ফুটো

ফুটো

দোলগোবিন্দবাবু দুঃখী মানুষ। বরাবরই তাঁর দুঃখে কেটেছে। ছেলেবেলায় গরিব বাপের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুড়ি—মোয়া বিক্রি করে পেট চালিয়েছেন। লেখাপড়া শিখেছেন অতি কষ্টে। এই পঁয়ত্রিশ—ছত্রিশ বছরের জীবনটা তাঁর আজও বেশ দুঃখেই কাটে। অল্প মাইনের একটা চাকরি করেন। ঘরে তাঁর বউ দিনরাত গঞ্জনা দেন। ছেলে—মেয়ে দুটো ভারী রোগা—ভোগা। অফিসেও তাঁকে কেউ বিশেষ পাত্তা দেয় না। ভালোমানুষ বলে বেশি করে খাটিয়ে নেয়। দোলগোবিন্দবাবু নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছেন। তাঁর অফিস বলতে একটা কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি। নানারকম জিনিস তৈরি হয়। কালি, ইঁদুরমারা বিষ, নানারকম সিনথেটিক আঠা। দোলগোবিন্দবাবু একজন সামান্য কেমিস্ট। ক—এর সঙ্গে ফরমুলা অনুযায়ী খ মিশিয়ে গ তৈরি করা আর কী। তবে মাঝে মাঝে অনেক রাত অবধি যখন একা একা বসে কাজ করেন তখন তাঁর ইচ্ছে যায়, নানারকম জিনিসের সঙ্গে নানারকম বেখাপ্পা জিনিস মিশিয়ে দেখলে কেমন হয়? এরকম মিশিয়ে দেনও কয়েকবার। তেমন কিছু দাঁড়ায়নি।

আজও অফিস থেকে বেরোতে বেশ রাত হয়ে গেল। বাইরে দুর্যোগ চলছে। ভয়ংকর হাওয়া দিচ্ছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। রাস্তায় হাঁটুভর জল দাঁড়িয়ে গেছে। দোলগোবিন্দবাবু র্যাক—এ মেলানো তাঁর ছাতাটা নিতে গিয়ে একটু অবাক হলেন। বাঁ—দিকের দ্বিতীয় হুকটায় তিনি বরাবর তাঁর ছেঁড়া তাপ্পি—দেওয়া ছাতাটা ঝুলিয়ে রাখেন। আজও রেখেছেন। অথচ ছাতাটা নেই। তার বদলে একটা খুব ঝকমকে নতুন ছাতা ঝুলছে। শুধু নতুন নয় বেশ কায়দার ছাতা। কালো বাঁকানো পুরু হ্যান্ডেল, দারুণ দামি কাপড়, ওজনেও সাধারণ ছাতার চেয়ে পাঁচগুণ ভারী। র্যাক—এ আর দ্বিতীয় ছাতা নেই। অফিসের সবাই কখন বাড়ি চলে গেছে।

দোলগোবিন্দবাবু দারোয়ান রামবিলাসকে ডেকে ছাতার কথা জিজ্ঞেস করলেন। রামবিলাস বলল, আমি তো কিছু জানি না বাবু।

অন্যের ছাতাটা নেওয়া উচিত হবে কিনা তা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। তবে ছাতা যারই হোক সে ছাতা নিতে এই দুর্যোগে আজ আর আসবে বলে মনে হয় না। সুতরাং কাল ছাতাটা ফেরত আনলেই হবে। এই ভেবে দোলগোবিন্দ ছাতাটা নিয়ে বেরোলেন।

ছাতাটা ভালো। খুবই ভালো। মাথার ওপর তুলে দোলগোবিন্দ ছাতাটা খুলবার জন্য হাত বাড়াতেই সেটা আপনা থেকেই নিঃশব্দে এবং বেশ বিনীতভাবে খুলে গেল। আজকালকার অটোমেটিক ছাতা যেমন অভদ্রভাবে ফটাং করে খোলে সেরকমভাবে নয়।

বৃষ্টি আজ বড়ই প্রবল। রাস্তায় কলকল করে যেন নদী বয়ে চলেছে। বাস—ট্রাম—ট্যাক্সি সব বন্ধ। একটা কুকুরকেও দেখা যাচ্ছে না কোথাও। আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। দোলগোবিন্দবাবু বুঝলেন, আজ জল ঠেঙিয়ে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হবে।

রাস্তায় পা দিয়ে দোলগোবিন্দ দেখলেন, সিঁড়ির নীচে তেমন জল নেই। চটি ভিজল না। দোলগোবিন্দও হাঁটতে হাঁটতে আরও টের পেলেন, ছাতাটা এতই ভালো যে চারদিকে প্রবল বৃষ্টি এবং বাতাস সত্ত্বেও তাঁর গায়ে একটুও ছাঁট লাগছে না, বাতাসও নয়। এত ভালো ছাতা নিশ্চয়ই এদেশে হয় না।

বেশ আনমনেই হাঁটছিলেন দোলগোবিন্দ। হাঁটতে হাঁটতে ছেলেবেলার কথা ভাবছিলেন। তাঁদের খোড়ো চলের ঘরে বর্ষাকালে বড়ো জল পড়ত। তাঁরা ঘরে বসে ভিজতেন আর সারা রাত জেগে বসে জড়োসড়ো হয়ে কাটাতেন।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তাঁর মনে হল, পায়ের নীচে যেন মাটিটা ভালো টের পাচ্ছেন না! হল কী? নীচের দিকে তাকিয়ে উনি অবাক হয়ে দেখলেন, বাস্তবিকই কনভেন্ট রোডের রাস্তাটা কোনো যাদুবলে যেন প্রায় দশ হাত নীচে পড়ে আছে। আর তিনি জলে ভেসে আছেন।

না, কথাটা ঠিক হল না। তিনি ঠিক ভেসেও নেই। তিনি ধীরে ধীরে ওপরে উঠে যাচ্ছেন। কোনো বাড়তি শক্তি লাগছে না, চেষ্টা করতে হচ্ছে না, একেবারে গ্যাস বেলুনের মতো দিব্যি উঠে যাচ্ছেন তিনি।

এই অশরীরী কাণ্ডে দোলগোবিন্দ ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, বাঁচাও! গেলুম।

ঝড়—বৃষ্টিতে সেই শব্দ কেউ শুনতে পেল না। আর শুনলেও লাভ ছিল না। দোলগোবিন্দ তখন মাটি থেকে বিশতলা বাড়ির উচ্চচতায় ঝুলছেন, মানুষ তাঁর কী সাহায্য করতে পারে!

দোলগোবিন্দ কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইলেন দাঁত—মুখ খিঁচিয়ে। ভাবলেন, এটা তো দুঃস্বপ্ন, কেটে যাবে এখুনি।

কিন্তু দুঃস্বপ্ন কাটল না। দোলগোবিন্দ যখন চোখ খুললেন তখন কলকাতা শহরটা প্রায় মাইলটাক নীচে পড়ে আছে। দোলগোবিন্দ শিব, কালী, হরি, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ইত্যাকার যত দেব—দেবীর নাম মনে পড়ল তাঁদের বিস্তর ডাকাডাকি করতে লাগলেন। একবার ছাতাটা ছেড়ে লাফিয়ে পড়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু লাফালে তাঁর হাড়গোড় খুঁজে পাওয়া যাবে না, তা ছাড়া ছাতাটাই যেন তাঁর হাতখানা মুঠো করে ধরে আছে। ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে পারবে না।

দোলগোবিন্দ কখনো এরোপ্লেন চড়েননি। উঁচু পাহাড়েও কখনো ওঠেননি। বলতে কী এত উঁচুতে তাঁর এই প্রথম ওঠা। নীচের দিকে চেয়ে তাঁর মাথা ঘুরতে লাগল, হাত—পা হিম হয়ে গেল, বুক ধড়ফড় করতে লাগল। চোখের সামনে ধোঁয়া ধোঁয়া দেখতে লাগলেন।

ধোঁয়া ধোঁয়া দেখার অবশ্য দোষও নেই। একটু বাদেই দোলগোবিন্দ বুঝতে পারলেন যে ধোঁয়া নয়, তাঁর চারপাশে মেঘ, আঁতকে উঠে ভিড়মি খেতে খেতেও সজাগ রইলেন দোলগোবিন্দবাবু। মেঘ খুব বিপদের জিনিস। মেঘ থেকেই বিদ্যুৎ চমকায় এবং বাজ পড়ে। কাছাকাছি যদি এখন বিদ্যুৎ চমকায় তাহলে বড়ো বিপদ।

বেশ কিছুক্ষণ চারপাশ ঘন কুয়াশার মতো মেঘে ঢাকা রইল। দোলগোবিন্দ কিছুই ঠাহর করতে পারলেন না, তারপর একসময়ে হঠাৎ আকাশটা হেসে উঠল মাথার ওপর। ঝকমক করছে তারা, বেশ জ্যোৎস্নাও ফুটফুট করছে। পায়ের তলায় পড়ে আছে কোপানো খেতের মতো মেঘের স্তর।

দোলগোবিন্দ আচমকাই দেখতে পেলেন, হাত দশেক দূরে একটা ডিঙিনৌকো বাতাসে ভাসছে। এক হাতে চোক কচলে নিয়ে তাকালেন, না, ঠিক ডিঙিনোকো নয়, একটা অতিকায় পটল। কিংবা…

আর ভাববার সময় পেলেন না। ছাতাটা তাঁকে ধরে এনে ওই অতিকায় পটলের মতো বস্তুটার পিঠে খুব যত্নের সঙ্গে নামিয়ে দিল, তারপর ছাতা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।

দোলগোবিন্দবাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ের নীচে ম্যানহোলের মতো একটা ঢাকনা খুলে গেল এবং তিনি সেই ফুটো দিয়ে ভিতরে পড়ে গেলেন।

নাঃ, খুব একটা জোরে পড়লেন না। তা ছাড়া যেখানে পড়লেন সেখানে ফোম রবারের মতো গদিও ছিল। শুধু ভড়কে যাওয়ায় মুখ দিয়ে ‘আঁক’ করে একটা শব্দ বেরিয়েছিল তাঁর।

মহাকাশযান, উফো, ভিন্ন গ্রহের জীব ইত্যাদি সম্পর্কে আর পাঁচজনের মতো দোলগোবিন্দবাবুও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এই পটলের মতো বস্তুটি যে ভিন্ন কোনো গ্রহ থেকে আসা একটি উফো সে বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহই রইল না। উফোর ভেতরটা খুবই বড়োসড়ো এবং নানারকম কিম্ভূত যন্ত্রপাতি রয়েছে চারদিকে। দিব্যি ঝলমলে আলো জ্বলছে।

দোলগোবিন্দবাবু উঠে দাঁড়াতেই একটা মানুষ— না, অবিকল মানুষ নয়— অনেকটা মানুষের চেহারার একটা জীব তাঁর দিকে এগিয়ে এল। মানুষের সঙ্গে এর তফাত হচ্ছে এই জীবটার শুঁড় এবং লেজ আছে। বাকিটা মানুষের মতোই। শুঁড়টা হাতির শুঁড়ের মতো অত বড়ো নয়। লেজটা অনেকটাই গোরুর লেজের মতো। লোকটার পোশাক বলতে একটা হাফ প্যান্টের মতো বস্তু, গায়ে একটা জহরকোট গোছের জিনিস।

এদিক—সেদিক আরও কয়েকজন অবিকল একরকম জীবকে দেখতে পেলেন দোলগোবিন্দ, তারা সব তখনও মনোযোগে যন্ত্রপাতি দেখাশোনা করছে।

সামনের জীবটা প্রথমে শুধু দুর্বোধ্য একটা ভাষায় দোলগোবিন্দবাবুকে কিছু একটা বলল। ভাষাটা না বুঝলেও কথা বলার মধ্যে বিনয় এবং নম্রতা আছে।

এরপর জীবটা একটা রেডিয়োর মতো যন্ত্র মুখের কাছে তুলে ধরে কথা বলতে লাগল।

আশ্চর্য! পরিষ্কার বাংলা ভাষা।

জীবটা বলল, আমরা অনেক দূর থেকে আসছি। আমাদের ভাষা তুমি বুঝবে না। আমি যে যন্ত্রটার ভিতর দিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলছি তা একটা অনুবাদ যন্ত্র। আমার ভাষাকে তোমার ভাষায় সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদ করে দিচ্ছে। আমার কথা তুমি বুঝতে পারছো তো?

ঘাবড়ে গেলেও দোলগোবিন্দ ঘাড় কাৎ করে বললেন, আজ্ঞে হ্যাঁ।

এখন শোনো। যে ছাতাটা তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে তা আমরাই পাঠিয়েছিলাম। আমাদের এই মহাকাশযানে একটা যন্ত্রের মধ্যে একটা ফুটো দেখা দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সেই ফুটো আমরা বন্ধ করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের সবজান্তা যন্ত্রমগজের সাহায্য নিই। যন্ত্রমগজ আমাদের তোমার নাম জানিয়ে বলে, একমাত্র এই লোকটাই সেই কেমিক্যাল তোমাদের দিতে পারে যার সাহায্যে ফুটো সারানো সম্ভব। তাই তোমাকে একটু কষ্ট দিয়ে এখানে টেনে এনেছি।

দোলগোবিন্দ প্রায় আকাশ থেকে পড়ে বললেন, কিন্তু আমি তো বৈজ্ঞানিক নই, সামান্য ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট। আমি কেমিক্যালের কী জানি? জীবটা বলল, ভালো করে ভেবে দেখ। আমাদের যন্ত্রমগজ কখনো মিথ্যে কথা বলে না। ভুলও করে না। পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে ও শুধু একটা লোকেরই নাম বলেছে। দোলগোবিন্দ মিত্র। সুতরাং নিশ্চয়ই তুমি আমাদের সাহায্য করতে পারবে।

দোলগোবিন্দ আকাশ—পাতাল ভাবতে লাগলেন। কিছুই তাঁর মনে পড়ল না। তবে মাঝে মাঝে উনি কিছু আজগুবি মিকশ্চার তৈরি করেছেন, করে সেগুলো বাতিল শিশি বা জারের মধ্যে ভরে নিজের আলমারিতে রেখে দিয়েছেন। তা দিয়ে কোনো কাজ হবে না জেনেও আমতা আমতা করে বললেন, দেখুন এই ইয়ে, আমি ফুটো বন্ধ করার কোনো কৌশল জানি না। তবে আমার কাছে কয়েকটা আজগুবি মিকশ্চার আছে। কিন্তু তার মধ্যে কোনটা কাজে লাগবে তা তো জানি না।

জীবটা বলল, আপনি এক্ষুনি আপনার ল্যাবরেটরিতে চলে যান। ওই ছাতাই আপনাকে নিয়ে যাবে এবং নিয়ে আসবে। যদি আমাদের ছিদ্র সারাতে পারেন, তবে আপনাকে আমরা পুরস্কার দেবো।

তাই হল। ফের প্রাণ হাতে করে ছাতার হাতল ধরে ঝুলে রইলেন দোলগোবিন্দ। ল্যাবরেটরির সামনে এসে দেখলেন, সর্বনাশ, দরজায় তালা দেওয়া।

কী করবেন ভাবছেন, এমন সময় হাতের ছাতাটা আপনা থেকেই উঠে তালাটায় গিয়ে একটা গুঁতো মারল। সঙ্গে সঙ্গে টক করে খুলে গেল তালা।

ভিতরে আলমারি খুলে মোট পাঁচটা শিশি আর জার হাতে আর বগলে নিয়ে বেরিয়ে এলেন দোলগোবিন্দ। ছাতাটা তালায় আর একটা গুঁতো দিতেই সেটা এঁটে গেল। দোলগোবিন্দর হাত আর বগল থেকে শিশি আর জারগুলোও পটাপট চুম্বকের আকর্ষণে ছাতার মধ্যে সেঁধিয়ে শিকগুলোর সঙ্গে লেগে রইল।

ঝুল খেতে খেতে দোলগোবিন্দ এসে সেই মহা পটলের মতো মহাকাশযানে উঠলেন।

সেই জীবটা এগিয়ে এসে দোলগোবিন্দবাবুকে খাতির করে নিয়ে গেল।

পটলটার তলার দিকে একটা ধাতব বাক্সের মতো জিনিস আছে। ফুটোটা সেখানেই।

দোলগোবিন্দবাবুর মনে পড়ল যে শিশিটায় সবুজ রঙের ঘন পদার্থ রয়েছে তা থেকে দু—ফোঁটো একবার তাঁর টেবিলের ওপর পড়ে যায়। পরে সেটা এমন শক্ত হয়ে জমে গিয়েছিল যে তিনি সেটা উকো দিয়ে ঘষেও তুলতে পারেননি। সুতরাং দোলগোবিন্দ আর দেরি না করে সবুজ শিশি থেকে দু—ফোঁটা ফুটোয় ঢেলে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা শক্ত হয়ে জমে গেল।

জীবটা একটা যন্ত্র থেকে তাপ্পি দেওয়া জায়গাটায় অনেকক্ষণ ধরে তাপ দিল। আবার একটা পাইপ থেকে ভীষণ ঠান্ডা একটা পদার্থ ছড়াল ওর ওপর। কিন্তু ফুটোর তাপ্পি টিকে রইল।

লেজ ও শুঁড়ওলা জীবটা দোলগোবিন্দর দিকে চেয়ে খুব বিনীতভাবে বলল, চমৎকার! আপনি যে আমাদের কী উপকার করলেন তা আর বলার নয়। এর জন্য আপনাকে আমরা আমাদের গ্রহের দু—টি অতি মূল্যবান জিনিস দিয়ে যাচ্ছি। এ দুটো দিয়ে আপনি ভাগ্য ফেরাতে পারবেন।

জীব ভদ্রলোক দোলগোবিন্দকে দুটো খুদে বাক্স দিলেন। দোলগোবিন্দও ফের ছাতার বাঁট ধরে নেমে নিজের বাসার দোরগোড়ায় নামলেন।

পরদিন সকালে বাক্স দুটো খুলে হাঁ হয়ে গেলেন দোলগোবিন্দ, একটায় খানিকটা কর্কচ লবণ, অন্যটায় একটুখানি চুন। রসিকতা নয় তো!

না। অনেকক্ষণ ভেবে দোলগোবিন্দ বুঝতে পারলেন এ দুটো জিনিস সম্ভবত ওই গ্রহে পাওয়া যায় না, নিশ্চয়ই ভীষণ মূল্যবান। শুঁড়—লেজওলা জীব বোধহয় জানে না যে পৃথিবীতে ওই দুই বস্তু অঢেল এবং সস্তা।

মনটা খারাপ হয়ে গেল বটে দোলগোবিন্দর, কিন্তু দমলেন না। সবুজ শিশিটা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলেন। যেখানে ফুটো পান সেখানেই প্রয়োগ করেন। ছাদের ফুটো, ছাতার ফুটো, বাসনের ফুটো।

ফুটো সারানোয় রীতিমতো নামডাক হতে লাগল তাঁর। ক্রমে নৌকা জাহাজ এরোপ্লেনের ফুটো পর্যন্ত সারাতে তাঁর ডাক পড়তে লাগল।

বলা বাহুল্য, দোলগোবিন্দর নাম এখন ফুটোবাবু। কোটি কোটি টাকার মালিক। বিশাল বাড়ি, গাড়ি, কোনোকিছুরই অভাব নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *