ফিলমি-ফিলমি
শুধু একবার ফিলমিতে হল না। তাই আরেকবার, তাই ফিলমি-ফিলমি।
বলে রাখা ভাল ‘ফিলমি’ শব্দটি মোটেই সুবিধের নয়। বাংলা তো নয়ই, না হিন্দি না ইংরেজি, মুম্বাই ঘরানার শব্দ। তদুপরি ফিলমি-ফিলমি শব্দযুগ্ম আরও গোলমেলে হয়ে গেল।
কিন্তু ‘ফিলমি-জোকস’ নামে এই চটি বইখানিতে রয়েছে বেশ ভাল কিছু উপাখ্যান। এর মধ্যে অবশ্যই কিছু আদিরসাত্মক যা আমার রুচিতে বাধে। বাকি কিছুর সঙ্গে বিখ্যাত নায়ক-নায়িকাদের নামধাম জড়িত, সেটাও এড়িয়ে যেতে হবে। সুতরাং মোটামুটি পরিবেশনযোগ্য দু’-চারটি আখ্যান বেছে নিতে হচ্ছে।
যেমন এই প্রথম গল্পটা। এক নায়িকার স্বামী মারা গেছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। নায়িকা যথেষ্ট ভালবেসেই বিয়ে করেছিলেন এই লোকটিকে। সরলচিত্ত, আবেগময়, ধনবান যুবক, পাত্র হিসেবে মোটেই খারাপ নয়।
কিন্তু যেমন হয়। নায়িকার কর্মব্যস্ত, মোহময়ী বহুমুখী জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারলেন না এই যুবকটি। একদিন তিনি আত্মহত্যা করলেন।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই নায়িকার খুবই বিরক্ত লাগছিল তাঁর বরকে। কেমন চাকচিক্য ও জৌলুসহীন, সাদামাটা, তার ওপরে ঘ্যানঘেনে স্বভাবের। সব সময়ে জানতে চাইছে, কোথায় গিয়েছিলে, কে ফোন করেছিল, এত দেরি হল কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি সব বাজে প্রশ্ন।
কিন্তু আজ বরের মৃত্যুর পরে এই সরল লোকটির জন্য নায়িকার খুব মায়া হল। অনেক অবহেলা, উপহাস করেছেন নায়িকা তাঁর বরকে। এখন কেমন যেন মনে হল এতটা উপেক্ষা না করলেও পারতেন। নায়িকার খুবই কান্না পেল। নির্জন ঘরে দরজা বন্ধ করে পুলিশ ও খবরের কাগজের রিপোর্টারের হাত এড়িয়ে বহুকাল পরে আজ নায়িকা প্রাণ খুলে কাঁদবেন।
কিন্তু দুঃখের কথা নায়িকার চোখ দিয়ে একফোঁটা জল বেরল না। অনেকক্ষণ, অনেক চেষ্টা করার পর তিনি আবিষ্কার করলেন তিনি কাঁদতে ভুলে গেছেন, গ্লিসারিন ছাড়া তাঁর চোখে আর কোনওদিন জল আসবে না। শত দুঃখে, শত শোকেও না।।
এতবড় একটা করুণ কাহিনীর পরে এবার একটা সত্যিকারের হাসির গল্প বলা যাক। গল্পটা খুবই পরিচ্ছন্ন। পাত্র-পাত্রীর নাম ব্যবহারে অসুবিধে নেই। সবাই জানেন যে হিন্দি সিনেমার প্রসিদ্ধতম নায়ক শ্রীযুক্ত অমিতাভ বচ্চন খুবই লম্বা, যাকে সাদা বাংলায় ঢ্যাঙা বলে।
একবার চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিছু ভুলত্রুটি হওয়ার পর কয়েকবার চিত্রগ্রহণ করতে হয় এবং তার ফলে আরও দেরি হয়।
বরফের ওপর খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা কম কথা নয়। কিন্তু বোম্বাই চলচ্চিত্রের নায়কদের নাকি এ রকম বহু কষ্টই করতে হয়। সে যা হোক, চলচ্চিত্রের এই শুটিংয়ে অমিতাভ বচ্চনের সামনেই ছিলেন অতীতের দিকপাল খল-নায়িকা। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সুরসিকা নাদিরা, যিনি এই কাহিনীর পার্শ্বচরিত্রে একজন অভিনেত্রী।
শ্ৰীযুক্ত বচ্চনকে বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রীমতী নাদিরা বললেন, ‘বরফের ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এভাবে তো তোমার সর্দি লেগে যাবে। তবে তোমার একটা বড় সুবিধে রয়েছে। তুমি এত ঢ্যাঙা যে পা থেকে তোমার নাক পর্যন্ত ঠান্ডা পৌঁছতে বেশ কয়েকদিন লাগবে। তার আগেই ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ-টষুধ খেয়ে নিয়ো।’ পরের আখ্যানটি একালের দুই নায়িকা-নায়িকা নিয়ে। গল্পটি নিতান্ত নির্বিষ এবং নিরামিষ বটে। নামধাম গোপন না করেই বলি। অবশ্য নামধাম গোপন করার তেমন কোনও প্রশ্ন নেই। এ গল্প একদা দিলীপকুমার ও সায়রাবানুর নামে, পরে বেশ কয়েকজোড়া দম্পতি পার হয়ে এখন এসে ঠেকেছে নতুন যুগের তারকা দম্পতি হিমালয় ও ভাগ্যশ্রীর নামে।
বিয়ের কিছুকাল পরে শ্রীমতী ভাগ্যশ্রী নাকি একদিন অনুযোগ করে যে, ‘ওগো তুমি বিয়ের আগে আমাকে কত কী উপহার দিতে, কিন্তু এখন আর দাও না কেন ?’
সুন্দরী চিত্রতারকা স্ত্রীর এই প্রশ্ন শুনে নির্বিকার হিমালয় উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি আর কেন উপহার দিতে যাব তোমাকে? মাছ বঁড়শিতে গাঁথা হয়ে যাওয়ার পর কেউ কি আর সেই মাছকে টোপ খাওয়াতে যায়।’
এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল অন্য এক তারকা দম্পতির ক্ষেত্রে। এদের কিন্তু পরিচয় দেওয়া যাবে না। স্বামী স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমার কি মনে হয় না, অনেক ভাল হত তুমি না হয়ে অন্য কেউ যদি আমাকে বিয়ে করত ?’
স্বামী হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘না, এ রকম আমার মনে হয় না। আমি কারও খারাপ চাই না।’
পুনশ্চ:
একটি চিত্রনাটিকা।
সুন্দরী তরুণী অভিনেত্রী প্রবীণ নায়ককে বললেন আমার সবচেয়ে ভাল লাগে আপনার ওই ঝকঝকে দাঁতের হাসি। প্রবীণ নায়ক মুখ থেকে বাঁধানো দাঁতজোড়া খুলে বললেন: এই নাও, তোমাকে এটা উপহার দিলাম।