প্রতিযোগিতা
ঊনবিংশ শতাব্দীতে মানুষ জ্ঞাত ছিল স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার উৎপীড়ন সম্পর্কে। এই বিপদ পরিহার করে চলার কৌশলও জানা ছিল মানুষের। কৌশলটি হচ্ছে প্রতিযোগিতা। তখনও মানুষ জানত প্রথাগতভাবে একচেটিয়ার অশুভ দিক। সভাসদদেরকে লাভজনক মজুরি প্রদান করেন স্টুয়ার্ট এবং এলিজাবেথ। গৃহযুদ্ধের অনেকগুলো কারণের অন্যতমই ছিল এর বিরুদ্ধে আপত্তি। সামন্তযুগে নিজেদের কারখানায় শস্য ভাঙানোর জেদ ধরা ছিল সম্ভ্রান্ত ইংরেজদের পক্ষে স্বাভাবিক ব্যাপার। ১৮৪৮ সালের আগে ইউরোপীয় রাজতন্ত্র মুক্ত প্রতিযোগিতার উপর আধা-সামন্ততান্ত্রিক বিধি-নিষেধের সঙ্গে জড়িত ছিল; রাজা ও জমিদারদের স্বার্থে এই বিধি-নিষেধ বিদ্যমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সর্বনিম্ন মজুরি আইন এবং সাধারণ ভূমির পৃথকীকরণ ইত্যাদি। ইংল্যান্ডে তাই শস্য আইন প্রশ্ন পর্যন্ত সর্বোপরি অবাধ নীতির পক্ষে ওকালতির ব্যাপারে একমত হন জমিদার ও পুঁজিপতিরা।
ইউরোপের সবচেয়ে চরম ব্যাপারগুলোর সবই ছিল মতামতের ব্যাপারে মুক্ত প্রতিযোগিতার প্রতিকূলে। ফরাসি বিপ্লবের চেতনার বিরোধিতায় ১৮১৫ সাল থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত মহাদেশের সর্বত্র চার্চ ও রাষ্ট্র ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। সেন্সর ব্যবস্থা জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সর্বত্র হঠাৎ হাস্যাস্পদ হয়ে ওঠে। নিম্নবর্ণিত শব্দাবলির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ পরিচ্ছেদে হিন উপহাস করেন।
জার্মান সেন্সর ……..
…………. মূর্খ ….
ফ্রান্স ও ইতালির সরকারি নির্যাতনের উদ্দেশ্যই ছিল নেপোলিয়নের রূপকথা এবং বিপ্লবের প্রশংসাস্তুতি। সবরকম উদারনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নিষিদ্ধ ছিল স্পেন ও চার্চ শাসিত রাষ্ট্রগুলোতে। পোপের সরকার তখনও কার্যকরিভাবে জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস করত। ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রীয় হাঙ্গেরিতে জাতীয়তা নীতির পক্ষে ওকালতি করার অনুমতি ছিল না। সব সময়ই গ্রামীণ জনগণের বিপরীতে সামন্ত অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে বোকা রাজা ও অলস অভিজাতদের সমর্থনে বাণিজ্যিক স্বার্থবিরোধী প্রতিক্রিয়া জড়িত ছিল। এ ধরনের অবস্থায় অবাধ নীতিই ছিল শক্তির স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এগুলো ব্যাহত হয় বৈধ কার্যকলাপে।
আমেরিকার উদারপন্থিরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তাদের আশানুরূপ মুক্তি অর্জন করে; ইংল্যান্ডে ১৮৭১ সালের মধ্যে; জার্মানিতে পর্যায়ক্রমে ১৮৪৮ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে; ইতালিতে রিজারজিমেন্টো এবং রাশিয়ায় মুহূর্তকালের জন্য ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সময়। কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল হয়নি উদারপন্থিদের। শিল্পে তা মার্কসের বিদ্বেষপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীর অনুরূপ ছিল। দীর্ঘ উদারপন্থি প্রথার ধারক হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকাই প্রথম ট্রাস্ট রাষ্ট্র গঠন করে। তা উদ্ভূত হয় প্রতিযোগিতামূলক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফলে। আমেরিকাতে উদারনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও অন্যান্য দেশের শিল্পায়নে ক্রমে রকফেলারের নেতৃত্ব অনুসরণ করা হয়। কার্যকরি ব্যবস্থার অভাব হলে প্রতিযোগিতা বিলীন হয়ে পড়ে প্রতিযোগীদের একজনের পূর্ণ বিজয়ের মাধ্যমে।
প্রতিষ্ঠানগুলো কৌশলগত কারণে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী আকার লাভ করেছে। সপ্তদশ শতাব্দীতে যাজনিক কার্যালয়ের অধীন ছিল রাস্তাঘাটের ব্যবস্থা। বর্তমান এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় কাউন্টি কাউন্সির কর্তৃক। তবে তত্ত্বাবধান ও অর্থ যোগানের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। বেশ বড় এলাকার তত্ত্বাবধান ও অর্থ যোগানের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। বেশ বড় এলাকার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করতে পারেন যদি ওই এলাকায় থাকে নায়াগ্রার মতো একটি শক্তিশালী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। জলসেচের জন্য প্রয়োজন হতে পারে আসাম বাঁধের মতো একটি বাঁধের। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত এলাকা খুব বিশাল না হলে এর খরচ নিষিদ্ধ। প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত দ্রব্যের বিশোষণে সমর্থ বাজার নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভরশীল বৃহদায়তন উৎপাদন অর্থনীতি।
আরও বিভিন্ন এলাকা রয়েছে যেখানে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো হয়নি বৃহৎ এলাকার সুবিধাগুলো। শিক্ষা সংক্রান্ত সরকারি ফিল্মের মাধ্যমে এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রাণ পেতে পারে বিবিসি পাঠ্যসূচি প্রচারের মাধ্যমে। আরও ভালো হতো যদি এ ধলনের ফিল্ম বা পাঠ্যসূচি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তৈরি হতো, কিন্তু বর্তমানে তা কাল্পনিক ব্যাপার বলে পরিগণিত। বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পঙ্গু, তবে তা আন্তর্জাতিক পরিসরে এর বিস্তার লাভের জন্য নয়। এটা স্পষ্ট যে অধিকাংশ ব্যাপারই ছোট ছোট রাষ্ট্রের চেয়ে বড় রাষ্ট্র সুবিধাজনক এবং যে কোনো রাষ্ট্রই বিশ্বব্যাপী না হলে যথেষ্ট কিছু করতে পারে না নাগরিকদের জীবনরক্ষামূলক প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য।
যা হোক সুবিধা রয়েছে ক্ষুদ্র এলাকাগুলোতেও। এগুলোর ভেতর রয়েছে জনসাধারণের কাজে আইনের অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার, দ্রুত সিদ্ধান্ত, স্থানীয় প্রয়োজন এবং প্রথার সাথে সম্ভাব্য অধিকতর অভিযোজন। স্পষ্ট সমাধান হচ্ছে স্থানীয় সরকার, যা সার্বভৌম নয়। তবে এর কিছু নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তা নিয়ন্ত্রিত হয় কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রের উচিত যুক্তিযুক্ত কাজে একে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া। যা হোক, আমাদের বিশদ প্রশ্নের সম্মুখীন করে দেয় এই বিষয়। আমি তা আলোচনা করতে চাই না।
আরও কঠিন প্রতিযোগিতার প্রশ্নটি। এর অনেক বিতর্ক হয়েছে অর্থনৈতিক পরিসরে, কিন্তু তা সামরিক ও প্রচারণার সাপেক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতা থাকা উচিত উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যবসা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে, কিন্তু সামরিক ক্ষেত্রে নয়। এর সম্পূর্ণ বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন ইতালির ফ্যাসিবাদী ও জার্মান নাজিরা। তাদের মতে জাতীয় যুদ্ধের রূপ লাভ ছাড়া প্রতিযোগিতা সবসময়ই খারাপ। এক্ষেত্রে জাতীয় যুদ্ধ মানবীয় কার্যাবলির ভেতর মহত্তম। বিরোধী শ্রেণিগুলোর ভেতর ক্ষমতা লাভের সগ্রাম ছাড়া মার্কসবাদীরা সবরকম প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, প্লেটো প্রশংসা করেছেন একটি মাত্র প্রতিযোগিতার। তা হচ্ছে সংগ্রামী সাথীদের ভেতর সম্মান সমীকরণের প্রতিযোগিতা। তিনি বলেছেন যে তা উন্নতি লাভ করে সমরনীতি প্রেমের দ্বারা।
উৎপাদন বলয়ে অসংখ্য ছোট ছোট খামারের ভেতর প্রতিযোগিতা শিল্পায়নের প্রাথমিক যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল। অধুনা রাষ্ট্রের সঙ্গে সমভাবে বিস্তৃত ট্রাস্টগুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রাস্ট হিসেবে বিবেচিত অস্ত্র কারখানা এর জন্য ব্যতিক্রমধর্মী যে এর একটির প্রতি আদেশগুলো অন্যটির প্রতি আদেশের কারণ হয়ে দাঁড়ায় : যদি একটি রাষ্ট্র অস্ত্র সজ্জিত হয় তবে অন্যগুলোও অস্ত্র সজ্জিত হবে। এজন্যে প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক উদ্দেশ্যগুলো বজায় থাকে না। এই অদ্ভুত ক্ষেত্র ছাড়া ব্যবসায়ে এখনও প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। কিন্তু আজকাল তা আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিযোগিতার সঙ্গে মিশে এক হয়ে পড়েছে, যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী হচ্ছে যুদ্ধ। সুতরাং আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিযোগিতার মতোই আধুনিক ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার দোষ-গুণ।
যা হোক, আরও এক ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে, যার প্রচণ্ডতা আগের মতোই বিরাজমান-তা হচ্ছে চাকরি লাভের প্রতিযোগিতা। এর সূচনা হয় স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবং তা চলে অধিকাংশ লোকের কর্মজীবনব্যাপী। এই প্রতিযোগিতা প্রশমিত করা যায়, কিন্তু পুরোপুরি বিলীন করা যায় না। সব অভিনেতা সমান পারিশ্রমিক পেলেও কোনো ব্যক্তি প্রথম নাবিকের চেয়ে হেমলেটের চরিত্রে অভিনয় করতে চান। লক্ষণীয় দুটো শর্ত রয়েছে, প্রথমত অকৃতকার্য ব্যক্তির পরিহারযোগ্য দুঃখ-কষ্ট ভোগ করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত সফলতা স্বাভাবিক গুণের পুরস্কারস্বরূপ-হীনস্তাবকতা বা ধূর্ততার ফল নয়। দ্বিতীয় শর্তটি সমাজতন্ত্রীদের যথাযথ মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। যা হোক, আমি এ বিষয়ে আলোচনা করব না, কারণ, তা আমাদের অনেক দুরে নিয়ে যাবে মূল বিষয় থেকে।
আন্তঃরাষ্ট্রীয় তথা বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা হচ্ছে বর্তমান যুগের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা। এটি পরিণত হয়েছে সর্বধ্বংসী প্রতিযোগিতায়–তা ক্ষমতার জন্যে, সম্পদের জন্যে, মানুষের বিশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য এবং সর্বোপরি মানুষের জীবনের জন্যে। কারণ, মৃত্যুদণ্ডই হচ্ছে বিজয় লাভের একমাত্র উপায়। এটি স্পষ্ট যে, এই প্রতিযোগিতা রোধের প্রধান উপায় হচ্ছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সশস্ত্র বাহিনীর বিলোপসাধন এবং একচেটিয়া সশস্ত্রবাহিনী সমেত একটি একক আন্তর্জাতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এর বিকল্প পন্থা হচ্ছে সভ্য দেশগুলোর অধিকাংশ লোকের মৃত্যু এবং অধিকাংশ লোকের দারিদ্র্য দশা ও আধা বর্বরতায় রূপান্তর। বর্তমানে এই বিকল্পটি পছন্দ এক বিশাল সংখ্যাধিক্যের।
উদারপন্থিরা তত্ত্বগতভাবে মনে করে থাকেন যে প্রচারণায় প্রতিযোগিতা মুক্তভাবে ক্রিয়াশীল, কিন্তু তা সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অস্ত্র প্রতিযোগিতার সঙ্গে। আপনি যদি ফ্যাসিবাদ প্রচার করেন তবে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে জার্মানি ও ইতালির শক্তি বৃদ্ধি করা। কমিউনিজমের প্রচার করলে সম্ভবত আপনি তা বাস্তবায়িত করতে পারবেন না। তবে পরবর্তী যুদ্ধে জয়লাভের জন্য আপনি রাশিয়াকে সহায়তা করতে পারেন। আপনি যদি গণতন্ত্রের গুরুত্ব আরোপ করেন তবে আপনি দেখতে পাবেন যে, চেকোশ্লাভিয়ার স্বাধীনতা রক্ষায় ফ্রান্সের সঙ্গে সামরিক মৈত্রী সম্পর্কীয় নীতির প্রতি আপনি সমর্থন দান করেছেন। রাশিয়া, জার্মানি ও ইতালি একের পর এক মুক্ত প্রচারণার নীতি পরিত্যাগ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, ওই দেশের সরকার এই নীতি গ্রহণ করে তাদের পূর্বসূরিদের ব্যাহত করতে পেরেছিল এবং এর অবিরাম অনুবৃত্তি তাদের নিজস্ব নীতি অনুসরণ পুরোপুরিভাবে অসম্ভব করে তুলবে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে আজকের দুনিয়া এত ভিন্ন যে মুক্ত প্রতিযোগিতায় উদারনৈতিক যুক্তিগুলো বলবৎ হলে আধুনিক পরিভাষায় এগুলোর বর্ণনা প্রয়োজন হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, তারা ব্যাপক বৈধতা বজায় রেখেছে, তবে তারা সীমাহীন নয়-এটা বুঝে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
জন স্টুয়ার্ট মিলের লিখিত উদারপন্থি মতবাদ অনুমিত মতবাদের চেয়ে কম চরমভাবাপন্ন ON LIBERTY বইয়ে। মানুষ তার কার্যকলাপের জন্য স্বাধীন, যদি তা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। কিন্তু যদি অন্যান্য মানুষ আহত হয় তবে এগুলো রহিত করা যেতে পারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। ধরা যাক, একজন মানুষ স্থির জ্ঞানে বিশ্বাস করেন যে, রানী ভিক্টোরিয়াকে হত্যা করা উচিত। তাকে এ মতের অনুমতি দেয়া যায় না প্রচার ও প্রসারে। এটা চরম দৃষ্টান্ত; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রায় সব মতামতের দ্বারা কেউ না কেউ আহত হন। বাকস্বাধীনতা অর্থহীন, যদি না তাতে ব্যক্তিবিশেষ বা শ্রেণিবিশেষের কাছে অপ্রীতিকর এমন কিছু বলার সুযোগ না থাকে। প্রচারণায় স্বাধীনতার সুযোগ থাকতে হলে তাতে মিলের চেয়ে জোরালো নীতির প্রয়োজন।
আমরা প্রশ্নটি পর্যালোচনা করতে চাই সরকারি দৃষ্টিকোণ, সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিকোণ, নতুনত্বের প্রবর্তকদের দৃষ্টিকোণ থেকে। আলোচনা শুরু করা যাক সরকারি দৃষ্টিকোণ দিয়েই।
ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার দুধরনের বিপদের সম্মুখীন; বিপ্লব ও যুদ্ধে পরাজয়। (সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে অফিসিয়াল বিরোধীদের সরকারের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়)। এসব বিপদ আত্মরক্ষামূলক প্রবণতার জন্ম দেয়। আশা করা যায় যে এগুলো প্রতিহত করতে সরকার পারতপক্ষে সবকিছু করেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্ন হচ্ছে : প্রচারণায় কতটুকু স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীলতা দেবে? উভয়টি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিপদের বিরোধী। উভয় উত্তর অবশ্যই নির্ভর করছে ওই সময়ের সরকারের বৈশিষ্ট্য ও পারিপার্শ্বিকতার উপর। স্বাধীনতা আরেক দফা বিপদ আনবে সরকার আধুনিক ও বৈপ্লবিক হলে এবং জনগণের অসন্তুষ্টির পেছনে জোরালো কারণ থাকলে। এই পরিবেশ ছিল ১৯৭৩ সালে ফ্রান্সে, ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় এবং ১৯০৩ সালে জার্মানিতে। কিন্তু সরকার ঐতিহ্যগত হলে এবং জনগণের আর্থিক অবস্থা খুব হতাশাব্যঞ্জক না হলে স্বাধীনতা নিরাপদ বাল্বের মতো কাজ করবে এবং অসন্তোষ কমিয়ে দেবে। ব্রিটিশ সরকার যদিও কমিউনিজম ব্যাহত করার জন্য অনেক কিছু করেছে তারপরও তা ব্রিটেনে কমিউনিস্টদের বিফলতার কাজ নয়। সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকেও তাদের প্রচারের পরম স্বাধীনতা দেয়াই হবে বিচক্ষণতার পরিচয়।
আমি মনে করি না যে সরকারের উচিত হবে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য প্রেরণামূলক প্রচার চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া। এক্ষেত্রে প্রচারণায় অতি অল্প লোকের পরিবর্তন হলেও অনুমোদিত কাজ বাস্তবায়িত হয়ে যেতে পারে। আইনত মৃত্যুদণ্ড প্রদান ছাড়া নাগরিকদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু কারো হত্যার লক্ষ্যে আন্দোলন সংঘটিত হলে তার জীবন রক্ষা করা মুশকিল। WELIMER প্রজাতন্ত্রে এ বিষয়ে মাত্রাধিক শিথিল ছিল। কিন্তু আমি মনে করি না যে, কোনো স্থিতিশীল সরকারের পক্ষে উচিত আইনত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার যোগ্য একশ্রেণির লোকের মৃত্যুদন্ডের লক্ষ্যে আন্দোলন নিষিদ্ধ করা। কারণ এ ধরনের আন্দোলন আইনের প্রতি কোনো ভীতি প্রদর্শন করে না।
সরকারি দৃষ্টিকোণ থেকেও রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ না হলে কোনো মতের উপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। যদি কেউ মনে করে যে পৃথিবী চেপ্টা অথবা রোববার দিন কর্মবিরতি পালন করা উচিত তবে জনসাধারণকে তার মতাবলম্বী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে স্বাধীনতা দান করা উচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মেটাফিজিক্স বা নৈতিকতা বিরাজমান সত্যের অভিভাবক-মনে করা উচিত নয়। কিন্তু আজকাল তা-ই করা হচ্ছে জার্মানি, ইতালি ও রাশিয়াতে। কিন্তু প্রতিটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের মুক্ত থাকা উচিত দুর্বলতার স্বীকারোক্তি থেকে।
সাধারণ নাগরিকরা খুব কমই আগ্রহ দেখান সরকারের প্রতি হুমকিস্বরূপ নয় এমন পরিবেশে প্রচারণার স্বাধীনতায়। সরকার ভিন্নমত পোষণ করতে পারে ধর্ম অথবা জাতীয়তার প্রশ্নে : ফলে অভিজাতদের বিরুদ্ধে রাজা, বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে অভিজাত অথবা বিত্তহীনদের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া উদ্বুদ্ধ হতে পারে। দ্বিতীয় চার্লস ও যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান সরকারের মতো দেশপ্রেম এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে হয়। এ ধরনের পরিবেশে সাধারণ নাগরিকরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আগ্রহী হতে পারে এবং আহ্বান জানাতে পারে বাকস্বাধীনতার প্রতি। কিন্তু এগুলো হচ্ছে বিপ্লব-পূর্ব পরিবেশ। যেখানে এই পরিবেশ বিরাজ করে সেখানে বিরোধী প্রচারণায় সরকারের উচিত ধৈর্য ধারণ করা। এমনকি তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা প্রায়ই সত্য কারণ, এতে তারা ক্ষমতা হারাবে বটে, কিন্তু যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকে তবে জীবনও হারাতে পারে। খুব কম সরকারই এ ধরনের বিচক্ষণতা দেখিয়েছে যে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার-কথাটি সব সময় সত্য নয়।
আট শতাব্দী ধরে ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ ধরনের নীতি অনুসরণ করতে সমর্থ হয়, কিন্তু পরিশেষে এর পরিসমাপ্তি ঘটায় কিছু অর্থ ও মর্যাদাহানির মাধ্যমে। এই আট শতাব্দী ব্যাপী ব্রিটিশ নীতি সফল ছিল কারণ সেখানে কৃষকরা যখন ক্ষুধার্ত জমিদাররা তখন ঐশ্বর্যশালী।
প্রচারণার স্বাধীনতা যেসব ক্ষেত্রে নাগরিকদের আস্থা জন্মায় ওইগুলো প্রচণ্ড বিপ্লব অথবা অধিক স্বাধীনতার স্বীকৃতি দান। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকার নির্বাচনের স্বাধীনতা। তা গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনাধিকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্যথায় তা অর্জিত হয় বিপ্লবাত্মক পন্থায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এর স্বীকৃতি অতীব প্রয়োজনীয়। তা মুক্ত প্রচারণার অধিকারকে বহু দূর অতিক্রম করে যায়।
বাকি রয়েছে আগ্রহী সংস্কারকদের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা কনস্টেন্টাইন পূর্ব প্রতীকী খ্রিস্টানরা, লুথারের সময় প্রটেস্ট্যান্ট এবং বর্তমানকালের প্রটেস্ট্যান্টদের কথা ধরা যাক। এসব মানুষ খুব কমই বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। তারা শহীদত্ব বরণে আগ্রহী ছিলেন এবং অন্য লোককে অনুরূপভাবে আগ্রহী করে তোলার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, অতীতে সরকারি প্রশাসন যন্ত্র বর্তমান থাকা সত্ত্বেও সংকল্পবদ্ধ ব্যক্তিরা স্বাধীনতার কথা বলতে পারতেন। যা হোক আজকাল সরকারি প্রশাসযন্ত্র অনেক বেশি দক্ষ এবং সম্ভবত মৌলিক পরিবর্তন অসম্ভব করে তুলতে সক্ষম। অপরদিকে যুদ্ধ ও বিপ্লব অরাজকতার জন্ম দেয় এবং সম্ভবত নতুন কিছুর সূচনা করে। এই প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু কমিউনিস্ট আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন পরবর্তী যুদ্ধের দিকে।
সাধারণত স্বর্ণযুগের আগমনে বিশ্বাসী হবেন আগ্রহী সংস্কারকরা : তিনি মনে করেন যে সবাই তার ধর্মমত গ্রহণ করলে সহস্র বছরের শাসন সম্ভব হবে। বর্তমানের জন্য বিপ্লবী হলেও ভবিষ্যতের জন্য তিনি একজন রক্ষণশীল : একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব এবং গঠিত হলে তা রক্ষা করতে হবে। এই সব দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে তিনি স্বভাবত পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় বা একে ব্যাহত করার প্রচণ্ডতা থেকে অপসৃত হন না; বিরোধিতায় তিনি একজন সন্ত্রাসবাদী এবং ক্ষমতায় একজন নির্যাতনকারী। প্রচণ্ডতায় তার বিশ্বাস বিরোধীদের একই বিশ্বাসে উপনীত হতে উদ্বুদ্ধ করে : তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তাকে নির্যাতন করবে এবং বিরোধিতায় থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। তার সহস্র বছরের শাসন তাই মধুময় হবে না; গুপ্তচরবৃত্তি থাকবে, প্রশাসনিক আদেশ অনুযায়ী গ্রেফতার করা চলবে এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থাকবে। কিন্তু সর্বধ্বংসীদের মতো তিনি এতে ক্ষতির কিছু দেখবেন না।
এ কথা সত্য যে, স্বর্ণযুগের আগমনে বিশ্বাসীদের মধ্যে অধিকতর দ্র ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এমন অনেকেই আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের ভেতর যা কিছু সর্বোত্তম তা মানুষের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে, আরোপিত হবে না কোনো কর্তৃপক্ষের দ্বারা। বন্ধুসমাজ দ্বারা এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা যায়। এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে, বদান্যতাপূর্ণ ও বিজ্ঞতাপূর্ণ পরামর্শ অনুযায়ী বাহ্যিক প্রভাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী হতে পারে, কিন্তু কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের সহায়ক হবে না। এ ধরনের ব্যক্তিরা উৎসাহী সংস্কারক হওয়া সত্ত্বেও প্রচারণার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হতে পারেন।
অন্য এক ধরনের সংস্কারক অস্তিত্ব লাভ করেছে বিবর্তন সাধারণভাবে গৃহীত হওয়ার পর। সিনডিকেলিস্ট দিনগুলোতে সরেলকে আমরা দৃষ্টান্ত হিসেবে নিতে পারি। এ ধরনের মানুষ মনে করেন যে, মানবজীবন হচ্ছে একটি ক্রম অগ্রগতির ধারা। তা বিশেষ লক্ষ্যে ধাবিত নয় এবং অগ্রগতি সাধিত হওয়ার আগে এ সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছুই বলা যাবে না। কিন্তু তা এমন ধরনের যে প্রতিটি স্তরে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে দেখা হয়। না দেখার চেয়ে দেখা ভালো; কিন্তু যে। পর্যন্ত সব প্রাণীই অন্ধ ছিল সংস্কারের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দৃষ্টিক্ষমতা অর্জনের প্রস্তাব তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। তা সত্ত্বেও প্রকৃত সত্য যে অতীত দর্শনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে যে একটি স্থিতিশীল সংরক্ষণশীলতা ভুল হতে বাধ্য। সব সংস্কার কর্ম অবশ্যই উৎসাহিত হবে। কারণ আমরা না জানলেও বাস্তবায়িত হবে মূল নীতি।
আমি এখন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করব প্রচারণার স্বাধীনতা সম্পর্কে। প্রাচীনযুগের সহনশীলতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে গিবন বলেছেন, রোমান বিশ্বে বিভিন্ন উপাসনা পদ্ধতি জনগণ কর্তৃক সমভাবে সত্য বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু দার্শনিক এগুলো একইভাবে মিথ্যা এবং ম্যাজিস্ট্রেটরা সমভাবে উপকারী মনে করতেন। যে দার্শনিক সম্বন্ধে আমি ভাবছি তিনি এতটুকু বলতে যাবেন না যে বিরাজমান সব ধর্মমতই সমভাবে মিথ্যা। কিন্তু তিনি তাও বলতে যাবেন না যে, এর একটি মিথ্যা থেকে মুক্ত অথবা দৈবাৎ মুক্ত হয়ে থাকলেও এই সৌভাগ্যপূর্ণ সত্যটি মানবমনের দক্ষতাপূর্ণ বিভাগ কর্তৃক অনাবিস্কৃত হতে পারত। অদার্শনিক প্রচারকের কাছে তার নিজস্ব প্রচারণাটিই সত্য এবং বিপরীত প্রচারণাটি মিথ্যা। যদি তিনি উভয়টি অনুমোদন দানে বিশ্বাস করেন তবে তা শুধু এ কারণে যে তিনি নিষিদ্ধকরণের ফলে ভুক্তভোগী হওয়ার ভয়ে ভীত। দার্শনিক ব্যক্তিটির কাছে ব্যাপারটি এত সহজ নয়।
প্রচারণার কি ব্যবহার হতে পারে দার্শনিক ব্যক্তির কাছে? পেশাদার প্রচারকের মতো তিনি বলতে পারেন না : পিন প্রস্তুত করার জন্য পিন ফ্যাক্টরির অস্তিত্ব রয়েছে এবং মতামত গঠনের জন্য রয়েছে মতামত ফ্যাক্টরি। গঠিত মতামত দুটো পিনের মতামত হলে এবং দুটোই ভালো হলে কি হতো? বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় একচেটিয়া অধিকারের ফলে প্রতিযোগিতাশীল ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ব্যবস্থার চেয়ে সস্তা সামগ্রী উৎপাদনে সক্ষম হলে উভয় ক্ষেত্রে একই কারণে একচেটিয়া প্রয়োজন অনুভূত হয়। শুধু তাই নয়, সাধারণ প্রতিযোগী মতামত ফ্যাক্টরি প্রতিযোগী পিন ফ্যাক্টরির মতো ভিন্ন মতামত সৃষ্টি করে না, যা ভালো হতে পারে। তা এ রকম মতামত গঠন করে যা আমার ফ্যাক্টরি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত। তাই সমাজে আমার ফ্যাক্টরির উৎপাদিত সামগ্রীর যোগান বজায় রাখার জন্য প্রভূত পরিমাণে কাজ বৃদ্ধি করে দেয়। এ কারণেই নিষিদ্ধ করতে হবে প্রতিযোগিতাশীল ফ্যাক্টরিগুলো। আমি বলছি এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারেন না দার্শনিক। তিনি বলবেন যে প্রচারণা অবশ্যই অন্ধ বিশ্বাস সৃষ্টি করবে না, বরং তা বিচার, যুক্তিসিদ্ধ সংশয়ে এবং বিরুদ্ধ মতবাদের ভেতর তুলনামূলক গুরুত্ব নিরূপণে ক্ষমতা যোগাবে। প্রচারণা প্রতিযোগিতায় সুযোগ থাকলেই এই উদ্দেশ্য সফল হবে। তিনি জনসাধারণকে বিচারকের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে চান। বিচারক কোনো সমস্যায় বিচার্য বিষয়ে উভয় পক্ষের যুক্তি-পরামর্শ শুনে থাকেন। কিন্তু অপরাধ আইনে এক পক্ষের যুক্তি-পরামর্শ শুনে রায় প্রদান করার মতো একচেটিয়া প্রচারণাও অযৌক্তিক। সুতরাং সঙ্গতিপূর্ণ প্রচারণার পরিবর্তে তিনি প্রত্যেক প্রশ্নে সবার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রচারের পক্ষে ওকালতি করবেন যাতে জনগণ ভিন্ন ভিন্ন মতামত শোনার পর আপন মতামত গঠন করতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন পার্টির স্বার্থে পরিচালিত ভিন্ন ভিন্ন পত্রিকার পরিবর্তে সব পার্টির স্বার্থে নিবেদিত একটি পত্রিকার পক্ষে তিনি ওকালতি করবেন। বুদ্ধিবৃত্তিক সুবিধা স্বাধীন বিতর্কে খুবই স্পষ্ট। তাই স্বাধীন বিতর্কে প্রতিযোগিতামূলক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ আবশ্যিক নয়। বি.বি.সি. বিতর্কের সুযোগ দিয়ে থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বী সব বৈজ্ঞানিক মতবাদ রাজকীয় সমাজে বর্ণণা করা যেতে পারে। জ্ঞানী ব্যক্তিরা যৌথ প্রচারণা সমর্থন করেন না, কিন্তু সদস্যরা যাতে নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেন। কোনো একক সংগঠনে এ ধরনের আলোচনা মৌলিক বিরত ঐকমত্যের নিদর্শন। মিসরীয় পুরাতত্ত্ববিদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী পুরাতত্ত্ববিদের বিরুদ্ধে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে যাবেন না। যে সমাজে সরকার সম্বন্ধীয় মৌল বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত সেখানে মুক্ত আলোচনা সম্ভব। কিন্তু যেখানে এ ধরনের মতৈক্য নেই মনে হয় প্রচারণা সেখানে শক্তি ব্যবহারের ভূমিকাস্বরূপ অবতীর্ণ হয়। যাদের অধিকারে শক্তি রয়েছে তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রচারণায় একচেটিয়া অধিকার লাভ করতে চায়। একটি সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা অসম্ভব না হলে সেখানে মতপার্থক্য সংবলিত স্বাধীন প্রচারণা সম্ভব। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে পটেস্ট্যান্ট কাথলিক রাজনৈতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, কিন্তু অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পেরেছে। এ কারণেই ওই সময়ে সম্ভব হয়ে ওঠে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা। একটি স্থিতিশীল সরকার কাঠামো জরুরি মুক্তবুদ্ধির জন্য; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা অত্যাচারের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান প্রধানত নির্ভরশীল সরকার পদ্ধতির উপর।