ফাঁদ
অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় ছোট্ট হোটেলটিতে এসে পৌছলেন মশিউ পিনেট। রাস্তার ওপর শরতের শুকনো পাতা, বিবর্ণ পথটা ধরে হেডলাইটের আলোয় গ্রামের আঁধার চিরে আসার সময় মনটা বেশ উৎফুল্লই ছিল পিনেটের। তিনি প্যারিস টেক্সটাইল ম্যানুফাকচারারের একটি বড় ফার্মের রিপ্রেজেন্টেটিভ। উত্তর ফ্রান্সের একঘেয়ে এলাকাগুলোতে আগে নিয়মিত ঢুঁ মেরেছেন পিনেট। দু’ধারে পপলার গাছের সারি, মাঝখানে রাস্তা। বহুবার তিনি এ রাস্তায় যাতায়াত করেছেন। আজ অবশ্য আলাদা আরেকটা এলাকায় এসেছেন তিনি, দক্ষিণের লিঁও থেকে ইলে ডি ফ্রান্সের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। তাঁর বেতন বেড়েছে, ফুর্তির এটি অন্যতম একটি কারণ। আর নতুন এলাকায় যেতে পারছেন, স্বভাবতই ভাল লাগছে তাঁর।
এ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় শ্বাসরুদ্ধকর। বিপুল বেগে গাড়ি ছুটিয়েছেন পিনেট, হাসিতে উদ্ভাসিত চেহারা। আনন্দ থাকারই কথা। অত্যন্ত সফল হয়েছে তাঁর এবারকার ট্যুর। মক্কেলের দেয়া টাকায় ফুলে আছে মানিব্যাগ।
এ মুহূর্তে তিনি ফ্রান্স থেকে পঞ্চাশ মাইল দক্ষিণে তাঁর বাড়ি কুরবোভোই’র শহরতলীতে। দীর্ঘ পথভ্রমণে শরীর বেজায় ক্লান্ত, গাড়ি ঠেলে বাড়ি পৌঁছার ধকল আর সইতে পারবেন না বুঝতে পেরেছেন। সেই অক্সেরে থেকে গাড়ি ছুটিয়ে আসছেন তিনি, এখন একটু বিশ্রাম না নিলেই নয়। একটা গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ ছোট হোটেলটার সাইনবোর্ডে আটকে গেল চোখ। সিদ্ধান্ত নিলেন রাতটা হোটেলে কাটিয়ে পরদিন বাড়ি ফিরবেন। হোটেলটা প্রায় একটা জঙ্গলের মধ্যেই বলা যায়। চারপাশে পাইন গাছ, একটা ক্যানভাসের নীচে কতগুলো চেয়ার-টেবিল ফেলে রাখা, অবশ্য হলওয়েতে আলো জ্বলছে। তার মানে এটা পরিত্যক্ত নয়। পাইন গাছের নীচে গাড়ি রাখলেন পিনেট। এক বার-এ চোখ পড়ল, অনেকগুলো বোতল সাজানো বারটিতে। দেখে মনে হয় উষ্ণ, তরল পদার্থে বোঝাই বোতলগুলো।
হোটেল বা সরাইখানাটির সামনে আর কোনও গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। তবে ও নিয়ে পিনেটের ভাবনাও কিছু নেই। তিনি কারও সঙ্গ আশা করছেন না, এ মুহূর্তে আধ বোতল ওয়াইনের জন্য আকুলি-বিকুলি করছে বুকটা। মদ গিলে শরতের হিম ভাবটা থেকে রক্ষা পেতে চান। তারপর পেট পুরে ডিনার খেয়ে আট ঘণ্টা ঘুম দিলেই পরদিন সকালে তাজা মন ও শরীর নিয়ে যাত্রা শুরু করা যাবে প্যারিসের উদ্দেশে। গাড়ি পার্ক করে ওতে তালা লাগালেন পিনেট, তারপর হলঘরে ঢুকলেন। পালিশ করা মেঝেতে শুয়ে আছে একটা বেড়াল। শহুরে পোশাক পরা এক লোক কনিয়াক পান করছে। এ ছাড়া জীবনের চিহ্ন নেই কোথাও। লোকটা পিনেটকে দেখে মৃদু গলায় ‘শুভ সন্ধ্যা’ বলল। তারপর এক ঢোকে গ্লাসের তরল জিনিসটা শেষ করে বেরিয়ে গেল। মশিউ পিনেট জানালা দিয়ে দেখলেন একটা নীল রঙের বড় মার্সিডিজ নিয়ে চলে যাচ্ছে লোকটা। গাড়িটা রাস্তার ঢালে পার্ক করা ছিল।
কাউন্টারের বেল টিপে ধরতেই চটি ফটফট করে এগিয়ে এল এক লোক। বিনয়ের অবতার সেজে জানাল- হ্যাঁ, মশিউ অবশ্যই এখানে একটা ঘর পেতে পারেন, আর ডিনারের ব্যবস্থাও করা যাবে।
মশিউ পিনেট রেজিস্টারে নিজের নাম সই করলেন। চারপাশে চোখ বুলিয়ে অবাকই লাগল তাঁর, এতবড় ডাইনিং রুম, অন্তত দুশো মানুষ এক সাথে বসে খেতে পারে। অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এটা ট্যুরিস্ট সিজন নয়, ব্যাখ্যা করল হোটেল মালিক। তাই লোকজন খুব কমই আসে। অবশ্য এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই পিনেটের। তিনি এখন ডিনার খেয়ে শুয়ে পড়তে পারলেই খুশি।
হোটেল মালিক মধ্যবয়স্ক, টাক মাথা, কান জোড়া অস্বাভাবিক বড়। চোখ দুটি কুঁতকুঁতে, লোভ আর কুটিলতার ছায়া তাতে। হাসার সময় বেরিয়ে পড়ল সোনা বাঁধানো দাঁত, আলো পড়ে ঝিক করে উঠল। হাসলে লোকটাকে মোটেই ভাল লাগে না, কুৎসিত দেখায়।
লোকটা তার নাম বললেও ঠিক শুনতে পাননি পিনেট। তবে প্রথম দর্শনেই টাকুকে অপছন্দ হয়েছে তাঁর। ডিনার টেবিলে হাজির থাকল সে। পিনেট আশপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। অবশ্য রান্নাঘরে কেউ থাকতে পারে মনে হলো তাঁর। একটু পর লো-কাট কালো ফ্রক পরা এক মুটকিকে দেখতে পেলেন তিনি এক ঝলকের জন্যে, দূর থেকে হেঁটে যাচ্ছিল, চোখাচোখি হতে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে সালাম করল, বিড়বিড় করে কী যেন বলে চলে গেল। লোকটার বউ হবে, ধারণা করলেন পিনেট।
খাওয়ার আগে হাত মুখ ধোয়া দরকার। টয়লেটের দরজা দেখিয়ে দিল হোটেল মালিক। ডাইনিং রুমের পরে ছোট্ট করিডর, তার মাথায় টয়লেট। অন্ধের মত হাত বাড়িয়ে অনেক কষ্টে খুঁজে পেতে বাতির সুইচ জ্বালালেন পিনেট এবং শিউরে উঠলেন দৃশ্যটা দেখে। একটা মাকড়সা। প্রকাণ্ড। বাদামি রঙ। বসে আছে চিড় ধরা পাথুরে মেঝেতে। ওটার ধাতব চোখজোড়া যেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল পিনেটের দিকে। মাকড়সা ভীষণ ভয় পান পিনেট। তীব্র ঘৃণায় ওটাকে জুতোর নীচে পিষে ফেললেন তিনি।
টয়লেটের দরজা খুলে আলো জ্বেলে আর্তনাদ করে উঠলেন পিনেট। এখানেও দুটো দানব, একটা দেয়ালে, তাঁর মাথার কাছে, অন্যটা কমোডের নীচে, মেঝেতে। ওটা নড়ে উঠতে খসখসে পায়ের শব্দও যেন শুনতে পেলেন পিনেট। আর অদ্ভুত ব্যাপার, নীল ধাতব চোখ মেলে সরাসরি তাকিয়ে থাকল মাকড়সা পিনেটের দিকে। পিনেটের মনে হলো ওটার চোখ দিয়ে ঠিকরে বেরুচ্ছে ঘৃণা। তিনি এটাকেও ভর্তা বানালেন জুতোর নীচে পিষে। চোখের আলো নিভে গেল প্রাণবায়ু বেরিয়ে যেতে।
অপর মাকড়সাটা বিদ্যুৎগতিতে ল্যাভেটরির সিস্টার্নের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল, পিনেট আবার চিৎকার দিলেন। তাঁর চিৎকার শুনে চলে এল হোটেল মালিক। মনে হলো মজা পেয়েছে লোকটা, চোখ জোড়া নাচছে।
‘না, মশিউ,’ বলল সে, ‘ভয় পাবার কিছু নেই। বছরের এ সময়ে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে ওগুলো প্রায়ই চলে আসে এদিকে। ওগুলো আপনার কোনও ক্ষতি করবে না। সবগুলোই আমার পোষা। ‘
মুখ দিয়ে বিদঘুটে একটা শব্দ করল লোকটা, পিনেটের কানে রীতিমত অশ্লীল শোনাল, প্রকাণ্ড শরীর নিয়ে সিস্টার্নের আড়াল থেকে উদয় হলো বাদামী আতঙ্ক। পিনেটের চোখ বড় বড় হয়ে গেল অবিশ্বাসে, মাকড়সাটা লোকটার হাতের তালুতে উঠে আসছে। মাকড়সার গায়ে টোকা দিল হোটেল মালিক, কুঁকড়ে গেল ওটা। হাতের তালুতে বসে রইল চুপচাপ
মশিউ পিনেট ম্লান এবং বিবর্ণ লোকটাকে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে করিডরের বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে নিলেন। ডাইনিং রুমে ফিরে আসার পর খানিক স্বস্তি বোধ করলেন। লোকটার হাতে মাকড়সাটাকে দেখতে না পেয়ে পেশীতে ঢিল পড়ল তাঁর।
হোটেলঅলা অদ্ভুত মানুষ হলেও রান্নার হাতটা সত্যি ভাল। ডিনার খেয়ে তৃপ্তি পেলেন পিনেট। ডিনার শেষে হোটেলঅলাকে একসাথে ড্রিঙ্ক করার অফারও দিয়ে বসলেন। সরাইখানাটা দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে লোকটা বলল, ‘না। আমরা বেশিদিন কোথাও থাকি না। আমি এবং আমার স্ত্রী।
এ নিয়ে আর কথা বলার আগ্রহ অনুভব করলেন না পিনেট। ঠিক করলেন হোটেলঅলার চার্জ এখুনি বুঝিয়ে দেবেন। তিনি হিসেবী মানুষ। ভোরে উঠেই চলে যাবেন।
টাকার বান্ডিলে ঠাসা মানিব্যাগটা খুললেন পিনেট। ওদিকে তাকিয়ে চোখ চকচক করে উঠল হোটেল মালিকের। লোকটা তাঁর মানিব্যাগের দিকে চেয়ে আছে বুঝতে পেরে পিনেট দ্রুত কয়েকটা অফিশিয়াল চিঠি দিয়ে বান্ডিলগুলো আড়াল করার চেষ্টা করলেন। তাতে লাভ হলো না। উল্টো আরও ফুলে উঠল মানিব্যাগ।
মানিব্যাগের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে হোটেলঅলা বলল, ‘এবার বেশ কামিয়েছেন, মশিউ’। প্রশ্ন নয়, বিবৃতির মত শোনাল কথাটা। পিনেট দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন। খানিক পরে শুভরাত্রি জানিয়ে নিজের ব্যাগটা নিয়ে চললেন দোতলায়, শোবার ঘরে।
করিডরে কার্পেট বিছানো, কয়েকটা টেবিলও পাতা আছে। তাতে ফ্লাওয়ার ভাসে ফুল, উজ্জ্বল আলো জ্বলছে। ১২ নম্বর ঘরটা পিনেটের। তিনি মাত্র তালায় চাবি ঢুকিয়েছেন, এমন সময় আলো নিভে গেল। নীচতলায় সুইচবোর্ড, ওখান থেকেই ইলেকট্রিসিটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দীর্ঘ এক মিনিট অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো পিনেটকে। বাম দিকে মৃদু খচখচ শব্দে তাঁর কপালে ঘাম ফুটল, তিনি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। একটু পরে সিলিং- এর আলো জ্বলে উঠল। দরজা বন্ধ করে কপাটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কয়েক সেকেন্ড, চোখ বোলাচ্ছেন ঘরে।
ঘরটা সুন্দরভাবে সাজানো, অন্য সময় হলে ঘরের আরাম-আয়েশ ভালই উপভোগ করতেন পিনেট, কিন্তু এ মুহূর্তে সিঁটিয়ে আছেন। দ্রুত কাপড় ছাড়লেন তিনি। ব্যাগ খুলে একটা বই বের করলেন, তারপর ঘরের কোণের বেসিনে গিয়ে দাঁড়ালেন দাঁত মাজতে। বিছানায় ওঠার আগ মুহূর্তে কার’ যেন মৃদু পায়ের শব্দ পেলেন পিনেট। জানালা দিয়ে তাকালেন, হোটেলঅলা। পিনেটের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গভীর আগ্রহে গাড়ি দেখছে। তারপর ঘুরে দাঁড়াল সে, দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকল। বিছানায় উঠে পড়লেন পিনেট।
উপন্যাসটা যাচ্ছেতাই। তাই পড়ায় মন বসল না। দারুণ ক্লান্তি লাগলেও ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না মশিউ পিনেটের। বেডসাইড টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালানো থাকল। একটু পরে তন্দ্রামত এল তাঁর। হঠাৎ জেগে উঠলেন গাড়ির শব্দে। হোটেল থেকে কেউ গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। একটু পরে মিলিয়ে এল ইঞ্জিনের শব্দ।
অস্বস্তিবোধ করলেন পিনেট। প্রবল ইচ্ছে হলো জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন তাঁর গাড়িটা ঠিক ঠাক আছে কিনা। উঠতে যাচ্ছেন, হঠাৎ অস্পষ্ট খচমচ একটা শব্দ শুনতে পেলেন। সাথে সাথে তাঁর নার্ভগুলো টানটান হয়ে গেল। ধীরে ধীরে মাথা ঘোরালেন তিনি, শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করছেন। ঘড়ির দিকে একপলক তাকালেন পিনেট। দুটো বাজে। খচমচ শব্দটা আসছে হাতের কোণ থেকে। হাতের ওই কোণে টেবিল ল্যাম্পের আলো পৌঁছায়নি। এখন ঘরের আলো জ্বালতে হলে দরজার কাছে যেতে হবে পিনেটকে। আর খালি পায়ে কাজটা করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি টেবিল ল্যাম্পটাকে কাত করে ধরলেন হাতের দিকে। ওখানে কিছু একটা আছে, তবে অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
টেবিলের দিকে হাত বাড়ালেন পিনেট চশমার জন্যে। কাজটা করতে তাঁকে ল্যাম্পটাকে খাড়া করতে হলো, আর হাতড়াতে গিয়ে শুনতে পেলেন মৃদু থপ করে একটা শব্দ হয়েছে বিছানার নীচে, কার্পেটে। চশমাটা পড়ে গেছে ওখানে। ঝুঁকলেন তিনি, হাত দুই দূরে চশমাটা, হাত বাড়ালেন চশমা তুলে নিতে।
ঠিক তখন হঠাৎ খচমচ শব্দটা আবার হলো, আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলেন পিনেট। দেখতে পেয়েছেন ছায়া শরীর নিয়ে জিনিসটা সিলিং বেয়ে নামছে, তাঁর কাছে চলে আসছে। চশমা ছাড়াও বোঝা গেল জিনিসটা কী, যদিও ওটার অস্তিত্ব স্বীকার করতে চাইল না মন।
রোমশ একটা জীব, পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম বিষাক্ত মাকড়সা ট্যারানটুলার কথা মনে করিয়ে দিল। গোল সুপ প্লেটের চেয়েও আকারে বড়, টেলিফোন তারের মত মোটা পা। সিলিং বেয়ে নেমে আসার সময় ওটার পা দেয়ালে ঘষা লেগে খচমচ শব্দ হচ্ছে, গলা থেকে অস্পষ্ট ঘরঘর একটা শব্দও বোধহয় শোনা গেল। এগিয়ে আসছে ওটা, টেবিল ল্যাম্পের আলোয় তীব্র ঘৃণা নিয়ে পিনেট দেখলেন, বাদামী লোমে ভরা মুখটা অশ্লীলভাবে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। লাঠি বা এ ধরনের অস্ত্রের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে এদিক- ওদিক তাকাতে লাগলেন তিনি। শুকনো জিভ টাকরায় লেগে আছে, চিৎকার যে করবেন সে অবস্থাও নেই। পাজামা ভিজে গেছে, কপাল থেকে বইছে ঘামের স্রোত। একবার চোখ বুজলেন তিনি, তারপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকালেন। আশা করলেন চোখ মেলে দেখবেন আসলে এতক্ষণ স্রেফ একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। ওসব মাকড়সা-ফাকড়সার কোনও অস্তিত্ব নেই।
কিন্তু বিকট প্রাণীটাকে আরও কাছে আসতে দেখে তাঁর আশা নিভে গেল দপ করে। ওটার নীলচে চোখজোড়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বাথরুমে ভর্তা করে দিয়ে আসা জীবগুলোর মত স্থির দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। প্রবল ঘৃণা এবং ভয় নিয়েও বিস্ময়বোধ করলেন পিনেট। চোখ জোড়া যেন অবিকল হোটেলঅলার মত! থেমে দাঁড়াল জীবটা, তারপর লাফ মেরে নামল বিছানার ওপর। নাকে বিকট দুর্গন্ধ ঝাপটা মারল পিনেটের। বিশাল মাকড়সাটা ভয় ধরানো খচমচ শব্দ তুলে লম্বা পা ফেলে উঠে এল পিনেটের মুখে, তার মুখ এবং চোখ ঢেকে দিল চটচটে আঠাল শরীর দিয়ে। মুখ হাঁ করে একের পর এক চিৎকার দিতে শুরু করলেন মশিউ পিনেট।
.
‘অদ্ভুত একটা কেস,’ মশিউ পিনেটের ঘরের বেসিনে হাত ধোয়ার সময় বললেন ডাক্তার। ‘ওনার হার্টের অবস্থা ভালই ছিল, তবে আকস্মিক কোন শকে মারা গেছেন। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে একটা ইনকুয়ারী দরকার। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।
হোটেলঅলার বউ দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল, ভীরু পায়ে নেমে গেল নীচে। নীচের বারে দাঁড়িয়ে হোটেলঅলা মুচকি মুচকি হাসছিল। সে টাকার মোটা একটা বান্ডিল ঢোকাল কাউন্টারের নীচে।
ওপরের ঘরে ছোট বাদামী রঙের একটা মাকড়সা, এক ইঞ্চির আটভাগের একভাগ হবে লম্বায়, মৃত লোকটির কপালের ওপর ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ডাক্তার এক ঝটকায় লাশের ওপর থেকে সরিয়ে দিলেন ওটাকে।