ফুলমণি-উপাখ্যান – ২

উন্নতি শব্দটার অনেক রকম মানে হতে পারে। একজন ইস্কুল মাস্টারকে যদি থানার দারোগা করে দেওয়া হয় কিংবা একজন সন্ন্যাসীকে ধরে এনে যদি বসিয়ে দেওয়া হয় রাইটার্স বিল্ডিংসের কোনো বড়বাবুর চেয়ারে, কিংবা একটা ফুলের বাগানে যদি তৈরি হয় দশতলা বাড়ি, এসবও উন্নতি নিশ্চয়ই, আবার ঠোঁট ব্যাঁকাতেও হয়। একটা নিরিবিলি জংলা মতন জায়গা, দু’চারখানা মাত্র বাড়ি আর সরু পায়ে চলা পথ ছাড়া আর কিছুই নেই, আছে শুধু শান্তি ও সৌন্দর্য। সেই জায়গাটায় যদি শুরু হয়ে যায় এক কর্মকাণ্ড, জঙ্গল সাফ করে তৈরি হয় কারখানা, হাসপাতাল, হোটেল, অফিসবাড়ি, তা হলে সেটাও খুব উন্নতির ব্যাপার, কত লোক চাকরি পাবে, কত মানুষের আশ্রয় জুটবে। খুবই আনন্দের কথা। তবু আগেকার জন্য দীর্ঘশ্বাসও থেকে যায়।

ছোটপাহাড়ী এখন বড় হতে চলছে। কাছাকাছি এক জায়গায় পাওয়া গেছে লৌহ ধাতুপিণ্ড, তাই ছুটে আসছে ইস্পাত-বিশেষজ্ঞরা। এখানে এখন শহর হবে। বোধহয় এখন যেটা টাটানগর সেটাও একসময় ছোটপাহাড়ীর মতনই ছিল। চন্দনদাদের কোম্পানিই এখানে অনেকগুলো ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট শুরু করে দিয়েছে, দারুণ উদ্যমে দ্রুত তৈরি হচ্ছে বড় বড় বাড়ি ঘর। সেই রকমই একটা নির্মীয়মাণ কারখানার মিস্তিরি-মজুরদের কাজের ওপর নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। অর্থাৎ কুলির সর্দার। কাজটা আমার বেশ পছন্দের।

ছোটপাহাড়ী জায়গাটা বাংলা আর বিহারের সীমানায়। একটা ছোট্ট নদীর এপার আর ওপার। এখানকার লোকরা হিন্দি-বাংলা দুটোই জানে। হিন্দি বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গিয়ে নিখুঁত বাংলা বলে। সাঁওতালরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিজেদের ভাষায়, আবার বাংলা যখন বলে, তাতেও যথেষ্ট সাবলীল। সুতরাং এখানে ভাষার ব্যাপারে আমার কোনো অসুবিধে নেই।

পাহাড়গুলোর পায়ের কাছে যে বিস্তীর্ণ বনতুলসীর ঝোপ, সেদিকে এখনো হাত পড়েনি নগর-নির্মাতাদের। আমি প্রতিদিন একবার সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরি, বুক ভরে ঘ্রাণ নিই, চোখ ভরে ছবিটা রেখে দিই। ঠিক করে রেখেছি, বনতুলসীর ঝাড় কাটার কথা উঠলেই আমি এখান থেকে সরে পড়ব। ওদের প্রতি আমি অকৃতজ্ঞ হতে পারব না।

প্রথম দিন এসেই চন্দনদা বলেছিল, তুই আমার কোয়ার্টারে থাকতে পারিস নীলু, আবার নিজস্ব থাকার জায়গাও পেতে পারিস। আমার কোয়ার্টার যথেষ্ট বড়, তুই থাকলে কোনো অসুবিধে নেই, তবে স্বাবলম্বী হতে চাস যদি তা হলে আলাদা, ব্যবস্থা হতে পারে। তুই তো আবার দয়া-টয়া চাস না। প্রথম কয়েকটা দিন আমার এখানে খেয়ে নিবি, তারপর নিজেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করবি!

বলাই বাহুল্য, সর্বক্ষণ চন্দনদার অভিভাবকত্বের তলায় থাকার চেয়ে আমার আলাদা থাকাই পছন্দ। আমার জন্য কোনো কোয়ার্টার এখনো তৈরি হয়নি, তবে বড় যে গেস্ট হাউসটি আছে, তার একটি ঘর বরাদ্দ হলো! এই গেস্ট হাউসটি যখন সবে মাত্র তৈরি হচ্ছিল, একতলার একখানা বড় ঘর ছিল বাসযোগ্য, তখন আমি মুমুকে নিয়ে এসেছিলাম এখানে। রাত্তিরবেলা ঘরের মধ্যে সাপ ঢুকে পড়েছিল, সে কি কাণ্ড! সেদিন দারুণ ভয় পেয়েছিলুম, আজ ভাবতে মজা লাগে।

তখন হরিলাল নামে যে চৌকিদারটি ছিল, সে এখনো আছে। আগের মতনই সে সন্ধের পর মহুয়ার নেশা করে বোম্ হয়ে থাকে, কিন্তু অতি সরল ও নির্মল মানুষ। আমাকে দেখেই যে সে চিনতে পারল, তাতে আমি একেবারে অভিভূত। আমার মতন একজন সামান্য মানুষকে সে দু’বছর আগে মাত্র একদিন দেখেই মনে রেখেছে।

আমার ঘরটা দোতলার এক কোণে। এই বাড়িটার খুব কাছেই একটা পাহাড়, মনে হয় যেন হাত বাড়ালেই ছোঁওয়া যাবে। মাঝখানে অবশ্য একটা জঙ্গলও আছে। রাত্তিরে সেখানে শেয়াল ডাকে। শিগগিরই এই জঙ্গলটা কাটা হবে, তখন শেয়ালগুলো যাবে কোথায়?

এখানে খাবার ব্যবস্থা হয়নি এখনো। দু’তলায় রয়েছে দুটো রান্নাঘর, ব্যবহার করতে পারে অতিথিরা, কিংবা বাইরে হোটেলেও খেয়ে আসত পারে। অতিথি প্রায় থাকেই না। সারা বাড়িটাই আমার এখন একার বলা যায়। সকালবেলায় চা, ডিম-টোস্ট কিংবা পুরি-ভুজি হরিলালই বানিয়ে দেয় আমার জন্য। চন্দনদা এক হাজার টাকা অ্যাডভান্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, এখন আমি ইচ্ছে করলে প্রত্যেকদিন ডাবল ডিমের ওমলেট খেতে পারি। এখন আমি বড়লোক, সব সময় পকেটে খচমচ করে টাকা। এত টাকা নিয়ে মানুষ কী করে? ছোটপাহাড়ীতে টাকা খরচ করার কোনো রাস্তাই নেই। না আছে সিনেমা থিয়েটার, না আছে ভালো রেস্তোরাঁ কিংবা ডিস্কো নাচের ব্যবস্থা।

আমাদের জন্য কিছু নেই, কিন্তু মজুর-কামিনদের জন্য অনেক কিছুই আছে। মহুয়ার দোকান, চুল্লুর ঠেক, জুয়ার আড্ডা। ওদের পয়সা খলখলিয়ে চলে যায়। রাত্তিরবেলা ওরা নাচে, গায়, ফুর্তি করে, আর সন্ধের পর থেকে আমাদের কিছুই করার থাকে না। সময় কাটাবার জন্যই আমি রাত্তিরে নিজে রান্না শুরু করেছি, দিনের বেলা হোটেলে খেয়ে নিই।

সকাল ন’টা থেকে ছ’টা পর্যন্ত আমার আপিশ। একটা সুবিধে এই যে, গেস্ট হাউসে দুটো বারোয়ারি সাইকেল আছে। এখানে তো আর ট্যাক্সি-বাস-রিক্সা পাওয়া যাবে না, অফিসারদের নিজস্ব গাড়ি বা জিপ আছে, আমার মতন ক্লাস থ্রি স্টাফদের সাইকেলই সম্বল। আমার কাজের জায়গাটা প্রায় দেড়মাইল দূরে, তৈরি হচ্ছে একটা লম্বাটে দোতলা বাড়ি, সেটা হবে লেবরেটারি। গাঁথনি ও ছাদ ঢালাই হয়ে গেছে, এখন চলছে ভেতরের কাজ। এই সময়েই নাকি মিস্তিরি মজুরেরা কাজে ঢিলে দেয়, খুচখাচ করে সারাদিনে কী যে করে বোঝা যায় না।

সাইকেল চালিয়ে ঠিক ন’টার সময় আমি সেখান হাজির হই। কাজটা খুব সোজা। প্রথমে একটা লম্বা খাতা দেখে মিস্তিরি-জোগাড়ে-কামিনদের নাম হাঁকি। ব্যস, তারপর আর করার কিছু নেই, শুধু কয়েকবার একতলা-দোতলায় চক্কর মারা ছাড়া। চন্দনদার স্পষ্ট নির্দেশ আছে, কুলি-মজুরদের কোনো ক্রমেই বকাবকি করা চলবে না। বকলে ওদের মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে, তখন নানা উপায়ে তারা ফাঁকি মারার ফিকির খুঁজবে। বরং তাদের সঙ্গে গল্পগুজব করলে তাদের মন ভালো থাকে, কাজে বেশি উৎসাহ পায়। ঠিক সাড়ে বারোটায় বাজিয়ে দিতে হবে ঘণ্টা, এর পর থেকে দু’ঘণ্টা টিফিনের ছুটি।

এই দু’ঘণ্টা ছুটির’ ব্যাপারটায় মিস্তিরি-মজুররা নিজেরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। পুরো দিনের মজুরি পেয়েও দু’ ঘণ্টা ছুটি। এরকম তারা আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু চন্দনদার থিয়োরি হচ্ছে, অফিসের কেরানিবাবুরা যদি টিফিনের নামে দু’ ঘণ্টা ঘুরে বেড়তে পারে তাহলে, মিস্তিরি-মজুররা, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে, তাদের টিফিনের ছুটির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলে কাজের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। দু’ঘণ্টা টিফিনের মধ্যে আধ ঘণ্টা ওরা খাবার-দাবার খেয়ে নেবে, বাকি দেড় ঘণ্টা ঘুমোবে কিংবা গড়াবে। তারপর আবার ছটা পর্যন্ত কাজ।

এখন কাজ করছে সেই আঠারো জন নারী-পুরুষ। এরা আমায় ছোটবাবু বলে ডাকতে শুরু করেছে। আমি ছোটপাহাড়ীর ছোটবাবু। একমাত্র হেডমিস্ত্রিরি ইরফান আলী গম্ভীর ধরনের মানুষ, যে আমাকে বাবু বলে না। তার হাতে একটা দামি ঘড়ি, আমি ঘড়িই পরি না, সেইজন্য সে নিজেকে আমার তুলনায় উচ্চশ্রেণীর মানুষ মনে করে।

ছুটির পর আমি সাইকেল চালিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাই। এক একদিন ভোর বেলাতেও চলে আসি। ছোট্ট নদীটা পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, ছলোচ্ছল শব্দ করে। আমি জলে পা ডুবিয়ে বসি। এই সময় নিজেকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি বলে মনে হয়। জলের ওপর ঝুঁকে পড়া গাছপালা আর নদীর সঙ্গে অনায়াসে কথা বলতে পারি।

আমার চাকরির এই সময়টাই সবচেয়ে উপভোগ্য। দূর গ্রামের আদিবাসীরা এদিক দিয়ে যাবার সময় এক ঝলক তাকায়, আমার প্রতি তারা কোনো কৌতূহল প্রকাশ করে না।

এখান থেকে কলকাতায় যেতে খানিকটা বাসে আর বাকিটা ট্রেনে, সাড়ে ছ’ ঘণ্টার বেশি লাগে না। তবু মনে হয় যেন কলকাতা কয়েক লক্ষ মাইল দূরে। এখানে এখনো যান্ত্রিক শব্দের তেমন উৎপাত নেই, আর সন্ধের পর যে নিস্তব্ধতা তা যেন সভ্যতার আগেকার কালের।

আমি কলকাতাকে খুবই ভালোবাসি, কিন্তু একটানা বেশি দিন থাকতে পারি না। মাঝে মাঝে বিচ্ছেদ না হলে প্রেম জমে না।

কলকাতায় থাকার সময় পাহাড়-নদী-জঙ্গলের জন্য মনটা হু-হু করে। আবার অনেকদিন কোনো নিরালা-নিরিবিলি জায়গায় কাটাবার পর আবার কলকাতা মন টানে। এক সঙ্গে দুটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা খুব বিপজ্জনক, কিন্তু প্রকৃতি ও নগরী, এই দু’জনের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে প্রেম চালিয়ে যাওয়া সত্যিকারের আনন্দের।

রাত্তিরবেলা দূর থেকে শোনা যায় মাদলের ধ্বনি। কোনো আদিবাসী গ্রামে উৎসব চলে। আমাদের কামিন-মজুররা সবাই স্থানীয়, অনেকে প্রত্যেকদিন নিজেদের গ্রামে ফিরে যায়, আবার অনেকে এখানেই ঝুপড়ি বানিয়েছে, সেখানেও তারা নাচ-গান করে প্রায়ই।

একদিন রাত আটটার সময় চন্দনদার বাংলোর পাশ দিয়ে ফিরছি, দেখলুম অনেক আলো জ্বলছে, কয়েকজন লোকের গলার আওয়াজ, বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিন চারটে গাড়ি। পার্টি চলছে, আমার নেমন্তন্ন হয়নি।

চন্দনদা প্রথম দিনই আমাকে আলাদা থাকার ইঙ্গিত কেন দিয়েছিলেন, তা এর মধ্যেই বুঝে গেছি। আমার স্বাধীনতার জন্য নয়, নিজের পদমর্যাদার কারণ। চন্দনদা ক্লাস ওয়ান অফিসার, এখানকার বড় সাহেব, তাঁর বাড়িতে আমার মতন একজন ক্লাস থ্রি স্টাফের থাকাটা মানায় না। চন্দনদার বাড়িতে তাঁর কাছাকাছি তুল্য অফিসার এবং বড় বড় কন্ট্রাকটররা প্রায়ই আসবে, সেখানে আমার মতন একজনকে ঘুরঘুর করতে দেখলে তারা অবাক হবে, চন্দনদাও আমার পরিচয় দিতে লজ্জা পাবে। চাকরি না করে আমি যদি বেকার হতাম, তা হলে কোনো অসুবিধে ছিল না, চন্দনদা অনায়াসে বলতে পারত, এ আমার একজন ভাই, ক’দিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কিন্তু ক্লাস থ্রি স্টাফ কখনো ক্লাস ওয়ান অফিসারের ভাই হতে পারে না।

আমার ঠিক ওপরের বস্ চন্দনদা নয়, মহিম সরকার। তিনি কনস্ট্রাকশান ইঞ্জিনিয়ার। আরও দুটো বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে, মহিমবাবু সেখানেই ব্যস্ত থাকেন, আমার জায়গাটায় বিশেষ আসেন না। হঠাৎ কখনো একটা চক্কর দিয়ে যান। আমকে তিনি এ বাড়িটার একটা নীল নক্সা গছিয়ে দিয়েছেন, লিনটেন, প্যারাপট, প্লামবিং, ফ্লোর পালিশ এই সব বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, তা আমার মাথায় ঢোকেনি। বোঝার দরকারটাই বা কী, ওসব তো মহিমবাবুর কাজ। আমার ওপর দায়িত্ব মজুররা কাজের সময় ফাঁকি মারছে কিনা সেটা দেখা, কী কাজ করবে তা ওরাই জানে।

চন্দনদা আমাকে নেমন্তন্ন করে না বটে কিন্তু নিজে এক একদিন সন্ধেবেলা আমার গেস্ট হাউজে এসে হাজির হয়। রান্নাঘরে উঁকি মেরে জিজ্ঞেস করে, কী করছিস্ রে নীলু?

আমার মুখে চন্দনের ফোঁটার মতন ঘাম, গেঞ্জিটাও ভিজে গেছে। পাকা রাঁধুনির মতন গরম কড়াইতে তেল ঢেলে বললুম এই তো ডিমের ঝোল রাঁধছি। এরপর ভাত চড়াব।

চন্দনদা বলল, ডিমের ঝোল, বাঃ বেশ ভালো জিনিস। কটি ডিম নিয়েছিস?

—দুটো। তুমি একটা চেখে দেখবে নাকি?

–কাল কি রেঁধেছিলি?

—ডিম সেদ্ধ আর ডাল।

—পরশু?

—ডাল আর ডিমভাজা!

—রোজ রোজ ডিম খাচ্ছিস, তোর পেট গরম হয়ে যাবে! এখানে মুরগি বেশ সস্তা, একেবারে ফ্রেস দিশি মুরগি, তুই মুগির ঝোল রাঁধতে জানিস না?

—রাঁধতে বেশ ভালোই পারি, চন্দনদা, কিন্তু একটা গোটা মুরগি রাঁধলে খাবে কে? যত ছোটই হোক, পুরো একটা মুরগি খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে ফ্রিজও নেই যে রেখে দেবা।

—বলিস কি, তোর সাতাশ বছর বয়স, একটা আস্ত মুরগি খেতে পারবি না। আমরা তো ওই বয়েসে দু’তিনটে মুরগি উড়িয়ে দিতে পারতুম।

–তোমাদের ছেলেবেলায় নানা রকম অসম্ভব কাজ করতে পারতে, তা জানি। কিন্তু আমার পক্ষে দু’তিন পিসই যথেষ্ট। বাজারে তো কাটা-পোনার মতন কয়েক পিস মুরগির মাংস কিনতে পাওয়া যায় না।

—তার মানে, যারা একা থাকে, তারা মুরগির মাংস রান্না করে খেতে পারবে না? যারা বিবাহিত, কাচ্চা-বাচ্চাওয়ালা সংসারী লোক, তারাই শুধু মুরগি খাবে? এ তো ভারি অন্যায়, অবিচার। তাহলে তুই কী করবি, একটা বিয়ে করে ফেলবি নাকি?

—বিয়ে করার চেয়ে ডিমের ঝোল খাওয়া অনেক সহজ নয়?

–সেটা অবশ্য মন্দ বলিস নি! তাহলে?

চন্দনদা যেন এক গভীর সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল। আমি ডিমের ঝোল রেঁধে বেশি করে ভাত চাপালুম। আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পা দোলাতে দোলাতে চন্দনদা ঘুমিয়েই পড়ল একসময়।

ডাইনিং রুমে দুটো প্লেট সাজিয়ে আমি ডেকে তুললুম চন্দনদাকে

ঝোল দিয়ে ভাত মেখে এক গেরাশ খেয়ে চন্দনদা বলল, তুই তো বেশ ভালোই রান্না শিখছিস, নীলু। নীপার চেয়ে অনেক ভালো।

অর্ধেকটা খাবার পর হঠাৎ থেমে গিয়ে, আর্কিমিডিসের আবিষ্কারের ভঙ্গিতে চন্দনদা বলে উঠল, যাঃ, আর একটা উপায়ের কথা আমার এতক্ষণ মনেই পড়ে নি। আমিই তো একটা মুরগি নিয়ে এলে পারি। তুই সেটা রান্না করবি। দু’জনে মিলে একটা মুরগি শেষ করতে তো অসুবিধে নেই। তুই ওয়ান ফোৰ্থ, আমি না হয় থ্রি ফোর্থ খাব! তুই দিনের পর দিন মুরগি না খেয়ে থাকবি, তা তো ঠিক নয়।

–তোমাকে আনতে হবে না, আমিই তোমাকে একদিন মুরগি রেঁধে খাওয়াবো!

–কেন, আমাকে আনতে হবে না কেন? তুই ক’ পয়সা মাইনে পাস যে আমাকে খাওয়াবি? প্রথম মাসের মাইনে পেয়েই অর্ধেকটা পাঠিয়ে দিবি মাসিমাকে। হরিলাল, হরিলাল!

-ও কি, হরিলালকে ডাকছ কেন!

-ওকে দিয়ে মুর্গী আনাব!

—এখন? আমাদের তো খাওয়া হয়ে গেল!

-ধুৎ! মাছ-মাংস না থাকলে কি পুরো খাওয়া হয়? ডিম-টিমগুলো মনে হয় জলখাবার!

রক্ষে করো, চন্দনদা। ভাত খাওয়া হয়ে গেছে, এখন আমি মুরগি রান্না করতেও পারব না, খেতেও পারব না। আর একদিন হবে।

—তোরা এত কম খাস বলে তোদের মনের জোর কম। তা হলে কালই… ও হ্যাঁ, ভালো কথা, আর একটা খবর তোকে দেওয়া হয়নি। মুমু-নীপারা সবাই এখানে বেড়াতে আসতে চাইছে। এখন এত কাজের সময়…

-কবে আসবে?

—চব্বিশ তারিখ থেকে মুমুর কয়েকদিন ছুটি আছে। ঐ লালুটাও বোধহয় আসবে ওদের সঙ্গে।

—লালুদা আসবেই।

–কেন, আসবেই কেন?

-লালুদা এখানে এসে তোমার, আমার, নীপা বউদির নানা রকম উপকার করার সুযোগ ছাড়বে না। পরোপকার করা যে ওর নেশা!

–ও পুরুষদের জন্য কিছু করে না। শুধু মেয়েদের।

—আমার জন্য যে জামা-জুতো কিনে দিতে চাইছিল?

—নীপা সামনে ছিল বলে। নীপাকে ওর টাকার গরম দেখাতে চাইছিল। যাই হোক, লালুটা যদি এসে পড়ে, ওকে আমার বাংলোতে রাখব না। গেস্ট হাউসে ব্যবস্থা করে দেব। তুই যেন তখন লালুকে রেঁধে খাওয়াতে যাসনি!

—সে প্রশ্নই ওঠে না। নীপা বউদি এলে আমি জোর করে প্রত্যেকদিন তোমার বাড়িতে খেতে যাব। তুমি না ডাকলেও যাব

এই সময় দূরে দ্রিদিম দ্রিদিম করে মাদল বেজে উঠল।

খাওয়া থামিয়ে চুপ করে গেল চন্দনদা।

একটু বাদে বলল, এই আওয়াজটা শুনলে মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। ছোটবেলায় আমরা দুমকায় থাকতুম, সেই সময়কার কথা মনে পড়ে।

আমি বললুম, যত রাত পর্যন্ত শোনা যায়, আমি জেগে থাকি!

চন্দনদা বলল, আমি যা কাজ করি, আমার পক্ষে রাত্তিরবেলা ওদের গান—বাজনার আসরে গিয়ে বসাটা ঠিক মানায় না। তুই তো গেলেই পারিস, সন্ধেবেলা একা একা থাকিস!

এই কথাটা আমারও মনে হয়েছে। একদিন অন্ধকারে ঐ বাজনা লক্ষ করে যেতে হবে।

আমার আণ্ডারে যে আঠারোজন কাজ করে তাদের মধ্যে রাজমিস্তিরিরা মুসলমান, জলের পাইপ বসাবার কাজ যারা করে তার ওড়িশার হিন্দু আর জোগাড়েরা সাঁওতাল। এরা এক সঙ্গে কাজ করে বটে কিন্তু টিফিনের সময় আলাদা আলাদা বসে। তিনটে দলের তিন রকম খাবার। ঘুমোয় খানিকটা দূরত্ব রেখে।

এদের কারুর সঙ্গে আমার এখনো তেমন ভাব হয়নি। ভাব জমাতে আমার দেরি লাগে। ওদের পাশ দিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরে যাই, দুটো-একটা কথা বলি, ওরাও দু’একটা উত্তর দেয়। রাজমিস্তিরি ও কলের মিস্তিরিরা এই ছোট পাহাড়ীতেই ঝুপড়ি করে আছে, সাঁওতালরা নিজেদের গ্রামে ফিরে যায়। ওদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা কোন গ্রামে থাক? সে হাত তুলে দিগন্তের দিকে দেখিয়ে বলেছিল, সিই-ই খানে!

হয়তো ওদেরই গ্রামে মাদল বাজে। এখানে ওরা চুপচাপ কাজ করে যায় সারাদিন, সন্ধের পর গ্রামে যখন নাচ-গান করে, তখন ওদের চেহারা নিশ্চয়ই বদলে যায়!

সাঁওতালদের একটি মেয়ে ভারি অদ্ভুত। মেয়েটিকে আমি কখনো কথা বলতে শুনিনি। একটা শব্দও উচ্চারণ করে না। বোবা? সে সব সময় দূরে দূরে একা থাকে। টিফিনের সময় অন্যরা খাওয়ার পর যখন ঘুমোয়, তখনো সে শোয় না, খানিক দূরে হাঁটুতে থুতনিতে ঠেকিয়ে বসে থাকে। খুবই রোগা চেহারা, মুখখানাও সুন্দর নয়। একটা শীর্ণ ভাব আছে বলেই চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে। সব সময় এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে দূরের দিকে।

বোবারা কানেও শুনতে পায় না। এই মেয়েটিকে অন্যরা ফুলমণি ফুলমণি বলে ডাকে, ও তখন মুখ ফেরায়। মিস্তিরি কখন ইট আনতে হবে, কখন বালি, তা বলে দিলে ও বোঝে। ঐ রোগা চেহারা নিয়েও ফুলমণি মাথায় অনেকগুলো ইট নিয়ে উঠে যায় বাঁশের ভারা দিয়ে, সে কাজে ওর গাফিলতি নেই। কিন্তু টিফিনের সময় অন্য তিনটি সাঁওতাল মেয়ে কলকল করে হাসে, এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ে, কখনো দু’এক লাইন গানও গেয়ে ওঠে, সেদিকে ফুলমণি ভূক্ষেপও করে না। সে চেয়ে থাকে অন্য দিকে। অনেক সময় সে মাটিতে আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটে।

অনবরত চক্কর দেবার কোনো মানে হয় না, তাই মিস্তিরি-মজুররা যখন কাজ করে তখন আমি একটা চেয়ারে বসে বই পড়ি। আমার উপস্থিতিটাই যথেষ্ট। এদের ফাঁকি দিতেও দেখিনি কখনো। বাইরে ফটফট করছে রোদ, কিন্তু গরম নেই তেমন। চুন-সুরকির গন্ধও আমার খারাপ লাগে না। চাকরিটা আমি উপভোগ করছি বলা যায়।

একদিন দুপুরবেলা মহিমবাবু এসে হাজির। বিকেলে দু’লরি সিমেন্ট আসবে, আমাকে বস্তাগুলো গুনে রাখতে হবে, এই নির্দেশ দিতে দিতে হঠাৎ থেমে গিয়ে তিনি বললেন, একী, আপনি বই পড়ছেন?

যেন বই পড়াটা একটা অত্যাশ্চর্য ব্যাপার! চাকরি করতে এসে দুপুরবেলা চোখের সামনে বই খুলে রাখা মহাপাপ।

মহিমবাবু একদিন বিকেলে আমাকে চায়ের নেমন্তন্ন করেছিলেন। উনি গত দেড় বছর ধরে পাকাপাকি আছেন ছোটপাহাড়ীতে। সস্ত্রীক, বাচ্চা-কাচ্চা নেই, ওঁদের কোয়ার্টারটা বেশ ভালোই, আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শয়নকক্ষ, বাথরুম, রান্নাঘর পর্যন্ত দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ঘরেই একটাও বই বা পত্র-পত্রিকা চোখে পড়েনি।

যারা নিজেরা বই পড়ে না, তারা অপরের বই পড়াটাও যেন শারীরিকভাবে সহ্য করতে পারে না। মহিমবাবু এমন ভাবে আমার বইখানার দিকে তাকিয়ে রইলেন যেন ওঁর গা চুলকোচ্ছে।

প্রথম দু’একদিনেই বুঝে গেছি যে মহিমবাবু আমাকে পছন্দ করতে পারেননি। আমি পছন্দ বা অপছন্দ কোনোটারই যোগ্য নই। এখানে আমাকে উপরন্তু অপছন্দ করার কারণ, আমি বড় সাহেবের লোক! বড় সাহেব কলকাতা থেকে তাঁর এক আত্মীয়কে এনে চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। মহিমবাবুর কোনো শালা বা ভাইপো নিশ্চয়ই বেকার বসে আছে, তিনি তার কথা ভেবে বসেছিলেন। আমি মনে মনে বলি, অপেক্ষা করুন মহিমবাবু, ধৈর্য হারাবেন না, আপনার শালা কিংবা ভাইপো ঠিকই চাকরি পাবে!

সেদিন মহিমবাবুকে খাতির দেখাবার জন্য আমি বইটা নামিয়ে রেখেছিলাম। দু’দিন পর উনি আবার এলেন দেড়টার সময়। এখনো টিফিন টাইম শেষ হয়নি, এখন আমি যা খুশি করতে পারি।

ওঁকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললুম, কী—ভালো? বই পড়তে লাগলুম আবার। জর্জ সিমেনোর রহস্য কাহিনী, অতি পাষণ্ড ছাড়া এই বই শেষ না করে কেউ উঠতে পারে না। চন্দনদার বাড়িতে এসব বইয়ের প্রচুর স্টক আছে।

মহিমবাবু ভুরু কুঁচকে উঠে গেলেন দোতলায়।

খানিকবাদে আমার মনঃসংযোগ নষ্ট হলো। ওপরে কিসের যেন একটা গোলমাল হচ্ছে।

মহিমবাবু চেঁচিয়ে ডাকলেন, মিঃ নীললোহিত, মিঃ নীললোহিত, একবার ওপরে আসুন তো!

ক্লাস থ্রি-স্টাফেরা যেমন টাই পরে না, তেমনি তারা মিস্টারও হয় না। আর নীললোহিত নামটার আগে মিস্টার কখনো মানায়? যাদের বাড়িতে একখানাও বই থাকে না, তাদের কাণ্ডজ্ঞান তো এরকম হবেই!

টিফিনেরও সময় ডাকাডাকি খুব অন্যায়। চন্দনদার নীতি-বিরোধী মহিমবাবু কর্মপ্রাণ পুরুষ। বিশ্রাম কাকে বলে জানেন না। কিংবা ওপরওয়ালাদের তিনি বেশি বেশি কাজ দেখাতে চান। এখানে তো ওপরওয়ালা কেউ নেই!

উঠে এলুম ওপরে। মহিমবাবু যদি দোতলা থেকে ডাকার সময় মিস্টার যোগ না করে শুধু আমার নাম ধরে ডাকতেন, তা হলে ওকে বেকায়দায় ফেলার কোনো ইচ্ছে আমার জাগত না। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমার মনে হলো, মহিমাবাবুকে ছোট্ট একটি লেংগি মারা দরকার। সহকর্মীদের সঙ্গে লেংগি মারামারি না করলে আর চাকরির সুখ কী?

মহিমবাবু বললে, দেখুন, দেখুন, আপনি নজর রাখেন না, নাকের ডগায় বই নিয়ে বসে থাকেন, এদিকে এরা কী করে?

আমি নিরীহভাবে বললুম, কী করেছে?

মহিমবাবু বললেন, ডিউটি আওয়ার্সে ফাঁকি! ওয়েস্টেজ অফ মেটিরিয়াল!

হেড মিস্তিরি ইরফান আলি দাঁড়িয়ে আছে মহিমবাবুর পাশে। তার হাতের ঘড়িটা দেখে নিয়ে আমি বললুম, ডিউটি আওয়ার্স তো এখনো শুরু হয়নি!

–কোম্পানির জিনিস নষ্ট করছে, সেটা দেখছেন না?

—কী নষ্ট করেছে?

—দেয়ালটার দিকে তাকান একবার! ওপরে কি একবারও আসেন না?

মহিমবাবু নিজেই দেয়ালটা আড়াল করে আছেন, দেখব কী করে? এবার কাছে গিয়ে দেখলাম, দেয়ালে আঁকা রয়েছে একটা ছবি। দোতলায় দেয়ালগুলো প্লাস্টার করা হয়েছে কয়েকদিন আগে, এখনো হোয়াইট ওয়াশ করা হয়নি। দু’—একদিনের মধ্যে হবার কথা।

চুন গোলা দিয়ে কেউ একটা আঁকাবাঁকা ছবি এঁকেছে দেয়ালে। একটা গাছ, একটা ছেলে, একটা কুকুর। কাঁচা হাতের কাজ। দু’ দিন বাদে যে-দেওয়াল চুনকাম হবে, সেখানে একটা ছবি এঁকে রাখলে ক্ষতি কি, পরে তো মুছেই যাবে।

আমি বললুম, টিফিনের আগেই আমি একবার ওপরে ঘুরে গেছি। তখন ছিল না। টিফিনের মধ্যেই কেউ এঁকেছে।

আমার কথা গ্রাহ্য না করে মহিমবাবু গলা তুলে জিজ্ঞেস করলেন কে এ কাজ করেছে? কৌন কিয়া?

ইরফান আলি নিজস্ব দলটার দায়িত্ব নিয়ে বলল, হামলোগ নেহি দেখা!

কলের মিস্তিরিরা বলল, আমরা কিছু দেখি নাই। আমরা বারান্দায় ছিলাম।

সাঁওতালরা কোনো উত্তর না দিয়ে কয়েকজন চুপ করে রইল, কয়েকজন মিচকি মিচকি হাসতে লাগল।

এবার এগিয়ে এল এক নিঃশব্দ প্রতিমা। ফুলমণি। তার হাতে একটা ভিজে ন্যাতা।

মহিমবাবু এবার তাঁর গলায় বিস্ময় আর রাগ একসঙ্গে মিশিয়ে বলেন, তুমি কিয়া? কাঁহে কিয়া? অ্যাঁ? কাঁহে কিয়া?

আমি ফুলমণিকে নতুন চোখে দেখলুম। এই বোবা মেয়েটা ছবি আঁকে? আগে ওকে মনে হতো বিষণ্নতার প্রতিমূর্তি।

যে বাড়ি এখনো তৈরি হয়নি, রং করা হয়নি, তার দেয়ালে দু’ চারটে ছবি—টবি থাকা তো দোষের কিছু না। আমার ছবি আঁকার ক্ষমতা থাকলে আমিই আঁকতাম। শুধু বালি, বালি রঙের দেয়াল দেখার কী আছে?

আমি ভেবেছিলাম, নারী জাতির প্রতি সম্ভ্রমবোধে মহিমবাবু গলার আওয়াজটা অন্তত একটু নরম করবেন। তা নয়, খুব রোগা এক অবলাকে দেখে তিনি আরও গর্জন করে বলতে লাগলেন, মুছ দেও, আভি মুছ দেও!

যদি একটি মুখরা মেয়ে হতো, তাহলেও অন্য কথা ছিল। কিন্তু একজন বোবা, তার প্রতি এরকম একতরফা বাক্য ব্যবহার আমার পছন্দ হলো না।

আমি হাত তুলে বললুম, দাঁড়াও, ওটা মুছতে হবে না!

মহিমবাবু আমার ওপরওয়ালা। তিনি হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, অ্যাঁ? কী বললেন?

আমি এই বাড়িটার ইন চার্জ। আমার মতামত না নিয়ে মহিমবাবু এখানে কোনো হুকুম দিতে পারেন না। আমার গলায় যথোচিত গাম্ভীর্য এনে আমি অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললুম, যতদিন না চুনকাম হয়, ততদিন তোমরা যে কোনো দেওয়ালে যা ইচ্ছে ছবি আঁকতে পারো। টিফিন টাইমে।

তারপর মহিমবাবুর দিকে তাকিয়ে খুব বিনীতভাবে বললুম, এটাই চন্দনদার নির্দেশ। চন্দনদা খুব ছবি ভালোবাসেন। উনি নিজে এক সময় দারুণ ছবি আঁকতেন, জানেন না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *