ঢাল্! ঢাল্ চাঁদ! আরো আরো ঢাল্!
সুনীল আকাশে রজতধারা!
হৃদয় আজিকে উঠেছে মাতিয়া
পরাণ হয়েছে পাগলপারা!
গাইব রে আজ হৃদয় খুলিয়া
জাগিয়া উঠিবে নীরব রাতি!
দেখাব জগতে হৃদয় খুলিয়া
পরাণ আজিকে উঠেছে মাতি!
হাসুক পৃথিবী, হাসুক জগৎ,
হাসুক হাসুক চাঁদিমা তারা!
হৃদয় খুলিয়া করিব রে গান
হৃদয় হয়েছে পাগলপারা!
আধ ফুটো-ফুটো গোলাপ-কলিকা
ঘাড়খানি আহা করিয়া হেঁট
মলয় পবনে লাজুক বালিকা
সউরভ রাশি দিতেছে ভেট!
আয় লো প্রমদা! আয় লো হেথায়
মানস আকাশে চাcর ধারা!
গোলাপ তুলিয়া পর্ লো মাথায়
সাঁঝের গগনে ফুটিবে তারা ।
হেসে ঢল্ ঢল্ পূর্ণ শতদল
ছড়িয়ে ছড়িয়ে সুরভিরাশি
নয়নে নয়নে, অধরে অধরে
জ্যোছনা উছলি পড়িছে হাসি!
চুল হতে ফুল খুলিয়ে খুলিয়ে
ঝরিয়ে ঝরিয়ে পড়িছে ভূমে!
খসিয়া খসিয়া পড়িছে আঁচল
কোলের উপর কমল থুয়ে!
আয় লো তরুণী! আয় লো হেথায়!
সেতার ওই যে লুটায় ভূমে
বাজা লো ললনে! বাজা একবার
হৃদয় ভরিয়ে মধুর ঘুমে!
নাচিয়া নাচিয়া ছুটিবে আঙুল!
নাচিয়া নাচিয়া ছুটিবে তান!
অবাক্ হইয়া মুখপানে তোর
চাহিয়া রহিব বিভল প্রাণ!
গলার উপরে সঁপি হাতখানি
বুকের উপরে রাখিয়া মুখ
আদরে অস্ফুটে কত কি যে কথা
কহিবি পরানে ঢালিয়া সুখ!
ওই রে আমার সুকুমার ফুল
বাতাসে বাতাসে পড়িছে দুলে
হৃদয়েতে তোরে রাখিব লুকায়ে
নয়নে নয়নে রাখিব তুলে।
আকাশ হইতে খুঁজিবে তপন
তারকা খুঁজিবে আকাশ ছেয়ে!
খুঁজিয়া বেড়াবে দিকবধূগণ
কোথায় লুকাল মোহিনী মেয়ে?
আয় লো ললনে ! আয় লো আবার
সেতারে জাগায়ে দে-না লো বালা!
দুলায়ে দুলায়ে ঘাড়টি নামায়ে
কপোলেতে চুল করিবে খেলা!
কী-যে মূরতি শিশুর মতন!
আধ ফুটো-ফুটো ফুলের কলি!
নীরব নয়নে কী-যে কথা কয়
এ জনমে আর যাব না ভুলি!
কী-যে ঘুমঘোরে ছায় প্রাণমন
লাজে ভরা ওই মধুর হাসি!
পাগলিনী বালা গলাটি কেমন
ধরিস্ জড়িয়ে ছুটিয়ে আসি!
ভুলেছি পৃথিবী ভুলেছি জগৎ
ভুলেছি, সকল বিষয় মানে!
হেসেছে পৃথিবী– হেসেছে জগৎ
কটাক্ষ করিলি কাহারো পানে!
আয়! আয় বালা! তোরে সাথে লয়ে
পৃথিবী ছাড়িয়া যাই লো চলে!
চাঁদের কিরণে আকাশে আকাশে
খেলায়ে বেড়াব মেঘের কোলে!
চল্ যাই মোরা আরেক জগতে
দুজনে কেবল বেড়াব মাতি
কাননে কাননে, খেলাব দুজনে
বনদেবীকোলে যাপিব রাতি!
যেখানে কাননে শুকায় না ফুল!
সুরভি-পূরিত কুসুমকলি!
মধুর প্রেমেরে দোষে না যেথায়
সেথায় দুজনে যাইব চলি!
জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব, ফাল্গুন, ১২৮২