ফিঙে
আমি যখন অতীতের কথা ভাবি
তখন আমার ঘরটা পাখির গন্ধে ভরে যায়
চারদিকে ওড়াউড়ির শব্দ
একটা ফিঙে পাখির তীক্ষ্ণ যুদ্ধংদেহী আওয়াজ
বাতাসের ঢেউয়ের উপর ওঠে গিয়ে
পৃথিবীর সমস্ত চিল ও শকুনকে হতচকিত করে ফেলে।
তারা বাতাসে ঝাঁপ দেয় দিগ্বিদিক দিশেহারার মতো
বায়ুর উপর ভাসতে ভাসতে আবার অশ্বথের ডালে
যার যার নিজের আশ্রয়ে ফিরে আসে আর ঝিমোতে ঝিমোতে ভাবে
ওই ফিঙেটা তার তীক্ষ্ণ চঞ্চুতে তাদের মাথা কামড়ে দিতে আসছে।
অথচ ওই খুদে পাখিটার কালো পালকের ওপর বিদ্যুতের অক্ষরে লেখা ‘দিগ্বিজয়ী’
এই দ্বীপদেশে যখন সব নখঅলা পাখির একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম হওয়ার কথা
তখন একটি মাত্র ক্যাচকাওয়ার কেন এই দুরন্ত গতি? এই দুঃসাহস?
এই মারমুখী ওড়ার কৌশল?
পাখিটির জন্মবৃত্তান্তে না আছে কোনও আভিজাত্য না আছে পালকের বাহার
তার চঞ্চ অতিশয় ক্ষুদ্র এবং আঘাতে কিরিচের তীক্ষ্ণতা
যেন সে গগনভেরী ঈগলের চিরস্থায়ী রাজত্বের বিরুদ্ধে একটি কালো উড়ন্ত প্রতিবাদ।
তার চলনে বলনে ওড়ার কায়দায় তীক্ষ্ণচোখ চিলেরাও বিহ্বল হয়ে পড়ে।
এই পাখিটির উচ্ছেদ নিয়ে পক্ষীমহলে মাঝে মাঝে সাড়া পড়ে যায়।
কিন্তু মানুষেরা বলে ফিঙে হলো অত্যাচারের বিরুদ্ধে——জুলুম, খুনের বিরুদ্ধে
ডিম ও শাবক অপহরণের বিরুদ্ধে একটি সম্বৎসর যুদ্ধের প্রতীকী উড়াল মাত্র।
সে কালো কিন্তু কোকিল নয়, সে কালো কিন্তু কাক নয়
সে বরং কাকের দঙ্গলকে ভিক্ষুকের দল মনে করে।
সে একা উড়ে, একাকী আঁচড়ে কামড়ে পালক ধসিয়ে দেয়
চিলের, শকুনের, বাজের।