প্রতারক – অভিজিৎ সেন

প্রতারক – অভিজিৎ সেন

দিলীপ ১৬-১৭ বছর বয়েসি তরুণ

প্রবীর ,,

অসিত ,,

অমিত

বিশ্বনাথ পেটের রোগে রুগ্ন যুবক

নকুলদা ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার

সঞ্জয় সাপুড়ে

প্রথম দৃশ্য

[ সময়- প্রখর গ্রীষ্মের দুপুর। বাইরে ধুলো, পাতা নিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। স্থান- ছোটো মফসসল শহরের ডাকবাংলোর মোটামুটি সাজানো বৈঠকখানা।

দিলীপ, প্রবীর, অসিত, অমিত। তাদের দুজনের পরনে বারমুডা ও হাত-কাটা গেঞ্জি। একজনের জিনসের প্যান্ট, একজনের পাজামা-পাঞ্জাবি। এবং বিশ্বনাথ ]

দিলীপ। লোকটা গেল কোথায়? কোল্ড ড্রিংকস পাওয়া যাবে না পৃথিবীতে এমন জায়গা আর আছে নাকি? উঃ কী ঝোড়ো হাওয়া আর গরম।

অসিত। আরে, কলিং বেলের বোতামটা টিপে ধরে থাক না। আসবেই।

দিলীপ। টিপলাম তো। বাইরের ঝোড়ো বাতাসের শব্দে বোঝাই যাচ্ছে না যে ওটা বাজছে কি না। উঃ, এরকম একটা সময় কেউ এক্সকারশনের জন্য বাছে! আর এরকম একটা জায়গায়!

বিশ্বনাথ। দরজাটা খুলে চেঁচিয়ে ডাক না।

দিলীপ। (দরজা খুলে গলা বাড়িয়ে) ও নকুলদা, নকুলদা- আরে, কে বসে ওখানে? (ভিতরে তাকিয়ে) একটা লোক বসে আছে বারান্দায়।

অসিত। এই ধুলোর ঝড়ে! ডাক ডাক, ভিতরে ডাক!

দিলীপ। আরে, এ ভাই, ভিতরে এসো, ভিতরে এসো।

[ দ্বিধা নিয়ে একটি সতেরো-আঠারো বছরের তরুণ ভিতরে আসে। চেক-লুঙ্গি পরা লোকটির গায়ে সাদা পাতলা পাঞ্জাবি একটা। নীল রঙের ছেঁড়া কাপড়ের একটা টুকরো মাথায় বেঁধে সে একটু রহস্যময় হয়েছে। তার একহাতে দড়ির শিকলিতে ঝোলানো একটা ছোটো সাপের ঝাঁপি, কাঁধে কাঁথা দিয়ে তৈরি একটা বৈরাগি-ঝোলা। এর নাম সহুগ ]

দিলীপ। কী আছে ঝাঁপিতে, সাপ নাকি?

[ ম্লান হেসে সঞ্জয় দরজার কাছেই মাটিতে তার ঝোলা নামাল ]

সঞ্জয়। খুব রোদ বাইরে, ধুলা আর হাওয়া।

অমিত। ফ্যানের নীচে সরে বসো।

বিশ্বনাথ। তুমি সাপ খেলা দেখাও নাকি?

[ সঞ্জয় হাসে। তাতে -হাঁ- কিংবা -না- কোনোটাই পরিষ্কার বোঝা যায় না ]

অমিত। কী নাম তোমার?

লোকটি। সঞ্জয়, সঞ্জয় নাগবংশী।

বিশ্বনাথ। নাগবংশী!

প্রবীর। (এতক্ষণ সেন্টার টেবিলের উপর দু-পা তুলে সোফায় মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল) বিশ্বনাথ, দেখ তোর জন্য কোনো ওষুধপত্তর আছে কি না। (সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে)

বিশ্বনাথ। না ভাই, ওষুধ থাকে না অনেক সময়।

প্রবীর। থাকতেই হবে। সাপের ঝাঁপি, ঝুলি, সাপুড়ে, আর ওষুধ থাকবে না!

বিশ্বনাথ। যাঃ, ইয়ারকি করিস না। কী ভাই, একটা মাত্র সাপ? সবে ধরে নিয়ে এলে নাকি?

[ সঞ্জয় আগের মতোই লাজুক হাসে ]

দিলীপ। সাপটা বার করো দেখি।

[ সঞ্জয় মাথার ফেট্টি খুলে মুখের ও ঘাড়ের ধুলো, ঘাম মোছে। আগের মতোই হাসে ]

সঞ্জয়। জলের কলটা কোনদিকে বাবু?

বিশ্বনাথ। খাবে? খাবার জল। দাঁড়াও-

[ সে পাশ থেকে একটা জলভরতি বোতল তুলে সঞ্জয়ের হাতে দেয়। বোতল থেকে গলায় জল ঢেলে খেয়ে কাপড়ের টুকরোটা দিয়ে ফের মুখ-চোখ মোছে সঞ্জয় ]

অসিত। কই, এবার সাপটা দেখাও।

সঞ্জয়। আমি সাপ খেলা দেখাই না দাদা, আমি শুধু সাপ ধরি।

দিলীপ। তাই কখনো হয়? সাপ ধর আর খেলা দেখাও না!

প্রবীর। কী কর তাহলে সাপ দিয়ে?

সঞ্জয়। বিক্কিরি করি। সাপ বিক্কিরি করি, বিষ বিককিরি করি, এইসব। সাপ ভাড়াও দিই।

অসিত। সাপ ভাড়া! সে আবার কী?

সঞ্জয়। যারা সাপ খেলা দেখায়, তারা ভাড়া নেয়। ভাড়া নিয়ে খেলা দেখিয়ে ফের ফেরত দিয়ে যায়।

অসিত। তাই?

বিশ্বনাথ। সাপের বিষের ওষুধ জানা নেই কিছু? মন্তর-তন্তর?

[ সঞ্জয় বিস্তৃত হাসে ]

দিলীপ। (লাফ দিয়ে উঠে বিশ্বনাথের গলায় একখানা তোয়ালের প্যাঁচ লাগাল। তারপর ভঙ্গি করে) অন্তর-মন্তর কাম করন্তর ছু পটান্তর ছুঃ- দে দশ রূপাইয়া- (সবাই হাসে)

প্রবীর। ব্যাপারটা কী হল?

দিলীপ। ও তুই ব্যাপারটা এখনও জানিস না! আরে, দিন দশেক আগে বিশ্বনাথ একদিন ময়দানের ওখান থেকে ফিরছিল। এক জায়গায় ভিড় দেখে গলা ঢুকিয়ে দিয়ে দেখে এক সাধু একটা বড়ো ময়াল সাপ নিয়ে সব লোকের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে। বিশ্বনাথ যেই ভিড়ের ভিতরে মাথাটা গলিয়েছে, ব্যাস, সাধু অমনি সাপটা ওর গলায় পরিয়ে দিল। ব্যোম ভোলে, তেরে ভালা হোগা বেটা, সব বিমার বিলকুল ঠিক হো যায়গা-আমাশা সার যায়গা, সিনা আটচল্লিশ ইঞ্চি হোগা-রোল, বিরিয়ানি, কাবাব যিতনা খুসি গপাগপ খায়গা- বলে পকেট থেকে দশ টাকা তুলে নিল। হা হাঃ হোঃ হো-আর ওই দশটা টাকাই ওর পকেটে ছিল। ব্যাটা শেষে হাঁদার মতো হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরল। হাঃ-হা-

[ সবাই হোহো হাহা করে হাসে ]

অমিত। সত্যি বিশ্বনাথ, লোকটা তোকে চিনল কী করে?

বিশ্বনাথ। আমিও তাই ভাবি রে। আসলে সাপটা যখন গলায় পরিয়ে দিল না, আমি যেন কেমন হয়ে গেলাম। সত্যিই মনে হল আমার আমাশা, জিয়ারডিয়া, ডিসপেপসিয়া, সব সেরে যাচ্ছে। আমি তোদের মতো, ওই যেগুলোর নাম দিলীপ করল না, গপাগপ করে খেতে পারব। মাইরি- তবে কী জানিস ভাই, মন্ত্রশক্তি বলে একটা ব্যাপার আছে। গাছগাছড়া থেকেই তো ওষুধপত্তর হয়। কী ভাই, নেই?

দিলীপ। (ভঙ্গি করে) তেরি ভালা হোগা বেটা, দে দশ রুপাইয়া! (সবাই ফের হাসে)

সঞ্জয়। মন্তর-তন্তর কিছু নাই, দাদা। গাছড়া কিছু আছে, তবে তেমন গুণী লোক কোথায় যে এসবের সন্ধান রাখবে?

প্রবীর। জমে গেছে। দিলীপ, নকুলকে আর একবার খোঁজ কর। ফোর, প্লাস ওয়ান ফর সঞ্জয় নাগবংশী, পাঁচটা থামস আপ আনতে বল। বিশ্বনাথের জন্য মোক্ষম ওষুধ এবার পাওয়া যাবেই। আর ওকে পকেটে হোমিওপ্যাথির মোড়ক নিয়ে ঘুরতে হবে না।

বিশ্বনাথ। সবকিছু নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ারকি করিস না। এখনও অনেক কিছু আছে। কই ভাই গাছড়া দেখাও-

অসিত। না আগে সাপ।

বিশ্বনাথ। আরে সাপের মধ্যে আর নতুন কী দেখবি। আগে গাছড়া কী আছে তাই দেখি।

অসিত। আগে সাপ-ভোট হোবে? (বিশ্বনাথ বাদে অন্য তিনজন একসঙ্গে হাত তুলে) আগে সাপ!

[ দিলীপ দরজা খুলে- নকুলদা, ও নকুলদা, আরে কোথায় গেলে- বলে ডাকতে নকুল প্রায় ছিটকে এসে ঘরে ঢুকল। অত্যন্ত ঢেঙা এবং অত্যন্ত টাইট জামা, প্যান্ট, সু-পরা নকুলের হাবেভাবে একটা সাহেব-সাহেব ব্যাপার আছে ]

নকুল। ইয়েস বস?

দিলীপ। ফাইভ থামস আপ!

নকুল। ফোর প্লাস ওয়ান? (নিজের বুকের দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে)

দিলীপ। নো। ফোর প্লাস ওয়ান! (সঞ্জয়ের দিকে এক আঙুল দেখায়)

নকুল। ইমপসিমবল, এই ঝোড়ো হাওয়া আর রোদ্দুরে!

দিলীপ। অলরাইট, ফাইভ প্লাস ওয়ান।

[ পকেট থেকে পার্স বের করে সে একটা একশো টাকার নোট নকুলের হাতে দেয়। নকুল দু-আঙুলে স্যালুট করে বাইরে বেরিয়ে যায় ]

অসিত। কই এবার সাপটা দেখাও সঞ্জয় নাগবংশী।

সঞ্জয়। তাজা সাপ, সবে ধরা। দেখবেনই যখন-আরে না না, ভয় নেই। আপনার দেখি খুবই ভয় দাদা। আচ্ছা দাঁড়ান, একটা জিনিস আছে কি না দেখি আমার থলিতে। এই যে পাওয়া গেছে। এটা হাতে নিয়ে বসুন, তাহলে আর ভয়ের কারণ থাকবে না। (একটা লম্বা কাঁকুড়ের বিচির মতো ফল বের করে সে। ফলটায় দুই প্রান্তে অতিসূক্ষ্ম রোঁয়া আছে। ফলটা সে বিশ্বনাথের হাতে দেয়)

বিশ্বনাথ। কী ফল এটা?

সঞ্জয়। এ হল অমর ফল।

দিলীপ। তেরা ভালা হোগা বেটা!

অসিত। নাগবংশী, সাপটা আগে দেখাও।

সঞ্জয়। দেখাই বাবু। এই ফলের ভরসাতেই আমাদের যত ওস্তাদি আর বুজরুকি।

বিশ্বনাথ। এ ফল হাতে থাকলে সাপ কামড়াবে না?

সঞ্জয়। সাপের কি আর বুদ্ধি আছে? সাপের কাজ কামড় দেওয়া। কামড় সে দেবেই। তবে কিনা-

বিশ্বনাথ। মন্তর-টন্তর দেওয়া নাকি ফলটা?

সঞ্জয়। আরে না না, মন্তর-টন্তর আমি জানি না। ওস্তাদের নিষেধ আছে। বুজরুকি করতে পারব না, দাদা। অমর ফল আর মণিরাজের শিকড়, এই দুই জিনিসের-

অসিত। মণিরাজের শিকড় আছে তোমার কাছে? এ জিনিসটার কথা আমি আমার এক মামার কাছ থেকে শুনেছিলাম। সে অসমে থাকে।

সঞ্জয়। মণিরাজের শিকড় পাওয়া বড়ো কঠিন দাদা। পাওয়া যায় অসমের গারো পাহাড়ে। আমার ওস্তাদের বাড়িও অসমে।

বিশ্বনাথ। মণিরাজের শিকড় আছে তোমার কাছে?

সঞ্জয়। আছে খানিকটা।

বিশ্বনাথ। আসল?

সঞ্জয়। (রহস্যময় হাসি হেসে) আমি বিক্কিরি করি না দাদা।

দিলীপ। অমর ফল আর মণিরাজের শিকড়ে কী কী রোগ সারে?

সঞ্জয়। শুনেছি অনেক রোগই সারে। তবে ওসব আমার কাজ নয় বাবু। আমি শুধু সাপ ধরি। সাপকাটি হওয়া রোগীকে সারানো যায় বটে এই ফল আর শিকড় দিয়ে, কিন্তু-

অসিত। তুমি কাউকে কখনো বাঁচিয়েছ?

[ সঞ্জয় প্রশান্ত ভঙ্গিতে বিচিত্র রহস্যময় হাসি হাসে ]

দিলীপ। ধ্যুত, যত্তোসব! (সংলগ্ন বাথরুমে ঢোকার জন্য দরজা খোলে)

সঞ্জয়। বের হবার সময় মগে করে আধামগ জল আনবেন দাদা, একটা জিনিস দেখাব।

[ দিলীপ ঘাড় বেঁকিয়ে একবার সঞ্জয়কে দেখে, বাথরুমে ঢুকে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই মগে করে জল নিয়ে ভিতরে আসে ]

দিলীপ। কী দেখাবে, দেখাও!

[ সঞ্জয় মগের জলের মধ্যে হাতের ফলটা ফেলে। একটু নাড়াচাড়া করে মগটা। সবাই মগের ওপর ঝুঁকে পড়ে ]

সঞ্জয়। দেখুন এবার।

দিলীপ। কী দেখব?

সঞ্জয়। ফলটা জলের ভিতরে নিজে নিজেই নড়াচড়া করছে।

দিলীপ। ধ্যাত, কোথায় নড়ছে?

বিশ্বনাথ। দেখি, দেখি! নড়ছেই তো! আরিব্বাস! এতো সত্যিই অমর ফল!

প্রবীর। দেখি। হ্যাঁরে ভাই, নড়ছেই তো! যেন মনে হচ্ছে খুব ধীরে ধীরে সাঁতার দিচ্ছে ফলটা!

অমিত। দিলীপ, ভালো করে দেখ।

দিলীপ। নড়ছে-মানে কীরকম যেন-সত্যিই তো- মানে-

বিশ্বনাথ। এ ফলে কী কী রোগ সারে?

সঞ্জয়। বাত সারে, হাঁফানি সারে, মিরগি-

বিশ্বনাথ। আর আমাশা? ডিসপেপসিয়া?

সঞ্জয়। পেটের রোগের চিকিৎসায়, বাবু, আর একটা জিনিস এর সঙ্গে রাখতে হবে।

বিশ্বনাথ। মণিরাজের শিকড়?

সঞ্জয়। ধরেছেন ঠিক। তবে এসবের আসল মাহাত্ম্য সাপের বিষ নামানোতে। একটু যদি দুধ জোগাড় করে আনতে পারেন, তবে অমর ফলের কেরামতি আরও কিছু দেখতে পেতেন।

বিশ্বনাথ। কী কেরামতি?

সঞ্জয়। ফল দুধে ফেললে দুধ শুষে নেবে। জল দুধ মিশিয়ে দিলে জল পড়ে থাকবে, দুধ শুষে নেবে। এর মধ্যে মিথ্যা কিছু নেই, মন্তরও নেই।

প্রবীর। আরে, নকুলের কোলে বাচ্চা দেখছিলাম না। সকাল বেলা? ওর ঘরে নিশ্চয়ই দুধ পাওয়া যাবে। ডাক না ওকে।

দিলীপ। ধ্যাত দুধ! থামস আপই আসল না এখন পর্যন্ত, তা আবার দুধ! আচ্ছা ভাই নাগবংশী, থামস আপের মধ্যে এই ফলটা ফেললে কী হবে? জল আর ইয়ে আলাদা হবে?

[ ঝাঁপির ওপরে আস্তে আস্তে তিন-চারটে চাপড় মারে সঞ্জয়। তেমনি রহস্যময় হাসি তার মুখে। ঝাঁপিটা দু-হাতে তুলে মুখের কাছে আনে। ডালা সামান্য ফাঁকা করে শ্বাস টেনে গভীর ফুঁ দেয়। একবার, দুবার। সাপ ভিতর থেকে ক্রুদ্ধ গর্জন করে ]

বিশ্বনাথ। পেটের রোগের চিকিৎসায় অমর ফল দিয়ে কী করতে হবে?

সঞ্জয়। তেমন কিছু নয়। প্রথমে একটুখানি দুধের মধ্যে ফলটা ভেজাবেন, এই একটুখানি। তাতে দেখবেন ফল খানিকটা দুধ টেনে নেবে। তারপর এক গেলাস জলে ফলটা সারারাত ফেলে রাখবেন। সকালে উঠে খালি পেটে জলটা খেয়ে নেবেন, ব্যাস।

বিশ্বনাথ। আর মণিরাজ?

সঞ্জয়। মণিরাজের শিকড় কোমরে একফেরতা কালো কার দিয়ে বেঁধে রাখবেন। হ্যাঁ, খোলা শিকড়, মাদুলির ভিতরে নয়।

প্রবীর। মানে বডি টাচ?

অসিত। আঃ তোরা থামবি? আরে ভাই সাপটা দেখাবে, না এই সব আবোলতাবোল বক্তৃতা দেবে?

সঞ্জয়। (অসিতের দিকে তাকিয়ে হেসে প্রবীরকে) হ্যাঁ বডি, বডি, কিন্তু পাবেন কোথায় এ বস্তু?

প্রবীর। কেন, তোমার কাছে নেই?

সঞ্জয়। আমি তো আগেই বলেছি এসব আমি বিক্কিরি করি না। আমার কাজ অন্য।

বিশ্বনাথ। আরে বিক্কিরি না কর, জোগাড় করার তো একটা খরচ আছে। কোথায় পাওয়া যাবে এসব?

সঞ্জয়। মেদিনীপুরে সমুদ্রের ধারে ঝাউগাছের মতো দেখতে একরকম গাছ আছে। হাজারটা ঝাউয়ের মধ্যে একটা হয়তো অমরফলের গাছ পাবেন। সেখান থেকে আনতে হয়।

দিলীপ। আর মণিরাজ?

সঞ্জয়। মণিরাজ পাওয়া যাবে আপার আসামে।

বিশ্বনাথ। আপার আসাম!

প্রবীর। তোমার ব্যাগেই তো আছে।

সঞ্জয়। আছে হয়তো দু-চার টুকরো, কিন্তু সে তো আমার নিজেরই কাজে লাগে দাদা।

বিশ্বনাথ। আরে, তুমি আবার জোগাড় করে নেবে। যে কটা আছে আমাদের দিয়ে তো যাও।

অসিত। সাপে কাটা রোগী কীভাবে বাঁচাও?

সঞ্জয়। ওই অমর ফলের কেরামতি সব। তবে বাবু, ওঝালি, গুনমানি আমি করি না। এই সাপ বেচে, বিষ বেচে যা রোজগার হয়-

দিলীপ। আচ্ছা লোক তো! একটা সাপে কাটা রোগী ভালো করতে পারলে লোকে লাখ টাকা দিতেও রাজি থাকে। আর তুমি-

সঞ্জয়। (এই একবারই উচ্চহাস্য করে) হাঃ হাঃ, কটা মানুষের লাখ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে? যাদের সাপে কাটে তাদের বেশির ভাগই মরা গরিব। আর বছরে কটা মানুষকেই বা সাপে কাটে? গত বছর আপনাদের এখানে কাউকে কেটেছে?

অসিত। আমরা এখানকার লোক নই।

সঞ্জয়। আপনাদের জানাশোনা কোনো মানুষকে সাপে কেটেছে বাবু? (সব কজনই মাথা নাড়ে) তবেই বুঝুন, সাপের ওঝালি করে কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? এই ঝাঁপিতে যা আছে, দাদা, তা হল সাক্ষাৎ যম। ঠিকমতো একখানা ছোবল যদি দিতে পারে, এক থেকে দু-ঘণ্টার মামলা। ব্যাস! শুধু যদি দুটো একটা গাছড়া বা অমর ফল সাথে থাকে-

অসিত। দেখি, একটা ফল দেখি।

[ সঞ্জয় তার হাতে একটা ফল দেয়। অসিতের পিছনে একটা টেবিলে আধা খাওয়া একটা জলের গেলাস। অসিত সেই জলে ফলটা ফেলে। সামনের দরজাটা দমকা হাওয়ার তোড়ে আচমকা খুলে যায়। দমকা হাওয়া খড়কুটো ধুলো নিয়ে ঢোকে। সব কজন তরুণ গেলাসের মধ্যে উদগ্রীব হয়ে ফলটার নড়াচড়া লক্ষ করে। প্রবীর এগিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে ]

প্রবীর। কিছু আসল জিনিস আছে রে ভাই, কজন আর তার খোঁজ রাখে? গাছগাছড়া দিয়েই তো ওষুধ-বিষুদ তৈরি হয়।

সঞ্জয়। ভগবান যত রোগ পৃথিবীতে দিয়েছে, তার প্রতিটার জন্য সাথে সাথে ওষুধের ব্যবস্থা করেছে। ওঝা, গুনমান মানুষই সে সবের খোঁজ রাখে।

বিশ্বনাথ। দাও তো, দাও তো একটা ফল আর একটুকরো মণিরাজের শিকড়!

সঞ্জয়। আমি সে গুনমান নই বাবু, বড়ো মুশকিলে ফেলালেন। বুজরুকি করতে পারি না যে, যাহোক হাবিজাবি কিছু দিয়ে আপনাদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে চলে যাব। তা ছাড়া এই যম নিয়ে কারবার করি, নিজেরও তো দরকারে লাগে।

বিশ্বনাথ। সে তুমি ভাই আবার জোগাড় করে নেবে। আমরা পয়সা দেব। কিন্তু আমরা তো আর জোগাড় করতে পারব না, বলো?

সঞ্জয়। বড়ো মুশকিলে ফেললেন। আচ্ছা দেখি কী আছে আমার ঝুলিতে। (ঝুলির ভিতর থেকে প্রথমে একটা শিকড়, পরে একখানা ছোটো জাঁতি বের করল সে। ধীরে-সুস্থে শিকড় থেকে চারটি ছোটো ছোটো টুকরো কেটে বাকিটা ফের ঝোলায় ঢুকিয়ে রাখল। ঝোলার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে এরপরে প্রথমে দুটি, তারপরে একটি একটি করে আরও দুটি ফল বার করল সে) এই দু-একটাই আছে। নিন দাদা-

বিশ্বনাথ। (হাত পেতে নিয়ে) কত করে দিতে হবে?

সঞ্জয়। কত আর দেবেন, এ তো আমার ব্যবসা নয়। বিশ-পঁচিশ টাকা করে দিলে আমার খরচ উঠে যাবে। বিশ টাকা সোয়া পাঁচ আনা করে এক-এক জনে।

দিলীপ। সোয়া পাঁচ আনা! কেন?

সঞ্জয়। (হেসে) ও একটা ব্যাপার আছে। সব কথা বলা যায় না বাবু। (প্রবীরের হাতে ফল ও শিকড় দেয়)

প্রবীর। সব জিনিস জানতে নেই। সব কিছুতেই একটা নিজস্ব ব্যাপার থাকে।

[ সঞ্জয় দিলীপের হাতে শিকড় ও ফল দেয় ]

. . . বিদ্যুতের মতো সাপটা মাথা তুলে দাঁড়ায়।

বিশ্বনাথ। থাকতেই হবে! সব কি ছেলেখেলা?

অসিত। সোয়া পাঁচ আনা তো নয়া পয়সার হিসাবে দিতে হবে? সোয়া পাঁচ আনায় কত পয়সা?

[ সঞ্জয় হেসে অসিতের হাতেও ফল এবং শিকড় দেয় ]

দিলীপ। তেত্রিশ-চৌত্রিশ পয়সা হবে।

[ সবাই গুনে গুনে টাকা ও পয়সা দেয়। সব শেষে অসিতও ]

অসিত। এবার তবে সাপটা দেখাও।

[ সঞ্জয় সাপের ঝাঁপিতে আগের মতোই চাপড় দেয়, ফুঁ দেয়। সাপ আগের মতোই গর্জন করে। এক হাঁটু ভেঙে লুঙ্গির কাপড় সরিয়ে অন্য পায়ে ভর করে বসে সে। ঝাঁপির ঢাকনা খুলতে গিয়ে হাত সরিয়ে আনে ]

সঞ্জয়। দেখুন কতগুলো ছোবলের দাগ। এখনও যে বেঁচে আছি, তা ওই ফল আর শিকড়ের দৌলতে।

[ বাড়ানো হাতখানা দিয়ে সন্তর্পণে একটু একটু করে ঝাঁপির ঢাকা খোলে সে। ঢাকনা পুরো খুলবার আগেই বিদ্যুতের মতো সাপটা মাথা তুলে দাঁড়ায়। ঘোর গর্জন করে সে। ছোবল মারার জন্য পিছনে হেলে পড়ে। নিকষ কালো, তরতাজা, ক্ষিপ্র এবং ভয়ংকর সাপ ]

অসিত। কেউটে! নাজা নাজু! ১৫মিলি গ্রাম বিষই একজনকে মারতে যথেষ্ট। ১৫ মিনিটের মধ্যেও মৃত্যু হতে পারে।

সঞ্জয়। (হাসে) এর নাম বিন্নাথুপি আলাদ। হ্যাঁ বাবু, কেউটেও এরই নাম। নয় কিসিমের সাপ এই জাতে। বিন্নার ঘাসের থোপে থাকে তাই নাম বিন্নাথুপি আলাদ। আহাহা- আরে র-র, আহাহা- প্রেম জানো না প্রেমের হাটের বুলবুলা- কাক খাবু সোনার চাঁদ। আরে র-র, কোঠে যাবু বাপ-প্রেম জানো না-

[ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওই একটি কলিই সে গাইতে থাকে। কেমন যেন সন্ত্রস্ত সে। সাপ কিছুতেই তার নিয়ন্ত্রণে থাকতে চাইছে না। খালি সরে সরে পালাতে চায় ভয়ংকর রাগী সেই সাপ ]

বিশ্বনাথ। ঢোকাও ওটাকে! ঝাঁপিতে ঢোকাও! বাপরে, দেখলে বুকের ধুকপুকি বন্ধ হয়ে যায়!

সঞ্জয়। (সাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে) নতুন ধরা তো, ঝাঁপি এখনও অভ্যাস হয়নি। আরে যাস কোঠে সোনার চাঁদ-প্রেম জানো না প্রেমের হাটের বুলবুলা-ও তার কথায় দেখি-

বিশ্বনাথ। আরে ঢোকাও না-

অসিত। না না, থাক। আর একটু দেখি। কী রাজকীয় চেহারা! কী রাজকীয় ভঙ্গি। শ্বাস টেনে গলা ফোলাচ্ছে কেমন দেখ। এই যে পিছনে হেলে যাচ্ছে, এর মানে ও ছোবল মারার সুযোগ খুঁজছে। একটা ফুল লেংথ ছোবলের ওজন একটা ঘুষির ওজনের মতো জানিস? ও যে মাটি থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে মাথা দোলাচ্ছে, তার অর্থ অন্তত সওয়া চার ফুট দূরেও নির্ঘাত আঘাত করতে পারবে। নির্ঘাত মানে লেদাল অর্থাৎ প্রাণঘাতি। তাতে খুব শক্তিশালী মানুষও এক ঘণ্টার মধ্যে মরে যাবে।

দিলীপ। উঃ, থামা তোর পণ্ডিতি। বিশ্বনাথ সত্যিই বলেছে-দেখলে বুকের মধ্যে গুড়্গুড় করে ওঠে। ওঃ! আরে ধর ধর, পালিয়ে যাচ্ছে যে-আরে ধর!

[ মসৃন মেঝেতে সাপের চলতে অসুবিধা হয়। এমন দ্রুত সে হিলহিল করে শরীরে পলায়নের প্রয়াস পাচ্ছে যে সামনের দিক থেকে পাশের দিকে সরে যাচ্ছে বেশি ]

বিশ্বনাথ। আঃ, আটকাও না ওটাকে!

[ সঞ্জয় বিশ্বনাথের দিকে তাকিয়ে পলায়নপর সাপের লেজটা ধরতেই অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় সাপ যেন ওই ভরটুকুতে ঝাঁপিয়ে এসে সঞ্জয়ের হাঁটুর উপর আছড়ে পড়ল। একটা সূক্ষ্ম রক্তের ফিনকি শূন্যে ছিটকে উঠল। নিমেষে সাপটা ধরে ঝাঁপিতে ঢোকাল সঞ্জয়। হাঁটুর উপর দিকে পরিষ্কার দুটি রক্ত বিন্দু ফুটে উঠল তার। সামান্য সময়ের মধ্যেই একটি বিন্দু ক্রমশ বড়ো হয়ে রক্ত গড়িয়ে নামল পাশে। চার তরুণ ভীতিবিহ্বল দৃষ্টি নিয়ে আগন্তুককে দেখতে থাকে ]

দিলীপ। কিছু হবে না তো তোমার?

সঞ্জয়। কিছু হলে এ কাজ করি কী করে দাদা? (সে হাসে, কিন্তু তার হাসির সেই রহস্য হারিয়ে গেছে। ক্ষতস্থানে আঙুলের চাপ দিয়ে সে আরও খানিকটা রক্তপাত ঘটায়। মাথার ফেট্টি খুলে ক্ষতস্থানের ওপর দিকে একটা বাঁধন দেয় সে। তারপর উঠে দাঁড়ায়) আচ্ছা, আসি দাদারা?

অসিত। হ্যাঁ, এসো! কিন্তু তোমার একবার হাসপাতালে যাওয়া বোধ হয়-

সঞ্জয়। (হেসে) না না, ও কিছু নয়। আচ্ছা।

[ ঘর ছেড়ে সঞ্জয় বাইরে বের হয়। তার হাসির উজ্জ্বলতা আর নেই। চার তরুণ তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। দরজা বন্ধ করে ভিতরে এসে সোফায় বসে পড়ে চারজনে ]

প্রবীর। নকুলদার থামস আপ এল না। যদি শেষ পর্যন্ত আসে, একটা একস্ট্রা হয়ে যাবে। সেটা কে খাবে?

দিলীপ। পিসির যদি গোঁফ থাকত! হুঁঃ, আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেল, এখনও এলই না! তার ওপরে আবার একস্ট্রা কে খাবে। তুই খাস, তোকেই দেব ওটা।

প্রবীর। আরে বিশ্বনাথের নিজেরটাইতো একস্ট্রা হয়ে যাবে। ও তো এখন শুধু অমর ফল ভেজানো জলই খাবে। এসব খারাপ জিনিস তো ছোঁবেই না।

[ অসিত ছাড়া অন্য তিনজনে হেসে ওঠে ]

অসিত। কিন্তু সাপটা লোকটাকে ভালোরকম ছোবল দিয়েছে! একেবারে লেদাল ছোবল যাকে বলে! সাপটা যদি সত্যিই কামানো না হয়, তবে সঞ্জয় নাগবংশী উইল হ্যাভ টু প্রুভ হিমসেলফ!

দিলীপ। মানে? কামানো মানেটা কী? সাপে আবার দাড়ি কামায় নাকি?

অসিত। কামানো মানে বিষ বের করে নেওয়া। সাপুড়েরা নিজস্ব পদ্ধতিতে বিষের গ্ল্যান্ড চিরে বিষ বের করে নেয় নিয়মিত। একে বলে কামানো। কামানো সাপ দিয়েই ওরা খেলা দেখায়। সঞ্জয় নাগবংশীর সাপ যদি সত্যি সত্যিই আজই ধরা হয়, এই মুহূর্তে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন ছাড়া ভগবানও ওকে বাঁচাতে পারবে না।

বিশ্বনাথ। না না, ওর কিছু হবে না। আসল জিনিস আছে ওর কাছে। দেখলি না ফলটা কেমন জ্যান্ত হয়ে গেল!

প্রবীর। হয়তো সেই আসল জিনিস সে আমাদেরও দেয়নি। সঙ্গে মাল না থাকলে ওইরকম জ্যান্ত যম নিয়ে খেলা দেখায়?

অসিত। লোকটা আমাদের ঠকিয়ে মোট একাশি টাকা বত্রিশ পয়সা নিয়ে গেছে!

বিশ্বনাথ। ভ্যাট! নিজের চক্ষে দেখলাম-

অসিত। ঠকিয়েছে!

দিলীপ। তুই নিজেও তো পয়সা দিলি, অমর ফল আর মণিরাজের শিকড় নিলি!

অসিত। কী জানি, সেই সময় মনে হচ্ছিল ও যা বলছে, সব সত্যি। ফল শিকড়, সব, আশ্চর্য! (মেঝেতে পড়ে থাকা দু-তিন ফোঁটা রক্তের দিকে সে তাকায়। রক্ত এতক্ষণে জমাট বেঁধে কালো হয়ে গেছে) আশ্চর্য চতুর ওই সঞ্জয় নাগবংশী।

দিলীপ। তার মানে ও-

অসিত। হ্যাঁ, ও মরবে। এই মুহূর্তে যদি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া না হয়, ও মরবেই।

প্রবীর। চল তো দেখি লোকটাকে কোথাও পাই কি না?

অসিত। বেশিদূর যেতে পারবে না ও। এতক্ষণে চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে ওর। এখন চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে। মুখ খুলতে পারবে না। জিভ নাড়াচাড়া করতে পারবে না। কথা বলতে পারবে না! মাথা বুকের দিকে ঝুঁকে এসে ওকে রাস্তার ওপর এতক্ষণে শুইয়ে দিয়েছে কেউটের বিষ।

[ নকুল থামস আপ নিয়ে প্রবেশ করে ]

নকুল। ওঃ, থামস আপ জোগাড় করা সহজ কথা এই ওয়েদারে! সেই যেতে হল বড়ো রাস্তায় বাস স্ট্যান্ডের কাছে। ধুলোর ঝড়ে সব দোকান বন্ধ। অল শপ ক্লোজড। নো বাস, নো ট্রাফিক, অনলি ধুলোর ঝড়। (চাবি দিয়ে বোতল খোলে সে। একেক জনের হাতে দেয়) ওঃ, বাই দি বাই, দ্যাট ম্যান সাপওয়ালা- বড়োরাস্তার কাছে- ইয়েস প্লিজ (অসিতের হাতে বোতল দিতে যায়)

অসিত। হেঁটে যাচ্ছে!

নকুল। হোয়াটস রং? প্লিজ টেক। হেঁটে যাবে! লাইং আনডার কৃষ্ণচূড়া ট্রি। স্নেক বাইট!

অসিত। মরে যাচ্ছে?

নকুল। যদি এখনও না মরে থাকে। হ্যান্ড অ্যান্ড ফুট নাড়াতে পারছে না। হোল বডির তড়কা হচ্ছে, দম নিতে পারছে না, মনে হল। মুখের রং নীল বর্ণ, ব্লু কালার। প্লিজ টেক।

অসিত। একটা গাড়ি পাওয়া যাবে না নকুলদা? ওকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে না?

নকুল। নেক্সট বাস বিকেল চারটায়। প্রাইভেট গাড়ি পাওয়া যাবে না। রিকশা নট গো এই ওয়েদারে। আফটার অল সেভেন কিলোমিটার রাস্তা।

প্রবীর। চল লোকটাকে একবার দেখে আসি।

অসিত। না! নকুলদা যা বলছে তাতে মনে হয় এতক্ষণে ও না মরলেও আর আধা ঘণ্টা হয়তো ওর আয়ু আছে। আমি একসময় সাপ নিয়ে কিছু পড়েছিলাম। আঃ, আমাদেরই বয়সি একটা ছেলে। কী ভয়ংকর পেশা নিতে হয়েছে তাকে! গর্বিত বুদ্ধিমান ছেলেটা! আমাদের সবাইকে বোকা বানিয়েছে! অথচ কলকাতার ছেলে আমরা। এখন, তার মৃত্যুর সময়ে, এই ভয়ংকর মৃত্যুর সময়ে আমরা কি তার চোখের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি? বলতে পারি, তোমার চালাকি ধরে ফেলেছি? ধরা পড়ে গেছ তুমি সঞ্জয় নাগবংশী?

দিলীপ। তবুও চল অসিত। আমরা একবার চেষ্টা করি ওকে শহরের হাসপাতাল অবদি নিয়ে যেতে। আমরা সামনে যাব না। দূরে থাকব। নকুলদা কাছে যাবে। তারপরে এখনও যদি বেঁচে থাকে সাত-কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়ার জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করা যাবে না? নিশ্চয়ই যাবে। চলো নকুলদা।

বিশ্বনাথ। চলো ভাই, চলো।

নকুল। মাই ব্রাদার-ইন-লর একটা মোটর সাইকেল আছে। একজন চালাবে, একজন, সিট ইন ব্যাক, মাঝখানে ছেলেটাকে চেপে ধরে রাখবে। অল রাইট?

অসিত। অল রাইট! লেট আস ট্রাই! লেট আস ট্রাই টু সেভ দ্য লাইফ অফ আ ম্যান হু ডিসিভড আস! লেটস গো!

[ সবাই বেরিয়ে যায়

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *