ফটিকের কেরামতি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

ফটিকের কেরামতি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

মাঝরাত্তিরে শিয়রের জানালাটায় মৃদু ঠকঠুক শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল ফটিকের। ঘুম তার খুব পলকা। সে উঠে হারিকেনের আলোটা উসকে দিয়ে জানালাটার দিকে সভয়ে চেয়ে রইল। আঁট করে বন্ধ রয়েছে পাল্লা। এত রাতে কারও আসার কথা তো নয়। চোর-ডাকাত যে নয় তা ফটিক জানে। কারণ, চোরের বাড়িতে চোর আসে না। তবে কে হতে পারে?

ফটিক গলাখাঁকারি দিয়ে খুব বিনীতভাবেই জিজ্ঞেস করল, “কে আজ্ঞে? কী চাইছেন।”

ওপাশ থেকে একটা ভারী গলা চাপা স্বরে বলল, “জানালা খোলো। দরকার আছে।”

“কী দরকার?”

“তোমার কিছু রোজগার হবে।”

রোজগার জিনিসটা ফটিক বড় ভালবাসে। রোজগারের মতো জিনিস নেই। গত দিন দশেক তার এক পয়সাও রোজগার হয়নি। দিনের বেলা সে বেড়া বেঁধে বেড়ায়। রাতের বেলা একটু-আধটু চুরিটুরির চেষ্টা করত। দুটোর কোনওটাতেই তার সুবিধে হচ্ছে না। কচু-ঘেঁচু খেয়ে দিন কাটছে। একা-বোকা মানুষ বলে চলে যায়।

ফটিক বুকে একটু সাহস এনে জানালাটা খুলল। কিন্তু বাইরে অন্ধকারে কাউকে দেখা গেল না। ফটিক একটু ভয়ে ভয়ে উঁকিঝুঁকি দিল। হঠাৎ দস্তানা-পরা একখানা হাত তলার দিক থেকে উঠে এসে কাগজে মোড় একটা প্যাকেট ছুড়ে দিল তার পায়ের কাছে। ফটিক চমকে উঠে নিচু হয়ে প্যাকেটটা কুড়িয়ে নিল। বেশ ভারী জিনিস।

বাইরে থেকে ভারী গলাটা বলল, “ওটা একটা পিস্তল। গুলি ভরা। সঙ্গে পাঁচশো টাকা আছে। কাজটা করতে পারলে আরও পাঁচশো।”

পিস্তল! ফটিকের হাত-পা কাঁপতে লাগল। বলল, “আজ্ঞে এ যে ভয়ংকর জিনিস।”

“শুনতে ভয়ংকর, ব্যবহার করা খুব সোজা।”

“কাজটা কী বলবেন?”

“বঙ্কুবাবুর মেয়ের বিয়ে পরশুদিন। হাজার লোকের নেমন্তন্ন। দেড়শো যাত্রী আসবে। বাজিটাজি ফাটবে। তোমার কাজটা হল, গোলেমালে হরিবোল। ভিড়ের মধ্যে এক ফাঁকে বঙ্কুবাবুর কাছাকাছি চলে যাবে। নলটা পিঠের বাঁ দিকে ঠেকাবে, ঘোড়াটা টেনে দেবে, ব্যস।”

“ওরে বাবা।” ফটিক ঘামতে লাগল।

“কোনও ভয় নেই। সন্ধে সাতটা থেকে বাজি ফাটবে। শব্দটা কেউ লক্ষই করবে না। কাজ সেরে পিস্তলটা কোমরে গুঁজে ফেলবে। তাড়াহুড়ো না করে ভিড়ে মিশে দাঁড়িয়ে থাকবে, আহা-উহু করবে। থানা থেকে পুলিশ আসতে অনেক দেরি হবে। ততক্ষণে বেরিয়ে নদীর ধারে বটতলার বাঁধানো চাতালের কাছে গিয়ে দেখবে ইট চাপা দেওয়া আরও পাঁচশো টাকা রয়েছে। টাকাটা নিয়ে পিস্তলটা ওখানেই রেখে চলে আসবে। তোমার কিছু হবে না। কোনও ভয় নেই। কিন্তু আমাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনদিনের মধ্যে তোমাকে খুন করা হবে।”

ফটিক আঁতকে উঠে বলল, “তা বঙ্কুবাবুকেও কেন আপনারাই সাবাড় করছেন না? আমি যে। জীবনে খুনখারাপি করিনি।”

“আমাদের অসুবিধে আছে। কাজটা তোমাকেই করতে হবে।”

“আমি কি পারব আজ্ঞে?”

কেউ কোনও জবাব দিল না। একটা পায়ের শব্দ দূরে চলে গেল।

ফটিক ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। তার মাথা ঘুরছে, গলা শুকিয়ে কাঠ, বুক এমন ধড়ফড় করছে যেন তবলার লহরা, খানিকক্ষণ বসে থেকে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেল। তারপর মোড়কটা খুলে পিস্তলটা দেখল। এসব জিনিস সে চোখেও দেখেনি আগে। বিদঘুটে চেহারা, তাকালেই ভয় হয়।

রাতে আর ফটিকের ঘুম হল না। সারা রাত আকাশ-পাতাল ভেবে মাথাটাই গরম হয়ে গেল। খুনখারাপি তার লাইন নয়। রক্ত দেখলে সে এখনও ভিরমি খায়। সে সামান্য চুরিটুরির চেষ্টা করে বটে, কিন্তু তাতেও তার হাতযশ নেই। নিতান্ত অভাবে পড়েই চেষ্টা করতে হয়, নইলে চুরিও তার লাইন নয়। দুটো পেটের ভাতের জোগাড় হলে সে কস্মিনকালেও চুরি করত না। কিন্তু এরা যে তাকে খুনোখুনিতে কেন নামাতে চাইছে তা সে বুঝতে পারছে না। খুন না করতে পারলে খুন হতে হবে— কী সব্বোনেশে কথা। ঘনঘন জল খেতে খেতে তার পেট জয়ঢাক হয়ে গেল, তবু বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

সকালবেলা মাথায় হাত দিয়ে অনেকক্ষণ দাওয়ায় বসে রইল ফটিক। তার বাটিভরতি পান্তা পড়ে রইল। খিদেটা চাগাড় দিচ্ছে না। কাল বঙ্কুবাবুর মেয়ের বিয়ে। আর কালকেই তাঁকে খুন করতে হবে।

মেয়ের বিয়ে বেশ জাঁকিয়েই দিচ্ছেন বঙ্কুবাবু। তাঁর মেলা পয়সা। চার-পাঁচ রকমের ব্যাবসা আছে। বঙ্কুবাবুর বাড়ি ফটিকের একরকম গা ঘেঁষেই। রোজ দু’বেলা যাতায়াতের পথে সে দেখেছে, বিয়ের মস্ত আয়োজন হচ্ছে। বিশাল শামিয়ানা, দেবদারু দিয়ে তোরণ হচ্ছে, নহবত বসেছে। মেলা লোক খাটছে দিনরাত। দুঃখের বিষয়, এ-বিয়েতে ফটিকের নেমন্তন্ন নেই। হওয়ার কথাও নয়। তার মতো লোককে পৌঁছে কে?

ভয়ে ফটিকের কেমন যেন হাঁফ ধরে যাচ্ছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কিন্তু কী করবে তা বুঝতে পারছে না। বন্ধুবাবুর মতো পাজি লোক মারা গেলে তার কিছু যায়-আসে না। কিন্তু খুন করাটায় তার ঘোর আপত্তি হচ্ছে।

ফটিকের মাথায় নানা ফিকির খেলছে। কিন্তু কোনওটাই মনোমতো নয়। একবার মনে হল, পালিয়ে যাবে। কিন্তু পালানোটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যারা তার পেছনে লেগেছে, তারা হয়তো নজর রাখছে। পুলিশের কাছে যাবে? গিয়ে লাভ নেই, পুলিশ তার কথা বিশ্বাস করবে না। উলটে পিস্তল রাখার দায়ে হাজতে পুরবে। বঙ্কুবাবুকে সব ভেঙে বলবে? লাভ কী? তিনি খুন না হলে সে নিজেই যে খুন হবে।

দুপুর অবধি মাথাটা পাগল পাগল লাগল। তারপর নুন-লঙ্কা-তেঁতুল দিয়ে পান্তাটা খেয়ে নিল সে। পেট ঠান্ডা হল। মাথাটাও যেন একটু শীতল লাগতে লাগল। দাওয়ায় মাদুর পেতে শুয়ে সে ভাবতে লাগল। কে হতে পারে লোকটা? খুন করতে চায় কেন? তাকে দিয়েই খুনটা করাতে চায় কেন? বঙ্কুবাবুকে মেরে কার কী লাভ?

হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে উঠল ফটিক। একখানা কথা মনে পড়ে গেল তার। মাসতিনেক আগে বঙ্কুবাবুর বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে মুনিশ খাটানো হয়েছিল। সেই দলে ফটিকও ছিল। সারাদিন খাটিয়ে মাত্র পাঁচটি টাকা মজুরি দিয়েছিলেন বঙ্কুবাবু। খাবার জুটেছিল চিঁড়ে আর গুড়। তবে বড় ঘরের জানালার নীচে আগাছা কাটার সময় ফটিকের কানে একটা কথা এসেছিল। বঙ্কুবাবু যেন কাকে বলছেন, “ওই গ্যাঁড়াই আমাকে মারবে একদিন। তারপর সব গাপ করবে।”

এই গ্যাঁড়াটি কে তা ফটিক জানে না। কিন্তু চুপ করে বসে থাকলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। সে পিস্তলটা বিছানার তোশকের তলায় লুকিয়ে রাখল। পাঁচশোটা টাকা ট্যাঁকে গুঁজল। গায়ে জামা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

বঙ্কুবাবুদের বাড়িতে সানাই বাজছে। মেলা লোকলশকর খাটছে। তোরণে ফুলের তৈরি প্রজাপতি বসানো হয়েছে। লুচি ভাজার গন্ধে বাতাস ভুরভুর করছে। ফটিক বাড়িতে ঢুকে চারদিক দেখতে লাগল। তার মতো আরও অনেকেই দেখতে এসেছে। ফটকে দারোয়ানদের তেমন কড়াকড়ি নেই।

শামিয়ানার ওপরে বড় বড় ঝাড়লণ্ঠন লাগানো হচ্ছে। ঘাড় উঁচু করে দেখছিল ফটিক। হঠাৎ কে যেন বজ্রমুষ্টিতে তার ডান হাতের কনুই চেপে ধরে বলে উঠল, “এই যে।”

ফটিক এমন আঁতকে উঠল যে মুর্ছা যাওয়ার জোগাড়। তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আজ্ঞে, আমি না। আমি কিছু করিনি।”

বঙ্কুবাবু কিন্তু মোটেই বিচলিত হলেন না। হাসি হাসি মুখ করে বললেন, “তুই ফটিক না?”

“যে আজ্ঞে।”

বঙ্কুবাবু হাসি হাসি মুখ করেই বললেন, “একটু উপকার কর তো বাবা। কুমুদের দোকানে পাঁচ সের সুপুরি রাখা আছে, আনার লোক নেই। এক ছুটে গিয়ে নিয়ে আয় তো।”

ফটিক ধাতস্থ হল। আঁতকে ওঠার ভাবটা চট করে কেটে? গেল তার। কাল তো এ লোকটাকেই খুন করার কথা। ঘাবড়ালে চলবে কেন। সে হঠাৎ বলে বসল, “লোক নেই কেন বঙ্কুবাবু? গ্যাঁড়াকেই তো পাঠাতে পারেন।”

বঙ্কুবাবু অবাক হয়ে বললেন, “গ্যাঁড়া, গ্যাঁড়াটা আবার কে?”

ফটিক সামান্য ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “ওই যে, আপনার কী যেন হয়।”

আন্দাজে ঢিল মেরেছিল। বোধহয় লাগল না।

বঙ্কুবাবু অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ভ্রূজোড়া কুঁচকে তার দিকে চেয়ে বললেন, “তোর তো সাহস কম নয়! জামাইকে দিয়ে সুপুরি আনাতে বলছিস। আর আমার বড় জামাই কি তোর ইয়ার যে গ্যাঁড়া-গ্যাঁড়া করছিস?”

ফটিক হাতজোড় করে বলল, “আজ্ঞে আমরা মুখ্যুসুখ্যু মানুষ, কত ভুলভাল বলে ফেলি।”

“যা সুমুখ থেকে। সুপুরিটা নিয়ে আয়।”

পথে হাঁটতে হাঁটতে দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফটিক। বঙ্কুবাবুর দুটো মেয়ে, ছেলেটেলে নেই। বঙ্কুবাবু মারা গেলে যারা ওয়ারিশান। বড় জামাই গ্যাঁড়া। তাকে চেনে না ফটিক। তবে একটা গন্ধ পাচ্ছে।

সুপুরি পৌঁছে দেওয়ার পর বঙ্কুবাবু একটা সিকি বকশিশ দিলেন। তারপর হাসিমুখ করেই বললেন, “হঠাৎ গ্যাঁড়ার কথা বললি কেন বল দিকি!”

“আজ্ঞে বুঝতে পারিনি।”

বঙ্কুবাবু একখানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপনমনেই বললেন, “অকালকুষ্মাণ্ড। ছিবড়ে করে ছেড়ে দিচ্ছে আমাকে। আজ এটা দাও, কাল সেটা দাও।”

ফটিক বশংবদ দাঁড়িয়ে থেকে শুনে নিচ্ছিল।

“কী শুনছিস দাঁড়িয়ে?”

“আজ্ঞে গালাগাল দিচ্ছেন তো, চলে গেলে বেয়াদপি হবে যে।”

“গালাগাল তোকে দিইনি।”

“তবে কাকে?”

“নিজের কপালকে। ওই যে দেখছিস না, চেহারা বাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওই আমার কপাল।”

যাকে দেখিয়ে দিলেন বঙ্কুবাবু তার বেশ লম্বা-চওড়া চেহারা। রং ফরসা, কোঁচানো ধুতি আর মুগার পাঞ্জাবি পরে ঘুরে ঘুরে ব্যবস্থা দেখছে।

“বেশ জামাইটি আপনার বন্ধুবাবু।”

“হ্যাঁ, একেবারে মনের মতো। এখন যা তো। জ্বলছি নিজের জ্বালায়।”

ফটিক লোকটিকে ভাল করে দেখে নিল। যাতে ভুল না হয়। তারপর ধীরেসুস্থে ফিরে এল। মনটা একটু হালকা লাগছে।

মাঝরাতে আবার জানালায় ঠকঠক। ফটিক জানালা খুলে অমায়িক গলায় বলে, “যে আজ্ঞে।”

ভারী গলা বলল, “মনে আছে তো।”

“খুব মনে আছে। বাকি টাকাটা দেবেন নাকি?”

“কাল পাবে। জায়গামতো। কাজে যদি গন্ডগোল হয় তো মরবে।”

“আর বলতে হবে না।”

পরদিন ফটিক দোকানে গিয়ে ভাল করে সাঁটিয়ে খেল। দুপুরে ঘুমোল, বিকেলে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে গিয়ে হাজির হল বঙ্কুবাবুর বাড়িতে। সারা বাড়ি আজ যেন রাজবাড়ির মতো দেখাচ্ছে। আলোয় আলোয় স্বপ্নপুরী। ভিড়ে ভিড়াক্কার। বরসহ বরযাত্রীরাও সব এসে গেল সন্ধের মুখেই। গোলাপজল ছিটোনো হচ্ছে চারদিকে। বঙ্কুবাবু সবাইকে “আসুন, বসুন” করছেন। পাশে গ্যাঁড়া। সেও খুব সেজেছে।

বাজি পোড়ানো শুরু হল। বাজির শব্দে চারদিক একেবারে গমগম করতে লাগল। হঠাৎ ফটিক লক্ষ করল, গ্যাঁড়া এই এত ভিড়ের মধ্যেও আড়চোখে তাকে নজরে রাখছে।

ফটিক মনে মনে হাসল। গ্যাঁড়া এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধুবাবুর কাছ থেকে নড়ছে না।

লোকজন যখন শামিয়ানার বাইরে এসে ভিড় করে ঊর্ধ্বমুখ হয়ে আকাশে আতশবাজি দেখছে, ঠিক সেইসময় ফটিক এগিয়ে গিয়ে গ্যাঁড়ার পেছনে দাঁড়াল। নলটা তার পিঠে ঠেকিয়ে বলল, “ইষ্টনাম স্মরণ করুন বঙ্কুবাবু।”

গ্যাঁড়া হঠাৎ আঁতকে উঠে বলল, “আমি বঙ্কুবাবু নাকি? আহাম্মক কোথাকার! ওই তো বঙ্কুবাবু।”

ফটিক মাথা চুলকে বলল, “ইস, বড্ড ভুল হয়ে যাচ্ছিল তো।”

গ্যাঁড়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “গাধা কোথাকার! যাও যাও, কাজ সারো, আর সময় নেই।”

ফটিক একগাল হাসল, “বটে! তা টাকাটা জায়গামতো আছে তো!”

গ্যাঁড়া মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, “আছে।”

“ঠিক তো!”

গ্যাঁড়া ঘুরে তার গালে একখানা চড় কষিয়ে দিয়ে বলল, “বেয়াদপ কোথাকার!”

ব্যাপার দেখে বঙ্কুবাবু এগিয়ে এলেন, “এ কী! কী হয়েছে?”

ফটিক গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “হয়নি। তবে হবে।”

“কী হবে ফটিক?”

ফটিক গ্যাঁড়ার দিকে চেয়ে বলল, “বলব বাবু?”

গ্যাঁড়ার মুখটা হঠাৎ ছাইবর্ণ হয়ে গেল। আচমকা সে ভিড় ঠেলে অন্ধের মতো ছুটতে লাগল। তাকে আর দেখা গেল না।

বঙ্কুবাবু চালাক লোক। ফটিকের হাত ধরে ভিড় থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন চট করে।

“ফটিক ব্যাপারখানা কী?”

ফটিক লজ্জায় আধোবদন হয়ে সবই বলল। খুব অপরাধী মুখ করে। কিন্তু বঙ্কুবাবুর মুখখানা চকচক করতে লাগল। একটু খুশির গলাতেই বললেন, “ব্যাটা অনেকদিন ধরেই নানা মতলব আঁটছিল। তুই বেজায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিস। তোর বুদ্ধি আছে। ও ব্যাটা আর ইদিকে আসবে না শিগগির।”

বঙ্কুবাবু খুশি হলেই হাত-উপুড়। আর তাঁর হাত উপুড় মানেই পর্বত। বঙ্কুবাবু ফটিককে একখান দোকান করে দিলেন। বেশ বড়সড় মুদির দোকান। আর বটগাছের তলায় পাঁচশো টাকাও পেয়ে গিয়েছিল সে। পিস্তলটা বঙ্কুবাবুকে দিয়েছিল ফটিক। বঙ্কুবাবু বললেন, “এটা আমারই জিনিস। গ্যাঁড়া গেঁড়িয়েছিল।”

তা কথাটা হল, ফটিককে আর উঞ্ছবৃত্তি করতে হচ্ছে না।

১৬ মে ১৯৯৩

অলংকরণ : সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *