ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০–১৯১০) – আধুনিক ‘নার্সিং’ বৃত্তির অগ্রপথিক
কবিরা বলেন, পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। কথাটা বাস্তবে সত্যি নয়। বনের ফুল ফোটে একান্তই তার নিজের জন্য, ফোটে তার বংশবৃদ্ধির জন্য। তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
কিন্তু পৃথিবীতে কদাচিৎ এমন কিছু কিছু মানুষের জন্ম হয়, যাঁরা কবির ভাষায় পুষ্পের মতোই, আপনার জন্য তাঁদের জন্ম হয় না। ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি’ এঁরা জীবনকে বৃহত্তর কল্যাণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। এঁরা মানব নন, মহামানব বা মানবী।
বিশ্বের আর্তমানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গকারী এ-রকমই এক মহীয়সী মহিলার নাম ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (Florence Nightingale )।
এই নামের যে দুটো শব্দ—এ শব্দ দুটো কিন্তু তাঁর নিজের পারিবারিকসূত্রে পাওয়া নয়। শব্দ দুটো এসেছে বিচিত্রভাবে এবং ভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে। নাইটিংগেলের বাবার নাম ছিল উইলিয়াম এডওয়ার্ড শোর। ১৮১৫ সালে তাঁর নিঃসন্তান কাকা পিটার নাইটিংগেলের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লাভ করেন উত্তরাধিকারসূত্রে।
মজার ব্যাপার, এই সম্পত্তিও পিটার সাহেবের নিজের উপার্জিত ছিল না। তিনিও বাল্যকালে উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিংগেল নামের জনৈক নিঃসন্তান ধনী ব্যক্তির পোষ্যপুত্র হয়েছিলেন। তখনি তাঁর নাম পিটার শোর থেকে পিটার নাইটিংগেল হয়ে যায়।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। জন্মস্থানের নাম ফ্লোরেন্স এবং নিজের ধনলাভের উৎস পিটার নাইটিংগেলের উপাধি মিলিয়ে শোর সাহেব তাঁর মেয়ের নাম রেখেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল।
ইতালিতে জন্ম হলেও জন্মের পরপরই তিনি পিতার সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে যান। বাল্যকালে তাঁর জীবনের কিছু সময় কাটে ইংল্যাণ্ডের ডারবি শহরের নিকটবর্তী লিয়া হার্স্ট নামের একটি শহরে আর বাকি কিছু সময় কাটে হ্যাম্পশায়ারের রামসের নিকটবর্তী ইম্ব্লে পার্কে।
স্কুলের পড়া শেষ করে তিনি আবার ফিরে যান ইতালিতে পরে ফ্রান্সে। এই দুটো দেশেরই বিভিন্ন কলেজে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি বহু হাসপাতালে এবং নার্সিংহোমে রোগীর সেবা, চিকিৎসাপদ্ধতি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। এসব হাসপাতালেই তিনি দুঃখব্যাধিজর্জর মানুষের আর্তনাদ তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এসব কিছু থেকেই তাঁর মনের সংগোপনে আর্তমানবতার প্রতি সৃষ্টি হয় গভীর মমত্ববোধ। ব্যথিত মানুষের জন্য কেঁদে উঠতে থাকে তাঁর কোমল হৃদয়। আর্ত-অসুস্থ মানুষের সেবার ব্রত গ্রহণের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতে থাকেন। তিনি উৎসাহিত হয়ে ওঠেন সেবিকাবৃত্তি গ্রহণের জন্য।
যে সময়কার কথা, তখন ইউরোপের মতো উন্নত দেশের উচ্চবিত্ত পরিবারের মধ্যেও প্রচলিত ছিল কুসংস্কার। ছিল বংশগৌরবের অনুকূলে প্রবল অহমিকাবাধ। তাই নাইটিংগেল যখন শিক্ষাজীবন শেষ করে নার্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তাঁর পরিবার থেকেই বাধা এল। কারণ ইউরোপের মতো উন্নত দেশসমূহেও তখন নার্সিং পেশাকে সুনজরে দেখা হতো না। তখন হাসপাতালের যারা নার্স হতো তাদের সকলেই ছিল অশিক্ষিত, তাদের সামাজিক মান-মর্যাদাও ছিল না। তখনকার দিনে নার্সিং ছিল হাসপাতালের সেবাদাসী বা আয়া-চাকরানিদের মতোই একটা নিম্নমানের পেশা। তাদের না ছিল শিক্ষা, না ছিল মান-মর্যাদাবোধ। তাই সমাজের উচ্চবিত্ত ঘরের একটি মেয়ে যখন এমন একটি নিম্নমানের পেশা গ্রহণ করতে চাইলেন, তখন পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা আসাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বাধা টিকল না। নাইটিংগেলের মনের প্রবল ইচ্ছে এবং আর্তমানবতার প্রতি ভালবাসা তাঁকে শেষ পর্যন্ত নিজের পথ বেছে নিতে সহযোগিতা করল।
কিন্তু হাসপাতালে তাঁর মতো একটি ভদ্রঘরের শিক্ষিতা মেয়ের পক্ষে নার্স হয়ে যোগদান করাও সহজ ছিল না। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে সলিসবারি হাসপাতালের জনৈক ডাক্তার তাঁকে প্রথমে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিতে রাজি হলেন। শুরু হলো তাঁর নার্সিং পেশা।
নাইটিংগেল যখন হাসপাতালে চাকরি নেন, তখন তিনি নার্সিং সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাই ঠিক করলেন অবশ্যই তাঁকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন ডুসেলডর্ফের কাছে কাইজারসভের্থ ইনস্টিটিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেবাদানে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু এই ইনস্টিটিউশনেও তিনি খুব সহজে ভর্তি হতে পারেননি। আসলে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন ফ্লিডনার নামে লুথারপন্থি এক খ্রিস্টান পাদরি। এখানে সমাজের অনাথা অশিক্ষিত মহিলাদের (যার সাত কূলে আপন বলে কেউ নেই) হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় এবং তাদেরকে পাঠানো হয় বিভিন্ন গির্জায়। সেখানে তাদের নিযুক্ত হয় নিম্ন মর্যাদার পাদরি হিসেবে, সহজ কথায় যাদের বলা হয় গির্জার সেবাদাসী।
কিন্তু নাইটিংগেল তো অনাথা রমণী নন বা অশিক্ষিতাও নন। এ ছাড়া তিনি প্রশিক্ষণ শেষে গির্জাতেও চাকরি নিতে যাবেন না। তাই ইনস্টিটিউশনের প্রধান তাঁকে প্রথমে নিতে রাজি হননি। কিন্তু নাইটিংগেলের দৃঢ়তার কাছে শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান। পরে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
এখানে মেয়েদেরকে লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি রোগীর সেবাযত্ন ও গৃহস্থালি বিষয়েও প্রশিক্ষণ দান করা হতো। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি পাঁচ বছরের একটি সেবিকা প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।
এখানকার প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরপরই তিনি ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের আপার হারলে স্ট্রীটে অবস্থিত হসপিটাল ফর ইনভ্যালিড জেন্টল-উম্যান হাসপাতালে সুপারিনটেনডেন্ট পদে চাকরি পেয়ে যান। এখানে তাঁর প্রধান কাজ ছিল হাসপাতালের প্রশাসন দেখা এবং এর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। তবে এখানে আসার পরেই তিনি রোগীদের সেবাযত্ন করার এবং নার্সিং সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পান। তাঁর নিষ্ঠা ও সেবার মনোভাব তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে পর্যন্ত মুগ্ধ করে ফেলে।
১৮৫৩ সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। ব্রিটিশ সৈন্য অবতরণ করে ক্রিমিয়াতে কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের কোনো চিকিৎসা-সুবিধা না থাকায় আহতদের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা। ফলে ব্রিটিশ সরকার দেশবাসীর কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
এই সংকটে সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে এলেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। তিনি ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে আহত সৈন্যদের সেবা করার বাসনা প্রকাশ করলেন।
তারপর তিনি ব্রিটিশ সরকারের তৎকলীন সচিব স্যার সিডনি হারবার্টের কাছে ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু সচিব সহজে এ-ব্যাপারে অনুমোদন দিলেন না। সেকালে ইংল্যান্ডে আজকের মতো এমন নারী-স্বাধীনতা ছিল না। নারীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে সহজে কেউ নিতে চাইতেন না। তা ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি সৈন্যদের নৈতিক অবনতি ঘটাতে কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তিনি এই অনুমতি দিতে দ্বিধান্বিত হলেন। তবে অনেক চেষ্টা- তদ্বিরের পর নাইটিংগেল অবশেষে ক্রিমিয়াতে যাবার অনুমতি লাভ করলেন।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে নাইটিংগেল লক্ষ্য করলেন সর্বত্র চরম অব্যবস্থা। নামেমাত্র একটি হাসপাতাল। চারদিকে নোংরা আর্বজনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। আহত রোগীদের সেখানে রাখা হয় লঙ্গরখানার মতো। না আছে চিকিৎসার সুবিধা, না আছে সেবা ও খাদ্যের সুব্যবস্থা।
নাইটিংগেল সেখানে পৌঁছেই হাসপাতাল নামধারী ব্যারাকটিকে মেরামত করার এবং একটি পরিপূর্ণ আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করলেন। তারপর তিনি তাঁর সঙ্গিনীদের নিয়ে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগ করলেন আহত সৈন্যদের সেবার কাজে। মা ও বোনের ভূমিকা নিয়ে তিনি দাঁড়ালেন আহত, ক্ষুধার্ত ও যন্ত্রণাকাতর সৈন্যদের পাশে।
তিনি সামরিক হাসপাতালটির প্রশাসনিক ও কর্মপদ্ধতির অব্যবস্থারও অনেক পরিবর্তন সাধন করলেন। তিনি আহত সৈনিকদের নোংরা পরিধেয় বস্ত্র ধোবার জন্য নিজের অর্থেই স্থাপন করলেন একটি লন্ড্রি। নোংরা কাপড় পরে থাকলে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে বলেই তিনি এই কাজটি করলেন। কাপড় ধোয়ার কাজে নিয়োগ করলেন আহত সৈনিকদেরই স্ত্রীদের।
গোটা হাসপাতালের কর্মপদ্ধতি ও সেবাকর্মের আমূল পরিবর্তন আনলেন। এতে একদিকে যেমন তাঁর খ্যাতি বাড়তে লাগল, বাড়তে লাগল জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে তেমনি বাড়তে লাগল নিন্দুকের সংখ্যাও। অনেক হিংসুক লোক তাঁর কাজে প্রত্যক্ষভাবে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু নাইটিংগেলের নিষ্ঠা, সততা ও মাতৃসুলভ আচরণের জন্য অর্জিত প্রশংসার প্রবল জোয়ারের মুখে এসব নিন্দুকের দল তেমন সুবিধা করতে পারল না। নাইটিংগেল প্রতি রাতে আলো হাতে ঘুরে বেড়াতেন আহত সৈনিকদের শয্যার পাশে। পরম স্নেহে তিনি এসে দাঁড়াতেন তাদের শয্যাপাশে। জিগ্যেস করতেন তাদের কুশলাদি। এজন্যই তাঁকে বলা হয় ‘লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প'(Lady with the Lamp)। শোনা যায়, তিনি আহত সৈনিকদের এতটাই শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন যে, আলো হাতে তাদের শয্যার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যেখানে তাঁর ছায়া পড়ত, সৈনিকরা পরম শ্রদ্ধায় সেই ছায়াতে চুম্বন করত।
তিনি আহত সৈন্যদের মদ্যপানের প্রবণতাকে কমিয়ে আনার জন্য হাসপাতালের পাশে ‘ইংকারম্যান কাফে’ নামে একটি কফি হাউসেরও প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে প্রতিদিন বহু সৈনিক যেত। এটাই ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, তিনি হাসপাতালের সাথে একটি ডাকঘর খুলে তাতে মনিঅর্ডার শাখাও খোলেন। এর মাধ্যমে তিনি আহত সৈন্যদের সঞ্চয় থেকে প্রথম ছ’মাসে একাত্তর হাজার পাউন্ড তাদের পরিবারবর্গের কাছে প্রেরণ করেন।
এই সময় তিনি দিনের সর্বক্ষণই কর্মরত থাকতেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তিনি দিনে রাতে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পরিশ্রম করতেন।
এরপর ১৮৫৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় শান্তি চুক্তি এবং সেইসাথে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলেরও শেষ হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের সেবার কাজ। তিনি আবার ফিরে এলেন ইংল্যান্ডে।
এই সেবাকার্য এবং হাসপাতালের ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি কিছু লেখালিখিও করেন। লেখা মানে নার্সিং বিষয়ের ওপরেই তিনি দুটো মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এই দুটি গ্রন্থ হলো ‘নোট্স্ অ্যাফেক্টিং দি হেল্থ্, ইফেসিয়েন্সি অ্যান্ড হসপিট্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দি ব্রিটিশ আর্মি’ (Notes Affecting the Health, Efficiency and Hospital Administration of the British Army)। তাঁর দ্বিতীয় বইটির নাম ‘নোট্স্ অন নার্সিং’ (Notes on Nursing)।
তাঁর দ্বিতীয় বইটি প্রচণ্ড পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে এবং সেকালে বেস্ট সেলারের মর্যাদা লাভ করেছিল। এই বইটি বিক্রি করে তিনি রয়ালটিই পেয়েছিলেন ৫০,০০০ পাউন্ড।
ইংল্যান্ডে ফিরে এলেও তাঁর কাজের শেষ হলো না। আশা ছিল একটি সেবিকা স্কুল স্থাপনের। এই উদ্দেশ্যে তিনি চাঁদা সংগ্রহ অভিযান চালিয়ে চল্লিশ হাজার পাউন্ড সংগ্রহও করেছিলেন। কিন্তু এই সময়েই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আক্রান্ত হন পক্ষাঘাতে। তবু তাঁর আন্তরিকতা ও চেষ্টায় এই অসুস্থ অবস্থাতেই ১৮৬৯ সালে লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালে স্থাপিত হয় সেবিকা প্রশিক্ষণ স্কুল।
নাইটিংগেল নব্বই বছরকাল জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের অর্ধাংশেরও বেশি সময় কেটেছে পঙ্গু অবস্থায়। কিন্তু এই অবস্থাতেও তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়েই চালিয়ে গেছেন তাঁর সেবার কাজ।
তাঁর শেষ জীবনটা খুব সুখে যায়নি। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবিকা স্কুলের কাজটিও শেষ করে যেতে পারেন নি পঙ্গুত্বের জন্য।
তারপরও তাঁর আশা ছিল, হয়তো সরকার তাঁর পূর্বকাজের স্বীকৃতির নিদর্শন হিসেবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবাস্কুলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। পাওয়া যাবে সরকারি সহযোগিতা। কিন্তু তাও হলো না। বিশেষ করে তাঁর পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর তাঁর নিজেরই স্থাপিত স্কুলের পরিচালনার ভার তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকল না, এটা ছিল তাঁর জন্য খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা।
নানা কারণে তাঁর মন তখন ভেঙে পড়েছিল। তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন প্রচণ্ডভাবে। তাই শেষ জীবনের প্রায় ১৫টি বছর কাটিয়েছেন তাঁর লন্ডনের পার্ক লেনের নিজের বাড়ির নির্জনতায়। তিনি এই সময় প্রায় কারও সাথেই কথা বলতেন না, ঘরের বাইরে পর্যন্ত আসতেন না। বাইরের লোকজন তাঁকে খুব একটা দেখতে আসত না। তাঁর জীবন কাটছিল দুর্বিষহ অবস্থায়।
অবশেষে ১৯০৭ সালে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড তাঁকে স্বীকৃতিধন্য করলেন। তাঁকে ভূষিত করেন ‘অর্ডার অব মেরিট’ উপাধিতে। ব্রিটিশ সম্রাজ্যে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলই প্রথম মহিলা, যিনি অর্ডার অব মেরিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
১৯১০ সালের ১ আগস্ট মৃত্যু হয় এই মহীয়সী মহিলার।