3 of 8

বইমেলা

বইমেলা

কবে কোথায় যেন এক মহিলা সাহিত্যিককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনি সাহিত্যিক হতে গেলেন কেন?

ভদ্রমহিলা নির্বিকার মুখে বলেছিলেন, “বিছানায় শুয়ে করার মতো একজন মহিলার পক্ষে এটা একমাত্র সম্মানজনক কাজ।’

ভদ্রমহিলার সাহস ছিল। সব লেখক-লেখিকা এ রকম সাহসী হন না। তবে এই মুহূর্তে অন্য একজন সাহসী লেখকের কথা মনে পড়ছে।

সেই লেখককে অনুরূপ এক সাক্ষাৎকারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করা হয়েছিল। লেখক ভদ্রলোক সাক্ষাৎকারের শেষভাগে চুড়ান্ত কথাটি বলেছিলেন, তিনি কবুল করলেন ‘পনেরো বছর লেখার পর আমি টের পাই সাহিত্যিক হওয়ার জন্যে যে প্রতিভা, কল্পনাশক্তি বা ভাষাজ্ঞান প্রয়োজন সেসব কিছুই আমার নেই। আমি নেহাতই এক এলেবেলে লেখক।’

এর পরে বাধ্য হয়ে প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন, তা হলে তার পরেও লিখছেন কেন?’

ভদ্রলোক ম্লান হেসে জবাব দিলেন, কী করব, এখন যে আমার নাম হয়ে গেছে। আমার বই হাজারে হাজারে বিক্রি হচ্ছে।’

কার বই, কোন বই কেন বিক্রি হয়, কেন বিক্রি হয় না তার কোনও সরল সূত্র নেই। এ বছর যে বই ছাপতে না ছাপতে এডিশন হয়ে যাচ্ছে, সামনের সালে সে বই সারা বছরে পাঁচশো কপি বিক্রি হতে পারে। যে বই লেখকের জীবিতাবস্থায় সবসুদ্ধ মাত্র দুশো কপি বিক্রি হয়েছে, লেখকের মৃত্যর পরে সেই বই দৈনিক দুশো কপি করে বিক্রি হতে পারে।

আর, পাঠকের কাছে বই ভাল লাগা না লাগা? সেও এক তাজ্জব ব্যাপার।

স্পষ্ট মনে আছে এই গত বছরেই বইমেলায় কফির দোকানে দুই পাঠকের ভয়াবহ কথোপকথন।

একই টেবিলে আমিও বসেছিলাম।

একটা সদ্যপ্রকাশিত বই নিয়ে দুই অন্তরঙ্গ পাঠকের কঠিন বচসা :—

প্রথম পাঠক (তার হাতে সদ্য কেনা একটা বই); এ রকম বই বাংলাভাষায় আর কখনো লেখা হয়নি।

দ্বিতীয় পাঠক (প্রায় চেঁচিয়ে) : রাবিশ।

প্রথম পাঠক (বিস্মিত, বিমূঢ়) : রাবিশ।

দ্বিতীয় পাঠক (আরও চেঁচিয়ে) : রাবিশ।

প্রথম পাঠক : ‘স্বর্ণগোলকের রক্ত’ রাবিশ! সুধানাথ দাসের ‘স্বর্ণগোলকের রক্ত’ রাবিশ?

দ্বিতীয় পাঠক ; রাবিশ! রাবিশ!

প্রথম পাঠক : বইটা তুমি পড়েছ?

দ্বিতীয় পাঠক : যখন ধারাবাহিক বেরিয়েছিল, দু-চার পঙ্‌ক্তি চোখ বুলিয়ে দেখেছি।

প্রথম পাঠক : এ রকম একটা বইয়ের মূল্য তুমি কী বোঝ? তুমি কখনও বই লিখেছ? লেখার চেষ্টা করে দেখেছ?

দ্বিতীয় পাঠক : বই বুঝবার জন্যে বই লেখার দরকার কী? পড়তে জানলেই হল।

প্রথম পাঠক : মানে?

দ্বিতীয় পাঠক : মানে আর কী? ডিমসেদ্ধ খেতে কী রকম সেটা জানার জন্যে ডিম পাড়ার দরকার নেই। একটা হাঁস কিংবা মুরগির চেয়ে একজন মানুষ অনেক ভাল জানে ডিমসেদ্ধ খেতে কী রকম, তার জন্যে তাকে ডিম পাড়তে হয় না।

পুনশ্চ [এক]

এর পরে আর কিছু বলার থাকে না।

কিন্তু আবার বইমেলায় সেই লেখককেও মনে পড়ছে, যিনি বলেছিলেন, ‘সম্পাদক, প্রকাশক, সমালোচক এঁদের সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই, এঁরা সবাই আমাকে আমার যোগ্যমূল্য দিতে চান।’

‘স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে? ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘যোগ্যমূল্যটা এত কম যে আমার পক্ষে হজম করা সম্ভব নয়।’

পুনশ্চ (দুই)

শুধু যে মানুষেরাই বই পড়ে তা কিন্তু নয়। এক বিখ্যাত উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছিল। সিনেমা দেখতে এক বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা তাঁর কুকুরকে সঙ্গে এনে আলাদা টিকিট কেটে পাশের সিটে বসিয়েছিলেন। তাঁকে হলের লোকেরা প্রশ্ন করেছিল, ‘কুকুর কেন?

ভদ্রমহিলা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, আমি যখন বইটা পড়ি তখন টাইগার, মানে আমার এই কুকুরটাও বইটা আমার সঙ্গে পড়েছিল। ওরও বইটা খুব ভাল লেগেছিল। তাই সিনেমাটাও টাইগারকে দেখাতে নিয়ে এলাম।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *