প্রতিবিম্ব…

প্রতিবিম্ব…

সিঁড়ি বলে, আর কত উঠে গেলে মনে হবে, নামবার পথ নেই জানা?
লক্ষ্য আকাশ হোক, মনে রেখো, মাটি তবু শেষের ঠিকানা!

#

অন্ধকারে অন্ধ সবাই, বন্ধ ঘরে বন্ধ দম,
মুক্তি ছেড়ে যুক্তি খুঁজি, কার চেয়ে কে অন্ধ কম!

#

চোখ বন্ধক রেখে অন্ধ মানুষও ভাবে,
যত দ্বন্দ্ব, পথ বন্ধ, আলোর অভাবে!

#

চোখের আড়াল মন থাকে তাই, মিথ্যে হাসির খেয়াল হয়,
ইট, সুরকি, পাথর লুকিয়ে বুকে, পলেস্তরার দেয়াল হয়।

#

দেখে লাশ, হা-হুঁতাশ করারাও জানিও,
এই খুনে, নিজ গুণে, দায়ী তুমি-আমিও!

#

শরীরটা খুনে শেষ, ঘুণে শেষ ভেতর,
সারি সারি লাশ হাঁটে, কে কার? কে তোর?

#

জানছি রোজই, মানছি না তাও, নামছে আঁধার খুব,
প্রতিবাদের ভান করছি, আসলে নিশ্চুপ।

#

তুমি নও, আমি নই, তবে কারা ভাঙে বুক?
আয়নায় চেয়ে দেখো ভাসে হায়েনার মুখ।

#

চলে যাই তবু জানি রয়ে যাই ফেলে আসা পায়েদের ছাপে,
দূরে যাই যতো, ঠিক ততো বুকে বুকে আমাদের ছায়াগুলো কাপে।

#

ওই যে পরিপাটি দেয়াল,
মসৃণ পলেস্তরার আড়ালে সেও সঙ্গোপনে লুকিয়ে রাখে
অমসৃণ ক্ষতবিক্ষত টকটকে লাল ইট।
ইটের রঙ লাল কেনো কে জানে?
মানুষ না হয় হাসি মুখেই
বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখে রক্তজমাট ক্ষত!
দেয়ালও কি দুঃখ লুকায় তবে?

এই যে মানুষ কাছে থাকবে বলে,
চার দেয়ালের ঘর তুলে হয় কাছের,
সেই দেয়ালই বিভেদ হয়ে আবার,
দূর করে দেয় যে ছিলো ঠিক পাশে!

মানুষ এবং দেয়াল,
কোথাও কি এক রকম?
বাইরে রাখে ভীষণ পেলব,
বুকের ভেতর জখম!

#

আমার আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
না সমুদ্র, পাহাড় কিংবা বনের কাছে,
না আকাশ, মাটি, মৃত্যু কিংবা জীবনের কাছে।
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
কারণ, সবখানে মানুষ রয়েছে!

#

পুরুষের বেশ ধরে, শ্বাপদের সন্ন্যাস,
তবু কেন এই দেশে, মেয়ে তুই জন্মাস!

#

যাকে তুমি ঠকিয়েছো, আসলেতো সেও ঠিক তোমাকে ঠকায়,
আয়নায় চেয়ে দেখো, তোমার বদলে ‘ঠগ’ চেহারা দেখায়!

#

এই যে তুমি ঘৃণার করো চাষ,
ঘৃণার ফসল ফলাও বারো মাস।
ঘৃণাই তোমার ভরণ-পোষণ,
ঘৃণায় বসবাস!
তুমিও রাখো জেনে,
তোমার জন্যও জমছে ঘেন্না, হয়তো এই এখানে!
কিন্তু যা জানো না,
ঘৃণার বদলে তোমার জন্য কেবল করুণা!

#

এই যে দেখো খুন শিখেছি, খুন!
ওই যে দেখো মানুষ ভয়ে ভীত।
আমার মতে তোমার ‘না-মত’ হলে,
আজ বেঁচেছো, কালকে তুমি মৃত।

#

এই যে তুমি খুন করছে মানুষ, এই যে তুমি রক্তে রাঙাও হাত,
রক্ত কি আর ধর্মের রং জানে? ধর্ম জানে রক্তের কোন জাত?
এই যে তুমি খুনের নেশায় মাতো, এই যে তুমি লাশের সংখ্যা গোনো,
রক্ত-লাশে তুষ্ট কি হয় প্রভু? মারলে মানুষ ধর্ম বাঁচে কোনো?

#

আমি সে-ই,
অভিমানে চলে যেতে যেতেও, ফিরে আসতেই–
দেখি, তোমার দরোজা জুড়ে খিল।
কোথাও চিহ্ন নেই আমি যে ছিলাম,
কোথাও গন্ধ নেই, যা কিছু দিলাম,
অন্য হাসি-কলোরোলে, গৃহ ঝিলমিল।

নতুন আলোয় ভাসে দখিনা দুয়ার,
নতুন জলের ভাষা অচেনা কুয়ার,
আমি তাই–
অচেনা আগন্তুক, উঠোনে দাঁড়াই।

জানি, নির্বাক ঠোঁট তবু চোখ ছলছল,
সময়ের স্বরে বুঝি আমিই অচল।

আমি সে-ই,
বিভ্রম কেটে গেলে দেখি, আমি নেই।

#

এই যে অসংখ্য মানুষ ফেলে আমি চলে আসি তোমার কাছে,
অজস্র পথ রেখে চলে আসি তোমার পথে,
এই যে জগতের সব প্রাপ্তি উপেক্ষা করেও আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার।

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

এই যে জলের মতন আমার বুকেও ছলাৎছলাৎ শব্দ হয়,
এই যে মেঘের মতো আমার বুকেও বিষাদ জমে।
এই যে বৃষ্টির মতো আমার চোখেও কান্না হয়।

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

এই যে অগণন ঠিকানা রেখেও আমি চিঠি লিখে যাই তোমার ঠিকানায়,
অগুনতি আনন্দ ফেলেও আমি দুঃখ পেতে যাই তোমার কাছে।
এই যে অসীম আকাশ ফেলেও আমি বন্দি হতে চাই তোমার খাঁচায়।

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

জানি পারো না! তাতে দুঃখ নেই আমার।
কারণ, ভালোবাসা কিংবা দুঃখতো জানেই, এ সিঁড়িতে পথ নেই নামার!

#

একা রাস্তায়, দেখে হাসতেই,
চোখে বলতে, ভালোবাসতেই,
আমি জানতাম, পথ চুপচাপ,
তবু কোলাহল, তুমি আসতেই।

একা সন্ধ্যা, জানে আলো নেই,
কেউ হাসছে, তবু ভালো নেই,
আমি জানতাম, তুমি স্বপ্ন,
তবু খুঁজতাম, আলো জ্বালালেই।

একা রাত্তির, বুক তড়পায়,
চোখ জ্বলছে, জমা-খরচায়,
আমি ভাবতাম, আমি মিথ্যে,
তুমি দাঁড়াবেই, এসে দরজায়!

একা রাস্তায়, একা হাসতেই,
আমি বলতাম, ভালোবাসতেই,
তুমি নেই, তবু ভাবতাম–
ঘরে ফিরব, তুমি আসতেই।

#

জানে যদি কেউ, কতটুকু ঢেউ,
তোমাকে ডোবায়,
দিঘিটির জলও, হয়ে টলমল,
খোঁজে সে উপায়!

জানে যদি চোখ, কতটুকু শোক,
তাহারে পোড়ায়,
কিছু বুকে রাখে, কান্নার ফাঁকে,
বাকিটা ওড়ায়।

জানে না মানুষ, দূরের ফানুস, কী ব্যথায় লীন হয়ে যায়,
জানে না দুঃখ, কতটুকু সুখও, দিন শেষে ঋণ হয়ে যায়…

জানে যদি ঠোঁট, ওলট-পালট,
রাত্রি ব্যথায়,
স্মৃতিটির নদী, জাগে নিরবধি,
না বলা কথায়!

তুমি যদি জানো, কী কথা লুকানো,
জানালার কাচে,
তবে জেনে রেখো, তুমিই এখনো,
অসুখ ছোঁয়াচে!

#

একদিন শহরের সব পথ যদি–
হয়ে যায় নদী!
জানালার পাড়-জুড়ে জমে বারবার,
চাতক চোখের কোণে, নোনা জল–কান্নার।

একদিন শহরের সব ঘর,
যদি, হয়ে যায় পর?
তবে তুমি কার বুকে ফিরবে আবার?
কার কোলে সঁপে দেবে একাকী সে রাত, নিয়ন-আঁধার!

একদিন শহরের সব হাওয়া,
ভুলে গিয়ে পাওয়া,
হাহাকারে ডুবে যদি হয়, দীর্ঘশ্বাস।
তবে তুমি তার, কতটুকু আর, লুকোবে আবার?
নাকি নিশাচর জানালায়, জেগে থাকা চোখ,
জলের স্রোতে হবে অচেনা অসুখ।

তারপর–
শহরের সব ঘর, হয়ে যাবে পর।
শহরের সব পথ, অভিমানে যদি,
জানালায় জেগে থাকা অযুত চোখের জলে,
হয়ে যায় নদী!

#

মেঘলা বুকে, কার অসুখে,
কিছু ইচ্ছে, পিছু নিচ্ছে।
একলা ঘর, ভীষণ পর,
মেঘের মতো, ছুঁয়ে দিচ্ছে।
জমছে সূক্ষ্ম, কিছু দুঃখ,
কিছু কান্না, অশ্রু আর না।
লুকিয়ে একা, বৃষ্টি দেখা,
জানুক আজ, কিছুই তার না।
একলা কাক, ভিজেই যাক,
আবছা কাঁচের, জল অবাক।
কেউ কি দেখে, আঙুল লেখে,
আজ মেঘের মতোই, মন খারাপ!

#

কিছু পুরনো দিন, কিছু ঘাসফড়িং, আকাশ হারায়,
কিছু পুরনো মুখ, হয়ে নতুন অসুখ, দু হাত বাড়ায়।
কিছু জলের আয়না, দেখতে চায় না, ভুলের দাগ,
তবু হাত-রেখায়, থাকে রাত দেখা, ঘুম ভাঙে অবাক!
কিছু গ্রিলের ফাঁকে, দুচোখ আঁকে, ঝাপসা মুখ,
থাকুক মন খারাপ, আর একলা রাত, খাপছাড়া সুখ।
কিছু আবছা দিন, হোক আজ রঙিন, কাল দুঃখ হোক,
কিছু বুকের কোণ, হোক হিজল বন, ভুলে সূক্ষ্ম শোক।

কিছু রোদ আসুক, তবু চোখ ভাসুক, হলে মন কেমন,
কারো বুকের বাপাশ, হোক অথৈ আকাশ, হয় মন যেমন।

#

কানামাছি খেলতে খেলতে হঠাৎ ফ্রক ধরা মেয়েটাও জানলো, তাকে জীবনভর
লুকাতে হবে কতকিছু! বুকের ভেতর আস্ত আকাশ লুকিয়ে, যে ছেলেটি
কাটিয়ে দিলো মধ্যদুপুর, সেও জানলো, তাকে কাটাতে হবে লুকোচুরির দীর্ঘ
জীবন!
একটা মানুষ,
একটা জীবন।
একটা নদী–
অগুনতি ঢেউ।
নদী না জানলেও মানুষ জানে ঢেউ লুকাতে,
বুকের ভেতর গভীর ক্ষত চোখের জলে রোজ শুকাতে।
মানুষ জানে, হু হু করা দীর্ঘশ্বাসের সপাট বাতাস, ভেঙে দিলে বুকের কপাট,
বন্ধ থাকুক স্মৃতির মিছিল।
অন্ধকারের বন্ধঘরে গুমরে মরুক চাতক জীবন।
লুকোচুরির একটা জনম, কাটিয়ে শেষে মানুষ ভাবে, ‘একজীবনে লুকিয়ে গেলাম
হাজার জীবন’।

আসলেতো, লুকোচুরির জীবনজুড়ে, মানুষ কেবল দুঃখ লুকায়!

#

তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সন্ধ্যার ম্লান আলোয়। অন্ধকার নেমে আসবে বলে আমি খুঁজে মরছিলাম কেরোসিনের কুপি। গতরাতের ঝড় জলে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়েছিলো সলতে। আমি তা শুকাতে পারিনি। ঠিক তখন, তুমি ঝলমলে সূর্য নিয়ে এলে, আমি অবাক তাকিয়ে রইলাম, সন্ধ্যাতো সূর্যের ডুবে যাবার সময়! এ কোন আলো তবে?
তুমি বললে, ‘তুমি কি সব আলো চেনো?’
আমি বললাম, ‘আলোর আবার রকম হয়?’
তুমি বললে, ‘হয়’।
আমি তাকিয়ে রইলাম। তুমি হাসছো। তোমার ঠোঁটের ফাঁকে ওম। তুমিজুড়ে অদ্ভুত এক মায়াবৃক্ষ। তোমার চোখের কোলে মায়াবতী নদী। গাঢ় ও গভীর। আমার আচমকা সেই নদীতে ডুবে যেতে ইচ্ছে হলো। আমি বললাম, কে বেশি ডোবায়, আলো, না অন্ধকার?
তুমি বললে, অন্ধকার।
–আলো নয় কেন?
–আলোর চেয়ে অন্ধকারে বিভ্রম বেশি।
–ডুবে যেতে তবে বিভ্রম চাই?
— হুম।
আমি স্নান স্বরে বললাম, ‘তুমি যে তবে আলো নিয়ে এলে?’
— এই আলো অন্ধকারের মতন।
— আলো কী কখনো অন্ধকারের মতন হয়?
— হয়।
তুমি হাসছো। তোমার চোখ হাসছে। সেই চোখে উথাল-পাথাল ঢেউ তুলে দিচ্ছে মায়াবতী নদী। সেই নদীতে আমি ডুবে যেতে যেতে আবিষ্কার করলাম, আচমকা আলো নিভে গেছে। চারপাশ সকলই অন্ধকার। কোথাও কেউ নেই। না তুমি, না তোমার আলো। অথচ আমি ডুবে রইলাম, এক গভীর মায়ার নদীতে। কেউ কেউ বলে মায়ার আরেক নাম বিভ্রম। আমি কী তবে ডুবে রইলাম বিভ্রমে! এক অন্তহীন বিভ্রমে। বাকি জীবনের সকল বিভা ক্রমশই কেড়ে নিতে থাকে ‘তুমি’ নামের সেই বিপুল বিভ্রম!

#

একটা দুঃসংবাদ আছে, যারা আমাকে ভেঙেচুরে টুকরো কাঁচের মতো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো, তাদের জন্য।
দুঃসংবাদটি তাদের জন্যও, যারা ভেবেছিলে আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবনা। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবো গা ঘিনঘিনে কাদায়।
আমাকে ছিঁড়ে কাগজের মতো কুচিকুচি করে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলে আমি হারিয়ে যাবো দিকশূন্যপুর।
যে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিতে চেয়েছিলো অতলান্তিক বিষাদ সমুদ্রে, ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিলো এক পৃথিবী বিম্বিষায়।
যে আমাকে অযুত রাতের কান্না লিখে দিয়ে বুকের ভেতর খুঁড়ে দিতে চেয়েছিলো শ্যাওলা জমা স্যাঁতসেঁতে এক মজা পুকুর।
যে আমাকে দুঃখ দিয়ে, পুড়িয়ে শেষে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলে ছাইয়ের মতন।
তাদের জন্য দুঃসংবাদ।
আমি এখন পাখির মতন, আমায় ছিঁড়ে কুচিকুচি ভাসিয়ে দিলে, এখন আমি ডানা মেলে আকাশজুড়ে উড়তে জানি।
কাটা যায়না, ভাঙা যায়না, আমি এখন জলের মতন।
ভেসে যেতে যেতেও হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দিতে আমিও জানি।
আমিও জানি ছড়িয়ে থাকা টুকরো কাঁচের শরীর থেকে, দু ফলা এক ছুরি হতে।
এই যে মানুষ দুঃখ দিতে দক্ষ ভীষণ, সেও জানুক আমি এখন হাসতে জানি, শ্যাওলা জমা পুকুর জুড়ে আমিও এখন রোদের মতো ভাসতে জানি, প্রস্থানের গল্প লিখেও ইচ্ছে হলেই আবার ফিরে আসতে জানি।

আমি এখন পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের ভেতর জেগে ওঠা ফিনিক্স পাখি।

আমি এখন মৃত্যু মেরে বাঁচতে জানি।

#

সন্ধ্যা যার,
বুক কাঁপার,
শোক মহল।
চক্ষু তার,
দুঃখ ভার,
ঘুম দখল।

শব্দহীন,
রাত গহিন,
কাঁদছে কেউ।
চুপ কথার,
দুঃখ তার,
তুলছে ঢেউ।

একলা কাঁচ,
কার আওয়াজ,
চুপ লুকায়?
একলা মন,
কোন দহন,
খুব শুকায়?

আমরা সব,
জ্যান্ত শব,
ঘর জুড়ে,
দেখছে কে,
কার পোড়ে,
বুক খুড়ে?

বাড়ছে রাত,
শূন্য হাত,
বাড়ছে খুব।
জমছে জল,
কার কাজল,
ভাসছে খুব!

#

এই যে বাতাস,
বুক ভরে টেনে নাও,
এও কারো দীর্ঘশ্বাস!

এই যে নিঃশ্বাস,
বুক ভরে টেনে নাও–
এও কারো অবিশ্বাস!

নারীর শরীর আর রক্তের দাগ,
এখন আর হয় না অবাক।

নিজেকেই ঘৃণা তার, বারবার,
#জরায়ুতে কী করে সে ধরবে, পুরুষ আবার!

শোন হে পুরুষ,
এই যে বাতাস,
বুক ভরে টেনে নাও–
শোনা যায়, কারো দীর্ঘশ্বাস?

এই যে বাতাস ভারী হয়, কার অভিশাপে?
কার অভিশাপ, মুছে দিতে পাপ,
হয়ে যায় মূক?
‘পৃথিবীর সকল পুরুষ হোক, নপুংসক।’

#

আমরা একদিন নিরো হয়ে যাব,
তারপর বাঁশি বাজাব কোনো এক কল্পিত রোম নগরীতে।
আমাদের বাঁশির সুরে হ্যাঁমিলিয়নের বাঁশিওয়ালা হারানো ইঁদুর ও শিশু সহ উদয় হবে ভূমিতে।
তারপর শিশুদের ভক্ষণ শেষে সমুদয় ইঁদুর নৃত্য করবে বাঁশির সুরে।
অথচ তারা জানল না, বাঁশির সুরের অপেক্ষায় ছিল শীতনিদ্রার গোখরাও।
সাপের প্রিয় খাবার নাকি ইঁদুর।
অথচ নিরোরা বাঁশির সুরে ডেকে আনতে চেয়েছিল মানুষখেকো মূষিক।

তারপর সেই সাপের বিষে নীল হয়ে যেতে থাকবে আমাদের কণ্ঠনালিও।

তারপর খসে যেতে থাকবে আমাদের জিভ,
উপড়ে যেতে থাকবে চোখ, আমাদের কানে গলে গলে ঢুকে যেতে থাকবে সিসা।
আমরা বোবা, বধির ও অন্ধের ন্যায় দেখতে থাকব জগত।

সেখানে অন্ধকার ছাড়া আর কোনো রং থাকবে না।
তারপরও অন্ধত্ব বাদ দিয়ে আমরা তখন তর্ক জুড়ে দেব, আদতে অন্ধকার কোনো রং কিনা!

#

আমাদের কেউ আর কারো চোখে রাখিনাতো চোখ,
হেঁটে যাই দূর কোনো পথে, ভেবে নেই ওখানেই আনন্দলোক।
আমাদের ফেলে আসা পথে, জমে থাকে স্মৃতি,
জেগে ওঠে বিষাদের বিবর্ণ ঘাস,
উত্তুরে হাওয়া এসে তিরতির ছুঁয়ে দেয়
গোপানে লুকিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাস!
আমাদের কেউ আর কারো মুখ রাখিনাতো মনে,
কী যেন কীসের ব্যথা তবু জাগে গোপনে গোপনে।
চেনা মুখ, চেনা মন, চেনা পথ ভুলে গিয়ে
আমরাই ছুটে যাই অচেনাকে করতে আপন,
তবুও নিশীথ জানে, বুকের গহিন কোণে
জেগে ওঠে চেনা কোন অচেনা কাঁপন।

একদিন পথ হলে শেষ, হিসেবের খাতা খুলে
বেহিসেবী হতে চায় ক্লান্ত এ মন,
সেইদিন আমরাই, খুঁজে পাই আমাদের,
ভুলে ভরা ব্যর্থ শ্যাওলা জীবন।

#

এই যে আমার মন করছে কেমন,
এই যে আমার বুক থরথর কাঁপে,
তোমার কি আর এমন কভু হয়?
একাকী রাত কেটেছে সন্তাপে?

তোমার যদি ভালো থাকাই হয়,
আমার কেননা এমন একা লাগে?
একটা জীবন এক মানুষের তরে,
কেননা এমন বিষণ্ণতায় জাগে!

এই যে এত আলোর ডাকে বান,
এই যে এত কোলাহলের দিন,
তবুও কেনো আমায় ঘিরে আঁধার,
নীরবতায় হৃদয় থাকে লীন?

আমিও যদি তোমার মতো হই,
তোমায় বিহীন রোজ থেকে যাই ভালো,
তখনও কি এমন তুমিই রবে,
নাকি হঠাৎ হবে, জগত এলোমেলো?

###

1 Comment
Collapse Comments

khubi bhalo lekhen apni,darun lage

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *