প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময়
একজন খেলোয়াড় হওয়ার শ্রেষ্ঠ বয়স হলো ১৬-২২; একজন নায়ক-নায়িকা হওয়ার শ্রেষ্ঠ বয়স হলো ১৬-২৫; একজন শিল্পী হওয়ার শ্রেষ্ঠ বয়স হলো ১৪-২৫। একজন বিজ্ঞানী বা গবেষক হওয়ার শ্রেষ্ঠ বয়স কত?–সেটাও ১৬-২৫ বছর। দুনিয়ার যত সেরা সেরা বিজ্ঞানী আছেন, তাঁদের ভিত গড়ে উঠেছে এই বয়সেই। আইনস্টাইনের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনগুলো এসেছে ত্রিশের আগে। তারপর সেগুলো নাড়াচাড়া করে দেখেছে সারা পৃথিবী। আইনস্টাইন তার কর্মের প্রমাণ উপভোগ করেছেন একের পর এক। ১০০ বছর পরও তার ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ আমরা দেখলাম–গ্রেভিটেশনাল ওয়েভে। সেসব ভবিষ্যদ্বাণী তিনি। কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে ধার করে করেননি। বাবা কিংবা পীর দরবেশ সেজে গায়েবি শক্তির জোরে তিনি সেসব বাণী দেননি। সেগুলো ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক, গণিতভিত্তিক ও মগজভিত্তিক!
বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার বিজ্ঞানীরাও তাদের ভিত তৈরি করেন সেই তরুণ বয়সেই। সারা দুনিয়ায় তরুণেরা গবেষণা। শুরু করেন ব্যাচেলর পর্যায়ে। তার আগে তাদের প্রচুর ল্যাবওয়ার্কের মাধ্যমে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জাগানো হয়। নিজ নিজ বিষয়ে গভীর জ্ঞানের সুযোগ দেওয়া হয়। ২১-২২ বছম বয়সে তারা প্রকৃত গবেষকদের মতো প্রজেক্ট শুরু করে। চিন্তা করে। নিজে আইডিয়া তৈরির চেষ্টা করে। আর্টিকেল পড়ে। ভ আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করে। ২৩-২৪-এ তারা পিএইচডি ত করে। ২৮-৩০-এর মধ্যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র গবেষণা। স্ত করে। এই হলো সারা দুনিয়ায় গবেষক বা বিজ্ঞানী হওয়ার একটা সাধারণ প্রক্রিয়া!
আমাদের তরুণেরা এই সাধারণ প্রক্রিয়াটাই জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ বিভাগে তারা ভালো জিপিএ পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকেন, অথচ একজন গবেষক হওয়ার প্রক্রিয়াটুকু তাদের জানা থাকে না। তাদের জানানোও হয় না। খুব কম শিক্ষকই, শিক্ষার্থীদের একজন গবেষক হওয়ার কথা। বলেন। একজন গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখান। শিক্ষকদের অনুরোধ করব, তারা যেন এই কাজটি করেন। একজন মানুষ যদি না-ই জানে কখন তার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, তাহলে তিনি কী করে গন্তব্যে পৌঁছাবেন? পৃথিবীর যে তরুণ ১৮ বছর বয়সে গবেষক হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য? দিয়ে হাঁটছেন, সে তরুণের সঙ্গে২৫-এ প্রস্তুতি নেন তরুণ কী করে প্রতিযোগিতায় পারবেন? একবার ভেবে দেখুন, আমাদের স্কুলের বাচ্চারা যদি ক্রিকেট না খেলতেন, তাহলে কী হতো! যদি কলেজের ছেলেরা ক্রিকেট না খেলতেন, তাহলে কী হতো! আমরা কোনো দিন ১৬-র মুস্তাফিজ, ১৮-র মাশরাফিদের খুঁজে পেতাম না। সারা দেশের লাখ লাখ ছেলে ক্রিকেট খেলে বলে মাত্র ১১ জন পতাকাধারী ক্রিকেটার পাই! সারা দেশের কিশোর ও তরুণেরা যদি গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে, চেষ্টা করে, শ্রম দেয়, তাহলে আমরা এমন ১০-১১ জন পৃথিবী কাঁপানো বিজ্ঞানী পাব! আর তাদের জাগাতে হবে স্কুল থেকে, কলেজ থেকেই। সমাজের তরুণদের মধ্যে একটা জাগরণ আসুক–কুড়িই হবে বিজ্ঞানী হওয়ার প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ বয়স।