ফটিক বারি যাচে রে – সোহারাব হোসেন
জীবন কথক
সমৃদ্ধ মন্ত্রীপুত্র
সুমনা রাজকন্যা
রীতিক সেনাপতিপুত্র
ঋতিসা রাজকবির কন্যা
ঋজু কোটালপুত্র
চাতক পাখি
পেয়াদা ভূত ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ
রাজপ্রহরী ১ম, ২য়
রাজা
মন্ত্রী
সেনাপতি
রাজকবি
কোটাল
প্রস্তাবনা
[ নেপথ্য থেকে জীবনকথকের গান শোনা যাচ্ছে ]
শোনো বলি শোনো কথা রঙিন বন্ধু ভাই।
উপকথার কাহিনি এক আজিকে শোনাই।।
ভূতের দেশের মহারাজার আজব ভারী চল।
দেশের মাঝে পুঁতিয়াছেন তেজস্ক্রিয় কল।।
বিপদ দেখে ছোট্টরা সব রাজার কাছে যায়।
রাজসভাতে যাবার ফলে মৃত্যু সাজা পায়।।
দুঃখেভরা সেই কাহিনির দুখের গাথা শোনো।
ছোট্ট সবুজ হৃদি-পাতায় দুঃখগীতি বোনো।।
(গান শেষ করে জীবনকথক মঞ্চে প্রবেশ করে)
জীবনকথক। ভূতরাজ্য। এখানকার সবাই ভূত।
রাজা-প্রজা-সেনাপতি-মন্ত্রী সব্বাই ভূত।
ছোট্ট বেঁটে চেহারা তাঁদের।
ভূতরাজ্যের উদ্যানে খেলা করছে
রাজকন্যা সুমনা, মন্ত্রীপুত্র সমৃদ্ধ,
সেনাপতিপুত্র রীতিক, রাজকবির কন্যা ঋতিসা,
কোটালপুত্র ঋজু। এখন শেষ বিকেল।
আকাশ রক্তবর্ণে রাঙিয়ে আছে।
চলো আমরা সবাই
ওই ভূত-শিশুদের দলে যোগ দিই।
প্রথম দৃশ্য
[ উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটি করতে করতে সমৃদ্ধ হঠাৎ সবাইকে থামিয়ে দিল। অন্যরা তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালে সমৃদ্ধ কথা শুরু করে ]
সমৃদ্ধ। শোনো শোনো, বন্ধুরা সব শোনো দিয়ে কান।
মাথায় আমার জন্মেছে এক মজার খেলার গান।।
সুমনা। মজার খেলা? বলো বন্ধু, বলো তাড়াতাড়ি।
সবিস্তারে না বললে দেব সবাই আড়ি।।
রাজকন্যার ঘোষণা এই, এটাই সোজা পথ।
কী গো বন্ধু, জানাও সবাই তোমাদের কী মত।।
রীতিক, ঋতিসা ও ঋজু। বলতে যদি দেরি কর অস্তে যাবে বেলা।
সন্ধে হলে থাকব না কেউ দেখতে তোমার খেলা।
সমৃদ্ধ। (সবাইকে পাক দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে)
আগের খেলায় মন ভরে না সব সেগুলো পুরোনো।
আজ খেলব নতুন খেলা সবারই মন জুড়োনো।।
নতুন খেলায় থাকলে সবাই রাজি।
আমরা দেদার খুশিমতো বহুরূপী সাজি।।
কেউ হই গাছপালা কেউ ফুল-পাখি।
তাদের মনের কথা সবে মিলে রাখি।।
গাছপালা নদী-নালা প্রজাপতি পাখি সব।
আমাদের বুকে ঢুকে জুড়ে দিক কলরব।।
কী গো ভাই বন্ধুরা, করে আছ কেন চুপ?
বলো কার সাজ কী, কে নেবে কার রূপ?
ঋজু। বাহারে কী মজা ভারী ধন্যি এ বুদ্ধি।
বড়ো হয়ে রাজা হবি তুই সমৃদ্ধি।।
হয় হোক আজ তবে থাক খেলা বন্ধ।
প্রাণ খুলে আজ নেব ফুল-পাখির গন্ধ।।
রীতিক ও ঋতিসা। কী ভীষণ মজা ওরে হুররে! আমরাও রাজি রাজি।
আয় সবে তাড়াতাড়ি ফুল-নদী-পাখি সাজি।।
সমৃদ্ধ। (নাচতে নাচতে সুমনার সামনে গিয়ে)
কী রে মেয়ে
গুম মেরে থাকলি যে, মনে কীবা ধন্ধ!
এ নতুন খেলা কি তোর হয়নি পছন্দ?
সুমনা। (উঠে দাঁড়িয়ে রীতিক-ঋতিসার হাত ধরে)
নারে ভায়া না অমন কথা আমি কইনি।
দল ছাড়া হব আমি সেকথা তো বলিনি।
চলো তবে খেলি গিয়ে বহুরূপী খেলাটি।
হাসি-গানে ভরে যাক এই মণিমেলাটি।।
সমৃদ্ধ। বেশ বেশ! চলো তবে খেলা হোক চলতি।
[ সবাই এবার গোল হয়ে বৃত্তা কারে দাঁড়ায়, তারপর একে একে নিজেদের ইচ্ছার কথা বলে ]
সুমনা। আমার সাধের ইচ্ছে-কথা জানতে চাও যদি।
আমি বলব সাজব ভাই ছোটো এক নদী।
পথে পথে পায়ে পায়ে এঁকে বেঁকে যাব।
(ভয় নেই) কুমির-কামোট নেই, তোমরাও নাবো।।
দুই-কুলে আম-জাম-কাঁঠালের ছায়া।
কলকল সদা চলি গায়ে মেখে মায়া।।
[ সুমনার কথা শেষ হলে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। একসঙ্গে বলে ওঠে- সাজের মহাবেশ। বাহবা বাহবা বেশ! তারপর সমৃদ্ধ এগিয়ে আসে রীতিকের দিকে ]
সমৃদ্ধ। বন্ধু তুই কী সাজতে চাস?
রীতিক। বড়ো সাধ এই মনে আমি হব ঝড়।
আমার তাণ্ডব দেখে সবাই থরথর।।
ঘর ভাঙি গাছ ফেলি আনি দুর্যোগ।
ভাঙার ভিতর ভাঙি পুরাতনী রোগ।।
ভাঙার কোপেতে জরা সরে যায় দূরেতে।
নতুন জীবন গড়ি ঝড়-জল-সুরেতে।।
[ রীতিকের কথা শেষ হতেই সবাই ঝড়ের অভিনয় করে। গাছ হয়ে ভেঙে পড়ে। তারপর সোজা হয়ে হাততালি দেয়। তারপর সমৃদ্ধ ঋতিসার সামনে গিয়ে বলে- ]
সমৃদ্ধ। এবার বলো বন্ধু তুমি হবে কী?
বনের লতা? গাছ? নাকি বনের পাখি?
ঋতিসা। আমি হব গাছ।
সবুজের সমারোহে সদা করি নাচ।।
ফুল-রঙে ভরে দেব মোর সব শাখা যে।
পাখিরা করিবে রব মেলি রাঙা পাখা যে।।
পথিকপ্রবর যদি হয় পথক্লান্ত।
ক্ষণিক বসিলে ঠিক হয়ে যাবে শান্ত।।
ছায়ার সুরেতে ফের গেয়ে যাব গান।
নিজদেহে গড়ে দেব পৃথিবীর প্রাণ।।
[ সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। সমৃদ্ধ ফের ঋজুর সামনে গেল ]
সমৃদ্ধ। চুপচাপ কেন ভাই, কী বা হতে চাও গো।
চটপট কথা বলো সাধ-গীত গাও গো।।
ঋজু। মেঘ হব, মেঘ হব এ আমার বড়ো সাধ।
পাখিসম ওড়াউড়ি নাই বাধা নাই বাঁধ।।
তোমাদের দলে যারা প্রাণখুলে হাসো।
এসো মোর কাঁধে চড়ো কল্পনায় ভাসো।।
সবে নিয়ে উড়ে যাব পৃথিবীর পার।
দুঃখ নেব শুষে দেব জীবন নির্ভার।।
সুমনা। নদী আর ঝড় হলাম আরও হলাম গাছ।
মেঘ হয়ে জুড়ে দিলাম প্রাণখোলা নাচ।।
আনন্দের কলতানে ছুটিতেছি সবে।
এবার তুমি বলো বন্ধু, তুমি কী বা হবে?
সমৃদ্ধ। গাছ ঝড় মেঘ নদী কিছু নাহি হব।
হই যদি হব আমি রূপকথা নব।।
পক্ষীরাজের ঘোড়ায় যাব তেপান্তরের মাঠ।
দেশে দেশে গড়ে দেব সুখ-নদীটির বাট।।
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমিটির গল্প বলে যাব।
কষ্টে পাওয়া অন্ন সবাই সমানভাবে খাব।।
দুখের বেলায় থাকব পাশে সুখে নেব সুখ।
আর্তজনের পাশে গিয়ে চিতিয়ে দেব বুক।।
ইচ্ছা হলে ডানায় উড়ে যাব যথা-তথা।
চাঁদনি রাতে মোহন সুরে বলব মনের কথা।।
হানাহানি খুনোখুনির কেটেই দেব মূল।
সবে মিলে হবই হব হরেক-রঙা ফুল।।
তোরা কি ভাই যাবি আমার রূপকথাটির দেশ?
এই নে তবে পরে নে সব যুবকরাজের বেশ।।
[ সমৃদ্ধর কথা শেষ হতেই সবাই তাকে ধন্য ধন্য করে জড়িয়ে ধরে। তাকে মাঝে রেখে, তার গা ছুঁয়ে ফুলের পাপড়ির মতো চিতিয়ে যায়। ঝুলে পড়ে। সবাই মিলে যেন একটা পূর্ণ বিকশিত ফুল হয়ে যায়। বিমূর্ত। কিছু সময় তারা সেভাবেই থাকে। তার মধ্যেই শুরু হয় তাদের কথা ]
সুমনা। রূপকথা ভাই তোমার কাহন শুনতে লাগে বেশ।
সত্যি কি ভাই আছে কোথাও এমন ধারার দেশ?
সমৃদ্ধ। আছে বোনটি আছে।
সত্যি সত্যি আছে সে দেশ তোমার মনের কাছে।।
ঋতিসা। যাব আমি যাব সে দেশ এখন যাব চলো।
ঈশান-অগ্নি নৈঋত-বায়ু কোন দিকেতে বলো।।
সমৃদ্ধ। রূপের দেশে যাবেই যদি নিয়েত করো ঠিক।
বুকের ভেতর বন্দি দেখো তাহার চতুর্দিক।।
রীতিক। পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে পাব কি তার দিশা?
যাব সেথা যাবই আমি কাটতে অমানিশা।।
সমৃদ্ধ। ঘোড়া ছোটাও ছোটাও ঘোড়া দূরন্ত সে গতি।
বুদ্ধিতে ভাই দেখতে পাবে আজব দেশের জ্যোতি।।
ঋজু, রীতিক, সুমনা, রীতিসা
সমবেত। শোনো তুমি শোনো বলি শোনো প্রাণের ভাই।
দলটি বেঁধে চলো তবে সেই সে দেশে যাই।।
সমৃদ্ধ। উপকথার দেশে যদি যেতে সবে চাও।
এসো তবে আমার সাথে তাহারই গীত গাও।।
[ সমৃদ্ধকে মাঝে রেখে সবাই এক সারিতে দাঁড়াল। দু-হাত নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করে গাইতে শুরু করল ]
সমবেত গান। ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।
[ হঠাৎ বাগানের এক দিকে একটি পাখির ডাক শোনা গেল- ফটিক জল, ফ-টিক জল! সবাই পাখিটাকে খোঁজে। এবার চাতক পাখি কথা বলে ]
চাতক। (নেপথ্য থেকে)
দিবানিশি ডাকি আমি দাও জল দাও জল।
স্বপ্নদেশ নাই কোথাও শুধু কথার ছল।।
সমবেত। (রীতিক, সমৃদ্ধ, ঋজু, সুমনা, ঋতিসারা দল বেঁধে একে অপরকে ছুঁয়ে)
কেবা তুমি
কেন বলো স্বপ্নদেশে রূপোকথা নাই।
কেন কণ্ঠে হতাশার বাণী শুনতে পাই?
[ চাতক দেখা দেয় ]
চাতক। শোনো ভাই শোনো তবে মনে বড়ো আপশোস।
পৃথিবীতে আসিয়াছে দুইমুখো রাক্ষস!!
সমবেত। রাক্ষস? কোথা সে?
চাতক। চারিদিকে, আকাশে ও বাতাসে!
[ সবাই চারিদিকে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকে। বাতাসের গন্ধ নিতে থাকে। কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে এগিয়ে আসে সমৃদ্ধ ]
সমৃদ্ধ। কেন তুমি অমন করে বুকচিরে ডাকছ।
ডাক শুনে মনে হয় তুমি শুধু কাঁদছ।।
চাতক। দুখিনী পাখি আমি জল যাচি চাতকে।
পান-জল কাড়িয়াছে সে ভীষণ ঘাতকে।।
সমৃদ্ধ। কেন ভাই, করেছ কি কোনো দোষ?
কেন বলো রাক্ষসে ফেলিয়াছে আক্রোশ?
বলো ভাই বলো তুমি, দুখগীত শুনব!
দুঃখের বিছনেতে সুখবীজ বুনব।
চাতক। পারবে? পারবে কি ঘোচাতে এ শৃঙ্খল?
বইবে কি এই দেশে সুমিষ্ট খাসা জল?
সমৃদ্ধ। পারব ঠিক পারব।
কখনো না হারব।।
তার আগে ভাই একটি কথা খোলসা করে বল।
এমন করে বুক চিরে চাস কেন ফটিক জল।।
চাতক। বলব কী শুনে রাখো মনে বড়ো কষ্ট।
সেই রাক্ষসে সব করে দেছে নষ্ট।
আছে তার ভয়ংকর হিংস্র বাহিনী।
সেকথার বাখানিতে আসে এই কাহিনি।।
সমবেত। বলো ভাই প্রাণ খুলে বলো রূপকথাটি।
শুনব ভাবব সবে শুনে শোকগাথাটি।।
চাতক। আজ আর নয়, ওই দেখো ভাই, অস্তে যে যায় বেলা।
কালকে আবার এই বাগানে পাতব নতুন খেলা।।
বলব আমি বলব রে ভাই, মনের কথা সবে।
আজকে নাচো প্রাণটি ভরে পাখির কলরবে।।
সমবেত। ঠিক আছে ভাহ, তোমার কথা নিচ্ছি পেতে মাথা।
কালকে এসে শুনব বসে তোমার শোক গাথা ।।
[ সারা মঞ্চ জুড়ে তখন চাতক ওড়াউড়ি করে জল চায়- ফটিক জল ফটিক জল। ছেলে মেয়ের দল তাকিয়ে থাকে ]
দ্বিতীয় দৃশ্য
[ রাজ-উদ্যানের বিকেল। ভূতুমপুরীর কজন পেয়াদা-ভূত ঢোকে কথা বলতে বলতে ]
১ম পেয়াদা। শোনো ভাই, শোনো।
মনটি দিয়ে শোনো।।
ভূতুমপুরীর রাজ।
করেন মহাকাজ।।
পাতেন মহা কল
জয় জয় মহাকল!
২য়। সত্যি কথা বল।
এ কি ধর্মনাশের কল?
৩য়। নয়রে ধর্মনাশ,
এ কল দেখায় বাঁচার আশ।।
৪র্থ। ও তো মহাশক্তির কল।
দেশের বেড়ে যাবে বল।।
২য়। অবাক হচ্ছি ভারী।
কলে কাটছে বনের সারি।।
১ম। সদা কলের স্তুতি কর।
পাবি ভূতুমরাজার বর।।
২য়। কলের আর কী আছে কাজ।
নিদান দেছেন কিছু রাজ?
৩য়। কল কাজ করে সশব্দ।
হবে শত্রুদেশটি জব্দ।
৪র্থ। কলের তেজটি ভীষণ বড়ো।
প্রাণ দেয় করে সে জড়।
[ রাজ-পেয়াদারা চলে যায়। রীতিক, সুমনা, ঋতিসা, ঋজু ও সমৃদ্ধরা গাছের আড়াল থেকে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বেরিয়ে আসে ]
সমৃদ্ধ। ওদের কথা শুনলি কি ভাই গাছের আড়াল থেকে?
কথার ভিতর কেমন যেন হুল রয়েছে বেঁকে।।
ঋজু। ভূতুমপরির বনের ভেতর বসতেছে যে কল।
কথার গন্ধে মালুম হল অন্যকিছুর ছল।।
রীতিক। কলের ছলে নষ্ট হবে দেশের যতেক গাছ।
কথায় ওদের লুকিয়ে ছিল এমন ধারার আঁচ।।
সুমনা। (রেগে গিয়ে সে সমৃদ্ধর সামনে এসে)
রাজার নামে ঝরাস কেন নিন্দাবাদের বন্যা।
ভুলিস কেন হই যে আমি ভূতুমরাজের কন্যা।।
সব তলিয়ে দেখা হোক।
নিন্দার বন্ধ করো ঝোঁক।।
[ সুমনার এই প্রস্তাব সকলের পছন্দ হয়। তারা সমবেত হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে সমস্বরে বলতে থাকে- ]
সমবেত। নিদান দে যারে ভাই চাতক।
ও কল বন্ধু, নাকি ঘাতক?
[ আকাশে চাতকপাখির উড়ে যাবার সাঁই সাঁই শব্দ হয়। সবাই সেদিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। তারপর সমৃদ্ধ উচ্চস্বরে চাতককে ডাকতে থাকে ]
সমৃদ্ধ। চাতক ভায়া, চাতক ভায়া কোথায় তুমি আছ।
কোনখানেতে বসে বসে ফটিকবারি যাচ।।
প্রমাণটি পেতে বন্ধু, ডাকতে হল তোমাকে।
রূপকথা কি শেষ করেছে মহা কল ঘাতকে?
[ খুব দূর থেকে ফটি-ক জল ফটি-ক জ-ল’ প্রার্থনা ভেসে আসে। আকাশে ডানা ঝাপটানোর শব্দ উঠল। চাতক নেমে এল ওদের মাঝে ]
চাতক। কী গো, আছ ভালো সব?
বন্ধ কেন কলরব?
ঋতিসা। কীবা কথা বলব?
কোন গীত গাইব?
চাতক। প্রাণটি খুলে হাসো।
ফুলটি ভালোবাসো।।
নইলে এই অকালে।
দুঃখ পাবে কপালে।।
কাল রাক্ষসে করতে জব্দ।
করতে থাকো প্রাণের শব্দ।।
সবাই। (বিস্মিত হয়ে)
রাক্ষস? সেই নাকি যে তোমার শত্রু।
আছে যার ভয়ানক ভয়াবহ বাহিনী?
সে তাড়ায় স্বপ্ন তব ভাঙে সুখ?
বলো তার কাহিনি!
[ হঠাৎ মঞ্চে ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সবাই অবাক হয়ে দেখে ]
সমবেত। কোথা থেকে এল ধূম নির্মল বাতাসে?
দাবানল লেগেছে কি, ধূম তাই আকাশে?
চাতক। ওই দেখো পুবদিকে সুশীতল বনেতে।
কালো ধূমে কালি দেয় গাছেদের মনেতে।।
ঋজু। বলো ভাই বলো ত্বরা এত কেন করো ছল।
অরণ্যে লেগেছে আজ মহা এক দাবানল।।
চাতক। না না ভাই, না না নারে, নহে এ তো দাবানল।
রাক্ষসে পাতিয়াছে ইয়াব্বড়ো জাদুকল।।
ওই কল মহাবল হলে কাছাকাছি রে।
কোনো পুরে বাঁচেনাকো মাছি-মশা-মানুষে।।
সবাই। বুকে ধরে এত বল।
ওটা কেমন জাদুকল?
চাতক। জাদুকল মহাবল আছে শোনো দুই মুখ।
একমুখে সুখ বেচে আর মুখে দেয় দুখ।।
ওই কল মহাবল কেড়েছে যে সুখপুরী।
হাঘরের মতো তাই জল চেয়ে আজ ঘুরি।।
দোয়েল-শ্যামা গাঙফড়িংয়ের সোনা দেশটি ছিল।
স্বপ্ন-সুখের রূপকথাটি কলেই খেয়ে নিল।।
সবাই। তোমার সোনার শ্যামল দেশ।
হল কেমন করে শেষ?
চাতক। ধনধান্য পুষ্প ভরা ছিল সোনার দেশ।
সুখের নদী নিরবধি ছিল না তার শেষ।।
ক্ষীণতোয়া নদীর তীরে ছিল আমার বাস।
শিউলি-জবা-অশোক-পলাশ-শরৎকালের কাশ।।
পুণ্যতোয়া নদীর ছিল মিষ্ট শীতল জল।
আম-জাম আর কাঁঠাল লিচু হরেকরকম ফল।।
সুমনা। ধনধান্য পুষ্পভরা দেশের গানটি গাবে?
পুণ্যতোয়া নদীর তীরে আমায় নিয়ে যাবে?
চাতক। ওই কল ঢেলেছে যে বিষ-তেল নদীতে।
রাক্ষস রাজা রয় মহাসুখে গদিতে।।
সুশীতল নদীজল কালো হল, হল লাল।
জীবনধারক নদী, জীবনের হল কাল।।
আজ আর নেই বেঁচে সে আমার সোনা দেশ।
রাক্ষসে করিয়াছে সুখ তার সব শেষ।।
ঋতিসা। ধনধান্য পুষ্পভরা দেশের গানটি গাবে?
শিমুল-জবা-শিউলি ফুলের দেশে নিয়ে যাবে?
চাতক। (ঋতিসার দু-হাত ধরে)
গোদাপেয়ে রাক্ষসে করেছে যে হুলুস্থুল।
দলে গেছে পিষে গেছে ফুটে ওঠা সব ফুল।।
ফুটফুটে জোছনায় ফুলঝুরি ফোটে না।
গান গাওয়া অলিগুলি দলে দলে জোটে না।।
আজ আর নেই বেঁচে সে আমার সোনাদেশ।
রাক্ষসে করিয়াছে সুখ তার সব শেষ।।
ঋজু। ধনধান্য পুষ্প ভরা দেশের গানটি গাবে?
দোয়েল-শ্যামা-বুলবুলিটির দেশে নিয়ে যাবে?
চাতক। সূর্যডোবা সন্ধ্যাবেলা নীড়েই ফিরে সব।
সুখপুরীটির যাত্রী হয়ে করত কলরব।।
প্রাণঘাতী ওই ব্যাধের তিরে সব হয়েছে বন্ধ।
দেশের রাজা দেখে নাকো চোখ করেছে অন্ধ।।
সমৃদ্ধ। ধনধান্য পুষ্পভরা দেশের গানটি গাবে?
আড় বাঁশিটির সুরে চলা দেশে নিয়ে যাবে?
চাতক। পশুপাখির চিহ্নটি নেই মানুষ তো ভাই দূর।
সোনার ভূমি ছাই হয়েছে কয়লা-কালো পুর।।
[ এবার কথা শেষ করে চাতক এককোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তা দেখে সবাই বলে- ]
সবাই। বলো চাতক বলো আবার থেমো না ভাই যেন।
সোনার দেশের রূপটি এখন এমন হল কেন।।
চাতক। যত বলি তত বাড়ে বুকের ক্রন্দন।
আমাদের দেশে ছিল ঘন চন্দন বন।।
সেই বন পড়ে গেল রাক্ষস-নজরে।
চন্দন চাই,আর চাই বিনা ওজরে।।
সবাই। রুপোকথার মানুষ কি ভাই ছিল বোকা হাঁদা?
চুপচাপ মেনে নিল, দিল নাকো বাধা?
চাতক। ভারী খেল দেখাল যে ওই কল-যন্তর।
মুখে মুখে ছড়াল সে উন্নতি-মন্তর।।
ওই কল ডিম পাড়ে পরমাণু বোমাযান।
যুদ্ধেতে জয় হবে দেশ পাবে মহামান।।
সবাই। তারা করল সবাই ভুল।
কেউ ভাবল নাকো মূল?
তার পরের কথা বলো!
রূপকথাটির কী হল?
চাতক। রাক্ষসে ভোগে মাতে চন্দন সুবাসে।
মুনাফার বাহুবলে খুকখুক সে হাসে।।
চন্দন দিনে দিনে কমে গেল রাজ্যে।
রাক্ষসে বিষ দিল নেই সুখ আর যে।।
সমৃদ্ধ। এই করে বার বার নেই কোনো প্রতিকার
বলো ত্বরা বলে দাও ধন্দ।
কোন পথে পাব বল বন্ধ হবে সব ছল
হয়ে যাবে খেল তার বন্ধ?
চাতক। শোনো মোর মত।
একটাই পথ।।
বলি সবে দল বেঁধে, শোনো কথা মহারাজ।
কল-কারসাজিতে যে কলঙ্কিত তোমা তাজ।।
ঠিক করে বলো ভাই একসাথে যাবে সব?
করে প্রতিবাদী রব?
সবাই। খুবই রাজি আমরা।
নাচে প্রাণ ভোমরা।।
তৃতীয় দৃশ্য
[ ভূতুমপুরীর রাস্তা। রাজ-প্রহরীরা ত্রস্ত ছোটাছুটি করছে। তাদের মধ্যে কথা চলছে ]
১ম। শুনেছ কি গুপ্ত খবর কেহ?
রাজপুরীতে জেগেছে বিদ্রোহ।
২য়। বিদ্রোহের নিশান ওড়ায় যারা।
রাজ-গুলিতে যাবে কি ভাই মারা?
১ম। যদি কেহ করে রাজ-নিন্দা।
নিদান আছে কবর হবে জিন্দা।।
২য়। রাজার গলাটি বড়ো চড়া।
লঘু পাপে শাস্তি দেন কড়া।।
১-ম। কাকে তুমি বলো লঘু পাপ।
রাজদ্রোহী কেন পাবে মাপ?
২-য়। কোথায় কী হয়েছে শুনি বল।
কেনই বা জাগে বিদ্রোহী দল?
১ম। বনেতে বসেছে কলখানি।
কেহ কেহ নিচ্ছে না মানি।।
২য়। কলের বিরুদ্ধে কারা যায়।
মৃত্যুপথে কেন ধায়।।
১ম। রাজা-কলে পেতেছে নাকি সন্ধি।
কল নাকি মানুষ মারার ফন্দি।।
২য়। এমন কথা রটায় কারা ভাই।
তাদের কি মৃত্যুভয় নাই?
[ হঠাৎ দূর থেকে বিদ্রোহের গান শোনা গেল ]
সমবেত গান। চল চল চল
বুকের ভেতর বাজেরে বল
আমরা যাচিব শীতল জল
ভাঙিব বিষের কল।।
চল চল চল …।
১ম। ওই দেখ তারা সব আসছে।
বাতাস বাজিয়ে ওই হাসছে।
[ ঋজু, রীতিক, ঋতিসা, সুমনা ও সমৃদ্ধ গান করতে করতে ঢুকল। তাদের গান শেষ হলে প্রহরী তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। পিছনে ২য় প্রহরী যোগ দেয় ]
১ম। কেন করো মিছিমিছি শব্দ?
না থামিলে করে দেব জব্দ।।
সবাই। পারো যদি করো আগে জব্দ।
ওই বিষ কল ভাঙো, করো তারে স্তব্ধ।।
১ম। কল কেন ভাই বিষ?
ও তো মোহন বাঁশির শিস।
২য়। ও কল কল্পনারই ফানুস।
কলের তালে নাচলে রে ভাই ভূতরা হবে মানুষ!!
সবাই। তোমরা জানো নাকো।
সত্য কেন ঢাকো।।
কথায় দিয়ে ধোঁকা।
বুঝিয়ো নাকো বোকা।।
ওটা তেজস্ক্রিয় কল।
ওযে মানুষ মারার ছল।।
ও কল পুতুল সদা নাচায়।
কলে কাউকে নাহি বাঁচায়।।
সবকে করে শেষ।
নষ্ট করে দেশ।।
১ম। ও কল রাজার প্রতিনিধি।
কলের নিন্দা করো যদি।।
মাথায় মেরে ডান্ডা
করেই দেব ঠান্ডা।।
২য়। বাঁচতে যদি চাও।
কলের গুণগীতি গাও।।
নইলে মহারাজা
দেবেন চরম সাজা।।
সবাই। কলের খেলায় মত্ত আছেন রাজা।
ভয় করি না যা খুশি দিন সাজা।
[ সবাই প্রহরীদের বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। প্রহরীরা বাধা দেয়। ঋতিসা, সুমনা, সমৃদ্ধ, রীতিক, ঋজুরা গান ধরে- বুকে আন বল ভাঙব ঘাতক কল ]
চতুর্থ দৃশ্য
[ স্থান-রাজসভা। রাজা, মন্ত্রী, সেনাপতি, রাজকবি সবাই যে যার আসনে বসে আছেন। সেখানে ঋজু, সমৃদ্ধ, ঋতিসা, সুমনা, রীতিকদের শৃঙ্খলিত অবস্থায় ধরে আনল রাজপ্রহরীরা। ওরা কল ভাঙার গান গাইছিল- চল চল চল/বুকের ভেতর বাজেরে বল আমরা যাচিব শীতল জল ভাঙিব বিষের কল। চল চল চল… ]
রাজা। কীবা খবর আনিয়াছ পুত্র ও কন্যারা।
শয়তানি বোল সবে কেন বলো এই ধারা?
সমৃদ্ধ। আমরা রাজা, শয়তান তো নই।
রাজা সনে একটি কথা কই।।
দেশে এক বসিয়াছে কল।
আমাদের বিষাইছে জল।।
মহারাজা লক্ষ করেন যদি।
দেখতে পাবেন কালো জলের নদী।।
নদীর গতির ধারা মজে গেছে।
ওই কল সবই খেয়ে নেছে।।
নদীজলে নেইকো শীতলতা।
বিষকালো জল যে যথাতথা।।
ওই জল করি যদি পান।
নিভে যাবে জীবনের গান।।
কল বন্ধের আবেদন তাই রাখি।
আমরা যে সব কষ্টেভরা পাখি।।
রাজা। তোমরা অবোধ সোনার ছেলেমেয়ে।
থাকবে সদাই ফুর্তিতে গান গেয়ে।।
এত সব রাজ-চালনায়।
মাথা দেওয়া নয় ভালো নয়।।
কে বলে বিষ হবে জল।
এ জেনো দুর্বৃত্তের ছল।।
সুমনা। রূপকথার এক ছিল সবুজ দেশ।
আজব কলে করেছে যে শেষ।।
সেই সে পুরীর শ্যামল সবুজ গাছ।
নদীর জলে ছিল যতেক মাছ।।
সবই পুড়ে হয়েছে ছারখার।
জনমানব নেই সে দেশে আর।।
আমার দেশও পুড়বে অমন পোড়া।
বাচ্চা-শিশু জন্মাবে সব খোঁড়া।।
গভীর মনে ভাবি বসে বসে।
মানুষ ফসল সব খাবে রাক্ষসে।।
আমরা যারা অবোধ সুবোধ আছি।
কেমন করে বলুন তবে বাঁচি?
রাজা। সদাই ভাবি তোদেরই প্রগতি।
কলের তেজে আসিবে উন্নতি।।
অনুর পরে পরমাণুর বলে।
দেখবি এদেশ কেমন ধারা চলে।।
ঋজু। পরমাণুর ওই যে আজব কল।
ক্ষতিকারক উহার বর্জ মল।।
কল আসলে মহাকংস।
বন-পাখি-প্রাণ করে ধ্বংস।।
দেশটা মোদের হবে মরুভূমি।
করবে কীগো তখন রাজা তুমি?
রাজা। বাড়ি যাও, রাজা পরে রাখো সবে আস্থা।
কলের মালিক-জনা গড়ে দেবে রাস্তা।।
কলের নলের যত পরমাণু শক্তি।
তারি পরে রাখো সবে সুবিপুল ভক্তি।।
চুপিচুপি বলি আজ গোপনে খবর খাস।
পরমাণু-ভেলকিতে শত্রুরা হবে নাশ।।
রীতিক। এত্তো কিছুর পরেও রাজার কাছে
ছোট্ট একটা নিবেদন আজ রাখি।
অরণ্যানী কলের অধীন হলে
কোনখানেতে থাকবে বনের পাখি।।
দোয়েল-শ্যামা-চন্দনা আর টিয়ে
কোনখানেতে গাইবে বসে গান।
চড়াই-শালিখ-বুলবুলি আর ফিঙে
কীভাবে আর করবে উতল প্রাণ।।
খবর আছে অনেক দেশে গিয়ে
কল খেয়েছে পাখির উপকথা।
সেই কলটি আমার দেশে এসে
ঘটাবে কী রীতির অন্যথা?
সেনাপতি। কলের মালিক রাজার অতিথ জেনে
নিন্দে থেকে মুখ সামলাও ছেলে।
যতই তোমরা প্রাণের পরশ হও
বেফাঁস কাজে বন্দি হবে জেলে।।
মন্ত্রী। তোমার আমার স্বার্থে কারো নয়
কল বসেছে দেশের সু-মঙ্গলে।
কু-মতলবের পথটি সবাই ছাড়ো,
নইলে দেব কলের মুখে ফেলে।।
রাজকবি। যদি তোমরা নিজের ভালো চাও
এই পতাকা হাতে তুলে নাও।
কল মাহাত্ম্যের শব্দ তোলো জোরে
কলের নামে জয়গীতিটি গাও।।
সবাই। (একত্র হয়ে দু-হাত পাখির ডানার মতো নাচিয়ে নাচিয়ে)
আমরা খেলার ফুলের বাগান চাই।
মনের সুখে খুশির গীতটি গাই।।
আমরা তো চাই গাছের ভরা-সবুজ।
কতকাল আর থাকব এমন অবুঝ।।
[ রাজা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেলেন। তাঁর আসন ছেড়ে মন্ত্রী, সেনাপতিদের সামনে গিয়ে বললেন- ]
রাজা। মহামন্ত্রী মহা সেনাপতি।
বুঝলে কিছু সন্তানদের মতি?
মন্ত্রী ও সেনাপতি। ছোট্ট অবুঝ সন্তানেরা সব
কেমন করে বলছে এমন কথা?
মনে হচ্ছে এর আড়ালেও আছে
একটা কোনো শত্রুদেশের মাথা।
রাজা। মনে মনে সন্দেহ তাই করি
শত্রু দেশের হাত আছে নিশ্চিত।
ছোট্ট এরা-ওদেরই চক্রান্তে
হারিয়েছে সম্বিত।।
রীতিক, ঋজু, ঋতিসা, সুমনা
ও সমৃদ্ধ। বলছি রাজা, বলছি জোরের সাথে
কারোর কোনো কারসাজিটি নাই।
আমরা শুধু নতুন করে আবার
উপকথার দেশটি ফিরে চাই।।
রাজকবি, মন্ত্রী ও সেনাপতি। সোনার ছেলে সোনার মেয়ে তোরা
এসব ছেড়ে খেলাঘরটি সাজা।
দেশটিকে ঠিক সোনায় মুড়ে দেবে
আমাদের এই অনাথবন্ধু রাজা।।
সবাই। মিথ্যে কথা কও কেন মন্ত্রী
তুমিও ঠিক ধ্বংসেরই যন্ত্রী!!
রাজা। (চিৎকার করে)
এদের বন্দি করো।
কারাগারে ভরো।।
শাস্তি দিলাম জবর।
সবার জ্যান্ত কবর।।
রাজকবি ও কোটাল। (রাজার পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে)
উক্তি তুলুন রাজা।
বাতিল করুন সাজা।।
অবুঝ ওরা অজ্ঞান।
ওরা আমাদেরই সন্তান।।
রাজা। কিছু করার নেই।
অনেক ভেবেই বিধান দেই।।
এরা উলটাতে চায় দেশ।
তাই রাজ-কথাটিই শেষ।।
[ রাজপ্রহরী এসে রীতিক, সুমনা, ঋতিসা, ঋজু সমৃদ্ধদের বেঁধে ফেলল। তাদের নিয়ে চলেও গেল। মন্ত্রী সেনাপতি রাজকবিরা আর্তচিৎকার ওঠে। পরে সবাই চলে যায়। ফাঁকা মঞ্চে চাতক ওড়াউড়ি করে। পিছন থেকে জীবনকথক বলতে থাকে- ]
জীবনকথক। ভূতুমপুরী রাজ্যের অমরাবতী বনের সৌন্দর্য আর নেই।
আকাশে সর্বত্র ধোঁয়া আর ধোঁয়া। গাছপালা তার সবুজ রং
হারিয়ে শুকিয়ে গেছে। নদীগুলো মজে গেছে। জল নেই।
গভীর নলকূপে যদিও বা একটু জল আছে, তবে তা খয়েরি
রঙের, কালোও। চারিদিকে পাখ-পাখালির মৃত কঙ্কাল।
পচা গন্ধ। তার মধ্যে একা একা চরে বেড়াচ্ছে ওই চাতক।
চরে বেড়ায় আর জল চায়- ফ-টি-ক জ-ল ফ-টি-ক জ-ল।
চাতক। ধনধান্য পুষ্পভরা দেশটি কোথাও নাই।
শীতল মধুর জলের ধারা আর পাব না ভাই।।
কষ্ট বুকে হরেক জ্বালা ফটিক বারি যাচি।
প্রাণ-জুড়ানো জলটি পেলে আরও দু-দিন বাঁচি।।
ভূতুমপুরীর বনে ছিল বন্ধু কজন ভালো।
রাজার ভীষণ নির্দেশে সব পুড়ে হল কালো।।
এবার আমি উড়ে যাব ভিন্ন দেশের ঠাঁই।
রূপকথাটির দেশের খবর কোথায় গেলে পাই।।
[ চাতক চলে গেল ফটিক বারি যাচতে যাচতে- ফটিক জল, ফ-টিক জল, ফ-টি-ক জ-ল! যবনিকা পড়ল ]