ফজল গাজি
‘সুচির বসন্ত, হাসে না ধরায়।
না চির হেমন্ত ধরণী কাঁপায়।
উত্তপ্ত নিদাঘ প্রাবৃটে জুড়ায়।
অনিত্য সকলি বিধির ইচ্ছায়।’
হেমচন্দ্র
দরবেশ পালওয়ান গাজির এক ছেলে ছিলেন তাঁর নাম ছিল কায়াম খাঁ গাজি। কায়াম খাঁ গাজি ভারী বুদ্ধিমান ও শক্তিমান পুরুষ ছিলেন, তিনি নিজ কৃতিত্বে দিল্লীর বাদশার অনুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। ভাওয়াল পরগণার কথা আগেই বলা হয়েছে। তিনি এই ভাওয়াল পরগণায় অসাধারণ প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
এই কায়াম খাঁর পরবর্তী সপ্তম পুরুষ ছিলেন বাহাদুর গাজি। তিনিও বীর ছিলেন। অনেক যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তার কোনো সন্তান না থাকায় তাঁর ভাই মাতাব গাজি পরিত্যক্ত সিংহাসন অধিকার করেন।
এই মাতাব গাজির ছেলের নামই বিখ্যাত ফজল গাজি। একদিকে যেমন চাঁদ গাজি ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনতালিপ্সু, বীর, অন্যদিকে তাঁর বংশেরই অন্য শাখায় এই ফজল গাজিও নিয়ত তারই মতো সম্মান ও স্পর্ধার সহিত চলতেন। উভয়েই স্বাধীনতার জন্য আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, সে যুগে এই গাজিকুলতিকলদ্বয় বার ভূঁইয়ার অন্যতম ভূঁইয়া রূপে কি অসাধারণ ক্লেশ স্বীকারই না করে গেছেন!
গাজিগণের পূর্বপুরুষগণ নিজ ধর্ম ও আনুষঙ্গিক রাজ্য বিস্তারের জন্য প্রথম প্রথম হিন্দুদের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ, নানা মনোমালিন্য সংঘটন করলেও ক্রমে তাঁদের প্রতিবেশী, তাঁদের সুখ-দুঃখের অংশভাগী হয়ে পড়েন। তাঁদের সে ধর্মোন্মত্ততা আর স্থির ছিল না। তাঁরা প্রজানুরঞ্জক, সমদর্শী হয়ে উঠেন। সম্রাট আকবর ও তাঁদের নিযুক্ত প্রতিনিধি নবাবগণের স্পর্ধা তাঁরা সহ্য করেননি। যখনই সুযোগ ও সুবিধা পেয়েছেন, তখনই অন্যায়ের প্রতিকার করতে পশ্চাৎপদ হননি।
ফজল গাজি, চাঁদ গাজি সত্যিই বীর ছিলেন। উন্নতির জন্য আমরণ সংগ্রাম করে বার ভূঁইয়াদের মুখোজ্জ্বল করেছিলেন। তাঁদের সহায়তা ব্যতীত ঈশা খাঁ, কেদার রায় ওরূপ স্পর্ধার সঙ্গে মোগল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে সমর্থ হতেন না।
কিন্তু বিধাতার ইচ্ছায়, তাঁদের বংশধরগণ বিবিধ বিলাস ব্যসনে আসক্ত হয়ে উঠেন। ক্রমে তাঁদেরই বংশধর দৌলত গাজি সাহেব নবাবের অত্যন্ত অধীন হয়ে পড়েন, বন্দোবস্তী রাজস্ব সঙ্কলনও তাঁর অসাধ্য হয়। ঢাকার তদানীন্তন নবাব তাঁর জমিদারি বাজেয়াপ্ত করেন, মুর্শিদাবাদে এর জন্য তিনি দরবার পর্যন্ত করতে যান। বর্তমান ভাওয়াল রাজবংশের পূর্বপুরুষ কুশধ্বজ রায় মহাশয়, তখনকার নিজামত আদালতে অনেক পরিশ্রম করে ফিরিয়ে আনেন গাজি সাহেবের সম্পত্তি। কুশধ্বজ রায় গাজি সাহেবের মন্ত্রী হন। ক্রমে গাজি সাহেবের অকর্মণ্যতার সুযোগে জমিদার হয়ে বসেন।