ফর ইউ, গ্র্যান্ডপা

ফর ইউ, গ্র্যান্ডপা

১২ এপ্রিল, ২০১০ টাইমস অব ইসরায়েল ছাপল: ‘ফর ইউ, গ্র্যান্ডপা’ এবং এরপর শিরোনামে উঠে আসা মানুষটার অসংখ্য প্রশংসকের জন্ম হল।

সেদিন খবরের কাগজের কলামটির লেখক অমোস শবিত লিখেছিলেন যে, মির ডাগান জীবনে যত বড় কাজ করেছেন, তার প্রতিটার উৎসর্গ-পুরুষ ছিলেন একজনই— ওঁর মাতামহ বা দাদু। আদরের ‘গ্র্যান্ডপা’!

১৯৪২ সাল। হিটলারের বিশেষ বাহিনী শুত্যুস্তাফল’ পোল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করে দিল। গুলি করে মারা হল অগুনতি মানুষকে। আর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগে একটা ছবি তোলা হয়েছিল।

কী ছিল সেই ছবিতে?

সেই ছবি ছিল এক ইহুদি বৃদ্ধের। নাম বের এরলিক স্লুশনী। তাঁর পিঠের ওপর আরেক জন ইহুদিকে তুলে গুলি করে মারা হয় দুজনকেই।

এই হত্যার ঠিক তিন বছর পর নিহত এরলিকের মেয়ে সোভিয়েতগামী একটি রিফিউজি ভর্তি ট্রেনের মধ্যে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটির নাম রাখা হয় মির হুবারম্যান। সে-ই বড় হয়ে পরিচিত হল মির ডাগান নামে।

মির ডাগান— প্রতিশোধ এবং প্রতিরোধের শিক্ষার বিষয়টা ছিল ওঁর শৈশবের খেলার সঙ্গী। যেন জিজাবাইয়ের শিবার শিবাজি হয়ে ওঠার কাহিনি।

এরলিক সুশনীর ওই ছবি আমৃত্যু বয়ে নিয়ে বেরিয়েছেন মির ডাগান। ডাগানের জীবনে নিজের দাদুর অন্তিম দৃশ্য এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, সেনাতে থাকাকালীন যখন, যেখানে ওঁর বদলি হয়েছে, তখন সেখানকার নতুন অফিসে গিয়ে চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রথমদিনে উনি নিজের দফতরে এই ছবিটা টাঙিয়েছেন। উপস্থিত সহকর্মীদের বলেছেন ছবির পিছনে থাকা মর্মান্তিক ইতিহাসের কথা।

ঠিক এমনই একটা কিসসা তখনও শোনানো হয়েছিল, যখন ২০০২ সালের আগস্টে ডাগান প্রথম বারের জন্য মোসাদ চিফ হলেন। ১৩ সেপ্টেম্বরের টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকায় ডাগানকে নিয়ে একটা বাক্যের শিরোনাম ছাপা হল: ‘শ্যারন রেইজড ডাগান’।

আসুন, ফিরে যাই এই শিরোনামের কয়েক মাস আগের একটি শিরোনামে। ১৮ জানুয়ারি, ২০০২। টাইমস অব ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কলামিস্ট রন লেশেম লিখেছিলেন— ‘মোসাদ ইন ডিপ ফ্রিজ’।

একই বছরের মাত্র কয়েক মাসের আড়াআড়িতে প্রকাশিত দুটি সংবাদ শিরোনাম স্পষ্ট করে দেয় যে, ডাগান এমন একটা সময়ে মোসাদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, যখন মোসাদ ডুবতে বসেছিল। মোসাদের আন্তর্জাতিক চিত্র ক্রমশ ম্লান হয়ে পড়ছিল, একের পর এক ফেইলড মিশন, এজেন্টরা ধরা পড়ছিল, তাদের হত্যা করা হচ্ছিল।

ওই পর্বে মোসাদ জর্ডনে লুকিয়ে থাকা একজন ‘হামাস’ নেতাকে টার্গেট করেছিল, কিন্তু সে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়। এই বইতে মোসাদের কিসসাকাহিনি যত গড়াবে, ততই আপনারা এই কথা ভেবে অবাক হবেন যে, মোসাদের টার্গেটও পালিয়ে বাঁচতে পারে! বাস্তবে কিন্তু এমনটাই ঘটেছিল ওই ডামাডোলের পর্বে।

কিন্তু এটাই সত্য। যদি চিফ কমজোর হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানও দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য। জর্ডনে এই ফ্লপ অপারেশনের পর ইসরায়েলের সরকারের ভয়ানক নিন্দা হয়। পরভূমে চলা এই মিশনের জন্য রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্ষুণ্ণ হয়েছিল জর্ডন গভর্নমেন্ট।

তো এমন একটা পরিস্থিতিতে ‘ডিপ ফ্রিজড’ মোসাদের দায়িত্বে আনা হল ডাগানকে: ‘শ্যারন রেইজড ডাগান’।

অ্যান্ড হোয়াট আবাউট ডাগান রাইজড?

— ডাগান রেইজড কেওজ!

যে সংবাদপত্রটি ২০০২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘শ্যারন রেইজড ডাগান’ লিখল, সেই কাগজেই ২০০৩ সালের ৭ মে হেডলাইন ছাপল: ‘ডাগান রেইসড ক্যাওজ’। অল্প কয়েক মাস অন্তর বদলাতে থাকা সংবাদপত্রের শিরোনামের এই শৃঙ্খলা প্রমাণ করে দেয় যে, অযোগ্য থেকে যোগ্যতর ব্যক্তির হাতে করে মোসাদ হয়ে উঠছিল ক্ষুরধার।

কেওজ কী? কোথা থেকে এল এই শব্দ?

‘Chaos’… মহাকবি হোমারের ইলিয়ড থেকে ধার নেওয়া একটি শব্দ। স্পার্টা আর ট্রোজানের মধ্যে হওয়া যুদ্ধে যুযুধান যাবতীয় দৈবিক এবং আসুরিক চরিত্রদের সৃষ্টি করেছিলেন হোমার। তাদের মধ্যেই একটি চরিত্র ছিল, কেওজ।

কেওজ-এর কাজ ছিল বিপক্ষের সৈন্যদলের ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেওয়া বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। প্রতিপক্ষের সেনার পঙ্ক্তি ভেঙে দেওয়া, তাদের নিয়ত সমূহকে ছত্রভঙ্গ করা, ব্যূহ ভেদ করা ইত্যাদিই ছিল কেওজের ভূমিকা।

হোমার মহাকবি। তাঁর মহাসাহিত্যের প্রভাব ভাষায়, সমাজে দেখা যে দেবেই এ কথা বলা বাহুল্য। কালান্তরে, কেওজ-এর এমনই প্রভাব পড়ল যে, এই শব্দটি ‘মহাবিশৃঙ্খলা’র সমতুল্য হয়ে উঠল।

তাহলে আমরা কী বলতে পারি?

‘ডাগান রেইজড কেওজ’ বলতে বোঝানো যায়: ‘ডাগান মহাবিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছেন’।

কী ধরনের মহাবিশৃঙ্খলা?

মধ্যপ্রাচ্যে মহাবিশৃঙ্খলা। তছনছ করে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে। ডাগানকে পর্যবেক্ষণ করলে মিল পাওয়া যায় চাণক্যের সঙ্গে। ছল, বল কিংবা কৌশল, যেখানে যেটা দিয়ে সম্ভব, সেখানে সেটাকেই অস্ত্র রূপে ব্যবহার করেছিলেন মির ডাগান। ‘সবার উপরে রাষ্ট্র সত্য—- এটাই ছিল ডাগানের এক এবং অদ্বিতীয় মন্ত্র! ডাগানের এই মন্ত্রের ইতিবাচক পরিণাম হিসাবে ইসলামিক মৌলবাদ দীর্ঘ দিন ধরে অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রে হাত দেওয়ার সুযোগ পায়নি।

বিপক্ষ দেশের বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রের পরীক্ষণকে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে ডাগান হয়ে উঠেছিলেন নম্বর ওয়ান! ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন প্রকল্প নাশ করার জন্য ওঁর পরিকল্পনা ছিল ওদেশের একের পর এক নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্টকে গুপ্তহত্যা করা এবং মোসাদ সেই কাজটাও সুচারু পদ্ধতিতে সম্পন্ন করেছিল।

.

২৩ জুলাই, ২০১১

ইরানের রাজধানী তেহরান। সময়: বিকেল ৪:৩০। তেহরানের দক্ষিণ প্রান্তের একটি জনবসতি পূর্ণ এলাকা। রাস্তার নাম ‘বানি হাশমি স্ট্রিট’। মূল পথের ধারেই একটা বাড়ির দোরগোড়ায় এসে নামলেন ওই বাড়ির মালিক। কলিং বেল প্রেস করলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুটি পৃথক মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে আসা দুজন আততায়ী নিজেদের অটোম্যাটিক মেশিনগানের সব ক’টা গুলি দেগে দিয়ে গেল ওই ব্যক্তির দেহে।

নিহত ব্যক্তি কিছু বুঝে ওঠার সময়ই পাননি। উনি কে ছিলেন? পদার্থবিদ্যার এক বিশারদ।

ওঁর অপরাধ কী ছিল?

উনি নিজের অধীত বিদ্যা এবং কৌশলের প্রয়োগ দ্বারা ভবিষ্যতে ইসলামিক মৌলবাদ তথা সন্ত্রাসবাদকে সশক্ত করে তোলার চেষ্টা করছিলেন। উনি ছিলেন ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের অন্যতম একটি মুখ, নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেডকে অ্যাক্টিভেট করার জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইলেকট্রনিক স্যুইচের ডিজাইনার।

ওই বৈজ্ঞানিকের নাম ছিল, প্রফেসর দারিউশ রেজোইনিজাদ। তবে এভাবে আততায়ী দ্বারা হামলায় নিহত বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে নাজিদই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না, ছিলেন না অন্তিম ব্যক্তিও। ওঁর ওপরে হওয়া এই হামলার আগে ২০১০ সালে একই দিনে দুটি পৃথক জায়গায় দুজন বৈজ্ঞানিকের ওপরে আক্রমণ হয়।

.

২৯ নভেম্বর, ২০১০

উত্তর তেহরান। একটা কালো রঙের গাড়ি এগিয়ে চলেছে হাইওয়ে ধরে। চালকের আসনে বসে আছেন মাজিদ শহরিয়ারি। ঠিক পিছনের সিটে ওঁর স্ত্রী ঘাসেমা। সদা নিজের গবেষণা এবং অধ্যাপনার কাজে ব্যস্ত থাকেন মাজিদ। উনি শাহিদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

সন্ধে নেমে গেছে বেশ খানিকটা আগেই। ঘড়ির কাঁটা বলছে, পৌনে আটটা বাজে। এয়ার কন্ডিশনড গাড়ির ভেতরে হালকা তালে বাজছে আরব্য সুর।

ঘাসেমা বললেন, ‘আহ, এমন মধুর সন্ধ্যায় লং ড্রাইভের মজাই আলাদা!’

‘ডার্লিং, রাত যে এখনও বাকি!’ উত্তরে একটা হাসি সমেত কথাটা ভাসিয়ে দিলেন মাজিদ।

হ্যাঁ, রাত বাকি ছিল। বাকি ছিল বিভীষিকাও। ওঁরা খেয়াল করেননি যে, শুনশান পথ ধরে ওঁদের গাড়ির পিছু নিয়ে চলতে থাকা দুটো মোটরবাইকের মধ্যে একটা যান গতি বাড়িয়ে চলে এল ওঁদের গাড়ির সমান্তরালে। তারপর বাইকের পিছনের সওয়ার টুক করে কিছু একটা আটকে দিল গাড়ির সামনের ডান দিকের দরজায়।

এতক্ষণে ব্যাপারটা নজরে আসে মাজিদের। গাড়ির গতি কমাতে শুরু করলেন উনি। গাড়িটার ঠিক পিছনে থাকা বাইকের দ্বিতীয় আরোহী এবার নিজের পরিধানের মধ্যে থেকে একটা ছোট রিমোট বের করে আনলেন। তার নির্দিষ্ট বোতামে চাপ দিতেই সশব্দে ঘটে গেল বিস্ফোরণ।

যে বাইকের সওয়ার গাড়িটায় বিস্ফোরক লাগিয়েছিল সেই বাইকটাও ব্লাস্টের প্রাবল্যে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ল। তাকে উদ্ধার করল ব্যাকআপ বাইকের দুই সওয়ার। আর ততক্ষণে কাজ সারা হয়ে গেছে। ইহলোক ত্যাগ করেছেন ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের অন্যতম স্তম্ভ মাজিদ শহরিয়ারি।

ঠিক তারই কিছুক্ষণ আগে তেহরানের ইউনিভার্সিটি স্কোয়ারের কাছে একটি মোটরবাইক গিয়ে ধাক্কা মারে প্রফেসর ফেরেয়দুন আব্বাসির পিয়োজো ২০৬ মডেলের গাড়িতে। ওই সময়ে গাড়ির ভেতরেই আব্বাসি সস্ত্রীক বসে ছিলেন। বাইকটা আসলে গাড়িবোমা ছিল। কেবল গাড়িবোমা দিয়েই নয়, গাড়ির পিছন দিকের উইন্ডশিল্ডে আগে থেকেই লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটা সি-ফোর বিস্ফোরক। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন আব্বাসি।

এই হামলার পর ডক্টর আব্বাসি দীর্ঘ সময়ের জন্য মেডিক্যাল লিভে চলে যান।

উদাহরণের সূচি বেশ লম্বা, তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটাই বলা সম্ভব।

.

১২ জানুয়ারি, ২০১০

প্রফেসর মাসুদ আলি মহম্মদি নিজের বাড়ির বাইরে পা রাখা মাত্রই নিহত হন। এই ঘটনাটি ঘটে সন্ধে ৭:৩০ নাগাদ। স্থান উত্তর তেহরানের কাছেই, শরিয়তি স্ট্রিট।

যদিও বা ইরানের ইনটেলিজেন্স এজেন্সি, আজও অবধি এমন কোনো ব্লু খুঁজে বের করতে পারেনি যার মাধ্যমে এ কথা বলা সম্ভব হয় যে, এই গুপ্তহত্যাগুলোর পিছনে ছিলেন মির ডাগান বা মোসাদ। তবে বার বার ইসলামিক বিশ্বের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সরকারি রিপোর্টে একটাই তত্ত্বকে ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে— এই হত্যাগুলির পিছনে ‘জিওনিস্ট’রা ছিল, অর্থাৎ ইহুদিরা।

এভাবেই সফল হতে থাকল একের পর এক মিশন। মির ডাগান এবং তাঁর সমার্থক মোসাদের নাম শুনে বিশ্বের তাবড় তাবড় সন্ত্রাসবাদীদের বুক কেঁপে উঠতে লাগল। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমস ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ এর সংস্করণে লিখল: ‘মির ডাগান, দ্য মাস্টারমাইন্ড বাহাইন্ড মোসাদ’স সিক্রেট ওয়ার!’

এই আর্টিকেলটি লিখেছিলেন উজি মহনেহমি। ভদ্রলোক একজন ইসরায়েলি সাংবাদিক, মিডল-ইস্টের রাজনীতি, কূটনীতির একজন বিশেষজ্ঞও বটে।

আর্টিকেলটি শুরু হয়ে ডাগানের নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের কথা দিয়ে। সেখানে এ কথাও লেখা হয় যে, ডাগান একজন চিত্রশিল্পী। রং নিয়ে খেলা ওঁর পুরোনো অভ্যেস এবং এই আর্টিকেল গিয়ে শেষ হয় সেই শিল্পীর গুপ্তচর হয়ে ওঠা দিয়ে, তাঁর ‘স্পাই ইন চিফ’ হয়ে ওঠার মাধ্যমে।

এই আর্টিকেলটি প্রকাশিত হওয়ার ঠিক তিন দিন আগে, লন্ডন টাইমস পত্রিকায় ডাগানকে নিয়ে বেশ কিছু কথা প্রকাশিত হয়। সেখানে ওঁকে বলা হয়েছিল, ‘স্ট্রিট-ফাইটার’। লেখা হয়েছিল: দ্য পাওয়ারফুল, শ্যাডোয়ি মোসাদ চিফ মির ডাগান ইজ আ স্ট্রিট-ফাইটার!

পাকিস্তানের মতো একটি ঐতিহাসিক চোর-রাষ্ট্রের কথা তো আমরা কমবেশি সকলেই জানি। মোসাদ চিফকে নিয়ে লেখা লন্ডন টাইমসের এই নিউজ বেরোনোর ঘণ্টা পাঁচের মধ্যেই পাকিস্তানি সংবাদপত্র দ্য নেশন সেটাকে টুকে নিয়ে লিখল: ‘মোসাদ চিফ মির ডাগান ইজ আ স্ট্রিট-ফাইটার!’

তবে এক্ষেত্রে দ্য নেশনের করা এই স্টোরির থেকে বেশি কভারেজ পেয়েছিল সেই মামলা, যা লন্ডন টাইমসের পক্ষ থেকে দ্য নেশন সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল।

আর এই স-অ-ব কিছু চলতে থাকার মাঝে হঠাৎ করেই একদিন দুনিয়ার সবথেকে সাহসী মানুষদের পঙ্ক্তিতে থাকা ডাগানের শরীরে বাসা বাঁধল মারণব্যাধি, লিভার ক্যান্সার।

আমেরিকা, জার্মানির মতো চিকিৎসা শাস্ত্রে উন্নত দেশের চিকিৎসকেরা কেউই ডাগানের মতো ব্যক্তিত্বের চিকিৎসা করাতে রাজি হলেন না। এমনকী ডাগানকে ভারতে এনেও চিকিৎসার ব্যাপারে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিটা ক্ষেত্রেই বাধ সাধছিল প্রাক্তন মোসাদ কর্তার স্টেটাস। কেউ রিস্ক নিতে চাননি।

খবর ছড়িয়ে পড়ল বেলারুসের চিকিৎসা ব্যবস্থার শরণ নিয়েছেন ডাগান। কিন্তু সেই খবরকেও নস্যাৎ করে দেওয়া হল ডাগানের পরিবারের পক্ষ থেকে। সম্ভবত হিজবুল্লাহর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণ এড়াতেই এমনটা করা হয়।

কিন্তু নিজের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে ইসরায়েলের মতো একটি উন্নত দেশের বাইরে কেন আসতে হয়েছিল ডাগানকে?

কারণ ইসরায়েলের নিয়ম অনুসারে ৬৫ বছরের ওপরের কোনো ব্যক্তির লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট আইনসিদ্ধ নয় এবং চিকিৎসার সময়ে ডাগানের বয়স ছিল ৬৭ বছর।

যাই হোক, চিকিৎসার জন্য শ্রেষ্ঠ বিশারদ আনা হয়। প্যারিস ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টারের চিকিৎসক ডানিয়েল আজৌলে বেশ কয়েক জন অভিজ্ঞ ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিতে ডাগানের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করেন।

কিন্তু এত প্রয়াস সত্ত্বেও চার বছরের বেশি বাড়ানো যায়নি ডাগানের আয়ু। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ডাগান মারা যান। ডাগান চলে গেলেও ইসলামিক মৌলবাদকে যে ধাক্কা উনি দিয়ে গেছেন, তা সামলাতে ওদের এখনও অনেক দিন সময় লাগবে।

মির ডাগানের মোসাদ নাকি মোসাদের মির ডাগান?

কী শিরোনাম দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আমরা দ্বিধায় ছিলাম। বলা ভালো, এখনও দ্বিধাগ্রস্তই আছি। যে মোসাদকে আজ আমরা দেখি, তা যতটা ‘ইসরায়েলের মোসাদ’, তার চেয়েও অনেক বেশি ‘ডাগানের মোসাদ’।

প্রাইম মিনিস্টার য়িত্যাক রাবিন ১৯৯৪ সালেই চেয়েছিলেন যে মোসাদের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নিক ডাগান। কিন্তু জীবনভর যুদ্ধ করে আসা মির ডাগানের ইচ্ছা ছিল নিজের ছোটবেলার একটা সাধ পূরণ করা।

কী সেই সাধ?

মোটরবাইকে চড়ে বিশ্বভ্রমণ করার সাধ!

ডাগানের জন্মপর্বের উল্লেখ আগেই করা হয়েছে। ওঁর বেড়ে ওঠার পরিবেশের ভয়াবহতার স্তরটা কিন্তু ভাবার মতোই বিষয়। এতটাই ভয় ছিল ইহুদিদের ইহুদি হওয়ার পরিচয় নিয়ে যে, প্রত্যেকে নিজের নিজের গোত্রনাম বদলে ফেলেছিল। বালক মির হুবারম্যান হয়ে গেল ‘ডাগান’… ‘মির ডাগান’।

শরণার্থী শিবির আর বিপদের পর বিপদের ছায়ায় ঘেরা নবীন রাষ্ট্র ইসরায়েলের বুকে বড় হতে থাকল মির ডাগান। শিক্ষার সুযোগ প্রায় ছিলই না। ওই কাঁচা বয়সে যে হাতে কলম তুলে নেওয়ার কথা ছিল, সেই হাতেই বালক ডাগান ছুরি তুলে নিয়েছিল।

ছুরি কিন্তু অস্ত্র নয়, শস্ত্র। এক্ষেত্রে ভারতীয় সনাতন পরম্পরা অনুসারে অস্ত্র এবং শস্ত্রের পার্থক্যটুকু বুঝে নেওয়া যাক। যে আয়ুধ বা হাতিয়ার প্রহারের আগে এবং পরে প্রয়োগকারীর হাতেই রয়ে যায়, তা শস্ত্র। যেমন গদা, ছুরি ইত্যাদি। আর যে আয়ুধ প্রহারের সময় দূর থেকে নিক্ষেপ করা হয়, তা হল অস্ত্র। যেমন তির। আবার কয়েকটি হাতিয়ার দু’ ভাবেই ব্যবহার করতে পারা সম্ভব। সেগুলো শস্ত্র এবং অস্ত্রের গণ্ডিতে অবাধে বিচরণ করার ক্ষমতা রাখে।

ছুরিকে শস্ত্র থেকে অস্ত্রের পরিধিতে এনে ফেলেছিলেন ডাগান। উনি ছুরি ছুড়ে মারার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা উদ্ভাবন করে ফেলেছিলেন। একটি পরীক্ষা পর্বে ইসরায়েলের ‘সায়েরাত মটকল’-এর আধিকারিকেরা অবধি ওঁর এই ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যান।

ডাগান ইসরায়েলের সর্বশ্রেষ্ঠ কম্যান্ডো ইউনিট সায়েরাত মটকলের অংশ হয়ে উঠতে পারেননি বটে, কিন্তু নির্ভুল লক্ষ্যে ওঁর ছুরি নিক্ষেপ করার ক্ষমতার কথা রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে যায় এবং তারপর থেকে পাশ্চাত্যের সিনেমা জগতে বিভিন্ন অ্যাকশন ফিল্মে বেশ কয়েক দশক ধরে একটা দুটো করে ছুরি ছুড়ে মারার সিন থাকার ব্যাপারটা বাঁধা-ধরা হয়ে যায়।

ডাগান প্যারাট্রুপার্সের সিলভার উইং পেয়েছিলেন। ১৯৬৩-১৯৬৬ এই চার বছর ইসরায়েলের নিয়মানুসারে দেশের জন্য আবশ্যকীয় সৈন্য-সেবা প্রদানের পর ডাগান সেনাবাহিনীতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তত দিনে উনি হয়ে উঠেছিলেন ‘সিজেন’ মির ডাগান বা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’।

ডাগানের দুর্ধর্ষ মনোভাব দেখলে মনে হয় ওঁর শৈশব যেন লাইব্রেরিতে থিওরি পড়ে কেটেছে এবং যৌবন কেটেছে ল্যাবরেটরিতে, প্রয়োগ করে। আর যা কিছু শিখেছেন, তা উজাড় করে দিয়ে গেছেন মোসাদকে, ইসরায়েলকে।

১৯৬৭ সাল। ‘ছ’ দিনের যুদ্ধ’ বা ‘সিক্স ডে’জ ওয়ার’ চলছিল। একজন প্লাটুন কম্যান্ডার রূপে সিনাই মোর্চার হয়ে লড়ছিলেন ডাগান। যুদ্ধ চলাকালীন মিশরের সেনা দ্বারা নির্মিত একটি বারুদে ভর্তি সুড়ঙ্গে ডাগানের পা পড়ে যায়। উনি মারাত্মক ভাবে আহত হন। তিন মাসের জন্য হাসপাতালেও ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছিল ডাগানকে।

তরতাজা একজন যুবক। দেশাত্মবোধে ভরপুর। নিজের সৈন্য-সেবার জন্য উনি তখন পদক প্রাপ্তির পথে। একজন যুবতীর কাছে এগুলোই কি প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারে না? হয়েও ছিল! হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই ওই হাসপাতালের এক নার্স বিনার সঙ্গে ওঁর প্রণয় হয়। সেই প্ৰণয় পূর্ণতা লাভ করে পরিণয়ে।

১৯৭১ সাল অবধি ডাগানের জীবন মোটামুটি সরলরেখায় চলেছিল। শান্তই ছিল বলা চলে। কিন্তু ১৯৭১ সালের গরমকালের এক সন্ধ্যায় গাজা ভূখণ্ডের সংলগ্ন একটি এলাকায় দুই ইহুদি শিশুর নির্মম হত্যার পর বদলে গেল ডাগানের জীবনপ্রবাহ।

পাঁচ বছরের অবিগাইল, আর আট বছরের মার্ক, একটি লকড গাড়িতে বসে নিজেদের বাবা-মা’র জন্য অপেক্ষা করছিল। আর তখনই এক দল ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী এসে ওই গাড়িটার কাচ ভেঙে তার মধ্যে একটা হ্যান্ড গ্রেনেড ফেলে দিয়ে যায়।

জেনারেল শ্যারন এই ঘটনায় ভয়ানক ভাবে মর্মাহত হন। উনি তৎক্ষণাৎ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নেওয়ার ডাক দেন। ডেকে পাঠানো হয় ওঁর যুবাকালের সঙ্গীদের, যাঁরা ছ’ দিনের যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন।

আর তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন মির ডাগান। ইসরায়েলের সামরিক আলোচনার একটা বড় দিক হল সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মত তথা অমত বিনিময়ের সম্পূর্ণ সুযোগ পান অধঃস্তনেরা। নানা কথার পর যখন ডাগানের বলার সুযোগ আসে, তখন উনি বলতে শুরু করেছিলেন, ‘শ্যারন স্যর, যদি আমরা লেবাননের প্যালেস্টাইন মুক্তি মোর্চার সদস্য হিসেবে বেথ লোহিয়াতে ঢুকি, আর তারপর… ‘

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই থামিয়ে দেওয়া হয় ডাগানকে। শ্যারন ওঁকে সবার সামনে তিরস্কারও করেন। কিন্তু শ্যারনের মনের ভেতরে কোনো একটি বিন্দুতে কেউ যেন বলছিল, ‘এই ছেলেটা ঠিকই বলছিল।’

এরপর অনেক তর্কাতর্কি হয়, শেষমেশ গ্রিন সিগন্যাল পান মির ডাগান। অপারেশনের নাম দেওয়া হয় ‘স্যুইফ্ট’।

অপারেশন স্যুইফ্টের কথা তো হবেই, তার আগে জেনে নেওয়া যাক ‘বেথ লোহিয়া’ ব্যাপারটা কী?

গাজা স্ট্রিপ বা ভূখণ্ডের দক্ষিণ ভাগের একটি জায়গার নাম বেথ লোহিয়া। এই স্থান সন্ত্রাসবাদীদের দুর্ভেদ্য গড় ছিল। ১৯৭০ সাল নাগাদ বিপক্ষের সকলেই জানত যে, ওখানে গিয়ে পড়া মানে মরণ বাঁধা। বেথ লোহিয়ার মাটিতে কেবল একটাই জিনিস শত্রুপক্ষের কাউকে সুরক্ষিত রাখতে পারত, আর তা ছিল তার পরিচয়ের গোপনীয়তা। আত্মপরিচয় গোপন করে কেউ যদি প্যালেস্টাইন মুক্তি মোর্চার সঙ্গে নিজের যোগ প্রমাণ করতে পারত, তাহলে তাকে ‘মরহাবা’ বলে স্বাগত জানানো হত। নাহলে অগুনতি ক্ষুধার্ত রাহিয়ান কালশনিকভ নিজেদের নখদন্ত বের করে তেড়ে আসত অনুপ্রবেশকারীর দিকে।

ব্যাপারটা পুরো ছকে ফেলেছিলেন মির ডাগান। ছাব্বিশ বছরের এক তরতাজা যুবক, যার দলের নেতৃত্বে জেনারেল এরিক শ্যারন। প্রাথমিক ভাবে শ্যারন ডাগানকে একজন অনভিজ্ঞ কিন্তু উৎসাহী যোদ্ধা বলে মনে করলেও পরে বুঝেছিলেন যে, হিসেবে ভুল ছিল।

এবার অপারেশন স্যুইফ্টকে রূপায়নের পালা এল। যোজনা তৈরি হল। দুটি দলে ভাগ হয়ে গেল টিম। ঠিক হল, একটি দল যাবে ইসরায়েলি সেনার বেশে এবং অন্য দলটি লেবাননের মুক্তিযোদ্ধাদের ছদ্মবেশ ধারণ করবে। ইসরায়েলের সৈনিকদের কাছে খুব ছোট একটি যুদ্ধ জাহাজ থাকবে, আর লেবাননের সন্ত্রাসবাদীর বেশে থাকা ছেলেদের কাছে থাকবে একটি জীৰ্ণ-শীৰ্ণ নৌকা।

ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে থাকা একটি ইসরায়েলি সমুদ্রপোত দুটি দলকেই জলে নামিয়ে দেবে। দুটি দলই তারপর এগিয়ে যাবে গাজা স্ট্রিপের দিকে। প্রথমে ভগ্নপ্রায় নৌকাটি গিয়ে থামবে গাজার সাগরতটে। মুক্তিযোদ্ধার বেশধারীরা লাফিয়ে নামবে নৌকা থেকে, পিছু পিছু আসা ইসরায়েলি জাহাজ তখনই তাদের ওপর গুলি চালাবে।

ডাগানের মতে, এটুকুই, কেবল এটুকুই যথেষ্ট ছিল! এটুকু ঘটাতে পারলেই গাজা ভূখণ্ডের মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিত সন্ত্রাসবাদীরা মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে থাকা ইসরায়েলিদের সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে গিয়ে তুলত। উগ্রবাদীদের ঠিকানাও তখন মিলত আপনাআপনিই।

তারপরের প্ল্যানিং ছিল, জাহাজে যুযুধান হয়ে আসা ইসরায়েলি সৈন্যের ছদ্মবেশে থাকা দলেরা লোকেরা নৌকা থেকে নেমে পালানো মুক্তিযোদ্ধার বেশধারীদের খোঁজাখুঁজি করে অসফল এবং নিরাশ হয়ে ফেরার অভিনয় করবে এবং তারপর ওদিকে ওই মুক্তিযোদ্ধার বেশধারীরা নিজেদেরকে লেবাননের আবু সইফের দলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে বেথ লোহিয়ার শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করবে। আর তারপর বুম-বুম!

সব কিছু একদম সেভাবেই সম্পন্ন হল, যেভাবে পরিকল্পিত হয়েছিল এবং এই যোজনার সাফল্যের পর প্যালেস্টাইন মুক্তি মোর্চা এক ধাক্কায় বহু বছর পিছিয়ে গেল। রাতারাতি তারকায় পরিণত হলেন যুবক মির ডাগান।

এরপর পৃথিবীর সব দেশেই যা হয়, ঠিক তা-ই হল। মির ডাগান মিডিয়ার খেলার বিষয় হয়ে দাঁড়ালেন। মানুষটাকে ঘিরে তৈরি হতে আরম্ভ করে দিল অসংখ্য কিংবদন্তী। যেমন মিস্টার ডাগান নাকি সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে পিস্তল শ্যুটিং করেন, এটাই ওঁর ডেইলি রুটিন। কেউ কেউ তো এ কথাও রটাল যে, ডাগান নিজের শত্রুর হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘যা, তোকে পালানোর সুযোগ দিলাম!’ আর তারপর পলাতক সন্ত্রাসবাদীকে গুলি করে ধরাশায়ী করেন।

এভাবেই একের পর এক খবরের কাগজের পাতা ভরে উঠতে থাকল ডাগানকে নিয়ে লেখা গল্পে।

১৯৯৪ সালের একটা দিনে য়িত্যাকের পক্ষ থেকে ডাগানকে অফার করা হল মোসাদের সর্বোচ্চ পদ— ‘উড ইউ লাইক টু বি মোসাদ চিফ?

ডাগান জানালেন, ‘নো! আই ওন্ট!’

এই সময়ে মেজর জেনারেল ডাগানের মনে হয়েছিল, ইসরায়েলে শান্তি ফিরেছে। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে সেবা নিবৃত্তি নিয়ে উনি মোটরবাইকে চড়ে ওয়ার্ল্ড ট্যুর করতে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু সেই ভ্রমণ সম্পূর্ণ করার সময় পেলেন না ডাগান। মাত্র আট মাসের মাথায় ডাগানকে ইসরায়েলে ফিরে আসতে হল। অশান্ত হয়ে উঠেছিল ইসরায়লের রাজনৈতিক পটভূমি। কারণ নিহত হয়েছিলেন প্রাইম মিনিস্টার য়িত্যাক। আমৃত্যু একটা আক্ষেপ করে গেছেন ডাগান— ‘ইশ, যদি আমি মোসাদ চিফ হতাম, তাহলে হয়তো য়িত্যাককে মরতে হত না!’

মোসাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ডাগানের এই আফশোসের মধ্যে দিয়েই আস্তে আস্তে বিদায় নিচ্ছিল বিংশ শতক। ওই সময়টা ছিল মোসাদের পতনকাল। এই মোসাদ আর মিগ ২১ হরণ করে আনা মোসাদ ছিল না। একের পর এক ফেইলড মিশন, খুঁজে বের করে মারা হচ্ছিল মোসাদ এজেন্টদের।

মোসাদের রাশ ধরে রাখা হাতেরা কূটনীতিতে পারদর্শী হলেও তা যোদ্ধার হাত ছিল না। ওই হাতেদের মালিক ব্রাসেলসে ১০/১২-র কেবিনে বসে ইউরোপিয়ান সংঘের বৈঠকে ইসরায়লের রাজদূত হিসাবে কাজ করাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন।

এরই মধ্যে এসে পড়ল একুশ শতক। জেনারেল শ্যারন হয়ে গেলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ডাগানের কাছে আবার প্রস্তাব গেল— ‘ডাগান, আমি একজন এমন যোদ্ধাকে মোসাদের দায়িত্ব দিতে চাই, যে নিজের দাঁতের নীচে ধারালো ছুরি ধরার ক্ষমতা রাখে।’

ডাগান এবারে আর ‘না’ বলেননি এবং এরপর ডাগান মিডল-ইস্টে যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিলেন, তা ছিল অভূতপূর্ব! একজন নিরামিষাশী চিত্রশিল্পী, রঙ নিয়ে খেলতে ভালোবাসা সৈনিক, এরপরের অনেকটা সময় জুড়ে ইসলামিক মৌলবাদী তথা সন্ত্রাসবাদী দেশ এবং সংগঠনগুলির জন্য হয়ে উঠলেন দুঃস্বপ্ন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *