ফার্স্ট ক্লাস হানিমুন – হেনরি স্লেসার
ডিভোর্সের বয়স সাত মাস দুই সপ্তাহ চার দিন পার হয়ে গেলেও শনিবার সকালে গ্লোরিয়াবিহীন বেডরুমে মনে বেশ আনন্দ নিয়ে ঘুম ভেঙে গেল এডোয়ার্ড গিবসনের। হাই তুলল সে, হাত পা আয়েশ করে ছড়িয়ে দিল, ডাবল বেডে গা মোড়ামুড়ি করতে করতে একাকী থাকার মজাটুকু উপভোগ করছিল ও।
ইনসমনিয়ায় ভোগা গ্লোরিয়ার ক্যানকেনে কণ্ঠের ঘ্যানঘ্যান আর তার সুখের ঘুম নষ্ট করবে না, রাতের বেলা হার্টের প্যালপিটেশন বেড়ে যাওয়া কিংবা শাস নিতে কষ্ট হওয়ার ক্রমাগত অভিযোগ আর বিরক্ত করবে না এডোয়ার্ডকে। এডোয়ার্ড অলস, তার ভেতর দয়ামায়া নেই, তার ভুঁড়ি বেড়ে যাচ্ছে, রাতের বেলা বিশ্রী নাক ডাকে বলে ঘুমাতে পারে না গ্লোরিয়া, সে অমনোযোগী, গ্লোরিয়ার অসুখ বিসুখের দিকে তার কোনো খেয়াল নেই ইত্যাদি হাজারো বিষয় নিয়ে আর কোনো লেকচারও শুনতে হবে না এডোয়ার্ড গিবসনকে।
ডান পায়ের আঙুলের এক লাথিতে একদা গ্লোরিয়ার শয্যা থেকে বালিশ ফেলে দিল ও। সে কত সুখী ভেবে মুচকি হাসি ফুটল ঠোঁটে।
তবে প্রাতঃকৃত্য ও গোসল সেরে ও যখন নাস্তার টেবিলে বসল, মনের উল্লাস দূর হয়ে গেল। টোস্টে পুরু করে মাখন মাখাতে গিয়ে মনে পড়েছে আজ গ্লোরিয়াকে ওর খোরপোশের টাকা দেয়ার দিন। টোস্টে আর কামড় দেয়া হলো না, খিঁচড়ে গেছে মেজাজ। খাবারটা টেবিলে রেখে বেডরুমে ঢুকল এডোয়ার্ড। ভিক্টোরিয়ান ডেস্কের টপ ড্রয়ার খুলে চেক বইটি বের করল। রাগ এবং অনিচ্ছা নিয়ে চার অংকের সংখ্যাটি বসাতে হলো চেকের ওপর।
তিন মাসের আদালতে বিচ্ছেদ লড়াই শেষে গ্লোরিয়ার একমাত্র বিজয়–প্রতিমাসে এডোয়ার্ডের কাছ থেকে সে চার হাজার ডলার করে ভরণপোষণের খরচ পাচ্ছে। অনেক টাকা। যদিও তার ব্যাংক ব্যালান্স মন্দ নয়। তবু প্রতিমাসে ওই বিরক্তিকর মহিলার পেছনে এতগুলো টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে ভাবতেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এডোয়ার্ডের মন। কিন্তু করার কিছু নেই। আদালতের আদেশ তো আর সে অমান্য করতে পারবে না।
চেকটি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতে হবে গ্লোরিয়ার বাসার ঠিকানায়। এডোয়ার্ড শুনেছে বহাল তবিয়তেই আছে তার ভূতপূর্ব স্ত্রী। থাকবে না! মাস মাস মাগনা চার হাজার ডলার পেলে তো স্বর্গে থাকার কথা। রাগে গা টা আবার চিড়বিড় করে ওঠে এডোয়ার্ডের।
সে চেকটি খামে ভরেছে, বেজে উঠল কলিংবেল। কপালে ভাঁজ পড়ল এডোয়ার্ডের, বিস্মিত। ঘড়ি দেখল। সাড়ে নটা। এ সময় তো সাধারণত কেউ আসে না। তবে কে এল? সেই ফেরিঅলাটা নয়তো? এক লোক মাঝে মাঝে ছুটির দিনে হাবিজাবি জিনিস বিক্রি করতে আসে। একদিন প্রচণ্ড ধমকও দিয়েছে এডোয়ার্ড এসব তার লাগবে না বলে। ফেরিঅলা মিনমিন করে বলেছে ম্যাডাম নাকি তার কাছ থেকে প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বালতি এসব কিনতেন। এডোয়ার্ড লোকটিকে পরিস্কার বলে দিয়েছিল ম্যাডাম এখন আর এখানে থাকেন না। তারপরও ব্যাটা দুইদিন ওকে বিরক্ত করেছে। আজ হারামজাদাকে ঠিক চড় কষিয়ে দেবে ডেভিড। রেগেমেগে সে ঝড়াং করে দরজা খুলল। না, ফেরিঅলা নয়, দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে কার্ল সেবরন।
সুপ্রভাত, দাঁত বের করে বলল কার্ল।
কার্ল সেবরন এডোয়ার্ডের সঙ্গে কলেজে পড়াশোনা করত। রুমমেট ছিল। ধান্ধাবাজ টাইপের মানুষ। ছোটখাট নানান ব্যবসা করেছে। কিন্তু ধান্ধাবাজির কারণে কোনো ব্যবসাই টিকিয়ে রাখতে পারেনি। গ্লোরিয়ার সঙ্গে কয়েকদিন আগে ওকে ঘুরতে দেখেছে এডোয়ার্ড। কার্ল হয়তো তার সুদর্শন চেহারা দিয়ে গ্লোরিয়াকে গেঁথে ফেলেছে। ওর গায়ের কালো রঙের নতুন সুটটা হয়তো গ্লোরিয়ারই উপহার। এডোয়ার্ডের খোরপোশের টাকা দিয়ে কেনা? পায়ের জুতোজোড়াও চকচকে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সে দুলছে। টানটান মুখের চামড়া, চেহারায় কিছু পাবার প্রত্যাশা।
তুমি এখানে কী করছ? এডোয়ার্ডের গলার স্বর একটু বেশিই কর্কশ শোনাল। তোমার জন্য একটু বেশি সকাল হয়ে গেল না?
হয়তো বা, অচঞ্চল কার্ল। ভেতরে আসতে পারি?
নাক দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল এডোয়ার্ড। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ড্রইংরুমে ঢুকল কার্ল। বসল সোফায়। কলেজে একই বিষয়ে পড়াশোনা করলেও ওরা কখনও বন্ধু হতে পারেনি। আসলে কার্লের চালিয়াতি ভাবটাই সহ্য করতে পারত না এডোয়ার্ড। এক রুমে থাকলেও কথাবার্তা হত খুব কম। একে এড়িয়েই চলত এডোয়ার্ড। সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পরে অন্য রুমে কার্লের সিট অ্যালট হলে হাঁপ ছেড়েই বেঁচেছিল ও। কার্লের সঙ্গে ইদানিং দুএকবার দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কারণ ওই গ্লোরিয়া। ধুমসী গ্লোরিয়ার সঙ্গে কার্ল ডেটিং করছে, এ ব্যাপারটা মাঝে মাঝে হজম করতে বেশ কষ্টই হয় এডোয়ার্ড গিবসনের।
গ্লোরিয়ার সঙ্গে শীঘ্রি দেখা হয়েছে? কার্লের বিপরীত দিকের উইং চেয়ারটি দখল করল এডোয়ার্ড। গলায় উপহাস।
সে তো সবসময়ই দেখা হয়, হাসল কার্ল। আসলে আজকে আমি গ্লোরিয়ার ব্যাপারেই তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
গ্লোরিয়ার ব্যাপারে বহু কথা শুনেছি, টেবিলে রাখা ডানহিলের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট নিল এডোয়ার্ড। সরু চোখে লক্ষ করছে অপরজনকে। দুজনে মিলে তো ভালোই জুটি করেছ।
হেসে উঠল সেবন। তোমার হিংসা হচ্ছে?
অবাক হচ্ছি। হয় গ্লোরিয়া একদম বদলে গেছে নতুবা তোমার মতো নির্বোধ, বধির এবং কানা মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। ও যে কী জিনিস তা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছ?
বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল, বলল কার্ল। তবে মাঝে মাঝে ও খুব আদুরে হয়ে ওঠে। এবং দিলখোলা।
মনে মনে সাবেক স্ত্রীকে একটা গালি দিল এডোয়ার্ড। হাতের সিগারেটটি না ধরিয়েই অ্যাশট্রেতে ফেলে দিল। তোমার মতলবটা কী, কার্ল? কেন এসেছ এখানে?
বললামই তো। গ্লোরিয়ার বিষয়ে কথা বলতে। জানি ও পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত নারী নয়। ওর শরীরে থলথলে চর্বি, সবসময়ই কোনো না কোনো অসুখে ভুগছে। এবং কথা বলে বলে তোমার কানের পোকা নড়িয়ে দেবে।
তো?
তবে সেদিন একটা কথা ভাবছিলাম। ওকে তো তোমার প্রতিমাসেই খোরপোশ বাবদ মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে। টাকার পরিমাণটা কত, এডোয়ার্ড?
তা দিয়ে তোমার দরকার কী?
অনুমান করি তিন-চার হাজারের কম নয়, নাকি?
দেখো, কার্ল–
তুমি আমার কথা আসলে বুঝতে পারছ না, খ্যাক খ্যাক করে হাসল কার্ল। আমি তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে আসিনি। এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে। প্রতিমাসে তোমার কষ্টার্জিত অর্থ গ্লোরিয়ার পেছনে যাতে ব্যয় করতে না হয় সে বিপদ থেকে বাঁচাতে একটা বুদ্ধি করেছি আমি। কাজেই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে তোমার লাভ বই ক্ষতি হবে না, দোস্ত।
তুমি আমার খরচ বাঁচাতে চাইছ?
তাই তো বললাম। প্রতিমাসে তোমার তিন-চার হাজার ডলার টাকা বেঁচে যাবে। কী, আগ্রহ হয়?
যথেষ্টই আগ্রহ বোধ করছে এডোয়ার্ড। তবে চেহারা ভাবলেশহীন করে রাখল।
ঠিক আছে। বলো শুনি তোমার বুদ্ধিটা কী?
কী আবার, বিয়ে। গ্লোরিয়া আবার বিয়ে না করলে তো তোমাকে খোরপোশ দিয়েই যেতে হবে। আইন তো তাই বলছে।
গ্লোরিয়ার বিয়ে? পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ ছাড়া কেউ ওকে বিয়ে করবে না। আমি চিনি তো ওকে। হাড়ে হাড়ে চিনি। পাঁচটা বছর একসঙ্গে ছিলাম। গড, আমার হাড়মাংস চিবিয়ে খেয়েছে! শিউরে উঠল যেন এডোয়ার্ড। তারপর নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ করে জানতে চাইল, বোলো না যে তুমি ওকে বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছ।
স্বাভাবিক অবস্থায় কস্মিনকালেও এ চিন্তা করতাম না। কিন্তু ইদানীং খুব টানাটানি যাচ্ছে। দেনার সাগরে ডুবে আছি।
তুমি কি ভাবছ গ্লোরিয়া তোমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে? আরে, ও তো আমার টাকায় চলে।
আমি গ্লোরিয়ার কাছে টাকা চাইতে যাবও না। আমার আসলে এখুনি বেশ কিছু টাকা দরকার। পাওনাদারের ডরে বাসায় ঘুমাতেও পারি না এমন অবস্থা। ওরা এখন ফোনেও হুমকি দিচ্ছে। তাই অনেক সময় ফোনের তার খুলে রাখি। কার্ল ঘাড় ফিরিয়ে পেছন দিকটায় একবার নজর বুলাল পাওনাদাররা এঘরেও এসে হাজির হয়েছে কি না দেখার জন্যই বোধহয়।
তুমি কি আমার কাছে কোনো পরামর্শ চাইতে এসেছ, কার্ল?
আসলে তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি। মৃদু হাসল কার্ল। বিয়ের প্রস্তাব। আমি বিয়ে করব যদি তুমি আমাকে টাকা দাও। ক্যাশ। এবং এখন।
শিস দিল এডোয়ার্ড। থোকা, তোমার মাথাটাই আসলে খারাপ হয়ে গেছে।
আমার কোনো উপায় নেই, বলল কার্ল। তার মুখের দু কোনা কুঁচকে গেছে। আজ রাতের মধ্যে যদি আমি দশ হাজার ডলার জোগাড় করতে না পারি ওরা আমার লাশ ফেলে দেবে বলেছে। এডোয়ার্ডের চোখে চোখ রাখল সে। এডোয়ার্ড, আই মিন ইট! আমি গ্লোরিয়াকে বিয়ে করতে রাজি আছি যদি তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমি ওকে প্রস্তাব দেব।
তুমি কী করে জানো ও রাজি হবে?
রাজি হবে, ও নিয়ে তোমাকে একটুও ভাবতে হবে না। কিন্তু আমাকে নগদ দশ হাজার ডলার পেতেই হবে। এবং দ্রুত।
তোমাকে আমি নগদ দশ হাজার ডলারঅই দেব, নরম গলায় বলল এডোয়ার্ড। প্যাকেট থেকে আরেকটি সিগারেট নিল। এবারে ধরাল। কিন্তু আমি শিওর হবো কী করে? কী করে বুঝব তুমি পিছিয়ে যাবে না?
প্রয়োজনে আমি তোমাকে লিখিত দেব, উৎকণ্ঠিত কণ্ঠ কার্লের। আমি ওর কাছে গিয়ে এখুনি প্রস্তাব দেব। তুমি চাইলে ওকে এখুনি ফোন করতে পারি।
ঠিক হ্যায়, বলল এডোয়ার্ড, বেড়ে গেছে হৃদস্পন্দন।ওকে ফোন করো, কার্ল।
ড্রইংরুমের কোনায় ফোন স্ট্যান্ডের দিকে ইঙ্গিত করল ও।
সোফা ছাড়ল কার্ল। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গেল ফোনের দিকে। সোনালি রঙের রিসিভার তুলে গ্লোরিয়ার নম্বরে ফোন করল। ওকে লক্ষ করছে এডোয়ার্ড। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে মনে হয় রিংটোন শুনছে। একটু পরে তার মুখে হাসি দেখা গেল।
গ্লোরিয়া, বলল কার্ল। আমি কার্ল.. ভাল আছি, সুইটহার্ট, তুমি কেমন আছ? উচ্চকিত গলায় সে এবার হেসে উঠল। …হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওখানে আবার যাব আমরা। হয়তো আজ রাতেই। শোনো, গ্লোরিয়া… কার্ল ফোনের কর্ড পেঁচাচ্ছে। নার্ভাস লাগছে তাকে। তোমাকে একটা কথা বলব। কাল রাতেই বলতাম, কিন্তু চারপাশে এত লোকজন ছিল যে… ভাবছিলাম আজ রাতে কথাটা বলব তোমায়। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি, জানো, জানু? কথাটা বলার জন্য কিছুতেই তর সইছিল না, ডার্লিং। তাই আজ সকালেই ফোন দিলাম। জবাব না পেলে আমি স্রেফ পাগল হয়ে যাব।
চোখ বুজল কার্ল, তার কপালে ফুটে উঠেছে ঘাম। রোদ পড়ে চিকচিক করছে। সোনা, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। গাঢ় গলায় ফিসফিস করল সে। আজকেই আমরা বিয়ে করব।
সে এডোয়ার্ডের দিকে তাকাল। উল্লসিত চেহারা। সত্যি বলছ? আনন্দিত শোনাল তার স্বর। সত্যি তুমি রাজি আছ? … শোনো, তোমাকে আমি দুই ঘণ্টা সময় দিলাম। আমরা চার্চে বিয়েটা সেরে ফেলব… তোমাকে যে কত কথা বলার আছে!.. তাহলে ওই কথাই রইল। তুমি কিন্তু বেলা একটার মধ্যে চলে আসছ, বিয়েটা সেরে আমরা আজ হোটেল শেরাটনে লাঞ্চ করব, ডার্লিং। ওকে, সুইটি… গড ব্লেস ইউ।
ঝকঝকে ক্রেডলে রিসিভার রেখে দিল কার্ল। ঝাড়া পাঁচ মিনিট বুক ভরে শ্বাস নিল। তারপর সোফায় এসে বসে পড়ল ধপ করে।
এডোয়ার্ড গিবসন ওর দিকে স্থির তাকিয়ে আছে। তুমি দেখছি মিথ্যা বলোনি, বলল ও। তুমি সত্যি বিয়ে করবে ওই…
মিথ্যা কেন বলতে যাব? থমথমে চেহারা কার্লের। টাকাটা দাও, তোমাকে লিখিত দিয়ে দিচ্ছি যে গ্লোরিয়াকে আমি বিয়ে করছি। পারলে একটু বাড়িয়ে দিও, এডোয়ার্ড। ধার শোধ করতেই তো পুরো টাকাটা চলে যাবে। বিয়ের একটা খরচাপাতি আছে না…
ঠিক আছে, হাসল এডোয়ার্ড। আমি তোমাকে আরও পাঁচশো ডলার দেব। আমার তরফ থেকে তোমাদের বিয়ের গিফট। একটা ফার্স্ট ক্লাস হানিমুন করে এসো। দীর্ঘ শরীর দিয়ে সিধে হলো ও। হেঁটে গেল কার্লের কাছে। ওর প্রশস্ত কাঁধে চাপড় মারল। একটু বসো, বন্ধু। আমি টাকা নিয়ে আসছি।
মুখে স্বস্তির হাসি নিয়ে লম্বা পদক্ষেপে নিজের বেডরুমে রওনা হলো এডোয়ার্ড গিবসন।
.
বিকেল চারটার দিকে ফোনের শব্দে সাধের ভাতঘুমটা ভেঙে গেল এডোয়াডের। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কান পাতল। ওপাশ থেকে ভেসে এল নাকী সুর গলা।
মি. গিবসন? আমি মারভিন ফ্লেমিং। আপনার সাবেক স্ত্রীর উকিল।
কে? ও, মি. ফ্লেমিং, ঠোঁট কামড়াল এডোয়ার্ড। গ্লোরিয়ার মতো এ লোকটাকেও ও দুচক্ষে দেখতে পারে না। তারপর মনে পড়ল গ্লোরিয়া নামের বোঝাটা কাঁধ থেকে নেমে গেছে। কী ব্যাপার?
আমার হঠাৎ মনে হলো আপনি বোধকরি খবরটা পাননি। তাই ভাবলাম ফোন করি। নাকি খবর পেয়ে গেছেন?
কীসের খবর?
দুঃসংবাদই বলতে পারেন, গম্ভীর শোনাল মারভিন ফ্লেমিংয়ের গলা। বেশ দুঃসংবাদ। বলতে আমার কষ্টই হচ্ছে, তবে কিছু আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে আপনার সাবেক স্ত্রীর মৃত্যুতে…
ওর কী হয়েছে?
আমি অত্যন্ত দুঃখিত। মিসেস গ্লোরিয়া গত রাতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় মি. কার্ল তার পাশে ছিলেন। ভাবলাম আপনি
আর মি. সেবরন যেহেতু পুরানো বন্ধু, তাই…
পুরানো বন্ধুর নিকুচি করি! বেঁকিয়ে উঠল এডোয়ার্ড। ঠকাশ করে রেখে দিল রিসিভার। তার পরপরই আবার ফোন তুলে কার্লের নম্বরে ডায়াল করল। কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না দেখে রাগের চোটে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছিল এডোয়ার্ড, খট করে একটা শব্দ হল, ভেসে এল এক মহিলা কণ্ঠ। বোধহয় কাজের বুয়া-টুয়া হবে। মি. সেবনের বাসা। কে বলছেন?
কার্ল সেবরন আছে?
আপনি কে বলছেন?
আমার নাম এডোয়ার্ড গিবসন। কার্লের বন্ধু। ও আছে কি না বলেন।
মি. সেবরন বাসায় নেই।
কোথায় গেছে? রুদ্ধশ্বাসে জানতে চাইল এডোয়ার্ড।
মি. সেবরন বেলা তিনটার দিকে এয়ারপোর্টে গেছেন। বোধহয় সেন্ট থমাসের প্লেন ধরবেন। তবে আমি ঠিক শিওর নই–
ও কি কিছু বলে গেছে? চেঁচিয়ে উঠল এডোয়ার্ড। নিশ্চয় বলে গেছে কিছু?
জি, স্যার। ভীত শোনাল তরুণ কণ্ঠ। বললেন কোন্ দূর দেশে নাকি হানিমুন করতে যাবেন। কিন্তু মি. সেবরন তো বিয়েই করেননি। হানিমুনের কথা কেন বললেন বুঝতে পারছি না…