবেঁকে উঠে দাঁড়িয়ে তালে তালে দুলতে থাকেন, হাততালি দিয়ে। আমার মনটা ভরে গেল।
একটা পুরো পার্কিং লট নির্দিষ্ট অছে ভি আই পি-দের জন্য এবং প্রতিবন্ধী শ্রোতাদের জন্য। প্রতিবন্ধীরা এখানে ভি আই পি। সমস্ত অডিটোরিয়াম গানের তালে দুলছে। তালি দিচ্ছে। কিন্তু কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে নাচছে। না দেখলে সে উত্তেজনা বর্ণনার নয়।
ব্রুস সিক্সটিজ-এর গান শুরু করলেন। এ বার দেখি আমিও দাঁড়িয়ে পড়েছি এবং নেচে উঠেছি। আমি তো একটুতেই নেচে ফেলি, এটা আবাল্য আমার বদ স্বভাব। শরীরের মধ্যে একটা ছন্দে-দোলা সাপ আছে। সাপুড়ের বাঁশি শুনলেই সে অমনি নেচে ওঠে। গান জমে উঠেছে, এমন সময় ব্রুস হঠাৎই গান থামিয়ে দর্শকদের মধ্যে কাউকে লক্ষ করে, তাঁকে স্টেজে আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই রুদ্ধশ্বাসে ভাবছি কে তিনি? কে উঠবেন মঞ্চে
উঠলেন এক জন পরমাসুন্দরী ফ্যাশনবতী মহিলা। ছোট করে ছাঁটা সাদা চুল, পরনে হাল্কা সবুজ সিল্কের পাজামা কুর্তা, গলায় ওড়নার মতো সবুজ চাদর দোলানো। মহিলা হাসলেন। বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলমলে সেই হাসি আমাকে নিয়ে গেল এক মুহূর্তে চল্লিশ বছর পিছনে। তখন ব্রুস বলছেন, আমার মহা সৌভাগ্য, যে আজ আমার গান শুনতে এসেছেন স্বয়ং জোন বায়েজ! আমার উত্তেজনা, আমার আহ্লাদ ও বিস্ময় সহজেই অনুমেয়।
সে দিনের দীর্ঘ কালো মেঘের মতো কেশ এখন রজতশুভ্র। ইন্দিরা গাঁধী, সুচিত্রা মিত্রের স্টাইলে ছাঁটা। মুখে বয়সের চিহ্ন নেই। একই দৃপ্ত, মোহনরূপ, শাণিত, বুদ্ধিদীপ্ত। যা মুগ্ধ করে, নম্রও করে। মঞ্চে উঠে দর্শকদের হল-ফাটানো সগর্জন অভিবাদন নত হয়ে গ্রহণ করলেন জোন। তার পর ব্রুসের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠলেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’।
অমনি সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ল। সকলেই গলা মিলিয়েছে। সবার গলায় সেই শপথের সুর। সেই আত্মবিশ্বাস। চোখে স্বপ্ন, বুকে আকুলতা। সত্যিই তো, আজও তো ঘটেনি সেই উত্তরণ, আজও তো লঙ্ঘন করতে পারিনি সেই বিঘ্ন, যা মানুষকে মানুষের থেকে সরিয়ে রাখছে, দূরত্ব গড়ছে। আমার পাশের ভদ্রমহিলার বয়স আমার চেয়ে কম। হঠাৎ দেখি কখন যেন দুজনেরই রুমাল বেরিয়েছে, আমরা দুজনেই চোখ মুছছি।
বৃত্ত যে এ ভাবে সম্পূর্ণ হয় কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ শ্রাবস্তীকে যতটা দেখাতে পারব ভেবেছিলুম, তার চেয়ে অনেকটাই বেশি দেখানো হয়ে গেল এ যাত্রায়। কিন্তু বৃত্ত কি সত্যি সত্যি সম্পূর্ণ হতে পারে? জীবনের গতি তো স্পাইরাল পদ্ধতিতে ঘোরে, চলমান সময়ের একটা মুখ খোলাই থেকে যায়, জীবন যত দিন। চক্র তো নয়, চক্রবৎ।
প্রকাশ : ৫ কার্তিক ১৩১৪